আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 18, আল কাহাফ (গুহা)

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 18, আল কাহাফ (গুহা)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১১০, রুকু সংখ্যা: ১২

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৮কুরআনে কোনো বক্রতা নেই। এটি সঠিক ও সুদৃঢ়। লোকেরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনা বলে নবীর মনে কষ্ট।
০৯-২৬আসহাবে কাহাফের ঘটনার বিবরণ এবং এ প্রসঙ্গে উপদেশ।
২৭-৩১রসূলের প্রতি উপদেশ। যালিমদের প্রতি সতর্কতা। মুমিনদের প্রতি সুসংবাদ।
৩২-৪৪উপমার মাধ্যমে শিরকের অসারতা এবং তাওহীদের যুক্তি।
৪৫-৪৯দুনিয়ার জীবনের অসারতার উপমা। মানুষের জন্য যা কল্যাণকর। হাশর ও বিচারের দৃশ্য।
৫০-৫৩মানুষ তার শত্রু ইবলিসকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে কী করে? শিরকের অসারতা।
৫৪-৫৯কুরআনে সবকিছুর বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও লোকেরা বিবাদ করে। সবচেয়ে বড় যালিম আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যানকারীরা।
৬০-৮২এক জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধানে ও সান্নিধ্যে মূসা আ.।
৮৩-১০১যুলকারনাইনের (সাইরাস দ্যা গ্রেট-এর) প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের বিবরণ এবং তার কল্যাণমূলক কার্যক্রম।
১০২-১১০বাঁচার উপায় শিরকমুক্ত আমলে সালেহ্। যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে অলি বানায় তাদের জন্য জাহান্নাম। সর্ব নিকৃষ্ট আমলের অধিকারী কারা? মুমিনদের জন্য সুসংবাদ। আল্লাহর প্রশংসা লিখে শেষ করা যাবেনা।
18-1 : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর দাসের উপর আল কিতাব (আল - কুরআন) নাযিল করেছেন এবং তাতে কোনো প্রকার বক্রতা - জটিলতা রাখেননি।
18-2 : তিনি এটিকে করেছেন সুষম - সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্যে। আর যেসব মুমিন আমলে সালেহ্ করে এটি তাদের সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে রয়েছে উত্তম পুরস্কার (জান্নাত)।
18-3 : সেখানে থাকবে তারা চিরদিন চিরকাল।
18-4 : আর (এটি নাযিল করেছেন) তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে, যারা বলে: ‘আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’
18-5 : আসলে এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই এবং তাদের পূর্ব পুরুষদেরও কোনো জ্ঞান ছিলনা। তাদের মুখ থেকে বের হওয়া কথা খুবই গুরুতর। তাদের কথা মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।
18-6 : তারা এ বাণীর প্রতি ঈমান না আনলে সম্ভবত তুমি তাদের পেছনে ঘুরে ঘুরে দুঃখে শোকে নিজেকে বিনাশ করে ছাড়বে।
18-7 : পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে সেগুলো আমরা এর শোভা বানিয়ে দিয়েছি মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্যে যে, আমলের দিক থেকে তাদের মধ্যে কে উত্তম?
18-8 : এর উপর যা কিছু আছে তা অবশ্যি আমরা উদ্ভিদ বিহীন মাঠে পরিণত করবো।
18-9 : তুমি কি মনে করো যে, কাহাফ এবং রাকিমের অধিবাসীরা আমার বিস্ময়কর নিদর্শনাবলির অন্তরভুক্ত?
18-10 : যুবকরা যখন গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল তারা বলেছিল: ‘আমাদের প্রভু! আমাদের দান করো তোমার পক্ষ থেকে রহমত এবং আমাদেরকে আমাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করে দাও।’
18-11 : তারপর আমরা তাদেরকে গুহায় কয়েক বছর ঘুমন্ত রেখে দিয়েছিলাম।
18-12 : অত:পর তাদের জাগিয়েছিলাম একথা জানার জন্যে যে, তাদের দুই দলের মধ্যে কোন্টি তার অবস্থানকাল ঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে?
