মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২২৭, রুকু সংখ্যা: ১১এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
27-1 : তোয়া সিন। এগুলো আয়াত আল কুরআন ও সুস্পষ্ট কিতাবের, |
27-2 : হিদায়াত ও সুসংবাদ সেইসব মুমিনদের জন্যে, |
27-3 : যারা কায়েম করে সালাত, প্রদান করে যাকাত এবং তারা আখিরাতের প্রতি রাখে একীন। |
27-4 : আর যারা ঈমান রাখেনা আখিরাতের প্রতি, আমরা তাদের চোখে তাদের কর্মকান্ডকে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি, ফলে তারা বিভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়। |
27-5 : এরা সেইসব লোক যাদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্ট ধরনের আযাব, আর আখিরাতে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত। |
27-6 : তোমাকে এই কুরআন দেয়া হচ্ছে প্রজ্ঞাবান সর্বজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে। |
27-7 : স্মরণ করো, মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল: ‘আমি আগুন দেখেছি। শীঘ্রি আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্যে কোনো খবর নিয়ে আসবো, অথবা নিয়ে আসবো সেখান থেকে জ্বলন্ত অঙ্গার, যেনো তোমরা আগুন পোহাতে পারো। |
27-8 : মূসা সেখানে আসতেই ঘোষণা দেয়া হলো: ‘কল্যাণের অধিকারী করে দেয়া হলো যারা আছে এই আগুনের মধ্যে এবং এর চারপাশে, আর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন পবিত্র ও মহান।’ |
27-9 : হে মূসা! নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ্, আযিযুল হাকিম (মহাশক্তিধর, প্রজ্ঞাময়)। |
27-10 : তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো। তারপর সে যখন দেখলো সেটি সাপের মতো ছুটাছুটি করছে, সে পেছনে ফিরে দৌড়াতে থাকলো এবং ফিরেও তাকালোনা। তখন তাকে ডেকে বলা হলো: ‘‘হে মূসা! ভয় পেয়োনা, নিশ্চয়ই আমার কাছে এসে রসূলরা ভয় পায়না। |
27-11 : তবে যারা যুলুম করে এবং তারপর মন্দ কাজের পরিবর্তে পুণ্য কাজ করে, তাদের প্রতি আমি পরম ক্ষমাশীল দয়াময় |
27-12 : আর তোমার হাত তোমার জেবে (বগলে) দাখিল করো, দেখবে সেটি ধবধবে সাদা হয়ে বের হবে কোনো ক্ষতি ছাড়াই। (এ দুটি) ফেরাউন ও তার কওমের প্রতি দেয়া নয়টি নিদর্শনের অন্তরভুক্ত। তারা অবশ্যি এক ফাসিক (সীমালঙ্ঘনকারী) কওম।’’ |
27-13 : তারপর তাদের কাছে যখন আমাদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এলো, তারা বললো: ‘এতো সুস্পষ্ট ম্যাজিক।’ |
27-14 : তারা যুলুম ও দাম্ভিকতার সাথে নিদর্শনগুলো প্রত্যাখ্যান করে, যদিও তাদের অন্তরে সেগুলো সত্য বলে একীন হয়েছিল। এখন দেখো, ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কী রকম হয়েছিল! |
27-15 : আমরা দাউদ এবং সুলাইমানকে দিয়েছিলাম বিশেষ এলেম। তারা বলেছিল: আল হামদুলিল্লাহ - সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর বহু মুমিন বান্দার উপর |
27-16 : সুলাইমান হয়েছিল দাউদের ওয়ারিশ। সে বলেছিল: ‘হে মানুষ! আমাদেরকে পাখির ভাষা শেখানো হয়েছে এবং সবকিছুই দেয়া হয়েছে আমাদের। অবশ্যি এটা আল্লাহর একটা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।’ |
