মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা ১৬৫, রুকু সংখ্যা: ২০এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
6-1 : সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ এবং এই পৃথিবী, যিনি তৈরি করেছেন অন্ধকাররাশি আর আলো। এরপরও কাফিররা তাদের রবের সাথে (তাঁর সৃষ্টিকে) তুলনা করে। |
6-2 : তিনি সেই মহান সত্তা, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর নির্ধারণ করে দিয়েছেন একটি মেয়াদকাল, আর ঠিক করেছেন একটি নির্দিষ্ট সময় (কিয়ামত) যা কেবল তিনিই জানেন। তারপরও তোমরা সন্দেহ করছো। |
6-3 : মহাকাশে এবং পৃথিবীতে তিনিই আল্লাহ। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সবই জানেন। তোমরা যা কামাই করছো তাও তিনি জানেন। |
6-4 : তাদের প্রভুর আয়াতসমূহের এমন কোনো আয়াত তাদের কাছে আসেনি, যা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। |
6-5 : তাদের কাছে মহাসত্য আসার পর তারা তা মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা যা নিয়ে বিদ্রুপ করেছে, অচিরেই তার আসল সংবাদ তাদের কাছে এসে যাবে। |
6-6 : তারা কি দেখেনা, আমরা তাদের আগে কতো জনপদকে হালাক করে দিয়েছি। জমিনে তাদের এমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, যে রকম প্রতিষ্ঠা তোমাদেরকেও দেইনি। তাদের প্রতি আমরা মুষুলধারে বৃষ্টিপাত করেছিলাম, তাদের জমিনে নদ নদী প্রবাহিত করে দিয়েছিলাম। তারপর তাদের পাপের কারণে আমরা তাদের হালাক করে দিয়েছি এবং তাদের পরে সৃষ্টি করেছি অপর একটি প্রজন্ম। |
6-7 : আমরা যদি তোমার কাছে কাগজে লেখা একটি কিতাব পাঠিয়ে দিতাম, আর তারা যদি তা নিজেদের হাতেও স্পর্শ করতো, তবু কাফিররা বলতো, এ তো এক সুস্পষ্ট ম্যাজিক ছাড়া আর কিছুই নয়।’ |
6-8 : তারা বলে: ‘তার কাছে কোনো ফেরেশতা পাঠানো হলোনা কেন?’ - আমরা যদি ফেরেশতা পাঠাতাম তবে তো চূড়ান্ত ফায়সালাই হয়ে যেতো, তারপর তাদেরকে আর কোনো অবকাশই দেয়া হতোনা। |
6-9 : তাকে যদি আমরা ফেরেশ্তাও বানাতাম, তারপরও তো তাকে একজন মানুষের আকৃতিতেই পাঠাতাম। তখনো তো তাদের সেরকম বিভ্রান্তিতেই ফেলতাম, যেরকম বিভ্রান্তিতে এখন তারা আছে। |
6-10 : তোমার আগেও বহু রসূলকেই বিদ্রুপ করা হয়েছে। তারা যা নিয়ে বিদ্রুপ করছিল, অবশেষে তা - ই বিদ্রুপকারীদের পরিবেষ্টন করে নেয়। |
6-11 : হে নবী! বলো: ‘পৃথিবীতে ভ্রমণ করে দেখো, (রসূলদের প্রত্যাখ্যানকারীদের) কী পরিণতি হয়েছিল?’ |
6-12 : তাদের জিজ্ঞেস করো: ‘মহাকাশ আর এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেগুলো কার?’ বলো: ‘আল্লাহর।’ রহম (দয়া) করা তিনি তাঁর দায়িত্ব হিসেবে লিখে নিয়েছেন। অবশ্য অবশ্যি তিনি তোমাদের জমা করবেন কিয়ামতের দিন, এতে কোনোই সন্দেহ্ নেই। যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তারা আর ঈমান আনবেনা। |
6-13 : রাতে এবং দিনে যা কিছু বিরাজ করে সবই তাঁর। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। |
6-14 : হে নবী! বলো: ‘আমি কি মহাকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকেও অলি হিসেবে গ্রহণ করবো? অথচ তিনিই আহার যোগান, কিন্তু তাকে তো কেউ আহার দেয়না।’ হে নবী! বলো: ‘আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই যেনো প্রথম ব্যক্তি হই।’ আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে: ‘তুমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল হয়োনা।’ |
6-15 : তুমি বলো: ‘আমি যদি আমার প্রভুর নির্দেশ অমান্য করি, তবে আমি ভয় করি এক মহাদিনের আযাবের।’ |
6-16 : যাকে সেদিনের আযাব থেকে রক্ষা করা হবে, তার প্রতি অবশ্যি তিনি রহম করবেন আর এটাই হবে সুস্পষ্ট সাফল্য। |
6-17 : আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো কষ্টে ফেলেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার আর কেউই নেই। আর তিনি যদি তোমাকে কোনো কল্যাণ দান করেন, তবে অবশ্যি তিনি সব বিষয়ে শক্তিমান। |
6-18 : তিনি নিজ বান্দাদের উপর প্রচন্ড ক্ষমতাশালী। তিনি মহাপ্রজ্ঞাবান, সব বিষয়ে খবর রাখেন। |
6-19 : ওদের জিজ্ঞেস করো: ‘সাক্ষ্য প্রদানে সর্বশ্রেষ্ঠ কে’? বলো: ‘আল্লাহ’। তিনিই আমার ও তোমাদের মাঝে সাক্ষী। আর এ কুরআন আমার কাছে অহি করা হয়েছে যেনো আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে তা পৌঁছে তাদেরকে এর মাধ্যমে সতর্ক করি। তোমরা কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহর সাথে আরো ইলাহ্ আছে?’ বলো: ‘আমি এ সাক্ষ্য দেইনা।’ বলো: ‘অবশ্যি তিনি একমাত্র ইলাহ্ ; আর তোমরা (তাঁর সাথে) যে শরিক করছো আমি তা থেকে একেবারেই নিঃসম্পর্ক।’ |
6-20 : আমরা ইতোপূর্বে, যাদের কিতাব দিয়েছি, তারা (ইহুদি খৃষ্টানরা) তাকে (শেষ নবী মুহাম্মদকে) ঠিক সেরকমই চিনে যেমন চিনে তাদের নিজেদের সন্তানদের। যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে তারা ঈমান আনবেনা। |
6-21 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করে, অথবা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে? নিশ্চয়ই যালিমরা সফল হয়না। |
6-22 : যেদিন আমরা তাদের সবাইকে হাশর করবো, তারপর মুশরিকদের বলবো: ‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরিক বলে ধারণা করতে তারা এখন কোথায়? |
6-23 : তখন তাদের এছাড়া বলার মতো আর কোনো অজুহাতই থাকবেনা যে: ‘আমাদের প্রভু আল্লাহর শপথ, আমরা মুশরিক ছিলামনা।’ |
6-24 : দেখো, তারা নিজেদের প্রতি কিভাবে মিথ্যারোপ করছে, আর তারা যে মিথ্যা রচনা করতো, তা (সেসব উপাস্যরা) কিভাবে তাদের থেকে উধাও হয়ে গেছে। |
6-25 : তাদের কিছু লোক তোমার দিকে কান পেতে রাখে আর আমি কিন্তু তাদের অন্তরের উপর আবরণ ফেলে রেখেছি, যেনো তারা তা বুঝতে না পারে, এছাড়া তাদের কানেও পর্দা লাগিয়ে দিয়েছি। সব নিদর্শন দেখলেও তারা ঈমান আনবেনা। তারা যখন তোমার কাছে আসে, তোমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। যারা কুফুরি করেছে তারা বলে: এতো পূর্ববর্তী লোকদের কাহিনী ছাড়া কিছুই নয়। |
