আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 28, আল কাসাস (কিসসাসমূহ)

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 28, আল কাসাস (কিসসাসমূহ)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৮৮, রুকু সংখ্যা: ০৯

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-২১ :ফিরাউন কর্তৃক বনি ইসরাঈলিদের নির্যাতন। মূসার জন্ম। ফিরাউনের ঘরে তাঁর লালন পালন। যুবক মূসা কর্তৃক এক মিশরীয়কে অনিচ্ছাকৃত হত্যা। মূসাকে গ্রেফতারের অভিযান এবং মূসার মিশর ত্যাগ।
২২-২৮ :মূসা আ.-এর মাদায়িনে আগমন। দুই যুবতীর পশুকে পানি পানে সহযোগিতা। তাদের পিতা কর্তৃক মূসাকে আশ্রয়দান। তাঁদের এক বোনকে মূসার সাথে বিয়ে। সেখানে কয়েক বছর অতিবাহিত।
২৯-৩৫ :সপরিবারে মূসার মিশর রওনা। পথিমধ্যে তূরে সায়নায় নবুয়্যত ও মুজিযা লাভ। ফিরাউনের কাছে দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ। ভাই হারূণকেও সাহায্যকারী হিসেবে নবুয়্যত দান।
৩৬-৪২ :ফিরাঊনের কাছে মূসার দাওয়াত। ফিরাউন ও তার বাহিনী কর্তৃক মূসাকে প্রত্যাখ্যান।
৪৩-৫০ :আল্লাহ কখন কি অবস্থায় বিভিন্ন জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছেন এবং সেসব জাতি রসূলদের সাথে কি আচরণ করেছে? মুহাম্মদ সা.-এর উদ্দেশ্যে সে সবের বর্ণনা।
৫১-৭৫ :কিতাবের প্রতি কোন্ ধরনের লোকেরা ঈমান আনে? আল্লাহ কখন কোনো জাতিকে ধ্বংস করেন? যাদের কাছে রসূল পাঠানো হয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। যাদেরকে আল্লাহর শরিক বানানো হয় তাদের শরিক হবার পক্ষে কোনো প্রমাণ নাই।
৭৬-৮২ :কারূণের প্রতি আল্লাহর বিশাল অনুগ্রহ। আল্লাহর প্রতি কারূণের অকৃজ্ঞতা। কারূণের কৃপণতা এবং তার ধ্বংস।
৮৩-৮৮ :আখিরাতের পুরস্কার কারা লাভ করবে? রসূলকে মক্কায় ফিরিয়ে নেয়ার ভবিষ্যতবাণী। নবী সা. রিসালাত লাভের আকাঙ্খিত ছিলেন না। এটা ছিলো আল্লাহর অনুগ্রহ।
28-1 : তোয়া সিন মিম।
28-2 : এগুলো কিতাবুম মুবিনের (সুস্পষ্ট কিতাবের) আয়াত।
28-3 : বিশ্বাসী লোকদের জন্যে আমরা মূসা ও ফেরাউনের কিছু সংবাদ নিখুঁতভাবে তিলাওয়াত (বর্ণনা) করছি।
28-4 : ফেরাউন দেশে হঠকারী নীতি অবলম্বন করে এবং নাগরিকদের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে একদল লোককে দুর্বল করে রেখেছিল। তাদের পুত্রদের যবাই করছিল এবং মেয়েদের জীবিত রাখছিল। সে ছিলো একজন ফাসাদ (বিপর্যয়) সৃষ্টিকারী।
28-5 : তখন আমরা এরাদা করেছিলাম, যাদের দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবো, তাদের নেতৃত্ব দান করবো এবং তাদের ওয়ারিশ বানাবো,
28-6 : এবং জমিনে তাদের প্রতিষ্ঠিত করবো। আর ফেরাউন, হামান এবং তাদের দুজনের বাহিনীকে তাদের (দুর্বল করে রাখাদের) থেকে সেই জিনিসটা দেখাবো যার আশংকা তারা করছিল (অর্থাৎ ক্ষমতাচ্যুতির)।
28-7 : এ উদ্দেশ্যে আমরা মূসার মা’কে অহি (ইশারা) করে নির্দেশ দিয়েছিলাম: ‘‘ওকে (মূসাকে) বুকের দুধ পান করাতে থাকো। যখন তার (জীবনের) ব্যাপারে আশংকা করবে, তখন তাকে (বাক্সে করে) দরিয়ায় ভাসিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে তুমি ভয়ও করোনা, দুশ্চিন্তাও করোনা। ওকে আমরা তোমার কোলেই ফিরিয়ে দেবো এবং তাকে আমরা বানাবো রসূলদের একজন।’’
28-8 : তারপর ফেরাউনের পরিবারের লোকজন তাকে উঠিয়ে নেয়, যাতে করে (অবশেষে) সে তাদের শত্রু ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়। নিশ্চয়ই ফেরাউন, হামান এবং তাদের বাহিনী ছিলো অপরাধী।