18-13 : আমরা তোমার কাছে তাদের সঠিক ঘটনা বর্ণনা করছি: তারা কয়েকজন যুবক ঈমান এনেছিল তাদের প্রভুর প্রতি এবং আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম তাদের হুদা (ঈমান)।
18-14 : আর আমরা তাদের হৃদয়ের বন্ধন মজবুত করে দিয়েছিলাম। তারা যখন উঠে দাঁড়িয়েছিল, তখন বলেছিল: ‘‘আমাদের প্রভু মহাকাশ ও পৃথিবীর প্রভু! আমরা কখনো তাঁকে ছাড়া আর কোনো ইলাহকে ডাকবো না। তেমনটি করলে সেটা হবে এক গর্হিত কাজ।
18-15 : এই আমাদের কওম, তারা তাঁকে ছাড়া অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করেছে। তারা তাদের পক্ষে স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করে না কেন? ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে মিথ্যা রচনা করে আল্লাহর উপর আরোপ করে?’’
18-16 : তারপর তারা পরস্পরকে বলে: ‘‘তোমরা যখন তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছো, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করো। তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্যে তাঁর দয়া প্রসারিত করবেন এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করবেন।’’
18-17 : তুমি দেখতে পাও, তারা তাদের গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থান করছে, উদয়ের সময় সূর্য তাদের ডান পাশ হেলে যায়, আর অস্ত যাবার সময় তাদের অতিক্রম করে বাম পাশ থেকে। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তরভুক্ত। আল্লাহ্ যাকে সঠিক পথ দেখান সেই হিদায়াতপ্রাপ্ত হয় আর তিনি যাকে বিপথগামী করেন, তুমি কখনো তার জন্যে কোনো মুরশিদ অলি (সঠিক পথের দিশারি অভিভাবক) পাবে না।
18-18 : তুমি ধারণা করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা ঘুমন্ত। আমরা তাদের পাশ পরিবর্তন করাতাম ডান দিকে এবং বাম দিকে, আর তাদের কুকুরটি ছিলো সামনের পা দুটি গুহা দ্বারের দিকে প্রসারিত করে। তাদের দিকে তাকিয়ে দেখলে তুমি পেছন ফিরে পালাবে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
18-19 : এভাবেই, আমরা তাদের জাগিয়ে তুলেছিলাম যেনো তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন জিজ্ঞেস করেছিল, তোমরা এখানে কতোদিন অবস্থান করেছো? বাকিরা বললো: ‘‘আমরা এখানে একদিন বা আধা দিন অবস্থান করেছি।’ তারা বললো: তোমাদের প্রভুই অধিক জানেন তোমরা কতদিন অবস্থান করেছো? এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রা নিয়ে শহরে পাঠাও, সে দেখুক কোন্ খাবার উত্তম এবং তা থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসুক তোমাদের জন্যে। আর সে যেনো সতর্কতা অবলম্বন করে এবং কিছুতেই যেনো তোমাদের সম্পর্কে কাউকেও কিছু জানতে না দেয়।
18-20 : তোমাদের বিষয়টি যদি তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়ে তাহলে তারা তোমাদের পাথর মেরে হত্যা করবে, অথবা তোমাদের ফিরিয়ে নেবে তাদের মিল্লাতে। তখন আর তোমরা কখনো সফলতা অর্জন করবে না।’’
18-21 : এভাবেই আমরা মানুষকে তাদের বিষয়টি জানিয়ে দিলাম, যাতে করে তারা জানতে পারে যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামতের আগমনে কোনো সন্দেহ নেই। যখন তারা তাদের কর্তব্য বিষয়ে বিতর্ক করছিল, তখন অনেকে বলেছিল: ‘তাদের উপর একটি সৌধ নির্মাণ করো।’ তাদের প্রভুই তাদের বিষয়ে ভালো জানেন। নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হয়ে দেখা দিলো, তারা বললো: ‘আমরা অবশ্যি তাদের পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করবো।’
18-22 : কিছু লোক বলবে: ‘তারা ছিলো তিনজন এবং তাদের চতুর্থটি ছিলো তাদের কুকুর।’ অজানা বিষয়ে অনুমান করে কিছু লোক বলবে: ‘তারা ছিলো পাঁচজন এবং তাদের ষষ্ঠটি ছিলো তাদের কুকুর।’ কিছু লোক বলবে: ‘তারা ছিলো সাতজন এবং অষ্টমটি ছিলো তাদের কুকুর।’ তুমি বলো: ‘তাদের সংখ্যা কতো তা আমার প্রভুই ভালো জানেন।’ অল্প কিছু লোক ছাড়া তাদের সংখ্যা কেউই জানেনা। সাধারণ আলোচনা ছাড়া তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়োনা। আর তাদের বিষয়ে ওদের কাউকেও কিছু জিজ্ঞাসাও করোনা।
