Go Back
Book Id: 10030
আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম
Chapter: 3, আলে ইমরান (ইমরানের বংশধর)
মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২৮৬, রুকু সংখ্যা: ৪০এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
3-1 : আলিফ লাম মিম। |
3-2 : আল্লাহ্! নেই কোনো ইলাহ্ তিনি ছাড়া, তিনি চিরঞ্জীব, সমগ্র সৃষ্টির ধারক। |
3-3 : তিনি নাযিল করেছেন তোমার প্রতি আল কিতাব, যা মহাসত্য এবং তার পূর্বের (কিতাবের) সত্যায়নকারী। আর তিনিই নাযিল করেছেন তাওরাত এবং ইনজিল - |
3-4 : ইতোপূর্বে, মানুষের জন্যে পথ প্রদর্শনকারী হিসেবে। অতপর তিনি নাযিল করলেন আল ফুরকান (আল কুরআন)। নিশ্চয়ই যারা অমান্য করে আল্লাহর আয়াত (এই কুরআন), তাদের জন্যে রয়েছে শক্ত আযাব। আল্লাহ অসীম ক্ষমতাশালী, (অপরাধের) দন্ডদাতা। |
3-5 : নিশ্চয়ই আল্লাহ (এমন সত্তা যে), তাঁর কাছে গোপন থাকেনা কিছুই, না পাতালে, না আকাশে। |
3-6 : তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদের সুরত গঠন করেন রেহেমে (মাতৃগর্ভে) যেভাবে তিনি চান। নেই কোনো ইলাহ্ তিনি ছাড়া, অসীম ক্ষমতাধর মহা প্রজ্ঞাবান তিনি। |
3-7 : তিনি সেই সত্তা, যিনি নাযিল করেছেন তোমার প্রতি আল কিতাব, যার কিছু আয়াত মুহকাম , সেগুলোই এ কিতাবের মূল; বাকিগুলো মুতাশাবিহ্। যাদের অন্তরে বক্রতা আছে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তারা পিছু নেয় মুতাশাবিহ্ আয়াত সমূহের এবং সেগুলোর তা’বিল (ব্যাখ্যা) সন্ধানের কাজে নিয়োজিত হয়। অথচ কেউ জানেনা সেগুলোর তা’বিল আল্লাহ ছাড়া। যারা জ্ঞানের গভীরতা রাখে, তারা বলে: ‘‘আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, সবগুলোই আমাদের রব - এর নিকট থেকে (অবতীর্ণ)। আসলে বুঝের লোকেরা ছাড়া কেউ উপদেশ গ্রহণ করেনা। |
3-8 : আমাদের রব! বক্র করোনা আমাদের হৃদয়গুলোকে আমাদেরকে হিদায়াত দান করার পর, আর আমাদের দান করো তোমার নিকট থেকে রহমত। নিশ্চয়ই তুমি মহান দাতা। |
3-9 : আমাদের প্রভু! নিশ্চয়ই তুমি জমা করবে সকল মানুষকে সেদিন, যে দিনটির (আগমনের ব্যাপারে) কোনো সনেদহ নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ খেলাফ করেননা ওয়াদা।’’ |
3-10 : যারা কুফুরি করে তাদের মাল সম্পদ ও সন্তান সন্ততি আল্লাহর কাছে (তাদের) কোনোই কাজে আসবে না। তারা হবে জাহান্নামের জ্বালানি। |
3-11 : তাদের স্বভাব চরিত্র ফেরাউন সম্প্রদায় এবং তাদের পূর্ববর্তীদের স্বভাব চরিত্রেরই মতো। তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের আয়াত। ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদের পাকড়াও করেন এবং শাস্তি প্রদানে আল্লাহ খুবই কঠোর। |
3-12 : যারা কুফুরি করে তাদের বলো: তোমরা অচিরেই পরাজিত হবে এবং তোমাদের হাশর করা হবে জাহান্নামে, আর তা কতো যে নিকৃষ্ট আবাস! |
3-13 : (বদর যুদ্ধে) দুই বাহিনীর সম্মুখীন হবার মধ্যে তোমাদের জন্যে রয়েছে একটি নিদর্শন। একটি দল লড়াই করছিল আল্লাহর পথে আর অপর দল ছিলো কাফির, তারা তাদেরকে (মুসলিম বাহিনীকে) চোখের দেখায় দেখছিল দ্বিগুণ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শক্তিশালী করেন তাঁর সাহায্য দিয়ে। নিশ্চয়ই এতে শিক্ষণীয় রয়েছে অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্যে। |
3-14 : নারী (স্ত্রী), সন্তান, সোনা - রুপার স্তুপ, চিহ্নধারী ঘোড়া, গবাদি পশু এবং ক্ষেত খামারের প্রতি ভালোবাসা ও আসক্তি মানুষের জন্যে সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে। এসবই দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্ত্ত। আর উত্তম আশ্রয়স্থল তো রয়েছে আল্লাহর কাছেই। |
3-15 : তাদের বলো: ‘‘আমি কি তোমাদের এসব জিনিস থেকে উত্তম জিনিসের সংবাদ দেবো? তাহলো, যারা তাকওয়ার পথ অবলম্বন করবে তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাতসমূহ। যেগুলোর নিচে দিয়ে বহমান রয়েছে নদ - নদী - নহর। সেখানে থাকবে তারা চিরকাল। সেখানে তাদের জন্যে মওজুদ রয়েছে পবিত্র জীবন - সাথিরা, আরো রয়েছে আল্লাহর রেজামন্দি। আর আল্লাহ তো তাঁর দাসদের প্রতি দৃষ্টি রাখবেনই।’’ |
3-16 : যারা বলে: ‘আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, ক্ষমা করে দাও আমাদের সমস্ত পাপ আর রক্ষা করো আমাদের আগুনের আযাব থেকে।’ |
3-17 : তাদের বৈশিষ্ট্য হলো: তারা ধৈর্যশীল, সত্যপন্থী, বিনত, (আল্লাহর পথে) দানকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। |
3-18 : আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন, নিশ্চয়ই কোনো ইলাহ্ নেই তিনি ছাড়া। ফেরেশতা এবং জ্ঞানীরাও এই সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। কোনো ইলাহ নেই তিনি ছাড়া। তিনি মহাশক্তিমান মহাবিজ্ঞানী। |
3-19 : নিশ্চয়ই দীন আল্লাহর কাছে একমাত্র ইসলাম। ইতোপূর্বে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা তাদের পরস্পর বিদ্বেষবশত তাদের কাছে এলেম আসার পর ইখতেলাফে লিপ্ত হয়। যারাই কুফুরি করবে আল্লাহর আয়াতের প্রতি, তাদের জেনে রাখা উচিত আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুতগামী। |
3-20 : যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হতে চায়, তবে তাদের বলে দাও: ‘আমি আল্লাহর জন্যে আত্মসমর্পণ করেছি এবং যারা আমার অনুসরণ করে তারাও।’ যাদের ইতোপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের এবং উম্মিদের জিজ্ঞেস করো: ‘তোমরা কি ইসলাম কবুল (আত্মসমর্পণ) করবে?’ যদি তারা ইসলাম কবুল (আত্মসমর্পণ) করে তবেই হিদায়াত (সঠিক পথ) লাভ করবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার দায়িত্ব তো কেবল (আমার বার্তা) পৌঁছে দেয়া। আল্লাহ তো তাঁর বান্দাদের প্রতি দৃষ্টি রাখছেনই। |
3-21 : যারা কুফুরি করে আল্লাহর আয়াতের প্রতি, নবীদের কতল করে নাহকভাবে এবং মানুষের মধ্যে যারা ন্যায় ও ইনসাফের আদেশ করে তাদেরকেও হত্যা করে, তুমি এসব লোকদের সংবাদ দাও বেদনাদায়ক আযাবের। |
3-22 : দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের সমস্ত আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে, আর তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবেনা। |
3-23 : তুমি কি ঐসব লোকদের দেখোনি, যাদের কিতাবের অংশ বিশেষ দেয়া হয়েছিল? তাদের আহবান করা হয়েছিল আল্লাহর কিতাবের দিকে, যাতে করে তা তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেয়। তারপর তাদের একটি পক্ষ মুখ ফিরিয়ে নেয়, মূলত তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়ারই লোক। |
3-24 : এর কারণ হলো, তারা বলে বেড়ায়: ‘মাত্র কয়েকটা দিন ছাড়া আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শই করবেনা।’ তাদের দীন সম্পর্কে তাদের প্রতারিত করে রেখেছে তাদের এই মিথ্যা রচনা। |
3-25 : ঐ দিন তাদের কী অবস্থা হবে, যে সন্দেহাতীত দিনে আমরা তাদের জমা করবো এবং প্রত্যেককেই তার উপার্জিত কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম (অবিচার) করা হবেনা? |
