মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২৮৬, রুকু সংখ্যা: ৪০এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
2-1 : আলিফ লাম মিম। |
2-2 : এটি একমাত্র কিতাব, যাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্যে জীবন যাপন পদ্ধতি। |
2-3 : যারা ঈমান আনে গায়েব - এর প্রতি, সালাত কায়েম করে এবং আমরা যে রিযিক তাদের দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে (নিজের এবং অন্যদের জন্যে এবং যাকাত প্রদান করে); |
2-4 : যারা ঈমান রাখে তোমার প্রতি নাযিলকৃত কিতাব (আল কুরআন) - এর প্রতি এবং তোমার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবসমূহের প্রতি, আর যারা একিন (নিশ্চিত বিশ্বাস) রাখে আখিরাতের প্রতি; |
2-5 : তারাই তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত, আর তারাই হবে সফলকাম। |
2-6 : যেসব লোক (একথাগুলো মেনে নিতে) অস্বীকার করে, তাদের তুমি সতর্ক করো আর নাই করো, তাদের জন্যে উভয়টাই সমান, তারা ঈমান আনবেনা। |
2-7 : আল্লাহ সীল মোহর মেরে দিয়েছেন তাদের কলবসমূহের উপর এবং তাদের শ্রবন ইন্দ্রিয়ের উপর, আর তাদের চক্ষুরাজির উপর পড়ে আছে আবরণ। তাই তাদের জন্যে রয়েছে বিরাট আযাব। |
2-8 : মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে (মুনাফিক), যারা বলে: আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের (বিচার দিবসের) প্রতি, অথচ তারা মুমিন নয়। |
2-9 : তারা (মনে করে তারা) ধোকাবাজি করছে আল্লাহর সাথে এবং মুমিনদের সাথেও। অথচ তারা যে নিজেদের ছাড়া আর কাউকেও ধোকা দিচ্ছেনা, একথাটা তারা উপলব্ধি করেনা। |
2-10 : তাদের কলব (অন্তর) সমূহে রয়েছে (সন্দেহ ও মুনাফিকির) রোগ। তাই, আল্লাহ তাদের (এ) রোগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব, কারণ তারা মিথ্যা বলে। |
2-11 : আর যখন তাদের বলা হয়: দেশে ফাসাদ (অশান্তি) সৃষ্টি করোনা, তখন তারা বলে: আমরাই তো কেবল ইসলাহ (সংস্কার সংশোধন119) করে চলেছি। |
2-12 : সতর্ক থাকো, এরাই আসল ফাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করেনা। |
2-13 : যখন তাদের বলা হয়: তোমরা (সেভাবে) ঈমান আনো, অন্য লোকেরা যে রকম (নিষ্ঠার সাথে) ঈমান এনেছে। তখন তারা বলে: ‘আমরা কি (সে রকম) ঈমান আনবো, যেরকম ঈমান এনেছে বোকা লোকেরা?’ - আসলে তারা নিজেরাই যে বোকা তা তারা জানেনা। |
2-14 : তারা যখন মুমিনদের সাথে মোলাকাত (সাক্ষাত) করে, তখন তাদের বলে: ‘আমরা তো ঈমান এনেছি।’ আর যখন তারা তাদের শয়তানদের কাছে একান্তে থাকে, তখন তাদের বলে: আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি, ওদের কাছে গিয়ে তো আমরা কেবল ঠাট্টা - বিদ্রুপ করে আসি। |
2-15 : আল্লাহ তাদের সাথে (তাঁর প্রাকৃতিক নিয়মে) বিদ্রুপ করেন এবং তাদেরকে তাদের বিদ্রোহী ভূমিকায় অন্ধভাবে ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন। |
2-16 : এরা সওদা করছে হিদায়াতের বিনিময়ে গোমরাহির। সুতরাং তাদের তেজারত (ব্যবসা) লাভজনক হয়নি এবং তারা হিদায়াতও লাভ করেনি। |
2-17 : তাদের উপমা (অবস্থা) হলো এরকম, যেমন এক ব্যক্তি আগুন জ্বালালো। আগুন যখন তার চারপাশ আলোকিত করে তুললো, তখন আল্লাহ তাদের (চোখের) জ্যোতি নিয়ে নিলেন এবং তাদের ছেড়ে দিলেন অন্ধকার রাশিতে, তাই কিছুই দেখতে পায়না তাদের দৃষ্টি। |
2-18 : তারা বধির, বোবা, অন্ধ, তাই তারা (হিদায়াতের পথে) ফিরে আসবেনা। |
2-19 : অথবা (তাদের উপমা হচ্ছে) আকাশ থেকে বর্ষণমুখী মেঘ। তার মধ্যে রয়েছে ঘনঘোর অন্ধকার, বজ্রধ্বনি আর বিদ্যুতের চমকানি। বজ্রপাতের মৃত্যুভয়ে তারা তাদের কানে আংগুল ঢুকিয়ে রাখে। (এভাবেই) আল্লাহ সব দিক থেকে ঘিরে রেখেছেন কাফিরদের। |
2-20 : বিদ্যুতের চমকানি তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়ার মতো অবস্থা। (বিদ্যুতের চমকে) যখন তারা আলোর ঝিলিক দেখতে পায়, তখন কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার ছেয়ে যায় তখন দাঁড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ চাইলে তাদের শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি নিয়ে নিতে পারেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। |
2-21 : হে মানবজাতি! তোমরা ইবাদত করো তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের পূর্বের লোকদেরও। এভাবেই তোমরা রক্ষা পেতে পারো। |
2-22 : (তিনি তোমাদের সেই মহান রব) যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্যে বানিয়ে দিয়েছেন ফরশ (বিছানা) আর আকাশকে বানিয়েছেন ছাদ এবং তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন আর তার সাহায্যে উৎপন্ন করেছেন নানা রকম ফলফলারি, যা তোমাদের জন্যে রিযিক (জীবিকা)। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্যে কাউকেও প্রতিপক্ষ (সমকক্ষ) সাব্যস্ত করোনা। কারণ, তোমরা তো জানো (তিনি এক এবং একক)। |
2-23 : আমরা আমাদের দাস (মুহাম্মদ)এর প্রতি যা নাযিল করেছি (তা আমাদের নাযিল করা কিনা?) সে বিষয়ে যদি তোমরা সন্দেহে থেকে থাকো, তবে সেটির অনুরূপ একটি সূরা তোমরা তৈরি করে আনো; এবং (তা দেখার জন্যে) আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষী - সমর্থকদেরকেও ডেকে আনো, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। |
2-24 : যদি তোমরা (কুরআনের অনুরূপ একটি সূরা) তৈরি করে আনতে না পারো, আর বাস্তব ব্যাপার হলো, তোমরা তা কখনো পারবেনা, তবে নিজেদের রক্ষা করো সেই আগুন থেকে যার জ্বালানি হবে মানুষ আর পাথর। সে আগুন তৈরি করে রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্যে। |
2-25 : শুভ সংবাদ দাও তাদেরকে, যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে: তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত (বাগান আর উদ্যানসমূহ), যেগুলোর নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর। যখনই সেসব বাগানের ফলফলারি তাদের খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে: এ ধরণের ফলই ইতোপূর্বে (পৃথিবীতে) আমাদের দেয়া হয়েছে। সেসব (বাগানের) ফলফলারি দেখতে হবে দুনিয়ার ফলের মতোই। সেখানে থাকবে তাদের জন্যে পবিত্র জুড়ি এবং সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। |
2-26 : আল্লাহ লজ্জাবোধ করেননা মশা বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র কোনো প্রাণীর উপমা দিতে। তবে যারা ঈমান এনেছে তারা জানে, নিঃসন্দেহে এটা তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে আসা মহাসত্য। আর যারা কুফুরির পথ অবলম্বন করেছে তারা বলে: ‘এ উপমা দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য কী?’ এভাবে আল্লাহ একটি উপমা দ্বারা অনেককে বিপথগামী করেন, আবার অনেককে প্রদর্শন করেন সঠিক পথ। মূলত এর দ্বারা তিনি ফাসিকদের (সীমানালংঘনকারী পাপীদের) ছাড়া আর কাউকে বিপথগামী করেননা। |
2-27 : যারা আল্লাহর সাথে শক্ত অংগীকার করার পরও তা ভেঙ্গে ফেলে এবং যেসব সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন, সেগুলো ছিন্ন করে, আর দেশে সৃষ্টি করে অশান্তি, বিশৃংখলা, তারাই আসল ব্যর্থ - ক্ষতিগ্রস্ত। |
2-28 : তোমরা কী করে আল্লাহর প্রতি কুফুরি (অস্বীকৃতি ও অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ) করছো, অথচ তোমরা ছিলে মৃত, তারপর তিনিই তোমাদের হায়াত দান করেছেন। পুনরায় তিনিই তোমাদের মউত দেবেন, তারপর আবার তোমাদের হায়াত দান করবেন এবং সবশেষে তোমাদের ফিরিয়ে নেবেন তাঁর কাছে। |
2-29 : তিনিই তো তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীর সবকিছু। তারপর তিনি উপরের দিকে নজর দেন এবং সেগুলোকে বানিয়ে দেন সপ্তাকাশ। আর প্রতিটি বিষয়ে তিনি অতীব জ্ঞানী। |
2-30 : আর (স্মরণ করো), যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বলেছিলেন: ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা (প্রতিনিধি) নিয়োগ করতে যাচ্ছি।’ তারা বলেছিল: ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকেও নিয়োগ করবেন, যারা সেখানে ফাসাদ (অশান্তি) সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাসবিহ করছি আর আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি।' (তাদের একথার জবাবে) তিনি বলেছিলেন: ‘আমি জানি যা তোমরা জানোনা।’ |
2-31 : আর তিনি তালিম (শিক্ষা) দিলেন আদমকে (সব কিছুর) নাম। আর সেগুলো উপস্থাপন করলেন ফেরেশতাদের সামনে। তাদের বললেন: এই জিনিসগুলোর নাম (পরিচয়) আমাকে বলো যদি তোমরা সত্য বলে থাকো। |
2-32 : তারা (ফেরেশতারা) বললো: আপনি মহান, আমাদের তো কোনো এলেম নেই আপনি যা তালিম দিয়েছেন - তা ছাড়া। নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী এবং মহা প্রজ্ঞাময়। |
2-33 : তিনি বললেন: ‘হে আদম! এদের নাম (পরিচয়) সম্পর্কে তাদের অবহিত করো।' তারপর সে যখন তাদের নাম (পরিচয়) সম্পর্কে তাদের অবহিত করলো, তখন তিনি বললেন: ‘আমি কি তোমাদের বলিনি, আমি জানি মহাকাশ এবং পৃথিবীর গায়েব (অদৃশ্য বিষয়সমূহ), আর যা কিছু তোমরা ব্যক্ত করো এবং যা কিছু রাখো অব্যক্ত? |
2-34 : (আরো স্মরণ করো) যখন আমরা ফেরেশতাদের বলেছিলাম: ‘সাজদা করো আদমকে’, তখন তারা সবাই সাজদা করলো ইবলিস্ ছাড়া। সে (সাজদা করতে) অস্বীকার করলো, অহংকার করলো এবং সে অন্তরভুক্ত হয়ে গেলো কাফিরদের। |
2-35 : আর তখন আমরা আদমকে বললাম: হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী বসবাস করো জান্নাতে এবং সেখান থেকে যা খুশি আনন্দের সাথে খাও; তবে নিকটেও যেয়োনা এই গাছটির, তাহলে অন্তরভুক্ত হয়ে পড়বে যালিমদের (অন্যায়কারীদের)। |
2-36 : তারপর শয়তান তাদের দুজনকেই (আমার হুকুম পালন থেকে) পদস্খলন ঘটায় এবং যে অবস্থার মধ্যে তারা ছিলো তা থেকে বের করে ছাড়ে। তখন আমরা (আদম এবং শয়তানকে) বললাম: তোমরা সবাই নেমে (বেরিয়ে) যাও। (জেনে রাখবে) তোমরা একে অপরের শত্রু। তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে একটা সময় পর্যন্ত অবস্থান এবং জীবনোপকরণ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। |
2-37 : সে সময় আদম তার রবের কাছ থেকে কয়েকটি কথা (ক্ষমা চাওয়া ও তওবা কবুল করার জন্যে) লাভ করেছিল। তখন তিনি তার তওবা কবুল করে নেন। কারণ তিনিই তো তওবা কবুলকারী (পরম ক্ষমাশীল) অতীব দয়াময়। |
2-38 : আমরা বললাম: ‘তোমরা সবাই এখান (জানণাত) থেকে নেমে যাও, তারপর যখনই আমার কাছ থেকে তোমাদের কাছে ‘হুদা’ (নবী ও কিতাব) আসবে, তখন যারাই আমার ‘হুদার’ অনুসরণ করবে,তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনা, দুশ্চিন্তাও থাকবেনা। |
2-39 : আর যারা (আমার হুদার প্রতি) কুফুরি করবে এবং অস্বীকার করবে আমার আয়াত (নিদর্শন)সমূহ, তারা হবে ‘আস্হাবুন নার’ (আগুনের অধিবাসী), সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। |
2-40 : হে বনি ইসরাঈল ! স্মরণ করো আমার নিয়ামত - এর (অনুগ্রহের) কথা, যা আমি দান করেছিলাম তোমাদের, আর পূর্ণ করো আমার সাথে করা তোমাদের অংগীকার, তাহলে আমিও তোমাদের সাথে আমার অংগীকার পূর্ণ করবো। আর শুধুমাত্র আমাকেই ভয় করো। |
2-41 : তোমরা ঈমান আনো আমার নাযিল করা এ কিতাবের (কুরআনের) প্রতি, যা তোমাদের সাথে থাকা (তাওরাত ও ইনজিল) কিতাবের সত্যায়নকারী। এর প্রতি তোমরাই প্রথম কাফির (অস্বীকারকারী) হয়োনা। আর আমার আয়াত সমূহের (অর্থাৎ তাওরাত ও ইনজিলের) বিনিময়ে তুচছ মূল্য গ্রহণ করোনা। আর আমাকে এবং কেবল আমাকেই ভয় করো। |
2-42 : মিশিয়ে ফেলোনা হক (সত্য) - কে বাতিলের সাথে এবং সত্য কথা গোপন করোনা। অথচ তোমরা জানো (সত্য বিষয়টি কী)? |
2-43 : তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত দিয়ে দাও এবং রুকু করো রুকুকারীদের সাথে। |
2-44 : তোমরা মানুষকে ভালো ও ন্যায় কাজের আদেশ দেবে আর (এক্ষেত্রে) ভুলে যাবে নিজেদের (ভালো হবার) কথা? অথচ তোমরা তিলাওয়াত করছো কিতাব (তাওরাত ও ইনজিল)। তোমাদের কি আকল - বিবেক বলতে কিছুই নেই? |
2-45 : তোমরা সাহায্য চাও সবর ও সালাতের মাধ্যমে। কিন্তু এটা বড়ই কঠিন কাজ; তবে তাদের জন্যে (কঠিন) নয়, যারা আল্লাহর প্রতি বিনীত - অনুগত, |
2-46 : যারা বিশবাস করে, তাদের প্রভুর সাথে তাদের অবশ্যি মোলাকাত (সাক্ষাত) হবে এবং তারা তাঁরই কাছে ফিরে যাবে। |
2-47 : হে বনি ইসরাঈল! স্মরণ করো আমার নিয়ামতের কথা, যা আমি দান করেছিলাম তোমাদের, আর সেই (কথাটাও স্মরণ করো) যে, আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছিলাম বিশ্ববাসীর উপর। |
2-48 : আর সতর্ক হও সেই দিনটির ব্যাপারে, যেদিন কেউ কারো কিছুমাত্র কাজে আসবেনা, যেদিন কারো শাফায়াত কবুল করা হবেনা, যেদিন কারো কাছ থেকে কোনো বিনিময় গ্রহণ করা হবেনা এবং যেদিন (পাপিষ্ঠদের) কোনো প্রকার সাহায্যও করা হবেনা। |
2-49 : আরো স্মরণ করো, আমি যখন তোমাদের নাজাত দিয়েছিলাম ফেরাউনের লোকদের (দাসত্বের কবল) থেকে। যারা তোমাদের নিমজ্জিত করে রেখেছিল কঠিন আযাবে, জবাই করে ফেলছিল তোমাদের পুত্র সন্তানদের, আর জীবিত রাখছিল তোমাদের কন্যা সন্তানদের। তোমাদের এই অবস্থাটা ছিলো তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে একটা বড় পরীক্ষা। |
2-50 : আরো স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আমরা ফারাক (ভাগ) করে দিয়েছিলাম তোমাদের জন্যে সাগরকে এবং এভাবেই নাজাত (মুক্ত) করে এনেছিলাম তোমাদের, আর ডুবিয়ে দিয়েছিলাম ফেরাউনের লোকদের তোমাদের চোখের সামনেই। |
2-51 : আরো স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আমি মূসাকে চল্লিশ রাতের (দিবা - রাতের) জন্যে ডেকে নিয়েছিলাম, তখন তোমরা তার ওখানে চলে যাবার পর গো - বাছুরকে নিজেদের উপাস্য বানিয়ে নিলে, তখন তোমরা হয়ে পড়েছিলে যালিম। |
2-52 : এতো বড় অপরাধ করার পরও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলাম, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞ হয়ে চলো। |
2-53 : স্মরণ করো, (তোমরা যখন গো - বাছুর পূজার যুলুমে লিপ্ত ছিলে) ঠিক সেসময় আমি মূসাকে কিতাব (তাওরাত) এবং ফুরকান (দীন ও শরীয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশাবলি) দিয়ে পাঠালাম, যাতে করে তোমরা হিদায়াতের পথে আসো। |