6-26 : তারা অন্যদেরকেও তা (কুরআন) শুনতে বাধা দেয় এবং নিজেরাও তা থেকে দূরে থাকে। তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে, অথচ তারা তা বুঝতে পারছেনা। |
6-27 : তুমি যদি দেখতে, যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারে দাঁড় করানো হবে আর তারা বলবে: ‘হায়, যদি আমাদের পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হতো, তাহলে আমরা আর আমাদের প্রভুর আয়াতকে অস্বীকার করতামনা এবং আমরা মুমিনদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেতাম।’ |
6-28 : না, বরং তারা ইতোপূর্বে যা গোপন করতো তা প্রকাশ হয়ে গেছে। তাদেরকে যদি ফেরতও পাঠানো হয়, পুনরায় তারা তাই করবে, যা করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। অবশ্যি তারা মিথ্যাবাদী। |
6-29 : তারা বলে: ‘আমাদের দুনিয়ার হায়াতটাই একমাত্র হায়াত, মরনের পর আর আমাদের উঠানো হবেনা।’ |
6-30 : তুমি যদি দেখতে তাদেরকে যখন তাদের প্রভুর সামনে দাঁড় করানো হবে এবং তিনি যখন তাদের বলবেন: ‘এটা (পুনরুত্থান) কি সত্য নয়?’ তারা বলবে: ‘নিশ্চয়ই আমাদের প্রভুর শপথ!’ তখন তিনি তাদের বলবেন: ‘তোমরা যে কুফুরি করতে তার কারণে এখন স্বাদ গ্রহণ করো আযাবের।’ |
6-31 : অবশ্যি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা, যারা আল্লাহর সাথে মোলাকাত হওয়ার বিষয়কে অস্বীকার করেছে। হঠাত যখন তাদের সামনে কিয়ামত উপস্থিত হয়ে যাবে তখন তারা বলবে: ‘হায় আক্ষেপ, আমরা কেন এ জিনিসকে অবহেলা করেছিলাম।’ তারা তাদের পিঠে করে পাপের বোঝা বহন করবে। তারা যা বহন করবে তা যে কতো নিকৃষ্ট! |
6-32 : এই দুনিয়ার হায়াতটা খেল - তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্যে আখিরাতের ঘরই উত্তম। তারপরও তোমরা কি আকল খাটাবেনা? |
6-33 : আমরা জানি, ওরা যা বলে তা অবশ্যি তোমাকে কষ্ট দেয়। আসলে তারা তো তোমাকে মিথ্যা বলছেনা, বরং এই যালিমরা আল্লাহর আয়াতকেই অস্বীকার করছে। |
6-34 : তোমার আগে অনেক রসূলকেই মিথ্যাবাদী বলে অস্বীকার করা হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে অস্বীকার এবং কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও তারা সবর অবলম্বন করেছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের কাছে আমার সাহায্য এসে পৌঁছে। আল্লাহর আদেশ বদল হবার নয়। (অতীত) রসূলদের সংবাদ তো তোমার কাছে এসেছেই। |
6-35 : (তোমার প্রতি) তাদের উপেক্ষা যদি তোমার কাছে অসহনীয় হয়, তবে যদি তোমার ক্ষমতা থাকে মাটির ভেতরে সুড়ঙ্গ খুঁজে নাও, কিংবা আকাশে উঠার মই খুঁজে নাও এবং তাদের জন্যে কোনো নিদর্শন নিয়ে এসো105। আসলে আল্লাহ চাইলে অবশ্যি তাদের সবাইকে হিদায়াতের উপর একত্র করে দিতেন। সুতরাং তুমি অজ্ঞদের মধ্যে শামিল হয়োনা। |
6-36 : তোমার আহবানে সাড়া দেয় তো তারা যারা তা (মনোযোগ সহকারে) শুনে। আর মৃতদের আল্লাহ পুনরুত্থিত করবেন এবং তাঁর কাছেই তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। |
6-37 : তারা বলে: ‘তার প্রভুর পক্ষ থেকে তার কাছে কোনো নিদর্শন নাযিল করা হলোনা কেন? তুমি বলো: ‘নিদর্শন নাযিল করতে আল্লাহ অবশ্যি সক্ষম, তবে তাদের অধিকাংশ লোকই জানেনা।’ |
6-38 : পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই এবং ডানার সাহায্যে উড়ে এমন কোনো পাখি নেই, যারা তোমাদের মতোই বিভিন্ন সম্প্রদায় ছাড়া কিছু নয়। আমরা আল কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দেইনি। অবশেষে তাদেরকে তাদের প্রভুর কাছে হাশর করা হবে। |
6-39 : যারা আমার আয়াতকে অস্বীকার করে তারা অন্ধকাররাশিতে বধির ও বোবা। আল্লাহ যাকে চান বিপথগামী করেন, আর যাকে চান তিনি সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। |
6-40 : হে নবী! বলো: ‘তোমরা চিন্তা করে দেখো, তোমাদের উপর যদি (হঠাৎ) আল্লাহর আযাব এসে পড়ে, কিংবা এসে পড়ে কিয়ামত, তখন কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ডাকবে? সত্যবাদী হয়ে থাকলে বলো।’ |
6-41 : ‘না, বরং তোমরা তখন কেবল তাঁকেই ডাকবে। তারপর তোমরা যে কষ্টের জন্যে তাঁকে ডাকো তিনি চাইলে তা দূর করে দেন; আর তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর সাথে) শরিক করো তখন তাদের কথা ভুলে থাকো।’ |
6-42 : তোমাদের আগে বহু উম্মতের কাছে আমরা রসূল পাঠিয়েছি, তারপর তাদেরকে আমরা দুর্ভিক্ষ ও দুঃখ কষ্ট দিয়ে সাজা দিয়েছি যাতে করে তারা বিনয়ী হয়। |
6-43 : আমাদের সাজা তাদের উপর এসে পড়ার প্রাক্কালে কেন তারা বিনয়ী হলোনা? বরঞ্চ তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গিয়েছিল আর শয়তান তাদের কর্মকান্ডকে তাদের কাছে মনোহরী করে তুলে ধরেছিল। |
6-44 : তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গিয়েছিল, তখন আমরা তাদের জন্যে সবকিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। তাদের যা দেয়া হয়েছিল সেগুলোতে যখন তারা মত্ত হয়ে পড়েছিল, তখন আমরা আকস্মিক তাদের পাকড়াও করেছি, ফলে তারা হতাশ হয়ে পড়েছিল। |
6-45 : অতপর যালিম কওমের শিকড় কেটে দেয়া হয়েছিল। মূলত, সব প্রশংসা আল্লাহ রাববুল আলামিনের। |
6-46 : হে নবী! বলো: ‘তোমরা ভেবে দেখেছো কি, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি নিয়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরে সীলগালা করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া কোন্ ইলাহ আছে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে?’ দেখো, কিভাবে আমরা নিদর্শনসমূহ বিশদ বর্ণনা করছি। তা সত্ত্বেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। |
6-47 : বলো: ‘তোমরা ভেবে দেখেছো কি, আল্লাহর আযাব যদি হঠাৎ, কিংবা প্রকাশ্যে এসে পড়ে, তখন যালিম কওম ছাড়া আর কেউ হালাক হবে কি? |
6-48 : আমরা রসূলদের পাঠাই তো সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। অতপর যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তাদের কোনো ভয়ও থাকবেনা, দুঃখও থাকবেনা। |