28-9 : ফেরাউনের স্ত্রী বলেছিল: ‘শিশুটি আমার ও তোমার চোখ জুড়াবে। ওকে হত্যা করোনা। হয়তো সে আমাদের উপকারে আসবে, অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবেই গ্রহণ করতে পারি।’ অথচ তারা এর পরিণতি অনুভব করতে পারেনি।
28-10 : এদিকে মূসার মার অন্তর অস্থির হয়ে পড়েছিল। যাতে করে সে আস্থাশীল থাকে সে জন্যে আমরা তার অন্তরকে মজবুত করে না দিলে সে তার পরিচয়ই প্রকাশ করে দিতো।
28-11 : সে (মূসার মা) মূসার বোনকে বলেছিল: ‘তুই যা ওর পেছনে পেছনে।’ তখন সে তাদের অজ্ঞাতসারে দূর থেকে ওকে দেখতে দেখতে গিয়েছিল।
28-12 : আমরা আগে থেকেই ধাত্রীর দুধপান তার (মূসার) জন্যে হারাম করে দিয়েছিলাম। সে (মূসার বোন) তাদের বলেছিল: ‘আমি কি আপনাদের এমন একটি পরিবারের সন্ধান দেবো যারা আপনাদের হয়ে একে লালন পালন করবে এবং তারা ওর কল্যাণকামীও হবে?’
28-13 : এভাবেই আমরা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তার মায়ের কাছে যাতে করে তার চক্ষু শীতল হয় এবং সে দুশ্চিন্তা না করে, আর সে যেনো জানতে পারে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। তবে অধিকাংশ লোকই জানেনা।
28-14 : মূসা যখন পূর্ণ বালেগ হলো এবং বয়েসের দিক থেকে পরিণত হলো, তখন আমরা তাকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করলাম। কল্যাণপরায়ণদের এভাবেই আমরা পুরস্কৃত করি।
28-15 : সে (মূসা) নগরীতে প্রবেশ করলো, যখন তার অধিবাসীরা ছিলো অসতর্ক। সেখানে সে দুটি লোককে দেখলো সংঘর্ষে লিপ্ত। একজন তার নিজ গোত্রের, আরেকজন তার শত্রুপক্ষের। তার গোত্রের লোকটি শত্রুর বিরুদ্ধে তার সাহায্য চাইলো। তখন মূসা তাকে ঘুষি মারে এবং তাকে হত্যা করে বসে। (এই আকস্মিক ঘটনায়) মূসা বললো: এটা শয়তানের কান্ড। সে তো সুস্পষ্ট শত্রু এবং বিভ্রান্তকারী।
28-16 : মূসা আরো বললো: ‘আমার রব! আমি নিজের প্রতি যুলুম করে ফেলেছি, তুমি আমাকে মাফ করে দাও।’ তখন তিনি তাকে মাফ করে দেন। কারণ, তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়াবান।
28-17 : মূসা বললো: আমার প্রভু! যেহেতু তুমি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছো, তাই আমি আর কখনো অপরাধীদের সাহায্য করবো না।
28-18 : ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় নগরীতে মূসার সকাল হলো। হঠাৎ সে শুনতে পায় গতকাল যে ব্যক্তি তার সাহায্য চেয়েছিল সে তার সাহায্যের জন্যে চীৎকার করছে। মূসা তাকে বললো: ‘তুমি এক সুস্পষ্ট বিপথগামী ব্যক্তি।’
28-19 : মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে ধরতে উদ্যত হলো, সে ব্যক্তি বলে উঠলো: ‘হে মূসা! তুমি যেভাবে গতকাল এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছো, সেভাবে কি আমাদেরও হত্যা করতে চাইছো? তুমি তো দেশে স্বেচ্ছাচারী হতে চাইছো, সংশোধনকামী হতে চাচ্ছোনা।
28-20 : (এ সময়) নগরীর দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বললো: ‘হে মূসা। ফেরাউনের পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার জন্যে পরামর্শ করছে, তুমি (মিশর) থেকে বেরিয়ে যাও, আমি তোমার কল্যাণ চাই।’
28-21 : মূসা ভয়ে সতর্কভাবে (দেশ থেকে) বেরিয়ে পড়লো। সে বললো: ‘আমার প্রভু! আমাকে যালিম কওমের কবল থেকে রক্ষা করো।’
28-22 : মূসা যখন মাদায়েনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলো, তখন বললো: ‘আশা করি আমার প্রভু আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন।’
