15|1| আলিফ, লাম, রা। এগুলো হচ্ছে ধর্মগ্রন্থের আয়াতসমূহ, আর একটি সুস্পষ্ট পাঠ্য।
15|2| সময়কালে যারা অবিশ্বাস করেছিল তারা চাইবে যে যদি তারা মুসলিম হতো!
15|3| ছেড়ে দাও তাদের খানাপিনা করতে ও আমোদ-আাদ করতে, আর আশা-আকাঙ্খা তাদের ভুলিয়ে রাখুক, যেহেতু শীগগিরই তারা বুঝতে পারবে!
15|4| আর আমরা কোনো জনপদকে ধ্বংস করি নি যে পর্যন্ত না তার জন্য বিধান মালুম করানো হয়েছে।
15|5| কোনো জাতি তার নির্ধারিত কাল ত্বরান্বিত করতে পারবে না, আর তারা বিলন্বিত করতে পারবে না।
15|6| আর তারা বলে — ”ওহে যার কাছে স্মারকগ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো আলবৎ মাথা-পাগলা।
15|7| ”তুমি কেন আমাদের কাছে ফিরিশ্তাদের নিয়ে এস না, যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্যেকার হও।
15|8| আমরা ফিরিশ্তাদের পাঠাই না সত্যের সাথে ছাড়া, আর তখন তারা অবকাশ প্রাপ্ত হবে না।
15|9| নিঃসন্দেহ আমরা নিজেই স্মারকগ্রন্থ অবতারণ করেছি, আর আমরাই তো এর সংরক্ষণকারী।
15|10| আর তোমার আগে আমরা নিশ্চয়ই পাঠিয়েছিলাম প্রাচীনকালের সম্প্রদায়ের মধ্যে।
15|11| কিন্তু তাদের কাছে এমন কোনো রসূল আসেন নি যাঁকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত না।
15|12| এইভাবে আমরা একে অপরাধীদের অন্তরে প্রবেশ করাই।
15|13| তারা এতে বিশ্বাস করে না, অথচ পূর্ববর্তীদের নজীর অবশ্যই গত হয়েছে।
15|14| আর যদি আমরা তাদের জন্য মহাকাশের দরজা খুলে দিই আর তাতে তারা আরোহণ করতে থাকে
15|15| তারা তবুও বলবে — ”আমাদের চোখে ধাঁধা লেগেছে, আমরা বরং মোহাচ্ছন্ন দল হয়েছি।’’
15|16| আর বাস্তবিকই আমরা আকাশে দুর্গ তৈরি করেছি, আর তা সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্য।
15|17| আর আমরা তাকে রক্ষা করি প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তানের থেকে, —
15|18| সে ব্যতীত যে লুকিয়ে শোনে, ফলে তার পশ্চাদ্ধাবন করে প্রখর অগ্নিশিখা।
15|19| আর পৃথিবী — আমরা তাকে প্রসারিত করেছি, আর তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা, আর তাতে উৎপন্ন করেছি হরেক রকমের জিনিস সুপরিমিতভাবে।
15|20| আর তোমাদের জন্য তাতে সৃষ্টি করেছি খাদ্যবস্তু, আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও তাদের জন্যেও।
15|21| আর এমন কোনো-কিছু নেই যার ভান্ডার আমাদের কাছে নয়, আর আমরা তা পাঠাই না নির্ধারিত পরিমাপে ছাড়া।
15|22| আর আমরা উর্বরতা-সঞ্চারক বায়ু পাঠাই, তারপর আকাশ থেকে আমরা পানি পাঠাই, তখন তোমাদের তা পান করতে দিই, আর তোমরা তার কোষাধ্যক্ষ নও!