2-54 : স্মরণ করো, মূসা (ফিরে এসে) যখন তোমাদের বলেছিল: হে আমার কওম (জাতি)! নিঃসন্দেহে গো - বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে তোমরা নিজেদের প্রতি বিরাট যুলুম করেছো, তাই তোমরা তোমাদের স্রষ্টার কাছে তওবা করো (অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাও) এবং নিজেদের হত্যা করো। এরি মধ্যে তোমাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে তোমাদের স্রষ্টার কাছে। তখন তিনি তোমাদের তওবা কবুল করে নিয়েছিলেন। কারণ তিনি তো তওবা কবুলকারী - ক্ষমাশীল দয়াময়। |
2-55 : স্মরণ করো, তোমরা যখন বলেছিলে: ‘হে মূসা ! আমরা আল্লাহকে সচক্ষে (তোমার সাথে কথা বলতে) না দেখলে বিশ্বাস করবোনা (যে, তিনি তোমার সাথে কথা বলেন।)’ তখন আকস্মিক বজ্রপাত তোমাদের মৃত্যু ঘটিয়ে দিয়েছিল - তোমাদের চোখের সামনেই। |
2-56 : তোমাদের সেই মৃত্যুর পর পুনরায় আমরা তোমাদের বে’ছত (পুনর্জীবন) দান করি, যাতে করে তোমরা শোকরগুজার হও। |
2-57 : তাছাড়া, (খোলা তীহ্ প্রান্তরে) আমরা তোমাদের ছায়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম মেঘমালা দিয়ে এবং তোমাদের (আহারের জন্যে) নাযিল করেছিলাম মান্না আর সালওয়া। বলেছিলাম: আমরা যে উত্তম পবিত্র জীবিকা তোমাদের দিয়েছি, তা থেকে খাও। (কিন্তু তারা যুলুম করলো) তবে তারা আমাদের প্রতি যুলুম করেনি, বরং যুলুম তারা নিজেদের প্রতিই করেছে। |
2-58 : স্মরণ করো, আমরা যখন বলেছিলাম: তোমরা এই জনপদে (জেরুযালেম - এ) প্রবেশ করো, আর সেখানকার যেখান থেকে ইচ্ছে খাও আনন্দচিত্তে। তবে শহরের মূলগেইট দিয়ে ঢুকবে সাজদা করে (বিনীত হৃদয়ে) এবং (ঢোকার সময়) বলবে: ‘হিত্তাতুন হিত্তাতুন’। তাহলেই আমরা তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবো এবং কল্যাণকামীদের প্রতি আমাদের অনুগ্রহের মাত্রা বাড়িয়ে দেবো। |
2-59 : কিন্তু যারা (সেখানে ঢুকে) যুলুম (অত্যাচার) - এ লিপ্ত হয়, তারা তাদেরকে শিখিয়ে দেয়া কথাটি বদল করে তার স্থলে অন্যকথা বলছিল। ফলে যারা যুলুম করলো, আমরা আকাশ থেকে তাদের উপর নাযিল করলাম আযাব, কারণ তারা করেছিল ফাসেকি (সীমালংঘন)। |
2-60 : আরো স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন মূসা (তীহের মরু প্রান্তরে) তার কওমের জন্যে পানি প্রার্থনা করেছিল, তখন আমরা তাকে বলেছিলাম: ‘তোমার লাঠি দিয়ে এই পাথরটিতে আঘাত করো।' (মূসার আঘাতের) ফলে তা (পাথরটি) থেকে প্রবাহিত হয়ে পড়ে বারটি ঝর্ণাধারা। প্রত্যেক (গোত্রের) লোকেরা চিনে নেয় নিজেদের পানি গ্রহণের স্থান (নিজস্ব ঝর্ণা)। আমি তাদের বললাম: ‘পানাহার করো আল্লাহর দেয়া রিযিক থেকে এবং দেশে অশান্তি সৃষ্টি করোনা দুষ্কৃতকারীদের মতো।’ |
2-61 : আর (স্মরণ করো) যখন তোমরা বলেছিলে: ‘হে মূসা! আমরা তো (দীর্ঘদিন) এক ধরণের খাদ্যের উপর সবর করে থাকতে পারিনা। সুতরাং, তুমি তোমার রবের কাছে আমাদের জন্যে দোয়া করো, তিনি যেনো আমাদের জন্যে জমিন থেকে উৎপন্ন শাক - সবজি, শশা, গম (বা রসূন), পেয়াজ ও ডালের ব্যবস্থা করে দেন।’ (তখন মূসা তোমাদের) বলেছিল: ‘তোমরা কি একটা উত্তম খাদ্যকে আদনা (নিম্ন মানের) খাদ্যের সাথে বদল করতে চাও? তবে কোনো শহরে চলে যাও, তোমরা যা চাইছো, সেখানে গেলে সেগুলো পাবে।’ শেষ পর্যন্ত তারা হীনতা ও দারিদ্রে নিমজ্জিত হলো এবং কামাই করলো আল্লাহর গজব। তাদের এই (লাঞ্ছনার) কারণ ছিলো এই যে, তারা কুফুরি করেছিল আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি এবং নবীদের কতল করছিল না - হকভাবে। এই ধরণের অবাধ্যতা আর সীমালংঘনের কারণেই তারা পতিত হয়েছিল এই অবস্থায়। |
2-62 : নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, আর যারা ইহুদি হয়েছে এবং যারা নাসারা ও সাবি, তাদের মধ্য থেকে যারাই ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি, পরকালের প্রতি এবং আমলে সালেহ্ করবে, তাদের জন্যে পুরস্কার রয়েছে তাদের রবের কাছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা মনোকষ্টও পাবেনা। |
2-63 : আরো স্মরণ করো, আমরা যখন তোমাদের উপর তুর (পাহাড়) তুলে ধরে তোমাদের থেকে পাকা অংগীকার গ্রহণ করেছিলাম, বলেছিলাম: আমরা তোমাদের যে কিতাব দিয়েছি তা শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং তাতে যেসব বিধি বিধান রয়েছে সেগুলো যিকির (আলোচনা, অনুশীলন ও অনুবর্তন) করো, তবেই তোমরা রক্ষা পাবে। |
2-64 : কিন্তু এরপরও তোমরা তোমাদের অংগীকার ভংগ করলে। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর ফযল এবং রহমত না হতো, তাহলে অবশ্যি তোমরা ধ্বংস হয়ে যেতে। |
2-65 : তোমাদের মধ্যে যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালংঘন করেছিল, তাদের বিষয়টা তোমরা অবশ্যি জানো। আমরা তাদের বলেছিলাম: ‘তোমরা হীন - ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।’ |
2-66 : এই ঘটনাকে আমরা একটা উদাহরণ বানিয়ে দিয়েছি তাদের সমকালীন এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে এবং এটাকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের বিষয় বানিয়ে দিয়েছি সচেতন লোকদের জন্যে। |
2-67 : স্মরণ করো, যখন মূসা তার কওমকে বলেছিল: ‘আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন একটি গরু যবেহ করতে।’ তারা বললো: ‘তুমি কি আমাদের সাথে বিদ্রুপ করছো?’ সে বললো: ‘আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই জাহিলদের মতো কথা বলা থেকে।’ |
2-68 : তারা বললো: ‘তোমার প্রভুর কাছে আমাদের জন্যে দোয়া করো, তিনি যেনো পরিষ্কার করে বলে দেন গরুটা কেমন হবে?’ সে বললো: ‘তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, সেটি হবে এমন একটি গরু যা বুড়াও নয়, কচি বাছুরও নয়, বরং এ উভয়ের মাঝামাঝি মধ্য বয়সের। সুতরাং তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে তা পালন করো।’ |
2-69 : তারা বললো: ‘(হে মূসা!) তোমার প্রভুর কাছে আমাদের জন্যে দোয়া করো, তিনি যেনো বলে দেন, গরুটির রঙ কি হবে?’ সে (মূসা) বললো: ‘তিনি বলেছেন সেটি হতে হবে হলুদ রঙের এমন গাঢ় উজ্জ্বল বর্ণের যা মুগ্ধ করবে দর্শকদের। |
2-70 : তারা বললো: ‘আমাদের জন্যে দোয়া করো তোমার প্রভুর কাছে, তিনি যেনো বলে দেন - আসলে গরুটি কেমন হবে? আমরা গরুটির ধরণ সম্পর্কে সংশয়ে আছি। তবে ইনশাল্লাহ আমরা সঠিক (গরু) টির সন্ধান অবশ্যি পেয়ে যাবো।’ |
2-71 : সে বললো: ‘তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, সেটি হবে এমন একটি গরু যেটি কোনো কাজে ব্যবহৃত হয়নি, না জমি চাষে, আর না পানি সেচে, সুস্থ - সবল নিখুঁত গরু।’ তারা বললো: ‘এবার তুমি সঠিক বর্ণনা নিয়ে এসেছো।’ অতপর তারা সেটি যবেহ করলো, যদিও তারা তা (গরু যবেহ) করতে সহজে প্রস্তুত ছিলোনা। |
2-72 : আরো স্মরণ করো, তোমরা যখন এক ব্যক্তিকে কতল (হত্যা) করেছিলে, অতপর পরস্পরের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করছিলে। অথচ আল্লাহ (তা) বের করে আনার (প্রকাশ করার) সিদ্ধান্ত নেন, তোমরা যা গোপন করছিলে। |
2-73 : তখন আমরা বলেছিলাম: ‘ওকে (মৃত ব্যক্তির লাশকে) আঘাত করো এটির (যবেহ করা গরুটির) কোনো অংশ দিয়ে।’ এভাবেই আল্লাহ জীবিত করবেন মৃতকে এবং তোমাদের দেখাবেন তাঁর নিদর্শন যাতে করে তোমরা আকল খাটিয়ে চলতে পারো। |
2-74 : এর পরেও কঠিন হয়ে গেলো তোমাদের কলবগুলো (হৃদয়গুলো)। সেগুলো কঠিন হয়ে গেলো পাথরের মতো, কিংবা তার চাইতেও কঠিন। আর নিশ্চয়ই এমন অনেক পাথর আছে, যেগুলো থেকে প্রবাহিত হয় নহর। এমনও অনেক পাথর আছে, যেগুলো ফেটে যায় এবং সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসে পানি। এমন পাথরও আছে যেগুলো আল্লাহর ভয়ে (কাঁপতে কাঁপতে) নিচের দিকে ধ্বসে পড়ে। আল্লাহ মোটেও গাফিল নন তোমাদের আমল (কর্মকান্ড) সম্পর্কে। |
2-75 : (হে মুসলিম উম্মাহ!) এখন বলো, এই লোকদের ব্যাপারেই কি তোমরা আশা করো যে, তারা তোমাদের দাওয়াতের প্রতি ঈমান আনবে? অথচ এদের অবস্থা হলো, এদেরই একটি গ্রুপ আল্লাহর কালাম শুনতো, তারপর বুঝে শুনে তা তাহরিফ (বিকৃত) করতো। অথচ তারা জানতো (এটা আল্লাহর কালাম)। |
2-76 : তারা (ইহুদিরা) যখন মোলাকাত করে মুমিনদের সাথে, তখন বলে: ‘আমরা ঈমান এনেছি।’ আবার যখন তারা একে অপরের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে: ‘যে বিষয়গুলো আল্লাহ তোমাদের কাছে উন্মুক্ত করেছেন সেগুলো কি তোমরা ওদের (মুসলিমদের) বলে দিচ্ছো? - এতে করে তো ওরা তোমাদের প্রভুর সামনে তোমাদের বিরুদ্ধে হুজ্জত (প্রমাণ) দাঁড় করাবে, তোমরা কি আকল খাটাওনা?’ |
2-77 : তারা কি জানেনা যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন, যা তারা গোপন করে এবং যা তারা এলান (ঘোষণা) করে? |
2-78 : তাদের মধ্যে আরেকদল লোক আছে, যারা উম্মি (নিরক্ষর), তারা কিতাবের এলেম রাখেনা, ভিত্তিহীন আশা ভরসা নিয়ে তারা চলে। নিছক ধারণা অনুমানই তাদের পথ প্রদর্শক। |
2-79 : তাই, ঐসব লোকদের জন্যে ধ্বংস - দুর্ভোগ অবধারিত, যারা নিজেদের হাতে কিতাব লেখে, তারপর লোকদের বলে: ‘এটি আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।’ সামান্য মূল্যের স্বার্থ ক্রয়ের জন্যে তারা একাজ করে। সুতরাং তাদের জন্যে ধ্বংস তারা নিজেদের হাতে যা রচনা করেছে সেটার জন্যে এবং ধ্বংস তাদের জন্যে এর মাধ্যমে তারা যা কামাই করে সেটার জন্যে। |
2-80 : তারা বলে: ‘আগুন (জাহান্নাম) কখনো আমাদের স্পর্শ করবেনা, করলেও তা করবে মাত্র কয়েক দিনের জন্যে।’ (হে নবী) এদের জিজ্ঞাসা করো: ‘তোমরা কি (এব্যাপারে) আল্লাহর কাছ থেকে কোনো অংগীকার আদায় করে নিয়েছো, যে অংগীকারের আল্লাহ কখনো খেলাফ করবেন না? নাকি তোমরা আল্লাহর প্রতি আরোপ করছো এমন কথা (অপবাদ), যার এলেম তোমাদের নেই?’ |
2-81 : হ্যা, যারাই কামাই করে পাপকর্ম এবং তাদের ঘেরাও করে ফেলে তাদের পাপরাশি, তারাই হবে ‘আসহাবুন নার’ (আগুনের অধিবাসী), সেখানে (আগুনের মধ্যে) থাকবে তারা চিরকাল। |
2-82 : অন্যদিকে, যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তারা হবে ‘আসহাবুল জান্নাহ’ (জান্নাতের অধিবাসী), সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। |
2-83 : আরো স্মরণ করো, (এ কথাগুলোর উপর) আমরা যখন বনি ইসরাঈল থেকে পাকা অংগীকার নিয়েছিলাম যে: ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবেনা; পিতা - মাতা, আত্মীয় স্বজন এবং এতিম ও মিসকিনদের সাথে ইহসান (উত্তম ও সদয় আচরণ) করবে; মানুষের সাথে ভালো কথা বলবে; সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত প্রদান করবে,’ তখনো অল্প কিছু লোক ছাড়া তোমরা সবাই সেই অংগীকার ভংগ করেছিলে এবং এখনো তা থেকে মুখ ফিরিয়েই চলেছো। |
2-84 : আরো স্মরণ করো, যখন আমরা তোমাদের থেকে (একথার উপরও) পাকা অংগীকার নিয়েছিলাম: ‘তোমরা নিজেদের ভেতর রক্তপাত করবেনা এবং নিজেদের লোকজনদের স্বদেশ থেকে বের করে দেবেনা।’ এই (অংগীকারের) কথাগুলো তোমরা স্বীকার করে নিয়েছিলে এবং এর সাক্ষী তোমরা নিজেরাই। |
2-85 : এই পাকা অংগীকার করার পরও সেই তোমরাই তো আজ নিজেদের পরস্পরকে কতল (হত্যা) করছো, একদল আরেকদলকে তাদের ঘর বাড়ি - স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করছো, তাদের বিরুদ্ধে (তাদের শত্রুদের) সাহায্য করছো পাপকর্ম এবং সীমালংঘনের মাধ্যমে। তারা যুদ্ধবন্দী হয়ে তোমাদের কাছে এলে তাদের মুক্তির জন্যে মুক্তিপণ লেনদেন করছো, অথচ তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিষ্কার করাটাই ছিলো তোমাদের জন্যে হারাম। তবে কি তোমরা (আল্লাহর) কিতাবের কিছু অংশের প্রতি বিশ্বাস রাখো আর কিছু অংশ করো অস্বীকার - অমান্য? তোমাদের মধ্যে যারাই এমনটি করে, তাদের প্রতিদান (শাস্তি) এছাড়া আর কিছুই নয় যে, দুনিয়ার জীবনে তাদের গ্রাস করবে হীনতা - লাঞ্ছনা - গঞ্জনা, আর কিয়ামতের দিন তাদের নিক্ষেপ করা হবে কঠিনতম আযাবে। আল্লাহ মোটেও গাফিল নন তোমাদের আমলের (কর্মকান্ডের) ব্যাপারে। |
2-86 : এরাই সেইসব লোক, যারা ক্রয় করেছে দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের (সাফল্যের) বিনিময়ে। সুতরাং তাদের থেকে মোটেও হালকা (লাঘব) করা হবেনা আযাব এবং কোনো প্রকার সাহায্যও করা হবেনা তাদের। |
2-87 : আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, তার পরে পর্যায়ক্রমে রসূলদের পাঠিয়েছি আর মরিয়মের পূত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শনসমূহ দিয়েছি এবং তাকে সাহায্য করেছি রূহুল কুদুস - কে দিয়ে। তোমরা তো এমনটিই করে এসেছো, যখনই কোনো রসূল তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধ কোনো বিধান নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে, তোমরা তার সাথে তাকাব্বরি (দাম্ভিকতা) প্রদর্শন করেছো, তাদের কিছু (রসূল) - কে তোমরা অস্বীকার করেছো, আর কিছু (রসূল) - কে করেছো কতল। |
2-88 : তারা বলে: ‘আমাদের কলবসমূহ সংরক্ষিত (যা আমরা বুঝে এবং বিশ্বাস করে নিয়েছি তার বাইরে আর কিছুই আমাদের হৃদয় সমূহে ঢুকবেনা)।’ না (ব্যাপার তা নয়), বরং আল্লাহ তাদের লানত করেছেন তাদের কুফুরির কারণে। সুতরাং, অতি অল্পই তারা ঈমান আনে। |
2-89 : যখন তাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এমন একটি কিতাব (আল কুরআন) আসলো, যেটি তসদিক (সত্যায়িত) করে সেই কিতাবকে (তাওরাতকে) যেটি পূর্ব থেকেই রয়েছে তাদের কাছে। যদিও ইতোপূর্বে তারা কাফিরদের উপর বিজয়ের জন্যে শেষ (নবীর) আগমনের প্রার্থনা করতো; কিন্তু যখনই সে আসলো, যার পরিচয় তাদের কাছে জানা ছিলো পরিষ্কারভাবে, তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করলো। সুতরাং এই কাফিরদের (প্রত্যাখ্যানকারীদের) উপর আল্লাহর লানত। |
2-90 : কতোইনা মন্দ সেই জিনিসটি যার বিনিময়ে তারা বিক্রয় করছে নিজেদেরকে। তাহলো, আল্লাহ যা (যে কুরআন) নাযিল করেছেন, শুধু এই জিদের বশবর্তী হয়ে তারা তার প্রতি কুফুরি করছে যে, আল্লাহ তাঁর দাসদের মধ্যে যাকে (মুহাম্মদকে) চেয়েছেন তার প্রতি সেই অনুগ্রহ নাযিল করেছেন। ফলে তারা অর্জন করলো গজবের উপর গজব। আর কাফিরদের জন্যে তো অপমানকর আযাব রয়েছেই। |
2-91 : আর যখন তাদের বলা হয়: ‘তোমরা ঈমান আনো সেই জিনিসের (কুরআনের) প্রতি যা আল্লাহ নাযিল করেছেন’, তখন তারা বলে: ‘আমরা তো শুধু ঈমান রাখি সেই জিনিসের প্রতি যা নাযিল হয়েছে আমাদের (বনি ইসরাঈলের) উপর।’ - এর বাইরে যা (যে কুরআন) নাযিল হয়েছে তা তারা প্রত্যাখ্যান করছে। অথচ তা মহাসত্য কিতাব, তাদের কাছে যা (তাওরাত) আছে, সেটাকেও এ কিতাব আল্লাহর কিতাব বলে সত্যায়ন করে। (হে মুহাম্মদ) তাদের জিজ্ঞেস করো: ‘তোমরা যদি মুমিনই হয়ে থাকো তবে কেন ইতোপূর্বে আল্লাহর নবীগণকে কতল করেছিলে?’ |