28-23 : যখন সে মাদায়েনের কূপের কাছে পৌঁছে, সেখানে দেখতে পায় একদল লোক পশুদের পানি পান করাচ্ছে। সবার পেছনে দুই নারীকে দেখতে পায়, তারা তাদের পশুকে আগলে রাখছে। মূসা তাদের বললো: ‘আপনাদের ব্যাপার কী?’ তারা বললো: ‘আমরা আমাদের পশুদের পানি পান করাতে পারিনা, যতোক্ষণ রাখালেরা তাদের পশুদের পানি পান করিয়ে চলে না যায়। আমাদের পিতা একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি।’
28-24 : মূসা তাদের পক্ষে তাদের পশুকে পানি পান করিয়ে দিলো। তারপর ছায়ার নীচে ফিরে এসে বললো: ‘আমার প্রভু! তুমি আমাকে যে আতিথ্যের ব্যবস্থাই করে দেবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।’
28-25 : তখন সেই দুই নারীর একজন লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে তার কাছে এলো এবং বললো: ‘আমার আব্বু আপনাকে ডাকছেন আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দিতে।’ মূসা যখন তার কাছে এলো এবং নিজের সব ঘটনা বিস্তারিত খুলে বললো, সে বললো: ‘তুমি আর ভয় পেয়োনা, তুমি যালিম কওমের কবল থেকে নাজাত পেয়ে গেছো।’
28-26 : সেই দুই নারীর একজন বললো: ‘আব্বু! তুমি তাকে কর্মচারী নিযুক্ত করো, তোমার কর্মচারী হিসেবে উত্তম হবেন তো এমন ব্যক্তি যিনি শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত।’
28-27 : সে মূসাকে বললো: ‘শুনো, আমি আমার এই দুই কন্যার একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরি করবে, তবে দশ বছর যদি পূর্ণ করতে চাও সেটা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা। আল্লাহ চান তো, তুমি আমাকে ন্যায়বান পাবে।’
28-28 : মূসা বললো: ‘আমার এবং আপনার মাঝে এই চুক্তিই হলো। এ দুটি মেয়াদের যে কোনো একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকবেনা। আমরা যা বলছি আল্লাহ তার সাক্ষী।’
28-29 : মূসা যখন নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করলো এবং সপরিবারে যাত্রা করলো, তুর পাহাড়ের কাছে এসে পাহাড়ের দিকে আগুন দেখতে পেলো। সে তার পরিবারবর্গকে বললো: তোমরা এখানে অপেক্ষা করো, আমি আগুন দেখেছি, হয়তো সেখান থেকে তোমাদের জন্যে কোনো খবর নিয়ে আসবো কিংবা নিয়ে আসবো এক খন্ড জ্বলন্ত কাঠ, তাতে তোমরা আগুন পোহাতে পারবে।’
28-30 : মূসা যখন আগুনের দিকে এলো, তখন (তোয়া) উপত্যকার ডান পাশে পবিত্র ভূমির এক গাছের দিক থেকে তাকে ডেকে বলা হলো: ‘হে মূসা! আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।’
28-31 : তাকে আরো বলা হলো: ‘তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।’ তারপর মূসা যখন দেখলো, সেটা সাপের মতো ছুটাছুটি করছে, তখন সে পিছে ফিরে দৌড়াতে থাকলো এবং পেছনে ফিরে তাকিয়েও দেখলোনা। তাকে ডেকে বলা হলো: ‘‘হে মূসা! সামনে ফিরে আসো, ভয় পেয়োনা, তুমি নিরাপদ।
28-32 : তোমার হাত তোমার বগলে রাখো, দেখবে সেটি অনাবিল উজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসবে কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই। ভয় দূর করার জন্য তোমার দুই হাত তোমার বুকে চেপে ধরো। এ দুটি তোমার প্রভুর দেয়া প্রমাণ ফেরাউন আর তার পারিষদবর্গের জন্যে। তারা একটি ফাসিক কওম।’’
28-33 : মূসা বললো: ‘‘আমার প্রভু! আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম, তাই আমি আশংকা করছি তারা আমাকে হত্যা করবে।