6-49 : আর যারা আমাদের আয়াতকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করবে, তাদের সীমালংঘনের কারণে তারা নিমজ্জিত হবে আযাবে। |
6-50 : বলো: ‘আমি তোমাদের বলছিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডার রয়েছে! গায়েবের এলেমও আমার নেই। তাছাড়া আমি তোমাদের একথাও বলছিনা যে, আমি একজন ফেরেশ্তা। আমি তো কেবল তারই অনুসরণ করি যা অহি করা হয় আমার প্রতি।’ বলো: অন্ধ আর চক্ষুষ্মান কি সমান?’ তোমরা কি চিন্তা করে দেখবেনা? |
6-51 : তুমি তা (কুরআন) দিয়ে সেইসব লোকদের সতর্ক করো যারা তাদের প্রভুর কাছে হাশর হবার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। তিনি ছাড়া তাদের কোনো অলি কিংবা শাফায়াতকারী নেই। হয়তো তারা সতর্ক হবে। |
6-52 : যারা তাদের প্রভুকে ডাকে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, তাদের তুমি তাড়িয়ে দিয়োনা। তাদের কাজের জবাবদিহির দায়িত্ব তোমার নয়, আর তোমার কোনো কাজের জবাবদিহির দায়িত্বও তাদের নয় যে, তুমি তাদের বিতাড়িত করবে। তা করলে তুমি যালিমদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে। |
6-53 : এভাবেই আমরা তাদের একদল লোককে দিয়ে আরেক দলকে পরীক্ষা করেছি যাতে করে তারা বলে: ‘আমাদের মধ্যে কি এদেরকেই আল্লাহ অনুগ্রহ করলেন?’ শোকরগুজার লোক কারা, তা কি আল্লাহ অধিক জানেন না? |
6-54 : আমাদের আয়াতের প্রতি যারা ঈমান আনে তারা যখন তোমার কাছে আসে, তুমি তাদের বলবে: ‘সালামুন আলাইকুম - তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।’ তোমাদের প্রভু দয়া করাকে নিজের কর্তব্য বলে লিখে নিয়েছেন। তোমাদের কেউ যদি অজ্ঞতাবশত বদ আমল করে, তারপর তওবা করে এবং নিজেকে এসলাহ্ (সংশোধন) করে নেয়, তবে আল্লাহ (তার প্রতি) পরম ক্ষমাশীল দয়াময়। |
6-55 : এভাবেই আমরা তফসিল সহকারে বর্ণনা করি আয়াত, যাতে করে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ ও প্রমাণ হয়ে যায় অপরাধীদের পথ। |
6-56 : হে নবী! বলো: ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর যাদের ডাকো, আমাকে নিষেধ করা হয়েছে তাদের ইবাদত করতে।’ বলো ‘আমি ইত্তেবা (অনুসরণ) করিনা তোমাদের খেয়াল খুশির, তা করলে তো আমি গোমরাহ হয়ে পড়বো এবং আমি হিদায়াত প্রাপ্ত লোকদের মধ্যে শামিল থাকবোনা।’ |
6-57 : বলো: ‘অবশ্যি আমি আমার প্রভুর সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, অথচ তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করছো। তোমরা যা নগদ চাইছো তা আমার কাছে নেই। কারোই কোনো কর্তৃত্ব নেই আল্লাহর ছাড়া। তিনি সত্য বর্ণনা করেন এবং তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।’ |
6-58 : তোমরা যে জিনিসটা নগদ চাইছো তা যদি আমার হাতে থাকতো, তাহলে আমার এবং তোমাদের মধ্যকার বিষয়টি ফায়সালাই হয়ে যেতো। আল্লাহ্ই অধিক জানেন যালিমদের। |
6-59 : গায়েব - এর চাবি তো তাঁরই কাছে। তিনি ছাড়া তা আর কেউই জানেনা। তিনি জানেন যা কিছু আছে স্থলে এবং সমুদ্রে। গাছের একটি পাতাও পড়েনা তাঁর অবগতি ছাড়া। একটি বীজও অংকুরিত হয়না অন্ধকার ভূ - গর্ভে, অথবা রসযুক্ত বা শুকনো কোনো বস্ত্ত নেই যা একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নয়। |
6-60 : তিনিই রাতের কালে তোমাদের মৃত্যু দেন এবং তিনি জানেন দিনের বেলায় তোমরা যা করো। তারপর তিনি তোমাদের জাগিয়ে তোলেন যাতে করে নির্ধারিত সময় পূর্ণ হয়। এরপর তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে এবং তিনি তোমাদের অবগত করবেন তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে। |
6-61 : নিজ বান্দাদের উপর তিনি দুর্জয় ক্ষমতাধর। তিনি তোমাদের উপর রক্ষক পাঠান। অবশেষে যখন তোমাদের কারো মৃত্যুর সময় হয়, তখন আমার প্রেরিত (ফেরেশতারা) তার মৃত্যু ঘটায় এবং তারা কোনোই ত্রুটি করেনা। |
6-62 : তারপর তাদের ফেরত পাঠানো হয় তাদের প্রকৃত মাওলা আল্লাহর কাছে। জেনে রাখো, সমস্ত কর্তৃত্ব কেবল তাঁরই। আর হিসাব গ্রহণে তিনি সবচেয়ে দ্রুততর। |
6-63 : বলো: ‘কে তোমাদের নাজাত দেয় ভূ - খন্ড ও সমুদ্রের অন্ধকার (বিপদ) থেকে, যখন তোমরা কেবল তাঁকেই ডাকো বিনত হয়ে এবং গোপনে?’ যখন তোমরা বলো: ‘তিনি যদি এ থেকে আমাদের নাজাত দেন, তবে অবশ্যি আমরা শোকর গোজার হবো।’ |
6-64 : বলো: ‘আল্লাহ্ই তোমাদের নাজাত দেন তা থেকে এবং সব দুঃখ কষ্ট থেকেই। তারপরও তোমরা তাঁর সাথে শরিক করো।’ |
6-65 : বলো: ‘তিনি সক্ষম উপর থেকে তোমাদের প্রতি আযাব পাঠাতে, অথবা তোমাদের পদতল থেকে, কিংবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ বাধিয়ে দেয়ার স্বাদ আস্বাদন করাতে। দেখো, আমরা কিভাবে আয়াত সমূহ বর্ণনা করছি যাতে করে তারা বুঝে। |
6-66 : অথচ মহাসত্য হওয়া সত্ত্বেও তোমার কওম তা অস্বীকার করছে। বলো: আমি তোমাদের উকিল নই। |
6-67 : প্রতিটি সংবাদেরই একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে এবং অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। |
6-68 : তুমি যখন দেখবে, তারা আমার আয়াত সমূহ নিয়ে বিদ্রুপাত্মক আলোচনায় লিপ্ত, তখন তুমি তাদের থেকে সরে যাও, যতোক্ষণ না তারা কথার প্রসঙ্গ পাল্টায়। শয়তান যদি তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণ হবার পর যালিমদের সাথে আর বসবেনা। |
6-69 : তাদের কোনো কাজের হিসাব দেয়া তাকওয়া অবলম্বনকারীদের দায়িত্ব নয়। তবে তাদের কর্তব্য উপদেশ দেয়া, যাতে করে ওরাও তাকওয়া অবলম্বন করে। |
6-70 : যারা তাদের দীনকে খেল তামাশা হিসেবে গ্রহণ করে এবং যাদেরকে প্রতারিত করে রাখে দুনিয়ার জীবন, তুমি তাদের সংগ ত্যাগ করো এবং এ (কুরআন) নিয়ে তাদের উপদেশ দিতে থাকো, যাতে করে কেউ নিজ কৃতকর্মের কারণে ধ্বংস হয়ে না যায়। তার জন্যে তো আল্লাহ ছাড়া কোনো অলি এবং সুপারিশকারী নেই। আর তারা মুক্তির বিনিময়ে সব কিছু দিলেও তা গ্রহণ করা হবেনা। এরা হলো সেইসব লোক যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে ধ্বংস হবে। তাদের জন্যে রয়েছে প্রচন্ড গরম পানি আর বেদনাদায়ক আযাব তাদের কুফুরির কারণে। |