2-92 : অবশ্যি মূসা তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল, তারপরেও তোমরা গো - বাছুর বানিয়ে সেটাকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলে। এতো বড় যালিম ছিলে তোমরা। |
2-93 : স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন আমরা তোমাদের মাথার উপর তুর পাহাড় উঠিয়ে ধরে তোমাদের থেকে পাকা অংগীকার গ্রহণ করেছিলাম, বলেছিলাম: ‘আমরা তোমাদের যা (যে কিতাব ও বিধান) দিলাম তা মজবুতভাবে ধারণ করো এবং (আমার বাণী) শোনো।’ তারা বলেছিল: ‘আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম।’ আসলে তাদের কুফুরির কারণে তাদের অন্তরে গো - বাছুর পূজার শরাবই প্রবেশ করেছিল। বলো (হে মুহাম্মদ): ‘তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকো, তবে তোমাদের ঈমান যার নির্দেশ তোমাদের দেয়, তা কতোইনা নিকৃষ্ট।’ |
2-94 : (হে মুহাম্মদ) বলো: ‘আল্লাহর কাছে আখিরাতের ঘর যদি গোটা মানবজাতিকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তোমাদের জন্যেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তবে তোমরা (দ্রুত সেখানে যাওয়ার জন্যে) মৃত্যু কামনা করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।’ |
2-95 : কিন্তু কখনো তারা তা (মৃত্যু) কামনা করবেনা, কারণ তাদের দুহাত যা কামাই করে সেখানে (আখিরাতের জন্যে) পাঠিয়েছে (তা খুবই ভয়ানক)। আল্লাহ খুব ভালোভাবেই জানেন এই যালিমদের অবস্থা। |
2-96 : তুমি তাদেরকে পাবে জীবনের প্রতি সমস্ত মানুষের চাইতে অধিক লোভী, এমনকি মুশরিকদের চাইতেও। তাদের প্রত্যেকেরই আকাংখা, তাকে যদি হাজার বছর বয়স দেয়া হতো! কিন্তু দীর্ঘ বয়স তাকে কিছুতেই আযাব থেকে দূরে রাখতে পারবেনা। তারা যা আমল (যেসব কর্মকান্ড) করছে, তা আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে। |
2-97 : বলো (হে মুহাম্মদ): যে কেউ শত্রুতা করবে জিবরিলের সাথে, তার জেনে রাখা উচিত, জিবরিল তা (এই কুরআন) আল্লাহর হুকুমেই তোমার কলবে নাযিল করছে। এ গ্রন্থ তোমার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাব সমূহের সত্যায়নকারী এবং সত্যপথ প্রদর্শক ও সুসংবাদ মুমিনদের জন্যে। |
2-98 : যে কেউ শত্রু হবে আল্লাহর, তাঁর ফেরেশতাদের, তাঁর রসূলদের এবং জিবরিল ও মিকালের, অবশ্যি আল্লাহও হবেন সেই কাফিরদের শত্রু। |
2-99 : নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ। ফাসিকরা ছাড়া আর কেউই এগুলোকে অস্বীকার করেনা। |
2-100 : ব্যাপার কি এ নয় যে, তারা যখনই কোনো বিষয়ে অংগীকার করেছে, তাদের একদল লোক অবশ্যি তা ভংগ করেছে? বরং তাদের অধিকাংশই ঈমান রাখেনা। |
2-101 : আর যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রসূল এলো, যে তাদের কাছে থাকা কিতাবের সত্যায়নকারী, তখন পূর্বে কিতাব দেয়া লোকদের একটি দল আল্লাহর এ কিতাবটিকে তাদের পেছনে নিক্ষেপ করলো, যেনো তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানতোনা! |
2-102 : পক্ষান্তরে, তারা এত্তেবা করতে থাকলো সেইসব জিনিসের, সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা যেসব (ম্যাজিক - মন্ত্র) পাঠ করতো। সুলাইমান কুফুরি করেনি, কুফুরি করেছিল শয়তানরা। তারা মানুষকে ম্যাজিক শিক্ষা দিতো এবং বেবিলনে দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের প্রতি যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছিল। তারা (হারূত ও মারূত) কোনো ব্যক্তিকে কিছুই শিক্ষা দিতোনা একথা পরিষ্কার করে বলে দেয়া ছাড়া যে: ‘দেখো, আমরা কিন্তু অবশ্যি ফেতনা (পরীক্ষা স্বরূপ), সুতরাং তুমি কুফুরিতে নিমজ্জিত হয়োনা।’ তা সত্ত্বেও তারা তাদের দুজন থেকে এমন জিনিস শিখতো, যা স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতো। অথচ এর দ্বারা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া তারা কারো কোনো ক্ষতি করতে পারতোনা। তারা যা শিখতো তা তাদেরই ক্ষতি করতো, কোনো উপকার করতোনা। তারা এ কথা ভালো করেই জানতো, এসব (ম্যাজিক - মন্ত্র) - এর ক্রেতাদের জন্যে আখিরাতে কোনো অংশ নেই। ওটা কতোইনা নিকৃষ্ট জিনিস, যার বিনিময়ে তারা বিক্রি করে দিয়েছে নিজেদের জীবন। হায়, এ বিষয়টা যদি তারা জানতো! |
2-103 : হায়, তারা যদি ঈমানের পথে চলতো এবং এসব মন্দ কাজ থেকে নিজেদের রক্ষা করতো, তবে আল্লাহর কাছে কতো উত্তম প্রতিফলই না তারা লাভ করতো; হায় যদি তারা এলেম রাখতো! |
2-104 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা (আল্লাহর রসূলকে) ‘রায়েনা’ বলোনা, বরং ‘উনযুরনা’ (আমাদের প্রতি দৃষ্টি দিন) বলো এবং মনোযোগ সহকারে (নবীর কথা) শোনো। যারা (এটা) অমান্য করবে, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। |
2-105 : আহলে কিতাবের (ইহুদি - খৃষ্টানদের) মধ্যে যারা কুফুরি করেছে, তারা এবং মুশরিকরা চায়না তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে কোনো কল্যাণ নাযিল হোক। অথচ (এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর বিষয়), আল্লাহ যাকে চান, নিজের রহমত প্রদানের জন্যে মনোনীত করেন এবং আল্লাহ্ই মহানুগ্রহের মালিক। |
2-106 : আমরা যে আয়াতকে নসখ্ করি, কিংবা ভুলিয়ে দিই, তার স্থলে তার চাইতে উত্তম কিংবা অনুরূপ (আয়াত) নিয়ে আসি। তুমি কি জানোনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম? |
2-107 : তুমি কি জানোনা, মহাকাশ এবং পৃথিবীর রাজত্ব - কর্তৃত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর? এবং তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অলিও নেই, সাহায্যকারী নেই। |
2-108 : তোমরা কি এরাদা (ইচ্ছা) করেছো, তোমাদের রসূলকে সেরকম সওয়াল করতে, যেরকম সওয়াল করা হয়েছিল ইতোপূর্বে মূসাকে? আর যে কেউ ঈমান বদল করে কুফুরি গ্রহণ করবে, সে অবশ্যি সঠিক সোজা পথ হারিয়ে ফেলবে। |
2-109 : আহলে কিতাবের অনেকেই তোমরা ঈমান আনার পর তোমাদের পুনরায় কুফুরিতে ফিরিয়ে নিতে চায়। হক (সত্য) তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবার পরও শুধু তাদের মনের ভেতরের বিদ্বেষের কারণে তারা এমনটি কামনা করে। তবে তোমরা তাদের সাথে ক্ষমা সুন্দর আচরণ করো এবং তাদের (এসব অপরাধ) উপেক্ষা (overlook) করে চলো, যতোক্ষণ না আল্লাহ কোনো নির্দেশ প্রদান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে শক্তিমান। |
2-110 : এবং সালাত কায়েম করো আর যাকাত পরিশোধ করো। তোমাদের নিজেদের (আখিরাতের) জন্যে যে কোনো ভালো কাজই অগ্রিম পাঠাবে, তা অবশ্যি ওখানে গিয়ে আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যে আমলই করোনা কেন, অবশ্যি তা আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে। |
2-111 : তারা আরো বলে: ‘কখনো দাখিল হবেনা জান্নাতে ইহুদি বা খৃষ্টান ছাড়া অন্য কেউ।’ - আসলে এটা তাদের (অলীক) কামনা মাত্র। তুমি তাদের বলো: ‘এ দাবির ব্যাপারে তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে দাবির পক্ষে প্রমাণ দেখাও।’ |
2-112 : হ্যাঁ (জেনে রাখো, জান্নাতে কেবল সে - ই যাবে) যে নিজেকে পূর্ণরূপে সঁপে দিয়েছে আল্লাহর জন্যে (আল্লাহর বিধান ও নির্দেশের কাছে) এবং বাস্তবেও অবলম্বন করেছে সুন্দর ও কল্যাণের পথ। তার প্রভুর কাছে অবশ্যি রয়েছে তার পুরষ্কার। তাছাড়া এ ধরণের লোকদের কোনো ভয়ও থাকবেনা এবং তারা দু:খও পাবেনা। |
2-113 : ইহুদিরা বলে: ‘নাসারাদের (খৃষ্টানদের) কোনো ভিত্তি নাই।’ আর নাসারারা বলে: ‘ইহুদিদের কোনো ভিত্তি নেই।’ অথচ তারা (উভয়েই) তিলওয়াত করে আল কিতাব। একইভাবে যাদের কাছে (কিতাবের) এলেমই নেই, তারাও (সেই মুশরিকরাও) বলে এদের অনুরূপ কথা। আল্লাহ তাদের মাঝে ফায়সালা প্রদান করবেন কিয়ামতের দিন, যে বিষয়ে (পৃথিবীতে) তারা এখতেলাফ করছে। |
2-114 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে মানুষকে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ - আলোচনা করতে বাধা প্রদান করে এবং সেগুলোর ধ্বংসের কাজে তৎপর হয়? এসব লোকেরা সেগুলোতে (আল্লাহর মসজিদসমূহে) প্রবেশ করার অধিকার রাখেনা ভীত ও বিনয়ী হওয়া ছাড়া। দুনিয়াতে তাদের জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনা - অমর্যাদা, আর আখিরাতেও তাদের জন্যে রয়েছে বড় আযাব। |
2-115 : আল্লাহ্ই মালিক পূর্ব এবং পশ্চিমের। সুতরাং তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাওনা কেন, সেদিকই আল্লাহর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বব্যাপী বিরাজমান এবং সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী। |
2-116 : তারা বলে: ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র (এসব অপবাদ থেকে)। বরং মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর, এবং সবাই তাঁর অনুগত। |
2-117 : তিনিই মহাকাশ ও পৃথিবীর অস্তিত্বদানকারী। তিনি যখন কোনো কিছু সূচনা করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন শুধু সেটার উদ্দেশ্যে বলেন: ‘হও’, আর সংগে সংগে তা হয়ে যায়। |
2-118 : আর যাদের কোনো এলেম নেই, তারা বলে: ‘আল্লাহ (সরাসরি) আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? অথবা আমাদের কাছে কোনো নিদর্শন আসেনা কেন?’ এই একই ধরণের কথা বলতো এদের পূর্বেকার (অজ্ঞ - পথভ্রষ্ট) লোকেরা। তাদের সকলের কলবসমূহ (মানসিকতা) একই রকম। আমরা নিদর্শনসমূহ পরিষ্কারভাবে বয়ান করে দিয়েছি সেইসব লোকদের জন্যে যারা একিন রাখে। |
2-119 : (হে মুহাম্মদ! এটাও তাদের জন্যে একটা সুস্পষ্ট নিদর্শন যে,) আমরা তোমাকে মহাসত্য (আল কুরআন ও ইসলাম) দিয়ে পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে। জাহিমের (প্রজ্জ্বলিত আগুনের) অধিবাসীদের ব্যাপারে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবেনা। |
2-120 : ইহুদি এবং খৃষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো রাজি খুশি হবেনা, যতোক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম পথের অনুসরণ করো। তুমি তাদের বলো: ‘আল্লাহর দেয়া ‘হুদা’ই (জীবন যাপন পদ্ধতিই) একমাত্র সঠিক হুদা।’ তোমার কাছে ‘আল এলেম’ (মহা সত্য জ্ঞান আল কুরআন) আসার পরও যদি তুমি তাদের খেয়াল খুশির এত্তেবা করো, তবে আল্লাহর পাকড়াও থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে তুমি কোনো অলিও পাবেনা, আর কোনো সাহায্যকারীও পাবেনা। |
2-121 : আমরা যাদের কিতাব দিয়েছি তারা তা তিলাওয়াত করে (পড়ে এবং অনুসরণ করে) তিলাওয়াতের হক আদায় করে। এরাই তার (অর্থাৎ কিতাবের) প্রতি ঈমান রাখে। আর যারা এটির (কুরআনের) প্রতি কুফুরি করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। |
2-122 : হে বনি ইসরাঈল! স্মরণ করো আমার সেই নিয়ামতের কথা, যার দ্বারা আমি তোমাদের অনুগৃহীত করেছিলাম এবং (একসময়) তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছিলাম বিশ্ববাসীর উপর। |
2-123 : আর সতর্ক হও সেই দিনটির ব্যাপারে, যেদিন কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তির কোনো কাজে আসবেনা, যেদিন কোনো বিনিময় বা ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করা হবেনা এবং কোনো শাফায়াতও কিছুমাত্র কাজে লাগবেনা এবং যেদিন কাউকেও কোনো প্রকার সাহায্যও করা হবেনা। |
2-124 : স্মরণ করো, যখন ইবরাহিমকে তার প্রভু কয়েকটি নির্দেশের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পরিপূর্ণ করেছিল (উত্তীর্ণ হয়েছিল), তখন তার প্রভু তাকে বলেছিলেন: ‘আমি তোমাকে মানবজাতির একজন নেতা মনোনীত করছি।’ সে বললো: ‘আমার সন্তানদের ব্যাপারেও কি এই সিদ্ধান্ত?’ তিনি বললেন: ‘আমার প্রতিশ্রুতি যালিমদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।’ |
2-125 : আর সেই সময়কার কথা স্মরণ করো, যখন আমরা এই (কাবা) ঘরকে মানবজাতির মিলনকেন্দ্র এবং নিরাপত্তার স্থল বানিয়ে দিয়েছিলাম, আর (মানুষকে বলেছিলাম:) ‘তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে মুসাল্লা (নামাযের স্থান) বানাও।’ ইবরাহিম আর ইসমাঈলকে নির্দেশ দিয়েছিলাম: ‘তোমরা আমার (কা’বা) ঘরকে পবিত্র করো তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকু সাজদাকারীদের জন্যে।’ |
2-126 : আরো স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম (দোয়া করে) বলেছিল: ‘আমার প্রভু! এই মক্কা নগরকে নিরাপদ নগর বানিয়ে দাও এবং এর অধিবাসীদের যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনবে, ফল ফলারি দিয়ে তাদের জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করো।’ তিনি বললেন: আর যে কুফুরি করবে তাকেও অল্প কিছুকাল জীবন সামগ্রী সরবরাহ করবো, তারপর আমি তাকে বাধ্য করবো আগুনের আযাব ভোগ করতে, আর খুবই নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল সেটা। |
2-127 : আর স্মরণ করো, ইবরাহিম এবং (তার পুত্র) ইসমাঈল যখন এই ঘরের ভিত উঠাচ্ছিল, তখন তারা (দোয়া করে) বলেছিল: ‘‘আমাদের প্রভু! আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের এ কাজ কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সবকিছু শোনো, সবকিছু জানো। |
2-128 : আমাদের প্রভু! আমাদের দু’জনকেই তোমার প্রতি ‘মুসলিম’ (অনুগত - আত্মসমর্পিত) বানাও, আর আমাদের বংশধরদের থেকেও তোমার প্রতি একটি ‘মুসলিম উম্মাহ’ (অনুগত জাতি) বানাও। আমাদেরকে আমাদের মানাসিক (ইবাদত পদ্ধতি) শিখিয়ে দাও এবং আমাদের অনুশোচনা গ্রহণ করে আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয়ই তুমি অনুশোচনা গ্রহণকারী অতীব ক্ষমাশীল, দয়াময়। |
2-129 : আমাদের প্রভু! এদের (আমাদের বংশধরদের) কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল পাঠিয়ো, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন, তাদেরকে (তোমার) কিতাব এবং হিকমা শিক্ষা দেবেন আর তাদেরকে তাযকিয়া করবেন। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞানী।’’ |
2-130 : যে নিজেকে বোকা - নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া ‘মিল্লাতে ইবরাহিম’ (ইবরাহিমের আদর্শ ও জীবন পদ্ধতি) থেকে মুখ ফিরাবে কে? দুনিয়াতে আমি তাকে বাছাই করেছি আর আখিরাতে সে হবে ন্যায়পরায়ণদের অন্তরভুক্ত। |
2-131 : যখন তার প্রভু তাকে বলেছিল: ‘আত্মসমর্পণ করো।’ সে বলেছিল: ‘আমি আত্মসমর্পণ করলাম রাববুল আলামিনের উদ্দেশ্যে।’ |
2-132 : এই একই বিষয়ের অসিয়ত করেছিল ইবরাহিম তার সন্তানদের এবং (তার নাতি) ইয়াকুব (নিজের সন্তানদের)। (তারা বলেছিল:) ‘হে আমার সন্তানেরা! আল্লাহ তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন ‘আদ্ দীন’। সুতরাং আমৃত্যু তোমরা মুসলিম (আল্লাহর অনুগত) হয়ে থাকবে।’ |