18-23 : তুমি কখনো কোনো বিষয়ে এভাবে বলোনা যে, ‘আমি তা আগামি কাল করবো।’
18-24 : তবে এভাবে বলবে: ‘ইনশাল্লাহ - যদি আল্লাহ্ চান’। আর যদি ভুলে যাও তবে তোমার প্রভুকে স্মরণ করবে এবং বলবে: ‘হয়তো আমার প্রভু আমাকে সত্যের নিকটে পৌঁছার পথ দেখাবেন।’
18-25 : তারা তাদের গুহায় অবস্থান করেছিল তিনশ’ বছর আরো নয় বছর।
18-26 : তুমি বলো: ‘এরপরে তারা কতোকাল ছিলো তা আল্লাহ্ই ভালো জানেন।’ মহাকাশ আর পৃথিবীর গায়েব কেবল তাঁরই জানা আছে। দেখো, তিনি কতো সুন্দর দ্রষ্টা এবং শ্রোতা! তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো অলি নেই। তিনি নিজ কর্তৃত্বে কাউকে শরিক করেন না।
18-27 : তোমার প্রতি তোমার প্রভুর যে কিতাব অহি করা হয়েছে তুমি তা তিলাওয়াত করো। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার কেউ নেই। তুমি কখনো তাঁকে ছাড়া আর কোনো আশ্রয় পাবেনা।
18-28 : যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রভুকে ডাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, তুমি নিজেকে তাদের সাথে অবিচলভাবে জুড়ে রাখো। পার্থিব জীবনের চাকচিক্যের উদ্দেশ্যে তুমি তাদের থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়োনা। তুমি এমন কারো আনুগত্য করোনা, যার অন্তরকে আমরা আমাদের যিকির থেকে গাফিল করে দিয়েছি এবং যে তার খেয়াল খুশির অনুসরণ করে আর যার কর্মকান্ড সীমালংঘনমূলক।
18-29 : বলো: সত্য (আল - কুরআন) তোমাদের প্রভুর নিকট থেকেই এসেছে। সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনুক, আর যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক। আমরা যালিমদের জন্যে প্রস্ত্তত করে রেখেছি আগুন, তার বেষ্টনি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। তারা পানি পান করতে চাইলে তাদের দেয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা তাদের মুখমন্ডলকে দগ্ধ করে ফেলবে। কী যে নিকৃষ্ট পানীয় আর কতো যে নিকৃষ্ট আশ্রয় তাদের!
18-30 : তবে যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, উত্তম আমলকারীদের কর্মফল আমরা কখনো বিনষ্ট করিনা!
18-31 : তাদের জন্যে থাকবে চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহ যেগুলোর নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী নহর। সেখানে তাদের অলংকার পরানো হবে সোনার কংকন। সেখানে তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমি সবুজ পরিচ্ছেদ। আর সেখানে তারা আসন গ্রহণ করবে সুসজ্জিত সোফায়। কতো যে উত্তম পুরস্কার! আর কতো যে উত্তম আশ্রয়স্থল।
18-32 : তুমি তাদের জন্যে দুই ব্যক্তির উদাহরণ পেশ করো: তাদের একজনকে আমরা দিয়েছিলাম দু’টি আঙ্গুরের বাগান। দু’টি বাগানকেই আমরা খেজুর গাছ দিয়ে পরিবেষ্টন করে দিয়েছিলাম। আর দু’টি বাগানের মাঝখানের জায়গাটাকে আমরা বানিয়েছিলাম শস্যক্ষেত।
18-33 : দু’টি বাগানই প্রচুর ফল দিচ্ছিল এবং এতে কোনো প্রকার ত্রুটি করা হচ্ছিলনা। আর দু’টি বাগানের মাঝে দিয়ে আমরা জারি করে দিয়েছিলাম একটি নহর।
18-34 : লোকটির ছিলো প্রচুর সম্পদ। সে কথা প্রসঙ্গে তার সাথিকে বললো: ‘ধনে জনে আমি তোমার চাইতে শ্রেষ্ঠ এবং শক্তিশালী।
18-35 : এভাবে সে নিজের প্রতি যুলুম করে একদিন বাগানে প্রবেশ করে। সে (বাগানের ফলন ও সৌন্দর্যে উৎফুল্ল হয়ে) বললো: ‘‘এ বাগান কখনো বিরান হয়ে যাবে বলে আমি মনে করিনা।
18-36 : কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে বলেও আমি মনে করিনা। আর আমাকে যদি আমার প্রভুর কাছে ফিরিয়ে নেয়াই হয়, তবে অবশ্য অবশ্যি এখন আমার যা আছে তার চাইতে উত্তম সামগ্রী আমি ফেরত পাবো।’’
18-37 : তার কথার প্রসঙ্গে তার সাথি তাকে বললো: ‘‘তুমি কি তোমার সেই মহান স্রষ্টার প্রতি কুফুরি করলে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর নোতফা (শুক্রবিন্দু) থেকে, তার পরে মানুষের আকৃতি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন?
