মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২০৬, রুকু সংখ্যা: ২৪এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
7-1 : আলিফ লাম মিম সোয়াদ। |
7-2 : এটি একটি কিতাব তোমার প্রতি নাযিল করা হচ্ছে। সুতরাং এর ব্যাপারে যেনো তোমার মনে কোনো প্রকার সংকোচ না থাকে। এটি নাযিল করার উদ্দেশ্য হলো, তুমি এর মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করবে আর এটি একটি উপদেশ মুমিনদের জন্যে। |
7-3 : তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যা নাযিল করা হচ্ছে তোমরা কেবল তারই ইত্তেবা (অনুসরণ) করো। তাঁকে (আল্লাহকে) ছাড়া অন্য অলিদের অনুসরণ করোনা। তবে তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাকো। |
7-4 : কতো যে জনপদ আমরা হালাক করে দিয়েছি। আমাদের শাস্তি সে জনপদে এসে পড়েছিল রাতের বেলা অথবা দুপুরে যখন তারা ছিলো বিশ্রামরত। |
7-5 : আমাদের শাস্তি যখন তাদের উপর এসে পড়েছিল, তখন তাদের মুখে শুধু একটি কথাই ছিলো: ‘অবশ্যি আমরা যালিম।’ |
7-6 : যাদের কাছে রসূল পাঠানো হয়েছে তাদেরকে অবশ্যি আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো এবং জিজ্ঞাসাবাদ করবো রসূলদেরও। |
7-7 : তারপর পূর্ণ জ্ঞানের ভিত্তিতে তাদের কর্মকান্ডের বিবরণ তাদের সামনে তুলে ধরবো, আমরা তো আর (তাদের থেকে) গায়েব ছিলাম না। |
7-8 : সেদিনকার ওজন (ন্যায়বিচার) মহাসত্য ও বাস্তব। তারপর যাদের (নেক আমলের) পাল্লা ভারি হবে তারাই হবে সফলকাম। |
7-9 : আর যাদের (ভালো কাজের) পাল্লা হবে হালকা, তারা হবে ঐসব লোক যারা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আমাদের আয়াতের প্রতি যুলুম করার মাধ্যমে। |
7-10 : আমরা তোমাদের এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি আর এখানেই তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করে দিয়েছি জীবিকার। খুব কমই তোমরা শোকর আদায় করো। |
7-11 : আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের আকৃতি দান করেছি, তারপর ফেরেশতাদের বলেছি, সাজদা করো আদমের প্রতি। তখন তারা সবাই সাজদা করেছিল ইবলিস ছাড়া। সে সাজদাকারীদের সাথে শামিল হয়নি। |
7-12 : আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: ‘আমার নির্দেশ সত্ত্বেও কোন্ জিনিস তোমাকে বিরত রাখলো সাজদা করা থেকে?’ সে জবাব দেয়: ‘আমি তার (আদমের) চাইতে উত্তম। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছো মাটি থেকে।’ |
7-13 : তিনি বললেন: ‘বেরিয়ে যা এখান থেকে। এখানে থেকে অহংকার করার কোনো অধিকার তোর নেই। বেরিয়ে যা, নিশ্চয়ই তুই নিচু ও হীনদের একজন।’ |
7-14 : সে বললো: ‘আমাকে পুনরুত্থানকাল পর্যন্ত অবকাশ দিন।’ |
7-15 : তিনি বললেন: ‘যা, তুই অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তরভুক্ত।’ |
7-16 : তখন সে বললো: ‘‘যেহেতু তুমি আমাকে বিপথগামী করলে, তাই আমি তাদের (আদম সন্তানদের বিপথগামী করার) জন্যে তোমার সরল সঠিক পথে ওঁৎ পেতে থাকবো। |
7-17 : তারপর আমি আসবো তাদের সামনে থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডানে থেকে এবং তাদের বামে থেকে। ফলে তুমি তাদের অধিকাংশকেই পাবেনা শোকর গুজার।’’ |
7-18 : তিনি বললেন: ‘‘তুই বেরিয়ে যা ওখান থেকে ধিকৃত ও বিতাড়িত হয়ে। তাদের যে কেউ তোর অনুসরণ করবে, আমি অবশ্যি তোদের সবাইকে দিয়ে পূর্ণ করবো জাহান্নাম। |
7-19 : আর হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী বসবাস করো জান্নাতে। খাও যেখান থেকে ইচ্ছা। তবে তোমরা এই গাছটির কাছেও যেয়োনা, গেলে তোমরা যালিমদের মধ্যে শামিল হয়ে পড়বে।’’ |
7-20 : তারপর শয়তান অস্অসা দিলো তাদের দুজনকে যাতে করে তাদের লজ্জাস্থান যা গোপন রাখা হয়েছিল তাদের কাছে, তা তাদের জন্যে প্রকাশ হয়ে পড়ে। সে তাদের বললো: ‘তোমাদের প্রভু যে তোমাদেরকে এই গাছের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তার কারণ, পাছে তোমরা ফেরেশতা হয়ে না পড়ো, কিংবা তোমরা (এখানে) স্থায়ী হয়ে না যাও।’ |
7-21 : সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললো: ‘অবশ্যি আমি তোমাদের একজন কল্যাণকামী।’ |
7-22 : এভাবে সে তাদের প্রতারিত করে অধপতিত করলো। তারপর যখন তারা সেই গাছের (ফল) আস্বাদন করলো, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং জান্নাতের পাতা দিয়ে তারা নিজেদের ঢেকে নিতে থাকলো। এসময় তাদের প্রভু তাদের ডেকে বললেন: ‘আমি কি তোমাদেরকে এই গাছটির কাছে যেতে নিষেধ করিনি? আমি কি বলিনি শয়তান তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন?’ |
7-23 : তখন তারা ফরিয়াদ করলো: ‘আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। এখন তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের দয়া না করো, তাহলে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হয়ে পড়বো।’ |
7-24 : তিনি বললেন: ‘নেমে যাও, তোমরা পরস্পরের শত্রু। পৃথিবীতে একটা নির্দিষ্টকাল তোমরা অবস্থান করবে এবং ওখানেই তোমাদের জীবিকার ব্যবস্থা থাকবে।’ |
7-25 : তিনি আরো বললেন: ‘সেখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে এবং সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে আর সেখান থেকেই তোমাদের খারিজ (বের) করে আনা হবে।’ |
7-26 : হে আদম সন্তান! আমরা তোমাদের জন্যে এক ধরণের পোশাক নাযিল করেছি তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্যে আচ্ছাদন হিসেবে এবং শোভাবর্ধক হিসেবে, আর রয়েছে ‘তাকওয়ার পোশাক’, এ পোশাকই উত্তম। এ হলো আল্লাহর আয়াত, যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। |
7-27 : হে বনি আদম! শয়তান যেনো তোমাদের ফিতনায় না ফেলে যেভাবে (ফিতনায় ফেলে) তোমাদের (আদি) পিতা মাতাকে বের করে দিয়েছিল জান্নাত থেকে। সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্যে তাদের লেবাস খসিয়ে দিয়েছিল। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে, যেভাবে তোমরা তাদের দেখোনা। যারা ঈমান আনেনা তাদের জন্যে আমরা অলি বানিয়ে দিয়েছি শয়তানদের। |
7-28 : তারা যখন কোনো ফাহেশা কাজ করে, তখন বলে: ‘আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের এরকম করতে দেখেছি। আল্লাহ্ই আমাদেরকে এর নির্দেশ দিয়েছেন।’ বলো: ‘আল্লাহ ফাহেশা কাজের নির্দেশ দেননা। কেন তোমরা আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করছো যা তোমরা জানোনা?’ |
7-29 : বলো: আমার প্রভু ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেক মসজিদে (সালাতে) তোমরা তোমাদের লক্ষ্য স্থির করবে এবং আল্লাহর জন্যে আনুগত্য একনিষ্ঠ করে তাঁকে ডাকবে। তিনি তোমাদের প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, তোমরা ঠিক সেভাবেই ফিরে আসবে। |
7-30 : একদলকে তিনি হিদায়াত দান করেছেন, আরেক দলের উপর গোমরাহি নির্ধারিত হয়ে গেছে। কারণ, তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদের অলি বানিয়ে নিয়েছে এবং ধারণা করছে তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত। |