2-133 : তোমরা কি সাক্ষী (উপস্থিত) ছিলে, যখন হাজির হয়েছিল ইয়াকুবের মৃত্যু (সময়)? যখন সে তার সন্তানদের বলেছিল: ‘আমার পরে তোমরা কিসের ইবাদত করবে?’ তারা বলেছিল: ‘আমরা ইবাদত করবো আপনার ইলাহ্র এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহিম, ইসমাঈল আর ইসহাকের ইলাহ্র। তিনিই একমাত্র ইলাহ্। আমরা তাঁর প্রতি ‘মুসলিম’ (অনুগত - আত্মসমর্পিত) হয়ে থাকবো।’ |
2-134 : সেটি ছিলো একটি উম্মাহ, তারা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা উপার্জন (আমল) করেছে তা - ই (তার প্রতিফলই) তারা পাবে। আর তোমরা পাবে তোমাদের উপার্জনের প্রতিফল। তারা যা আমল করে গেছে সে সম্পর্কে তোমাদের সওয়াল (জিজ্ঞাসাবাদ) করা হবেনা। |
2-135 : আর তারা বলে: ‘ইহুদি হয়ে যাও, কিংবা খৃষ্টান হয়ে যাও, তবেই হিদায়াত (ঠিক পথ) লাভ করবে।’ (হে মুহাম্মদ) তুমি বলো: ‘বরং, তোমরা সব কিছু ত্যাগ করে ইবরাহিমের আদর্শ গ্রহণ করো। আর তিনি মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিলেন না।’ |
2-136 : (হে মুসলিমরা!) তোমরা বলো: ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি। তাছাড়া আমরা ঈমান রাখি তার প্রতি, যা নাযিল হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা নাযিল হয়েছিল ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক এবং ইয়াকুব ও তার সন্তানদের প্রতি; আর যা নাযিল হয়েছিল মূসা আর ঈসার প্রতি; আর যা প্রদান করা হয়েছিল অন্যান্য নবীগণকে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। আমরা তাদের (নবী - রসূলগণের) কারো মধ্যে কোনো প্রকার পার্থক্য করিনা। আমরা তো শুধু তাঁরই (আল্লাহরই) জন্যে মুসলিম।’ |
2-137 : তোমরা যে যে বিষয়ে ঈমান এনেছো, তারা যদি তোমাদের মতো সেরকম ঈমান আনে, তাহলেই তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, তবে তারা অবশ্যি বিরুদ্ধবাদী। তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্ই তোমার জন্যে যথেষ্ট। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। |
2-138 : (বলো:) ‘আমাদের রঙ (ধর্ম) হলো আল্লাহর রঙ (ইসলাম)। এবং রঙের দিক থেকে আল্লাহর চেয়ে সুন্দর আর কে? আমরা তাঁরই ইবাদতকারী (অনুগত ও হুকুমপালনকারী)।’ |
2-139 : বলো (হে মুহাম্মদ!): ‘তোমরা কি আমাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতে চাও আল্লাহর ব্যাপারে? অথচ তিনি আমাদেরও রব এবং তোমাদেরও রব। আমাদের আমল ( - এর প্রতিফল) আমাদের, আর তোমাদের আমল ( - এর প্রতিফল) তোমাদের। আর আমরা তাঁর (আল্লাহর) জন্যে নিষ্ঠাবান।’ |
2-140 : নাকি তোমরা বলতে চাও যে, ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক এবং ইয়াকুব ও তার বংশধররা ইহুদি কিংবা নাসারা ছিলো? (হে মুহাম্মদ! তাদের) বলো: ‘তোমরাই কি বেশি জানো, নাকি আল্লাহ? ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে হতে পারে, যার কাছে আল্লাহর নিকট থেকে আসা প্রমাণ বর্তমান থাকা সত্ত্বেও সে তা গোপন করে? আল্লাহ মোটেও গাফিল নন তোমাদের আমল (কর্মকান্ড) - এর ব্যাপারে। |
2-141 : সেটি ছিলো একটি উম্মাহ, তারা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা উপার্জন করেছে তার প্রতিফলই তারা পাবে। আর তোমরা পাবে তোমাদের উপার্জন - এর প্রতিফল। তোমাদের সওয়াল (জিজ্ঞাসাবাদ) করা হবেনা তাদের আমল সম্পর্কে। |
2-142 : বোকা নির্বোধ লোকেরা অচিরেই বলবে: ‘কী জিনিস তাদের (মুসলিমদের) ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের সেই কিবলা (বায়তুল মাকদাস) থেকে, যার দিকে ফিরে তারা সালাত আদায় করে আসছিল?’ বলো (হে মুহাম্মদ!): পূর্ব পশ্চিম উভয়টার মালিকই আল্লাহ। তিন যাকে ইচ্ছা সোজা পথ প্রদর্শন করেন। |
2-143 : এভাবে আমরা তোমাদের বানিয়েছি একটি ‘মধ্যপন্থী উম্মাহ’ যাতে করে তোমরা বিশ্ববাসীর জন্যে সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারে তোমাদের জন্যে সাক্ষী। তুমি এ যাবত যেটিকে কিবলা বানিয়ে সালাত আদায় করে আসছিলে, সেটিকে তো আমরা এজন্যে কিবলা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, যাতে করে আমরা জানতে পারি, কে আমার রসূলের এত্তেবা (অনুসরণ) করে, আর কে তার থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে? নি:সন্দেহে এটা (পরিবর্তিত কিবলা মেনে নেয়া) ছিলো একটা বড় কঠিন কাজ; কিন্তু তাদের জন্যে (মোটেও কঠিন) ছিলনা, আল্লাহ যাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। অবশ্যি আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তোমাদের ঈমান বিনষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি পরম স্নেহপরায়ণ, পরম দয়ালু। |
2-144 : বার বার তোমার আকাশের দিকে (কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ পাওয়ার জন্যে) তাকানোর বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করছি। আমরা অবশ্যি তোমাকে এমন একটি কিবলার (কাবার) দিকে ফিরিয়ে দেবো, যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে। হ্যাঁ, ‘মসজিদুল হারামের’ দিকে মুখ ফিরিয়ে নাও। তোমরা যেখানেই থাকোনা কেন সেটির দিকে মুখ ফিরিয়ে নাও। আর যাদেরকে ইতোপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবেই জানে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এটা সঠিক নির্দেশ। তারা যা করছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ গাফিল নন। |
2-145 : যাদেরকে ইতোপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে, তুমি যদি তাদেরকে সমস্ত দলিল - প্রমাণ নিদর্শনও দেখাও, তবু তারা তোমার কিবলার অনুসরণ করবেনা (কাবাকে কিবলা মেনে নেবেনা)। আর তুমিও তাদের কিবলার অনুসারী নও এবং তারাও তাদের পরস্পরের কিবলার অনুসারী নয়। তোমার কাছে ‘আল এলেম’ (সত্যজ্ঞান) এসে যাবার পরও যদি তুমি তাদের ইচ্ছা - আকাংখার অনুসরণ করো, তবে অবশ্যি তুমি যালিমদের অন্তরভুক্ত হবে। |
2-146 : যাদেরকে আমরা ইতোপূর্বে কিতাব দিয়েছি তারা এটিকে (কাবাকে) ঠিক সেরকমই চেনে, যেমন চেনে নিজেদের ছেলে মেয়েদেরকে। কিন্তু তাদের একটি দল জেনে বুঝে সত্য গোপন করে চলেছে। |
2-147 : এটাই তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে আসা অনিবার্য সত্য। সুতরাং তুমি সংশয়ীদের অন্তরভুক্ত হয়োনা। |
2-148 : প্রত্যেকেরই (প্রত্যেক জাতি - গোষ্ঠীরই) একটি দিক (কিবলা) আছে, যে দিকে সে ফিরে (প্রার্থনা করে)। সুতরাং প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাও সকল কল্যাণকর কাজে। যেখানেই তোমরা থাকোনা কেন, আল্লাহ অবশ্যি তোমাদের সবাইকে একত্র করবেন। অবশ্যি আল্লাহ সকল বিষয়ে শক্তিমান। |
2-149 : যেখান থেকেই তুমি যাত্রা করোনা কেন, সেখান থেকেই (সালাত আদায়ের সময়) তুমি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও। তোমার রবের পক্ষ থেকে এ (কিবলা) অবশ্যি সত্য ও বাস্তব ভিত্তিক ফায়সালা। তোমাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ গাফিল নন। |
2-150 : আর যেখান থেকেই তুমি যাত্রা শুরু করোনা কেন (সালাত আদায়ের সময়) মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও। আর তোমরাও যে যেখানেই থাকো তার (মসজিদুল হারামের) দিকে মুখ ফিরাও, যাতে করে লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দাঁড় করাতে না পারে। তবে যালিমদের কথা ভিন্ন (তারা সর্বাবস্থায়ই কুতর্কে লিপ্ত হয়)। সুতরাং তাদেরকে ভয় পেয়োনা, ভয় করো শুধু আমাকে - আর (আমার ফায়সালা মতো চলো), যাতে করে আমি তোমাদের প্রতি পূর্ণ করে দিতে পারি আমার নিয়ামত (দীন ও কিতাব) এবং যাতে করে তোমরা পরিচালিত হতে পারো সঠিক পথে। |
2-151 : এমনিভাবে (তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে) আমি তোমাদের থেকেই তোমাদের মাঝে একজন রসূল পাঠিয়েছি, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদের তাযকিয়া (সংশোধন ও উন্নত) করে, তোমাদের আল কিতাব (কুরআন) ও হিকমা শিক্ষা দেয় এবং তোমরা যা কিছু জানতে না, সেগুলো তোমাদের শিখায়। |
2-152 : অতএব, তোমরা আমার যিকির করো (আমার নিয়ামতের কথা আলোচনা করো), তাহলে আমি তোমাদের যিকির করবো। আর তোমরা আমার শোকরগুজার হয়ে থাকো এবং (আমার নিয়ামতসমূহ) অস্বীকার করোনা। |
2-153 : হে ঐ সমস্ত লোকেরা, যারা ঈমান এনেছো! তোমরা সবর এবং সালাত দ্বারা সাহায্য (শক্তি) অর্জন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন। |
2-154 : যারা 'ফী সাবিলিল্লাহ' (আল্লাহর পথে) নিহত হয়, তোমরা তাদের মৃত বলোনা; প্রকৃত পক্ষে তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা (তা) বুঝতে পারোনা। |
2-155 : আর অবশ্য অবশ্যি আমি তোমাদের পরীক্ষা নেবো ভয় - ভীতি দিয়ে, ক্ষুধা - অনাহার দিয়ে এবং অর্থ - সম্পদ, জান - প্রাণ ও ফল ফসলের ক্ষয় ক্ষতি দিয়ে। তবে সুসংবাদ দাও 'সবর' অবলম্বনকারীদের, |
2-156 : যারা বিপদ - মসিবতে আক্রান্ত হলে বলে: ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাবো।’ |
2-157 : এরাই সেইসব লোক, যাদের প্রতি তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে বর্ষিত হয় সালাত (ক্ষমা ও করুণা) এবং রহমত। আর তারাই (তাঁর পক্ষ থেকে) হিদায়াত প্রাপ্ত। |
2-158 : নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তরভুক্ত। সুতরাং যে কেউ আল্লাহর ঘরে (কাবা ঘরে) হজ্জ করবে, কিংবা উমরা করবে, তার জন্যে এই দুই (পাহাড়ের) মাঝে সা’য়ী করাতে কোনো দোষ নাই। আর যে কেউ স্বেচ্ছায় কল্যাণকর কাজ করবে, সে জেনে রাখুক, আল্লাহ অবশ্যি স্বেচ্ছা - কল্যাণ কাজের স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদানকারী, সর্বজ্ঞানী। |
2-159 : আমাদের নাযিল করা সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ এবং 'হুদা' (কিতাব ও জীবন বিধান) যারা গোপন করে, যেগুলো মানবজাতিকে সত্যের সন্ধান দেয়ার জন্যে আমরা কিতাবে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, তাদের প্রতি লা'নত (অভিশাপ) বর্ষণ করেন স্বয়ং আল্লাহ এবং সকল লা'নত বর্ষণকারীরা (যারা এর উপকার ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত)। |
2-160 : তবে যারা অনুতপ্ত হয়ে (আমার কিতাব ও কিতাবে প্রদত্ত বিধান গোপন করার কাজ পরিত্যাগ করে) ফিরে আসে এবং নিজেদেরকে এসলাহ (সংশোধন) করে নেয়, আর (যা গোপন করে আসছিল তা) প্রচার - প্রকাশ করার কাজে আত্মনিয়োগ করে, আমি তাদের তওবা কবুল করি, আর একমাত্র আমিই তো তওবা কবুলকারী, পরম দয়াবান। |
2-161 : কিন্তু যারা কুফরি করবে (সত্যকে গোপন করার কাজ অব্যাহত রাখবে) এবং সত্য গোপনকারী অবস্থাতেই মারা যাবে, তাদের প্রতি আল্লাহর লা'নত এবং ফেরেশতাকুল ও সমস্ত মানুষের লা'নত। |
2-162 : তাতেই (অভিশাপের পরিণতি জাহান্নামেই) থাকবে তারা চিরকাল। তাদের থেকে আযাবকে কখনো হালকা করা হবেনা এবং কোনো প্রকার অবকাশও তাদের দেয়া হবেনা। |
2-163 : তোমাদের ইলাহ্ এক ও একক ইলাহ্। কোনো ইলাহ্ নেই তিনি ছাড়া। তিনি রহমানুর রহিম (মহা দয়াবান - পরমকরুণাময়)। |
2-164 : (মহাবিশ্বে ইলাহ্ যে শুধুমাত্র একজনই, তার অসংখ্য প্রমাণ এবং নিদর্শন তোমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। যেমন:) মহাকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত আর দিনের আবর্তনের মধ্যে, মানুষের ব্যবহার্য ও উপকারী পণ্য সামগ্রী নিয়ে সমূদ্রে চলমান নৌযানসমূহের মধ্যে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেন আর তা দ্বারা যে মৃত্যুর পর জমিনকে জীবিত করেন তার মধ্যে, তিনি যে পৃথিবীতে সব ধরণের জীব জন্তুর বিস্তার সাধন করছেন তার মধ্যে, বায়ু প্রবাহের মধ্যে এবং আসমান ও জমিনের মাঝখানে আল্লাহর নির্দেশের অধীন চলাচলকারী (ছায়াদার) মেঘমালার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য প্রমাণ আর নিদর্শন সেইসব লোকদের জন্যে, যারা আকলকে (বিবেক - বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তিকে) কাজে লাগায়। |
2-165 : (এতোসব প্রমাণ - নিদর্শন বর্তমান থাকা সত্ত্বেও) একদল লোক আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে। তারা তাদেরকে এমনভাবে ভালোবাসে যেমন ভালোবাসা উচিত শুধুমাত্র আল্লাহকে। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর জন্যে তাদের ভালোবাসা সবার এবং সবকিছুর উপরে অতি মজবুত - অবিচল। হায়, আযাব স্বচক্ষে দেখার পর এইসব যালিমরা যেভাবে বুঝবে, এখনই যদি সেভাবে অনুধান করতো যে, সমস্ত ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর এবং অবশ্যি আল্লাহ সাংঘাতিক আযাব দাতা! |
2-166 : যখন (পথভ্রষ্ট) আনুগত্যলাভকারী নেতারা তাদের অনুসারী - আনুগত্যকারীদের সাথে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করবে (তাদের দায় - দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করবে) এবং সম্মুখীন হয়ে পড়বে আযাবের, আর ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক, |
2-167 : (পৃথিবীতে) যারা তাদের অনুসরণ - আনুগত্য করতো, তখন তারা বলবে: 'হায়, একবার যদি আমাদের পৃথিবীর জীবনে ফেরত পাঠানো হতো, তবে আমরাও এদের সাথে ঠিক তেমনি সম্পর্ক ছিন্ন করতাম, যেভাবে তারা আজ আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এভাবেই আল্লাহ তাদের (উভয় গ্রুপকে) তাদের আমল দেখাবেন হতাশা নিরাশা আর দুঃখের কারণ হিসেবে। আর তারা কখনো বের হতে পারবেনা আগুন থেকে। |
2-168 : হে মানবকুল! তোমরা পৃথিবীর সেসব খাদ্য আহার করো, যেগুলো হালাল এবং ভালো। তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা। কারণ, সে তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রু। |
2-169 : সে তো তোমাদের নির্দেশ দেয় কেবল নিকৃষ্ট - নোংরা এবং ফাহেশা কাজ করার। সে আরো নির্দেশ দেয়, তোমরা যেনো আল্লাহর প্রতি এমন সব কথা আরোপ করো, যেগুলোর জ্ঞান তোমাদের নেই। |
2-170 : যখন তাদের বলা হয়: ‘অনুসরণ - আনুগত্য করো আল্লাহর নাযিল করা বিধানের, তখন তারা বলে: ‘না, বরং আমরা চলবো সে পথে, যে পথে চলেছেন আমাদের বাপ - দাদারা।' (এ কেমন ব্যাপার!) তাদের বাপ - দাদারা যদি কোনো প্রকার আকল খাটিয়ে না থাকে এবং হিদায়াতের পথে চলে না থাকে, তারপরও কি তারা তাদেরই অনুসরণ করবে? |
