মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ১১৮, রকু সংখ্যা: ০৬এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
23-1 : সফল হয়েছে মুমিনরা, |
23-2 : যারা তাদের সালাতে হয় বিনীত, |
23-3 : যারা অর্থহীন কথাবার্তা থেকে থাকে বিরত, |
23-4 : যারা আত্মোন্নয়নে থাকে সক্রিয়, |
23-5 : যারা নিজেদের যৌন জীবনকে করে হিফাযত, |
23-6 : নিজেদের স্ত্রী এবং অধিকারভুক্ত দাসীদের ছাড়া, তাতে তারা হবেনা তিরস্কৃত। |
23-7 : কিন্তু যারা এ ছাড়া অন্য কাউকেও কামনা করবে, তারা অবশ্যি গণ্য হবে সীমালঙ্ঘনকারী বলে। |
23-8 : আর তারা রক্ষা করে নিজেদের আমানত ও অংগীকার, |
23-9 : তাছাড়া তারা যত্নবান থাকে তাদের সালাতের প্রতি, |
23-10 : এরাই হবে ওয়ারিশ। |
23-11 : তারা ওয়ারিশ হবে ফেরদাউসের এবং সেখানেই হবে তারা চিরস্থায়ী। |
23-12 : আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটির উপাদান থেকে, |
23-13 : তারপর তাকে আমরা নোতফা (শুক্রবিন্দু) হিসেবে স্থাপন করি এক নিরাপদ দুর্গে। |
23-14 : তারপর আমরা নোতফাকে রূপান্তরিত করি আলাকা - তে (শক্তভাবে আঁটকে থাকা জিনিসে), তারপর আলাকা - কে রূপান্তরিত করি মুদগায় (পিন্ডতে), তারপর মুদগাকে রূপান্তরিত করি হাড় - অস্থিতে, তারপর হাড় - অস্থিকে ঢেকে দেই গোশ্ত দিয়ে, তারপর আমরা তাকে বানিয়ে নিই অন্য এক সৃষ্টি। সুতরাং সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কতো যে বরকতওয়ালা! |
23-15 : এরপর অবশ্যি তোমাদের মৃত্যু হবে। |
23-16 : তারপর তোমরা পুনরুত্থিত হবে কিয়ামতের দিন। |
23-17 : আমরা তোমাদের উপরে সৃষ্টি করেছি সাতটি স্তর (আকাশ), সৃষ্টি সম্পর্কে আমরা গাফিল নই। |
23-18 : আর আমরা নাযিল করেছি আসমান থেকে পানি পরিমাণ মাফিক। সেই পানিকে আমরা সংরক্ষণ করেছি মাটিতে। আবার সে পানি আমরা নিয়ে যেতেও সক্ষম। |
23-19 : অত:পর সেই পানি দিয়ে আমরা তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান, তাতে তোমাদের জন্যে হয় প্রচুর ফলন। তা থেকেই তোমরা খাও। |
23-20 : আমরা এক ধরনের গাছ সৃষ্টি করেছি, তা জন্মায় সিনাই পর্বতে। তাতে উৎপন্ন হয় তেল এবং ভোক্তাদের জন্যে ব্যঞ্জন। |
23-21 : তোমাদের জন্যে গবাদি পশুতে রয়েছে শিক্ষার বিষয়। তাদের পেটে যা (যে দুধ) আছে তা থেকে আমরা তোমাদের পান করাই। তা ছাড়া সেগুলোর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্যে অনেক রকম উপকারিতা। আর তোমরা খেয়ে থাকো সেগুলো থেকে (সেগুলোর গোশত)। |
23-22 : সেগুলোতে এবং নৌযানে তোমরা আরোহন করে থাকো। |
23-23 : আমরা নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার কওমের কাছে। সে তাদের বলেছিল: ‘হে আমার কওম! তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব করো, তোমাদের জন্যে তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তবু কি তোমরা সতর্ক হবেনা?’ |
23-24 : তখন তার কওমের কাফির নেতারা বলেছিল: ‘‘এ তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ ছাড়া কিছু নয়। সে তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব পেতে চায়। আল্লাহ্ (রসূল পাঠাতে) চাইলে অবশ্যি ফেরেশতা পাঠাতেন। আমাদের আগেকার লোকদের সময় এ রকম ঘটনা ঘটেছে বলে তো আমরা শুনিনি। |
23-25 : সে আসলে একজন জিনে ধরা লোক। তোমরা এ ব্যাপারে কিছুদিন অপেক্ষা করো।’’ |
23-26 : তখন সে বলেছিল: ‘আমার প্রভু! আমাকে সাহায্য করো, কারণ তারা তো আমাকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ |
23-27 : তখন আমরা তাকে অহি পাঠিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলাম, আমাদের তত্ত্বাবধানে আমাদের অহি অনুযায়ী একটি নৌযান তৈরি করো। যখন আমাদের নির্দেশ এসে যাবে এবং চুলা উথলে পানি উঠবে, তখন প্রত্যেক ধরনের জীব জানোয়ার একেক জোড়া উঠিয়ে নিয়ো এবং তোমার পরিবার পরিজনকেও নিয়ো, তাদেরকে ছাড়া, যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব সিদ্ধান্ত রয়েছে। যারা যুলুম করেছে তাদের ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ করোনা, কারণ তারা নিমজ্জিত হবেই। |
23-28 : অত:পর তুমি এবং তোমার সাথিরা যখন নৌযানে উঠে আসন গ্রহণ করবে, তখন বলবে: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের নাজাত দিয়েছেন যালিম কওম থেকে!’ |
23-29 : আরো বলবে: ‘আমার প্রভু! আমাকে অবতরণ করাও বরকতময় অবতরণের স্থানে, তুমিই তো অবতরণের জন্যে সর্বোত্তম স্থানদানকারী।’ |
23-30 : এর মধ্যে রয়েছে অনেক নিদর্শন। আমরা তো কেবল তাদের পরীক্ষা করেছিলাম। |
23-31 : তাদের পর আমরা অন্য একটি প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছিলাম। |
23-32 : আমরা তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম একজন রসূল। সে তাদের বলেছিল: ‘তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব করো। তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ্ নেই। তবু কি তোমরা সতর্ক হবেনা?’ |
23-33 : তখন তার কওমের সেইসব কাফির প্রধানরা বলেছিল যারা আখিরাতের সাক্ষাতকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমরা দিয়েছিলাম পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগের সামগ্রী: ‘‘এতো তোমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়। সে তো তাই খায়, তোমরা যা খাও এবং তাই পান করে, তোমরা যা পান করো। |
23-34 : তোমরা যদি তোমাদের মতো মানুষের আনুগত্য করো, তবে অবশ্যি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। |
23-35 : সে কি তোমাদের এই ওয়াদা দেয় যে, তোমরা যখন মরে যাবে এবং মাটি ও হাড় - অস্থিতে পরিণত হবে তখনো তোমাদের বের করে আনা হবে? |
23-36 : অবসম্ভব, তোমাদের যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা অসম্ভব। |
23-37 : আমাদের দুনিয়ার হায়াতই একমাত্র হায়াত, এখানেই আমরা মরি এবং বাঁচি এবং আমরা কখনো পুনরুত্থিত হবোনা। |
23-38 : সে তো এমন একজন ব্যক্তি, যে মিথ্যা রচনা করে নিয়ে আল্লাহর নামে চালায়। আমরা তাকে বিশ্বাস করবোনা।’’ |
23-39 : (তখন) সে বললো: ‘প্রভু! আমাকে সাহায্য করো, তারা আমাকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ |
23-40 : (আল্লাহ্) বললেন: ‘অল্প কিছুদিন পরেই তারা অনুতপ্ত হবে।’ |
23-41 : পরে বাস্তবিকই এক প্রচন্ড শব্দ আঘাত হানে তাদের উপর। ফলে আমরা তাদের বানিয়ে দিলাম তরঙ্গ বিধ্বস্ত আবর্জনার স্তূপের মতো। এভাবেই দূর হয়ে গেলো যালিম কওম। |
23-42 : তাদের পরে আমরা সৃষ্টি করেছি আরো অনেক প্রজন্ম। |
23-43 : কোনো উম্মতই তাদের জন্যে নির্ধারিত সময়কে ত্বরান্বিতও করতে পারেনা এবং অতিক্রমও করতে পারেনা। |
23-44 : তারপর আমরা একের পর এক রসূল পাঠিয়েছি। যখনই কোনো উম্মতের কাছে তাদের রসূল এসেছিল, তারা তাকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে আমরা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছি একের পর এক এবং তাদের বানিয়ে দিয়েছি ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়। ধ্বংস হোক সেইসব লোক যারা ঈমান আনেনা। |
23-45 : এর পরে পাঠিয়েছি আমরা মূসা এবং তার ভাই হারূণকে আমাদের আয়াত এবং সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে, |
23-46 : ফেরাউন এবং তার (জাতির) নেতাদের কাছে। কিন্তু তারা অহংকার করে। আর তারা ছিলো একটি উদ্ধত কওম। |
23-47 : তারা বলেছিল: ‘আমরা কি আমাদের মতোই দু’জন মানুষের প্রতি ঈমান আনবো যেখানে তাদের সম্প্রদায় (বনি ইসরাঈল) আমাদেরই দাসত্ব করে?’ |
23-48 : তারা তাদের দু’জনকেই প্রত্যাখ্যান করে, ফলে তারা হয়ে গেলো ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তরভুক্ত। |
23-49 : আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, যাতে করে তারা সঠিক পথ পায়। |
23-50 : আমরা মরিয়মের পুত্র (ঈসা) এবং তার মাকে বানিয়েছিলাম একটি নিদর্শন। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও ঝরণা বিশিষ্ট টিলায়। |
23-51 : হে রসূলরা! তোমরা উত্তম - পবিত্র জিনিস খাও এবং আমলে সালেহ্ করো। তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি জ্ঞাত। |
23-52 : তোমাদের এই উম্মত মূলত একটিই উম্মত এবং আমিই তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো। |
23-53 : কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দীনকে বহুধা বিভক্ত করে ফেলেছে, প্রত্যেক উপদলই তাদের কাছে যা আছে, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট। |
23-54 : সুতরাং কিছুকালের জন্যে তাদেরকে তাদের বিভ্রান্তিতে পড়ে থাকতে দাও। |
23-55 : তারা কি মনে করে যে, আমরা তাদের যে ধনমাল ও সন্তান সন্ততি দিয়ে সাহায্য করছি, |
23-56 : তা দিয়ে তাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝেনা। |
23-57 : নিশ্চয়ই যারা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে তাদের প্রভুর ভয়ে, |
23-58 : যারা ঈমান রাখে তাদের প্রভুর আয়াতের প্রতি, |
23-59 : যারা শিরক করেনা তাদের প্রভুর সাথে, |
23-60 : এবং তাদেরকে যা দান করা হয়েছে, তাদের প্রভুর কাছে ফিরে আসতে হবে এই বিশ্বাসে তা থেকে দান করে ভীত কম্পিত মনে, |
23-61 : এরাই তৎপর কল্যাণকর কাজে এবং এরাই তাতে অগ্রগামী। |
23-62 : আমরা কোনো ব্যক্তির উপরই তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্বের বোঝা চাপাইনা। আমাদের কাছে রয়েছে একটি কিতাব যা সত্য বলে দেয়। আর তাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম করা হবেনা। |
23-63 : বরং এ বিষয়ে তাদের কলবগুলো হয়ে রয়েছে অজ্ঞতায় আচ্ছন্ন। এ ছাড়া তাদের আরো অনেক (মন্দ) কাজ আছে, সেগুলো তারা করে থাকে, |
23-64 : যতোদিন না আমরা তাদের বিলাসী প্রতিপত্তিশালীদেরকে আযাবের আঘাতে পাকড়াও করি। যখন তা করি তখন তারা আর্তনাদ করতে থাকে। |
23-65 : (কিয়ামতের দিন তাদের বলা হবে:) আজ আর্তনাদ করোনা। তোমরা কিছুতেই আজ আমাদের সাহায্য পাবেনা। |
23-66 : তোমাদের কাছে তো আমাদের আয়াত তিলাওয়াত করা হতো, তখন তোমরা পেছনে ফিরে কেটে পড়তে, |
23-67 : দাম্ভিকের মতো - এ সম্পর্কে রাত্রে নিরর্থক কল্পকথা বলতে বলতে। |
23-68 : তারা কি এ বাণী অনুধাবন করার চেষ্টা করেনা, না কি তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে যা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আসেনি? |
23-69 : না কি তারা তাদের রসূলকে চিনতে পারেনা বলে তাকে অস্বীকার করে? |
23-70 : না কি তারা বলে: ‘সে তো একজন জিনে ধরা লোক?’ না, বরং সে তাদের কাছে ‘হক’ (মহাসত্য) নিয়ে এসেছে এবং তাদের অধিকাংশ লোকই সত্যকে অপছন্দ করে। |
