আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 26, আশ্ শোয়ারা (কবি)

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 26, আশ্ শোয়ারা (কবি)



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২২৭, রুকু সংখ্যা: ১১

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৯লোকেরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনছেনা বলে নবীর পেরেশানি।
১০-৬৮ফিরাউনের কাছে মূসা আ.-এর দাওয়াত এবং মূসার সাথে ফিরাউনের দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ার ইতিহাস।
৬৯-১০৪ইবরাহিম আ. কর্তৃক নিজ পিতা ও জাতির কাছে তাওহীদের দাওয়াত দান এবং তাদের প্রতি তাঁর উপদেশ।
১০৫-১২২নূহ আ.-এর দাওয়াত এবং তাঁর সাথে তাঁর জাতির সংঘাত।
১২৩-১৪০আদ জাতির কাছে হুদ আ.-এর দাওয়াত। আদ জাতির দাওয়াত প্রত্যাখ্যান এবং তাদের ধ্বংস।
১৪১-১৫৯সামুদ জাতির কাছে সালেহ্ আ.-এর দাওয়াত। সামুদ জাতির হঠকারিতা ও ধ্বংস।
১৬০-১৭৫লুত আ.-এর জাতির কাছে তাঁর দাওয়াত। তাদের অবাধ্যতা ও তাদের ধ্বংসের ইতিহাস।
১৭৬-১৯১আইকাবাসীর কাছে শুয়াইব আ.-এর দাওয়াত, শুয়াইবকে তাদের প্রত্যাখ্যান ও তাদের ধ্বংস।
১৯২-২১২কুরআন অকাট্যভাবে রাব্বুল আলামিনের কিতাব। কুরআনের ব্যাপারে প্রত্যাখ্যানকারীদের অভিযোগের জবাব।
২১৩-২২৭নবীর প্রতি শিরকের ব্যাপারে সতর্কবাণী। নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত দানের নির্দেশ। অনুসারীদের প্রতি দয়া পরবশ হওয়ার নির্দেশ। কবিদের আদর্শহীনতা। ঈমানদার কবিরাই সঠিক পথে থাকতে পারে।
26-1 : তোয়া সিন মিম।
26-2 : এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
26-3 : তারা মুমিন হচ্ছে না বলে তুমি হয়তো মনের দুঃখে নিজেকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
26-4 : আমরা চাইলে আসমান থেকে তাদের জন্যে একটি নিদর্শন নাযিল করতাম, তখন সেটার প্রতি তাদের গর্দান নুইয়ে পড়তো।
26-5 : যখনই তাদের কাছে রহমানের পক্ষ থেকে নতুন কোনো যিকির (উপদেশ বার্তা) আসে, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
26-6 : তারা তো অস্বীকার করেছে। সুতরাং তারা যা নিয়ে বিদ্রূপ করছে তার প্রকৃত খবর তাদের কাছে অচিরেই এসে পড়বে।
26-7 : তারা কি জমিনের দিকে তাকিয়ে দেখেনা? আমরা তাতে সব ধরনের কতো যে উত্তম উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি!
26-8 : অবশ্যি এতে রয়েছে একটি নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়।
26-9 : নিশ্চয়ই তোমার প্রভু মহাপরাক্রমশালী, পরম দরয়াবান।
26-10 : স্মরণ করো, তোমার প্রভু মূসাকে ডেকে বলেছিলেন, তুমি যালিম কওমের কাছে যাও,
26-11 : ফেরাউনের কওমের কাছে। তাদের বলো: ‘তারা কি সতর্ক হবেনা?’