27-17 : সুলাইমানের জন্যে হাশর (সমবেত) করা হয় তার বাহিনীকে, যাদের মধ্যে ছিলো জিন, ইনসান ও পাখি। তাদের বিন্যস্ত করা হয় বিভিন্ন গ্রুপে। |
27-18 : তারা যখন পিঁপড়ার উপত্যকায় এসে পৌঁছে, তখন একটি পিঁপড়া বলে উঠে: ‘হে পিঁপীলিকার দল! তোমরা দাখিল হয়ে যাও তোমাদের ঘরে। সুলাইমান এবং তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদের পায়ের তলায় পিষে না ফেলে।’ |
27-19 : তার কথায় সুলাইমান মৃদু হেসে বললো: ‘আমার প্রভু! আমাকে সামর্থ দাও, আমি যেনো তোমার নিয়ামতের শোকর আদায় করতে পারি, যা তুমি দান করেছো আমার প্রতি এবং আমার পিতামাতার প্রতি, আর আমি যেনো সেই রকম পুণ্য আমল করতে পারি যাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে, আর দয়া করে আমাকে দাখিল করো তোমার পুণ্যবান দাসদের মধ্যে।’ |
27-20 : সুলাইমান সন্ধান নিলো পাখিদের। সে বললো, কী হলো হুদহুদকে দেখছিনা যে? সে অনুপস্থিত নাকি? |
27-21 : সে সুস্পষ্ট প্রমাণ না নিয়ে এলে আমি অবশ্যি তাকে কঠোর শাস্তি দেবো অথবা যবেহ্ করে ফেলবো। |
27-22 : তারপর অবিলম্বেই সে এসে উপস্থিত হলো এবং বললো: ‘‘আমি অবগত হয়েছি এমন একটা বিষয় যেটি আপনি অবগত নন। আমি আপনার জন্যে সাবা থেকে একটি নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি। |
27-23 : আমি এক নারীকে দেখতে পেয়েছি তাদের উপর রাজত্ব করছেন। সমস্ত বস্তু সম্ভার তাকে দেয়া হয়েছে এবং তার রয়েছে এক বিশাল সিংহাসন। |
27-24 : আমি তাকে এবং তার কওমকে দেখতে পেলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সাজদা করছে। শয়তান তাদের কর্মকান্ড তাদের কাছে চাকচিক্যময় করে রেখেছে এবং সে তাদের সঠিক পথে আসার ব্যাপারে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে, ফলে তারা হিদায়াত লাভ করছেনা।’’ |
27-25 : সে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে এ জন্যে, যাতে তারা আল্লাহকে সাজদা না করে, যিনি মহাকাশ ও পৃথিবীর গুপ্ত বস্তুকে প্রকাশ করেন এবং যিনি জানেন তোমরা যা গোপন করো এবং যা করো এলান (প্রকাশ)। |
27-26 : আল্লাহ্, তিনি ছাড়া নেই কোনো ইলাহ্, তিনি মহান আরশের মালিক।’ (সাজদা) |
27-27 : সুলাইমান বললো: ‘‘আমি দেখবো, তুমি সত্য বলছো, নাকি তুমি মিথ্যাবাদী। |
27-28 : তুমি আমার এই পত্রটি নিয়ে যাও এবং তাদের কাছে পৌঁছে দাও। তারপর তাদের থেকে সরে থাকবে এবং লক্ষ্য করবে তাদের প্রতিক্রিয়া।’’ |
27-29 : সে (রাণী) বললো: ‘‘হে আমার পারিষদবর্গ! আমার কাছে পৌঁছেছে একটি সম্মানিত পত্র, |
27-30 : এটি প্রেরিত হয়েছে সুলাইমানের পক্ষ থেকে এবং সেটির বক্তব্য হলো: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। |
27-31 : আমার উপর ঔদ্ধত্য করোনা, বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।’’ |
27-32 : রাণী বললো: ‘‘হে আমার পারিষদবর্গ। তোমরা আমাকে ফতোয়া (মত) দাও এ বিষয়ে আমার করণীয় সম্পর্কে। আমি তো কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনা তোমাদের উপস্থিতি (পরামর্শ) ছাড়া।’ |
27-33 : তারা বললো: ‘আমরা তো একটি শক্তিশালী এবং কঠোর যোদ্ধা জাতি। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তো আপনারই। আপনি ভেবে দেখুন কী নির্দেশ দেবেন।’ |
