মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৭৮, রুকু সংখ্যা: ১০এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
22-1 : হে মানুষ! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রভুকে। কিয়ামতের ভূ - কম্পন হবে এক ভয়ংকর ব্যাপার! |
22-2 : যেদিন তোমরা তা দেখবে, সেদিন প্রত্যেক বুকের দুধ খাওয়ানো (মা) ভুলে যাবে তার দুগ্ধপায়ী সন্তানকে। প্রত্যেক গর্ভবতী প্রসব করে দেবে তার গর্ভের বোঝা। তুমি মানুষদের দেখবে মাতাল, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়, বরং আল্লাহর আযাবই হবে এমন ভয়ানক কঠোর। |
22-3 : কিছু লোক আছে এলেম ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের। |
22-4 : তার সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, তার সাথে যে কেউ বন্ধুত্ব করবে, সে অবশ্যি তাকে গোমরাহ করে ছাড়বে এবং পরিচালিত করবে জ্বলন্ত আগুনের আযাবের দিকে। |
22-5 : হে মানুষ! তোমরা যদি পুনরুত্থান সম্পর্কে সন্দেহের মধ্যে থাকো, তবে ভেবে দেখো, আমরাই তো তোমাদের সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, তারপর নোতফা (শুক্রবিন্দু) থেকে, তারপর আলাকা (শক্তভাবে আঁটকে থাকা পিন্ড) থেকে, তারপর পূর্ণ আকৃতি অথবা অপূর্ণ আকৃতির গোশত পিন্ড থেকে। তোমাদের কাছে স্পষ্ট করার জন্যে (এ তত্ত্ব পেশ করছি)। আমরা যা ইচ্ছা করি তা মায়ের গর্ভে একটা নিদিষ্ট সময় স্থিত করি। তারপর তোমাদের বের করে আনি শিশু হিসেবে। তারপর তোমরা পৌঁছে যাও পরিণত বয়েসে। তখন তোমাদের কারো ওফাত হয়, আবার তোমাদের কাউকে পৌঁছে দিই দুর্বলতম বয়েসে, যার ফলে তারা যা কিছু জানতো, সে সম্পর্কে আর কিছুই অবগত থাকেনা। তুমি জমিনকে দেখছো শুকনো, তারপর আমরা যখন পানি বর্ষণ করি, তখন তা শস্য - শ্যামল হয় এবং আন্দোলিত হয়, আর তা উৎপন্ন করে সব ধরনের সুদৃশ্য উদ্ভিদ। |
22-6 : এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ্ সত্য এবং তিনি জীবিত করেন মৃতকে, আর তিনি সব বিষয়ে শক্তিমান। |
22-7 : আর কিয়ামত অবশ্যি আসবে, তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই এবং কবরে যারা আছে আল্লাহ্ অবশ্যি তাদের পুনরুত্থিত করবেন। |
22-8 : কিছু লোক আছে, যারা এলেম ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে। তাছাড়া তাদের কাছে সঠিক পথের দিশাও নেই, নূর (সত্যজ্ঞান) বিতরণকারী কিতাবও নেই। |
22-9 : সে ঘাড় বাঁকিয়ে বিতর্ক করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করতে। দুনিয়াতেও তার জন্যে লাঞ্ছনা, আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে আস্বাদন করাবো দগ্ধ হবার যন্ত্রণা। |
22-10 : সেদিন তাকে বলা হবে: এটা তোমার কৃতকর্মের ফল। আল্লাহ্ তো তাঁর বান্দাদের প্রতি যুলুম করেননা। |
22-11 : মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আছে, আল্লাহর ইবাদত করে সীমানায় দাঁড়িয়ে। তখন কল্যাণ লাভ করলে তার মন শান্ত হয়, আর বিপদ এলে সে সীমানা থেকে নেমে আগের জায়গায় চলে যায়। এসব লোক দুনিয়াও হারায়, আখিরাতও হারায়। এ এক সুস্পষ্ট ক্ষতি। |
22-12 : সে আল্লাহর পরিবর্তে যাদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে, তারা না তার ক্ষতি করতে পারে, আর না উপকার। এ এক চরম বিপথগামিতা। |
22-13 : সে যাকে ডাকে তার ক্ষতির দিকটাই উপকারের চাইতে নিকটতর। কতো যে নিকৃষ্ট মাওলা (অভিভাবক) আর কতো যে নিকৃষ্ট সাথি এরা। |
22-14 : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে আল্লাহ্ তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে (উদ্যানসমূহে), যাদের নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদীর - নহর। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন, তাই করেন। |
22-15 : যে মনে করে আল্লাহ্ তাকে কখনো সাহায্য করবেন না দুনিয়া এবং আখিরাতে, সে একটি রশি আকাশের দিকে লম্বা করে টানিয়ে নিক, তারপর (আকাশে উঠে) সেটা কেটে দিক, তারপর সে দেখুক তার কৌশল তার ক্রোধের কারণ দূর করতে পারে কিনা। |