26-12 : তখন মূসা বললো: ‘‘আমার প্রভু! আমার আশংকা হয়, তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে।
26-13 : আমার মন ছোট হয়ে আসছে আর আমার যবানও সঞ্চালিত হচ্ছে না, সুতরাং তুমি হারূণকে রিসালাত দান করো।
26-14 : আমার বিরুদ্ধে তাদের একটা অভিযোগও আছে, তাই আমি আশংকা করছি তারা আমাকে হত্যা করবে।’’
26-15 : আল্লাহ্ বললেন: ‘কখনো নয়। সুতরাং তোমরা দু’জনই যাও আমাদের নিদর্শনসমূহ নিয়ে, আমরাও তোমাদের সাথে থাকবো, সব শুনবো।’
26-16 : তোমরা ফেরাউনের কাছে যাও, তাকে বলো: ‘‘আমরা রাব্বুল আলামিনের রসূল।
26-17 : তুমি বনি ইসরাঈলকে আমাদের সাথে যেতে দাও।’’
26-18 : ফেরাউন বললো: ‘‘আমরা কি শৈশবে তোমাকে আমাদের মধ্যে লালন পালন করিনি? তুমি তো তোমার জীবনের অনেক বছর আমাদের মধ্যে কাটিয়েছো।
26-19 : আর তুমি তোমার একটা কর্ম করেছিলে। তুমি এক অকৃতজ্ঞ।’’
26-20 : মূসা বললো: ‘‘আমি তো সে কাজটি করেছিলাম তখন, যখন আমি ছিলাম জ্ঞানহীন।
26-21 : তখন তো আমি তোমাদের ভয়ে পালিয়ে চলে গিয়েছিলাম। তারপর আমার প্রভু আমাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেন এবং আমাকে রসূলদের একজন মনোনীত করেন।
26-22 : আমার প্রতি তোমার যে অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছো, তার কারণ তো হলো, তুমি বনি ইসরাঈলকে দাসে পরিণত করে রেখেছো।’’
26-23 : ফেরাউন বললো: ‘রাব্বুল আলামিন কে?’
26-24 : মূসা বললো: ‘তিনি হলেন মালিক মহাকাশ ও পৃথিবীর এবং এ দুয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে সবকিছুর যদি তোমরা একীন রাখো।’
26-25 : ফেরাউন তার পারিষদবর্গকে লক্ষ্য করে বললো: ‘(মূসা কী বলছে) তোমরা কি শুনছো না?’
26-26 : মূসা বললো: ‘তিনি তোমাদেরও রব এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষদেরও রব।’
26-27 : ফেরাউন বললো: ‘তোমাদের প্রতি প্রেরিত তোমাদের এই রসূল তো একজন পাগল।’
26-28 : মূসা বললো: ‘তিনি মাশরিক, মাগরিব এবং এই উভয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে, সবকিছুর রব যদি তোমরা আকল রাখো।’
26-29 : ফেরাউন বললো: ‘তুমি যদি আমাকে ছাড়া আর কাউকেও ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করো, তাহলে অবশ্যি আমি তোমাকে কারাগারে অবরুদ্ধ করে রাখবো।’
26-30 : মূসা বললো: ‘আমি যদি তোমার কাছে সুস্পষ্ট নির্দশন হাজির করি, তবু?’
26-31 : ফেরাউন বললো: ‘তবে হাজির করো যদি সত্যবাদী হও।’
26-32 : তখন মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলো আর সাথে সাথে তা সুস্পষ্ট অজগরে পরিণত হয়ে গেলো।
26-33 : এরপর (মূসা তার বগলে হাত ঢুকিয়ে) হাত বের করে আনলো, সাথে সাথে তা দর্শকদের দৃষ্টিতে ধবধবে সাদা দেখাতে লাগলো।
26-34 : ফেরাউন তাকে পরিবেষ্টন করে থাকা তার পারিষদবর্গকে বললো: ‘এ - তো এক পন্ডিত ম্যাজেসিয়ান।
26-35 : সে তার ম্যাজিকের সাহায্যে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এখন তোমরা তার ব্যাপারে কী করতে বলো?’
26-36 : তারা বললো: ‘তাকে আর তার ভাইকে কিছু অবকাশ দিন এবং বিভিন্ন শহরে সংগ্রহকারীদের পাঠান।
26-37 : তারা আপনার জন্যে দক্ষ ম্যাজেসিয়ানদের হাজির করবে।’
26-38 : তারপর নির্দিষ্ট দিনে এবং নির্দিষ্ট সময়ে ম্যাজেসিয়ানদের জমা করা হলো,
26-39 : জনগণকে বলা হলো: ‘তোমরাও কি জমায়েত হচ্ছো?’