27-34 : সে (রাণী) বললো: ‘‘রাজা বাদশারা যখন (যুদ্ধের জন্যে) কোনো জনপদে প্রবেশ করে, তারা সে জনপদকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্মানিত ব্যক্তিদের করে ছাড়ে অপদস্থ। এরাও এ রকমই করবে। |
27-35 : আমি তাদের কাছে হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাতে চাই। দেখি, আমার দূতেরা তাদের কী প্রতিক্রিয়া নিয়ে ফিরে আসে?’’ |
27-36 : দূত যখন সুলাইমানের কাছে এলো, সুলাইমান বললো: ‘‘তোমরা কি আমাকে ধনমাল দিয়ে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ্ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদের যা দিয়েছেন তার চাইতে উত্তম। তোমরা তো তোমাদের হাদিয়া নিয়ে আনন্দবোধ করছো। |
27-37 : তুমি তাদের কাছে ফিরে যাও, আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসবো যার মোকাবেলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যি তাদেরকে সে দেশ থেকে লাঞ্ছিত করে বহিষ্কার করবো এবং তখন তারা ছোট হয়ে থাকবে।’’ |
27-38 : সুলাইমান বললো: ‘হে আমার পারিষদবর্গ! তারা আমার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে এসে পৌঁছার আগেই তোমাদের কে তার সিংহাসনটি আমার কাছে নিয়ে আসবে?’ |
27-39 : এক শক্তিশালী জিন বললো: ‘সেটি আমি নিয়ে আসবো আপনি আপনার আসন থেকে উঠার আগেই এবং এ ব্যাপারে আমি শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।’ |
27-40 : যার কাছে কিতাবের এলেম ছিলো, এমন এক ব্যক্তি উঠে বললো: ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি সেটা আপনাকে এনে দিচ্ছি।’ সুলাইমান যখন সেটা নিজের সামনে রক্ষিত অবস্থায় দেখতে পেলো, বললো: ‘এটা আমার প্রভুর অনুগ্রহ, এর দ্বারা তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে চান আমি কৃতজ্ঞ থাকি, নাকি অকৃতজ্ঞ হই। আর যে কেউ শোকর আদায় করে সে নিজের কল্যাণেই শোকর আদায় করে। আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হয়, সে জেনে রাখুক, আমার প্রভু মুখাপেক্ষাহীন, মর্যাদাবান।’ |
27-41 : সুলাইমান বললো: ‘তার সিংহাসনটি ওলটপালট করে তার জন্যে আনকোরা করে দাও। দেখি, সে কি চিনতে পারে, নাকি না চেনাদের অন্তরভুক্ত হয়?’ |
27-42 : যখন রাণী এসে পৌঁছালো, তাকে বলা হলো: ‘আপনার সিংহাসন কি এ রকম?’ সে বললো: ‘এটা যেনো সেটাই? আমাদের ইতোপূর্বে অবগত করানো হয়েছে এবং আমরা বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছি।’ |
27-43 : সে আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করতো তাই তাকে সত্য থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছিল। সে তো কাফির কওমেরই একজন ছিলো। |
27-44 : তাকে বলা হলো: ‘এই প্রাসাদে দাখিল হোন।’ সে যখন তা দেখলো, মনে করলো একটি জলাশয়। তখন তার পায়ের কিছু অংশ থেকে বস্ত্র গুটিয়ে উন্মুক্ত করে নিলো। সুলাইমান বললো: ‘এতো (পানি নয়) স্বচ্ছ স্ফটিকের তৈরি প্রাসাদ।’ তখন সে (রাণী) বললো: ‘আমার প্রভু! আমি আমার নিজের প্রতি অবিচার করে আসছিলাম, এখন আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের উদ্দেশ্যে আত্মসমর্পণ করলাম।’ |
27-45 : আমরা সামুদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম এই নির্দেশ দিয়ে: ‘তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত (আনুগত্য দাসত্ব, পূজা উপাসনা) করো।’ তখন তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। |