6-71 : বলো: আমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে (ইলাহ্ হিসেবে) ডাকবো, যেগুলো আমাদের না কোনো লাভ করতে পারে, আর না ক্ষতি? আল্লাহ আমাদের হিদায়াত করার পর আমরা কি আবার ঐ ব্যক্তির মতো পেছনে ফিরে যাবো যাকে শয়তান পৃথিবীতে পথ ভুলিয়ে হয়রান করে ফেলেছে? অথচ তার সাথিরা তাকে সঠিক পথের দিকে ডেকে বলে: ‘এসো আমাদের কাছে।’ বলো: ‘আল্লাহর হিদায়াতই একমাত্র হিদায়াত এবং আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমরা যেনো রাববুল আলামিনের প্রতি আত্মসমর্পণ করি।’ |
6-72 : আমাদের আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে: ‘সালাত কায়েম করো এবং তাঁর অবাধ্য হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করো। আর তাঁরই কাছে তোমাদের হাশর করা হবে।’ |
6-73 : তিনিই সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ আর পৃথিবী, এ এক মহাসত্য। যখন তিনি বলেন: ‘হও’, সাথে সাথে হয়ে যায়। তাঁর কথা মহাসত্য। সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব থাকবে তাঁরই হাতে, যেদিন ফু দেয়া হবে শিঙায়। তিনি গায়েবের জ্ঞানী এবং হাজিরেরও। তিনি বিজ্ঞানময় ও সব বিষয়ে অবহিত। |
6-74 : স্মরণ করো, ইবরাহিম তার বাপ আযরকে বলেছিল: ‘আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ্ মানেন? আমার মতে আপনি এবং আপনার কওম সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত।’ |
6-75 : এভাবেই আমরা ইবরাহিমকে মহাকাশ এবং পৃথিবীর পরিচালন ব্যবস্থা দেখিয়েছি, যাতে করে সে দৃঢ় বিশ্বাসীদের একজন হয়। |
6-76 : তারপর যখন তার উপর ছেয়ে এলো রাতের আঁধার, সে একটি নক্ষত্র দেখে বললো: ‘এই আমার রব।’ কিন্তু সেটি যখন অস্ত গেলো, সে বললো: ‘অস্ত যাওয়াদের আমি পছন্দ করিনা।’ |
6-77 : পরে যখন সে দেখলো উজ্জ্বল চাঁদ উদয় হয়েছে, সে বললো: ‘এ - ই আমার রব।’ অতপর চাঁদও যখন অস্ত গেলো, সে বললো: ‘আমার রবই যদি আমাকে সঠিক পথ না দেখান, তাহলে অবশ্যি আমি বিপথগামী লোকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যাবো।’ |
6-78 : অতপর যখন সে দীপ্ত সূর্যকে উদয় হতে দেখলো, বললো: ‘এই হবে আমার রব। এতো সবার বড়।’ কিন্তু যখন সেও অস্ত গেলো, এবার সে (ইবরাহিম) বললো: ‘হে আমার কওম! তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর সাথে) শরিক করছো আমি তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। |
6-79 : আমি নিষ্ঠার সাথে আমার মুখ ফিরালাম সেই মহান সত্তার জন্যে যিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ এবং পৃথিবী। আমি মুশরিকদের অন্তরভুক্ত নই।’ |
6-80 : তখন তার কওম তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। সে তাদের বলেছিল: ‘তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে আমার সাথে তর্ক করছো? অথচ তিনি আমাকে হিদায়াত দান করেছেন। তোমরা তাঁর সাথে যাদের শরিক করছো আমি তাদের ভয় করিনা, তবে আমার প্রভুই যদি কিছু চান সেটা ভিন্ন কথা। সব কিছুর উপর আমার প্রভুর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত। তোমরা কি বুঝার চেষ্টা করবেনা?’ |
6-81 : তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর সাথে) শরিক করছো আমি কী করে তাদের ভয় করতে পারি! তোমরা তো মহান আল্লাহর সাথে শরিক করতে ভয় করছোনা, অথচ তাদেরকে আল্লাহর শরিক বানানোর ব্যাপারে তোমাদেরকে কোনো সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। সুতরাং তোমাদের যদি বুঝ - জ্ঞান থাকে তবে বলো: ‘কোন্ পক্ষ নিরাপত্তা লাভের বেশি হকদার?’ |
6-82 : যারা ঈমান আনে এবং ঈমানকে যুলুম (শিরক) মিশ্রিত করে কলুষিত করেনা, তাদের জন্যেই রয়েছে নিরাপত্তা, আর তারাই হিদায়াত প্রাপ্ত। |
6-83 : আমরা ইবরাহিমকে তার কওমের মোকাবেলায় এসব যুক্তি প্রমাণ প্রদান করেছিলাম। আমরা যাকে চাই অনেক উঁচু মর্যাদা দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী। |
6-84 : আর আমরা তাকে দান করেছিলাম (পুত্র) ইসহাক এবং (নাতি) ইয়াকুবকে। তাদের প্রত্যেককেই আমরা হিদায়াতের উপর পরিচালিত করেছি। এর আগে আমরা নূহকেও হিদায়াতের উপর পরিচালিত করেছি আর তার বংশধর দাউদ, সুলাইমান, আইয়ুব, ইউসুফ এবং মূসা আর হারূণকেও। এভাবেই আমরা পুরস্কার দিয়ে থাকি কল্যাণ পরায়ণদের। |
6-85 : আর যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা ও ইলিয়াস - এরা প্রত্যেকেই ছিলো ন্যায় পরায়ণদের অন্তরভুক্ত। |
6-86 : আর ইসমাঈল, আলইয়াসা এবং ইউনুস এবং লূতও। এদের প্রত্যেককেই আমরা শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছিলাম জগতবাসীর উপর। |
6-87 : তাছাড়া এদের পূর্ব পুরুষ, উত্তর পুরুষ এবং ভাইদের অনেককেও। আমরা তাদের সবাইকে মনোনীত করেছিলাম এবং পরিচালিত করেছিলাম সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর। |
6-88 : এ হলো আল্লাহর হিদায়াত, তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান এর ভিত্তিতে পরিচালিত করেন। তারা যদি শিরক করতো, অবশ্যি নিষ্ফল হয়ে যেতো তাদের সমস্ত আমল। |
6-89 : এরা ছিলো সেইসব লোক, যাদেরকে আমরা দান করেছিলাম কিতাব, প্রজ্ঞা এবং নবুয়্যত। এখন যদি এরা এগুলোর প্রতি কুফুরিও করে, তবে আমরা তো এগুলোর দায়িত্ব এমন একদল লোকের উপর অর্পণ করেছি যারা এগুলোর প্রতি কাফির নয়। |
6-90 : তাদেরকে আল্লাহ হিদায়াতের উপর পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমিও তাদের পথের অনুসরণ করো। তুমি বলো: ‘আমি তো একাজের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। এ (কুরআন)টা তো জগতবাসীর জন্যে উপদেশ ছাড়া আর কিছুই নয়। |
6-91 : তারা আল্লাহকে তাঁর প্রকৃত মর্যাদাই প্রদান করেনি, যখন তারা বলে: ‘আল্লাহ একজন মানুষের কাছে কিছুই নাযিল করেননি।’ তুমি বলো: ‘তাহলে মূসা যে কিতাব নিয়ে এসেছিল তা কে নাযিল করেছে? যা ছিলো আলো এবং মানুষের জন্যে হিদায়াত। তোমরা যার কিছু অংশ কাগজে লিখে প্রকাশ করো আর অনেকাংশই করো গোপন। আর তোমাদেরকে (সেই কিতাবের মাধ্যমে) তাও শিক্ষা দেয়া হয়েছিল যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষরা জানতেনা?’ বলো ‘আল্লাহ্ই’ (তা নাযিল করেছেন)। ব্যাস্, এখন তাদেরকে তাদের অর্থহীন কথাবার্তার খেলায় নিমগ্ন থাকতে দাও। |