26-40 : ‘হয়তো আমরা ম্যাজেসিয়ানদের অনুসরণ করতে পারি যদি তারা বিজয়ী হয়।’
26-41 : ম্যাজেসিয়ানরা হাজির হলে তারা ফেরাউনকে বললো: ‘আমরা জয়ী হলে আমাদের জন্যে পুরস্কার থাকবে তো?’
26-42 : ফেরাউন বললো: ‘হ্যাঁ, তাছাড়া তোমরা আমার সভাসদদের অন্তরভুক্ত হবে।’
26-43 : মূসা তাদের বললো: ‘তোমরা যা নিক্ষেপ করার নিক্ষেপ করো।’
26-44 : তারা তাদের সব রশি এবং লাঠি নিক্ষেপ করলো। তারা বললো: ‘ফেরাউনের ইযযতের কসম, আমরাই জয়ী হবো।’
26-45 : অত:পর মূসা তার লাঠি নিক্ষেপ করলো। সাথে সাথে সেটি কৃত্রিম সৃষ্টিগুলোকে গ্রাস করতে থাকলো।
26-46 : তখন ম্যাজেসিয়ানরা সাজদায় আনত হয়ে পড়লো।
26-47 : তারা বললো: ‘আমরা ঈমান আনলাম রাব্বুল আলামিনের প্রতি,
26-48 : যিনি হারূণ এবং মূসারও রব।’
26-49 : ফেরাউন বললো: ‘আমি তোমাদের অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রধান, সে - ই তোমাদের ম্যাজিক শিখিয়েছে, অচিরেই তোমরা জানতে পারবে (এর পরিণতি)। আমি অবশ্যি বিপরীত দিক থেকে তোমাদের হাত পা কেটে দেবো এবং তোমাদের সবাইকে শূলবিদ্ধ করে ছাড়বো।’
26-50 : তারা বললো: ‘‘ক্ষতি নেই, আমরা আমাদের প্রভুর কাছে ফিরে যাবো।
26-51 : আমরা আকাঙ্ক্ষা করি, আমাদের প্রভু আমাদের গুনাহ্ খাতা ক্ষমা করে দেবেন, কারণ আমরা সবার আগে মুমিন হয়েছি।’’
26-52 : আমরা মূসার প্রতি অহি করে নির্দেশ দিয়েছিলাম: আমার দাসদের নিয়ে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ো, তোমাদের কিন্তু পিছে থেকে ধাওয়া করা হবে।
26-53 : তারপর ফেরাউন শহরে শহরে লোক সংগ্রহকারী পাঠিয়ে দিলো,
26-54 : এই বলে যে, এরা তো অল্প কিছু লোক,
26-55 : এবং তারা আমাদের ক্রোধ উদ্রেককারী।
26-56 : আর আমরা সবাই তো সদা সতর্ক।
26-57 : অত:পর আমরা তাদের (ফেরাউন এবং তার দলবলকে) বের করে এনেছি তাদের মনোরম উদ্যান আর ঝরণাধারাসমূহ থেকে,
26-58 : ধন - ভান্ডারসমূহ এবং বিলাসবহুল প্রাসাদসমূহ থেকে।
26-59 : তাদের সাথে এমনটিই ঘটেছিল। অপরদিকে বনি ইসরাঈলকে আমরা সবকিছুর ওয়ারিশ বানিয়ে দিয়েছিলাম।
26-60 : তারা সূর্যোদয়ের সময় তাদের পেছনে এসে পড়েছিল।
26-61 : তারপর দুইদল যখন একে অপরকে দেখলো, মূসার সাথিরা বলে উঠলো: ‘নিশ্চয়ই আমরা ধরা পড়ে যাচ্ছি।’
26-62 : মূসা বললো: ‘না, কখনো নয়, নিশ্চয়ই আমার সাথে আমার প্রভু রয়েছেন, তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।’
26-63 : তখন আমরা অহির মাধ্যমে মূসাকে নির্দেশ দিলাম: ‘তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করো।’ সাথে সাথে তা বিভক্ত হয়ে গেলো এবং প্রত্যেক ভাগ বড় পর্বতের মতো হয়ে গেলো।
26-64 : তারপর আমরা সেখানে এনে হাজির করলাম পরের দলটিকে।
26-65 : আমরা মূসা আর তার সাথিদের সবাইকে উদ্ধার করলাম,
26-66 : তারপর ডুবিয়ে মারলাম পরবর্তীদের।
26-67 : নিশ্চয়ই এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন, তবে তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
26-68 : আর তোমার প্রভু অবশ্যি মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়াবান।
26-69 : তাদের প্রতি ইবরাহিমের সংবাদ তিলাওয়াত করো।
26-70 : যখন সে তার বাপ ও কওমকে বলেছিল: ‘তোমরা কোন্ জিনিসের ইবাদত করছো?’