22-16 : এভাবে আমরা এ কুরআন নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াত আকারে, আর আল্লাহ্ অবশ্যি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। |
22-17 : নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, যারা ইহুদি হয়েছে, এছাড়া সাবী, খৃষ্টান, মজুসি (অগ্নিপূজারি), আর যারা শিরক করেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন। সব বিষয়ে আল্লাহ্ প্রত্যক্ষদর্শী - সাক্ষী। |
22-18 : তুমি কি দেখছোনা, আল্লাহকে সাজদা করছে সবাই, যারা মহাকাশে আছে, যারা পৃথিবীতে আছে, সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্ররাজি, পাহাড় পর্বত, বৃক্ষলতা, জীব - জানোয়ার, এছাড়া মানুষের মধ্যেও অনেকেই। আর অনেকের জন্যেই অবধারিত হয়ে গেছে আযাব। আল্লাহ্ যাকে অপমানিত করেন, তাকে সম্মানিত করার কেউ নেই। আল্লাহ্ তাই করেন, যা ইচ্ছা করেন। (সাজদা) |
22-19 : এরা বিবাদে লিপ্ত দুটি পক্ষ, তারা বিবাদ করছে তাদের প্রভুর বিষয়ে। যারা কুফুরি করে তাদের জন্যে প্রস্ত্তত করা হয়েছে আগুনের পোশাক। তাদের মাথার উপর থেকে ঢালা হবে টগবগে ফুটন্ত পানি। |
22-20 : এর ফলে তাদের পেটে যা আছে এবং শরীরের চামড়া বিগলিত হয়ে পড়বে। |
22-21 : এছাড়া তাদের জন্যে থাকবে লোহার মুগুর। |
22-22 : যখনই যন্ত্রণার জ্বালায় তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে তাতে। বলা হবে: আস্বাদন করো দগ্ধ হবার যন্ত্রণা। |
22-23 : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে আল্লাহ্ তাদের দাখিল করবেন জান্নাত (উদ্যান)সমূহে, যাদের নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর। তাদেরকে সেখানে অলংকার পরানো হবে সোনার এবং মুক্তার। সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমি পোশাক। |
22-24 : আর তাদেরকে (দুনিয়ায়) সুন্দর ও উত্তম কথা বলার পথ দেখানো হয়েছিল এবং পরিচালিত করা হয়েছিল প্রশংসিত আল্লাহর পথে। |
22-25 : পক্ষান্তরে যারা কুফুরি করে এবং আল্লাহর পথে চলতে ও মসজিদুল হারামে যেতে বাধা সৃষ্টি করে, যে ঘরকে আমরা করে দিয়েছি স্থানীয় এবং বহিরাগত সকলের জন্যে সমান অধিকার সম্পন্ন (তাদের জন্যে শাস্তি অবধারিত)। যারাই তাতে (মসজিদুল হারামে) সীমালঙ্ঘন করে পাপ করবে, তাদেরকেই আমরা আস্বাদন করাবো বেদনাদায়ক আযাব। |
22-26 : স্মরণ করো, আমরা ইবরাহিমের জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেই ঘর (নির্মাণের) স্থান, আর তাকে বলে দিয়েছিলাম: আমার সাথে কোনো কিছুকে শরিক করোনা এবং আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাদের জন্যে, যারা তাওয়াফ করে, যারা সালাতে দাঁড়ায় এবং রুকু ও সাজদা করে। |
22-27 : (আর আমরা ইবরাহিমকে এই নির্দেশও দিয়েছিলাম যে) মানুষের মাঝে হজ্জের ঘোষণা প্রচার করে দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং উটের পিঠে করে। তারা আসবে দূর দূরান্ত থেকে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে। |
22-28 : যাতে করে তারা তাদের জন্যে উপকারী স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে, আর যেনো তাদেরকে জীবিকা হিসেবে তিনি যেসব চারপায়ী জানোয়ার দান করেছেন সেগুলোর উপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। আর তোমরা (সেই কুরবানি করা পশুর গোশ্ত) নিজেরা খাও এবং অভাবী ও মুখাপেক্ষী লোকদের খেতে দাও। |
22-29 : তারপর তারা যেনো তাদের (দৈহিক) অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পুরা করে, আর (আমার) এই প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে। |
22-30 : এগুলোই (হজ্জের বিধান)। এছাড়া যে আল্লাহর পবিত্র (স্থান ও অনুষ্ঠান) সমূহের প্রতি সম্মান দেখাবে, তার প্রভুর কাছে সেটা হবে তার জন্যে উত্তম। আর তোমাদের জন্যে হালাল করে দেয়া হলো গবাদি পশু সেগুলো ছাড়া, যেগুলোর বিষয়ে আগেই তোমাদের তিলাওয়াত করা (বিবরণ দেয়া) হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্তি পূজার নোংরামি বর্জন করো এবং বর্জন করো মিথ্যা কথা |
