মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৭৫, রুকু সংখ্যা: ১০এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
8-1 : লোকেরা তোমার কাছে জানতে চাইছে আনফাল সম্পর্কে। তুমি বলো, আনফাল হলো আল্লাহর এবং রসূলের জন্যে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সংশোধন করে নাও তোমাদের অবস্থা। আর আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাঁর রসূলের, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো। |
8-2 : জেনে রাখো, প্রকৃত মুমিন হলো তারা, আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে যাদের অন্তর কেঁপে উঠে, আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করে শুনানো হলে যাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং যারা তাদের প্রভুর উপর তাওয়াক্কুল করে। |
8-3 : তারা হলো সেইসব লোক যারা সালাত কায়েম করে এবং আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে। |
8-4 : তারাই হক (প্রকৃত) মুমিন। তাদের প্রভুর কাছে তাদের জন্যে রয়েছে অনেক মর্যাদা, মাগফিরাত এবং সম্মানজনক রিযিক। |
8-5 : যেমন, তোমার প্রভু তোমাকে বের করেছেন তোমার ঘর থেকে সত্যের ভিত্তিতে। কিন্তু মুমিনদের মধ্যে কিছু লোক তা পছন্দ করেনি। |
8-6 : তারা তোমার সাথে বিতর্ক করছিল সত্য বিষয় নিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে যাবার পরও, যেনো তাদেরকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আর তারা তা তাকিয়ে দেখছি |
8-7 : স্মরণ করো, আল্লাহ্ তোমাদের ওয়াদা দিয়েছিলেন, দুটি দলের একটি দল তোমাদের আয়ত্তে আসবে, অথচ তোমরা চাইছিলে নিষ্কণ্টক দলটি তোমাদের আয়ত্তে আসুক। কিন্তু আল্লাহ্ চাইছিলেন তাঁর বাণীর মাধ্যমে সত্যকে বাস্তবায়িত করবেন এবং কেটে দেবেন কাফিরদের শেকড়। |
8-8 : যাতে করে তিনি সত্যকে সত্য হিসেবে আর বাতিলকে বাতিল হিসেবে প্রমাণিত করে দেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করছিল। |
8-9 : যখন তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছিলে, তখন তিনি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করে বলেছিলেন: ‘আমি তোমাদের সাহায্য করবো এক হাজার ফেরেশতা দিয়ে, তারা যাবে একের পর এক। |
8-10 : আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেন একটি শুভ সংবাদ হিসেবে এবং এর ফলে যেনো তোমাদের মন প্রশান্তি লাভ করে। আসলে সাহায্য তো আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাবান। |
8-11 : স্মরণ করো, আল্লাহ্ তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের স্বস্তির জন্যে তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেছিলেন এবং আসমান থেকে তোমাদের উপর পানি বর্ষণ করেছিলেন, যাতে করে তা দিয়ে তোমাদের পবিত্র করে দেন, তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করে দেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহকে সংহত ও মজবুত করে দেন আর তোমাদের কদমকে করে দেন মজবুত। |
8-12 : স্মরণ করো, তোমাদের প্রভু ফেরেশতাদের প্রতি অহি করে বলেছিলেন: আমি তোমাদের সাথে আছি, তোমরা মুমিনদের অবিচল রাখো। অচিরেই আমি কাফিরদের অন্তরে সঞ্চার করে দেবো ভয় আর আতঙ্ক। অতএব তোমরা আঘাত করো তাদের গর্দানে আর আঘাত করো তাদের জোড়ায় জোড়ায়। |