26-71 : তারা বলেছিল: ‘আমরা ভাস্কর্যদের (মূর্তি দেবতাদের) পূজা করি এবং আমরা নিষ্ঠার সাথে তাদের প্রতি নত হই।’
26-72 : ইবরাহিম বললো: ‘‘তোমরা দোয়া করলে তারা কি তোমাদের দোয়া শুনে?
26-73 : তারা কি তোমাদের উপকার কিংবা ক্ষতি করতে পারে?’’
26-74 : তারা বললো: ‘না, তবে আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের এভাবে করতে দেখেছি।’
26-75 : ইবরাহিম বললো: ‘‘তোমরা কিসের পূজা উপাসনা করছো তা কি ভেবে দেখছোনা?
26-76 : তোমরা এবং তোমাদের অতীত বাপ দাদারা?
26-77 : তারা সবাই আমার দুশমন, রাব্বুল আলামিন ছাড়া।
26-78 : কারণ, তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
26-79 : তিনি আমাকে খাওয়ান, পান করান।
26-80 : আমি রোগগ্রস্ত হলে তিনিই আমাকে নিরাময় করে দেন।
26-81 : তিনিই আমার মউত ঘটাবেন এবং পুনরায় হায়াত দেবেন।
26-82 : তাঁর ব্যাপারে আমি আশা করি, তিনি আমাকে আমার গুনাহ খাতা ক্ষমা করে দেবেন প্রতিদান দিবসে।
26-83 : আমার প্রভু! আমাকে প্রজ্ঞা দান করো এবং মিলিত করো সালেহ্ লোকদের সাথে।
26-84 : পরবর্তী লোকদের মধ্যে আমার সুখ্যাতি দান করো।
26-85 : আমাকে জান্নাতুন নায়ীমের ওয়ারিশদের অন্তরভুক্ত করো।
26-86 : আমার বাবাকে ক্ষমা করে দাও, কারণ তিনি গোমরাহদেরই একজন।
26-87 : পুনরুত্থান দিবসে তুমি আমাকে অপমাণিত করোনা,
26-88 : যেদিন মাল সম্পদ এবং সন্তান - সন্ততি কোনো উপকারে আসবেনা,
26-89 : তবে উপকার লাভ করবে সে, যে হাজির হবে শুদ্ধ শান্ত কলব নিয়ে।’’
26-90 : সেদিন মুত্তাকিদের কাছেই নিয়ে আসা হবে জান্নাত।
26-91 : আর বিভ্রান্তদের জন্যে খুলে দেয়া হবে জাহান্নাম।
26-92 : তাদের বলা হবে: ‘‘তারা এখন কোথায়, তোমরা যাদের ইবাদত (উপাসনা) করতে
26-93 : আল্লাহর পরিবর্তে? তারা কি এখন তোমাদের সাহায্য করতে পারবে, নাকি তারা আত্মরক্ষা করতে পারবে?’’
26-94 : তারপর তাদের এবং বিপথগামীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে মাথা নীচের দিকে দিয়ে।
26-95 : এবং ইবলিস বাহিনীর সবাইকেও।
26-96 : তারা সেখানে তর্কাতর্কি করে বলবে:
26-97 : আল্লাহর কসম, আমরা স্পষ্ট গোমরাহিতে লিপ্ত ছিলাম।
26-98 : যখন আমরা তোমাদেরকে রাব্বুল আলামিনের বরাবর মনে করতাম।
26-99 : অপরাধীরাই আমাদের বিপথগামী করেছিল।
26-100 : ফলে আজ আমাদের কোনো শাফায়াতকারী নেই,
26-101 : এবং কোনো প্রাণের বন্ধুও নেই।
26-102 : আমরা যদি একবার সুযোগ পেতাম ফিরে যাবার, তাহলে অবশ্যি মুমিন হয়ে যেতাম।
26-103 : এর মধ্যে রয়েছে একটি নিদর্শন, আর তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিলনা।
26-104 : নিশ্চয়ই তোমার প্রভু, তিনি মহাপরাক্রমশীল, অতীব দয়াবান।
26-105 : নূহের কওমও রসূলদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-106 : স্মরণ করো, তাদের ভাই নূহ তাদের বলেছিল: ‘‘তোমরা কি সতর্ক হবেনা?
26-107 : আমি তোমাদের প্রতি একজন বিশ্বস্ত রসূল।
26-108 : অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
26-109 : তোমাদের (সতর্ক করার) একাজ করার জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। আমাকে প্রতিদান দেয়ার দায়িত্ব রাব্বুল আলামিনের।
26-110 : অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।’’
26-111 : (জবাবে) তারা বলেছিল: ‘আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো? তোমাকে অনুসরণ করে তো নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা।’
26-112 : নূহ বলেছিল: ‘‘তারা (আগে) কী করতো তা আমি জানিনা।
26-113 : তাদের হিসাব নেয়ার দায়িত্ব তো আল্লাহর, যদি তোমরা বুঝতে!
26-114 : মুমিনদের আমার কাছ থেকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়।
26-115 : আমি তো একজন স্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আর কিছু নই।’’
26-116 : তখন তারা বলেছিল: ‘হে নূহ! তুমি যদি এ কাজ থেকে বিরত না হও, তাহলে পাথর নিক্ষেপ করে যাদের মারা হয়েছে তুমিও তাদের অন্তরভুক্ত হবে।’
26-117 : নূহ ফরিয়াদ করে বললো: ‘‘আমার প্রভু! আমার কওম আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
26-118 : সুতরাং তুমি আমার ও তাদের মাঝে একটা চূড়ান্ত ফায়সালা করে দাও আর নাজাত দাও আমাকে এবং আমার সাথি মুমিনদের।’’
26-119 : তখন আমি তাকে এবং তার সাথিদেরকে নৌযানে বোঝাই করে রক্ষা করেছি,
26-120 : আর বাকি সবাইকে ডুবিয়ে দিয়েছি পানিতে।
26-121 : নিশ্চয়ই এতে রয়েছে একটি নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিলনা।
26-122 : আর তোমার প্রভু, নিশ্চয়ই তিনি মহাশক্তিধর, পরম দয়াবান।
26-123 : আদ জাতিও প্রত্যাখ্যান করেছিল রসূলদের।
26-124 : স্মরণ করো, তাদের ভাই হুদ তাদের বলেছিল: ‘‘তোমরা কি সতর্ক হবেনা?
26-125 : আমি তোমাদের প্রতি একজন বিশ্বস্ত রসূল।
26-126 : অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
26-127 : আমি তো তোমাদের (সতর্ক করার) এ দায়িত্ব পালনের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা, আমাকে প্রতিদান দেয়ার দায়িত্ব রাব্বুল আলামিনের।
26-128 : তোমরা কেন প্রতিটি উঁচু স্থানে অনর্থক স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করছো?
26-129 : তোমরা এমন সব শৈল্পিক প্রাসাদ নির্মাণ করছো যেনো তোমরা এখানে চিরস্থায়ী হবে!