7-31 : হে আদম সন্তান! প্রত্যেক মসজিদের (সালাতের) সময় তোমরা তোমাদের সুন্দর পোশাক পরবে। আর আহার করবে, পান করবে, কিন্তু অপচয় করবেনা, কারণ তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেননা। |
7-32 : হে নবী! বলো: ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে যেসব সুন্দর বস্ত্ত আর উত্তম জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো হারাম করলো কে?’ বলো: ‘সেগুলো তো মুমিনদেরই জন্যে এই দুনিয়ার জীবনে, বিশেষ করে কিয়ামত কালে।’ এভাবেই আমরা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি আয়াত যারা জ্ঞান রাখে তাদের জন্যে। |
7-33 : বলো: ‘আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন গোপন ও প্রকাশ্য ফাহেশা (অশ্লীল) কাজ, পাপকাজ, না হক বিদ্রোহ, তোমাদের আল্লাহর সাথে শিরক করা যার সপক্ষে আল্লাহ কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি, এবং না জেনে বুঝে তোমাদের আল্লাহর সম্পর্কে কথা বলা। |
7-34 : প্রত্যেক উম্মতের একটি কাল - সীমা রয়েছে, যখন তাদের সেই সময়টি এসে পড়বে, তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্বও করতে পারবেনা এবং তার পূর্বেও সে কালটি শেষ করতে পারবেনা। |
7-35 : হে বনি আদম! যখন তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে রসূলরা এসে আমার আয়াত পেশ করবে, তখন যারা সতর্ক হবে এবং নিজেদের এসলাহ (সংশোধন) করে নেবে, তাদের কোনো ভয় ভীতিও থাকবেনা, দুঃখ দুশ্চিন্তাও থাকবেনা। |
7-36 : আর যারা প্রত্যাখ্যান করবে আমার আয়াত এবং তার বিরুদ্ধে প্রকাশ করবে দাম্ভিকতা, তারা হবে আগুনের অধিবাসী এবং চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। |
7-37 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর উপর আরোপ করে, কিংবা মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে তাঁর আয়াতকে? তাদের নসিবে যা লেখা আছে তা তাদের কাছে পৌঁছুবেই। অবশেষে তাদের কাছে পৌঁছে যাবে আমাদের নির্দেশ বাহকরা (ফেরেশতারা) তাদেরকে ওফাত (মৃত্যু) দেয়ার জন্যে। তারা তাদের জিজ্ঞাসা করবে: ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ডাকতে তারা কোথায়? তারা বলবে: ‘ওরা আমাদের থেকে উধাও হয়ে গেছে।’ তখন তারা তাদের নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা সত্যি কাফির ছিলো। |
7-38 : আল্লাহ বলবেন: ‘তোমাদের আগে যেসব জিন ও মানব সম্প্রদায় গত হয়েছে, তাদের সাথে জাহান্নামে দাখিল হও।’ যখনই একটি দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা লানত দেবে। যখন সবাই তাতে একত্র হবে, তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের বলবে: ‘আমাদের প্রভু! এরাই আমাদের গোমরাহ করেছিল, সুতরাং তাদের আগুনের আযাব দ্বিগুণ করে দাও।’ তিনি বলবেন: ‘প্রত্যেকের জন্যেই রয়েছে দ্বিগুণ, তবে তোমরা তা জানোনা।’ |
7-39 : পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদের বলবে: ‘আমাদের উপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সুতরাং তোমরা তোমাদের অর্জনের জন্যে স্বাদ গ্রহণ করো আযাবের।’ |
7-40 : যারা আমাদের আয়াতের প্রতি মিথ্যারোপ করে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তার বিরুদ্ধে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আসমানের দুয়ার খোলা হবেনা এবং সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ না করা পর্যন্ত তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। এরকম প্রতিফলই আমরা অপরাধীদের দিয়ে থাকি। |
7-41 : জাহান্নামই হবে তাদের নিচের শয্যা এবং তাদের উপরের আচ্ছাদন। এভাবেই আমরা শাস্তি দিয়ে থাকি যালিমদের। |
7-42 : পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ করবে, তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী, চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। আমরা কাউকেও তার সাধ্যের বাইরে বোঝা অর্পণ করিনা। |
7-43 : আমরা দূর করে দেবো তাদের অন্তরের সব ঈর্ষা। তাদের নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ নদী নহর। তারা বলবে: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের এই জান্নাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের পথ না দেখালে আমরা কখনো (জান্নাতের) পথ পেতাম না। আমাদের কাছে আমাদের প্রভুর রসূলরা সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’ তখন তাদের ডেকে বলা হবে: ‘তোমাদের আমলের কারণেই তোমাদের এই জান্নাতের ওয়ারিশ বানানো হয়েছে। |
7-44 : জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদের ডেকে বলবে: ‘আমাদের প্রভু আমাদের যে ওয়াদা দিয়েছিলেন আমরা তা সত্য পেয়েছি। তোমাদের প্রভু তোমাদের যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তোমরা কি তা সত্য পেয়েছো?’ তারা বলবে: ‘হ্যাঁ।’ তখন একজন ঘোষণাকারী তাদের মাঝে ঘোষণা করবে: ‘‘যালিমদের উপর আল্লাহর লানত, |
7-45 : যারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করতো এবং তাতে বক্রতা খুঁজে বেড়াতো এবং তারা আখিরাতের প্রতি ছিলো অবিশ্বাসী - কাফির।’’ |
7-46 : (জান্নাত ও জাহান্নাম) উভয়ের মাঝে থাকবে একটি হিজাব (পর্দা), আর কিছু লোক থাকবে আ’রাফে। তারা সবাইকে চিনবে তাদের লক্ষণ দেখেই। তারা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলে: আপনাদের প্রতি সালাম। তারা তখনো জান্নাতে দাখিল হয়নি, তবে প্রত্যাশা করবে। |
7-47 : আর যখন তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া হবে জাহান্নামবাসীদের প্রতি, তখন তারা বলবে: ‘আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এই যালিম লোকদের সাথি করোনা।’ |
7-48 : আরাফবাসী (জাহান্নামের) যেসব লোককে লক্ষণ দেখে চিনবে তাদের ডেকে বলবে: ‘তোমাদের দল এবং তোমাদের অহংকার তোমাদের কোনো কাজে এলোনা।’ |
7-49 : এরা কি তারা নয় যাদের সম্পর্কে তোমরা শপথ করে বলতে, আল্লাহ এদের প্রতি দয়া করবেন না। অথচ তাদেরকেই বলা হয়েছে: ‘তোমরা দাখিল হও জান্নাতে, তোমাদের কোনো ভয়ভীতিও নেই আর দুঃখ দুশ্চিন্তাও নেই।’ |
7-50 : জাহান্নামবাসী জান্নাতবাসীকে ডেকে বলবে: ‘আমাদের দিকে কিছু পানি ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে কিছু দাও।’ তখন তারা বলবে: ‘‘আল্লাহ এদুটি জিনিসই হারাম করে দিয়েছেন কাফিরদের জন্যে, |
7-51 : যারা তাদের দীনকে খেল তামাশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতারিত করে রেখেছিল।’’ সুতরাং আজ আমরা তাদের ভুলে থাকবো, যেভাবে তারা (দুনিয়ার জীবনে) তাদের এই দিনের সাক্ষাতকে ভুলে থেকেছিল এবং যেভাবে তারা আমাদের আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। |
7-52 : আমরা তাদের এমন একটি কিতাব পৌঁছিয়েছিলাম, যা ছিলো পূর্ণ জ্ঞানের বিশদ ব্যাখ্যা এবং হিদায়াত ও রহমত বিশ্বাসীদের জন্যে। |