28-34 : আমার ভাই হারূণ, সে আমার চাইতে ভালো বক্তা, তুমি তাকে আমার সাথে সাহায্যকারী হিসেবে রসূল বানিয়ে দাও। সে আমার সত্যায়ন করবে। আমার আশংকা হয় তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে।’’
28-35 : আল্লাহ বললেন: ‘‘আমরা তোমার ভাইকে দিয়ে তোমার হাতকে শক্তিশালী করবো এবং তোমাদের দুজনকেই আমরা সনদগত ক্ষমতা প্রদান করবো। ফলে তারা (তোমাদের ক্ষতির উদ্দেশ্যে) তোমাদের কাছেই পৌঁছাতে পারবেনা। তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরাই আমাদের নিদর্শনের সাহায্যে বিজয়ী হবে।’’
28-36 : মূসা যখন তাদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে উপস্থিত হলো, তারা বললো: ‘এ - তো এক মিথ্যা - ম্যাজিক ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের কথা আমাদের বাপ - দাদাদের কালেও আমরা শুনিনি।’
28-37 : মূসা বললো: ‘আমার প্রভুই অধিক জানেন কে তাঁর পক্ষ থেকে হিদায়াত নিয়ে এসেছে এবং কার শেষ পরিণাম শুভ হবে। নিশ্চয়ই কখনো সফল হবেনা যালিমরা।’
28-38 : ফেরাউন বললো: ‘হে আমার পারিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের আর কোনো ইলাহ আছে বলে তো আমি জানিনা। হে হামান! তুমি আমার জন্যে ইট পোড়াও এবং উঁচু এক প্রাসাদ তৈরি করো। হয়তো আমি তাতে উঠে মূসার ইলাহকে দেখতে পাবো। তবে আমি মনে করি সে মিথ্যাবাদী।’
28-39 : সে এবং তার বাহিনী অন্যায়ভাবে দেশে অহংকার করে। তারা ধারণা করেছিল তাদেরকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনা হবেনা।
28-40 : তারপর আমরা পাকড়াও করি তাকে এবং তার বাহিনীকে এবং তাদের নিক্ষেপ করি দরিয়ায়। দেখো, কী (মন্দ) পরিণতি হয়েছিল যালিমদের!
28-41 : আমরা তাদের বানিয়ে দিয়েছিলাম জাহান্নামের দিকে আহবান করার ইমাম (নেতা)। কিয়ামতের দিন তাদের কোনো সাহায্য করা হবেনা।
28-42 : এ দুনিয়ায় আমরা তাদের অনুগামী করে দিয়েছি লা’নত আর কিয়ামতের দিন তারা হবে ঘৃণিত।
28-43 : আগেকার বহু মানব প্রজন্মকে হালাক করে দেয়ার পর আমরা মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব মানুষের জন্যে জ্ঞানের আলো, হিদায়াত এবং রহমত হিসেবে, যাতে করে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।
28-44 : (হে মুহাম্মদ!) তুমি (তুর পাহাড়ের) পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেনা আমরা যখন মূসাকে বিধান দিয়েছিলাম এবং তুমি বিষয়টা নিজের চোখেও দেখোনি।
28-45 : বরং আমরা বহু মানব প্রজন্ম সৃষ্টি করেছি এবং তাদের উপর বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে। তুমি তো মাদায়েনবাসীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনা তাদের কাছে আমাদের আয়াত তিলাওয়াত করার জন্যে। বরং আমরাই ছিলাম সেখানে রসূল প্রেরণকারী।
28-46 : আমরা যখন মূসাকে ডেকেছিলাম, তখন তো তুমি তুর পাহাড়ের পাশে উপস্থিত ছিলেনা। বরং এটা (এই অহি) তোমার প্রভুর রহমত যাতে করে তুমি এমন একটি কওমকে সতর্ক করতে পারো, যাদের কাছে তোমার আগে কোনো সতর্ককারী আসেনি, আর তারা যেনো শিক্ষা গ্রহণ করে।
28-47 : রসূল যদি না পাঠাতাম, তাহলে তাদের কর্মকান্ডের জন্যে যদি তাদের কোনো মসিবত আসতো তারা বলতো: ‘আমাদের প্রভু! তুমি কেন আমাদের কাছে একজন রসূল পাঠালেনা? পাঠালে তো আমরা তোমার আয়াতের ইত্তেবা (অনুসরণ) করতে পারতাম এবং আমরা মুমিন হয়ে যেতাম।’