23-71 : সত্য যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতো, তাহলে মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মাঝে যা কিছু আছে সর্বত্র ফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যেতো। বরং আমরা তাদের কাছে পাঠিয়েছি তাদের উপদেশ, আর তারা তাদের উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। |
23-72 : তুমি কি তাদের কাছে পারিশ্রমিক চাইছো? তোমার প্রভুর প্রতিদানই তোমার জন্যে উত্তম। তিনিই সর্বোত্তম রিযিকদাতা। |
23-73 : তুমি তো তাদের আহবান করছো সিরাতুল মুস্তাকিমের দিকে। |
23-74 : যারা আখিরাতের প্রতি ঈমান আনেনা তারা সেই সিরাত (পথ) থেকে বিচ্যুত। |
23-75 : আমরা যদি তাদের প্রতি রহমত করতাম এবং তাদের দুঃখ দুর্দশাও দূর করে দিতাম, তবু তারা তাদের অবাধ্যতা নিয়েই বিভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতো। |
23-76 : আমরা তাদের আযাব দিয়ে পাকড়াও করেছি, কিন্তু তখনো তারা তাদের প্রভুর প্রতি বিনত হয়নি এবং বিনয়ের সাথে ফরিয়াদও করেনি তাঁর কাছে। |
23-77 : অবশেষে যখন আমরা তাদের জন্যে কঠিন আযাবের দুয়ার খুলে দেই, তখন তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়ে থাকে। |
23-78 : তিনিই তো তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন কান, চোখ এবং হৃদয়। কিন্তু তোমরা খুব কমই শোকর আদায় করো। |
23-79 : তিনিই পৃথিবীতে তোমাদের বংশ বিস্তার করে দিয়েছেন এবং তাঁর দিকেই তোমাদের হাশর (সমবেত) করা হবে। |
23-80 : তিনিই তো হায়াত দান করেন এবং মউত ঘটান। রাত এবং দিনের আবর্তন তাঁরই কর্তৃত্বে। তবু কি তোমরা আকল খাটাবেনা? |
23-81 : বরং তারা সে রকমই বলে, যে রকম বলেছে তাদের আগেকার লোকেরা। |
23-82 : তারা বলে: ‘‘আমরা যখন মরে যাবো এবং মাটি আর হাড়ে পরিণত হবো, তখন কি আমাদের পুনর্জীবিত করা হবে? |
23-83 : আমাদেরকে তো এর ওয়াদা দেয়া হয়েছে এবং এর আগে দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকেও। আসলে এতো সেকালের কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।’’ |
23-84 : হে নবী! তাদের জিজ্ঞাসা করো! পৃথিবী এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সেগুলো কার, যদি তোমরা জানো, তবে বলো? |
23-85 : অবশ্যি তারা বলবে: ‘আল্লাহর।’ বলো: ‘তবে কেন শিক্ষা গ্রহণ করোনা?’ |
23-86 : হে নবী! তাদের জিজ্ঞেস করো: ‘সাত আকাশ এবং আরশে আযিমের রব কে?’ |
23-87 : অবিলম্বেই তারা বলবে: ‘ আল্লাহ।’ বলো: ‘তবে কেন তোমরা সতর্ক হওনা?’ |
23-88 : হে নবী! তাদের জিজ্ঞেস করো: কার মুষ্টিবদ্ধ রয়েছে সবকিছুর কর্তৃত্ব, যিনি সবাইকে আশ্রয় দেন এবং যাঁর উপর কোনো আশ্রয়দাতা নেই? যদি তোমরা জানো, বলো। |
23-89 : অবিলম্বেই তারা বলবে: ‘আল্লাহ্।’ বলো: ‘তবে কোন্ দিকে তোমরা মোহগ্রস্ত হচ্ছো?’ |
23-90 : বরং আমরা তাদের কাছে সত্য পৌঁছে দিয়েছি, কিন্তু তারা অবশ্য অবশ্যি মিথ্যাবাদী। |
23-91 : আল্লাহ্ কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে আর কোনো ইলাহ্ও নেই। যদি থাকতোই, তবে তো প্রত্যেক ইলাহ্ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেতো এবং তারা একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তারে উঠে পড়ে লাগতো। তারা যা আরোপ করে, তা থেকে আল্লাহ্ সম্পূর্ণ পবিত্র ও মহান। |
23-92 : তিনি গায়েবের জ্ঞানী এবং দৃশ্যেরও। তারা তাঁর সাথে যা শরিক করে তিনি তা থেকে অনেক উপরে। |
23-93 : (হে নবী!) বলো: ‘‘আমার প্রভু! যে (আযাবের) বিষয়ে তাদের ওয়াদা দেয়া হচ্ছে, তা যদি তুমি আমার জীবদ্দশায় সংঘটিত করো, |
23-94 : তবে, হে প্রভু! আমাকে যালিম লোকদের অন্তরভুক্ত করোনা।’’ |
23-95 : আমরা তাদের যে বিষয়ের ওয়াদা দিচ্ছি, তা (তোমার জীবদ্দশায়ই) তোমাকে দেখাতে অবশ্যি আমরা সক্ষম। |