7-53 : তারা কি এর পরিণামের অপেক্ষায় আছে? যেদিন তার পরিণামকাল এসে উপস্থিত হবে সেদিন সেটিকে ভুলে থাকা লোকেরা বলবে: ‘আমাদের কাছে আমাদের প্রভুর রসূলরা সত্যবার্তা নিয়ে এসেছিলেন, এখন শাফায়াতকারী পাওয়া যাবে কি, যারা আমাদের জন্যে শাফায়াত করবে? অথবা আমাদের দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হোক। আমরা অবশ্যি এতোদিন যা আমল করতাম তার চাইতে ভিন্নতর আমল করবো।’ এরা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করে এসেছে এবং তারা যেসব মিথ্যা রচনা করেছিল সবই উধাও হয়ে গেছে। |
7-54 : তোমাদের প্রভু তো তিনি, যিনি মহাকাশ এবং এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয়টি কালে, অতপর সমাসীন হয়েছেন আরশের উপর। তিনি দিনকে ঢেকে দেন রাত দিয়ে। তারা পরস্পরকে অবিরামভাবে দ্রুত অনুসরণ করে। সূর্য, চাঁদ এবং তারকারাজি তাঁরই নির্দেশের অধীন। সাবধান, সৃষ্টিও তাঁর, নির্দেশও তাঁর। মহাকল্যাণের মালিক আল্লাহ্ই মহাজগতের প্রভু। |
7-55 : তোমাদের প্রভুকে ডাকো বিনয়ের সাথে এবং গোপনে। সীমালংঘনকারীদের তিনি পছন্দ করেন না। |
7-56 : এসলাহের পর পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করোনা। তাঁকে ডাকো ভয় এবং আশা নিয়ে। অবশ্যি আল্লাহর রহমত কল্যাণপরায়ণদের খুব নিকটে। |
7-57 : তিনি তাঁর রহমত বর্ষণের আগে সুসংবাদ বাহক হিসেবে বাতাস পাঠান, অতপর তা যখন ঘন মেঘ বইয়ে আনে, তখন আমরা তা মরা শুকনো জমিনের দিকে পাঠাই এবং সেখানে আমরা নাযিল করি (আমাদের রহমতের) পানি (বৃষ্টি)। অতপর তা থেকে আমরা উৎপন্ন করি সব ধরণের ফল - ফসল। এভাবেই আমরা জীবন দান করে বের করে আনবো মৃতদেরকে। আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে। |
7-58 : উত্তম ভূমি থেকে তার প্রভুর অনুমতিক্রমে ফসল উৎপন্ন হয়, আর নিকৃষ্ট ভূমিতে প্রচন্ড পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জন্মায়না। এভাবেই আল্লাহ শোকরগুজার লোকদের জন্যে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেন তাঁর আয়াত। |
7-59 : আমরা নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার কওমের কাছে। সে তাদের বলেছিল: হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই। আমি তোমাদের উপর এক মহাদিনের আযাবের আশংকা করছি। |
7-60 : তখন তার কওমের নেতারা বলেছিল: ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, তুমি সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছো।’ |
7-61 : সে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! আমার মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি নেই, বরং আমি রাববুল আলামিনের একজন রসূল। |
7-62 : আমি তো তোমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি আমার প্রভুর বার্তা। আমি তোমাদের কল্যাণকামী। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে সেসব বিষয় জানি, যা তোমরা জানোনা। |
7-63 : তোমরা কি তাজ্জব হচ্ছো যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে একটি উপদেশ এসেছে - যাতে করে সে তোমাদের সতর্ক করতে পারে এবং যেনো তোমরা সতর্ক হও আর যেনো তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও?’’ |
7-64 : কিন্তু তারা তাকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে আমরা তাকে আর তার সাথে যারা নৌযানে উঠেছিল তাদেরকে নাজাত দেই, আর ডুবিয়ে দেই তাদেরকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের আয়াত। মূলত, তারা ছিলো একটি অন্ধ কওম। |
7-65 : আমরা আদ জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদেরই ভাই হুদকে। সে তাদের বলেছিল: ‘হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত - আনুগত্য করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই। তোমরা কি সতর্ক হবেনা?’ |
7-66 : তার জাতির প্রধানরা যারা ছিলো কাফির তারা বলেছিল: ‘আমাদের মতে তুমি অবশ্যি বোকামিতে নিমজ্জিত রয়েছো এবং আমাদের ধারণা, তুমি একজন মিথ্যাবাদী।’ |
7-67 : সে বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! আমার মধ্যে কোনো বোকামি নেই, বরং আমি রাববুল আলামিনের পক্ষ থেকে একজন রসূল। |
7-68 : আমি তো তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি, আর আমি তোমাদের জন্যে একজন বিশ্বস্ত কল্যাণকামী। |
7-69 : তোমরা কি তাজ্জব হচ্ছো যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে একটি উপদেশ এসেছে - যাতে করে সে তোমাদের সতর্ক করতে পারে? স্মরণ করো যখন নূহের কওমকে (ধ্বংস করার) পর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং দৈহিক গঠনে তোমাদেরকে অধিক হৃষ্টপুষ্ট ও বলিষ্ঠ করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহের কথা স্মরণ করো, যাতে করে তোমরা সফলতা অর্জন করো।’’ |
7-70 : তারা বলেছিল: ‘তুমি কি আমাদের কাছে এজন্যে এসেছো যে, আমরা কেবল এক আল্লাহর ইবাদত - আনুগত্য করবো আর আমাদের পূর্ব পুরুষরা যাদের ইবাদত করতো তাদের পরিত্যাগ করবো? সুতরাং তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তবে আমাদেরকে যে জিনিসের ওয়াদা দিচ্ছো তা এনে দেখাও।’ |
7-71 : সে বলেছিল: ‘তোমাদের উপর তোমাদের প্রভুর শাস্তি এবং গজব আপতিত হবেই। তোমরা কি আমার সাথে এমন কতগুলো নাম সম্পর্কে বিবাদ করছো, যে নামগুলো রেখেছো তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষরা? আল্লাহ তো সেগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ পাঠাননি। সুতরাং অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকলাম।’ |
7-72 : অবশেষে আমরা তাকে (হুদকে) এবং তার সাথিদেরকে আমাদের রহমতে নাজাত দিয়েছি, আর শেকড় কেটে দিয়েছি তাদের, যারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের আয়াত এবং যারা মুমিন ছিলনা। |
7-73 : আর আমরা সামুদ জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম তাদের ভাই সালেহ্কে। সে তাদের বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত (আনুগত্য, দাসত্ব ও উপাসনা) করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। আল্লাহর এই উটনি তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন। এটিকে আল্লাহর জমিনে চরে খেতে দাও। কোনো বদ নিয়্যতে এটিকে স্পর্শও করোনা, করলে তোমাদের পাকড়াও করবে বেদনাদায়ক আযাব। |
7-74 : স্মরণ করো, আদ জাতির পরে তিনি তোমাদেরকে (তাদের) স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং এমনভাবে তোমাদেরকে ভূ - খন্ডে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ করছো। আর পাহাড় কেটে বানাচ্ছো ঘর। অতএব তোমরা (তোমাদের প্রতি) আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো এবং ভূ - খন্ডে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িয়োনা।’’ |
7-75 : তার কওমের দাম্ভিক নেতারা দুর্বল করে রাখা ঈমানদারদের বলেছিল: ‘তোমরা কি এটা জানো যে, সালেহ তার প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত?’ তারা বলেছিল: ‘হ্যাঁ, তাঁকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে, আমরা তাতে বিশ্বাসী।’ |