8-13 : এর কারণ, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করেছে, আর যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে, সে জেনে রাখুক, আল্লাহ্ কঠোর শাস্তিদাতা। |
8-14 : তোমরা এরি উপযুক্ত, সুতরাং আস্বাদন করো। এ ছাড়াও কাফিরদের জন্যে রয়েছে আগুনের আযাব। |
8-15 : হে ঈমানদার লোকেরা! যখনই তোমরা কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে, তখন কিছুতেই পিছু হটবে না, |
8-16 : যুদ্ধের কৌশল কিংবা নিজেদের দলের সাথে মিলিত হবার উদ্দেশ্য ছাড়া। সেদিন যে কেউ কাফির বাহিনী থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে, সে আল্লাহর গজবে নিপতিত হবে এবং তার আশ্রয় হবে জাহান্নাম, আর সেটা খুবই নিকৃষ্ট ধরনের ফিরে যাবার জায়গা। |
8-17 : তোমরা তাদের হত্যা করোনি, বরং তাদের হত্যা করেছেন আল্লাহ্। আর তুমি যখন (তাদের দিকে কংকর) নিক্ষেপ করেছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ করোনি, বরং আল্লাহ্ই নিক্ষেপ করেছিলেন, যাতে করে মুমিনদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে উত্তমভাবে পরীক্ষা করা যায়। নিশ্চয় আল্লাহ্ সব শুনেন, সব জানেন। |
8-18 : এটা ছিলো তোমাদেরই জন্যে, আর আল্লাহ্ অবশ্যি কাফিরদের চক্রান্তকে করে দেন অকেজো। |
8-19 : (হে কাফিররা!) তোমরা তো ফায়সালা চেয়েছিলে। এখন ফায়সালা তোমরা পেয়ে গেছো। যদি তোমরা (যুদ্ধ সন্ত্রাস ও নির্যাতন করা থেকে) বিরত হও, তবে সেটা তোমাদের জন্যেই উত্তম। কিন্তু তোমরা যদি পুনরায় করো, তাহলে আমরাও পুনরায় শাস্তি দেবো এবং তোমাদের বাহিনী সংখ্যায় অনেক বেশি হলেও তা তোমাদের কোনো কাজেই আসবে না। আল্লাহ্ অবশ্যি মুমিনদের সাথে রয়েছেন। |
8-20 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাঁর রসূলের। আর তোমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়োনা, অথচ তোমরা তার কথা শুনছো। |
8-21 : তোমরা ঐসব লোকের মতো হয়োনা, যারা বলে, ‘আমরা শুনেছি’, অথচ তারা শুনেনি। |
8-22 : আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট জীব হলো সেই বধির ও বোবা লোকেরা - যারা বেআকল। |
8-23 : আল্লাহ্ যদি তাদের মধ্যে ভালো কিছু আছে বলে জানতেন, তাহলে অবশ্যি তাদের শুনাতেন। তবে তাদের শুনালেও তারা উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিতো। |
8-24 : হে ঈমানদার লোকেরা! রসূল যখন তোমাদেরকে এমন কোনো বিষয়ের দিকে ডাকে, যা তোমাদের প্রাণবন্তু করবে, তখন তোমরা আল্লাহ্ ও রসূলের আহবানে সাড়া দেবে। জেনে রাখো, আল্লাহ্ ব্যক্তি ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী হয়ে থাকেন এবং তাঁরই কাছে তোমাদের হাশর করা হবে। |
8-25 : তোমরা সেই ফিতনা থেকে আত্মরক্ষা করো, যা শুধুমাত্র তোমাদের মধ্যকার যালিমদেরই আক্রান্ত করবে না। জেনে রাখো আল্লাহ্ কঠিন শাস্তিদাতা। |
8-26 : স্মরণ করো, তোমরা ছিলে কয়েকজন মাত্র। দেশে তোমাদের দুর্বল করে রাখা হয়েছিল। তোমরা আশংকা করছিলে লোকেরা তোমাদের ছোঁ মেরে ধরে ফেলবে। সে অবস্থা থেকে উদ্ধার করে আল্লাহ্ তোমাদের আশ্রয় দিয়েছেন, নিজ সাহায্যের মাধ্যমে তোমাদের শক্তিশালী করেছেন এবং উত্তম জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তোমরা শোকর আদায় করো। |
8-27 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা জেনে শুনে আল্লাহ্ এবং রসূলের খিয়ানত করোনা এবং তোমাদের পরস্পরের আমানতেরও খিয়ানত করোনা। |