3-26 : (হে নবী!) বলো: ‘হে আল্লাহ! সমস্ত কর্তৃত্বের মালিক তুমি। যাকে ইচ্ছা তুমি ক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে ইচ্ছা তুমি ক্ষমতা কেড়ে নাও। যাকে ইচ্ছা তুমি ইয্যত দাও এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করো। সমস্ত কল্যাণ তোমারই হাতে। নিশ্চয়ই তুমি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।' |
3-27 : তুমিই রাতকে দিনে রূপান্তরিত করো এবং দিনকে রূপান্তরিত করো রাতে। তুমি জীবন্তকে বের করে আনো মৃত থেকে এবং মৃতকে বের করে আনো জীবন্তের থেকে। আর যাকে ইচ্ছা তুমি রিযিক দান করো বেহিসাব। |
3-28 : মুমিনরা মুমিনদের ছাড়া কাফিরদের অলি (বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক) হিসেবে গ্রহণ করবেনা। যে কেউ তা করবে, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক থাকার কোনো ভিত্তি তার থাকবেনা। তবে ব্যতিক্রম হলো, যদি তোমরা তাদের থেকে আত্মরক্ষার জন্যে সতর্কতা অবলম্বন করো, সেক্ষেত্রে আল্লাহ তোমাদের সতর্ক করছেন তাঁর নিজের সম্পর্কে আর আল্লাহর কাছেই (হবে সবার) প্রত্যাবর্তন। |
3-29 : (হে নবী!) তাদের বলো: ‘তোমাদের মনে যা আছে, তা যদি গোপন রাখো, অথবা যদি প্রকাশ করো (সর্বাবস্থায়ই) আল্লাহ তা জানেন। তিনি জানেন যা কিছু আছে মহাকাশে আর যা কিছু আছে এই পৃথিবীতে। আর আল্লাহ সব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।’ |
3-30 : যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি হাজির পাবে সে যা ভালো কাজ করেছে তা, এবং সে যা মন্দ করেছে তাও। সেদিন সে (যে মন্দ কাজ করেছে) তার ও তার মন্দ কাজের মধ্যে দূর ব্যবধান কামনা করবে। আল্লাহ তোমাদের সাবধান করছেন তাঁর নিজের সম্পর্কে। আল্লাহ তাঁর দাসদের প্রতি পরম কোমল - দয়া পরবশ। |
3-31 : (হে নবী!) তাদের বলো: ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল পরম দয়াবান।’ |
3-32 : তাদের বলো: ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাঁর রসূলের।’ যদি তারা (এ কথা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখো, আল্লাহ কাফিরদের পছন্দ করেন না। |
3-33 : আল্লাহ বিশ্ববাসীর মধ্যে বাছাই করেছেন আদম, নূহ, ইবরাহিমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে। |
3-34 : তারা পরস্পরের বংশধর। আল্লাহ সব শুনেন, সব দেখেন। |
3-35 : স্মরণ করো, ইমরানের স্ত্রী বলেছিল: ‘আমার প্রভু! আমার গর্ভে যা (যে সন্তান) আছে, তাকে একান্তভাবে তোমার জন্যে উৎসর্গ করলাম। সুতরাং তুমি আমার পক্ষ থেকে তাকে কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সব শুনো, সব জানো।’ |
3-36 : পরে যখন সে তাকে প্রসব করলো, বললো: ‘আমার প্রভু! আমি তো কন্যা সন্তান প্রসব করেছি।’ সে যা প্রসব করেছিল সে সম্পর্কে আল্লাহ সর্বাধিক জানতেন। (সে আরো বললো:) ‘আর ছেলে তো এই মেয়ের মতো নয়, আমি তার নাম রেখেছি মরিয়ম এবং তাকে ও তার বংশধরদেরকে তোমার আশ্রয়ে দিচ্ছি অভিশপ্ত শয়তান থেকে।’ |
3-37 : ফলে তার প্রভু তাকে কবুল করে নিলেন উত্তম কবুল, আর তাকে গড়ে তুললেন উত্তমভাবে এবং তার তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করলেন যাকারিয়াকে। যাকারিয়া যখনই তার কাছে মেহরাবে প্রবেশ করতো তার কাছে খাবার সামগ্রী দেখতে পেতো। সে বলতো: ‘মরিয়ম! এসব তুমি কোথায় পেলে?’ সে বলতো: ‘তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে চান রিযিক দেন বেহিসাব।’ |
3-38 : ওখানেই যাকারিয়া তার প্রভুর কাছে দোয়া করলো: ‘আমার প্রভু! তোমার পক্ষ থেকে তুমি আমাকে একটি উত্তম বংশধর দাও। নিশ্চয়ই তুমি দোয়া শুনে (কবুল করে) থাকো।’ |
3-39 : ফলে যাকারিয়া যখন মেহরাবে সালাতে দাঁড়িয়েছিল, তখন ফেরেশতারা এসে তাকে ডেকে বললো: ‘আল্লাহ আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহিয়ার, তিনি হবেন আল্লাহর ‘কালেমার’ সত্যায়নকারী, সাইয়েদ, নারী বিরাগী এবং সালেহ্ নবীদের একজন।’ |
3-40 : সে বললো: ‘হে আমার প্রভু! কী করে ছেলে হবে আমার? আমার তো বার্ধক্য এসেছে, তাছাড়া আমার স্ত্রী বন্ধ্যা।’ তিনি বললেন: ‘এভাবেই আল্লাহ যা চান করে থাকেন।’ |
3-41 : সে বললো: ‘আমার প্রভু! আমাকে (এর) একটা নিদর্শন দাও।’ তিনি বললেন: ‘তোমার নিদর্শন হলো, তুমি তিনদিন আকারে ইংগিতে ছাড়া কথা বলবেনা এবং তোমার প্রভুর বেশি বেশি যিকির করবে, আর তাসবিহ্ করবে সকাল ও সন্ধ্যায়।’ |
3-42 : স্মরণ করো, ফেরেশতারা বলেছিল: ‘‘হে মরিয়ম! আল্লাহ আপনাকে মনোনীত ও পবিত্র করেছেন এবং বিশ্বনারীদের মধ্যে আপনাকে বাছাই করেছেন। |
3-43 : হে মরিয়ম! আপনার প্রভুর প্রতি অনুগত ও বিনয়ী হোন, সাজদা করুন এবং যারা রুকু করে, তাদের সাথে রুকু করুন।’’ |
3-44 : এগুলো গায়েব - এর সংবাদ আমরা অহি করছি তোমার প্রতি। তুমি তখন তাদের কাছে উপস্থিত ছিলেনা যখন তাদের মধ্যে মরিয়মের কফিল (তত্ত্বাবধায়ক) কে হবে তা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে তারা কলম নিক্ষেপ করেছিল, আর তখনো তুমি তাদের কাছে ছিলেনা যখন তারা এ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়েছিল। |
3-45 : স্মরণ করো, ফেরেশতারা বলেছিল: ‘‘হে মরিয়ম! আল্লাহ আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর পক্ষ থেকে একটি কলেমার, তার নাম হবে মসিহ্ ঈসা ইবনে মরিয়ম, সে হবে দুনিয়া এবং আখিরাতে সম্মানিত এবং নৈকট্য লাভকারীদের একজন। |
3-46 : দোলনায় থাকা অবস্থায় সে মানুষের সাথে কথা বলবে এবং পরিণত বয়সেও এবং সে হবে ন্যায়বানদের একজন।’’ |
3-47 : সে বললো: ‘আমার প্রভু! কেমন করে ছেলে হবে আমার, আমাকে তো স্পর্শ করেনি কোনো পুরুষ?’ তিনি বললেন: ‘‘এভাবেই আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন বলেন: ‘হও’ এবং তা হয়ে যায়। |
3-48 : এবং তিনি তাকে তালিম দেবেন আল কিতাব, হিকমাহ, তাওরাত ও ইনজিল। |
3-49 : আর তাকে রসূল হিসেবে পাঠাবেন বনি ইসরাঈলের কাছে।’’ সে তাদের বলবে: ‘‘আমি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। (তাহলো) আমি কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি তৈরি করবো, তারপর তাতে ফুঁ দেবো, সাথে সাথে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তা হয়ে যাবে পাখি। আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীদের নিরাময় করবো। আমি মৃতকে জীবিত করবো আল্লাহর অনুমতিক্রমে। তাছাড়া তোমরা তোমাদের ঘরে যা খাও এবং যা সঞ্চয় করো তা তোমাদের বলে দেবো। এতে তোমাদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। |
3-50 : আর আমার সামনে তাওরাতের যা রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী, আর তোমাদের জন্যে যেসব জিনিস হারাম করা হয়েছিল আমি তার কিছু হালাল করবো। আমি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নিদর্শন নিয়ে এসেছি। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। |
3-51 : আল্লাহ্ই আমার রব এবং তোমাদেরও রব, সুতরাং কেবল তাঁরই ইবাদত করো - এটাই সরল সঠিক পথ।’’ |