15|23| আর নিঃসন্দেহ আমরা নিজেই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই, আর আমরাই হচ্ছি উত্তরাধিকারী।
15|24| আর আমরা নিশ্চয়ই জানি তোমাদের মধ্যের অগ্রগামীদের, আর আমরা অবশ্য জানি পশ্চাতে-পড়ে-থাকাদের।
15|25| আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু — তিনি তাদেরকে একত্রে সমবেত করবেন। তিনি নিশ্চয়ই পরমজ্ঞানী, সর্বজ্ঞাতা।
15|26| আর আমরা নিশ্চয়ই মানুষ সৃষ্টি করেছি আওয়াজদায়ক মাটি থেকে, কালো কাদা থেকে রূপ দিয়ে।
15|27| আর আমরা এর আগে জিন সৃষ্টি করেছি প্রখর আগুন দিয়ে।
15|28| আর স্মরণ কর! তোমার প্রভু ফিরিশ্তাদের বললেন — ”নিঃসন্দেহ আমি মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি আওয়াজদায়ক মাটি থেকে, — কালো কাদা থেকে রূপ দিয়ে।
15|29| সুতরাং যখন আমি তাকে সুঠাম করব আর তাতে আমার রূহ্ ফুকঁবো তখন তার প্রতি তোমরা পড় সিজদাবনত হয়ে।’’
15|30| তখন ফিরিশ্তারা সিজদা করলে, তাদের সবাই সববেত-ভাবে, —
15|31| ইবলিস ব্যতীত, সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।
15|32| তিনি বললেন — ”হে ইবলিস! তোমার কি হয়েছে যে তুমি সিজদাকারীদের সঙ্গী হলে না?’’
15|33| সে বললে — ”আমি তেমন নই যে আমি সিজদা করব একজন মানুষকে যাকে তুমি সৃষ্টি করেছ আওয়াজদায়ক মাটি থেকে — কালো কাদা থেকে রূপ দিয়ে।’’
15|34| তিনি বললেন — ”তাহলে বেরিয়ে যাও এখান থেকে, কেননা নিঃসন্দেহ তুমি বিতাড়িত,
15|35| ”আর নিশ্চয় তোমার উপরে থাকবে অসন্তষ্টি শেষবিচারের দিন পর্যন্ত।’’
15|36| সে বললে — ”আমার প্রভু! তবে আমাকে অবকাশ দাও সেই দিন পর্যন্ত যখন তাদের পুনরুত্থিত করা হবে!’’
15|37| তিনি বললেন — ”তবে তুমি নিশ্চয়ই অবকাশপ্রাপ্তদের মধ্যেকার —
15|38| নির্ধারিত সময়ের দিন পর্যন্ত।’’
15|39| সে বললে — ”আমার প্রভু! তুমি যেমনি আমাকে বিপথে যেতে দিয়েছ, আমিও তেমনি নিশ্চয়ই তাদের নিকট চিত্তাকর্ষক করব এই পৃথিবীতে, আর অবশ্যই তাদের একসাথে বিপথগামী করব —
15|40| তাদের মধ্যে তোমার খাস বান্দাদের ব্যতীত।’’
15|41| তিনি বললেন — ”এটিই হচ্ছে আমার দিকে সহজ-সঠিক পথ।
15|42| ”নিঃসন্দেহ আমার দাসদের সন্বন্ধে — তাদের উপরে তোমার কোনো আধিপত্য নেই, বিপথগামীদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে তাদের ব্যতীত।
15|43| ”আর নিঃসন্দেহ জাহান্নাম হচ্ছে তাদের সকলের জন্য প্রতিশ্রুত স্থান —
15|44| ”তার সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক প্রবেশপথের জন্য রয়েছে তাদের মধ্যের পৃথক পৃথক দল।’’
15|45| নিঃসন্দেহ ধর্মপরায়ণরা থাকবে স্বর্গোদ্যানে ও ঝরনারাজির মধ্যে।
15|46| ”তোমরা এতে প্রবেশ কর শান্তিতে ও নিরাপত্তায়।’’
15|47| আর আমরা বের করে দেব তাদের অন্তরে যা-কিছু হিংসা-বিদ্বেষ রয়েছিল, ফলে তারা ভাইদের মতো থাকবে আসনের উপরে মুখোমুখি হয়ে।
15|48| সেখানে তাদের স্পর্শ করবে না কোনো অবসাদ, আর তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃত হবে না।
15|49| আমার বান্দাদের খবর দাও যে আমিই তো নিশ্চয়ই পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা,
15|50| আর আমার শাস্তি, — তা অতি মর্মন্তুদ শাস্তি।
15|51| আর তাদের খবর দাও ইব্রাহীমের অতিথিদের সন্বন্ধে।’’
15|52| যখন তারা তাঁর কাছে হাজির হল তখন তারা বললে — ”সালাম’’। তিনি বললেন — ”আমরা অবশ্য তোমাদের সন্বন্ধে ভয় করছি।’’
15|53| তারা বললেন — ”ভয় করো না, নিঃসন্দেহ আমরা তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি এক জ্ঞানবান ছেলের সন্বন্ধে।’’
15|54| তিনি বললেন — ”তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ যখন বার্ধক্য আমাকে স্পর্শ করেছে? তবে কিসের তোমরা সুসংবাদ দিচ্ছ?