2-171 : যারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান মেনে নিতে অস্বীকার করে, তাদের উপমা হলো ঠিক তেমনি, যেমন একজন রাখাল (তার পশুদের কিছু নির্দেশ দিয়ে) ডাকে, অথচ তারা হাঁক - ডাক ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায়না। আসলে এরা বধির, বোবা, অন্ধ, তাই তাদের আকল - বুদ্ধি কাজ করেনা। |
2-172 : হে লোকেরা! যারা ঈমান এনেছো! আমি তোমাদের যেসব ভালো - পবিত্র রিযিক দিয়েছি তোমরা (শুধুমাত্র) সেগুলো থেকেই খাও এবং আল্লাহর শোকর আদায় করো, যদি তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে থাকো। |
2-173 : তিনি তোমাদের জন্যে হারাম করে দিয়েছেন: মৃত (পশুপাখি), (প্রবাহিত) রক্ত, শুয়োরের মাংস এবং যেসব (পশু - পাখি) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবেহ্ (বলি) করা হয়েছে সেগুলো। তবে কেউ যদি (প্রয়োজনের তাকিদে) বাধ্য হয়ে (এ ধরণের কিছু খায়) ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা ছাড়া এবং (প্রয়োজনের) সীমালংঘন না করে, তবে তার পাপ হবেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল অতীব দয়াবান। |
2-174 : আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন, যারা তা গোপন করে এবং তার বিনিময়ে সামান্য (পার্থিব) স্বার্থ ক্রয় করে, তারা নিজেদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ভক্ষণ করেনা। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথাও বলবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। |
2-175 : এরাই তারা, যারা 'আল হুদার' (সঠিক জীবন পদ্ধতির) বিনিময়ে ক্রয় করেছে 'আদ দলালাহ' (ভ্রান্ত জীবন পদ্ধতি) এবং মাগফিরাতের বিনিময়ে আযাব। আগুনের আযাব সইবার ব্যাপারে কতো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা! |
2-176 : এসব কিছুর কারণ হলো, আল্লাহ 'হক' (সত্য ও বাস্তবতা) সহকারে আল কিতাব পাঠিয়েছেন, আর সেই কিতাব নিয়ে যারা মতভেদ সৃষ্টি করেছে, তারা কিতাবের সাথে বিরোধে লিপ্ত হয়ে অনেক দূরে সরে গেছে (সত্য থেকে)। |
2-177 : পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোর মধ্যে (প্রকৃত পক্ষে) কোনো পুণ্য নেই। বরং পুণ্য তো হলো: মানুষ ঈমান আনবে এক আল্লাহর প্রতি, শেষ দিবসের (আখিরাতের) প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আল্লাহর কিতাব এবং নবীদের প্রতি; আর তাঁর (আল্লাহর) ভালোবাসায় মাল - সম্পদ দান করবে আত্মীয় - স্বজনদের, এতিমদের, মিসকিনদের, পথিক - পর্যটকদের, সাহায্যপ্রার্থীদের এবং মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির কাজে; আর সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান (পরিশোধ) করবে; তাছাড়া প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূর্ণকারী হবে এবং অর্থসংকট, দুঃখ - কষ্ট ও সত্য মিথ্যার সংগ্রামে সবর অবলম্বনকারী হবে। - মূলত এরাই (তাদের ঈমান ও ইসলামের দিক থেকে) সত্যবাদী এবং এরাই (প্রকৃত) মুত্তাকি। |
2-178 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের জন্যে হত্যা (মামলার) বিধান লিখে দেয়া হলো কিসাস। স্বাধীন ব্যক্তি হত্যা করে থাকলে সেই ব্যক্তিরই মৃত্যুদন্ড হবে। কোনো দাস হত্যাকারী (প্রমাণিত) হলে মৃত্যুদন্ড সেই দাসেরই হবে। কোনো নারী হত্যাকারী (প্রমাণিত) হলে মত্যুদন্ড সেই নারীকেই দিতে হবে। তবে কোনো (হত্যাকারী) ব্যক্তির সাথে তার ভাইয়ের (নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীর) পক্ষ থেকে কোমল ব্যবহার (মৃত্যুদন্ড ক্ষমা) করা হলে তার (হত্যাকারীর) জন্যে অপরিহার্য হবে প্রচলিত নিয়ম (common law) অনুযায়ী (ধার্যকৃত/দাবিকৃত) রক্তপণ সততার সাথে তাকে প্রদান করা। তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এটা একটা লাঘব এবং অনুকম্পা। কিন্তু এরপরও যদি কেউ সীমালংঘন করে, তার জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। |
2-179 : তোমাদের জন্যে কিসাস (বিধান) - এর মধ্যেই রয়েছে জীবন ( - এর নিরাপত্তা) হে বুদ্ধি বিবেক ওয়ালা লোকেরা! আশা করা যায়, তোমরা (এ আইনের প্রতি অবজ্ঞা করা থেকে) বিরত থাকবে। |
2-180 : তোমাদের কোনো ব্যক্তির যখন মৃত্যুর সময় হাজির হয় এবং সে যদি অর্থ - সম্পদ রেখে যেতে থাকে, তাহলে বাবা - মা এবং আত্মীয় - স্বজনের জন্যে অসিয়ত করে যাবার বিধান তোমাদের জন্যে লিখে (ফরয করে) দেয়া হলো প্রচলিত যুক্তিসংগত নিয়মে। এটা মুত্তাকিদের একটা কর্তব্য। |
2-181 : কোনো ব্যক্তি (কোনো সাক্ষী) তা (অসিয়ত) শ্রবণ করার পর যদি তাতে রদবদল করে, তবে যারা রদবদল করবে, এর পাপ তাদের উপরই বর্তাবে। আল্লাহ অবশ্যি সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞানী। |
2-182 : তবে কেউ যদি অসিয়তকারীর পক্ষ থেকে (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত) পক্ষপাতিত্ব বা অন্যায়ের আশংকা করে এবং সে কারণে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে এসলাহ (সমঝোতা ও মীমাংসা) করে দেয়, তাতে তার কোনো পাপ হবেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল পরম করুণাময়। |
2-183 : হে ঈমান আনা লোকেরা! তোমাদের জন্যে লিখে (ফরয করে) দেয়া হয়েছে সওম (রোযা), যেভাবে লিখে দেয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্বেকার লোকেদের জন্যে, যাতে করে তোমাদের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি হয়। |
2-184 : (সওম হলো) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের (বিধান)। তোমাদের কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয়, অথবা সফরে - ভ্রমণে থাকে, তাহলে সে (এ সময় সওম থেকে বিরত থাকতে পারে, কিন্তু অবশ্যি) যেনো অন্য সময় সেগুলো পুর্ণ করে দেয়। তবে এটা (সওম) যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় (যেমন - বার্ধক্য, গর্ভাবস্থা বা চির রোগের কারণে), তাদের জন্যে (অবকাশ রয়েছে সওম পালন করার অথবা) সওমের পরিবর্তে 'ফিদিয়া' হিসেবে একজন মিসকিনকে আহার করানোর। তবে যে কেউ স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কল্যাণের কাজ করবে, তা তার জন্যে কল্যাণকর। আর তোমরা যদি সওম পালন করো, সেটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, তোমরা যদি বিষয়টি অনুধাবন করতে! |
2-185 : রমযান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন, যা মানবজাতির জন্যে 'জীবন যাপনের ব্যবস্থা' এবং জীবন যাপন ব্যবস্থা হিসেবে সুস্পষ্ট, আর (এ কুরআন ভালোমন্দ, ন্যায় অন্যায়, সঠিক - বেঠিক, এবং সত্যাসত্যের) অকাট্য মানদন্ড (criterion)। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাসের সাক্ষাত লাভ করবে, তাকে অবশ্যি পুরো (রমযান) মাসটিতে সওম পালন করতে হবে। তবে কেউ রোগাক্রান্ত হলে, অথবা সফরে - ভ্রমণে থাকলে (সে সওম পালন থেকে বিরত থাকতে পারে, কিন্তু) তাকে অন্য সময় (সওম পালন করে) সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে (তাঁর বিধান) সহজ করে দিতে চান এবং তিনি তোমাদের জন্যে (তাঁর বিধান) কঠিন - কষ্টকর করতে চান না। (তিনি চান) তোমরা যেনো (সওমের) সংখ্যা পূর্ণ করো এবং (কুরআন নাযিল করে তোমাদের জীবন যাপন ব্যবস্থা প্রদানের জন্যে) তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করো আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো। |
2-186 : আমার দাসেরা যখন তোমাকে আমার সম্পর্কে সওয়াল (জিজ্ঞাসা) করে, (হে মুহাম্মদ! তুমি তখন তাদের বলো:) আমি তাদের নিকটেই আছি। কোনো আহবানকারী (বা) দোয়া - প্রার্থনাকারী যখন আমাকে ডাকে, আমি (কোনো মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি) তার ডাক ও দোয়া - প্রার্থনা শুনি এবং তাতে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও যেনো আমার আহবানে সাড়া দেয় (আমার হুকুম পালন করে) এবং আমার প্রতি ঈমান রাখে - যাতে করে তারা সঠিক পথে পরিচালিত হয়। |
2-187 : সওম পালনের রাত্রে স্ত্রী সহবাস করা তোমাদের জন্যে হালাল করে দেয়া হলো। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের সাথে খিয়ানত করেছিলে। এখন তিনি তোমাদের তওবা কবুল করে নিয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং এখন থেকে (সওমের রাত্রে) তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা বিধিবদ্ধ করেছেন তার সন্ধান করো। আর পানাহার করতে থাকো যতোক্ষণ না তোমাদের কাছে রাতের কালো রেখা থেকে ফজরের (ভোরের) সাদা রেখা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে। তারপর সওম পূর্ণ করো রাতের আগমন পর্যন্ত। আর মসজিদে ইতেকাফ অবস্থায় থাকাকালে তোমরা স্ত্রী সহবাস করোনা। এগুলো হলো (সওম পালনের ক্ষেত্রে) আল্লাহর সীমারেখা (বিধান)। সুতরাং (লংঘনের উদ্দেশ্যে) এগুলোর কাছেও যেওনা। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ (তাঁর আইন - বিধান ও হালাল - হারামের সীমারেখা) বয়ান করেন মানুষের জন্যে, যাতে করে তারা সতর্কতা অবলম্বন করে। |
2-188 : তোমরা নিজেদের একে অপরের মাল - সম্পদ খেয়োনা বাতিল (অন্যায় - অবৈধ) প্রক্রিয়ায় এবং জেনে বুঝে মানুষের মাল সম্পদের কিছু অংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে শাসকদের (বিচারকদের) সামনে উত্থাপন করোনা। |
2-189 : তারা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে সওয়াল (প্রশ্ন) করছে। তুমি বলো: ‘এগুলো (চাঁদের ছোট বড় হওয়া এবং নতুন করে উদিত হওয়া) সময়ের মেয়াদ নির্ধারক চিহ্ন মানুষের জন্যে এবং হজ্জের জন্যে।' আর তোমরা যে ঘরের পেছন দিয়ে ঘরে প্রবেশ করছো তাতে কোনো পুণ্য বা কল্যাণ নেই। বরং পুণ্য আর কল্যাণ তো রয়েছে ঐ ব্যক্তির জন্যে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা ঘরসমূহে প্রবেশ করো সেগুলোর (সদর) দরজা দিয়ে এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে করে তোমরা সফলতা লাভ করতে পারো। |
2-190 : আর তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো ঐসব লোকদের বিরুদ্ধে, যারা যুদ্ধ করছে তোমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তোমরা সীমালংঘন করোনা। কারণ, আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। |
2-191 : যেখানেই তাদের সাথে মোকাবেলা হয় তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাও এবং তাদের বহিষ্কার করো যেখান থেকে তারা তোমাদের বহিষ্কার করেছে। ফেতনা সৃষ্টি করা হত্যার চাইতেও গুরুতর অপরাধ। মসজিদুল হারামের কাছে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করোনা, যতোক্ষণ না তারা সেখানে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। হ্যাঁ, তারা যদি (সেখানে) তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের হত্যা করো। এভাবেই কাফিরদের যথোপযুক্ত প্রতিদান (শাস্তি) দিতে হয়। |
2-192 : কিন্তু তারা যদি বিরত থাকে, তবে অবশ্যি আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়াময়। |
2-193 : তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যতোদিন না ‘ফিতনা’ বিলুপ্ত হয় এবং দীন (ইবাদত ও আনুগত্য) আল্লাহর জন্যে (একক ও নিরঙ্কুশভাবে) নির্দিষ্ট হয়ে যায়। তবে তারা যদি বিরত হয়, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র যালিমদের ছাড়া আর কারো বিরুদ্ধে হাত বাড়ানো সংগত নয়। |
2-194 : হারাম (পবিত্র) মাসের বিনিময় হারাম মাস এবং (তাতে) নিষিদ্ধ কাজের বিধান হলো কিসাস (সমতা বিধান)। সুতরাং কেউ যদি হারাম মাসসমূহের পবিত্রতা লংঘন করে তোমাদের আক্রমণ করে, তবে তোমরাও অনুরূপ আক্রমণ করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে আর জেনে রাখো, আল্লাহ মুত্তাকিদের পক্ষেই আছেন। |
2-195 : তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে হালাক হবার (ধ্বংসের) দিকে নিক্ষেপ করোনা (আল্লাহর পথে ব্যয় না করে)। ভালো কাজ করো, যারা ভালো কাজ করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। |
2-196 : তোমরা যথাযথভাবে (properly) হজ্জ ও উমরা পালন করো আল্লাহর উদ্দেশ্যে। কিন্তু তোমরা যদি বাধাগ্রস্ত হও, তবে কুরবানি করো সহজ লভ্য পশু। কুরবানির পশু যথাস্থানে পৌঁছার আগ পর্যন্ত মাথা মুন্ডণ করোনা। তোমাদের কেউ যদি রোগাক্রান্ত হয়, কিংবা মাথায় কষ্ট অনুভব করে (এবং সে জন্যে আগেই মাথা মুন্ডণ করে নেয়), তার কর্তব্য হলো সাওম, সাদকা বা কুরবানি দ্বারা ফিদিয়া প্রদান করা। অতপর (বাধা দূর হবার পর) তোমরা যখন নিরাপদ হবে, তখন তোমাদের কেউ যদি হজ্জের পূর্বে উমরা (তামাত্তু হজ্জ) করতে চায়, সে যেনো সামর্থ অনুযায়ী কুরবানি করে। কিন্তু যদি সে কুরবানির ব্যবস্থা করতে না পারে, তবে সে হজ্জের সময় তিনদিন সাওম পালন করবে এবং হজ্জ থেকে ফেরার পর সাতদিন - এই দশটি (সাওম) সে পূর্ণ করবে। এই বিধান ঐ ব্যাক্তির জন্যে যার পরিবার পরিজন মসজিদুল হারামের বাসিন্দা নয় (non - resident of makkah)। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। অবশ্যি আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। |
2-197 : হজ্জের মাসগুলো (সাধারণভাবে) সবারই জানা আছে। এ সময় যে ব্যক্তি হজ্জ করার ফায়সালা করবে, সে যেনো হজ্জের সময় (ইহরাম বাঁধার দিনগুলোতে) স্ত্রী সহবাস করা, পাপ কর্ম করা এবং ঝগড়া বিবাদ করা থেকে বিরত থাকে। তোমরা যা কিছু কল্যাণের কাজই করো, আল্লাহ তা জানেন। আর তোমরা (হজ্জের সফরে প্রয়োজনীয়) পাথেয় সাথে নিও, নি:সন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া (মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহ ভীতি)। আর হে বুদ্ধি বিবেকের অধিকারী লোকেরা! তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করো |
2-198 : তোমাদের কোনো দোষ হবেনা (হজ্জের সময়) যদি তোমরা তোমাদের প্রভুর অনুগ্রহ (ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকার) সন্ধান করো। আরাফাত থেকে যখন তোমরা প্রত্যাবর্তণ করবে, তখন (পথিমধ্যে) মাশআরুল হারামের কাছে (মুযদালিফায়) যাত্রা বিরতি করে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং যেভাবে তিনি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে তাঁকে স্মরণ করবে। যদিও ইতোপূর্বে তোমরা ছিলে বিপথগামীদের অন্তরভুক্ত। |
2-199 : তারপর সেখান থেকে ফিরে আসো, যেখান থেকে ফিরে আসে অন্য সবমানুষ এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। |