3-52 : অতপর ঈসা যখন তাদের থেকে কুফুরি অনুভব করলো, তখন তাদের বললো: ‘আল্লাহর পথে কারা হবে আমার সাহায্যকারী? তখন হাওয়ারীরা বললো: ‘‘আমরা হবো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা আত্মসমর্পণকারী - মুসলিম। |
3-53 : আমাদের প্রভু! তুমি যা নাযিল করেছো আমরা তার (সেই কিতাবের) প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার এই রসূলের ইত্তেবা (অনুসরণ) করেছি, তাই তুমি আমাদের (নাম) লিখে নাও সাক্ষ্যদানকারীদের সাথে।’’ |
3-54 : ওরা ষড়যন্ত্র করেছিল আর আল্লাহ্ও কৌশল করেছিলেন। আল্লাহ্ই সর্বোত্তম কৌশলী। |
3-55 : স্মরণ করো, আল্লাহ বলেছিলেন: ‘‘হে ঈসা! আমি তোমার সময়কাল পূর্ণ করছি, তোমাকে আমার কাছে উঠিয়ে নিচ্ছি, যারা কুফুরিতে লিপ্ত হয়েছে তাদের থেকে তোমাকে পবিত্র করছি এবং তোমার অনুসারীদের কাফিরদের উপর কিয়ামতকাল পর্যন্ত শ্রেষ্ঠত্ব দিচ্ছি। অতপর আমার কাছেই হবে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবো যে বিষয়ে তোমরা ইখতেলাফ করছিলে। |
3-56 : তবে, যারা কুফুরিতে লিপ্ত হবে, তাদেরকে আমি আযাব দেবো কঠিন আযাব দুনিয়ায় এবং আখিরাতে এবং তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবেনা।’’ |
3-57 : আর যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ করবে, তিনি তাদের পুরোপুরি দিয়ে দেবেন তাদের প্রতিফল। আল্লাহ যালিমদের পছন্দ করেননা। |
3-58 : এগুলো হলো আয়াত এবং বিজ্ঞানময় উপদেশ, যা আমরা তোমার প্রতি তিলাওয়াত করছি। |
3-59 : আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ। আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর তাকে বলেছেন: ‘হও’ ফলে সে হয়ে গেলো। |
3-60 : সত্য (এসেছে) তোমার প্রভুর নিকট থেকে, সুতরাং তুমি সনেদহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা। |
3-61 : তোমার কাছে (সত্য) এলেম আসার পর যারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তুমি তাদের বলো: ‘‘এসো আমরা ডাকি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের, আমাদের নিজেদের এবং তোমাদের নিজেদের, তারপর বিনীত আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহর লা’নত।’’ |
3-62 : এ এক অতীব সত্য বিবরণ। কোনো ইলাহ্ নেই আল্লাহ ছাড়া। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাশক্তিমান মহা বিজ্ঞানী। |
3-63 : তারপরও তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে জেনে রাখো, আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালোভাবেই জানেন। |
3-64 : হে নবী! তুমি তাদের বলো: ‘হে আহলে কিতাব! এসো, এই কথাটিতে আমরা একমত হয়ে যাই, যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে একই রকম। তাহলো: আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবোনা। আমরা তাঁর সাথে কোনো কিছুকেই শরিক করবোনা এবং আমরা আল্লাহ ছাড়া আমাদের পরস্পরকে রব হিসেবে গ্রহণ করবোনা।’ যদি তারা (এ প্রস্তাব) গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তবে তাদের বলো: ‘তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম।’ |
3-65 : হে আহলে কিতাব! তোমরা ইবরাহিমকে নিয়ে কেন তর্ক করো? অথচ তাওরাত এবং ইনজিল তো তার পরে নাযিল হয়েছে। তোমরা কি আকল রাখোনা? |
3-66 : হাঁ, তোমরা তো ঐসব লোক, যারা তর্ক করেছো যে বিষয়ে তোমাদের একটুখানি জ্ঞান আছে, কিন্তু যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞানই নেই, সে বিষয়ে কেন তোমরা তর্ক করছো? আল্লাহ জানেন, তোমরা জানোনা। |
3-67 : ইবরাহিম ইহুদিও ছিলনা নাসারাও (খৃষ্টান) ছিলনা, বরং সে ছিলো একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলনা। |
3-68 : জেনে রাখো, মানুষের মাঝে ইবরাহিমের নিকটতম লোক হলো তারা, যারা তার অনুসরণ করেছে এবং এই নবী (মুহাম্মদ), আর যারা ঈমান এনেছে তারা। আল্লাহ্ই মুমিনদের অলি। |
3-69 : আহলে কিতাবদের একদল লোক চায় যেনো তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে পারে। আসলে তারা কেবল নিজেদেরই পথভ্রষ্ট করে, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারেনা। |
3-70 : হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন আল্লাহর আয়াতকে (আল কুরআন ও শেষ নবীকে) অস্বীকার করছো, অথচ (তা সত্য হবার ব্যাপারে) তোমরাই সাক্ষী। |
3-71 : হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন আল্লাহর আয়াতকে (আল কুরআন ও শেষ নবীকে) অস্বীকার করছো, অথচ (তা সত্য হবার ব্যাপারে) তোমরাই সাক্ষী। |
3-72 : আহলে কিতাবদের মধ্যে একদল লোক (তাদের লোকদের) বলছিল: ‘মুমিনদের প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি দিনের শুরুতে ঈমান আনো, আর দিনের শেষে কুফুরি করো, তাতে হয়তো তারা (তাদের ঈমান থেকে) ফিরে আসবে।’ |
3-73 : (তারা নিজেদের মধ্যে আরো বলাবলি করে:) ‘আর কাউকেও বিশ্বাস করবেনা তাকে ছাড়া, যে তোমাদের ধর্মের অনুসরণ করে।’ হে নবী! তাদের বলো: ‘আল্লাহর দেখানো পথই একমাত্র হিদায়াতের পথ।’ এটা এজন্যে যে, এক সময় তোমাদের যা দেয়া হয়েছে অনুরূপ অন্য কাউকেও দেয়া হবে, অথবা তোমাদের প্রভুর সামনে তারা তোমাদের যুক্তিতে পরাস্ত করবে। বলো: অনুগ্রহ অবশ্যি আল্লাহর হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। আল্লাহ অতীব উদার, অতীব জ্ঞানী। |
3-74 : নিজ রহমতের জন্যে যাকে ইচ্ছা তিনি খাস করে বেছে নেন। মহা অনুগ্রহের মালিক আল্লাহ। |
3-75 : আহলে কিতাবদের (ইহুদি খৃষ্টানদের) মধ্যে এমন লোকও আছে, যার কাছে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ আমানত রাখলেও সে তোমাকে ফেরত দেবে, আবার এমন লোকও আছে যার কাছে একটি দিনার আমানত রাখলেও তার পিছে লেগে না থাকলে সে ফেরত দেবেনা। এর কারণ হলো, তারা বলে: ‘উম্মিদের প্রতি আমাদের কোনো দায় দায়িত্ব নেই।’ তারা জেনে শুনেই আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে। |
3-76 : হ্যাঁ, কেউ যদি তার অংগীকার পুরণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তারা জেনে রাখুক, আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন। |
3-77 : যারা বিক্রয় করে আল্লাহর সাথে করা অংগীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে, আখিরাতে তাদের কোনো অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেনও না, আর তাদের পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। |
3-78 : অবশ্যি তাদের মধ্যে এমন একদল লোক আছে যারা আল্লাহর কিতাবকে জিহ্বা দিয়ে বিকৃত করে, যাতে করে তোমরা সেটাকে আল্লাহর কিতাবের অংশ মনে করো। অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। তারা বলে: ‘ওটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে।’ অথচ সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। তারা জেনে বুঝে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলে। |