8-28 : জেনে রাখো, তোমাদের মাল - সম্পদ এবং সন্তান - সন্ততি একটি পরীক্ষা, আর বড় পুরস্কার তো মূলত আল্লাহর কাছেই রয়েছে। |
8-29 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ভালো - মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার একটি মানদন্ড দেবেন এবং তোমাদের থেকে মুছে দেবেন তোমাদের পাপগুলো আর ক্ষমা করে দেবেন তোমাদের ত্রুটি বিচ্যুতি। আল্লাহ্ তো মহা অনুগ্রহের মালিক। |
8-30 : কাফিররা যখন তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিল তোমাকে বন্দী করার, কিংবা হত্যা করার, অথবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার; তারা চক্রান্ত করছিল আর আল্লাহ্ও কৌশল করছিলেন, আর আল্লাহ্ই সর্বোত্তম কৌশলী। |
8-31 : যখন তাদের কাছে আমাদের আয়াত শুনানো হয়, তারা বলে: ‘আমরা শুনলাম, ইচ্ছা করলে আমরাও এর মতো বলতে পারি। এতো সেকালের লোকদের কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়।’ |
8-32 : যখন তারা বলেছিল: ‘হে আল্লাহ্! এ (দীন, এ কুরআন) যদি তোমার পক্ষ থেকে সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করো, অথবা আমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবে নিমজ্জিত করো।’ |
8-33 : (হে নবী!) তুমি তাদের মধ্যে থাকবে আর আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দেবেন এমনটি আল্লাহ্ করবেন না। আর যতো দিন তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে, ততোদিন তাদের শাস্তি দেয়া আল্লাহর নীতি নয়। |
8-34 : তাদের কী বলার আছে, আল্লাহ কেন তাদের শাস্তি দেবেন না, যখন তারা মসজিদুল হারাম থেকে (মুমিনদের) বাধা দেয়। তারা তো এই মসজিদের মুতাওয়াল্লি (তত্ত্বাবধায়ক) নয়, শুধু মুত্তাকিরাই হতে পারে এর মুতাওয়াল্লি, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানেনা। |
8-35 : কা’বা ঘরের ওখানে তাদের সালাত তো হলো শুধু শিস দেয়া আর তালি দেয়া। সুতরাং তোমরা আযাবের স্বাদ ভোগ করো তোমাদের কুফুরির কারণে। |
8-36 : যারা কুফুরির পথ অবলম্বন করেছে তারা তাদের অর্থ - সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে আল্লাহর পথে বাধা দেয়ার জন্যে। তারা তাদের সম্পদ ব্যয় করেই যাবে এবং এটা তাদের হতাশার কারণ হবে। অবশেষে তারা পরাজিত হবে। যারা কুফুরি করে তাদেরকে শেষ পর্যন্ত জাহান্নামে হাশর (সমবেত) করা হবে। |
8-37 : এমনটি করার কারণ হলো, আল্লাহ্ মন্দকে ভালো থেকে আলাদা করে দিতে চান এবং মন্দদের কাউকেও কারো উপর স্থান দিতে চান, তারপর তাদের সবাইকে জমা করে নিক্ষেপ করবেন জাহান্নামে। আর তারাই হবে আসল ক্ষতিগ্রস্ত। |
8-38 : যারা কুফুরি করে তাদের বলো, তারা যদি বিরত হয় তবে অতীতের কর্মের জন্যে তাদের ক্ষমা করা হবে, কিন্তু তারা যদি পুনরাবৃত্তি করে, তবে আগেকার লোকদের (করুণ) দৃষ্টান্ত তো তাদের সামনেই রয়েছে। |
8-39 : তাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাও, যতোক্ষণ না ফিতনা দূর হয়ে যায় এবং দীন পুরোপুরি আল্লাহর জন্যে হয়ে যায়। তারা যদি (ফিতনা থেকে) বিরত হয়, তবে তারা যা করবে আল্লাহ তার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। |
8-40 : কিন্তু তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখো, তোমাদের মাওলা (অভিভাবক) তো আল্লাহ। তিনিই উত্তম মাওলা এবং উত্তম সাহায্যকারী। |