2-200 : এরপর যখন (হজ্জের) অনুষ্ঠানসমূহ সম্পন্ন করবে, তখন আল্লাহর কথা যিকির (স্মরণ, আলোচনা, গুণাবলি বর্ণনা) করো, যেভাবে যিকির করে আসছিলে তোমাদের পূর্ব পুরষদের কথা, বরং তার চাইতে অধিকতর যিকির করো (আল্লাহর কথা)। মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা বলে: ‘প্রভু! আমাদেরকে এই দুনিয়াতেই (আমাদের যা প্রাপ্য) দিয়ে যাও।’ - এ ধরণের লোকদের জন্যে আখিরাতে কোনো অংশ নেই। |
2-201 : তাদের মধ্যে আবার এমন লোকেরাও আছে, যারা বলে (প্রার্থনা করে): ‘প্রভু! আমাদেরকে এই দুনিয়াতেও কল্যাণ দান করো এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান করো, আর আমাদের রক্ষা করো আগুনের আযাব থেকে।’ |
2-202 : এরাই হলো সেই সব (উত্তম) মানুষ, যাদের জন্যে তাদের উপার্জনের (কর্মের) ভিত্তিতে (উভয় স্থানেই) যথাযথ অংশ (প্রাপ্য) রয়েছে। আর আল্লাহ তো দ্রুত হিসাব সম্পন্নকারী। |
2-203 : আল্লাহকে যিকির করো নির্ধারিত দিনগুলোতে। তবে কেউ যদি তাড়াহুড়া করে (মিনা থেকে) দুইদিনের মধ্যে (মক্কায়) ফিরে আসে, তাতে তার পাপ হবেনা। আর যে বিলম্ব করবে তারও পাপ হবেনা। - এ অবকাশ তার জন্যে যে (আল্লাহর ভয়ে) নিজেকে মন্দ কাজ থেকে রক্ষা করে চলবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রাখো, তাঁরই কাছে করা হবে তোমাদের হাশর (সমবেত)। |
2-204 : মানুষের মধ্যে এমন লোকও আছে, যার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করে এই দুনিয়ার জীবনে, আর (কথা বলার সময়) সে নিজের আন্তরিকতার ব্যাপারে বারবার আল্লাহকে সাক্ষী বানায়, অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলো, সে (তোমার) সব শত্রুর বড় শত্রু। |
2-205 : সে যখন (তোমার নিকট থেকে) ফিরে যায়, জমিনে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং শস্য ক্ষেত আর মানুষ ও জীবজন্তুর বংশ নিপাতে তৎপর হয়। অথচ আল্লাহ অশান্তি সৃষ্টিকে মোটেও পছন্দ করেন না। |
2-206 : তাকে যখন বলা হয়: ‘আল্লাহকে ভয় করো’, তখন তার আত্মম্ভরিতা তাকে (অধিকতর) অপরাধে লিপ্ত করে। সুতরাং তার জন্যে জাহান্নামই যথেষ্ট এবং অতি নিকৃষ্ট বিশ্রামাগার সেটা। |
2-207 : মানুষের মধ্যে এমন মানুষও আছে, যারা আল্লাহ সন্তুষ্টি কামনায় নিজের জান - প্রাণ বিক্রয় (সমর্পণ) করে দেয়। আল্লাহ্ তাঁর এই (ধরনের) দাসদের প্রতি অতিশয় কোমল - দয়াবান। |
2-208 : হে ঈমান আনা লোকেরা! তোমরা (আত্মসমর্পণের মাধ্যমে) পরিপুর্ণভাবে প্রবেশ করো ইসলামে এবং (জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই) শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা। কারণ, সে তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রু। |
2-209 : তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শনসমূহ (রসূল এবং কিতাব) আসার পরও যদি (ইসলামে পরিপূর্ণ প্রবেশের ক্ষেত্রে) তোমাদের ব্যত্যয় ঘটে, তবে জেনে রাখো, অবশ্যি আল্লাহ মহাশক্তিমান, মহাজ্ঞানী। |
2-210 : তারা কি এই এন্তেযারে (অপেক্ষায়) আছে যে, আল্লাহ মেঘমালার ছায়ায় ফেরেশতাদের সাথে নিয়ে তাদের কাছে আসবেন এবং তখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে? অথচ সকল বিষয় (সিদ্ধান্তের জন্যে) ফিরে আসবে আল্লাহর কাছেই। |
2-211 : বনি ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করো, কতো যে সুস্পষ্ট প্রমাণ - নিদর্শন আমি তাদের দিয়েছিলাম! আল্লাহর নিয়ামত আসার পর যে (জাতি) তা বদল করে (কুফরি গ্রহণ করে) তাকে আল্লাহ কঠোর শাস্তি প্রদান করে থাকেন। |
2-212 : যারা কুফরির পথ অবলম্বন করে, তাদের কাছে দুনিয়ার জীবনকে সুন্দর - মুগ্ধকর বানিয়ে দেয়া হয়। তারা মুমিনদের ঠাট্টা - বিদ্রুপ - তিরস্কার করে থাকে। কিন্তু যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, কিয়ামতের দিন তারাই এদের মোকাবেলায় উঁচু ও শ্রেষ্ঠ মর্যাদা লাভ করবে। আল্লাহ যাকে চান অগণিত রিযিক দান করেন। |
2-213 : প্রথমে সব মানুষ ছিলো একই উম্মত (একই আদর্শের অনুসারী)। অতপর আল্লাহ নবীদের পাঠাতে থাকেন সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে। তাদের সাথে সত্য ও বাস্তবতাসহ কিতাব নাযিল করেন, যাতে করে মানুষের মাঝে ফায়সালা করে দেয়া যায়, যেসব বিষয়ে তারা লিপ্ত হয়েছে এখতেলাফে (মতভেদে)। যাদেরকে তা (কিতাব) দেয়া হয়েছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ - নিদর্শন আসার পর কেবল পারস্পারিক বিদ্বেষ বশতই তারা সে বিষয়ে এখতেলাফ করেছে। তারপর তারা যে বিষয়ে এখতেলাফ (মতভেদ) করতো, সে বিষয়ে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে সঠিক পথ দেখিয়েছেন তাদেরকে, যারা ঈমান এনেছে। আল্লাহ যাকে চান, সরল - সঠিক পথে পরিচালিত করেন। |
2-214 : নাকি তোমরা ধরে নিয়েছো, তোমরা (অতি সহজেই) জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথছ তোমাদের পূর্বে যারা ঈমানের পথে চলেছিল, তাদের উপর দিয়ে যে অবস্থা অতিবাহিত হয়েছিল, সে অবস্থা এখনো তোমাদের উপর আসেনি। তাদের উপর নেমে এসেছিল ক্ষুধা - দারিদ্র, দুঃখ কষ্ট এবং তারা প্রকম্পিত ও বিচলিত হয়ে উঠেছিল। এমনকি রসূল এবং তাঁর ঈমানদার সাথিরা বলে উঠেছিল: ‘মাতা নাসরুল্লাহ’ - কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য? (তখন তাদের বলা হয়েছিল:) ‘জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য খুবই নিকটে।’ |
2-215 : তারা তোমার কাছে জানতে চায়, তারা কী - ব্যয় করবে? তুমি বলো: তোমরা উত্তম যা কিছুই ব্যয় করবে, তা করো বাবা - মার জন্যে, আত্মীয় - স্বজনের জন্যে এবং এতিম, মিসকিন ও পথিক - পর্যটকদের জন্যে। আর তোমরা জনকল্যাণের যে কাজই করোনা কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। |
2-216 : তোমাদের অপ্রিয় হলেও তোমাদের জন্যে যুদ্ধের বিধান লিখে (ফরয করে) দেয়া হলো। হতে পারে, তোমরা কোনো বিষয় অপছন্দ করো, অথচ (প্রকৃত পক্ষে) সেটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। আবার এমনো হতে পারে, তোমরা কোনো কিছু পছন্দ করছো, অথচ (মূলত) সেটা তোমাদের জন্যে ক্ষতিকর। ব্যাপার হলো আল্লাহ তো সবকিছু জানেন, কিন্তু তোমরা জানোনা। |
2-217 : হারাম মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে তারা তোমার কাছে জানতে চায়। তুমি বলো: তাতে যুদ্ধ করা গুরুতর (অপরাধ)। কিন্তু আল্লাহর কাছে তার চাইতেও বড় অপরাধ হলো: মানুষকে আল্লাহর পথে (চলতে এবং কাজ করতে) বাধা দেয়া, আল্লাহর সাথে কুফরি করা, (মুমিনদেরকে) মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া এবং হারামের (মক্কার) অধিবাসীদেরকে (তাদের ভূমি ও আবাস থেকে) বহিষ্কার করা। আর জেনে রাখো, ফিতনা হত্যার চাইতেও গুরুতর অপরাধ। তারা তোমাদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে লড়াই চালিয়ে যাবেই, যতোদিন না তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়। আর তোমাদের যে কেউ নিজের দীন (ইসলাম) ত্যাগ করে (কুফুরিতে) ফিরে যাবে এবং কাফির অবস্থায় মারা যাবে, দুনিয়া এবং আখিরাতে তার সমস্ত আমল হয়ে যাবে নিষ্ফল। তারা হবে আসহাবুন্ নার (আগুনের অধিবাসী), তাতেই থাকবে তারা চিরকাল। |
2-218 : (পক্ষান্তরে) যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর জিহাদ করেছে আল্লাহর পথে, এরাই আশা করে (করতে পারে) আল্লাহর রহমত। আল্লাহ (তাদের ব্যাপারে) অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান। |
2-219 : তারা তোমার কাছে জানতে চায় মদ এবং জুয়া সম্পর্কে। তুমি বলো: ‘এ দুটোতেই রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্যে (কিছু) উপকার। তবে এগুলোর উপকারের চাইতে পাপ গুরুতর। তারা তোমার কাছে আরো জানতে চায়, তারা (আল্লাহর পথে) কী ব্যয় করবে? তুমি বলো: ‘প্রয়োজনের অতিরিক্তটা।’ এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে স্পষ্টভাবে বয়ান (বর্ণনা) করেন তাঁর আয়াত (বিধান) সমূহ, যাতে করে তোমরা চিন্তাভাবনা করো - |
2-220 : দুনিয়া এবং আখিরাতকে নিয়ে। তারা তোমার কাছে আরো জানতে চাইছে এতিমদের ব্যাপারে। তুমি বলো: তাদের অর্থ সম্পদের ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক (সংরক্ষণ ও উন্নয়নমূলক) কর্মপন্থা গ্রহণ করাই উত্তম। তোমরা যদি তোমাদের সহায় - সম্পদের সাথে তাদের সহায় - সম্পদ যৌথ ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসো, তাতেও দোষ নেই। কারণ, তারা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ জানেন (তাদের অর্থ সম্পত্তির ব্যাপারে) কে কল্যাণকামী আর কে অনিষ্টকারী। আল্লাহ চাইলে এ ব্যাপারে তোমাদের অবশ্যি কষ্টে ফেলতে পারতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। |
2-221 : তোমরা নিকাহ (বিয়ে) করোনা মুশরিক নারীদের যতোক্ষণ না তারা ঈমান আনে। তোমাদের মুগ্ধকারী সম্ভ্রান্ত মুশরিক নারীর চাইতে একজন মুমিন দাসীও অনেক উত্তম। আর মুশরিক পুরুষদের কাছে তোমাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়োনা যতোক্ষণ না তারা ঈমান আনে। তোমাদের মুগ্ধকারী সম্ভ্রান্ত মুশরিক পুরুষের চাইতে একজন মুমিন দাসও অনেক উত্তম। তারা (মুশরিকরা) তোমাদের আহবান জানায় আগুনের দিকে। আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদের আহবান জানাচ্ছেন জান্নাত আর মাগফিরাতের (ক্ষমার) দিকে। আর তিনি নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্যে পরিষ্কার করে বয়ান (বর্ণনা) করেন, যাতে করে তারা উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করে। |
2-222 : তারা তোমার কাছে জানতে চায়, হায়েয (নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব) সম্পর্কে। তুমি বলো: এটা একটা অশুচি ও অহিতকর অবস্থা। সুতরাং হায়েয চলাকালে স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকো এবং যতোক্ষণ না তারা পবিত্র হয়, ততোক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাস করোনা। অতপর তারা যখন পবিত্র - পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে, তখন তাদের কাছে আসবে (সহবাস করবে) ঠিক সেভাবে, যেভাবে আসতে আল্লাহ তোমাদের আদেশ (শিক্ষা) দিয়েছেন। আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন, ভালোবাসেন পবিত্রতা - পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনকারীদের। |
2-223 : তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্যে শস্যক্ষেত, সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেতে যাও যেভাবে ইচ্ছা। তোমরা অগ্রিম পাঠাও নিজেদের জন্যে (ভালো কাজ)। আর আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকো। জেনে রাখো, অবশ্যি তোমরা তাঁর সাথে মোলাকাত (সাক্ষাত) করবে। (হে নবী!) মুমিনদের সুসংবাদ দাও। |
2-224 : ভালো কাজ না করা, মন্দ কাজ থেকে আত্মরক্ষা না করা এবং মানুষের মাঝে সন্ধি - সমঝোতা না করে দেয়ার শপথ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম ব্যবহার করোনা। আল্লাহ সবই শোনেন এবং সবই জানেন। |
2-225 : তোমাদের (অনিচ্ছাকৃত) নিরর্থক শপথের জন্যে আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করবেন না। কিন্তু তোমাদের অন্তরের সংকল্পের জন্যে (ইচ্ছাকৃত শপথের জন্যে) তোমাদের দায়ী করবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাপরায়ণ, ধৈর্যশীল। |
2-226 : যেসব লোক নিজ স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক রাখবেনা বলে শপথ করে, তাদের অবকাশ চার মাস। কিন্তু (এর মধ্যে) যদি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়, তবে অবশ্যি আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান। |
2-227 : আর যদি তারা তালাক দেয়ার সিদ্ধান্তই নেয়, তবে (তারা জেনে রাখুক) অবশ্যি আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন। |
2-228 : তালাকপ্রাপ্ত নারী নিজেকে তিনটি মাসিক অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত (বিয়ে থেকে) বিরত রাখবে। তারা যদি আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, তবে তাদের গর্ভে আল্লাহ কোনো কিছু সৃষ্টি করে থাকলে তা গোপন করা তাদের জন্যে হালাল (বৈধ) নয়। তাদের স্বামীরাই বেশি অধিকার রাখে এই অবকাশ (ইদ্দত) কালে তাদের ফিরিয়ে নিতে, যদি তারা পুন সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। (স্বামীর) উপর নারীর তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে, যেমন আছে তার উপর (তার স্বামীর)। তবে (দায়িত্ব - কর্তব্যের দিক থেকে) তাদের উপর পুরুষদের একটি মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ সর্বময় শক্তিমান মহাপ্রজ্ঞাময়। |
2-229 : তালাক দুইবার। তারপর হয় স্ত্রীকে প্রচলিত ন্যায়সংগত নিয়মে (স্ত্রী হিসেবে) রাখবে, নতুবা বিদায় করলে সদয় পদ্ধতিতে বিদায় করবে। তোমরা তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো, বিদায়কালে সেখান থেকে কোনো কিছু ফেরত গ্রহণ করা তোমাদের জন্যে বৈধ নয়, তবে তারা দুজনই যদি আশংকা করে যে, তারা আল্লাহর আইন মেনে একত্রে জীবন যাপন করতে পারবেনা। আর যদি স্বামী - স্ত্রী উভয়ে আশংকা করে তারা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবেনা, সে ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি কিছু বিনিময় দিয়ে স্বামীর থেকে বিচ্ছেদ (খোলা) লাভ করতে চায়, তাতে কোনো দোষ নেই। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমারেখা। তোমরা এগুলো লঙ্ঘন করোনা। যারা আল্লাহর নির্ধারণ করে দেয়া সীমারেখা লংঘন করে, তারা যালিম। |
2-230 : তারপর স্বামী যদি তার স্ত্রীকে (তৃতীয় বারও) তালাক দেয়, তবে ঐ স্ত্রী আর তার জন্যে হালাল হবেনা। অবশ্য সে (তালাকপ্রাপ্তা) যদি অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে করে এবং সে (পুরুষ) যদি তাকে তালাক দেয়, সেক্ষেত্রে তাদের পুন বিয়েতে দোষ নেই, যদি তারা মনে করে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা, তিনি এগুলো বর্ণনা করছেন সেইসব লোকদের জন্যে যারা জ্ঞান রাখে। |
2-231 : তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দেবে, তারপর তারা যখন ইদ্দত পূর্ণ করার কাছাকাছি পৌঁছুবে, তখন হয় ন্যায়সংগতভাবে তাদের (স্ত্রী হিসেবে) রেখে দাও, নয়তো ন্যায়সংগতভাবে মুক্ত করে দাও। কিন্তু ক্ষতি করা ও কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের আঁটকে রেখোনা। এমনটি করলে সেটা হবে তোমাদের সীমালংঘন। এমনটি যে করে সে নিজের প্রতিই যুলুম করে। তোমরা আল্লাহর আয়াত (বিধান) কে বিদ্রুপের বস্তু বানিয়োনা। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো। তিনি তোমাদের প্রতি যে কিতাব এবং হিকমা নাযিল করেছেন, তিনি তোমাদের তা মেনে চলার উপদেশ দিচ্ছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চলো এবং জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে জ্ঞাত। |