6-92 : আর এই মুবারক কিতাব (আল কুরআন) আমরা নাযিল করেছি। এটি তার পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী আর এর ভিত্তিতে যেনো তুমি উম্মুল কোরা (মক্কা) এবং তার আশ্ পাশের লোকদের সতর্ক করো। যারা আখিরাতে বিশ্বাসী তারা এর প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা তাদের সালাতের হিফাযত করে। |
6-93 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর উপর আরোপ করে, কিংবা বলে, ‘আমার কাছে অহি আসে’, অথচ তার কাছে কোনো অহিই আসেনা, আর ঐ ব্যক্তিও, যে বলে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন আমিও তা নাযিল করবো?’ তুমি যদি দেখতে এই যালিমরা যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাবে আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে বলবে: ‘বের করো তোমাদের প্রাণ। আজ প্রয়োগ করা হবে তোমাদের উপর অপমানকর আযাব, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর আরোপ করতে না হক কথা আর আল্লাহর আয়াত নিয়ে প্রকাশ করতে ঔদ্ধত্য।’ |
6-94 : তোমরা তো আমাদের কাছে একা একাই এসেছো যেমন আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছিলাম প্রথমবার, আর তোমাদেরকে যা দিয়েছিলাম সবই তো পেছনে ফেলে এসেছো! কই তোমাদের সাথে তো তোমাদের শাফায়াতকারীদের দেখছিনা, যাদেরকে তোমাদের ব্যাপারে (আল্লাহর) শরিকদার মনে করতে? তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমরা যা ধারণা করছিলে সবই হয়ে গেছে উধাও। |
6-95 : আল্লাহ্ই অংকুরিত করেন শস্য - বীজ এবং আঁটি। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বের করে আনেন এবং মৃতকে বের করে আনেন জীবন্তের থেকে। তিনিই আল্লাহ। সুতরাং কোথায় ফিরে যাচ্ছো তোমরা? |
6-96 : তিনিই (রাতের বুক চিরে) ভোরের উন্মেষ ঘটান। তিনিই বানিয়েছেন তোমাদের বিশ্রামের জন্যে রাত আর হিসাবের জন্যে সূর্য আর চাঁদ। এসবই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত। |
6-97 : তিনিই তোমাদের জন্যে নক্ষত্রকে বানিয়েছেন স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ প্রদর্শক। যেসব লোক জ্ঞান রাখে তাদের জন্যে আমরা নিদর্শন বর্ণনা করেছি বিশদভাবে। |
6-98 : তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে। তারপর তোমাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী ও সাময়িক ঠিকানা। যারা বুঝ ও বোধের অধিকারী তাদের জন্যে আমরা নিদর্শন বর্ণনা করেছি বিশদভাবে। |
6-99 : তিনিই আসমান থেকে নাযিল করেন পানি। তা দিয়ে আমরা সব ধরণের উদ্ভিদ উদগত করি। তা থেকে আমরা সবুজ পাতা বের করে আনি। তা থেকে উৎপন্ন করি ঘন নিবিড় শস্যদানা। খেজুর গাছের মাথা থেকে বের করে আনি ঝুলন্ত কাঁদি। উৎপন্ন করি আংগুরের বাগান, যয়তুন ও আনার, একই রকম ও বিভিন্ন রকম। লক্ষ্য করে দেখো, এর ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং যখন তা পাকে। যারা ঈমান রাখে তাদের জন্যে এতে রয়েছে অনেক নিদর্শন। |
6-100 : তারা জিনকে আল্লাহর শরিক বানায়, অথচ তিনিই তাদের সৃষ্টি করেছেন। আর না জেনেই তারা আল্লাহর প্রতি পুত্র কন্যা আরোপ করে। তারা যা আরোপ করে তা থেকে তিনি মুক্ত - পবিত্র এবং অনেক উর্ধ্বে। |
6-101 : তিনি তো মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীর স্রষ্টা। কী করে থাকতে পারে তাঁর সন্তান? তাঁর তো স্ত্রীও থাকতে পারেনা। কারণ, সব কিছু তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি বিষয়ে তিনি জ্ঞাত। |
6-102 : তিনি আল্লাহ, তোমাদের প্রভু। কোনো ইলাহ্ নেই তিনি ছাড়া। প্রতিটি জিনিসের তিনি স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো। প্রতিটি জিনিসের উপর তিনি উকিল - তত্ত্বাবধায়ক। |
6-103 : কোনো দৃষ্টি তাঁকে ধারণ করতে পারেনা, কিন্তু তিনি ধারণ করেন সব দৃষ্টি। আর তিনি সুক্ষ্মদর্শী, সব বিষয়ের খবর রাখেন। |
6-104 : তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে সুস্পষ্ট প্রমাণ। সুতরাং যে দেখবে, সে নিজেরই কল্যাণ করবে, আর যে অন্ধতার পথ বেছে নেবে সে নিজেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। (হে নবী! তাদের বলো:) ‘আমি তোমাদের উপর হিফাযতকারী নই।’ |
6-105 : এমনি করেই আমরা বিভিন্নভাবে বর্ণনা করি নিদর্শন। তারা বলে: ‘তুমি কারো কাছ থেকে পড়ে নিয়েছো।’ আমি জ্ঞানী লোকদের জন্যে (নিদর্শন) বর্ণনা করি স্পষ্টভাবে। |
6-106 : তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে তোমার কাছে যা অহি করা হয় তুমি কেবল তারই অনুসরণ করো, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ্ (হুকুমকর্তা) নেই। মুশরিকদের উপেক্ষা করে চলো। |
6-107 : আল্লাহ চাইলে তারা শিরক করতোনা। আমরা তোমাকে তাদের উপর রক্ষক নিযুক্ত করিনি এবং তাদের উপর তোমাকে উকিলও নিয়োগ করিনি। |
6-108 : তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকে তোমরা তাদের গালি দিওনা, তাহলে তারাও না জেনে সীমালংঘন করে আল্লাহকে গালি দিয়ে বসবে। এভাবেই আমরা প্রত্যেক উম্মতের জন্যে সুশোভিত করে দিয়েছি তাদের কর্মকান্ডকে। তারপর তাদের প্রভুর কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন হবে, তখন তিনি তাদের সংবাদ দেবেন - তারা কী আমল করতো। |
6-109 : তারা আল্লাহর নামে কঠোর শপথ করে বলে, তাদের জন্যে যদি কোনো নিদর্শন আসতো, তবে অবশ্যি তারা ঈমান আনতো। বলো: নিদর্শন পাঠানো তো আল্লাহর ব্যাপার। তোমাদের কিভাবে বুঝানো যাবে যে, নিদর্শন এলেও তারা ঈমান আনতোনা। |
6-110 : আমরা তাদের অন্তর এবং দৃষ্টি পরিবর্তন করে দেবো, যেভাবে তারা প্রথমবারেই ঈমান আনেনি এবং তাদেরকে অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেবো। |
6-111 : আমরা যদি তাদের কাছে ফেরেশতাও নাযিল করি, যদি মৃত লোকেরা এসেও তাদের সাথে কথা বলে এবং তাদের সামনে সব বস্ত্ত এনেও যদি হাজির করি, তবু তারা ঈমান আনবেনা, তবে আল্লাহ চাইলে ভিন্ন কথা। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জাহেল। |