22-31 : আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে এবং তাঁর সাথে কোনো শরিক না করে। যে কেউ আল্লাহর সাথে শরিক করবে, সে যেনো আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে গেলো আর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো, কিংবা প্রবল বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপ করলো এক নিরুদ্দেশ স্থানে। |
22-32 : এগুলো (আল্লাহর নির্দেশাবলি), আর যারাই আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান দেখাবে, সেটা হবে অন্তরের তাকওয়ার প্রকাশ। |
22-33 : এগুলোর (এসব পশুর) মধ্যে তোমাদের জন্যে রয়েছে উপকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে, তারপর তাদের কুরবানির স্থান আমার প্রাচীন ঘরের কাছে। |
22-34 : আমরা প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানির একটি নিয়ম করে দিয়েছি, আল্লাহ্ তাদেরকে জীবিকা হিসেবে যেসব চারপায়ী জানোয়ার দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেনো তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ্ তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই প্রতি আত্মসর্মপণ করো। আর হে নবী, সুসংবাদ দাও বিনয়ীদের, |
22-35 : যাদের কলব কেঁপে উঠে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে, যারা সবর অবলম্বন করে বিপদ মসিবতে, সালাত কায়েম করে এবং আমাদের দেয়া জীবিকা থেকে খরচ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে)। |
22-36 : আর উটকে আমরা বানিয়েছি আল্লাহর একটি নিদর্শন তোমাদের জন্যে। আর তাতে রয়েছে তোমাদের জন্যে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় তোমরা তাদের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যাবে, তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং তা থেকে খেতে দাও ধৈর্যশীল অভাবীদের ও প্রার্থী অভাবীদের। এভাবেই আমরা সেগুলো করে দিয়েছি তোমাদের অধীন, যাতে করে তোমরা শোকর আদায় করো। |
22-37 : আল্লাহর কাছে পৌঁছায়না তার (কুরবানির) গোশত এবং রক্ত, বরঞ্চ পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই আল্লাহ্ সেগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পারো তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত (কুরআন) দান করেছেন তার ভিত্তিতে। সুসংবাদ দাও কল্যাণকামীদের। |
22-38 : আল্লাহ্ মুমিনদের রক্ষা করেন। আল্লাহ্ কোনো বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেননা। |
22-39 : অনুমতি দেয়া হলো (প্রতিরোধের) যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে, কারণ তাদের প্রতি যুলুম করা হয়েছে। অবশ্যি তাদের সাহায্য করতে আল্লাহ্ সক্ষম। |
22-40 : (কারণ) তাদেরকে না হকভাবে খারিজ করে দেয়া হয়েছে তাদের ঘর - বাড়ি থেকে। (তাদের বের করে দেয়া হয়েছে) শুধু এ কারণে যে, তারা বলে: ‘ আল্লাহ্ আমাদের রব।’ আল্লাহ্ যদি একদল মানুষকে অন্য দল দিয়ে প্রতিহত না করতেন, তাহলে অবশ্যি বিধ্বস্ত হয়ে যেতো (খৃষ্টান) বৈরাগীদের উপাসনালয়, গীর্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ যেগুলোতে বেশি বেশি স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম। আর অবশ্যি আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তিকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিধর মহাপরাক্রমশালী। |
22-41 : (এসব লোক হলো তারা) যাদের আমরা জমিনে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে, এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সব কাজের পরিণাম তো আল্লাহর দায়িত্বে। |
22-42 : তারা যদি তোমাকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেই, তবে তাদের আগেও অস্বীকার করেছিল নূহ, আদ ও সামুদ জাতি। |
22-43 : ইবরাহিম এবং লুতের জাতিও। |
22-44 : মাদইয়ানবাসীরাও। এছাড়া অস্বীকার করা হয়েছিল মূসাকেও। আমরা কাফিরদের অবকাশ দিয়েছি, তারপর পাকড়াও করেছি। কেমন অসহনীয় ছিলো আমার শাস্তি! |