7-76 : তখন দাম্ভিকরা বলেছিল: ‘তোমরা যা বিশ্বাস করো, আমরা তা অস্বীকার করি।’ |
7-77 : অতপর তারা সেই উটনিকে হত্যা করে, আর অবাধ্য হয় আল্লাহর আদেশের এবং বলে: ‘হে সালেহ্! তুমি যদি একজন রসূলই হয়ে থাকো, তবে যে শাস্তির ভয় আমাদের দেখিয়েছো তা নিয়ে আসো।’ |
7-78 : তারপর তাদের পাকড়াও করে এক প্রচন্ড ভূমিকম্প। ফলে তাদের সকাল হয় নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায়। |
7-79 : তখন সে (সালেহ্) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলেছিল: ‘হে আমার কওম! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং তোমাদের জন্যে কল্যাণকর নসিহত করেছিলাম, কিন্তু তোমরা কল্যাণকামীদের পছন্দ করোনা।’ |
7-80 : আর লুতকেও (আমরা পাঠিয়েছিলাম একটি জাতির কাছে)। সে তার কওমকে বলেছিল: ‘‘তোমরা কি এমন কুকর্মেই লিপ্ত থাকবে, যে কর্মে তোমাদের আগে জগতের কোনো লোকই লিপ্ত হয়নি? |
7-81 : তোমরা যৌন তৃপ্তির জন্যে নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছো। তোমরা তো এক চরম সীমালংঘনকারী জাতি।’’ |
7-82 : জবাবে তার কওম কেবল একথাই বলেছিল: ‘এদেরকে তোমাদের জনবসতি থেকে বের করে দাও, এরা বড় পাক পবিত্র থাকতে চায়।’ |
7-83 : পরিণতিতে আমরা তাকে (লুতকে) এবং তার পরিবার পরিজনকে নাজাত দেই তার স্ত্রীকে ছাড়া, কারণ সে (মহিলা) ছিলো পেছনে থাকাদেরই একজন। |
7-84 : আর তাদের উপর আমরা (পাথর) বর্ষণ করেছিলাম ভীষণ বর্ষণ। ফলে অপরাধীদের পরিণতি কী রকম হয়েছিল লক্ষ্য করে দেখো। |
7-85 : আর মাদায়ানের অধিবাসীদের কাছে আমরা পাঠিয়েছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে। সে তাদের বলেছিল: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত করো, তোমাদের জন্যে তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে, অতএব মাপ ও ওজন ঠিকঠিকভাবে পূর্ণ করে দেবে। মানুষকে তাদের প্রাপ্য জিনিস কম দেবেনা এবং শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হবার পর দেশে ফাসাদ (বিশৃংখলা) সৃষ্টি করবেনা। এটাই তোমাদের জন্যে কল্যাণের পথ যদি তোমরা মুমিন হও। |
7-86 : যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি ত্রাস সৃষ্টি করার জন্যে তোমরা পথে পথে বসে থেকোনা, তাদেরকে আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করোনা এবং তাতে বক্রতা সন্ধান করোনা। স্মরণ করো, যখন তোমরা সংখ্যায় ছিলে গুটি কয়েক, তারপর আল্লাহ তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে দিয়েছিলেন। আরো লক্ষ্য করে দেখো, অতীতে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কী পরিণতি হয়েছিল? |
7-87 : আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি তার প্রতি যদি তোমাদের একটি দল ঈমান আনে এবং আরেকটি দল যদি ঈমান না এনে থাকে, তবে অপেক্ষা করো আমাদের মাঝে আল্লাহ ফায়সালা করে না দেয়া পর্যন্ত। প্রকৃতপক্ষে তিনিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।’’ |
7-88 : (তার বক্তব্যের জবাবে) তার কওমের অহংকারী নেতারা বলেছিল: ‘হে শুয়াইব! আমরা তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবো, অথবা তোমাদের ফিরিয়ে আনবো আমাদের আদর্শে।’ সে (শুয়াইব) বলেছিল: ‘‘আমরা যদি এটাকে ঘৃণা করি, তবু? |
7-89 : তোমাদের ধর্মের আদর্শ থেকে আল্লাহ আমাদের নাজাত দেয়ার পর আবার যদি আমরা তাতে ফিরে যাই, তবে তো আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করবো। আমরা তাতে ফিরে যেতে পারিনা, তবে আমাদের প্রভু চাইলে ভিন্ন কথা। আমাদের প্রভুর জ্ঞান সব কিছু পরিব্যাপ্ত। আমরা তাওয়াক্কুল করেছি আল্লাহর উপর। হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের ও আমাদের কওমের মাঝে হকভাবে ফায়সালা করে দাও, তুমিই সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।’’ |
7-90 : তার কওমের কাফির নেতারা (জনগণকে) বলেছিল: ‘তোমরা যদি শুয়াইবের অনুসরণ করো, তবে অবশ্যি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ |
7-91 : অতএব তাদের পাকড়াও করে এক প্রচন্ড ভূমিকম্প। ফলে তাদের সকাল হয় নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায়। |
7-92 : যারা শুয়াইবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারা যেনো কখনো সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শুয়াইবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারাই হয় ক্ষতিগ্রস্ত। |
7-93 : ফলে সে (শুয়াইব) তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে: ‘হে আমার কওম! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্যে কল্যাণের নসিহত করেছি। সুতরাং এখন আমি কেমন করে কুফুরিকে আঁকড়ে ধরে থাকা লোকদের জন্যে আক্ষেপ করি?’ |
7-94 : আমরা যখনই কোনো জনপদে কোনো নবী পাঠিয়েছি, সেখানকার অধিবাসীদের দারিদ্র ও দুঃখ কষ্টে ফেলেছি, যাতে করে তারা বিনয়াবনত হয়। |
7-95 : তারপর আমরা দুরাবস্থাকে ভালো অবস্থায় বদল করে দেই, এমনকি তারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে: ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা অনেক কষ্ট ও স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করেছিল।’ তখন আকস্মিক আমরা তাদের পাকড়াও করি এবং তারা টেরও পায়না। |
7-96 : জনপদবাসী যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে অবশ্যি আমরা তাদের জন্যে খুলে দিতাম আসমান ও জমিনের বরকতের দ্বার। কিন্তু তারা (নবীদের শিক্ষা) প্রত্যাখ্যান করে এবং আমরাও তাদের কর্মকান্ডের জন্যে তাদের পাকড়াও করি। |
7-97 : জনপদের অধিবাসীরা কি এই ভয় রাখেনা যে, আমার শাস্তি তাদের উপর এসে পড়তে পারে রাত্রে যখন তারা থাকবে ঘুমন্ত? |
7-98 : অথবা শহরবাসীরা কি এই ভয়ও রাখেনা যে, তাদের উপর আমার শাস্তি এসে পড়বে সকাল বেলা আর তারা থাকবে খেলায় নিরত? |
7-99 : তারা কি ভয় পায়না আল্লাহর কৌশলকে? আল্লাহর কৌশলকে কেউই নিরাপদ মনে করেনা ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা ছাড়া। |
7-100 : কোনো জনপদে তার অধিবাসীদের ধ্বংস হবার পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি এই দিশাটাও পায়না যে, আমরা চাইলে তাদের পাপের জন্যে তাদের শাস্তি দিতে পারি? অথবা মোহর মেরে দিতে পারি তাদের অন্তরে, যার ফলে তারা আর শুনবেনা? |
7-101 : সেই সব জনপদের কিছু সংবাদ আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করেছি। মূলত, তাদের কাছে এসেছিল তাদের রসূলরা সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে, কিন্তু যা তারা আগে প্রত্যাখ্যান করেছিল তার প্রতি আর তারা ঈমান আনার ছিলনা। এভাবেই আল্লাহ মোহর মেরে দেন কাফিরদের হৃদয়ে। |
7-102 : আমরা অধিকাংশকেই অংগীকার পালনকারী পাইনি। আমরা তাদের অধিকাংশকেই পেয়েছি ফাসিক (সীমালংঘনকারী পাপাচারী)। |