6-112 : এভাবে আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে মানুষ ও জিন শয়তানদের শত্রু বানিয়ে দিয়েছি। তারা প্রতারণার উদ্দেশ্যে একে অপরের কাছে মুখরোচক কথা অহি (ইংগিত) করে। আল্লাহ চাইলে তারা এমনটি করতোনা। সুতরাং তুমি ত্যাগ করো তাদেরকে এবং তারা যে মিথ্যা রচনা করে সেটাকে। |
6-113 : তারা এ উদ্দেশ্যে (পরস্পরের কাছে অহি করে) যে, যারা আখিরাতে ঈমান রাখেনা, তাদের মন যেনো সেদিকে অনুরাগী হয় এবং এতে করে যেনো তারা খুশি হয়। আর তারা যে দুষ্কর্ম করে তাই যেনো তারা করতে থাকে। |
6-114 : (তুমি বলো:) ‘আমি কি আল্লাহ ছাড়া আর অন্য কাউকেও সালিস মানবো অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন আল কিতাব (আল কুরআন) তফসিল সহকারে!’ আর ইতোপূর্বে আমরা যাদের কিতাব দিয়েছি তারা ভালোভাবেই জানে এটি (কুরআন) নির্ঘাত তোমার প্রভুর পক্ষ থেকেই নাযিল হয়েছে। সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তরভুক্ত হয়োনা। |
6-115 : তোমার প্রভুর বাণী সত্য ও ন্যায়ে পরিপূর্ণ। তাঁর বাণী বদল করার কেউ নেই। তিনি সব শুনেন, সব জানেন। |
6-116 : তুমি বিশ্বের অধিকাংশ লোকের কথা শুনতে গেলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে ফেলবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং আন্দাজ অনুমানে কথা বলে। |
6-117 : তোমার প্রভু ভালো করেই জানেন কারা বিপথগামী হয় তাঁর পথ থেকে, আর সঠিক পথের অনুসারীদেরও তিনি ভালোভাবে জানেন। |
6-118 : যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে তা তোমরা খাও যদি তোমরা তাঁর আয়াতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকো। |
6-119 : তোমাদের কী হয়েছে, যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে কেন তোমরা তা থেকে খাবেনা? অথচ তোমাদের জন্যে যা যা হারাম করা হয়েছে তা তোমাদেরকে বিশদভাবেই বলে দেয়া হয়েছে। তবে তা থেকে কিছু গ্রহণ করতে তোমরা নিরুপায় হয়ে পড়লে ভিন্ন কথা। অনেকেই না জেনে নিজেদের খেয়াল খুশির ভিত্তিতে অন্যদের বিপথগামী করে। তোমার প্রভু সীমালংঘনকারীদের ভালোভাবেই জানেন। |
6-120 : তোমরা বর্জন করো যাহেরি (প্রকাশ্য) পাপ এবং বাতেনি (গোপন) পাপ। যারা পাপ কামাই করে, অচিরেই তাদেরকে তাদের পাপের উচিত শাস্তি দেয়া হবে। |
6-121 : যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি তা তোমরা খেয়োনা, কারণ তা ফাসেকি (পাপ)। শয়তানরা তাদের অলিদের অহি করে (প্ররোচনা দেয়) তোমাদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হতে। তোমরা যদি তাদের কথামতো চলো তবে অবশ্যি মুশরিক হয়ে যাবে। |
6-122 : যে ছিলো মৃত, তারপর তাকে আমরা জীবন দান করেছি এবং মানুষের মধ্যে চলার জন্যে দিয়েছি আলো, সে কি ঐ ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে রয়েছে অন্ধকাররাশিতে এবং সেখান থেকে সে বের হবার নয়? এভাবেই কাফিরদের জন্যে তাদের কর্মকান্ডকে করে দেয়া হয়েছে চাকচিক্যময়। |
6-123 : এভাবেই আমরা প্রত্যেক জনপদে সেখানকার অপরাধীদের প্রধানকে চক্রান্ত করার সুযোগ দিয়েছি। তাদের চক্রান্ত যে তাদেরই বিরুদ্ধে যাবে তা তারা বুঝতে পারেনা। |
6-124 : যখনই তাদের কাছে কোনো নিদর্শন এসেছিল তারা বলেছিল: ‘আমরা ততোক্ষণ পর্যন্ত কিছুতেই ঈমান আনবোনা যতোক্ষণ না আল্লাহর রসূলদের যা দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও তা দেয়া হয়।’ আল্লাহ্ই ভালো জানেন তিনি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করবেন। যারা অপরাধ করেছে, তাদের চক্রান্তের জন্যে আল্লাহর কাছে তাদের জন্যে রয়েছে অপমান আর কঠোর আযাব। |
6-125 : আল্লাহ কাউকেও হিদায়াত দান করতে চাইলে ইসলামের জন্যে তার হৃদয়কে উদার করে দেন। আর যাকে তিনি গোমরাহ্ করতে চান তার অন্তরকে করে দেন অতিশয় সংকীর্ণ। তখন তার কাছে ইসলামে প্রবেশ করাটা সিঁড়ি বেয়ে আকাশে উঠার মতোই কষ্ট সাধ্য মনে হয়। যারা ঈমান আনেনা আল্লাহ্ এভাবেই তাদের লাঞ্ছিত করেন। |
6-126 : এটাই তোমার প্রভুর সিরাতুল মুস্তাকিম। উপদেশ গ্রহণকারী লোকদের জন্যে আমরা নিদর্শন বর্ণনা করে দিলাম বিশদভাবে। |
6-127 : তাদের জন্যে তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে দারুস্ সালাম (শান্তির ঘর) এবং তিনিই তাদের অলি (অভিভাবক) তাদের আমলের কারণে। |
6-128 : যেদিন তিনি তাদের সবাইকে হাশর করবেন সেদিন তাদের বলবেন: ‘হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা মানুষের মধ্যে অনেককেই তোমাদের অনুগামী করেছিলে।’ আর মানুষের মধ্যকার তাদের অলিরা বলবে: ‘আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের একে অপরের মাধ্যমে লাভবান হয়েছি, আর তুমি আমাদের জন্যে যে সময় নির্ধারণ করেছিলে, এখন তো আমরা তাতে এসে উপনীত হয়েছি।’ আল্লাহ বলবেন: জাহান্নামই তোমাদের আবাস, চিরদিন তোমরা সেখানেই থাকবে, তবে আল্লাহ অন্য কিছু চাইলে সেটা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই তোমার প্রভু প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী। |
6-129 : এভাবেই আমরা যালিমদের একদলকে আরেকদলের অলি বানিয়ে দেই তাদের কৃতকর্মের কারণে। |
6-130 : (সেদিন আল্লাহ বলবেন:) ‘হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের কাছে রসূলরা আসেনি? তারা কি আমার আয়াত তোমাদের কাছে বয়ান করেনি? তারা কি এই দিনটির সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করেনি?’ তারা বলবে: ‘আমরা আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ মূলত দুনিয়ার জীবনটাই তাদের প্রতারিত করে রেখেছিল। তারা তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে আরো সাক্ষ্য দেবে যে, বাস্তবিকই তারা ছিলো কাফির। |
6-131 : এর কারণ হলো, কোনো জনপদকে সতর্ক না করা পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়া তোমার প্রভুর নীতি নয়। |
6-132 : প্রত্যেক ব্যক্তি যে আমল করে, সে অনুযায়ী তার অবস্থান নির্ধারিত হবে। তারা যে আমল করে সে সম্পর্কে তোমার প্রভু গাফিল নন। |