27-46 : সালেহ্ বলেছিল: ‘হে আমার কওম! তোমরা কল্যাণের আগে দ্রুত অকল্যাণ চাইছো কেন? তোমরা কেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছোনা, যাতে করে তোমরা রহম প্রাপ্ত হও।’ |
27-47 : তারা বললো: ‘আমরা তোমাকে এবং তোমার সাথিদেরকে আমাদের অমঙ্গলের কারণ মনে করি।’ সে বললো: ‘তোমাদের মঙ্গল অমঙ্গল তো আল্লাহর এখতিয়ারে। বরং তোমরা এমন একটি কওম যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।’ |
27-48 : সেই শহরে ছিলো নয় ব্যক্তি যারা দেশে ফাসাদ সৃষ্টি করতো এবং সংশোধন হতোনা |
27-49 : তারা বলেছিল: ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলো: আমরা অবশ্যি রাতের বেলায় তাকে (সালেহকে) এবং তার পরিবারবর্গকে আক্রমণ করে হত্যা করবো, তারপর তার অলিকে বলবো: তার পরিবারবর্গকে কারা হত্যা করেছে তা আমরা দেখিনি। আমরা অবশ্যি সত্যবাদী।’ |
27-50 : তারা এই জঘন্য চক্রান্ত করেছিল, আর এদিকে আমরাও করেছি একটি কৌশল যা তারা টেরই পায়নি। |
27-51 : অত:পর লক্ষ্য করে দেখো তাদের চক্রান্তের পরিণতি কী হয়েছে, আমরা তাদেরকে এবং তাদের গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি। |
27-52 : ঐ তো তাদের ঘরবাড়ি বিরাণ হয়ে আছে তাদের যুলুমের পরিণতিতে। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে একটি নিদর্শন জ্ঞানী লোকদের জন্যে। |
27-53 : আমরা (সেই অশুভ পরিণতি থেকে) নাজাত দিয়েছিলাম তাদেরকে, যারা ঈমান এনেছিল এবং অবলম্বন করেছিল তাকওয়া। |
27-54 : স্মরণ করো লুতের কথা! সে তার কওমকে বলেছিল: ‘‘তোমরা জেনে শুনে কেন ফাহেশা কাজ করছো? |
27-55 : তোমরা যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্যে নারীর পরিবর্তে পুরুষ গমন করছো? তোমরা তো এক চরম জাহেল সম্প্রদায়।’’ |
27-56 : জবাবে তার কওম কেবল একথাই বলেছিল: ‘লুতের অনুসারীদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। তারা বড় পবিত্র থাকতে চাইছে!’ |
27-57 : ফলে আমরা নাজাত দিয়েছিলাম তাকে এবং তার পরিবারবর্গকে তার স্ত্রীকে ছাড়া। তাকে আমরা ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তরভুক্ত করে দিয়েছিলাম। |
27-58 : আমরা তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম ভয়ংকর (পাথর) বর্ষণ। যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে তাদের প্রতি বর্ষণ ছিলো কতো যে নিকৃষ্ট! |
27-59 : বলো: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আর তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি সালাম। শ্রেষ্ঠ কি আল্লাহ্, নাকি ওরা যাদেরকে তাঁর সাথে শরিক করে তারা?’ (অবশ্যি আল্লাহ্)। |
27-60 : তিনিই কি শ্রেষ্ঠ নন, যিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ এবং এই পৃথিবী এবং যিনি আসমান থেকে তোমাদের জন্যে নাযিল করেন পানি। তারপর আমরা তা থেকে উদগত করি মনোরম উদ্যান, যার গাছ - গাছালি সৃষ্টি করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। তারপরও কি আল্লাহর সাথে কোনো ইলাহ্ আছে বলে মনে করো? আসলে তারা এমন একটি কওম যারা (অন্যদেরকে) আল্লাহর সমকক্ষ বানায়। |