7-103 : তাদের পরে আমরা মূসাকে পাঠিয়েছিলাম আমাদের নিদর্শনসমূহ নিয়ে ফেরাউন এবং তার পারিষদবর্গের কাছে। কিন্তু তারা সেগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এখন দেখো, সেসব ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কী হয়েছিল? |
7-104 : মূসা বলেছিল: ‘‘হে ফেরাউন! আমি মহাজগতের প্রভুর পক্ষ থেকে একজন রসূল। |
7-105 : সত্যকথা হলো, আমি আল্লাহর ব্যাপারে সত্য ছাড়া বলবোনা। আমি তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছি, সুতরাং বনি ইসরাঈলকে আমার সাথে যেতে দাও।’’ |
7-106 : তখন সে বলেছিল: ‘তুমি কোনো নিদর্শন যদি এনেই থাকো, সত্যবাদী হলে তা প্রমাণ করো।’ |
7-107 : সে (মূসা) তখন তার লাঠি নিক্ষেপ করে, আর সাথে সাথে তা জাজ্জ্বল্যমান অজগর হয়ে যায়। |
7-108 : আর সে তার (বগলে হাত ঢুকিয়ে) হাত বের করলো, তক্ষুনি তা দর্শকদের জন্যে ধবধবে সাদা হয়ে গেলো। |
7-109 : ফেরাউনের কওম প্রধানরা বললো: ‘‘এতো অবশ্যি এক পন্ডিত ম্যাজেসিয়ান। |
7-110 : সে চায় তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে খারিজ করে (তাড়িয়ে) দিতে। এখন বলো, তোমরা কী পরামর্শ দিচ্ছো?’’ |
7-111 : তারা বললো: ‘‘তাকে এবং তার ভাইকে সামান্য অবকাশ দিন আর এদিকে (ম্যাজেসিয়ানদের ডেকে আনতে) শহর গুলোতে লোক পাঠিয়ে দিন। |
7-112 : তারা দক্ষ ম্যাজেসিয়ানদের আপনার কাছে এনে হাজির করবে।’’ |
7-113 : ম্যাজেসিয়ানরা ফেরাউনের কাছে এসেই বললো: ‘আমরা যদি জয়ী হই আমাদের জন্যে পুরস্কার থাকবে তো?’ |
7-114 : সে বললো: হ্যাঁ (অবশ্যি থাকবে) তাছাড়া তোমরা আমার নিকটের লোকদের অন্তরভুক্ত হবে। |
7-115 : তারা বললো: ‘মূসা! আপনি আগে নিক্ষেপ করবেন, নাকি আমরাই হবো পয়লা নিক্ষেপকারী?’ |
7-116 : সে বললো: ‘তোমরাই (আগে) নিক্ষেপ করো।’ তারপর তারা (দড়ি এবং লাঠি) নিক্ষেপ করলো, লোকদের চোখে ধাঁধাঁ সৃষ্টি করলো এবং তাদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করে দিলো। আসলেই তারা বড় রকমের ম্যাজিক দেখিয়েছিল। |
7-117 : তখন আমরা মূসার কাছে অহি করলাম: ‘তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।’ সাথে সাথে সেটি তাদের মিথ্যা সৃষ্টিগুলো গিলে ফেলতে থাকলো। |
7-118 : ফলে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো এবং বাতিল প্রমাণিত হয়ে গেলো তাদের কর্মকান্ড। |
7-119 : সেখানেই তারা পরাস্ত হয়ে গেলো এবং হয়ে গেলো অধ:পতিত লাঞ্ছিত। |
7-120 : তখন ম্যাজেসিয়ানরা সাজদায় লুটিয়ে পড়লো। |
7-121 : তারা বললো: আমরা ঈমান আনলাম রাববুল আলামিনের প্রতি, |
7-122 : যিনি মূসা এবং হারূণের রব। |
7-123 : ফেরাউন বললো: ‘‘আমার অনুমতি ছাড়াই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? আসলে এটা একটা ষড়যন্ত্র। তোমরা (উভয় পক্ষ মিলে) এই ষড়যন্ত্র এঁটেছো নগরবাসীকে তাদের নগর থেকে বের করে দেয়ার জন্যে। অচিরেই তোমরা এ কাজের পরিণাম দেখতে পাবে। |
7-124 : আমি বিপরীত দিক থেকে তোমাদের হাত ও পা কেটে দেবো, তারপর তোমাদের সবাইকে করবো শূলবিদ্ধ।’’ |
7-125 : তখন তারা বলেছিল: ‘‘আমরা অবশ্যি ফিরে যাবো আমাদের প্রভুর কাছে। |
7-126 : তুমি তো কেবল একারণেই আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছো যে, আমরা আমাদের প্রভুর নির্দেশের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের সামনে প্রমাণিত হয়েছে।’’ (তারা দোয়া করেছিল:) ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে সবর করার শক্তি দাও এবং আমাদের ওফাত দান করো মুসলিম হিসেবে।’ |
7-127 : ফেরাউন কওমের প্রধানরা বললো: ‘(হে ফেরাউন!) আপনি কি মূসা এবং তার কওমকে দেশে ফাসাদ সৃষ্টির আর আপনাকে ও আপনার ইলাহ্দের ত্যাগ করার জন্যে সুযোগ দিয়ে রাখবেন?’ সে বললো: ‘অচিরেই আমরা কতল করবো তাদের পুত্রদেরকে আর জীবিত রাখবো কন্যা সন্তানদের। আমরা তাদের উপর প্রবল শক্তিধর।’ |
7-128 : মূসা তার কওমকে বললো: ‘তোমরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো এবং সবর করো। নিশ্চয়ই এ বিশ্বের মালিক আল্লাহ্ই। তিনি তাঁর দাসদের যাকে চাইবেন এর উত্তরাধিকারী করবেন। শুভ পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্যেই।’ |
7-129 : তারা বললো: ‘তুমি আমাদের কাছে আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি এবং তুমি আসার পরেও।’ সে বললো: ‘অচিরেই তোমাদের প্রভু তোমাদের দুশমনকে হালাক করে দেবেন এবং পৃথিবীতে তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কেমন আমল করো।’ |
7-130 : আমরা ফেরাউনের অনুসারীদের দুর্ভিক্ষ আর ফসল হানির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছি যাতে করে তারা উপলব্ধি করে। |
7-131 : যখনই তাদের কল্যাণ হতো তারা বলতো, আমরা এরই হকদার। আর যখনই তাদের স্পর্শ করতো কোনো অকল্যাণ, তখনই মূসা ও তার সাথিদেরকে তারা অলক্ষুণে গণ্য করতো। তাদের অকল্যাণ তো আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বুঝ - জ্ঞান রাখেনা। |
7-132 : তারা বলতো, আমাদের জাদু করার জন্যে তুমি যে নিদর্শনই দেখাওনা কেন, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো না। |
7-133 : আমরা তাদের প্রতি (নিদর্শন হিসেবে) পাঠিয়েছিলাম তুফান (প্লাবন), পঙ্গপাল, উকুন, ব্যঙ এবং রক্ত। এগুলো ছিলো বিস্তারিত ও স্পষ্ট নিদর্শন। কিন্তু তারা অহংকার করে। মূলত তারা ছিলো এক অপরাধী কওম। |
7-134 : যখনই তাদের উপর এর কোনো একটি শাস্তি আসতো, তারা বলতো: ‘হে মূসা! তোমার প্রভুর কাছে আমাদের জন্যে দোয়া করো, তিনি তোমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (ঈমান আনলে আমাদের থেকে আযাব অপসারণ করার), এখন যদি সে অনুযায়ী তিনি আমাদের থেকে আযাব অপসারণ করেন, তবে অবশ্যি আমরা ঈমান আনবো এবং বনি ইসরাঈলকে তোমার সাথে যেতে দেবো।’ |
7-135 : যখনই আমরা তাদেরকে তাদের জন্যে নির্ধারিত কোনো একটি আযাব দূরীভূত করে দিয়েছি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে, তখনই তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। |
7-136 : ফলে, আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি এবং তাদের ডুবিয়ে দিয়েছি গভীর সমুদ্রে। কারণ, তারা আমাদের নিদর্শন সমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তা থেকে তারা ছিলো গাফিল। |
7-137 : তারপর সেই লোকদেরকে আমরা আমাদের বরকতপ্রাপ্ত ভূমির পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম, যাদেরকে রাখা হয়েছিল দূর্বল করে। আর এভাবেই বনি ইসরাঈল সম্পর্কে তোমার প্রভুর শুভ বাণী পূর্ণতা লাভ করে, কারণ তারা সবর অবলম্বন করেছিল। পক্ষান্তরে ফেরাউন ও তার কওম যেসব শিল্প ও স্থাপত্য নির্মাণ করেছিল, সেগুলো আমরা করে দিয়েছিলাম ধ্বংস। |
7-138 : বনি ইসরাঈলকে আমরা সমুদ্র পার করিয়ে দেই। পথিমধ্যে মূর্তিপূজায় নিরত একটি জাতির কাছে এসে তারা উপনীত হয়। তখন তারা মূসাকে বলে: ‘হে মূসা! আমাদেরকেও এদের ইলাহ্র (দেবতার) মতো ইলাহ্ বানিয়ে দাও।’ সে বললো: ‘তোমরা একটি জাহিল কওম।’ |