3-79 : কোনো ব্যক্তির জন্যে এটা সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমাহ ও নবুয়্যত দেবেন, অতপর সে মানুষকে বলবে: ‘তোমরা আল্লাহর বদলে আমার দাস হয়ে যাও।’ বরং সে বলবে: ‘তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও।’ এর কারণ, তোমরা তো কিতাব শিক্ষাদান করতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। |
3-80 : ফেরেশতা এবং নবীদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ সে তোমাদের দিতে পারেনা। তোমরা মুসলিম হবার পর সে কি তোমাদের কুফুরির নির্দেশ দেবে? |
3-81 : স্মরণ করো, আল্লাহ একথার উপর নবীদের অংগীকার নিয়েছিলেন যে: আমি তোমাদের যে কিতাব ও হিকমাহ্ দিয়েছি তোমরা তা গ্রহণ করো, তারপর তোমাদের কাছে একজন রসূল (মুহাম্মদ) আসবে, তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে, তখন তোমরা অবশ্যি তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে।’তিনি জিজ্ঞেস করলেন: ‘তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এ ব্যাপারে আমার প্রতিশ্রুতি কি গ্রহণ করলে?’ তারা বলেছিল: ‘আমরা স্বীকার করলাম।’ তিনি বললেন: ‘তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম।’ |
3-82 : এরপর যারা (প্রতিশ্রুতি থেকে) সরে যাবে, তারা ফাসিক (সত্যত্যাগী) বলে গণ্য হবে। |
3-83 : তারা কি আল্লাহর দীনের পরিবর্তে অন্য দীন সন্ধান করছে? অথচ মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে সবাই ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ করেছে। আর তাদের ফেরত নেয়া হবে তাঁরই কাছে। |
3-84 : হে নবী বলো: ‘‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, আমাদের প্রতি যা (যে কিতাব) নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরদের কাছে তার প্রতি, আর যা দেয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তার প্রতিও। আমরা তাদের কারো মধ্যে কোনো প্রকার পার্থক্য করিনা। আমরা আল্লাহর প্রতি মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)।’’ |
3-85 : যে কেউ ইসলাম ছাড়া কোনো দীন (ধর্ম, মতাদর্শ) গ্রহণ করতে চাইবে, তার থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবেনা। আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন। |
3-86 : আল্লাহ কেমন করে এমন লোকদের হিদায়াত করবেন, যারা ঈমান আনার পর, আল্লাহর রসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শনাদি আসার পরও কুফুরিতে নিমজ্জিত থাকে? আল্লাহ যালিম লোকদের হিদায়াত করেন না। |
3-87 : আসলে এরা হলো সেইসব লোক যাদের উপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং সমস্ত মানুষের লা’নত বর্ষিত হচ্ছে, এটাই তাদের কর্মের পরিণাম ফল। |
3-88 : চিরকাল থাকবে তারা এরি মধ্যে, তাদের উপর থেকে আযাব হালকা করা হবেনা এবং তাদেরকে কোনো বিরতিও দেয়া হবেনা। |
3-89 : তবে, এরপরও যারা তাওবা করবে এবং নিজেদের ইসলাহ (সংশোধন) করে নেবে, তারা জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল পরম দয়াবান। |
3-90 : কিন্তু, যারা ঈমান আনার পর কুফুরিতে লিপ্ত হয়, তারপর তাদের কুফুরি বৃদ্ধি পেতে থাকে, তাদের তওবা কখনো কবুল করা হবেনা। তারা চরম বিপথগামী। |
3-91 : যারা কুফুরি করে এবং কাফির অবস্থায়ই তাদের মৃত্যু হয়, কিছুতেই তাদের কারো (তওবা) কবুল করা হবেনা, এর বিনিময়ে পূর্ণ পৃথিবী সমান সোনা মুক্তিপণ হিসেবে দিলেও নয়। এদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব এবং তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবেনা। |
3-92 : তোমাদের ভালোবাসার সম্পদ থেকে ব্যয় (দান) না করলে তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবেনা। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করো আল্লাহ সে বিষয়ে বিশেষভাবে অবহিত। |
3-93 : তাওরাত নাযিল হওয়ার আগে বনি ইসরাঈলের জন্যে প্রতিটি খাবারই হালাল ছিলো, তবে ইসরাঈল (ইয়াকুব) নিজের জন্যে যা হারাম করে নিয়েছিল সেটা ভিন্ন বিষয়। (হে নবী!) বলো: ‘তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে তাওরাত নিয়ে এসো105 এবং তা তিলাওয়াত করে দেখো।’ |
3-94 : এর পরও যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করবে, তারা যালিম। |
3-95 : হে নবী! বলো: আল্লাহ সত্য বলেছেন, সুতরাং তোমরা নিষ্ঠাবান ইবরাহিমের মিল্লাতের অনুসরণ করো। সে মুশরিক ছিলনা। |
3-96 : জেনে রাখো, মানবজাতির জন্যে প্রথম যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি বাক্কায় (মক্কায়)। সেটি একটি মুবারক (কল্যাণময়) ঘর এবং বিশ্ববাসীর জন্যে দিশারি। |
3-97 : তাতে রয়েছে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন। তম্মধ্যে একটি হলো ‘মাকামে ইবরাহিম।’ যে কেউ সে ঘরে দাখিল হবে সে নিরাপদ। যে কোনো ব্যক্তির (পথ পাড়ি দিয়ে) সেখানে পৌঁছার সামর্থ আছে, সে ঘরে আল্লাহর জন্যে হজ্জ করা তার কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করবে, সে জেনে রাখুক, আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে মুখাপেক্ষাহীন। |
3-98 : (হে নবী!) বলো: ‘হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন কুফুরি করছো আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি? অথচ আল্লাহ তোমাদের কর্মকান্ডের সাক্ষী।’ |
3-99 : (হে নবী!) বলো: ‘হে আহলে কিতাব! তোমরা বক্রতা সন্ধান করে কেন ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিচ্ছো, যে ঈমান এনেছে? অথচ তোমরা (তার সত্যতার) সাক্ষী। তোমাদের কর্মকান্ড থেকে আল্লাহ গাফিল নন। |
3-100 : হে ঈমানদার লোকেরা! যাদের ইতোপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল তোমরা যদি তাদের একটি দলেরও আনুগত্য করো, তারা তোমাদের ঈমানের পথ থেকে বিচ্যুত করে কাফির বানিয়ে ছাড়বে। |
3-101 : কী করে তোমরা কুফুরিতে নিমজ্জিত হতে পারো, যখন তোমাদের প্রতি আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করা হচ্ছে এবং তোমাদের মাঝে বর্তমান রয়েছে আল্লাহর রসূল? যে শক্ত করে ধরবে আল্লাহকে, তাকে অবশ্যি পরিচালিত করা হবে সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর। |
3-102 : হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছো! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তাঁকে ভয় করার হক আদায় করে এবং মুসলিম (আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী) না হয়ে মরোনা। |
3-103 : তোমরা সবাই মিলে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো আল্লাহর রজ্জুকে (কুরআনকে) এবং বিচ্ছিন্ন - ভাগ ভাগ হয়ে থেকোনা। স্মরণ করো তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের কথা! তোমরা ছিলে পরস্পরের দুশমন, আর তিনিই তোমাদের অন্তরে তোমাদের পরস্পরের জন্যে সম্প্রীতি সঞ্চার করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা তাঁরই অনুগ্রহে পরস্পরের ভাই হয়ে গিয়েছো। (আরো স্মরণ করো,) তোমরা ছিলে অগ্নিকুন্ডের কিনারে, তারপর সেখান থেকেও তিনিই তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে বয়ান করেন তাঁর আয়াত, যাতে করে তোমরা পরিচালিত হও হিদায়াতের পথে। |