27-61 : তিনিই কি (একমাত্র ইলাহ্) নন, যিনি পৃথিবীকে বানিয়েছেন বাস উপযোগী এবং এর মাঝে মাঝে সৃষ্টি করে দিয়েছেন নদ - নদী - নহর? তাকে স্থিতিশীল রাখার জন্যে স্থাপন করে দিয়েছেন পাহাড় পর্বত এবং দুই দরিয়ার মাঝে সৃষ্টি করে দিয়েছেন অন্তরায়। তা সত্ত্বেও আল্লাহর সাথে আরো ইলাহ্ আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানেনা। |
27-62 : তিনিই কি (একমাত্র ইলাহ্) নন, যিনি অশান্ত হৃদয়ের প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেন এবং দূর করে দেন তার দুঃখ দুর্দশা? তিনিই তো তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা বানিয়েছেন। তারপরও তাঁর সাথে আরো ইলাহ্ আছে কি? তোমরা খুব কমই শিক্ষা গ্রহণ করো। |
27-63 : তিনিই কি (একমাত্র ইলাহ্) নন, যিনি তোমাদেরকে স্থল ও পানি পথের অন্ধকারে পথনির্দেশ দান করেন এবং যিনি সুসংবাদবাহী বাতাস পাঠান তাঁর রহমত (বৃষ্টি) বর্ষণের আগে। তারপরও তাঁর সাথে আরো ইলাহ্ আছে কি? তারা তাঁর সাথে যাদেরকে শরিক করে, তাদের থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। |
27-64 : বরং তিনিই (একমাত্র ইলাহ্) যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আসমান ও জমিন থেকে কে তোমাদের রিযিক দেয়? তারপরও তাঁর সাথে আরো ইলাহ্ আছে কি? বলো: ‘তোমাদের প্রমাণ হাজির করো যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।’ |
27-65 : বলো: ‘মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যারাই আছে, আল্লাহ্ ছাড়া কেউই গায়েব জানেনা। তারা কখন পুনরুত্থিত হবে তাও তারা জানেনা।’ |
27-66 : না, আখিরাত সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, বরং তারা সে সম্পর্কে সন্দেহে আছে, বরং সে বিষয়ে তারা অন্ধ। |
27-67 : কাফিররা বলে: ‘‘আমরা এবং আমাদের পূর্ব পুরুষরা যখন মাটির সাথে মিশে যাবো, তখন কি আমাদের পুনরায় জীবিত করে উঠিয়ে আনা হবে? |
27-68 : এ বিষয়ে তো আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে ইতোপূর্বেও ধমক দেয়া হয়েছিল। এ - তো আগের কালের লোকদের কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়।’’ |
27-69 : হে নবী! বলো: ‘পৃথিবী ভ্রমণ করে দেখো, অপরাধীদের পরিণতি কী হয়েছিল?’ |
27-70 : তাদের ব্যাপারে দুঃখ করোনা, আর তাদের চক্রান্তের কারণে মনও ছোট করোনা। |
27-71 : তারা বলে: ‘কখন আসবে এই ওয়াদার সময়টি, সত্যবাদী হয়ে থাকলে বলো।’ |
27-72 : তুমি বলো: ‘তোমরা যা নিয়ে তাড়াহুড়া করছো তার কিছু কিছু বিষয় তোমাদের নিকটবর্তী হয়ে গেছে।’ |
27-73 : নিশ্চয়ই তোমার প্রভু মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই শোকর আদায় করেনা। |
27-74 : তোমার প্রভু অবশ্যি জানেন তাদের মন যা গোপন করে আর যা তারা এলান (প্রকাশ) করে। |
27-75 : আসমান ও জমিনে এমন কোনো গায়েব নেই, যা এক সুস্পষ্ট কিতাবে রেকর্ড করা নেই। |
27-76 : বনি ইসরাঈল যেসব বিষয়ে মতভেদ করে, তার অধিকাংশই এ কুরআন তাদের বলে দেয়। |
27-77 : আর নিশ্চয়ই এ কুরআন মুমিনদের জন্যে হিদায়াত এবং রহমত। |
27-78 : তোমার প্রভু তাঁর বিধান মতো তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি মহাশক্তিধর, মহাজ্ঞানী। |