7-139 : (মূসা আরো বললো:) ‘এসব লোক যেসব কাজে জড়িত রয়েছে তা তো ধ্বংসপ্রাপ্ত হবেই আর তারা যা করছে সবই বাতিল।’ |
7-140 : সে আরো বলেছিল: ‘আমি কি তোমাদের জন্যে আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ্ খুঁজবো, অথচ তিনি তোমাদের মর্যাদাবান করেছেন জগতবাসীর উপর?’ |
7-141 : স্মরণ করো, আমরা তোমাদের নাজাত দিয়েছিলাম ফেরাউনের অনুসারীদের থেকে। তারা তোমাদের নির্যাতন করতো নিকৃষ্ট আযাব দিয়ে। তারা হত্যা করতো তোমাদের পুত্র সন্তানদের, আর জীবিত রাখতো তোমাদের নারীদের। তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এতে তোমাদের জন্যে ছিলো এক বিরাট পরীক্ষা। |
7-142 : স্মরণ করো, আমরা মূসাকে ত্রিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম এবং আরো দশ বাড়িয়ে দিয়ে তা পূর্ণ করেছিলাম। এভাবে তোমার প্রভুর নির্ধারিত সময়কাল তিনি চল্লিশ রাতে পূর্ণ করেন। মূসা বলেছিল তার ভাই হারূণকে: ‘আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার কওমে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবেনা।’ |
7-143 : মূসা যখন আমার মিকাতে (নির্ধারিত সময় ও স্থানে) উপস্থিত হয়েছিল, এবং তার প্রভু তার সাথে কথা বলেছিলেন, তখন সে বললো: ‘আমার প্রভু! আমাকে দেখা দাও, আমি তোমাকে দেখবো।’ তিনি বললেন: ‘তুমি কখনো আমাকে দেখতে পাবেনা। তবে তুমি পাহাড়ের প্রতি তাকাও, পাহাড় যদি তার স্বস্থানে অটল থাকে, তাহলেই তুমি আমাকে দেখবে।’ তারপর তোমার প্রভু যখন পাহাড়ের দিকে তাজাল্লি (জ্যোতি) প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিলো এবং মূসা পড়ে গেলো সংজ্ঞাহীন হয়ে। তারপর যখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেলো, তখন বললো: ‘মহাপবিত্র ত্রুটিমুক্ত তুমি, আমি অনুতপ্ত হয়ে তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমিই বিশ্বাসীদের প্রথম।’ |
7-144 : তিনি বললেন: ‘হে মূসা! আমি তোমাকে মানব সমাজের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি আমার রিসালাত প্রদান করে এবং তোমার সাথে আমার কথা বলার মাধ্যমে। সুতরাং আমি তোমাকে যা দিয়েছি তা আঁকড়ে ধরো এবং শোকরগুজারদের অন্তরভুক্ত হও। |
7-145 : আমরা তার জন্যে ফলকে সব বিষয়ের উপদেশ এবং সব বিষয়ের সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি। সুতরাং এগুলো শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার কওমকে এগুলোর উত্তম নির্দেশাবলি গ্রহণ করার নির্দেশ দাও। আমি অচিরেই তোমাদেরকে ফাসিকদের আবাস দেখাবো। |
7-146 : যারা অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করে বেড়ায় আমি অচিরেই আমার আয়াত থেকে তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবো। তারা প্রতিটি নিদর্শন দেখলেও তাতে বিশ্বাস করবেনা, তারা সঠিক পথ দেখলেও সেটিকে (নিজেদের পথ) হিসেবে গ্রহণ করবেনা। কিন্তু ভ্রান্ত পথ দেখলেই সেটাকে চলার পথ হিসেবে গ্রহণ করবে। এর কারণ তারা আমাদের আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সে ব্যাপারে তারা গাফিল। |
7-147 : যারা আমাদের আয়াত এবং আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছে, নিষ্ফল হয়ে গেছে তাদের সমস্ত আমল। তারা যা করে তার বাইরে তাদেরকে কোনো প্রতিফল (শাস্তি) দেয়া হবেনা। |
7-148 : মূসার কওম তার অনুপস্থিতিতে তাদের অলংকার দিয়ে একটি গো - বাছুরের দেহাবয়ব তৈরি করে, যার থেকে হাম্বা ধ্বনি বের হতো। তারা কি দেখেনি যে, সেটি তাদের সাথে কথা বলেনা এবং তাদের পথও দেখায়না? তারা সেটিকে (দেবতা হিসেবে) গ্রহণ করে। আসলে তারা ছিলো যালিম। |
7-149 : তারা যখন অনুতপ্ত হলো এবং দেখলো যে, তারা বিপথগামী হয়ে গেছে, তখন তারা বললো: ‘আমাদের প্রভু যদি আমাদের প্রতি রহম না করেন এবং আমাদের ক্ষমা করে না দেন, তবে অবশ্যি আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বো।’ |
7-150 : মূসা যখন ক্ষুদ্ধ হয়ে তার কওমের কাছে ফিরে এলো, বললো: ‘তোমরা আমার অনুপস্থিতিতে আমার চরম নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করেছো। তোমাদের প্রভুর আদেশের আগেই তোমরা তাড়াহুড়া করলে?’ এবং সে ফলকগুলো ফেলে দেয় এবং তার ভাইয়ের চুল ধরে নিজের দিকে টেনে আনে। সে (তার ভাই হারূণ) বললো: ‘হে আমার সহোদর! লোকেরা আমাকে দুর্বল করে রেখেছিল এবং আমাকে প্রায় হত্যাই করে ফেলেছিল। তুমি আমার সাথে এমন আচরণ করোনা যাতে শত্রুরা আনন্দিত হয় এবং আমাকে যালিম কওমের অন্তরভুক্ত করোনা।’ |
7-151 : সে (মূসা) বললো: ‘আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার ভাইকেও, আর আমাদের দাখিল করো তোমরা রহমতের মধ্যে। তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমওয়ালা।’ |
7-152 : যারা গো - বাছুরকে দেবতা হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের উপর এই দুনিয়ার জীবনেই তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে আপতিত হবে গজব আর যিল্লতি। এভাবেই আমরা শাস্তি দিয়ে থাকি মিথ্যা রচনাকারীদের। |
7-153 : যারা মন্দ কাজ করার পর অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসে (তওবা করে) এবং ঈমানের ভিত্তিতে জীবন যাপন করে, নিশ্চয়ই তোমার প্রভু এরপরও পরম ক্ষমাশীল দয়াময়। |
7-154 : যখন থেমে গেলো মূসার রাগ, তখন সে তুলে নিলো ফলকগুলো। যারা তাদের প্রভুর জন্যে একমুখী হয়ে যায় তাদের জন্যে সেই নোস্খাগুলোতে লিখিত ছিলো হিদায়াত ও রহমত। |
7-155 : মূসা তার কওম থেকে সত্তর ব্যক্তিকে আমার নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আসার জন্যে মনোনীত করে। যখন সেখানে তাদেরকে প্রচন্ড ভূমিকম্প পাকড়াও করলো, মূসা ফরিয়াদ করলো: ‘‘আমার প্রভু! তুমি চাইলে (তো) এখানে আসার আগেই তাদের মেরে ফেলতে পারতে এবং আমাকেও। আমাদের মধ্যকার নির্বোধ লোকদের কর্মকান্ডের জন্যে কি তুমি আমাদের ধ্বংস করে দেবে? এটা তো তোমার একটা পরীক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়। এর দ্বারা তুমি যাকে চাও গোমরাহ করে দাও আর যাকে চাও সঠিক পথ দেখাও। তুমিই আমাদের অলি। তাই আমাদের ক্ষমা করে দাও এবং রহম করো আমাদের প্রতি। তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল। |
7-156 : আমাদের জন্যে এই দুনিয়াতে কল্যাণ লিখে দাও এবং আখিরাতেও। আমরা তোমার দিকেই পথ ধরলাম।’’ তার প্রভু বললেন: আমার শাস্তি যাকে আমি চাই দিয়ে থাকি, কিন্তু আমার রহমত সব কিছুর উপর পরিব্যাপ্ত। তা আমি বিশেষভাবে লিখে দেবো সেইসব লোকদের জন্যে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত পরিশোধ করে দেয় এবং যারা ঈমান রাখে আমার আয়াতের প্রতি। |
7-157 : যারা ইত্তেবা (অনুসরণ) করবে আমার এই রসূল উম্মি নবীর, যার উল্লেখ তারা লিপিবদ্ধ পায় তাদের কাছে রক্ষিত তাওরাত এবং ইনজিলে, সে তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ দেয়, মন্দ কাজ থেকে বারণ করে, তাদের জন্যে সব ভালো জিনিস হালাল করে, সব নোংরা অপবিত্র জিনিস হারাম করে এবং তাদেরকে মুক্ত করে সেইসব গুরুভার ও শৃংখল থেকে, যেগুলো তাদের উপর বোঝা হয়ে চেপেছিল। অতএব যারা তার প্রতি ঈমান আনবে, তাকে সম্মান প্রদর্শন করবে, তাকে সাহায্য করবে এবং সেই নূর (কুরআন) - এর ইত্তেবা করবে, যা নাযিল করা হয়েছে তার সাথে, তারাই হবে সফলকাম। |