28-48 : কিন্তু যখন আমাদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে সত্য এলো, তারা বললো: ‘মূসাকে যেমন (নিদর্শন) দেয়া হয়েছিল, তাকে সে রকম দেয়া হলো না কেন? কিন্তু মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছে: ‘(কুরআন ও তাওরাত) দুটিই ম্যাজিক, পরস্পরের সমর্থক। তারা আরো বলেছিল আমরা প্রত্যেকটিই অস্বীকার করি।’
28-49 : হে নবী! বলো: ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তবে তোমরাই আল্লাহর কাছ থেকে একখানা কিতাব নিয়ে আসো যেটি এ দুটি (কুরআন ও তাওরাত) থেকে অধিকতর হিদায়াতওয়ালা কিতাব হবে, আমিও সে কিতাবের অনুসরণ করবো।’
28-50 : তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তবে জেনে রাখো, তারা কেবল নিজেদের খেয়াল খুশিরই ইত্তেবা করে। ঐ ব্যক্তির চাইতে অধিকতর বিপথগামী আর কে আছে, যে আল্লাহর হিদায়াত উপক্ষো করে নিজের খেয়াল খুশির ইত্তেবা করে? নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম কওমকে সঠিক পথ দেখাননা।
28-51 : আমরা তাদের কাছে লাগাতার বাণী পৌঁছে দিয়েছি যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
28-52 : যাদেরকে আমরা ইতোপূর্বে কিতাব দিয়েছিলাম, তারা (তাদের কেউ কেউ) এর প্রতি (কুরআনের প্রতি) ঈমান রাখে।
28-53 : তাদের প্রতি যখন এটি (কুরআন) তিলাওয়াত করা হয়, তারা বলে: আমরা এটির প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয়ই আমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এটি সত্য। আমরা তো পূর্বেও মুসলিমই ছিলাম।
28-54 : এরাই সেইসব লোক যাদেরকে পুরস্কার দেয়া হবে দুইবার তাদের সবরের কারণে। তারা মন্দের মুকাবেলা করে ভালো দিয়ে এবং তাদেরকে আমরা যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে (আল্লাহর পথে)।
28-55 : তারা যখনই অর্থহীন কিছু শুনে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায়। তারা বলে: ‘আমাদের কাজের ফল আমরা পাবো আর তোমাদের কাজের ফল পাবে তোমরা। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা জাহিলদের সাথিত্ব চাইনা।’
28-56 : তুমি যাকে মহব্বত করো, তুমি চাইলেই তাকে হিদায়াত করতে পারবেনা। কিন্তু আল্লাহ যাকে চান হিদায়াত করেন। কারা হিদায়াতপ্রাপ্ত সেটা তিনিই ভালো জানেন।
28-57 : তারা বলে: ‘আমরা যদি তোমার সাথে হিদায়াতের পথে চলি, তাহলে আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করা হবে।’ আমরা কি তোমাদেরকে একটি নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে সব ধরনের ফল ফলারি আমদানি হয় আমাদের পক্ষ থেকে রিযিক হিসেবে। তবে অধিকাংশ লোকই সত্য জানেনা।
28-58 : কতো যে জনপদ আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি, যেগুলোর অধিবাসীরা নিজেদের সম্পদ ও জীবিকার দম্ভ করে বেড়াতো! এই যে এগুলো তাদের ঘর - বাড়ি, তাদের পরে এগুলোতে লোকজন সামান্যই বসবাস করেছে। আর প্রকৃত ওয়ারিশ তো আমরাই।
28-59 : তোমার রব জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, যতোক্ষণ না সেগুলোর কেন্দ্রে রসূল পাঠিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের আয়াত তিলাওয়াত করার জন্যে। আমরা যেসব জনপদ ধ্বংস করেছি সেগুলোর অধিবাসীরা ছিলো যালিম।
28-60 : তোমাদের যা কিছু দেয়া হয়েছে সেগুলো তো পার্থিব জীবনের ভোগ্য ও সৌন্দর্য। আর আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই উত্তম ও চিরস্থায়ী। তোমরা কি আকল খাটাবেনা?