2-232 : তোমরা স্ত্রীদের (দুই) তালাক দেয়ার পর যখন তারা ইদ্দত পূর্ণ করে নেয়, তখন তাদেরকে তাদের স্বামীদের পুনরায় বিয়ে করতে বাধা দিয়োনা, যদি তারা ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে পরস্পরকে বিয়ে করতে রাজি হয়। এগুলো সেই ব্যক্তির জন্যে উপদেশ, যে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে। এটাই তোমাদের জন্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও পবিত্র পন্থা। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানোনা। |
2-233 : মায়েরা তাদের বাচ্চাদের বুকের দুধ পান করাবে পূর্ণ দুই বছর। এই বিধান তার জন্যে যে পিতা দুধ পানের মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের পিতার দায়িত্ব হবে বাচ্চাদের মায়ের খাওয়া পরার ব্যয় ভার বহন করা ন্যায়সংগত পরিমাণে। কারো উপর তার সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপানো ঠিক নয়। কোনো মাকে তার বাচ্চার কারণে কষ্ট দেয়া যাবেনা, কোনো পিতাকেও তার বাচ্চার কারণে কষ্ট দেয়া যাবেনা। (বাচ্চার পিতার অবর্তমানে স্তন্যদানকারী মায়ের প্রতি) ওয়ারিশদের দায়িত্ব কর্তব্য তার (পিতার) অনুরূপ। কিন্তু তারা উভয় পক্ষ যদি পারস্পারিক সম্মতি ও পরামর্শক্রমে স্তন্যপান বন্ধ করতে চায়, তবে তাতে তাদের কোনো অপরাধ হবেনা। আর তোমরা যদি দুধ মা দ্বারা তোমাদের বাচ্চাদের দুধ পান করাতে চাও, তাতেও তোমাদের কোনো দোষ হবেনা। তবে শর্ত হলো, পরস্পর সম্মত (agreed) বিনিময় ন্যায়সংগতভাবে তাকে পরিশোধ করতে হবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো, অবশ্যি আল্লাহ তোমাদের কর্মের উপর দৃষ্টি রাখেন। |
2-234 : তোমাদের যারা স্ত্রী রেখে মারা যাবে, তাদের স্ত্রীরা (বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার জন্যে) চারমাস দশদিন অপেক্ষা করবে। তারপর যখন তারা তাদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে, তখন তারা প্রচলিত ন্যায়সংগত পন্থায় নিজেদের ব্যাপারে (বিয়ে করা বা না করার) যে সিদ্ধান্তই নিতে চায় নিতে পারবে, তাতে তোমাদের কোনো দোষ (দায়দায়িত্ব) নেই। আল্লাহ তোমাদের আমল সম্পর্কে খবর রাখেন। |
2-235 : (ইদ্দত চলাকালে বিধবা) নারীদের তোমরা ইশারা - ইংগিতে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান করলে, কিংবা মনের ভেতরে তাদের বিয়ে করার কথা গোপন করে রাখলে তোমাদের কোনো দোষ হবেনা। আল্লাহ জানেন, তাদের কথা তোমাদের মনে উদয় হবেই। কিন্তু গোপনে তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়োনা। তবে প্রচলিত সমর্থিত পন্থায় কথাবার্তা বলতে পারবে। নির্দিষ্ট সময় (ইদ্দতকাল) পার না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের আক্দ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়োনা। জেনে রাখো, তোমাদের অন্তরে কী আছে তা আল্লাহ জানেন। তাই তাঁকে ভয় করে চলো। একথাও জেনে রাখো, কেউ ভুল করার পর ক্ষমা চাইলে অবশ্যি আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, সহিষ্ণু। |
2-236 : সহবাস করার পূর্বে এবং মোহরানা ধার্য না করা অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে তোমাদের কোনো পাপ হবে না। কিন্তু (এ ধরণের তালাকের ক্ষেত্রে) অবশ্যি তাদেরকে কিছু অর্থ - সামগ্রী দেবে। সচ্ছল ব্যক্তি দেবে তার (আর্থিক) সচ্ছলতা অনুযায়ী, আর দরিদ্র ব্যক্তি দেবে তার সামর্থ অনুযায়ী প্রচলিত নিয়ম ও যুক্তি সংগত পরিমাণ। এটা কল্যাণপরায়নদের উপর আরোপিত একটা কর্তব্য। |
2-237 : স্ত্রীর মোহরানা ধার্য করা হয়েছে, কিন্তু যদি সহবাস করার পূর্বেই তালাক দিয়ে ফেলে থাকো, সেক্ষেত্রে ধার্যকৃত মোহরানার অর্ধেক তাকে দিতে হবে যদি না স্ত্রী দয়াপরবশ হয় (ক্ষমা করে দেয়), কিংবা যার হাতে বিবাহের রশি সে (অর্থাৎ স্বামী) দয়াপরবশ হয় (অর্থাৎ পুরো মোহরানা দিয়ে দেয়)। তোমরা দয়াপরবশ হও, এটাই তাকওয়ার জন্যে নিকটতম। তোমরা পরস্পরের প্রতি দয়া - অনুগ্রহ ও সহৃদয়তার কথা ভুলে থেকোনা। আল্লাহ অবশ্যি তোমাদের কার্যক্রমের প্রতি দৃষ্টি রাখেন। |
2-238 : তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যম সালাত (আদায়) - এর প্রতি, এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে (সালাতে) দাঁড়াও বিনীত হয়ে। |
2-239 : তোমরা যদি ভয় ও আতংকের মধ্যে থাকো, সেক্ষেত্রে তোমরা পায়ে হাঁটা কিংবা যানবাহনে আরোহী অবস্থায় সালাত আদায় করো। আর যখন নিরাপদ অবস্থায় থাকবে, তখন আল্লাহকে যিকির (সালাত আদায়) করবে সেভাবে, যেভাবে করতে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং যে পদ্ধতি ইতোপূর্বে তোমাদের জানা ছিলনা। |
2-240 : তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে যাচ্ছে অবস্থায় নিজের মৃত্যু আসন্ন অনুভব করবে, স্ত্রীদের জন্যে এক বছরের খোরপোষ ও বাসস্থানের অসিয়ত করে যাওয়া তাদের কর্তব্য তাদেরকে বের করে না দিয়ে। তবে তারা (স্ত্রীরা) নিজেরাই যদি চলে যায়, সেক্ষেত্রে তারা প্রচলিত বিধি মোতাবেক নিজেদের ব্যাপারে যা কিছু করুক, তাতে তোমাদের কোনো দোষ হবেনা। আল্লাহ সর্বময় কর্তৃত্বশালী, মহাবিজ্ঞ। |
2-241 : আর যেসব নারীকে তালাক দেয়া হয়, তাদেরকেও প্রচলিত সংগত পরিমাণ অর্থ - সামগ্রী দেয়া উচিত। এটা মুত্তাকিদের একটা কর্তব্য। |
2-242 : এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াত (আইন - বিধান) পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছেন, যাতে করে তোমরা অনুধাবন করো। |
2-243 : ঐ লোকদের ব্যাপারে কি ভেবে দেখেছো, যারা হাজার হাজার লোক মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর - বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল? তারপর আল্লাহ তাদের বলেছিলেন: ‘মরে যাও।’ এর পর তিনি আবার তাদের জীবিত করেন। মূলত, আল্লাহ মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহপরায়ণ, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাঁর শোকর আদায় করেনা। |
2-244 : তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো আর জেনে রাখো, অবশ্যি আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। |
2-245 : কে আছে আল্লাহকে ‘করযে হাসানা’ (উত্তম নি:স্বার্থ ঋণ) প্রদান করবে, তারপর তিনি তা বহুগুণ বৃদ্ধি করে তাকে ফেরত দেবেন? আল্লাহ্ই (কারো অর্থনৈতিক অবস্থা) সম্প্রসারিত করেন আর (কারো অবস্থা) সংকুচিত করেন এবং তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। |
2-246 : তুমি কি মূসার পরবর্তী বনি ইসরাঈল সরদারদের আচরণটা ভেবে দেখেছো? তারা যখন তাদের একজন নবীকে বলেছিল: ‘আমাদের জন্যে একজন রাজা নিযুক্ত করুন যাতে করে আমরা (তার নেতৃতেব) আল্লাহর পথে লড়াই করতে পারি।’ সে বললো: ‘এমনটি তো হবেনা যে, তোমাদের প্রতি যুদ্ধ ফরয হলো, অথচ তোমরা যুদ্ধে গেলেনা?’ তারা বললো: ‘কেন আমরা যুদ্ধে যাবোনা, অথচ আমাদেরকে আমাদের ঘরবাড়ি এবং সন্তান সন্তুতি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে?’ তারপর যখন তাদের উপর যুদ্ধ ফরয করে দেয়া হলো, তখন তাদের অল্প কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলো। আল্লাহ যালিমদের অবস্থা বিশেষভাবে অবহিত। |
2-247 : তাদের নবী (শামাবিল) তাদের বলেছিল: ‘আল্লাহ তালুতকে তোমাদের নবী নিযুক্ত করেছেন।’ তারা বললো: ‘আমাদের উপর সে কিভাবে রাজত্ব লাভ করবে? তার চাইতে রাজত্ব লাভের অধিক হকদার তো আমরা। তাছাড়া সেতো অর্থনৈতিক ভাবেও সামর্থবান নয়।’ সে (শামাবিল) বললো: ‘আল্লাহ তোমাদের উপর তাকেই (রাজা) মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানগত ও দৈহিকভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। আল্লাহ যাকে চান তাকে তাঁর রাজত্ব প্রদান করেন। আর আল্লাহ নিজ সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণের জন্যে যথেষ্ট ও সর্বজ্ঞানী।’ |
2-248 : তাদের নবী (শামাবিল) তাদের আরো বলেছিল: তার (তালুতের) রাজত্ব লাভের নিদর্শন হলো: ‘তার রাজত্বকালে তোমরা সেই সিন্ধুকটি ফেরত পাবে, যাতে রয়েছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্যে প্রশান্তি, রয়েছে মূসা ও হারূণের পরিবারের পরিত্যক্ত বরকতময় আসবাব পত্র। সেটি বহন করে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা মুমিন হয়ে থাকলে এটা তোমাদের জন্যে অবশ্যি (তার রাজত্বের) নিদর্শন।’ |
2-249 : তারপর তালুত যখন সেনাবাহিনী নিয়ে (জেরুজালেম বিজয়ের উদ্দেশ্যে) বের হলো, তাদের বললো: ‘আল্লাহ (সামনেই) একটি নদীতে তোমাদের পরীক্ষা করবেন। যে তার পানি পান করবে, সে আমার দলভুক্ত থাকবেনা; আর যে তার পানি দিয়ে পিপাসা নিবৃত করবেনা, সে - ই থাকবে আমার দলভুক্ত; তবে কেউ শুধু এক আধ আঁজলা পান করলে সেও থাকতে পারবে আমার দলভুক্ত।’ কিন্তু তাদের অল্প কিছু লোক ছাড়া বাকিরা আকণ্ঠ পান করলো নদীর পানি। তারপর সে এবং তার ঈমানের দাবিদার সাথিরা যখন নদী পার হয়ে এলো, তারা (তালুতকে) বললো: ‘আজ জালুত এবং তার সেনাদলের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই।’ কিন্তু আল্লাহর সাথে একদিন তো সাক্ষাত হবেই - এ বিশ্বাস যাদের ছিলো, তারা বললো: ‘আল্লাহর হুকুমে ক্ষুদ্র সেনাদল শক্তিশালী বৃহৎ সেনাদলকে পরাজিত করেছে - এমন ঘটনা বহুবারই ঘটেছে।’ আল্লাহ সবর (দৃঢ়তা) অবলম্বনকারীদের সাথেই থাকেন। |
2-250 : আর তারা যখন যুদ্ধের জন্যে জালুত এবং তার সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলো, দোয়া করলো: ‘আমাদের প্রভু! আমাদের দৃঢ়তা দান করো, আমাদের কদমকে মজবুত রাখো এবং এই কাফির লোকদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।’ |
2-251 : অতএব, তারা আল্লাহর হুকুমে তাদের পরাস্ত করলো এবং দাউদ হত্যা করলো জালুতকে। আর আল্লাহ তাকে (দাউদকে) দান করলেন রাজত্ব আর হিকমা (প্রজ্ঞা) এবং তাকে শিক্ষা দিলেন যা ইচ্ছা করলেন। আল্লাহ যদি মানব জাতির একটি দলকে আরেকটি দলের হাতে দমন না করতেন, তাহলে তো পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটে যেতো। কিন্তু আল্লাহ জগতবাসীর প্রতি বড়ই অনুগ্রহশীল। |
2-252 : এগুলো আল্লাহর আয়াত (বাণী) আমরা তিলাওয়াত করছি যথাযথভাবে তোমার প্রতি এবং অবশ্যি তুমি রসূলদের একজন। |
2-253 : সেইসব রসূল, তাদের কিছু রসূলকে অন্য কিছু রসূলের উপর আমরা মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে এমন (রসূল)ও আছে, যে আল্লাহর সাথে কথা বলেছে, আবার কাউকেও তিনি মর্যাদার দিক থেকে উপরে উঠিয়েছেন। এছাড়া মরিয়মের পুত্র ঈসাকে আমরা প্রদান করেছি সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং তাকে সাহায্য করেছি ‘রুহুল কুদুস’ (জিবরাঈল) এর মাধ্যমে। আল্লাহ চাইলে রসূলদের পরের লোকেরা সুস্পষ্ট প্রমাণ সমূহ বর্তমান থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতোনা। কিন্তু (আল্লাহ জোরপূর্বক মানুষের মত এবং বিশ্বাস পরিবর্তন করেননা, তাই) তারা এখতেলাফ (মতভেদে) - এ লিপ্ত হয়। ফলে তাদের কিছু লোক ঈমান আনে, আর কিছু লোক কুফুরির পথ অবলম্বন করে। আল্লাহ চাইলে তারা পারস্পারিক লড়াইতে লিপ্ত হতোনা। কিন্তু আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি চান। |
2-254 : হে ঐ সমস্ত লোক যারা ঈমান এনেছো! তোমরা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো সেই সম্পদ থেকে, যা আমরা তোমাদের দান করেছি, (ব্যয় করো) সেই দিনটি আসার আগেই যেদিন অর্থের কোনো আদান - প্রদান থাকবেনা, বন্ধুতা থাকবেনা এবং থাকবেনা সুপারিশও। মূলত কাফিররাই হলো যালিম। |
2-255 : আল্লাহ, নাই কোনো ইলাহ তিনি ছাড়া। তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনন্তকাল সর্বসৃষ্টির ধারক ও রক্ষক। ঘুম কিংবা তন্দ্রা তাঁকে স্পর্শ করেনা কখনো। মহাকাশ এবং এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর। এমন কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সম্মুখে শাফায়াত করার সাধ্য রাখে? তিনি জানেন তাদের (মানুষের) সামনে - পেছনে (গোচরে - অগোচরে কিংবা ইহকালে - পরকালে) যা কিছু ঘটে এবং ঘটবে। তারা তিনি যতোটুকু চান তাছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ব করতে পারেনা। তাঁর কুরসি পরিব্যাপ্ত মহাকাশ এবং পৃথিবীতে। এগুলোর হিফাযত (ধারণ ও রক্ষণ) তাঁকে ক্লান্ত করেনা। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বমহান। |
2-256 : দীন (ইসলাম) গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা ও বল প্রয়োগ (compulsion) নেই। সঠিক পথকে উজ্জ্বল - পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে। এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে সবচে মজবুত বিশ্বস্ত হাতলটিই আঁকড়ে ধরবে, যা কখনো ভেঙ্গে যাবার নয়। আর আল্লাহ তো সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। |
2-257 : যারা ঈমান আনে তাদের অলি হলেন আল্লাহ। তিনি তাদের বের করে আনেন অন্ধকাররাশি থেকে আলোতে। আর যারা কুফুরির পথ অবলম্বন করে, তাগুতরা হলো তাদের অলি। তারা তাদেরকে টেনে নিয়ে আসে আলো থেকে অন্ধকাররাশিতে। মূলত এরাই হবে আসহাবুন নার (আগুনের অধিবাসী), সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। |
2-258 : তুমি কি ঐ ব্যাক্তির বিষয়টি লক্ষ্য করোনি, যে ইবরাহিমের সাথে বিতর্ক করছিল সে (ইবরাহিম) কাকে প্রভু মানে, তা নিয়ে? আর আল্লাহ তাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দিয়েছিলেন বলেই সে এ বিতর্কে লিপ্ত হয়। (ইবরাহিম কাকে প্রভু মানে - এ প্রশ্নের জবাবে) ইবরাহিম যখন বলেছিল: ‘আমার প্রভু তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান।’ সে (নমরূদ) বললো: (‘আমার রাজ্যে তো) আমিই জীবন (ভিক্ষা) দেই এবং মৃত্যু (দন্ড) দেই।’ ইবরাহিম বললো: ‘(আমার প্রভু) আল্লাহ সূর্যকে (ইরাকের) পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি সেটিকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করো দেখি।’ একথা শুনে কাফিরটি হতভম্ব হয়ে গেলো। আল্লাহ সঠিক পথ দেখান না যালিম লোকদের। |