7-158 : (হে মুহাম্মদ!) বলো: ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সবার প্রতি সেই মহান আল্লাহর রসূল, যিনি মহাকাশ এবং এই পৃথিবীর কর্তৃত্বের মালিক। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই। তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু। সুতরাং তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর উম্মি নবীর প্রতি, যে ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর বাণীর প্রতি। তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, অবশ্যি সঠিক পথ পাবে।’ |
7-159 : মূসার কওমের মধ্যে এমন একদল লোকও আছে যারা অন্যদেরকে সত্যের ভিত্তিতে পথ দেখায় এবং তার ভিত্তিতেই বিচার করে। |
7-160 : আমরা তাদের বিভক্ত করেছি বারো গোত্রে। মূসার কওম যখন তার কাছে পানি সমস্যার সমাধান করার আবেদন করেছিল, আমরা তাকে অহি করে নির্দেশ দিলাম, এই পাথরটিতে তোমার লাঠি দিয়ে আঘাত করো। ফলে (তার আঘাতের সাথে সাথে) তা থেকে বারোটি ঝরণাধারা উৎসারিত হয়ে গেলো। প্রত্যেক গোত্রের লোকেরা তাদের নিজ নিজ পানির জায়গা চিনে নিলো। তাছাড়া আমরা মেঘমালা দিয়ে তাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছিলাম এবং তাদের জন্যে নাযিল করেছিলাম মান্না এবং সালওয়া। (তাদের বলেছিলাম:) আমরা তোমাদের যে ভালো জীবিকা দিয়েছি তা থেকে খাও। কিন্তু, তারা আমাদের প্রতি যুলুম করেনি, যুলুম করেছিল তাদের নিজেদের প্রতিই। |
7-161 : তাদের বলা হয়েছিল: তোমরা এই বসতিতে বসবাস করো, সেখানে যেখান থেকে ইচ্ছা খাও এবং বলো, হিত্তাতুন (আমাদের ক্ষমা করো) আর নত শিরে দাখিল হও (সদর) গেইট দিয়ে, তাহলে আমরা তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবো। কল্যাণপরায়ণদের আমরা অচিরেই আরো অধিক দান করবো। |
7-162 : কিন্তু তাদের মধ্যে যারা যুলুম করেছিল, তাদের যা বলা হয়েছিল সেকথা বদল করে তারা অন্য কথা বললো। ফলে আমরা আসমান থেকে তাদের জন্যে নাযিল করেছিলাম শাস্তি তাদের যুলুমের কারণে। |
7-163 : তাদের জিজ্ঞাসা করো সেই বসতি সম্পর্কে যাদের অবস্থান ছিলো সাগরের পাড়েই। সেখানে তারা শনিবারে সীমালংঘন করতো। শনিবার উদযাপনের দিন মাছ পানির উপরিভাগে ভেসে তাদের কাছে আসতো। যেদিন তারা শনিবার উদযাপন করতো না, সেদিন তারা তাদের কাছে আসতোনা। এভাবে আমরা তাদের পরীক্ষা করেছিলাম তাদের ফাসেকির কারণে। |
7-164 : স্মরণ করো, তাদের একদল বলেছিল, তোমরা এমন লোকদের কেন উপদেশ দাও আল্লাহ যাদের ধ্বংস করে দেবেন, কিংবা কঠিন আযাব দেবেন? তারা বলেছিল: ‘তোমাদের প্রভুর কাছে দায়িত্ব মুক্তি লাভের জন্যে এবং যাতে করে তারা সতর্ক হয়।’ |
7-165 : তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গিয়েছিল, তখন আমরা তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করতো। আর কঠিন আযাব দিয়ে পাকড়াও করেছিলাম তাদেরকে যারা যুলুম করেছিল এবং ফাসেকিতে লিপ্ত ছিলো। |
7-166 : তারপর তারা তখন ঔদ্ধত্যের সাথে নিষেধ করা কাজ করতে শুরু করেছিল, তখন আমরা তাদের বলেছিলাম: ‘নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও।’ |
7-167 : স্মরণ করো, তোমার প্রভু তাদের বলেছিলেন, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত তাদের উপর এমন লোকদের পাঠাবেন, যারা তাদের কঠিন আযাব দিতে থাকবে। তোমার প্রভু অবশ্যি শাস্তি প্রদানে তৎপর এবং অবশ্যি তিনি পরম ক্ষমাশীল দয়াময়ও। |
7-168 : আমরা তাদেরকে বিশ্বময় বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে ছড়িয়ে রেখেছি। তাদের মধ্যে কিছু ভালো লোকও আছে, আবার ভিন্ন রকমও আছে। আমরা তাদের কল্যাণ এবং অকল্যাণ দুটো দিয়েই পরীক্ষা করেছি, যাতে করে তারা (মন্দ কাজ থেকে) ফিরে আসে। |
7-169 : এরপর অযোগ্য উত্তরসূরীরা একের পর এক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে কিতাবের ওয়ারিশ হয়। তারা (কিতাবের বিনিময়ে) তুচ্ছ দুনিয়ার সামগ্রী গ্রহণ করে এবং বলে, আমাদের ক্ষমা করা হবে। কিন্তু পরক্ষণে অনুরূপ সামগ্রী তাদের সামনে এলেই তারা তা আবার গ্রহণ করে। তাদের কাছ থেকে কি কিতাবের অংগীকার নেয়া হয়নি যে, তারা সত্য ছাড়া আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলবেনা। কিতাবে যা আছে তারা তো তা পাঠ করেই। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্যে আখিরাতের ঘরই উত্তম, তোমরা কি অনুধাবন করবেনা ? |
7-170 : যারা কিতাবকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরবে এবং সালাত কায়েম করবে, আমরা এসব পুন্যবানদের কর্মফল বিনষ্ট করিনা। |
7-171 : স্মরণ করো, আমরা তাদের উপর পর্বত তুলে ধরেছিলাম, সেটা ছিলো যেনো একটি ছাতা। তারা মনে করছিল, সেটি তাদের উপর ধপ করে পড়বে। তখন আমরা তাদের বলেছিলাম: আমরা তোমাদের যা (যে কিতাব) দিয়েছি, সেটি মজবুত করে আঁকড়ে ধরো এবং তাতে যা আছে তা চর্চা করো, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়াবান হবে। |
7-172 : স্মরণ করো, তোমার প্রভু বনি আদমের পিঠ থেকে তাদের বংশধরদের বের করেছিলেন এবং তাদের নিজেদের উপর নিজেদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন: ‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ তারা বলেছিল: ‘হাঁ অবশ্যি, আমরা সাক্ষী থাকলাম।’ এটা এজন্যে করেছিলাম যেনো কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পারো যে ‘আমরা এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম।’ |
7-173 : কিংবা যেনো একথা বলতে না পারো যে: ‘আমাদের পূর্ব পুরুষরাই তো আমাদের আগে শিরক করেছে, আমরা তো ছিলাম তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিল পথ অবলম্বনকারীদের জন্যে আমাদের হালাক করবে?’ |
7-174 : এভাবেই আমরা বিশদভাবে বর্ণনা করি আমাদের আয়াত, যাতে করে তারা (হিদায়াতের পথে) ফিরে আসে। |
7-175 : তাদের প্রতি তিলাওয়াত করো ঐ ব্যক্তির সংবাদ যাকে আমরা দিয়েছিলাম আমাদের আয়াত। কিন্তু সে তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং শয়তান তার পেছনে লাগে, আর সে হয়ে যায় পথভ্রষ্টদের একজন। |
7-176 : আমরা চাইলে এ (কিতাব) দিয়ে তাকে অনেক উপরে উঠাতে পারতাম, কিন্তু সে জমিনকে আঁকড়ে ধরে থাকলো এবং অনুসরণ করলো নিজের কামনা বাসনার। ফলে তার উপমা হলো কুকুর, যার উপর বোঝা চাপালেও সে জিহ্বা বের করে হাঁপায়, আর বোঝা না চাপালেও জিহ্বা বের করে হাঁপায়। এটা হলো ঐ লোকদের উপমা, যারা প্রত্যাখ্যান করে আমাদের আয়াত। তুমি এই কাহিনীটি তাদের শুনাও যাতে করে তারা চিন্তাভাবনা করে। |
7-177 : ঐ লোকদের উপমা যে কতো নিকৃষ্ট যারা প্রত্যাখ্যান করে আমাদের আয়াত এবং যুলুম করে তাদের নিজেদের প্রতি! |