28-61 : যে ব্যক্তিকে আমরা উত্তম পুরস্কার প্রদানের ওয়াদা দিয়েছি আর সে অবশ্যি সে পুরস্কারের সাক্ষাত লাভ করবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য, যাকে আমরা দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী দিয়েছি, তারপর কিয়ামতের দিন তাকে হাজির করা হবে আসামী হিসেবে?
28-62 : সেদিন তিনি তাদের ডেকে বলবেন: ‘কোথায় আজ তারা যাদেরকে তোমরা আমার শরিক বলে ধারণা করতে?’
28-63 : যাদের উপর শাস্তির বাণী অবধারিত হবে, তারা বলবে: ‘আমাদের প্রভু! এদেরকে আমরাই বিভ্রান্ত করেছিলাম, এদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম যেমন আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। আমরা আপনার কাছে এদের দুষ্কর্মের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছি। তারা তো আমাদের ইবাদত করতোনা।’
28-64 : তাদের বলা হবে: তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরিক বানিয়েছিলে তাদের ডাকো, তখন তারা তাদের ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকের জবাব দেবেনা। তারা তখন আযাব দেখতে পাবে। হায়, তারা যদি হিদায়াতের পথ অনুসরণ করতো?
28-65 : আল্লাহ সেদিন তাদের ডেকে বলবেন: ‘তোমরা রসূলদের কী জবাব দিয়েছিলে?’
28-66 : সেদিন সব তথ্য তাদের থেকে বিস্মৃত হয়ে যাবে এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাও করতে পারবেনা।
28-67 : তবে যে ব্যক্তি তওবা করবে, ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ করবে, আশা করা যায়, সে সফলতা অর্জনকারীদের অন্তরভুক্ত হবে।
28-68 : তোমার প্রভু যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, এতে তাদের কোনো হাত নেই। আল্লাহ সে সব থেকে পবিত্র ও মহান, যাদের তারা তাঁর সাথে শরিক করছে।
28-69 : তোমার প্রভু জানেন তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে।
28-70 : তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর দুনিয়া ও আখিরাতে। সার্বভৌমত্ব তাঁরই এবং তাঁর কাছেই ফিরিয়ে নেয়া হবে তোমাদের।
28-71 : হে নবী! বলো: তোমরা ভেবে দেখেছো কি, আল্লাহ যদি রাতকে কিয়ামতকাল পর্যন্ত তোমাদের উপর স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া এমন কোনো ইলাহ আছে কি, যে তোমাদের আলো এনে দেবে? তোমরা কি (উপদেশ) শুনবেনা?
28-72 : বলো: তোমরা ভেবে দেখেছো কি, আল্লাহ যদি দিনকে তোমাদের উপর কিয়ামতকাল পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে কোন্ ইলাহ আছে, যে তোমাদের রাত এনে দেবে যাতে তোমরা বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারো? তোমরা কি ভেবে দেখবেনা?
28-73 : তিনিই নিজ দয়ায় তোমাদের জন্যে রাত এবং দিন সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম নিতে পারো এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো আর যাতে করে তোমরা তাঁর শোকর আদায় করতে পারো।
28-74 : সেদিন তিনি তাদের ডেকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরিক বলে ধারণা করতে তারা এখন কোথায়?