3-104 : তোমাদের মধ্যে অবশ্যি এমন একদল লোক থাকা উচিত, যারা (মানুষকে) আহবান করবে কল্যাণের দিকে, নির্দেশ দেবে ভালো কাজের এবং নিষেধ করবে মন্দ কাজ থেকে। আর তারাই হবে সফলকাম। |
3-105 : তোমরা ওদের মতো হয়োনা, যাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল এবং লিপ্ত হয়েছিল ইখতিলাফে। এরা হলো সেইসব লোক যাদের জন্যে রয়েছে বিরাট আযাব। |
3-106 : সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল আর কিছু চেহারা হবে কালো। যাদের চেহারা হবে কালো, তাদের বলা হবে: ‘তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফুরিতে লিপ্ত হয়েছিলে? সুতরাং তোমাদের কুফুরির কারণে স্বাদ গ্রহণ করো আযাবের।’ |
3-107 : পক্ষান্তরে যাদের চেহারা হবে উজ্জ্বল, তারা থাকবে আল্লাহর রহমতের (জান্নাতের) মধ্যে। সেখানে থাকবে তারা চির |
3-108 : এগুলো আল্লাহর আয়াত, আমরা তোমার প্রতি তিলাওয়াত করছি, যা মহাসত্য। আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি যুলুম করতে চান না। |
3-109 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, আর আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবে সব বিষয়। |
3-110 : তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির (কল্যাণের) উদ্দেশ্যে। (তোমাদের দায়িত্ব হলো:) তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রাখবে। আহলে কিতাব যদি ঈমান আনে তবে সেটা হবে তাদের জন্যে কল্যাণকর। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুমিন আছে বটে, তবে তাদের অধিকাংশই ফাসিক (সত্য বিচ্যুত, সীমালংঘনকারী)। |
3-111 : তারা কখনো তোমাদের ক্ষতি করতে পারবেনা, তবে (সাময়িক) কিছু কষ্ট দিতে পারবে মাত্র। তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে পিছে ফিরে পালাবে। তারপর তারা আর সাহায্য লাভ করবেনা। |
3-112 : আল্লাহর প্রতিশ্রুতির বাইরে এবং মানুষের প্রতিশ্রুতির বাইরে যেখানেই তাদের পাওয়া গেছে, তারা লাঞ্ছিত হয়েছে। তারা আল্লাহর গজব কামাই করেছে এবং তাদের গ্রাস করেছে হীনতা ও দীনতা। এর কারণ তারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি কুফুরি করে আসছিল এবং হত্যা করে আসছিল আল্লাহর নবীদের না হকভাবে। তাছাড়া তারা অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করছিল এবং সীমালংঘন করে আসছিল। |
3-113 : তাদের সবার অবস্থা এক রকম নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে একদল লোক (সত্যের উপর) কায়েম আছে, যারা রাতে আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে এবং সাজদারত থাকে। |
3-114 : তারা ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং তারা ভালো কাজের আদেশ করে, মন্দ কাজ থেকে বারণ করে এবং মানব কল্যাণে তৎপর থাকে। এরা সালেহ্ লোকদের অন্তরভুক্ত। |
3-115 : তারা ভালো কাজ যা কিছুই করে তার প্রতিদান থেকে তাদের কখনো বঞ্চিত করা হবেনা। আল্লাহ মুত্তাকিদের ব্যাপারে ভালোভাবে জানেন। |
3-116 : যারা কুফুরির পথ অবলম্বন করেছে তাদের মাল - সম্পদ এবং আওলাদ ফরযন্দ আল্লাহর কাছে (তাদের) কোনোই কাজে আসবেনা। তারা হবে আগুনের অধিবাসী, সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল। |
3-117 : তারা দুনিয়ার জীবনে যা ব্যয় করে তার উপমা হলো চরম ঠান্ডা বায়ু। তা ঐ লোকদের ফসলের উপর দিয়ে বয়ে গেলো এবং তা ধ্বংস করে রেখে গেলো যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তাদের প্রতি আল্লাহ যুলুম করেননি, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে। |
3-118 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা নিজেদের লোক ছাড়া অন্য কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা তোমাদের ক্ষতি করতে ত্রুটি করবেনা। তারা তাই কামনা করে যা তোমাদের কষ্ট দেয়। তাদের মুখ থেকে বিদ্বেষ প্রকাশ হয়েছে, আর তারা মনের মধ্যে যা লুকিয়ে রেখেছে তা এর চাইতেও গুরুতর। আমরা তোমাদের জন্যে আয়াত সমূহ বর্ণনা করলাম যাতে করে তোমরা বুঝতে পারো। |
3-119 : হ্যাঁ, তোমরা তাদের ভালোবাসো বটে, কিন্তু তারা তোমাদের ভালোবাসেনা। তাছাড়া তোমরা তো সবগুলো (আসমানি) কিতাবের প্রতিই ঈমান রাখো। তারা যখন তোমাদের সাথে মোলাকাত করে তখন বলে: আমরা তো ঈমান এনেছি, কিন্তু যখন তারা (নিজেরা) একান্তে মিলিত হয়, তখন তোমাদের বিরুদ্ধে আক্রোশে নিজেদের আংগুল কামড়ায়। তাদের বলো: ‘তোমাদের ক্রোধের আগুনে তোমরা জ্বলে পুড়ে মরো।’ অবশ্যি আল্লাহ (মানুষের) মনের খবর অবহিত। |
3-120 : তোমাদের ভালো কিছু হলে তা তাদের মনে কষ্ট দেয়, আর তোমাদের মন্দ কিছু হলে তা তাদের আনন্দিত করে। হ্যাঁ, তোমরা যদি সবর অবলম্বন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনোই ক্ষতি করতে পারবেনা। আল্লাহ তাদের কর্মকান্ড পরিবেষ্টন করে আছেন। |
3-121 : স্মরণ করো , তুমি ভোর বেলা তোমার পরিবার পরিজনের কাছ থেকে বের হয়ে যুদ্ধের জন্যে ঘাটিতে মুমিনদের বিন্যাস করছিলে। আল্লাহ সব শুনেন, সব জানেন। |
3-122 : তখন তোমাদের মধ্যকার দুটি উপদল সাহস হারিয়ে ফেলেছিল, অথচ তাদের অলি (অভিভাবক) ছিলেন আল্লাহ, আর মুমিনরা তো তাওয়াক্কুল করে আল্লাহর উপরই। |
3-123 : এই তো বদর (প্রান্তরেই তো) আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছিলেন, যখন তোমরা ছিলে দুর্বল। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা শোকর আদায় করতে পারো। |
3-124 : স্মরণ করো, তখন তুমি মুমিনদের বলছিলে: এটা কি তোমাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের প্রভু তিন হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন? |
3-125 : হ্যাঁ, তোমরা যদি সবর করো (অটল থাকো) এবং সতর্ক থাকো, তবে তারা আকস্মিক তোমাদের উপর হামলা করলে আল্লাহ পাঁচ হাজার চিহ্নিত ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন। |
3-126 : আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেছেন কেবল তোমাদের জন্যে সুসংবাদ হিসেবে এবং তোমাদের মনের প্রশান্তির জন্যে। সাহায্য তো কেবল মহাপরাক্রমশালী ও মহাবিজ্ঞানী আল্লাহর কাছ থেকেই আসে, |
3-127 : কাফিরদের এক অংশকে নিশ্চিহ্ন কিংবা লাঞ্ছিত করার জন্যে, যাতে করে তারা নিরাশ হয়ে ফিরে যায়। |
3-128 : এ ব্যাপারে তোমার কিছুমাত্র কর্তৃত্ব নেই আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন কিংবা শাস্তি প্রদান করুন, কারণ তারা যালিম। |
3-129 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন এবং যাকে চান শাস্তি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়াময়। |
3-130 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা সুদ খেয়োনা ক্রমবর্ধমান হারে। আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। |
3-131 : তোমরা ভয় করো সেই আগুনকে যা তৈরি করে রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্যে। |
3-132 : তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং এই রসূলের, অবশ্যি তোমাদের রহম (অনুকম্পা) করা হবে। |