26-130 : যখন তোমরা ক্ষমতা পাও, তখন স্বৈরাচারি ক্ষমতা প্রয়োগ করো।
26-131 : সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
26-132 : ভয় করো তাঁকে যিনি তোমাদের সব (উত্তম সামগ্রী) দিয়ে সাহায্য করেছেন যা তোমরা জানো।
26-133 : তিনি তোমাদের সাহায্য করেছেন পশু সম্পদ এবং সন্তান সন্ততি দিয়ে,
26-134 : বাগ - বাগিচা এবং ঝরণাধারা দিয়ে।
26-135 : আমি আশংকা করছি তোমাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় কোনো আযাব এসে পড়ার।’’
26-136 : তখন তারা বলেছিল: ‘‘তুমি আমাদের ওয়ায করো কিংবা না করো দুটোই সমান।
26-137 : আগেকার লোকদের এটাই (ওয়ায করা বা উপদেশ দেয়াটাই) স্বভাব।
26-138 : যাদের শাস্তি দেয়া হবে আমরা তাদের অন্তরভুক্ত নই।’’
26-139 : এভাবে তারা তাকে (হুদকে) প্রত্যাখ্যান করে, ফলে আমরাও তাদের হালাক (ধ্বংস) করে দেই। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে একটি নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিলনা।
26-140 : আর তোমার প্রভু, নিশ্চয়ই তিনি মহাশক্তিধর অতীব দয়াবান।
26-141 : সামুদ জাতিও রসূলদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-142 : স্মরণ করো, তাদের ভাই সালেহ্ তাদের বলেছিল: ‘‘তোমরা কি সতর্ক হবেনা?
26-143 : আমি তোমাদের জন্যে একজন বিশ্বস্ত রসূল।
26-144 : অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
26-145 : (তোমাদের সতর্ক করার) এ কাজের জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। আমার প্রতিদানের দায়িত্ব রাব্বুল আলামিনের।
26-146 : তোমরা এখানে যে হালে আছো, তোমাদের কি এ রকম নিরাপদ ছেড়ে দেয়া হবে?
26-147 : এসব বাগ - বাগিচা এবং ঝরণাধারার মধ্যে?
26-148 : এসব (সবুজ) শস্যক্ষেত আর সুকোমল ছড়া বিশিষ্ট খেজুরের বাগানে?
26-149 : তোমরা তো দক্ষতার সাথে পাহাড় কেটে আবাস নির্মাণ করছো।
26-150 : অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
26-151 : সীমা লঙ্ঘনকারীদের হুকুম মতো চলোনা,
26-152 : যারা দেশে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে এবং কোনো প্রকার সংশোধনের কাজ করছেনা।’’
26-153 : (জবাবে) তারা বলেছিল: ‘‘তুমি তো একজন জাদুগ্রস্ত।
26-154 : তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নও। তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে (তোমার রসূল হবার) কোনো প্রমাণ হাজির করো।’’
26-155 : তখন সে বলেছিল: ‘‘(প্রমাণ হলো) এই উটনী। কুয়ার পানি পানে এর জন্যেও পালা থাকবে, তোমাদের জন্যেও পালা থাকবে নির্দিষ্ট দিনে।
26-156 : এর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে তোমরা একে স্পর্শও করোনা, করলে তোমাদের পাকড়াও করবে এক মহাদিবসের আযাব।’’
26-157 : কিন্তু তারা সেটিকে হত্যা করলো। পরিণামে তারা হলো লাঞ্ছিত।
26-158 : আর তাদের গ্রাস করলো আযাব। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে একটি নিদর্শন, আর তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিলনা।
26-159 : নিশ্চয়ই তোমার প্রভু, তিনি মহাশক্তিধর, অতীব দয়াবান।
26-160 : লুতের কওমও রসূলদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-161 : স্মরণ করো, তাদের ভাই লুত তাদের বলেছিল: ‘‘তোমরা কি সতর্ক হবেনা?