28-75 : আমরা প্রতিটি উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী বের করে আনবো এবং তাদের বলবো: ‘হাজির করো তোমাদের প্রমাণ।’ তখনই তারা জানতে পারবে ইলাহ হবার অধিকার একমাত্র আল্লাহর। আর যাদেরকে তারা (মিথ্যা) ইলাহ বানিয়ে নিয়েছিল তারা সবাই উধাও হয়ে যাবে।
28-76 : কারূণ ছিলো মূসার কওমেরই একজন। সে তাদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। তাকে আমরা দান করেছিলাম এমন ধনভান্ডার যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিশালী লোকের পক্ষেও ছিলো কষ্টসাধ্য। তার কওম তাকে বলেছিল: ‘‘দম্ভ করোনা, আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।
28-77 : আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের ঘর সন্ধান করো। দুনিয়ায় তোমার দায়িত্বের অংশ ভুলে যেয়োনা। মানুষের প্রতি ইহসান করো, যেভাবে আল্লাহ ইহসান করেছেন তোমার প্রতি। দেশে বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেননা।’’
28-78 : সে বললো: ‘এসব সম্পদ আমি লাভ করেছি আমার বিশেষ জ্ঞানের মাধ্যমে।’ সে কি জানেনা, আল্লাহ তার আগেও বহু মানব প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছেন যারা ছিলো শক্তিতে তার চাইতেও প্রবল এবং তাদের জনসংখ্যাও ছিলো অধিক। অপরাধীদের জিজ্ঞাসা করা হবেনা তারা কী অপরাধ করেছিল?
28-79 : কারূণ তার কওমের লোকদের সামনে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমকের সাথে। যারা দুনিয়ার হায়াতটাকেই প্রাধান্য দিতো, তখন তারা বলেছিল: ‘হায়, কারূণকে যেসব সম্পদ দেয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি সেসব দেয়া হতো! সে তো বিরাট ভাগ্যবান।’
28-80 : আর যাদেরকে এলেম দেয়া হয়েছিল তারা বলেছিল: ‘ধ্বংস হও তোমরা, যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ করেছে তাদের জন্যে তো আল্লাহর সওয়াবই (পুরস্কারই) সর্বোত্তম। আর তা তো কেবল সবর অবলম্বনকারীরাই লাভ করবে।’
28-81 : ফলে আমরা তাকে (কারূণকে) তার ঘর - বাড়ি ও প্রাসাদ - অট্টালিকাসহ দাবিয়ে দিয়েছি মাটির নীচে। তখন তাকে আল্লাহর পাকড়াওর বিরুদ্ধে সাহায্য করার কেউই ছিলনা এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সমর্থ ছিলনা।
28-82 : গতকালও যারা তার মতো হবার তামান্না (আকাঙ্ক্ষা) করেছিল, তারা বলতে লাগলো: ‘দেখলে তো, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের যাকে ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করে দেন, আর যাকে ইচ্ছা সীমিত করে দেন। যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করতেন, তবে আমাদেরকে সহই ধ্বসিয়ে দিতেন। দেখলে তো কাফিররা সাফল্য অর্জন করেনা।’
28-83 : আখিরাতের সেই ঘর আমরা তৈরি করে রেখেছি তাদের জন্যে, যারা পৃথিবীতে উদ্ধত হতে চায়না এবং সৃষ্টি করতে চায়না ফাসাদ, আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকিদের জন্যেই।
28-84 : যে কেউ (সেখানে) কোনো ভালো কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, সে তার চাইতে উত্তম প্রতিফল লাভ করবে। আর যে কেউ মন্দ কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, তবে যারাই মন্দ কাজ করেছে তাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে কেবল তাদের আমলের অনুরূপ।
28-85 : যিনি তোমার প্রতি কুরআনকে বিধান বানিয়ে দিয়েছেন, তিনি অবশ্যি তোমাকে ফেরত আনবেন তোমার জন্মভূমিতে। বলো: ‘আমার প্রভুই অধিক জানেন কে হিদায়াত নিয়ে এসেছে, আর কে রয়েছে সুস্পষ্ট বিপথগামিতায় নিমজ্জিত।’
28-86 : তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করা হবে তুমি তো কখনো সেই আশা পোষণ করোনি। এটা তো তোমার প্রভুরই অনুগ্রহ! সুতরাং তুমি কখনো কাফিরদের সাহায্যকারী হয়োনা।
28-87 : তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত নাযিল হবার পর তারা যেনো তা থেকে তোমাকে কিছুতেই বিরত না রাখতে পারে। তুমি মানুষকে দাওয়াত দাও তোমার প্রভুর দিকে এবং কিছুতেই তুমি মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়োনা।
28-88 : তুমি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ ডেকোনা। কারণ, তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তাঁর সত্তা ছাড়া প্রতিটি জিনিসই ধ্বংসশীল। সর্বময় ক্ষমতা তাঁরই এবং তোমাদেরকে তাঁরই কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে।