মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৩৪, রুকু সংখ্যা: ০৪এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
31-1 : আলিফ লাম মিম। |
31-2 : এগুলো কিতাবুল হাকিম - এর (বিজ্ঞানময় কিতাব আল কুরআনের) আয়াত। |
31-3 : এগুলো হিদায়াত এবং রহমত কল্যাণপরায়ণদের জন্যে, |
31-4 : যারা কায়েম করে সালাত, প্রদান করে যাকাত এবং আখিরাতের প্রতি তারা রাখে একীন। |
31-5 : তারাই রয়েছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর এবং তারাই হবে সফলকাম। |
31-6 : কোনো কোনো ব্যক্তি এলেম ছাড়াই মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করার উদ্দেশ্যে অসার কাহিনী কিনে আনে এবং আল্লাহর পথ সম্পর্কে বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অপমানকর আযাব। |
31-7 : যখন তার কাছে আল্লাহর আয়াত তিলাওয়াত করা হয়, সে হঠকারিতা প্রদর্শন করে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেনো সে তা শুনতেই পায়নি। তার কান দুটিও যেনো বধির। এ ব্যক্তিকে সংবাদ দাও বেদনাদায়ক আযাবের। |
31-8 : যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাতুন নায়ীম। |
31-9 : সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। তিনি মহাশক্তিধর, মহাপ্রজ্ঞাবান। |
31-10 : তিনি মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন খুঁটি ছাড়াই, তাতো তোমরা দেখতেই পাচ্ছো। আর পৃথিবীতে তিনি স্থাপন করে দিয়েছেন পাহাড় পর্বত, যাতে করে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে ঢলে না পড়ে। তাছাড়া পৃথিবীতে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরনের জীব জানোয়ার। এছাড়া আমরা আসমান থেকে নাযিল করি পানি আর তা দিয়ে আমরা উৎপন্ন করি সব ধরনের উপকারী উদ্ভিদ। |
31-11 : এ হলো আল্লাহর সৃষ্টি। এখন আমাকে দেখাও, আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ইলাহ্ মানো, তারা কী সৃষ্টি করেছে? বরং যালিমরা রয়েছে সুস্পষ্ট বিপথগামিতায়। |
31-12 : আমরা লুকমানকে দান করেছিলাম হিকমাহ (প্রজ্ঞা) এবং তাকে বলেছিলাম: শোকর আদায় করো আল্লাহর। যে কেউ শোকর আদায় করে, সে তো শোকর আদায় করে নিজের কল্যাণের জন্যেই। আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হয়, তার জেনে রাখা উচিত আল্লাহ মুখাপেক্ষাহীন সপ্রশংসিত। |
31-13 : স্মরণ করো, লুকমান তার ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল: ‘‘হে আমার পুত্র! শিরক করোনা আল্লাহর সাথে। কারণ, শিরক তো একটা বিরাট যুলুম।’’ |
31-14 : আমরা মানুষকে অসিয়ত (নির্দেশ) করেছি তার বাবা - মার সাথে উত্তম আচরণ করতে। কারণ, তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং শোকরগুজার হও আমার প্রতি, আর তোমার বাবা - মার প্রতি। তোমাদের ফিরে আসতে তো হবে আমারই কাছে। |
31-15 : তোমার বাবা - মা যদি তোমাকে আমার সাথে শরিক করতে পীড়াপীড়ি করে, যে ব্যাপারে তোমার কোনো এলেম নেই, সেক্ষেত্রে তুমি তাদের আনুগত্য করোনা। তবে তাদের সাথে বসবাস করো সুন্দরভাবে, আর ইত্তেবা (অনুসরণ) করো তার পথের, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে তো আমারই কাছে, অত:পর আমি তোমাদের সংবাদ দেবো তোমরা যা আমল করতে। |
31-16 : (লুকমান আরো বলেছিল:) ‘‘হে আমার পুত্র! কোনো ক্ষুদ্র বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় আর তা যদি থাকে কোনো পাথর খন্ডের ভেতরে, কিংবা যদি থাকে মহাকাশে, অথবা যদি থাকে ভূ - গর্ভে, আল্লাহ্ তাও এনে হাজির করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতীব সূক্ষ্মদর্শী, গভীরভাবে অবহিত। |
31-17 : হে আমার পুত্র! কায়েম করবে সালাত, আদেশ করবে ভালো কাজের, নিষেধ করবে মন্দ কাজ করতে এবং ধৈর্য ধারণ করবে বিপদ - মসিবতে। নিশ্চয়ই এটা মজবুত সংকল্পের কাজ। |
31-18 : দম্ভ করে মানুষকে অবজ্ঞা করবেনা, জমিনে ঔদ্ধত্যের সাথে চলাফেরা করবেনা, কারণ আল্লাহ্ উদ্ধত দাম্ভিকদের পছন্দ করেননা। |
31-19 : চলাফেরায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর রাখবে সংযত। নিশ্চয়ই সবচাইতে অস্বস্তিকর আওয়ায হলো গাধার ধ্বনি।’’ |
31-20 : তোমরা কি দেখছো না, আল্লাহ্ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে রেখেছেন মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই এবং তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছেন তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব নিয়ামত। কিছু লোক এলেম ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের না আছে সঠিকজ্ঞান, আর না আছে দেদীপ্যমান কিতাব। |
31-21 : তাদের যখন বলা হয়: ‘তোমরা ইত্তেবা করো আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছে সেটার,’ তখন তারা বলে: ‘আমরা বরং ইত্তেবা করবো সেটার, যার উপর পেয়েছি আমাদের পূর্বপুরুষদের।’ শয়তান যদি তাদের জ্বলন্ত আগুনের আযাবের দিকে ডাকে তবু কি (তারা তাই করবে)? |
31-22 : যে কেউ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করে এবং কল্যাণপরায়ণ হয়, সে তো আঁকড়ে ধরে এক মজবুত হাতল। সব কাজের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে। |
31-23 : আর যে কেউ কুফুরি করে, তার কুফুরি যেনো তোমাকে চিন্তিত না করে। তাদের প্রত্যাবর্তন তো হবে আমারই কাছে। তখন আমরা তাদের অবহিত করবো তারা কী আমল করছিল? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অবগত আছেন অন্তরের খবর। |
31-24 : আমরা কিছুকাল তাদের সুযোগ দেবো ভোগবিলাসের, তারপর আমরা তাদের বাধ্য করবো ভোগ করতে কঠোর আযাব। |
31-25 : তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, মহাকাশ ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? জবাবে তারা অবশ্যি বলবে: ‘আল্লাহ্।’ বলো: ‘আলহামদুলিল্লাহ্’। বরং তাদের অধিকাংশই জানেনা। |
31-26 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মুখাপেক্ষাহীন, সপ্রশংসিত। |
31-27 : পৃথিবীর সমস্ত গাছ যদি কলম হয়, আর সমস্ত সমুদ্র যদি হয় কালি এবং এর সাথে যদি আরো যুক্ত করা হয় সাত সমুদ্র, তবু আল্লাহর (প্রশংসার) বাণী লিখে শেষ করা যাবেনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়। |
31-28 : তোমাদের সবার সৃষ্টি এবং পুনরুত্থান এক ব্যক্তির সৃষ্টি আর পুনরুত্থানেরই মতো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সব শুনেন, সব দেখেন। |
31-29 : তুমি কি দেখোনা, আল্লাহ্ রাতকে দিনের এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেন এবং তিনি সূর্য আর চাঁদকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে রেখেছেন? প্রত্যেকেই চলছে একটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। আর তোমরা যা আমল করো, আল্লাহ্ তা খবর রাখেন। |
31-30 : এগুলো (প্রমাণ করে যে) আল্লাহ্ মহাসত্য এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে তারা মিথ্যা। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব উঁচু, অতীব মহান। |
31-31 : তোমরা কি দেখোনা, আল্লাহর অনুগ্রহে নৌযানগুলো জারি হয় সমুদ্রে। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তোমাদের দেখাতে চান তাঁর কিছু নিদর্শন। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে নিদর্শন প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে। |
31-32 : যখন মেঘমালার মতো (বিক্ষুব্ধ) তরঙ্গ সেগুলোকে আচ্ছন্ন করে নেয়, তখন তারা আল্লাহর জন্যে আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে তাঁকে ডাকতে থাকে। আর যখনই তিনি তাদের নাজাত দেন কূলে পৌঁছে দিয়ে, তখন তাদের কিছু লোক (ঈমান ও কুফরের) মধ্য পথ অবলম্বন করে। কেবল বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞরাই অস্বীকার করে আমাদের আয়াত। |
31-33 : হে মানুষ! তোমরা ভয় করো তোমাদের প্রভুকে। আরো ভয় করো সেই দিনটিকে, যেদিন বাপ সন্তানের কোনো উপকারে আসবেনা, আর সন্তানও কোনো উপকারে আসবেনা তার বাপের। আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যি সত্য। সুতরাং দুনিয়ার হায়াত যেনো তোমাদের প্রতারিত না করে এবং তোমাদেরকে কিছুতেই যেনো আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত না করে মহাপ্রতারক (শয়তান)। |
31-34 : অবশ্যি কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে কেবল আল্লাহর কাছে। তিনিই নাযিল করেন বৃষ্টি। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কী (ধরনের সন্তান) আছে? কোনো ব্যক্তিই জানেনা আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কোনো ব্যক্তি জানেনা কোন্ স্থানে হবে তার মরণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ জ্ঞানী এবং সব বিষয়ে অবহিত। |