8-41 : জেনে নাও, তোমরা যে গনিমত লাভ করেছো, তার পাঁচ ভাগের একভাগ আল্লাহর, রসূলের, রসূলের নিকটাত্মীয়দের, এতিমদের, মিসকিনদের এবং পথিকদের জন্যে নির্ধারন করা হলো। যদি তোমরা ঈমান রাখো আল্লাহর প্রতি এবং সেই বিষয়ের প্রতি যা আমরা নাযিল করেছি আমাদের দাসের প্রতি মীমাংসার দিন, যেদিন দুই দল পরস্পরের মোকাবেলা করেছিল। আল্লাহ সব বিষয়ে শক্তিমান। |
8-42 : স্মরণ করো, (বদর প্রান্তরে) তোমরা ছিলে উপত্যকার নিকট প্রান্তে, তারা ছিলো দূরপ্রান্তে আর আরোহী কাফেলা দল ছিলো অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলে। তোমরা যদি পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধের (অবস্থান) সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে চাইতে, তবে সে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ ঘটতো। কিন্তু যা করার আল্লাহ তা করে দিলেন। ফলে যারা হালাক হবার তারা যেনো সত্য প্রকাশের পর হালাক হয়, আর যারা জীবিত থাকবে তারাও যেনো সত্য প্রকাশের পর জীবিত থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শুনেন, সব জানেন। |
8-43 : স্মরণ করো, (বদর প্রান্তরে) আল্লাহ তোমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তারা সংখ্যায় অল্প। তিনি যদি তোমাকে দেখাতেন তারা সংখ্যায় অনেক, তাহলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং যুদ্ধের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের রক্ষা করেছেন। নিশ্চয়ই অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত। |
8-44 : স্মরণ করো, যুদ্ধের ময়দানে তিনি তাদেরকে তোমাদের দৃষ্টিতে অল্প সংখ্যক দেখিয়েছেন এবং তোমাদেরকেও তাদের দৃষ্টিতে স্বল্প সংখ্যক দেখিয়েছেন, যা ঘটার ছিলো তা সম্পন্ন করার জন্যে। সব বিষয় শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দিকেই রুজু হয়। |
8-45 : হে ঈমানদার লোকেরা! যখনই তোমরা কোনো সৈন্যদলের সাথে যুদ্ধের সম্মুখীন হবে, তখন অবশ্যি অটল অবিচল থাকবে, এবং আল্লাহকে অধিক অধিক স্মরণ করবে, তাহলে অবশ্যি তোমরা সফল হবে। |
8-46 : তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাঁর রসূলের। আর তোমরা নিজেদের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত হয়োনা। তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এর ফলে তোমাদের প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং সবর করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবর অবলম্বনকারীদের সাথেই রয়েছেন। |
8-47 : তোমরা ঐসব লোকদের মতো হয়োনা যারা দাম্ভিকতা প্রদর্শন ও লোক দেখানোর জন্যে ঘর থেকে বের হয়েছিল এবং যারা মানুষকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা সৃষ্টি করে। তারা যা করে আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন। |
8-48 : স্মরণ করো, শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকান্ডকে চাকচিক্যময় করে রেখেছিল এবং বলেছিল: ‘আজ কোনো মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, আমি তোমাদের পাশেই আছি।’ তারপর উভয় দল যখন মুখোমুখি হলো, তখন সে পেছন থেকে কেটে পড়লো এবং বললো: ‘তোমাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি এমন কিছু দেখছি, যা তোমরা দেখছোনা। আমি আল্লাহকে ভয় পাই। আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।’ |