6-133 : তোমার প্রভু অভাবমুক্ত রহমতওয়ালা দয়াময়। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সরিয়ে দিতে পারেন এবং তোমাদের পরে যাকে ইচ্ছা তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন, যেমন তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন অপর একটি কওমের বংশধারা থেকে। |
6-134 : তোমাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যি আসবে। তোমরা সেটার আগমন ঠেকাতে পারবেনা। |
6-135 : বলো ‘হে আমার কওম! তোমরা যেখানে আমল করছো করতে থাকো, আমি আমার কাজ করে যাবো। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে কার পরিণাম হবে কল্যাণময়। যালিমরা কিছুতেই সফল হবেনা।’ |
6-136 : আল্লাহ যে শস্য এবং গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তারা আল্লাহর জন্যে একটি অংশ নির্ধারণ করে এবং তাদের ধারণা অনুযায়ী বলে: ‘এই অংশ আল্লাহর জন্যে এবং এই অংশ আমাদের (বানানো আল্লাহর) শরিকদের (দেবতাদের) জন্যে। তারপর দেবতাদের অংশ আল্লাহর কাছে পৌঁছায়না, অথচ আল্লাহর অংশ দেবতাদের কাছে পৌঁছায়। তাদের ফায়সালা কতো যে নিকৃষ্ট! |
6-137 : এভাবে তাদের দেবতারা অনেক মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের সন্তানদের হত্যাকে সুশোভিত করে রেখেছে তাদের ধ্বংসের উদ্দেশ্যে এবং তাদের ধর্ম সম্পর্কে তাদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্যে। আল্লাহ চাইলে তারা এটা করতোনা। সুতরাং তাদেরকে তাদের বানানো মিথ্যার উপর ছেড়ে দাও। |
6-138 : তারা (তাদের ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে) বলে: ‘এসব গবাদি পশু এবং এসব শস্যক্ষেত নিষিদ্ধ। আমরা যাকে চাইবো সে ছাড়া আর কেউ এগুলো খেতে পারবেনা।’ তাছাড়া কিছু কিছু গবাদি পশুর পিঠে আরোহণ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে আর কিছু কিছু গবাদি পশু যবেহ করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয়না। এসব (বিধি নিষেধ মূলত তাদের) আল্লাহর নামে মিথ্যারোপ। তিনি অবশ্যি তাদেরকে তাদের এসব মিথ্যা রচনার শাস্তি প্রদান করবেন। |
6-139 : তারা আরো বলে: ‘এসব গবাদি পশুর গর্ভে যা আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্যে নির্ধারিত এবং আমাদের নারীদের জন্যে হারাম। তবে মরা পশু হলে তারা উভয়েই তাতে শরিকদার।’ এসব বিধিনিষেধ আরোপের শাস্তি তিনি তাদের প্রদান করবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানী। |
6-140 : যারা না জেনে বোকামি করে তাদের সন্তানদের হত্যা করে এবং আল্লাহর উপর মিথ্যারোপের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া রিযিক হারাম করে, তারা অবশ্যি বিপথগামী হয়ে গেছে এবং তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত নয়। |
6-141 : তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন নানা রকম গুল্ম - লতা এবং গাছের জান্নাত (বাগান), খেজুর গাছ, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাদ্য শস্য, যয়তুন ও আনার - সদৃশ্য ও অসদৃশ্য। ফলন ঘটার পর তোমরা এগুলোর ফল খাও এবং ফল - ফসল সংগ্রহের দিন সেগুলোর হক (যাকাত) দিয়ে দাও। অপচয় করোনা। কারণ, তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। |
6-142 : গবাদি পশুর মধ্যে (তিনি সৃষ্টি করেছেন) কিছু ভারবাহী আর কিছু ছোট পশু। আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা। কারণ, সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন। |
6-143 : (তারা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো যেগুলো হারাম করেছে) সেগুলো আট প্রকার। মেষের দুটি এবং ছাগলের দুটি। তাদের জিজ্ঞাসা করো: ‘তিনি নর দুটি হারাম করেছেন নাকি মাদি দুটি? নাকি মাদি দুটির গর্ভে যা আছে তা? তোমরা সত্যবাদী হলে এলেমের ভিত্তিতে অবহিত করো।’ |
6-144 : আর উটের দুটি এবং গরুর দুটি। তাদের জিজ্ঞেস করো: ‘তিনি কি নর দুটি হারাম করেছেন নাকি মাদি দুটি? নাকি মাদি দুটির গর্ভে যা আছে তা? নাকি তিনি যখন এ নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন তোমরা উপস্থিত ছিলে?’ ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে মানুষকে বিপথগামী করার জন্যে এলেম ছাড়াই আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করে? নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম লোকদের হিদায়াত করেন না। |
6-145 : হে নবী! বলো: ‘কেউ যা খেতে চায়, আমার প্রতি প্রেরিত অহিতে তার মধ্যে মৃত (প্রাণী), কিংবা প্রবাহিত রক্ত, অথবা শুয়োরের গোশ্ত ছাড়া আর কিছুই হারাম পাইনা। এগুলো নোংরা এবং (খাওয়া) পাপ। আর যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করা হয়েছে তাও হারাম। কেউ যদি বিদ্রোহ এবং সীমালংঘন না করে নিরূপায় হয়ে পড়ার কারণে এগুলো থেকে কিছু খেয়ে নেয়, (তার ব্যাপারে) অবশ্যি তোমার প্রভু পরম ক্ষমাশীল দয়াময়।’ |
6-146 : আমরা ইহুদিদের জন্যে নখরধারী সব পশুই হারাম করে দিয়েছিলাম। গরু এবং ছাগলের চর্বিও তাদের জন্যে হারাম করেছিলাম, তবে পিঠের, অন্ত্রের কিংবা হাড়ের সাথের চর্বি ছাড়া। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমরা তাদের এই শাস্তি দিয়েছিলাম। অবশ্যি আমরা সত্যবাদী। |
6-147 : তারপরও যদি তারা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে, তুমি বলো: তোমাদের প্রভু অসীম দয়ার মালিক এবং অপরাধী লোকদের উপর থেকে তাঁর শাস্তি রদ করা হয়না। |
6-148 : শিরকে লিপ্ত লোকেরা অচিরেই তোমাকে বলবে: ‘আল্লাহ চাইলে আমরা শিরক করতামনা এবং আমাদের পূর্ব পুরুষরাও, আর আমরা কিছু হারামও করতামনা।’ এভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদের আগের লোকেরাও, অবশেষে তারা ভোগ করেছিল আমার শাস্তি। হে নবী! বলো: ‘তোমাদের কাছে কোনো এলেম আছে কি? থাকলে বের করো আমাদের সামনে। আসলে তোমরা অনুমান ছাড়া আর কিছুরই অনুসরণ করোনা, আর মনগড়া কথা ছাড়া কোনো কথা বলোনা।’ |
6-149 : হে নবী! বলো: চূড়ান্ত প্রমাণের মালিক হলেন আল্লাহ। তিনি চাইলে অবশ্যি তোমাদের সবাইকে হিদায়াত করতেন। |