2-259 : কিংবা ঐ ব্যাক্তির বিষয়টি কি তুমি লক্ষ্য করোনি, যে অতিক্রম করছিল এমন একটি শহর যা ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়ে পড়েছিল? (শহরটি দেখে) সে বললো: ‘হায়, এমন ধ্বংসের পর আল্লাহ কীভাবে এ (শহর) কে জীবিত করবেন?’ সুতরাং আল্লাহ তার মৃত্যু ঘটান এবং একশ বছর অতিবাহিত হবার পর তাকে পুনর্জীবিত করেন। তিনি (আল্লাহ) তাকে জিজ্ঞেস করেন: ‘বলতো কতো বছর (মৃত) পড়েছিলে?’ সে বললো: ‘একদিন বা একদিনের কিছু অংশ’ । তিনি বললেন: ‘না, বরং তুমি (এখানে মৃত) পড়েছিলে একশ বছর! তাকিয়ে দেখো, তোমার খাদ্য ও পানীয়ের দিকে, সেগুলো বিকৃত হয়নি আর তোমার গাধাটির প্রতিও তাকিয়ে দেখো। আমি এটা এজন্যে করেছি যে, আমি তোমাকে মানুষের পুনর্জীবন সম্পর্কে একটি নিদর্শন বানাতে চাই। আর হাড়গুলোর প্রতি তাকিয়ে দেখো, কিভাবে আমরা সেগুলোকে (পুন:) সংযোজিত করি এবং মাংস দিয়ে ঢেকে দেই?’ তারপর তার কাছে যখন সবকিছু স্পষ্ট হলো, তখন সে বলে উঠলো: ‘আমি জানি, অবশ্যি আল্লাহ সবকিছু করতেই সক্ষম সর্বশক্তিমান। |
2-260 : আর স্মরণ করো, ইবরাহিম যখন বলেছিল: ‘আমার প্রভু! তুমি কিভাবে মৃতকে জীবিত করো, তা আমাকে দেখাও।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ‘তুমি কি বিশ্বাস করোনা?’ সে বললো: ‘জী হ্যাঁ (অবশ্যি বিশ্বাস করি), তবে (তা বাস্তবে দেখতে চাই) আমার মনের প্রশান্তি (ঈমানের মজবুতি) অর্জনের জন্যে।’ তিনি বললেন: ‘তাহলে চারটি পাখি সংগ্রহ করে নাও এবং সেগুলোকে (পোষ মানিয়ে) তোমার প্রতি অনুরক্ত বানিয়ে নাও। (তারপর সেগুলোকে টুকরা টুকরা করে কেটে) একেকটি অংশ একেক পাহাড়ে রেখে আসো। এবার (পোষার সময় যে নামে ওদের ডাকতে সে নামে) তাদের ডাক দাও, দেখবে, তারা দ্রুত তোমার কাছে (উড়ে) আসবে। আর জেনে রাখো, অবশ্যি আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী। |
2-261 : যারা আল্লাহর পথে নিজেদের মাল - সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা হলো এরকম, যেমন, একটি (শষ্য) বীজ (বপন করা হলো), সেটি বের করলো সাতটি শীষ, আর প্রতিটা শীষে উৎপন্ন হলো শত শস্যদানা। আল্লাহ যাকে চান এমনি করে বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণে একাই যথেষ্ট, সর্বজ্ঞানী। |
2-262 : যারা আল্লাহর পথে তাদের অর্থ - সম্পদ ব্যয় করে, তারপর সে ব্যয়ের (অনুগ্রহের) কথা বলে বেড়ায়না এবং এর দ্বারা কারো মনেও কষ্ট দেয়না, তাদের পুরষ্কার (সংরক্ষিত) রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনা এবং দুঃখ - বেদনাও থাকবেনা। |
2-263 : একটি সুন্দর কথা এবং ক্ষমা, দান করে দুঃখ দেয়ার চাইতে উত্তম। আল্লাহ সম্পদশালী এবং সহনশীল। |
2-264 : হে ঈমানওয়ালা লোকেরা! দান করার পর খোটা দিয়ে এবং দুঃখ দিয়ে তোমরা তোমাদের দানকে ঐ ব্যক্তির মতো নষ্ট নিষ্ফল করোনা, যে দান করে লোক দেখানোর জন্যে এবং আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখেনা। এ ধরণের দানকারীর উপমা হলো ‘সাফওয়ান’ (মসৃন পাথর - smooth rock), যার উপর সামান্য মাটির আস্তর জমে, তারপর প্রবল বৃষ্টিপাত পাথরটিকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রেখে যায়। এধরণের লোকেরা (দান খয়রাত করে) যে নেকি উপার্জন করে তার কিছুই ধরে রাখতে পারেনা। আর আল্লাহ অকৃতজ্ঞ লোকদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। |
2-265 : পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাঁর পুরস্কার লাভের আত্মবিশ্বাস নিয়ে তাদের অর্থ - সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা হলো এ রকম, যেমন কোনো উঁচু ভূমিতে অবস্থিত একটি বাগান! তাতে বৃষ্টি হলো মূষলধারে এবং তার ফলে তার ফলন হলো দ্বিগুণ। আর মূষলধারে বৃষ্টিপাত না হলেও হালকা বৃষ্টিপাতই (তার ভালো ফলনের জন্যে) যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কর্মের প্রতি দৃষ্টি রাখেন। |
2-266 : তোমাদের কেউ কি এমনটি পছন্দ করবে যে তার থাকবে একটি সুফলা বাগান, সেটি পরিপূর্ণ থাকবে খেজুর আর আংগুরে, তাতে প্রবাহিত থাকবে অনেকগুলো ঝর্ণাধারা, থাকবে সব রকমের ফল ফ্রুট। তারপর এমন এক সময়ে অগ্নিবায়ু প্রবাহিত হয়ে বাগানটি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, যখন সে বৃদ্ধ বয়সে উপনীত আর তার সন্তানগুলো দুর্বল - অপ্রাপ্ত বয়স্ক? আল্লাহ এভাবেই তোমাদের জন্যে তাঁর আয়াত সমূহ বর্ণনা করেন, যাতে করে তোমরা চিন্তা ফিকির করে উপলব্ধি করতে পারো। |
2-267 : হে ঈমানওয়ালা লোকেরা ! তোমরা ভালোটা ব্যয় করো (যাকাত দাও) তা থেকে, যা তোমরা উপার্জন করো এবং তা থেকেও যা আমরা ভূমি থেকে তোমাদের উৎপন্ন করে দেই। তোমরা তা থেকে নিকৃষ্ট অংশ ব্যয় করার সংকল্প করোনা। অথচ (নিকৃষ্ট অংশ) তোমাদের দেয়া হলেও তোমরা তা গ্রহণ করবেনা, তবে (নেয়ার সময়) তোমরা চোখ বন্ধ করে থাকলে ভিন্ন কথা। জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রাচুর্যময় সপ্রশংসিত। |
2-268 : শয়তান তোমাদের অভাব ও দারিদ্রের ভয় দেখায় এবং ফাহেশা কাজ করার নির্দেশ দেয়। অথচ আল্লাহ তোমাদের প্রতিশ্রুতি দেন তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের। আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির অভাব পূরণকারী, সর্বজ্ঞানী। |
2-269 : তিনি হিকমা (জ্ঞান ও প্রজ্ঞা) দান করেন যাকে ইচ্ছা; আর যাকে হিকমা প্রদান করা হয়, তাকে দান করা হয় অবারিত কল্যাণ। তবে বুঝ - বুদ্ধিওয়ালা লোকেরা ছাড়া (অন্যরা) উপদেশ গ্রহণ করেনা। |
2-270 : তোমরা যা কিছু ব্যয় করো এবং যা কিছু মানত করো (কী উদ্দেশ্যে করো), আল্লাহ অবশ্যি তা জানেন। আর (জেনে রাখো) যালিমদের জন্যে কোনো সাহায্যকারী নেই। |
2-271 : তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তবে তা ভালো। কিন্তু যদি দান করো গোপনে আর তা যদি দাও অভাবী লোকদের, তবে তা তোমাদের নিজেদের জন্যেই কল্যাণকর। আর তিনি (দানের কারণে) তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, তিনি তার খবর রাখেন। |
2-272 : মানুষকে সঠিক পথে নিয়ে আসার (ঈমান গ্রহণ করানোর এবং দীন - ইসলামে প্রবেশ করানোর) দায়িত্ব তোমার নয়; বরং আল্লাহ যাকে চান, সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তোমরা যে অর্থসম্পদ দান করো, তা তোমাদের নিজেদের জন্যেই কল্যাণকর। আর তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে দান করোনা। তোমরা (আল্লাহর সন্তোষ কামনায়) যে অর্থ - সম্পদই ব্যয় করোনা কেন, তার পূর্ণ প্রতিদান তোমাদের প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার করা হবেনা। |
2-273 : সেইসব নি:স্ব - অভাবী লোকেরা তোমাদের দান পাওয়ার (বিশেষভাবে) অধিকারী, যারা আল্লাহর পথে নিজেদের পুরোপুরি ব্যাপৃত করে রেখেছে, ঘুরাঘুরি করে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পায়না। তাদের আত্মসম্মানবোধ দেখে অজ্ঞ লোকেরা মনে করে তারা সচ্ছল। তাদের চেহারা দেখলেই তুমি তাদের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারবে। তারা কিছুতেই মানুষের কাছে হাত পাতেনা। মানব কল্যাণে তোমরা যা কিছুই ব্যয় করবে, তা অবশ্যি আল্লাহর এলেমে থাকবে। |
2-274 : যারা ব্যয় করে নিজেদের মাল সম্পদ (আল্লাহর পথে) রাত্রে এবং দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনা, দুঃখ - বেদনাও থাকবেনা। |
2-275 : যারা রিবা (সুদ usury) খায়, (কিয়ামতের দিন) তারা দাঁড়াতে পারবেনা, তবে দাঁড়াবে ঐ ব্যক্তির মতো যে শয়তানের থাবায় পাগলামিতে উন্মত্ত। তাদের অবস্থা এরকম হবার কারণ, তারা বলে: ‘ব্যবসাও তো রিবার মতোই।’ অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল, আর রিবাকে করেছেন হারাম। যার কাছে তার প্রভুর (সুদ থেকে বিরত হবার) উপদেশ পৌঁছেছে এবং সে (সুদ থেকে) বিরত হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সে অতীতে যা খেয়েছে, তাতো খেয়েছেই। তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আল্লাহর। কিন্তু যারা (সুদের) পুনরাবৃত্তি করবে, তারা হবে ‘আসহাবুন নার’ (আগুনের অধিবাসী), সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। |
2-276 : আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন এবং বৃদ্ধি ও বিকাশ করেন সাদাকা (যাকাত ও দান) কে। আল্লাহ পছন্দ করেননা কোনো অকৃতজ্ঞ দুর্নীতিবাজ পাপিষ্ঠকে। |
2-277 : যারা ঈমান আনে, আমলে সালেহ্ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের প্রভুর কাছে। তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনা, দুঃখ বেদনাও থাকবেনা। |
2-278 : হে ঈমানওয়ালা লোকেরা! আল্লাহকে ভয় করো এবং মানুষের কাছে তোমাদের যে সুদ পাওনা (বাকি) রয়ে গেছে, তা পরিত্যাগ করো (give up), যদি তোমরা (সত্যিকার) মুমিন হয়ে থাকো। |
2-279 : তোমরা যদি তা (পরিত্যাগ) না করো, তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা গ্রহণ করো। আর যদি অনুতপ্ত হয়ে (সুদ) পরিত্যাগ করো, তবে আসলটা (মূলধন) ফেরত নেয়া তোমাদের জন্যে বৈধ। তোমরা যুলুম করোনা এবং যুলুমের শিকারও হয়োনা। |
2-280 : ঋণগ্রহীতা (debtor) যদি অভাবে (ঋণ ফেরত দেয়ার অবস্থায় না) থাকে, তবে সচ্ছলতা লাভ করা পর্যন্ত তাকে অবকাশ (সময়) দাও। কিন্তু অভাবী ঋণ গ্রহীতাকে যদি (ঋণের অর্থ ফেরত না নিয়ে) দান করে দাও, তবে সেটা তোমাদের জন্যেই কল্যাণকর, প্রকৃত ব্যাপার যদি তোমরা জানতে! |
2-281 : তোমরা সেই দিনটিকে ভয় করো (সেই দিনটির ক্ষতি থেকে নিজেদের রক্ষা করো), যেদিন তোমাদের আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে এবং প্রত্যেককেই তার উপার্জনের (কৃতকর্মের) প্রতিদান পুরোপুরি প্রদান করা হবে এবং তাদের প্রতি করা হবেনা কোনো প্রকার অবিচার! |
2-282 : হে ঈমানদার লোকেরা ! তোমরা যখন কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে পরস্পরের মধ্যে ঋণ লেনদেন (চুক্তি) করবে, তা লিখিত করবে। তোমাদের কোনো লেখক যেনো তোমাদের মাঝে ন্যায়সংগত ভাবে তা লিখে দেয়। কোনো লেখক যেনো তা লিখতে অস্বীকার না করে, যেমন আল্লাহ তাকে (লিখতে) শিখিয়েছেন। সুতরাং সে যেনো লিখে দেয়। লেখার বিষয়বস্তু বলে দেবে ঋণের দায়িত্ব বহনকারী (ঋণগ্রহীতা)। সে যেনো তার প্রভু আল্লাহকে ভয় করে এবং স্থিরকৃত কোনো কিছুই যেনো কমবেশি (কারচুপি) না করে। তবে ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ কিংবা দুর্বল হয়ে থাকে এবং লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয়ার যোগ্যতা না রাখে, তবে যেনো তার অভিভাবক ন্যায়সংগতভাবে বিষয়বস্তু বলে দেয়। আর (এই লেনদেন চুক্তিতে) তোমাদের মধ্য থেকে দু'জন পুরুষকে সাক্ষী রাখো। দুইজন পুরুষ পাওয়া না গেলে (সাক্ষী রাখো) একজন পুরুষ আর দুইজন নারীকে - যাতে (নারীদের) একজন ভুলে গেলে আরেকজন স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। সাক্ষী রাখবে এমন লোকদের, যাদের সাক্ষ্য তোমাদের (উভয় পক্ষের) নিকট গ্রহণযোগ্য। সাক্ষীদের যখন (সাক্ষ্য প্রদানের জন্যে) ডাকা হবে, তখন তারা যেনো (সাক্ষ্য দিতে) অস্বীকার না করে। এই ঋণ ছোট বা বড় (পরিমাণের) হোক, তোমরা মেয়াদসহ তার (চুক্তিপত্র) লিখে রাখতে ক্লান্ত - বিরক্ত হয়োনা। আল্লাহর কাছে (ধার এবং বাকি ক্রয়বিক্রয় ও ব্যবসা - বাণিজ্যের) এটাই সবচে ন্যায়সংগত পদ্ধতি, প্রমাণের দিক থেকেও এ পদ্ধতি সবচেয়ে নিখাদ, আর (পরস্পরের ব্যাপারে) সন্দেহ - সংশয় উদ্রেক না হবার ক্ষেত্রেও সবচেয়ে সহায়ক। তবে তোমরা পরস্পরের মধ্যে নগদ যে বেচাকেনা বা ব্যবসা করো, তা লিখে না রাখলে তোমাদের পাপ হবেনা। তোমাদের কেনা বেচার (বাণিজ্যিক চুক্তির) ক্ষেত্রে সাক্ষী রাখো, আর চুক্তি (বা দলিল) লেখক এবং সাক্ষীকে যেনো কোনো ক্ষতি বা কষ্ট ভোগ করতে না হয়। যদি তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করো তবে এটা হবে তোমাদের জন্যে সীমালংঘন - পাপ। আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রাখো, তিনি তোমাদের (কর্মপদ্ধতি) শিক্ষা দিচ্ছেন। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে জ্ঞানী। |
2-283 : তবে তোমরা যদি সফর (journey) অবস্থায় থাকো এবং (চুক্তি বা দলিল) লেখক (scribe) না পাও, সেক্ষেত্রে বন্ধক (pledge, mortgage) হস্তান্তর করে কার্য সম্পাদন করো। তোমরা যদি একে অপরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো, তবে যার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা (যার কাছে আমানত রাখা) হয়, সে যেনো (বিশ্বস্ততার সাথে) আমানত ফেরত দেয় এবং যেনো তার প্রভু আল্লাহকে ভয় করে। (হে সাক্ষীরা!) তোমরা সাক্ষ্য গোপন করোনা। যে সাক্ষ্য গোপন করে তার অন্তর অবশ্যি পাপী। তোমরা যা - ই করোনা কেন, আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত। |
2-284 : একমাত্র আল্লাহ্ই মালিক যা কিছু রয়েছে মহাকাশে আর যা কিছু রয়েছে এই পৃথিবীতে। তোমাদের মনে যা কিছু আছে তা তোমরা প্রকাশ করো কিংবা গোপন রাখো, আল্লাহ অবশ্যি তোমাদের থেকে তার হিসাব গ্রহণ করবেন। তারপর যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করে দেবেন, যাকে ইচ্ছে আযাবে নিক্ষেপ করবেন। আর আল্লাহ সকল কাজে সর্বশক্তিমান। |
2-285 : এই রসূল (মুহাম্মদ) ঈমান এনেছে তাতে, যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি তার প্রভুর পক্ষ থেকে এবং মুমিনরাও (ঈমান এনেছে)। তাদের প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রসূলদের প্রতি। (তারা বলে:) ‘আমরা তাঁর রসূলদের মধ্যে কোনো প্রকার তারতম্য (distinction) করিনা।’ তারা আরো বলে: ‘আমরা নির্দেশ শুনি এবং আনুগত্য করি। হে প্রভু! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আর তোমার কাছেই ফিরে যেতে হবে (সবাইকে)।’ |
2-286 : আল্লাহ কোনো ব্যক্তির উপর তার সাধ্যাতীত বোঝা চাপাননা। তার ভালো উপার্জনের (কৃতকর্মের) প্রতিফল সে - ই পাবে, আর তার মন্দ উপার্জনের (কৃতকর্মের) প্রতিফলও তাকেই ভোগ করতে হবে। (তোমরা এভাবে দোয়া করো:) ‘আমাদের প্রভু ! আমাদের শাস্তি দিওনা যদি আমরা ভুল করি, কিংবা করে ফেলি যদি অন্যায়! আমাদের প্রভু! আমাদের প্রতি এমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করোনা যেমনটি অর্পণ করেছিলে আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। আমাদের প্রভু! আমাদের উপর এমন বোঝা অর্পণ করোনা যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের গুনাহ - খাতা মুছে দাও, আমাদের ক্ষমা করে দাও, আমাদের প্রতি রহম করো, তুমিই তো আমাদের মাওলা (অভিভাবক, সাহায্যকারী), তাই তুমি আমাদের বিজয় দান করো অবিশ্বাসীদের উপর। |