3-133 : তোমরা দৌড়ে এসো তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা মহাকাশ এবং পৃথিবীর মতো। তা প্রস্ত্তত রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্যে, |
3-134 : যারা ব্যয় (দান) করে সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায়, যারা রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল - কোমল। আর আল্লাহ তো কল্যাণকামীদেরই ভালোবাসেন, |
3-135 : এবং তারা যখনই কোনো ফাহেশা কাজ করে ফেলে, কিংবা নিজেদের প্রতি যুলুম করে বসে, সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গুনাহের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর আল্লাহ ছাড়া কে আছে গুনাহ্ মাফ করার? এবং তারা যা করে ফেলেছে জেনে শুনে পুনরায় আর তাতে লিপ্ত হয়না। |
3-136 : এরা সেইসব লোক, যাদের পুরস্কার তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা, আর সেইসব জান্নাত যেগুলোর নিচে দিয়ে জারি রয়েছে নদ নদী নহর। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। পুণ্য আমলকারীদের পুরস্কার কতোইনা উত্তম! |
3-137 : তোমাদের পূর্বে বহু সুন্নত (নিয়ম পন্থা) বিগত হয়েছে। সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমণ করে দেখো (আল্লাহর নিয়ম বিধানকে) অস্বীকারকারীদের পরিণতি কী হয়েছে? |
3-138 : এই (কুরআন) মানবজাতির জন্যে একটি সুস্পষ্ট বার্তা এবং সতর্ক লোকদের জন্যে জীবন পদ্ধতি ও উপদেশ। |
3-139 : তোমরা দুর্বল হয়োনা এবং দুঃখ করোনা, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও। |
3-140 : তোমরা যদি আঘাত পেয়ে থাকো, তবে অনুরূপ আঘাত তো তোমাদের (প্রতিপক্ষ) লোকেরাও পেয়েছে। মানুষের মাঝে সেই (ভালো মন্দ) দিনগুলোর আমরা আবর্তন ঘটাই, যাতে আল্লাহ সাচ্চা ঈমানদারদের জানতে পারেন এবং তোমাদের মধ্যে থেকে কিছু লোককে শহীদ (সাক্ষী) হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। আল্লাহ যালিমদের পছন্দ করেন না। |
3-141 : আর এ কারণেও যে, আল্লাহ মুমিনদের পরিশুদ্ধ করতে চান এবং কাফিরদের চান নিশ্চিহ্ন করতে। |
3-142 : তোমরা কি মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা জান্নাতে দাখিল হয়ে যাবে, অথচ আল্লাহ এখনো বাস্তবে দেখে নেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে আর কারা অটল অবিচল থেকেছে। |
3-143 : মউতের সাথে সাক্ষাত হবার আগেই তোমরা তা তামান্না (কামনা) করছিলে। এখন তো বাস্তবেই তা দেখে নিলে। |
3-144 : মুহাম্মদ একজন রসূল ছাড়া আর কিছুই নয়, তার আগেও অনেক রসূল অতীত হয়েছে। সুতরাং সে যদি মরে যায়, কিংবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা (ইসলাম ত্যাগ করে) পেছনে ফিরে যাবে? যে কেউ পেছনে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোনোই ক্ষতি করবেনা। আল্লাহ অচিরেই শোকরগুজার লোকদের পুরস্কার প্রদান করবেন। |
3-145 : আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিই মরতে পারেনা। কারণ মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। যে দুনিয়ার সওয়াব (পুরস্কার) চায়, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিই, আর যে আখিরাতের সওয়াব চায় আমরা তাকে সেখান থেকে দেবো আর শোকরগুজারদের আমরা অচিরেই পুরস্কার প্রদান করবো। |
3-146 : বহু নবী কিতাল (যুদ্ধ) করেছে, তাদের সাথে ছিলো অনেক আল্লাহওয়ালা লোক। আল্লাহর পথে তাদের যেসব বিপদ মসিবত ঘটেছিল তাতে তাদের মন ভেঙ্গে পড়েনি তারা দুর্বলতাও দেখায়নি এবং নতিও স্বীকার করেনি। আর আল্লাহ (ঈমানের উপর) অটল অবিচল থাকা লোকদেরই ভালোবাসেন। |
3-147 : তাদের একটিই কথা ছিলো: ‘আমাদের প্রভু! আমাদের গুনাহ্খাতা মাফ করে দাও, আমাদের কার্যক্রমের সীমালংঘন তুমি ক্ষমা করে দাও, আমাদের কদমকে মজবুত রাখো এবং কাফির কওমের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।’ |
3-148 : ফলে আল্লাহ তাদের দান করেন দুনিয়ার সওয়াব (পুরস্কার) এবং আখিরাতের উত্তম সওয়াব। আর আল্লাহ তো মুহ্সিন (কল্যাণকামী) লোকদেরই ভালোবাসেন। |
3-149 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা কাফিরদের আনুগত্য করলে তারা তোমাদের পেছনে (কুফুরিতে) ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। |
3-150 : বরং, আল্লাহ্ই তোমাদের একমাত্র মাওলা (অভিভাবক) এবং তিনিই সর্বোত্তম সাহায্যকারী। |
3-151 : আমরা অচিরেই কাফিরদের মনে ভয় ও আতংক সৃষ্টি করে দেবো, কারণ তারা আল্লাহর সাথে শিরক করেছে, যার সপক্ষে আল্লাহ কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি। আগুনই হবে তাদের আবাস। যালিমদের আবাসস্থল কতো যে নিকৃষ্ট! |
3-152 : আল্লাহ তাঁর ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছিলেন যখন তোমরা তাঁর অনুমতিক্রমে ওদের নিপাত করছিলে - যে পর্যন্ত না তোমরা সাহস হারিয়েছিলে এবং নির্দেশ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিলে এবং যা তোমরা চাইছিলে তা তোমাদের দেখানোর পর তোমরা অবাধ্য হয়েছিলে। তোমাদের কিছুলোক দুনিয়া চাইছিল আর কিছু লোক চাইছিল আখিরাত। তারপর আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তোমাদের ফিরিয়ে দিলেন তাদের থেকে। অবশ্য আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড়ই অনুগ্রহশীল। |
3-153 : স্মরণ করো, তোমরা দৌড়ে উপরে উঠছিলে এবং পেছনে ফিরে কারো দিকে লক্ষ্য করছিলে না, অথচ আল্লাহর রসূল তোমাদের পেছন থেকে ডাকছিল। ফলে তিনি তোমাদের বিপদের উপর বিপদ চাপিয়ে দিলেন, যাতে করে তোমরা যা হারিয়েছো কিংবা যে বিপদ তোমাদের উপর এসেছে তার জন্যে দুঃখিত না হও। তোমাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে খবর রাখেন। |
3-154 : তারপর দুঃখ দুশ্চিন্তার পর তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করলেন প্রশান্তি তন্দ্রা আকারে, যা তোমাদের একদল লোককে আচ্ছন্ন করে নিয়েছিল। কিন্তু আরেকদল জাহেলি যুগের অজ্ঞদের মতো আল্লাহ সম্পর্কে অবাস্তব ধারণা করে নিজেরাই নিজেদের এই বলে উদ্বিগ্ন করছিল: ‘আমাদের কি (ক্ষমতায়) কোনো অধিকার আছে?’ (হে নবী!) তাদের বলো: ‘হুকুম দানের ক্ষমতা পুরোটাই আল্লাহর।’ তারা এমন বিষয় তাদের অন্তরে গোপন রাখে যা তোমার কাছে প্রকাশ করেনা। তারা বলে: ‘নির্দেশ প্রদানে যদি আমাদের অধিকার থাকতো, তবে আমাদের (লোকদের) এখানে নিহত হতে হতোনা।’ হে নবী! তাদের বলো: ‘তোমরা যদি তোমাদের ঘরেও অবস্থান করতে, তারপরও নিহত হওয়া যাদের জন্যে নির্ধারিত ছিলো তারা অবশ্যি নিজেদের মরণের জায়গায় বেরিয়ে আসতো।’ এর কারণ হলো, আল্লাহ তোমাদের মনে যা আছে তা পরীক্ষা করতে চান এবং তোমাদের সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করতে চান। আল্লাহ অন্তরের খবর বিশেষভাবে জানেন। |
3-155 : তোমাদের মধ্য থেকে যারা দুই দলের পরস্পর সম্মুখীন হবার দিন পলায়ন করে চলে গিয়েছিল, নিশ্চয়ই শয়তান তাদের কোনো কৃতকর্মের জন্যে তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছিল। অবশ্য আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও সহনশীল। |