6-150 : হে নবী! তাদের বলো এগুলো হারাম হবার ব্যাপারে যারা সাক্ষ্য দেবে তোমাদের সেসব সাক্ষীদের হাজির করো।’ তারপর তারা সাক্ষ্য দিলেও তুমি তাদের সাথে স্বীকার করোনা। যারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে, যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখেনা এবং যারা তাদের প্রভুর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে, তুমি তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করোনা। |
6-151 : হে নবী! বলো: ‘এসো, তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্যে যা হারাম করেছেন তা তোমাদের তিলাওয়াত করে শুনাই। সেগুলো হলো: তোমরা তাঁর সাথে কোনো কিছুকেই শরিক করবেনা, পিতা - মাতার প্রতি ইহ্সান করবে, দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবেনা, কারণ আমরাই তাদের এবং তোমাদেরও রিযিক দেই, প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে অশ্লীল কাজের কাছেও যেয়োনা। আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তোমরা তাকে হত্যা করোনা, তবে যথার্থ কারণ ও হক পন্থায় হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ তোমাদের এসব অসিয়ত (নির্দেশ) করছেন যাতে করে তোমরা আকল খাটাও। |
6-152 : এতিমরা বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উত্তম পন্থায় ছাড়া তাদের মাল সম্পদের কাছেও যেয়োনা। পরিমাণ ও ওজন নায্যভাবে পূর্ণ করে দাও। আমরা কোনো ব্যক্তির উপর তার সাধ্যের বেশি বোঝা চাপাই না। তোমরা যখন কথা বলবে, নায্য কথা বলবে নিকটজনের বিপক্ষে গেলেও। আল্লাহকে দেয়া অংগীকার পূর্ণ করো। আল্লাহ এসব অসিয়ত (নির্দেশ) তোমাদের প্রদান করছেন যাতে করে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। |
6-153 : এটাই আমার সিরাতুল মুস্তাকিম (সরল সঠিক পথ), সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করো। তোমরা বিভিন্ন পথের অনুসরণ করোনা, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। আল্লাহ তোমাদের এসব অসিয়ত (নির্দেশ) প্রদান করছেন যাতে করে তোমরা সতর্ক হও। |
6-154 : তারপর আমরা মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, যা ছিলো কল্যাণ পরায়ণদের জন্যে পরিপূর্ণ, সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত এবং রহমত, যাতে করে তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান আনে। |
6-155 : তারপর আমরা মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, যা ছিলো কল্যাণ পরায়ণদের জন্যে পরিপূর্ণ, সবকিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত এবং রহমত, যাতে করে তারা তাদের প্রভুর সাথে সাক্ষাতের প্রতি ঈমান আনে। |
6-156 : যাতে তোমরা একথা বলতে না পারো যে, কিতাব তো আমাদের আগে দুটি (ইহুদি খৃষ্টান) সম্প্রদায়ের কাছে নাযিল হয়েছিল। আমরা তো তাদের দরস (পাঠ) সম্পর্কে গাফিল ছিলাম! |
6-157 : অথবা একথাও যেনো বলতে না পারো যে, যদি আমাদের কাছে কিতাব নাযিল করা হতো তাহলে আমরা তাদের চাইতে বেশি হিদায়াতপ্রাপ্ত হতাম। এখন তো তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসে গেছে সুষ্পষ্ট প্রমাণ, হিদায়াত এবং রহমত। সুতরাং ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে হবে, যে আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যান করবে এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। যারা আমার আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তাদের এই মুখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে অচিরেই আমরা তাদের নিকৃষ্ট আযাব প্রদান করবো। |
6-158 : তারা তো শুধু এ জন্যেই অপেক্ষা করছে যেনো তাদের কাছে ফেরেশতা আসে, অথবা স্বয়ং তোমার প্রভু আসেন, অথবা তোমার প্রভুর কোনো নিদর্শন আসে। শুনো, যেদিন তোমার প্রভুর নিদর্শন আসবে সেদিন ঐ ব্যক্তি ঈমান আনলে তাতে তার কোনো ফায়দা হবেনা, যে ব্যক্তি আগে ঈমান আনেনি; কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের ভিত্তিতে কল্যাণ অর্জন করেনি। বলো: ‘তোমরা অপেক্ষা করো। আমরাও অপেক্ষায় থাকলাম।’ |
6-159 : নিশ্চয়ই যারা তাদের দীনকে নানা মতে বিভক্ত করেছে এবং তারাও বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোনো দায় দায়িত্ব তোমার নেই। তাদের বিষয়ে ফায়সালার দায়িত্ব আল্লাহর, তিনিই তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। |
6-160 : যে কেউ একটি কল্যাণকর কাজ করবে, সে তার দশগুণ পাবে, আর যে কেউ একটি পাপ কাজ করবে, তাকে কেবল সেটারই প্রতিফল দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম করা হবেনা।’ |
6-161 : হে নবী! বলো: ‘আমার প্রভু আমাকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। সেটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সেটা ইবরাহিমের মিল্লাত (আদর্শ)।’ ইবরাহিম ছিলো নিষ্ঠাবান। সে মুশরিকদের অন্তরভুক্ত ছিলনা। |
6-162 : বলো: ‘আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু আল্লাহ রাববুল আলামিনের জন্যে।’ |
6-163 : তাঁর কোনো শরিক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ |
6-164 : বলো: ‘আমি কি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কোনো রব খুঁজবো? অথচ তিনিই তো সব কিছুর রব।’ প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্যে দায়ী। কেউই অপর কারো বোঝা বহন করবেনা। অতপর তোমাদের প্রভুর কাছেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে। তখন তিনি তোমাদের অবহিত করবেন যেসব বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছিলে। |
6-165 : তিনিই তোমাদেরকে এই পৃথিবীর প্রতিনিধি বানিয়েছেন এবং তিনি তোমাদের যা দিয়েছেন সে বিষয়ে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তোমাদের কতক লোককে অপর কতক লোকের উপর উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন। তোমার প্রভু শাস্তিদানে দ্রুত, আবার তিনি অবশ্যি ক্ষমাশীল দয়াময়ও। |