18-38 : (তুমি যাই বলোনা কেন) সেই মহান আল্লাহ্ই কিন্তু আমার প্রভু। আমি আমার প্রভুর সাথে কাউকেও শরিক করিনা।
18-39 : তুমি যখন তোমার বাগানে প্রবেশ করেছিলে, তখন কেন বললে না, ‘আল্লাহ্ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো কোনো ক্ষমতা নেই?’ তুমি যদি ধনে জনে আমাকে তোমার চাইতে কম মনে করো,
18-40 : তবে হয়তো আমার প্রভু তোমার বাগানের চাইতে উত্তম কিছু আমাকে দান করবেন এবং তোমার বাগান আসমান থেকে আগুন পাঠিয়ে জ্বালিয়ে দেবেন, যার ফলে বাগানটি উদ্ভিদ শূন্য মাঠে পরিণত হবে।
18-41 : অথবা তোমার বাগানের পানি ভূ - গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে এবং তুমি আর কখনো পানির সন্ধান লাভ করতে সক্ষম হবেনা।’’
18-42 : অত:পর বিপর্যয় তার ফল - ফসলকে পরিবেষ্টন করে নিলো, ফলে সে সেখানে যা খরচ করেছিল তার জন্যে হাত মুচড়িয়ে অনুতাপ করতে লাগলো, যখন তার বাগানের মাচানসমূহ ধুলিস্যাত হয়ে গেলো। তখন সে বলতে লাগলো, ‘হায়, হায়! আমি যদি আমার প্রভুর সাথে কাউকেও শরিক না করতাম!’
18-43 : আর আল্লাহর বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার কোনো বাহিনীই ছিলনা এবং সে নিজেও প্রতিরোধ করার সামর্থ রাখেনি।
18-44 : হ্যাঁ, কর্তৃত্ব পূর্ণরূপে মহাসত্য আল্লাহর। পুরস্কার প্রদানে এবং পরিণাম নির্ধারণে তিনিই সর্বোত্তম।
18-45 : তাদের জন্যে দুনিয়ার জীবনের (এই) উপমা পেশ করো: দুনিয়ার জীবন হলো সেই পানির মতো যা আমরা আসমান থেকে নাযিল করি। তার ফলে জমিন থেকে ঘন সুনিবিষ্ট উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। তারপর সেগুলো শুকিয়ে চূর্ণ - বিচূর্ণ হয়ে যায়। ফলে বাতাস সেগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ্ ক্ষমতাবান।
18-46 : ধনমাল এবং সন্তান - সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সৌন্দর্য মাত্র, আর তোমার প্রভুর কাছে পুরস্কার আর প্রত্যাশিত বস্তু হিসেবে উত্তম হলো স্থায়ী ও চলমান পুণ্যকাজ।
18-47 : স্মরণ করো, যেদিন আমরা পর্বতমালাকে তলিয়ে দেবো এবং তুমি পৃথিবীকে দেখতে পাবে এক উন্মুক্ত প্রান্তর। সেদিন আমরা (সেখানে) সবাইকে হাশর (একত্র) করবো এবং একজনকেও অব্যাহতি দেবোনা।
18-48 : তাদেরকে তোমার প্রভুর সামনে সারিবদ্ধভাবে উপস্থাপন করা হবে। তখন বলা হবে, ‘আজ তোমরা আমাদের কাছে এসেছো ঠিক সেভাবে, যেভাবে আমরা প্রথমবার তোমাদের সৃষ্টি করেছিলাম। বরং তোমরা মনে করতে, তোমাদের জন্যে আমরা প্রতিশ্রুত দিনটি কখনো সংঘটিতই করবো না।’
18-49 : কিতাব (আমলনামা, আমলের রেকর্ড) সামনে রাখা হবে। তুমি দেখবে, তাতে যা রেকর্ড করা আছে তার জন্যে অপরাধীরা ভয়ে আতংকগ্রস্ত থাকবে। তারা বলবে: হায় দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন কিতাব (রেকর্ড), এ - তো আমাদের ছোট বড় কিছুই রেকর্ড করা ছাড়া বাদ দেয়নি। তারা যতো কাজই করে এসেছে সবই তাদের সামনে হাজির দেখতে পাবে। তোমার প্রভু কারো প্রতি যুলুম (অবিচার) করেন না।