3-156 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা ঐসব লোকদের মতো হয়োনা যারা কুফুরি করে এবং তাদের ভাইদের বলে যখন তারা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে কিংবা যুদ্ধরত থাকে: ‘তারা যদি আমাদের কাছে থাকতো, তাহলে মরতোওনা এবং নিহতও হতোনা।’ আল্লাহ এসব কথাকে তাদের মনস্তাপের কারণ বানিয়ে দেন। আল্লাহ্ই তো জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দান করেন। তোমরা যা করো সে বিষয়ে আল্লাহ দৃষ্টি রাখছেন। |
3-157 : তোমরা যদি আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ করো, তবে জেনে রেখো, ওরা যা জমা করে তা থেকে আল্লাহর ক্ষমা এবং রহমত অনেক ভালো। |
3-158 : তোমরা যদি আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করো কিংবা নিহত হও, তবে জেনে রাখো, আল্লাহর কাছেই তোমাদের হাশর করা হবে। |
3-159 : (হে মুহাম্মদ!) এটা আল্লাহরই রহমত যে, তুমি তাদের প্রতি কোমল! তুমি যদি তাদের প্রতি কঠোর - হৃদয় হতে, তবে তারা তোমার চারপাশ থেকে সরে পড়তো। সুতরাং তাদের ক্ষমা করে দাও এবং তাদের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করো, আর কার্য পরিচালনায় তাদের সাথে পরামর্শ করো। অতপর যখন সংকল্প (সিদ্ধান্ত) গ্রহণ করবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের পছন্দ করেন। |
3-160 : আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করলে তোমাদের উপর জয়ী হবার কেউই থাকবেনা, আর তিনি যদি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে তিনি ছাড়া কে আছে তোমাদের সাহায্য করবে? মুমিনরা কেবল আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করুক। |
3-161 : কোনো নবীর পক্ষে অন্যায়ভাবে কোনো কিছু গোপন করা অসম্ভব। যে কেউ অন্যায়ভাবে কিছু গোপন করবে সে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে উপস্থিত হবে। অতপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা উপার্জন করেছে তার প্রতিদান পুরোপুরি দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম করা হবেনা। |
3-162 : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে সে কি ঐ ব্যক্তির মতো যে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির পাত্র হয়েছে এবং যার আবাস হবে জাহান্নাম? - যা খুবই নিকৃষ্ট ফিরে আসার জায়গা। |
3-163 : আল্লাহর কাছে তাদের স্তর বিভিন্ন। তারা যা করে তা আল্লাহর দৃষ্টিতেই রয়েছে। |
3-164 : আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন রসূল পাঠিয়েছেন, সে তাদের প্রতি তিলাওয়াত করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদের তাযকিয়া (পবিত্র ও পরিশুদ্ধ) করে, তাদের শিক্ষা দান করে আল কিতাব (আল কুরআন) এবং হিকমাহ, যদিও ইতোপূর্বে তারা নিমজ্জিত ছিলো সুস্পষ্ট গোমরাহিতে। |
3-165 : তোমাদের উপর যখন বিপদ এসেছিল তখন তোমরা বলেছিলে: ‘কোত্থেকে এলো এ বিপদ?’ অথচ তোমরা তো (উহুদের দিন) দ্বিগুণ বিপদ ঘটিয়েছিলে। হে নবী তাদের বলো: এটা তোমাদের নিজেদের থেকেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। |
3-166 : দুই দলের মোকাবেলার দিন তোমাদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল, তা আল্লাহর অনুমতিক্রমেই ঘটেছিল যাতে করে তিনি মুমিনদের অবস্থা জেনে নেন। |
3-167 : এটা এ জন্যেও যে, তিনি যেনো মুনাফিকদের (বাস্তবে) জেনে নেন। তাদের বলা হয়েছিল, এসো আল্লাহর পথে লড়াই করো অথবা প্রতিরোধ করো। তারা বললো: ‘যুদ্ধ হবে যদি জানতাম তবে অবশ্যি তোমাদের অনুসরণ করতাম।’ সেদিন তারা ছিলো ঈমানের চাইতে কুফুরির অধিকতর নিকটে। তারা মুখে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। আল্লাহ ভালো করেই জানেন যা তারা গোপন করে। |
3-168 : যারা (যুদ্ধে না গিয়ে) তাদের ভাইদের সম্পর্কে বলেছিল, তারা যদি আমাদের কথা শুনতো তবে নিহত হতোনা। তাদের বলো: ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে নিজেদেরকে মরণ থেকে রক্ষা করো।’ |
3-169 : যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত বলোনা; বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রভুর নিকট থেকে জীবিকাপ্রাপ্ত। |
3-170 : আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন তাতে তারা আনন্দিত এবং তাদের পেছনে যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের সুসংবাদ প্রদান করছে যে: ‘তাদের কোনো ভয় নেই এবং কোনো দুঃখও তাদের থাকবেনা।’ |
3-171 : আল্লাহর নিয়ামত ও ফজল করমের (অনুগ্রহের) জন্যে তারা খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করে এবং এটা জেনে যে, আল্লাহ মুমিনদের কর্মফল বিনষ্ট করেননা। |
3-172 : যারা আহত হবার পরও আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে, যারা ইহ্সান এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে বিরাট পুরস্কার। |
3-173 : লোকেরা তাদের বলেছিল: ‘তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট বাহিনী সমবেত হয়েছে তাদের ভয় করো।’ - একথা শুনে তাদের ঈমান বেড়ে গিয়েছিল এবং তারা বলেছিল: ‘হাসবুনাল্লাহু অনি’মাল অকিল - আমাদের জন্যে আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনিই সর্বোত্তম উকিল - (কর্মসম্পাদনকারী)।’ |
3-174 : ফলে তারা আল্লাহর নিয়ামত ও ফজল - করম সহ (যুদ্ধ থেকে) ফিরে আসে। তাদের স্পর্শ করেনি কোনো মন্দ। তারা অনুসরণ করেছিল আল্লাহর রেজামন্দির। আর আল্লাহ বড় ফজল - করম ওয়ালা। |
3-175 : এটা ছিলো শয়তানেরই কাজ, সে ভয় দেখায় তার বন্ধুদের। কখনো তাদের ভয় করোনা। মুমিন হয়ে থাকলে তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করো। |
3-176 : তোমরা দুঃখিত হয়োনা ওদের আচরণে, যারা দ্রুত ধাবিত হয় কুফুরির দিকে। তারা আল্লাহর কোনোই ক্ষতি করতে পারবেনা। আখিরাতে আল্লাহ ওদের কোনো অংশ দেয়ার এরাদা করেন না। সেখানে তাদের জন্যে থাকবে বিশাল আযাব। |
3-177 : যারা ঈমানের বিনিময়ে কুফুরি ক্রয় করেছে, তারা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। |
3-178 : কাফিররা যেনো এ ধারণা না করে যে, আমরা অবকাশ দিচ্ছি তাদের কল্যাণের জন্যে, বরং আমরা অবকাশ দিচ্ছি এজন্যে, যেনো তারা তাদের পাপ বাড়িয়ে নেয়। আর তাদের জন্যে রয়েছে অপমানকর আযাব। |
3-179 : তোমরা এখন যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদের এ অবস্থায় রেখে দেবেন না, তিনি খবিছ লোকদেরকে ভালো লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন। তোমাদের কাছে গায়েব প্রকাশ করা আল্লাহর কাজ নয়, তবে (এ জন্যে) আল্লাহ তাঁর রসূলদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর রসূলদের প্রতি। তোমরা যদি ঈমান আনো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে তোমাদের জন্যে রয়েছে বিশাল পুরস্কার। |