8-49 : যখন মুনাফিকরা এবং যাদের মনে রোগ ছিলো তারা বলছিল: ‘এদের দীন এদেরকে বিভ্রান্ত করেছে।’ যে কেউ আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, সে জেনে রাখুক, আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। |
8-50 : তুমি যদি দেখতে, ফেরেশতারা যখন কাফিরদের ওফাত (মৃত্যু) দিতে আসে তাদের চেহারা ও পিঠে আঘাত করতে থাকে এবং বলে, স্বাদ গ্রহণ করো দহন যন্ত্রণার। |
8-51 : এ তো সেই জিনিস যা তোমাদের দুই হাত কামাই করে আগেই পাঠিয়েছে। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করেন না। |
8-52 : ফেরাউনের অনুসারীদের এবং তাদের পূর্ববর্তীদের মতোই এরা অস্বীকার করেছে আল্লাহর আয়াত। ফলে তাদের পাপের জন্যে আল্লাহ তাদের শাস্তি প্রদান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শক্তিমান, কঠোর শাস্তিদাতা। |
8-53 : এর কারণ আল্লাহর নীতি হলো, তিনি কোনো জনগোষ্ঠীকে যে নিয়ামত দান করেন, তা ততোক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতোক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে। আল্লাহ সব শুনেন, সব জানেন। |
8-54 : ফেরাউনের অনুসারীদের মতো এবং তাদের পূর্ববর্তীদের মতো এরাও আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে তাদের পাপের জন্যে আমরা তাদের হালাক করেছি আর ফেরাউনের অনুসারীদেরও আমরা ডুবিয়ে মেরেছিলাম। এরা সবাই ছিলো যালিম। |
8-55 : আল্লাহর কাছে সবচে’ নিকৃষ্ট জীব হলো তারা, যারা কুফুরি করে এবং ঈমান আনেনা। |
8-56 : তাদের মধ্যে তুমি যাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ, তারা চুক্তি করার পর প্রত্যেকবার তাদের চুক্তি ভেঙ্গে ফেলে এবং তারা সতর্ক হয়না। |
8-57 : তোমরা যদি যুদ্ধে তাদেরকে বাগে পাও, তাহলে তাদের উত্তরসূরীদের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে এমনভাবে বিধ্বস্ত করবে, যাতে করে তারা শিক্ষা লাভ করে। |
8-58 : আর যদি তোমরা কোনো সম্প্রদায় থেকে চুক্তি ভঙ্গের আশংকা করো, সে ক্ষেত্রে তোমার চুক্তি তুমি ঠিক সেভাবেই বাতিল করবে, কারণ আল্লাহ খিয়ানতকারীদের পছন্দ করেন না। |
8-59 : কাফিররা যেনো মনে করেনা যে, তারা পার পেয়ে গেছে। তারা নিশ্চয়ই মুমিনদের দুর্বল করতে পারবে না। |
8-60 : তোমরা তাদের সাথে মোকাবেলার জন্যে সাধ্যমতো শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, যা দিয়ে তোমরা আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের আতংকিত করে রাখবে। তাছাড়া অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জানোনা। আল্লাহ তাদের জানেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা - ই খরচ করো না কেন, তার পুরো প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম করা হবেনা। |
8-61 : তারা যদি সন্ধির জন্য হাত বাড়ায়, তুমিও সন্ধির জন্যে হাত বাড়িয়ে দেবে এবং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে, নিশ্চয়ই তিনি সব শুনেন, সব জানেন। |
8-62 : তারা যদি তোমাকে ধোকা দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে আল্লাহই তোমার জন্যে যথেষ্ট। তিনি তো তোমাকে তাঁর নিজ সাহায্য আর মুমিনদের দিয়ে শক্তিশালী করেছেন। |
8-63 : এবং তাদের অন্তরে সম্প্রীতি স্থাপন করে দিয়েছেন। তুমি যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদও ব্যয় করতে, তাদের অন্তরে সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের অন্তরে সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছেন, তিনি মহাক্ষমতাশালী, বিজ্ঞানময়। |