18-50 : আমরা যখন ফেরেশতাদের বলেছিলাম, ‘আদমকে সাজদা করো’ তখন সবাই সাজদা করেছিল ইবলিস ছাড়া। সে ছিলো জিনদের একজন। সে তার প্রভুর আদেশ অমান্য করে সীমালংঘন করে। আর এখন তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে আর তার বংশধরদেরকে নিজেদের অলি (বন্ধু, অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক) বানিয়ে নিয়েছো? অথচ তারা হলো তোমাদের শত্রু। যালিমদের এই বদল করাটা কতো যে নিকৃষ্ট!
18-51 : মহাবিশ্ব এবং পৃথিবীর সৃষ্টিকালে আমরা তাদের সাক্ষী রাখিনি, এমনকি তাদের নিজেদেরকে সৃষ্টি করার সময়ও নয়। আমরা বিপথগামীদেরকে সাহায্যকারী হিসাবে গ্রহণ করিনা।
18-52 : সেদিনের কথা স্মরণ করো, যেদিন তিনি বলবেন: ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরিকদার মনে করতে তাদেরকে ডেকে আনো।’ তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তাদের ডাকে তারা কোনো সাড়া দেবেনা। আমরা তাদের উভয়ের মাঝপথে রেখে দেবো এক ধ্বংস গহবর।
18-53 : অপরাধীরা আগুন দেখেই বুঝবে, তারা তাতে পড়তে যাচ্ছে এবং তারা তা থেকে বাঁচার কোনো জায়গা পাবেনা।
18-54 : আমরা এই কুরআনে বিভিন্ন রকম উপমার মাধ্যমে মানুষের জন্যে আমাদের বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। অথচ মানুষ বেশিরভাগ বিষয়ে বিতর্কপ্রিয়।
18-55 : মানুষের কাছে যখন হিদায়াত আসে তখন তাদেরকে ঈমান আনা এবং তাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা চাওয়া থেকে এছাড়া আর কিছুই বিরত রাখেনা যে, তারা চায়, তাদের আগের লোকদের সুন্নতই (রীতিই) তাদের কাছে আসুক, তা না হলে সরাসরি আল্লাহর আযাব আসুক।
18-56 : আমরা তো আমাদের রসূলদের পাঠাই কেবল সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে। অথচ কাফিররা বাতিলের পক্ষে বিতর্কে লিপ্ত হয় সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে। আর তারা আমার আয়াতকে এবং যার মাধ্যমে তাদেরকে সতর্ক করা হয় তাকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে।
18-57 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যাকে তার প্রভুর আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরও সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সে তার কৃতকর্ম ভুলে যায়? আমরা তাদের অন্তরের উপর আবরণ সৃষ্টি করে দিয়েছি যেনো তারা তা (কুরআন) বুঝতে না পারে আর তাদের কানেও তুলা লাগিয়ে বধিরতা এঁটে দিয়েছি। ফলে তুমি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে ডাকলেও তারা কখনো হিদায়াতের পথে আসবে না।
18-58 : তোমার প্রভু পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়। তিনি তাদের কৃতকর্মের জন্যে যদি তাদের পাকড়াও করতে চাইতেন, তবে অবশ্যি তাদের শাস্তি দানের বিষয়টি ত্বরান্বিত করতেন। বরং তাদের জন্যে রয়েছে একটি প্রতিশ্রুত সময় যা থেকে বাঁচার জন্যে তারা কিছুতেই কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে পাবেনা।
18-59 : আমরা যেসব জনপদ ধ্বংস করেছি, সেগুলো ধ্বংস করেছি তো তখন, যখন তারা যুলুম করেছিল। আর তাদের ধ্বংস করার জন্যেও আমরা একটি প্রতিশ্রুত সময় নির্ধারণ করেছিলাম।