7-178 : আল্লাহ যাকে সঠিক পথ দেখান, সে - ই পায় সঠিক পথ। আর তিনি যাদের বিপথগামী করেন তারাই আসল ক্ষতিগ্রস্ত। |
7-179 : আমরা জাহান্নামের জন্যেই তৈরি করেছি জিন ও ইনসানের অনেককে। তাদের অন্তর আছে, তবে তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করেনা। তাদের চোখ আছে, তবে তা দিয়ে তারা দেখেনা। তাদের কান আছে, তবে তা দিয়ে তারা শুনেনা। এরা হলো পশুর মতো, বরং তারা আরো অধিক বিভ্রান্ত এবং তারা অচেতন। |
7-180 : সুন্দরতম নামসমূহ আল্লাহর, সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামে ডাকো। যারা তাঁর নাম বিকৃত করে, তাদের ত্যাগ করো। অচিরেই তাদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেয়া হবে। |
7-181 : আমরা যাদের সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন লোকেরাও আছে যারা সত্যের ভিত্তিতে (মানুষকে) সঠিক পথ দেখায়, এবং তার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার করে। |
7-182 : যারা প্রত্যাখ্যান করে আমাদের আয়াত, আমরা ক্রমান্বয়ে তাদেরকে এমনভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো যে, তারা তা জানতেও পারবেনা। |
7-183 : আমি তাদের অবকাশ দেই, জেনে রাখো, আমার কৌশল অত্যন্ত মজবুত। |
7-184 : তারা কি চিন্তা - ফিকির করে দেখেনা যে, তাদের সাথি (মুহাম্মদ) কোনো উন্মাদ ব্যক্তি নয়। সে তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী! |
7-185 : তারা কি নজর করে দেখেনা মহাকাশ ও পৃথিবীর কর্তৃত্বের প্রতি, আল্লাহর সৃষ্টি করা প্রতিটি বস্ত্তর প্রতি এবং এটার প্রতি যে, হয়তো তাদের নির্ধারিত সময়টি নিকটবর্তী হয়েছে! এরপরে আর কোন্ কথাটির প্রতি তারা ঈমান আনবে? |
7-186 : আল্লাহ যাদের বিপথে পরিচালিত করেন, তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করার আর কেউ নেই এবং তিনি তাদেরকে তার অবাধ্যতার মধ্যে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে সুযোগ দেন। |
7-187 : তারা তোমার কাছে জানতে চাইছে, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে কবে? তুমি বলো: ‘এ বিষয়ের জ্ঞান কেবল আমার প্রভুর কাছেই রয়েছে। কেবল তিনিই সময় মতো তা প্রকাশ করবেন। সেটা হবে মহাকাশ এবং পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা। সেটা তোমাদের কাছে আসবে একেবারেই আকস্মিক।’ তারা এমনভাবে তোমাকে প্রশ্ন করছে যেনো এ বিষয়ে তুমি জানো। তুমি বলো: এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহর কাছে। তবে অধিকাংশ মানুষই জানেনা। |
7-188 : বলো: ‘আমার নিজের ভালো মন্দের ব্যাপারেও আমার কোনো হাত নেই, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। আমি যদি গায়েব জানতামই, তবে তো বেশি বেশি আমার নিজের কল্যাণ করতাম এবং কোনো অনিষ্টই আমাকে স্পর্শ করতোনা। আমি তো বিশ্বাসী লোকদের জন্যে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া আর কিছুই নই।’ |
7-189 : তিনি তোমাদের একজন মাত্র ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে যেনো সে তার কাছে শান্তি পায়। অতপর যখন সে তাকে ঝাপটে ধরে (সংগম করে) তখন সে হালকা গর্ভধারণ করে এবং তা নিয়েই চলা ফেরা করে। গর্ভ যখন ভারি হয়, তখন দুজনেই তাদের প্রভুর কাছে দোয়া করে: প্রভু! যদি আমাদেরকে একটি সালেহ্ (সৎ ও যোগ্য) সন্তান দান করো, তাহলে অবশ্যি আমরা শোকরগুজার হয়ে থাকবো। |
7-190 : তারপর তিনি যখন তাদের যোগ্য সন্তান দান করেন, তারা তাদেরকে যা দেয়া হয় সে সম্পর্কে আল্লাহর সাথে শরিক করে। কিন্তু তারা আল্লাহর সাথে যাদের শরিক করে, তিনি তাদের চাইতে অনেক উর্ধ্বে। |
7-191 : তারা কি আল্লাহর সাথে এমন বস্ত্তকে শরিক করে যারা কিছু সৃষ্টি করেনা, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট? |
7-192 : তারা না তাদেরকে সাহায্য করতে পারে, আর না নিজেদেরকে সাহায্য করতে পারে। |
7-193 : তোমরা তাদেরকে হিদায়াতের দিকে দাওয়াত দিলে তারা তোমাদের অনুসরণ করেনা। আসলে তাদের দাওয়াত দাও, আর না দিয়ে চুপ থাকো, দুটোই সমান। |
7-194 : তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকো তারা তো তোমাদের মতোই (আল্লাহর) দাস। সুতরাং তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে তাদের ডাকো আর তারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিক তো! |
7-195 : তাদের কি পা আছে, যা দিয়ে তারা চলে? নাকি তাদের হাত আছে, যা দিয়ে তারা ধরে? কিংবা তাদের কি চোখ আছে যা দিয়ে তারা দেখে? আর নাকি তাদের কান আছে যা দিয়ে তারা শুনে? বলো: ‘‘তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরিকদার বানিয়েছো তাদের ডাকো, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো এবং আমাকে অবকাশ দিয়োনা। |
7-196 : জেনে রাখো, আমার অলি হলেন আল্লাহ, যিনি কিতাব নাযিল করেছেন আর তিনি তো কেবল পুণ্যবানদের অলি হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেন।’’ |
7-197 : তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ডাকো, তারা তোমাদের সাহায্য করার সামর্থ রাখেনা, এমনকি তারা নিজেদেরকেও নিজেরা সাহায্য করতে পারেনা। |
7-198 : তুমি যদি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে আহবান করো, তারা কিছুই শুনবেনা। তুমি দেখবে তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, অথচ তারা কিছুই দেখেনা। |
7-199 : ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করো, উত্তম কাজের আদেশ দাও এবং যালিমদের উপেক্ষা করে চলো। |
7-200 : যদি শয়তানের কোনো কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি সব শুনেন, সব জানেন। |
7-201 : তাকওয়া (সতর্কতা) অবলম্বনকারী লোকদের শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয়, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং সাথে সাথে তাদের চোখ খুলে যায়। |
7-202 : অথচ তাদের সংগি সাথিরা তাদের টেনে নেয় বিপথগামীতার দিকে এবং তারা কোনো প্রকার কসুর করেনা। |
7-203 : তুমি যখন তাদের সামনে কোনো নিদর্শন পেশ করছোনা, তখন তারা বলে, তুমি নিজেই কেন একটি নিদর্শন বাছাই করে নিচ্ছনা? তুমি বলো: আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রভুর পক্ষ থেকে আমাকে অহি করা হয়। এই (কুরআন) তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে একটি অন্তরদৃষ্টির আলো, একটি হিদায়াত এবং একটি রহমত বিশ্বাসী লোকদের জন্যে। |
7-204 : যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা তার দিকে মনোযোগ আরোপ করে শুনো এবং নীরবতা অবলম্বন করো, যাতে করে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও। |
7-205 : তোমার প্রভুকে স্মরণ করো মনে মনে, বিনয়ের সাথে, অন্তরে ভয় নিয়ে, অনুচ্চ স্বরে, সকালে এবং সন্ধ্যায়। আর তুমি (এ ব্যাপারে) উদাসীনদের অন্তরভুক্ত হয়োনা। |
7-206 : তোমার প্রভুর কাছাকাছি যারা রয়েছে তারা তাঁর আনুগত্য ও দাসত্ব করার ব্যাপারে কোনো প্রকার অহংকার করেনা। তারা তাঁর তসবিহ্ করে এবং তাঁরই জন্যে সাজদা - অবনত থাকে। |