27-79 : অতএব তাওয়াক্কুল করো আল্লাহর উপর। নিশ্চয়ই তুমি সুস্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। |
27-80 : তুমি তো মৃতকে কথা শুনাতে পারবেনা এবং বধিরকেও পারবেনা আহবান শুনাতে, যখন তারা মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। |
27-81 : তুমি অন্ধদের সঠিক পথে আনতে পারবেনা তাদের ভুল পথ থেকে। তুমি শুনাতে পারবে তো কেবল তাদেরকে, যারা আমাদের আয়াতের প্রতি ঈমান আনে, আর তারাই হয়ে থাকে আত্মসমর্পণকারী। |
27-82 : যখন ঘোষিত শাস্তি তাদের নিকটবর্তী হবে, তখন আমরা মাটির ভেতর থেকে তাদের জন্যে বের করে আনবো একটি জীব (দাববাতুল আর্দ), যে তাদের সাথে কথা বলবে। কারণ, মানুষ আমাদের আয়াতের প্রতি একীন রাখেনা। |
27-83 : স্মরণ করো সেদিনের কথা, যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মত থেকে একটি দলকে সমবেত করবো। যারা আমাদের আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করতো; তাদেরকে সারিবদ্ধ করা হবে। |
27-84 : যখন তারা উপস্থিত হবে, আল্লাহ্ বলবেন: তোমরাই কি আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে? অথচ সেটাকে তোমাদের জ্ঞানে ধারণ করতে পারোনি? এছাড়াও তোমরা আর কী কী করেছিলে? |
27-85 : তাদের যুলুমের কারণে তাদের উপর ঘোষিত শাস্তি এসে পড়বে, ফলে তারা কথাই বলতে পারবেনা। |
27-86 : তারা কি দেখেনা আমরা রাতকে সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্যে, আর দিনকে বানিয়েছি দৃশ্যমান। বিশ্বাসীদের জন্যে অবশ্যি এতে রয়েছে নিদর্শন। |
27-87 : যেদিন শিঙ্গায় (প্রথমবার) ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন মহাকাশ ও পৃথিবীর সবাই বিহবল হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ্ যাদের চাইবেন তারা ছাড়া। সবাই বিনীত হয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হবে। |
27-88 : তুমি পাহাড় পর্বত দেখছো, মনে করছো সেগুলো অটল, অথচ সেদিন সেগুলো মেঘমালার মতোই ধাবিত হবে। এটাই আল্লাহর সৃষ্টি - কৌশল, যিনি প্রতিটি বস্ত্তকে করেছেন সুষম। তোমরা যা করো সে বিষয়ে তিনি খবর রাখেন। |
27-89 : যে ভালো কাজ নিয়ে আসবে, সে পাবে তার চাইতে উত্তম প্রতিফল। তারা সেদিনকার শংকা থেকে থাকবে মুক্ত। |
27-90 : আর যে মন্দ কাজ নিয়ে আসবে তাকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে। তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল তোমাদের দেয়া হবে। |
27-91 : নিশ্চয়ই আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই নগরীর প্রভুর ইবাদত করতে যিনি এটিকে করেছেন সম্মানিত। সব কিছুই তাঁর। আমাকে আরো আদেশ দেয়া হয়েছে আমি যেনো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তরভুক্ত হই। |
27-92 : আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেনো তিলাওয়াত (অনুসরণ) করি আল কুরআন। অত:পর যে কেউ সঠিক পথে চলবে, সে সঠিক পথে চলবে নিজেরই কল্যাণে। আর যে কেউ ভুল পথ অবলম্বন করবে, তুমি তার ব্যাপারে বলবে: আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। |
27-93 : বলো: আল হামদুলিল্লাহ! তিনি শীঘ্রি তোমাদের দেখাবেন তাঁর নিদর্শনসমূহ, তখন তোমরা তা বুঝতে পারবে। তোমরা যা আমল করছো সে ব্যাপারে তোমার প্রভু গাফিল নন। |