18-60 : স্মরণ করো, মূসা তার সঙ্গিকে (খাদেমকে) বলেছিল: ‘দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে না পৌঁছে আমি থামবো না। অথবা আমি যুগের পর যুগ ধরে চলতে থাকবো।’
18-61 : তারা যখন দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে পৌঁছে, তখন তাদের মাছটির কথা ভুলে যায়। ফলে সেটি সুড়ঙের মতো নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেলো।
18-62 : তারা উভয়ে আরো সামনে অগ্রসর হলে মূসা তার সাথিকে বললো : আমাদের সকালের নাস্তা নাও, এই সফরে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
18-63 : সে বললো: ‘আপনি লক্ষ্য করেছেন কি, আমরা যখন পাথর খন্ডে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছটির কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই সেটির কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। সেটি বিস্ময়করভাবে নিজের পথ তৈরি করে নিয়ে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল।
18-64 : মূসা বললো: ‘আমরা তো সেই জায়গাটারই সন্ধান করছিলাম। তখন তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চললো।
18-65 : তখন তারা আমার দাসদের এমন একজনকে পেয়ে গেলো, যাকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম এবং আমার নিকট থেকে দান করেছিলাম বিশেষ এক এলেম।
18-66 : মূসা তাকে বললো: ‘আপনাকে সঠিক পথের যে জ্ঞান দান করা হয়েছে, তা থেকে আমাকে শিক্ষা দেবেন এই শর্তে আমি আপনার সাথি হতে পারি কি?
18-67 : সে বললো: ‘‘আপনি কখনো আমার সাথে চলে সবর করতে পারবেন না।
18-68 : আপনি কেমন করে সবর করবেন এমন বিষয়ে, যে বিষয়ের জ্ঞান আপনার আয়ত্তে নেই?’’
18-69 : (মূসা) বললো: ‘ইনশাল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোনো আদেশ অমান্য করবো না।’
18-70 : সে বললো: ‘আপনি যদি আমার সাথি হনই, তাহলে আমাকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত সে বিষয়ে আমি নিজেই আপনাকে কিছু না বলবো।’
18-71 : ফলে তারা দু’জনই চলতে থাকলো। অত:পর তারা যখন নৌকায় উঠলো, সে ছিদ্র করে দিলো। তখন মূসা বললো: ‘আপনি কি আরোহীদের ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে এটি ছিদ্র করে দিলেন নৌকাটি? আপনি তো একটা গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।’
18-72 : সে বললো: ‘আমি কি আপনাকে বলিনি, আপনি আমার সাথে থেকে কিছুতেই সবর করতে পারবেন না?’
18-73 : মূসা বললো: ‘আমার ভুলের জন্যে আপনি আমাকে পাকড়াও করবেন না এবং আমার ব্যাপারে এতো বেশি কঠোর হবেন না।’
18-74 : পুনরায় তারা চললো। চলতে চলতে তারা যখন একটি বালকের সাক্ষাত পেলো, সে সেই বালকটিকে হত্যা করলো। মূসা বললো: ‘আপনি একজন নিষ্পাপ ব্যক্তিকে হত্যা করলেন, হত্যার অপরাধ ছাড়াই? আপনি একটি গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।’
18-75 : সে বললো: ‘আমি কি আপনাকে বলিনি যে, আপনি কিছুতেই আমার সাথে সবর করতে পারবেন না?’