26-162 : আমি তোমাদের প্রতি একজন বিশ্বস্ত রসূল।
26-163 : অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
26-164 : (তোমাদের সতর্ক করার) এ দায়িত্ব পালনের জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। আমার প্রতিদানের দায়িত্ব রাব্বুল আলামিনের।
26-165 : জগতের মধ্যে তোমরাই পুরুষদের সাথে যৌনকর্ম করছো,
26-166 : আর তোমরা বর্জন করছো তোমাদের স্ত্রীদের, যাদেরকে তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা এক চরম সীমালঙ্ঘনকারী কওম।’’
26-167 : (জবাবে) তারা বলেছিল: ‘হে লুত! তুমি যদি তোমার এ কাজ থেকে বিরত না হও, তাহলে অবশ্যি তোমাকে (এ দেশ থেকে) বের করে দেয়া হবে।’
26-168 : লুত বলেছিল: ‘‘আমি তোমাদের এ কাজকে অবশ্যি ঘৃণা করি।
26-169 : হে আমার প্রভু! আমাকে এবং আমার পরিবার পরিজনকে তাদের এ কর্মকান্ড থেকে রক্ষা করো।’’
26-170 : ফলে, আমরা তাকে এবং তার পরিবারের সবাইকে নাজাত দিয়েছিলাম
26-171 : এক বৃদ্ধাকে ছাড়া, সে হয়েছিল অবস্থানকারীদের অন্তরভুক্ত।
26-172 : তারপর বাকি সবাইকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।
26-173 : আমরা তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম এক চূড়ান্ত বর্ষণ! যাদের সতর্ক করা হয়েছিল তাদের জন্যে এ বর্ষণ ছিলো কতো যে নিকৃষ্ট!
26-174 : এর মধ্যেও রয়েছে একটি নিদর্শন। আর তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিলনা।
26-175 : তোমার প্রভু, নিশ্চিতই তিনি মহাপরাক্রমশীল, অতীব দয়াবান।
26-176 : আইকাবাসীরাও রসূলদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-177 : স্মরণ করো, শুয়াইব তাদের বলেছিল: ‘‘তোমরা কি সতর্ক হবেনা?
26-178 : আমি তোমাদের জন্যে একজন বিশ্বস্ত রসূল।
26-179 : অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
26-180 : (তোমাদের সতর্ক করার) এ দায়িত্ব পালনের জন্যে আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। আমার প্রতিদানের দায়িত্ব রাব্বুল আলামিনের উপর।
26-181 : মাপ পূর্ণ করে দেবে। যারা মাপে কম দেয় তোমরা তাদের অন্তরভুক্ত হয়োনা।
26-182 : ওজন দেবে সঠিক দাঁড়িপাল্লায়।
26-183 : মানুষকে তাদের জিনিসপত্র কম দিওনা এবং দেশে ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়োনা।
26-184 : সেই মহান সত্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের আগে যারা বিগত হয়েছে তাদেরও সৃষ্টি করেছেন।’’
26-185 : তখন তারা বলেছিল: ‘‘তুমি তো একজন জাদুগ্রস্ত।
26-186 : তুমি তো আমাদেরই মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নও। আমরা তো মনে করি তুমি মিথ্যাবাদীদেরই একজন।
26-187 : তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকলে আকাশ ভেঙ্গে তার একটি খন্ড আমাদের উপর ফেলো।’’
26-188 : তখন সে বলেছিল: ‘তোমরা যা করছো আমার প্রভু তা ভালোভাবেই জানেন।’
26-189 : এভাবে তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে। ফলে এক মেঘাচ্ছন্ন দিবসের আযাব তাদের গ্রাস করে নেয়। সেটা ছিলো এক ভয়াবহ দিনের আযাব।
26-190 : নিশ্চয়ই এতে রয়েছে একটি নিদর্শন। তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিলনা।
26-191 : আর তোমার প্রভু, নিশ্চয়ই তিনি মহাশক্তিধর, অতীব দয়াবান।
26-192 : নিশ্চয়ই এ কুরআন রাব্বুল আলামিনের নাযিলকৃত।
26-193 : এটি নিয়ে নাযিল হয়েছে রুহুল আমিন (জিবরিল)
26-194 : তোমার হৃদয়ে, যাতে করে তুমি হতে পারো একজন সতর্ককারী।
26-195 : (সেটি নাযিল করা হয়েছে) সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়।
26-196 : আগের কিতাবগুলোতেও এর উল্লেখ আছে।
26-197 : এটা কি তাদের জন্যে একটা নিদর্শন নয় যে, এ বিষয়ে অবগত রয়েছে বনি ইসরাঈলের আলেমরা?