22-45 : কতো যে জনপদ আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। কারণ, সেগুলোর অধিবাসীরা ছিলো যালিম। সেসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। কতো যে কূপ পরিত্যাক্ত হয়েছিল, আর কতো যে সুদৃঢ় প্রাসাদ। |
22-46 : তারা কি জমিনের বুকে পরিভ্রমণ করেনা? আর তাদের যদি আকলওয়ালা কলব থাকতো এবং শুনার মতো কান থাকতো! আর তাদের চোখ তো অন্ধ নয়, মূলত অন্ধ হলো তাদের বুকের মধ্যকার কলব (হৃদয়)। |
22-47 : তারা তোমাকে দ্রুত আযাব এনে দিতে বলে। অথচ আল্লাহ্ কখনো তাঁর ওয়াদা খেলাফ করেন না। আল্লাহর কাছে একদিন হলো তোমাদের হিসাবের হাজার বছরের সমান। |
22-48 : কতো যে যালিম জনপদকে আমি অবকাশ দিয়েছি, তারপর তাদের পাকড়াও করেছি। আমার কাছেই হবে তাদের (শেষ) প্রত্যাবর্তন। |
22-49 : (হে নবী!) বলো: ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের জন্যে একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী।’ |
22-50 : অতএব, যারা ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তাদের জন্যে থাকবে মাগফিরাত এবং সম্মানজনক জীবিকা। |
22-51 : আর যারা আমার আয়াতকে খাটো করার চেষ্টা করবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী। |
22-52 : তোমার আগে আমরা যে রসূল কিংবা যে নবীই পাঠিয়েছি, তাদের কেউ যখনই কোনো আকাঙক্ষা করেছে, তখনই শয়তান তার আকাঙ্ক্ষায় কিছু নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ্ তা মুছে দেন এবং তখনই আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। |
22-53 : এটা এ জন্যে যে, শয়তান যা নিক্ষেপ করে সেটাকে আমরা পরীক্ষা বানাই তাদের জন্যে যাদের কলবে রোগ আছে এবং যারা পাষন্ডহৃদয়। নিশ্চয়ই যালিমরা রয়েছে অনেক মতভেদ ও সন্দেহের মধ্যে। |
22-54 : আর এটা এ জন্যেও, যাতে করে যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানতে পারে যে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাসত্য। তারপর তারা যেনো তাতে ঈমান আনে এবং সেটার অনুগত হয়। অবশ্যি আল্লাহ্ তাদেরকে পরিচালিত করেন সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে, যারা ঈমান আনে। |
22-55 : কাফিররা তাতে সন্দেহ পোষণ করতেই থাকবে, যতোদিন না তাদের কাছে আকস্মিকভাবে কিয়ামত এসে পড়ে, অথবা এসে পড়ে এক বন্ধ্যা দিনের আযাব। |
22-56 : সেদিন সমস্ত কর্তৃত্ব থাকবে আল্লাহর হাতে। তিনি তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন। তারপর যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ্ করেছে (বলে প্রমাণিত হবে), তারা থাকবে জান্নাতুন নায়ীমে। |
22-57 : আর যারা কুফুরি করেছে এবং আমাদের আয়াতকে অস্বীকার করেছে (বলে প্রমাণিত হবে), তাদের জন্যে থাকবে অপমানকর আযাব। |
22-58 : যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, তারপর নিহত হয়েছে, কিংবা তাদের মৃত্যু হয়েছে, অবশ্যি আল্লাহ্ তাদের উত্তম রিযিক দান করবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। |
22-59 : তিনি তাদের দাখিল করবেন এমন (উদ্যানে) যা তারা পছন্দ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং সহনশীল। |
22-60 : এ রকমই হবে। কোনো ব্যক্তি যদি নির্যাতিত হয়ে অনুরূপ প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তারপরও যদি সে আবার নির্যাতিত হয়, আল্লাহ্ অবশ্য অবশ্যি তাকে সাহায্য করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোমল, ক্ষমাশীল। |
22-61 : এর কারণ, আল্লাহ্ রাতকে প্রবেশ করিয়ে দেন দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সব শুনেন, সব দেখেন। |
22-62 : এর কারণ এটাও যে, আল্লাহ্ই একমাত্র মহাসত্য, আর আল্লাহর পরিবর্তে তারা যা ডাকে তা অসত্য, বাতিল। আর আল্লাহ্ই মর্যাদাবান ও শ্রেষ্ঠ। |
22-63 : তুমি কি দেখোনা, আল্লাহ্ নাযিল করেন আসমান থেকে পানি, আর তখন জমিন সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সূক্ষ্মদর্শী, সব বিষয়ে অবগত। |
22-64 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অভাবমুক্ত। সপ্রশংসিত। |