18-76 : মূসা বললো: ‘এরপর যদি আমি আপনাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি, আপনি আমাকে আর সঙ্গে রাখবেন না। আমার ওজরের বিষয়টি চূড়ান্ত হলো।’
18-77 : পুনরায় তারা উভয়ে চলতে শুরু করলো। চলতে চলতে এক গাঁয়ের অধিবাসীদের কাছে এসে তারা খাবার চাইলো। তারা তাদের মেহেমানদারী করতে অস্বীকার করে। তারা সেখানে একটি হেলে থাকা প্রাচীর দেখতে পায় এবং সে সেটি দাঁড় করিয়ে মজবুত করে দেয়। মূসা বললো: ‘আপনি চাইলে এ কাজের জন্যে পারিশ্রমিক নিতে পারতেন।’
18-78 : সে বললো: ‘‘এখানেই আমার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেলো। যেসব বিষয়ে আপনি সবর করতে পারেননি, আমি সেগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।
18-79 : প্রথমেই সেই নৌকাটির বিষয়। সেটি ছিলো কয়েকজন অভাবী লোকের, তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করতো। আমি ইচ্ছা করলাম নৌকাটি ত্রুটিযুক্ত করে দেয়ার, কারণ সামনেই ছিলো এক রাজা, সে জোরপূর্বক সব নৌকা ছিনিয়ে নেয়।
18-80 : আর বালকটি, তার বাবা - মা ছিলেন মুমিন, আমাদের আশংকা হয়, সে অব্যাধ্যতা ও কুফুরির মাধ্যমে তাদের বিব্রত করবে।
18-81 : তাই আমরা চাইলাম তাদের প্রভু যেনো তাদেরকে ওর পরিবর্তে ওর চাইতে উত্তম, পবিত্র ও ভক্তি ভালোবাসায় নৈকট্য লাভকারী একটি সন্তান দান করেন।
18-82 : আর প্রাচীরটির বিষয় হলো, ওটি ছিলো দুই এতিম কিশোরের। প্রাচীরের নিচে আছে তাদের গুপ্তধন আর তাদের পিতা ছিলেন একজন পুণ্যবান ব্যক্তি। সুতরাং আপনার প্রভু দয়া করে চাইলেন তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা নিজেদের ধনভান্ডার উদ্ধার করুক। আমি কিছুই নিজ থেকে করিনি। আপনি যেসব বিষয়ে সবর করতে পারেননি, এ - ই হলো সেগুলোর ব্যাখ্যা।’’
18-83 : তারা তোমার কাছে জানতে চাইছে যুলকারনাইন সম্পর্কে। তুমি বলো, আমি তার সম্পর্কে তোমাদের কাছে তিলাওয়াত করছি :
18-84 : আমরা তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং তাকে সব বিষয়ের উপায় উপকরণ দিয়েছিলাম।
18-85 : ফলে সে পথ ধরে অগ্রসর হলো।
18-86 : এমন কি সে সূর্যাস্তের স্থানে এসে পৌঁছায়। সে সূর্যকে এক পংকিল জলাশয়ে অস্তমিত হতে দেখে এবং সেখানে একটি কওমকেও দেখতে পায়। আমরা তাকে বললাম, হে যুলকারনাইন! তুমি এদের শাস্তি দিতে পারো, অথবা তাদের ব্যাপারে সদয় মনোভাব গ্রহণ করতে পারো।
18-87 : সে বললো: যে কেউ যুলুম করবে, আমরা তাকে শাস্তি দেবো। তারপর সে তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দেবেন।
18-88 : তবে যে কেউ ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে তার জন্যে রয়েছে উত্তম প্রতিদান, তার প্রতি ব্যবহারে আমরা কোমল - সহজ কথা বলবো।
18-89 : সে পুনরায় অন্যদিকে পথ ধরে অগ্রসর হলো।
18-90 : শেষ পর্যন্ত সে সূর্যোদয়ের স্থানে এসে পৌঁছালো। সে দেখলো, সূর্য উঠছে এমন এক জাতির উপর, যাদের জন্যে সূর্য তাপ থেকে রক্ষার জন্যে আমরা কোনো অন্তরাল সৃষ্টি করিনি।
18-91 : ব্যাপার তাই ছিলো। তার কাছে যেসব খবর ছিলো আমরা তা জানতাম।
18-92 : তারপর সে আরেক দিকে পথ ধরে অগ্রসর হলো।
18-93 : শেষ পর্যন্ত সে এসে পৌঁছায় দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে। এখানে সে আরেকটি জাতির সন্ধান পেলো। তারা কোনো কথাই বুঝার মতো ছিলো না।
18-94 : তারা বলেছিল: হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ (জাতি) ও মাজুজ (জাতি) আমাদের দেশে এসে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে খরচ দেবো, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে একটি প্রাচীর গড়ে দেবেন?