23-96 : মন্দের মুকাবেলায় তাই করো যা সর্বোত্তম। তারা যা আরোপ করে সে বিষয়ে আমরা অধিক জানি। |
23-97 : হে নবী! বলো: ‘‘আমার প্রভু! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই শয়তানের কুপ্ররোচনা থেকে। |
23-98 : আমি তোমার কাছে আরো পানাহ্ চাই আমার কাছে তাদের (শয়তানদের) হাজির হওয়া থেকে।’’ |
23-99 : যখন তাদের কারো মউতের সময় এসে পড়ে, তখন সে বলে: ‘‘প্রভু! আমাকে পুনরায় (পৃথিবীতে) পাঠাও। |
23-100 : যাতে আমি ভালো কাজ করতে পারি, যা আমি আগে করিনি।’’ কখনো নয়, এতো কথার কথা মাত্র। আর তাদের সামনেই আছে বরযখ পুনরুত্থান কাল পর্যন্ত। |
23-101 : যখন ফুঁ দেয়া হবে শিঙ্গায়, সেদিন তাদের মাঝে আর কোনো বংশীয় বন্ধন থাকবেনা এবং কেউ কারো কথা জিজ্ঞাসাও করবেনা। |
23-102 : তখন ভারি হবে যাদের (নেকীর) পাল্লা, তারাই হবে সাফল্য অর্জনকারী। |
23-103 : এবং হালকা হবে যাদের (নেকীর) পাল্লা, তারা হলো সেইসব লোক যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে, চিরকাল থাকবে তারা জাহান্নামে। |
23-104 : আগুন দগ্ধ করতে থাকবে তাদের চেহারা এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারা নিয়ে। |
23-105 : (তাদের বলা হবে:) ‘তোমাদের কাছে কি আমাদের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হতোনা? এবং তোমরা সেটাকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করতে না?’ |
23-106 : তারা বলবে: ‘‘আমাদের প্রভু! আমাদের বদ নসিব আমাদের উপর বিজয়ী হয়েছে আর মূলতই আমরা ছিলাম একটি বিপথগামী কওম। |
23-107 : আমাদের প্রভু! এখন আমাদেরকে এখান থেকে বের করে দাও। এরপরও যদি আমরা কুফুরিতে ফিরে যাই, তবে অবশ্যি আমরা যালিম হিসেবেই গণ্য হবো।’’ |
23-108 : তিনি বলবেন: ‘তোমরা এখানেই নিকৃষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকো এবং আমার সাথে তোমরা আর কথা বলোনা।’ |
23-109 : আমার একদল বান্দা বলতো: ‘আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি, তাই তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের প্রতি রহম করো, আর তুমিই তো সর্বোত্তম রহমওয়ালা।’ |
23-110 : কিন্তু তোমরা তাদের নিয়ে বিদ্রুপ করতে আর সেই বিদ্রুপ তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল। তোমরা তো তাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টাই করছিলে। |
23-111 : তাদের সবর অবলম্বনের কারণে আমি তাদের এমন জেযা (প্রতিদান) দিয়েছি যে, আজ তারাই সফলকাম। |
23-112 : তিনি জিজ্ঞেস করবেন: ‘তোমরা পৃথিবীতে কয় বছর অবস্থান করেছিলে?’ |
23-113 : তারা বলবে: ‘আমরা সেখানে অবস্থান করেছিলাম একদিন কিংবা দিনের কিছু অংশ। গণনাকারীদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন।’ |
23-114 : তিনি বলবেন: তোমরা অল্পকালই সেখানে অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে! |
23-115 : তোমরা কি ধরে নিয়েছিলে যে, আমরা বিনা কারণেই তোমাদের সৃষ্টি করেছিলাম? আর তোমাদেরকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনা হবেনা ? |
23-116 : অতীব মহান আল্লাহ্ প্রকৃত সম্রাট, কোনো ইলাহ্ নেই তিনি ছাড়া। সম্মানিত আরশের তিনি মালিক। |
23-117 : যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ইলাহ্ ডাকে, এ বিষয়ে তার কাছে কোনো সত্যায়নপত্র নেই। তার হিসাব হবে তার প্রভুর কাছে। কাফিররা কখনো সফলতা অর্জন করেনা। |
23-118 : হে নবী! তুমি বলো: ‘আমার প্রভু!, ক্ষমা করো এবং রহম করো, আর তুমিই তো সর্বোত্তম রহমওয়ালা।’ |