15|55| তারা বললে — ”আমরা তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি সত্যের সাথে, সুতরাং তুমি হতাশদের মধ্যেকার হয়ো না।’’
15|56| তিনি বললেন — ”আর কে হতাশ হয় তার প্রভুর করুণা থেকে পথভ্রষ্টরা ব্যতীত?’’
15|57| তিনি বললেন — ”তবে কি তোমাদের কাজ রয়েছে, হে প্রেরিতগণ?’’
15|58| তারা বললে — ”আমরা নিশ্চয়ই প্রেরিত হয়েছি একটি অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি,
15|59| ”লুতের অনুবর্তীরা ব্যতীত। নিঃসন্দেহ তাঁদের সবাইকে আমরা অবশ্যই উদ্ধার করব —
15|60| তাঁর স্ত্রী ব্যতীত। আমরা সঠিক জেনেছি যে সে তো নিশ্চয়ই পেছনে-পড়েথাকাদের মধ্যেকার।’’
15|61| তারপর যখন বাণীবাহকরা লূত-এর পরিজনের কাছে এল,
15|62| তিনি বললেন — ”তোমরা তো অপরিচিত লোক।’’
15|63| তারা বললে — ”আমরা নিশ্চয়ই তোমার কাছে এসেছি তাই নিয়ে যে-সন্বন্ধে তারা তর্ক-বিতর্ক করত।
15|64| ”আর আমরা তোমার কাছে নিয়ে এসেছি সত্যবার্তা, আর আমরা নিঃসন্দেহ সত্যবাদী।
15|65| ”সুতরাং তোমার পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বেরিয়ে পড় রাতের এক অংশে, আর তুমি তাদের পেছন থেকে অনুসরণ কর, আর তোমাদের মধ্যের কেউ যেন পিছন দিকে না দেখে, আর চলে যাও যেখানে তোমাদের আদেশ করা হয়েছে।’’
15|66| আর তাঁর কাছে আমরা জানিয়ে দিলাম এই নির্দেশ যে এদের শেষটুকুও কেটে দেওয়া হবে ভোরে জেগে ওঠার বেলায়।
15|67| আর শহরের লোকেরা এল উৎফুল্ল হয়ে।
15|68| তিনি বললেন — ”এরা নিশ্চয়ই আমার অতিথি, সুতরাং আমাকে বেইজ্জত করো না।
15|69| ”আর আল্লাহ্কে ভয়শ্রদ্ধা কর, আর আমাকে লজ্জা দিয়ো না!’’
15|70| তারা বললে — ”আমরা কি তোমাকে নিষেধ করি নি জগদ্বাসীদের সম্পর্কে?’’
15|71| তিনি বললেন — ”এরা আমার কন্যা, যদি তোমরা করতে চাও!’’