18-95 : সে বললো: ‘আমার প্রভু আমাকে এ বিষয়ে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই আমার জন্যে যথেষ্ট। তোমরা আমাকে শ্রমশক্তি দিয়ে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যবর্তী স্থানে একটি প্রাচীর গড়ে দেবো।’
18-96 : ‘তোমরা আমাকে অনেকগুলো লৌহ পিন্ড এনে দাও।’ তারপর লোহার স্তূপ মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে যখন দুই পর্বতের সমান হলো, তখন সে বললো: ‘তোমরা হাঁপরে হাওয়া দিতে থাকো। যখন সেগুলো আগুনের মতো উত্তপ্ত হলো, তখন সে বললো: তোমরা গলিত তামা নিয়ে আসো, আমি সেগুলো ঢেলে দেবো এর উপর।’
18-97 : এরপর থেকে তারা আর তা অতিক্রম করতে পারলো না এবং তার মধ্যে সুড়ঙ্গও তৈরি করতে পারলো না।
18-98 : সে বললো: এটা আমার প্রভুর অনুগ্রহ। যখন আমার প্রভুর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি এটাকে চূর্ণ - বিচূর্ণ করে দেবেন। আর আমার প্রভুর প্রতিশ্রুতি সত্য।
18-99 : সেদিন আমরা তাদের এমন অবস্থায় ছেড়ে দেবো যে, তারা এক দল আরেক দলের উপর তরঙ্গের মতো অাঁছড়ে পড়বে এবং শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং তাদের সবাইকে এক জায়গায় জমা করে ফেলবো।
18-100 : আর সেদিন আমরা জাহান্নামকে সেইসব কাফিরদের জন্যে সামনে এনে হাজির করবো,
18-101 : যাদের চোখ ছিলো অন্ধ আমার যিকির (কুরআন) থেকে এবং তারা শুনতেও ছিলো অক্ষম।
18-102 : কাফিররা কি ধারণা করে নিয়েছে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদের অলি হিসেবে গ্রহণ করবে? আমরা কাফিরদের জন্যে আতিথ্য হিসেবে প্রস্তুত করে রেখেছি জাহান্নাম।
18-103 : হে নবী! বলো: আমরা কি তোমাদের সংবাদ দেবো, আমলের দিক থেকে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত কারা?
18-104 : তারা হলো সেইসব লোক, যারা দুনিয়ার জীবনে নিজেদের প্রচেষ্টাকে পরিচালিত করে ভ্রান্ত পথে, অথচ তারা মনে করে তারা খুব সুন্দর কাজ করছে।
18-105 : এরাই তাদের প্রভুর আয়াত এবং তাঁর সাথে সাক্ষাত হওয়াকে অস্বীকার করে। ফলে নিষ্ফল হয়ে যায় তাদের সব আমল। তাই আমরা কিয়ামতের দিন তাদের জন্যে ওজন কায়েম করবো না।
18-106 : এরা প্রতিদান পাবে জাহান্নাম তাদের কুফুরির কারণে আর এ কারণে যে, তারা আমার আয়াত এবং আমার রসূলদেরকে বিদ্রূপের লক্ষ্যস্থল বানিয়েছে।
18-107 : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে তাদের আতিথ্যের জন্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস।
18-108 : চিরদিন থাকবে তারা সেখানে। তারা সেখান থেকে স্থানান্তর হতে চাইবে না।
18-109 : হে নবী! বলো: আমার প্রভুর কথা লেখার জন্যে সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রভুর কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র শুকিয়ে যাবে, এমনকি এ কাজের সাহায্যার্থে অনুরূপ আরো সমুদ্র আনলেও।
18-110 : হে নবী! বলো: আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তবে আমার কাছে অহি আসে যে, তোমাদের ইলাহ্ একজন মাত্র ইলাহ্। যে কেউ তার প্রভুর সাক্ষাতের প্রত্যাশা করে, সে যেনো আমলে সালেহ্ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকেও শরিক না করে।