8-64 : হে নবী! তোমার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে তারা। |
8-65 : হে নবী! মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করো যুদ্ধের জন্যে। তোমাদের মধ্যে যদি বিশজন অবিচল ব্যক্তি থাকে, তারা বিজয়ী হবে দুইশ জনের উপর। আর তোমাদের মধ্যে যদি একশজন থাকে, তারা বিজয়ী হবে এক হাজার কাফিরের উপর। কারণ তারা নির্বোধ লোক। |
8-66 : এখন আল্লাহ তোমাদের ভার লাঘব করেছেন। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। এখন যদি তোমাদের একশ অবিচল ব্যক্তি থাকে, তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে। তোমাদের যদি এক হাজার থাকে তারা বিজয়ী হবে দুই হাজারের উপর আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আল্লাহ অবিচল লোকদের সাথেই আছেন। |
8-67 : দেশে শত্রুদেরকে ব্যাপকভাবে পরাস্ত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোনো নবীর জন্যে উচিত নয়। তোমরা চাইছো দুনিয়ার সম্পদ, আর আল্লাহ চান আখিরাত। আল্লাহ ক্ষমতাশালী, প্রজ্ঞাবান। |
8-68 : আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছো সেটার জন্যে তোমাদের উপর বড় ধরনের আযাব আপতিত হতো। |
8-69 : যুদ্ধে তোমরা যে হালাল ও উত্তম গণিমত পেয়েছো, তা খাও আর আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়াময়। |
8-70 : হে নবী! তোমার হাতে যেসব বন্দী আছে তাদের বলো, আল্লাহ যদি তোমাদের মধ্যে ভালো কিছু আছে বলে দেখেন, তাহলে তোমাদের থেকে যা কিছু নেয়া হয়েছে, তোমাদেরকে তার চাইতে উত্তম কিছু দান করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, দয়াময়। |
8-71 : তারা যদি তোমার সাথে খেয়ানত (বিশ্বাস ভঙ্গ) করতে চায়, তবে ইতোপূর্বে তো তারা আল্লাহর সাথেও খেয়ানত করেছে। তারপর তিনি তোমাদেরকে তাদের উপর শক্তিশালী করেছেন। অবশ্যি আল্লাহ জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। |
8-72 : নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে আর যারা (তাদেরকে) আশ্রয় দিয়েছে এবং সাহায্য করেছে, তারা পরস্পরের অলি। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত করেনি, হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তোমার উপর নেই। তারা যদি দীনের ব্যাপারে তোমাদের কাছে সাহায্য চায়, সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। তবে যদি তোমাদের এবং কোনো কওমের মধ্যে চুক্তি থাকে, সে চুক্তি ভঙ্গ করবে না। তোমরা যা আমল করো তা আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে। |
8-73 : আর যারা কুফুরি করে তারা পরস্পরের অলি। তোমরা যদি তা না করো তবে দেশে ফিতনা ও বড় ধরনের ফাসাদ সৃষ্টি হবে। |
8-74 : আর যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে ও সাহায্য করেছে তারাই সত্যিকার মুমিন। তাদের জন্যে রয়েছে মাগফিরাত ও সম্মানজনক রিযিক। |
8-75 : আর যারা পরে ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে এবং তোমাদের সাথে জিহাদে শরিক হয়েছে, তারাও তোমাদের অন্তরভুক্ত। আর আত্মীয়রা আল্লাহর বিধানে একজন অন্যজন অপেক্ষা বেশি হকদার। অবশ্যি আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞানী। |