26-198 : আমরা যদি এ (কুরআন) নাযিল করতাম কোনো অনারবের উপর,
26-199 : আর সে যদি এটি তাদের কাছে পাঠ করতো, তবে তারা এর প্রতি ঈমান আনতোনা।
26-200 : এভাবেই আমরা অপরাধীদের অন্তরে (অবিশ্বাস) সঞ্চার করে দিয়েছি।
26-201 : তারা ঈমান আনবেনা যতোদিন না সচোক্ষে দেখতে পায় বেদনাদায়ক আযাব।
26-202 : হ্যাঁ, সেটা এসে পড়বে আকস্মিক এবং তারা টেরই পাবেনা।
26-203 : তখন তারা বলবে: ‘আমাদের কি অবকাশ দেয়া হবে?’
26-204 : তারা কি দ্রুত আগমন চায় আমাদের আযাবের?
26-205 : তুমি কি দেখোনি, আমরা তো অনেক বছর তাদের ভোগ বিলাস করতে দিয়েছি।
26-206 : তার পরেই এসেছিল সেই জিনিস (তাদের ধ্বংস) যার ওয়াদা তাদের দেয়া হয়েছিল।
26-207 : তাদের ভোগ বিলাসের উপকরণসমূহ তাদের কোনো কাজেই আসেনি।
26-208 : আমরা এমন কোনো জনপদ হালাক করিনি যার জন্যে সতর্ককারীরা ছিলনা।
26-209 : এটি একটি উপদেশ। (তাদের ব্যাপারে) আমরা অন্যায় আচরণ করিনি।
26-210 : এ কুরআন নিয়ে শয়তানরা নাযিল হয়নি।
26-211 : এ কাজের তারা যোগ্যও নয় এবং এ কাজের সামর্থও তাদের নেই।
26-212 : তাদেরকে তো এটা শোনার সুযোগ থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
26-213 : সুতরাং তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহ্ ডেকোনা, ডাকলে দন্ডপ্রাপ্তদের অন্তরভুক্ত হয়ে পড়বে।
26-214 : তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করো।
26-215 : আর যারা তোমার অনুসরণ করে সেসব মুমিনদের প্রতি তুমি স্নেহ - মমতার ডানা অবনমিত করো।
26-216 : তারা যদি তোমার অবাধ্য হয়, তবে তুমি বলো: ‘তোমাদের কর্মকান্ড থেকে আমি দায়মুক্ত।’
26-217 : মহাশক্তিধর, অতীব দয়াবানের উপর তাওয়াক্কুল করো,
26-218 : যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দাঁড়াও (সালাতে)।
26-219 : তাছাড়া সাজদাকারীদের সাথে তোমার উঠাবসাও তিনি দেখেন।
26-220 : তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
26-221 : (হে মানুষ!) তোমাদের সংবাদ দেবো কি, শয়তানরা কার ঘাড়ে সওয়ার হয়?
26-222 : তারা তো সওয়ার হয় প্রত্যেক কট্টর মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের ঘাড়ে।
26-223 : তারা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।
26-224 : কবিদের অনুসরণ করে তো বিভ্রান্তরাই।
26-225 : তুমি দেখোনা তারা উদ্ভ্রান্তের মতো প্রত্যেক উপত্যকায়ই ঘুমিয়ে পড়ে?
26-226 : আর তারা তাই বলে, যা তারা করেনা।
26-227 : তবে তারা নয়, যারা ঈমান আনে, আমলে সালেহ্ করে, আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করে এবং অত্যাচারিত হবার পরই প্রতিশোধ গ্রহণ করে। যারা যুলুম করে তারা শীঘ্রি জানতে পারবে কোন্ ফিরে যাবার জায়গায় তারা ফিরে যাবে?