22-65 : তুমি কি দেখোনা, আল্লাহ্ যে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে রেখেছেন পৃথিবীতে যা আছে সবকিছুকে এবং তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে চলাচল করা নৌযানকে। তিনিই স্থির রাখেন আসমানকে তাঁর অনুমতি ছাড়া পৃথিবীর উপর পতিত হওয়া থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অতীব কোমল, পরম দয়াবান। |
22-66 : তিনিই তোমাদের জীবন দান করেন, অত:পর মৃত্যু দেন, তারপর আবার জীবিত করবেন। নিশ্চয়ই মানুষ ভীষণ অকৃতজ্ঞ। |
22-67 : প্রতিটি উম্মতের জন্যে আমরা নির্ধারিত করে দিয়েছি ইবাদত করার পদ্ধতি, যা তারা অনুসরণ করে। সুতরাং তারা যেনো এ বিষয়ে তোমার সাথে বিতর্ক না করে। তুমি তাদেরকে তোমার প্রভুর দিকে আহবান করো, নিশ্চয়ই তুমি রয়েছো সরল সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত। |
22-68 : তারা যদি তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে তুমি বলো: তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আল্লাহ্ই ভালো জানেন। |
22-69 : তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ সে বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন। |
22-70 : তুমি কি জানোনা, আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্ জানেন? সবই কিতাবে রেকর্ড করা আছে। আর এ কাজ আল্লাহর জন্যে খুবই সহজ। |
22-71 : তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন সবের ইবাদত করে যাদের পক্ষে আল্লাহ্ কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি এবং এ সম্পর্কে তাদেরও কোনো জ্ঞান নেই। যালিমদের কোনো সাহায্যকারী হবেনা। |
22-72 : যখন তাদের প্রতি আমাদের সুস্পষ্ট আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, তখন তুমি কাফিরদের চেহারায় লক্ষ্য করো অসন্তোষ। তারা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হয়, যারা তিলাওয়াত করে আমাদের আয়াত। তুমি বলো: আমি কি এর চাইতেও মন্দ কিছুর সংবাদ তোমাদের দেবো? তাহলো জাহান্নাম! এর ওয়াদাই আল্লাহ্ কাফিরদের দিয়েছেন। আর এটা যে ফিরে যাবার কতো নিকৃষ্ট জায়গা! |
22-73 : হে মানুষ! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে তা শুনো। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকো, তারা একটা মাছিও সৃষ্টি করতে পারেনা, এ উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্র হলেও নয়। আর মাছি যদি তার থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তাও তার থেকে উদ্ধার করতে পারেনা। সাহায্য সন্ধানকারী এবং যার কাছে সাহায্য সন্ধান করা হয়, (তারা উভয়ই) কতো যে দুবর্ল! |
22-74 : তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উলব্ধি করেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিধর, পরাক্রমশালী। |
22-75 : আল্লাহ্ ফেরেশতাদের থেকে বাণী বাহক মনোনীত করেন এবং মানুষের মধ্য থেকেও মনোনীত করেন। আল্লাহ্ সব শুনেন, সব দেখেন। |
22-76 : তাদের সামনে এবং পেছনে যা আছে সবই তিনি জানেন, আর সব বিষয় ফিরে যায় আল্লাহরই কাছে। |
22-77 : হে ঈমানদার লোকেরা! রুকু করো, সাজদা করো এবং ইবাদত করো তোমাদের প্রভুর, আর (মানব) কল্যাণের কাজ করো, অবশ্যি তোমরা সফলকাম হবে। (সাজদা) |
22-78 : আর জিহাদ করো আল্লাহর মধ্যে (উদ্দেশ্যে) জিহাদের হক আদায় করে। তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন এবং দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোনো কষ্ট চাপিয়ে দেননি। তোমাদের পিতা ইবরাহিমের আদর্শের উপর তোমরা প্রতিষ্ঠিত হও। আল্লাহ্ই তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বেও এবং এই কিতাবেও, যাতে করে এই রসূল তোমাদের উপর সাক্ষী হয় আর তোমরাও সাক্ষী হও মানব জাতির উপর। অতএব তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আঁকড়ে ধরো আল্লাহকে। তিনিই তোমাদের মাওলা (অভিভাবক)। কতো যে উত্তম মাওলা তিনি এবং কতো যে উত্তম সাহায্যকারী! |