3-180 : যারা বখিলি করে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ থেকে তাদের যা দিয়েছেন তার ব্যাপারে, তারা যেনো মনে না করে যে এটা তাদের জন্যে ভালো। বরং এতে রয়েছে তাদের জন্যে অনিষ্ট। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাই হবে তাদের গলার বেড়ি। মহাকাশ এবং এই পৃথিবীর স্বত্ত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহর। তোমাদের আমল সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে খবর রাখেন। |
3-181 : আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন যারা বলে: ‘আল্লাহ হলেন ফকির আর আমরা ধনী।’ তারা যা বলে এবং তাদের না হকভাবে নবীদের হত্যার বিষয়টি আমরা লিখে রাখবো। (কিয়ামতের দিন) আমরা তাদের বলবো: ‘স্বাদ গ্রহণ করো দগ্ধ হবার আযাবের।’ |
3-182 : এটা তোমাদেরই কৃতকর্মের প্রতিফল। এর কারণ এটাও যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি যালিম (অবিচারক) নন। |
3-183 : যারা বলে: ‘আল্লাহ আমাদের আদেশ দিয়েছেন, আমরা যেনো ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো রসূলের প্রতি ঈমান না আনি, যতোক্ষণ না সে আমাদের কাছে এমন এক কুরবানি হাজির করবে যাকে আগুন গ্রাস করে নেবে।’ (হে মুহাম্মদ!) তাদের বলো: আমার আগে তো তোমাদের কাছে অনেক রসূল এসেছিলেন সুস্পষ্ট প্রমাণ ও নিদর্শন সমূহ নিয়ে এবং তোমরা যা বলছো তা নিয়ে, তারপরও কেন তোমরা তাদের হত্যা করেছিলে যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো? |
3-184 : (হে মুহাম্মদ!) তারা যদি তোমাকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে অস্বীকার করেই, তবে তোমার পূর্বেও তারা বহু রসূলকে অস্বীকার করেছিল যারা সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ, যবুর (ছোট কিতাব) এবং আলো বিতরণকারী কিতাব নিয়ে (তাদের কাছে) এসেছিল। |
3-185 : প্রত্যেক ব্যক্তিই মউতের স্বাদ গ্রহণ করবে। কিয়ামতকালে তোমাদের কাজের প্রতিদান তোমাদের পুরোপুরি দেয়া হবে। তখন যাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হবে এবং দাখিল করা হবে জান্নাতে, সে - ই হবে সফলকাম। দুনিয়ার হায়াতটা প্রতারণার বস্ত্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। |
3-186 : তোমাদের মাল - সম্পদ এবং তোমাদের জীবন সম্পর্কে অবশ্য অবশ্যি তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। তাছাড়া তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের থেকে এবং মুশরিকদের থেকে তোমরা অবশ্য অবশ্যি অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। তবে তোমরা যদি (তোমাদের আদর্শের উপর) অটল থাকো এবং সতর্কতা অবলম্বন করো তবে এটাই হবে মজবুত সংকল্পের কাজ। |
3-187 : স্মরণ করো, যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল আল্লাহ তাদের থেকে এই অংগীকার নিয়েছিলেন: ‘তোমরা তা (তোমাদেরকে প্রদত্ত কিতাব) মানুষের জন্যে প্রকাশ করবে এবং তা গোপন করবেনা।’ কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তা অগ্রাহ্য করে এবং এর বিনিময়ে তারা ক্রয় করে নগণ্য স্বার্থ। তারা যা ক্রয় করে তা কতো যে নিকৃষ্ট! |
3-188 : তারা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে, আর যা করেনি তার জন্যে প্রশংসার পাত্র হতে চায়। তারা আযাব থেকে রক্ষা পাবে - এমন ধারণা করোনা। তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। |
3-189 : মহাকাশ এবং এই পৃথিবীর কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর, আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে শক্তিমান। |
3-190 : মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনের মধ্যে রয়েছে জ্ঞান - বুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের জন্যে অনেক নিদর্শন, |
3-191 : যারা আল্লাহকে যিকির করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে এবং যারা চিন্তা ফিকির করে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে আর বলে: ‘‘আমাদের প্রভু! তুমি এসব অকারণে সৃষ্টি করোনি, তুমি সব কিছুর ত্রুটিমুক্ত নিখুঁত পরিচালক। অতএব তুমি আমাদের রক্ষা করো আগুনের আযাব থেকে। |
3-192 : আমাদের প্রভু! নিশ্চয়ই তুমি যাকে দাখিল করবে আগুনে, তাকে অবশ্যি লাঞ্ছিত করে ছাড়বে, আর যালিমদের জন্যে থাকবেনা কোনোই সাহায্যকারী। |
3-193 : আমাদের প্রভু! আমরা শুনেছি একজন আহবায়ককে আহবান করছেন ঈমানের দিকে (এই বলে:) ‘তোমরা ঈমান আনো তোমাদের প্রভুর প্রতি’। (তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে) আমরা ঈমান এনেছি। আমাদের প্রভু! অতএব তুমি ক্ষমা করে দাও আমাদের সমস্ত পাপ, আমাদের থেকে ঢেকে মুছে দাও আমাদের সমস্ত মন্দকর্ম ও ত্রুটি বিচ্যুতি, আর আমাদের ওফাত দান করো পুণ্যবানদের সাথে। |
3-194 : আমাদের প্রভু! তোমার রসূলদের মাধ্যমে আমাদের যা দেবে বলে ওয়াদা দিয়েছো তা আমাদের দাও আর কিয়ামতের দিন আমাদের অপমানিত করোনা। নিশ্চয়ই তুমি খেলাফ করোনা ওয়াদা।’’ |
3-195 : ফলে তাদের প্রভু তাদের দোয়ার জওয়াব দিয়েছেন এই বলে: ‘আমি তোমাদের কোনো পুরুষ বা নারী আমলকারীর আমল বিনষ্ট করিনা। তোমরা একই দলের সদস্য। তাই যারাই আমার জন্যে হিজরত করেছে এবং যাদেরকে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, আমার পথে কষ্ট দেয়া হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে এবং যারা যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি অবশ্য অবশ্যি তাদের থেকে মুছে দেবো তাদের পাপ ও দোষত্রুটি এবং অবশ্য অবশ্যি তাদের দাখিল করবো সেইসব জান্নাতে, যেগুলোর নিচে দিয়ে জারি থাকবে নদ - নদী - নহর। এগুলো তারা পাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার হিসেবে আর উত্তম পুরস্কার তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে।’ |
3-196 : যারা কুফুরি করেছে, বিশ্বের বুকে তাদের অবাধ বিচরণ যেনো তোমাদের প্রতারিত না করে। |
3-197 : এ তো স্বল্পকালীন ভোগমাত্র। তারপরই তাদের আবাস হবে জাহান্নাম, আর তা যে কতো নিকৃষ্ট ঠিকানা! |
3-198 : তবে যারা তাদের প্রভুকে ভয় করবে, তাদের জন্যে থাকবে জান্নাতসমূহ, যেগুলোর নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ নদী নহর। চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। এ হবে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে মেহমানদারি। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে পুণ্যবানদের জন্যে তাই সর্বোত্তম। |
3-199 : আহলে কিতাবদের মধ্যে অবশ্যি এমন লোকও আছে যারা আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হয়ে ঈমান আনে, এবং ঈমান আনে তোমাদের কাছে যা (যে কিতাব) নাযিল হয়েছে তার প্রতি এবং তাদের কাছে যা (যে কিতাব) নাযিল হয়েছে তার প্রতি; আর তারা নগণ্য মূল্যে বিক্রয় করেনা আল্লাহর আয়াত। এরা সেইসব লোক যাদের জন্যে তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে তাদের পুরস্কার। অবশ্যি আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। |
3-200 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা সবর অবলম্বন করো, সবরের প্রতিযোগিতা করো এবং ঐক্যবদ্ধ থাকো, আর ভয় করো আল্লাহকে, অবশ্যি তোমরা সফলকাম হবে। |