15|72| তোমার জীবনের কসম! তারা নিঃসন্দেহ তাদের মত্ততায় অন্ধভাবে ঘুরছিল।
15|73| কাজেই এক মহাধ্বনি তাদের পাকড়াও করল সূর্যোদয়কালে।
15|74| কাজেকাজেই এর উপরভাগ আমরা বানিয়ে দিলাম এর নিচের ভাগ, আর তাদের উপরে বর্ষণ করলাম পোড়া-মাটির পাথর।
15|75| নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদের্শনাবলী রয়েছে।
15|76| আর নিঃসন্দেহ এটি একটি সড়কের উপরে অবস্থিত।
15|77| নিঃসন্দেহ এতে তো নিদর্শন রয়েছে মুমিনদের জন্য।
15|78| আর আসহাবুল আইকাহ্ অবশ্যই ছিল অন্যায়াচারী।
15|79| সেজন্য তাদের থেকে আমরা প্রতিফল আদায় করেছিলাম। তারা উভয়েই তো রয়েছে প্রকাশ্য রাজপথে।
15|80| আর নিশ্চয় পাথুরে-পাহাড়ের বাসিন্দারাও রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
15|81| আর তাদের আমরা আমাদের নির্দেশাবলী দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা সে-সব থেকে ফিরে গিয়েছিল।
15|82| আর তারা পাহাড় কেটে নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়িঘর তৈরি করত।
15|83| কিন্তু প্রচন্ড আওয়াজ তাদের পাকড়াও করল সকালবেলায়।
15|84| কাজেই তারা যা অর্জন করত তা তাদের কোনো কাজে আসে নি।
15|85| আর আমরা মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দুইয়ের মধ্যে যা-কিছু আছে তা সৃষ্টি করি নি সত্যের সঙ্গে ব্যতীত। আর নিঃসন্দেহ ঘড়ি-ঘন্টা তো এসে পড়ল; সুতরাং উপেক্ষা করো মহৎ উপেক্ষাভরে।
15|86| নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, — তিনি সর্বস্রষ্টা, সর্বজ্ঞাতা।
15|87| আর নিশ্চয়ই তোমাকে আমরা দিয়েছি বারবার-পঠিত সাতটি, আর এক সুমহান কুরআন।
15|88| তাদের মধ্যের কতক পরিবারকে যা ভোগবিলাসের বস্তু দিয়েছি তার প্রতি তোমার চোখ দিয়ো না, আর তাদের প্রতি তুমি ক্ষোভ করো না, বরং তোমার ডানা নামাও মুমিনদের জন্য।
15|89| আর বলো — ”নিঃসন্দেহ আমি, আমি হচ্ছি একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী।’’
15|90| যেমন আমরা পাঠিয়েছিলাম বিভক্তদের প্রতি, —
15|91| যারা কুরআনকে করে ছিন্নভিন্ন।
15|92| সুতরাং, তোমার প্রভুর কসম! আমরা নিশ্চয়ই তাদের সবাইকে প্রশ্ন করব —
15|93| তারা যা করে চলেছিল সে-সন্বন্ধে।
15|94| কাজেই প্রকাশ্যে ঘোষণা করো যা তোমাকে আদেশ করা হয়েছে, আর বহুখোদাবাদীদের থেকে ফিরে থেকো।
15|95| আমরাই তো তোমার জন্য যথেষ্ট বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে —
15|96| যারা আল্লাহ্র সাথে দাঁড় করায় অন্য উপাস্য, কাজেই শীঘ্রই তারা জানতে পারবে।
15|97| আর আমরা অবশ্য জানি যে তারা যা বলে তাতে তোমার বক্ষ আলবৎ পীড়িত হয়,
15|98| সুতরাং তোমার প্রভুর প্রশংসা দ্বারা মহিমা কীর্তন করো, আর সিজদাকারীদের মধ্যেকার হও,
15|99| আর তোমার প্রভুর উপাসনা কর যে পর্যন্ত না তোমার কাছে আসে যা সুনিশ্চিত।