মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৮৩, রুকু সংখ্যা: ০৫এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
36-1 : ইয়াসিন! |
36-2 : শপথ বিজ্ঞানময় কুরআনের, |
36-3 : অবশ্য অবশ্যি তুমি রসূলদের একজন, |
36-4 : (প্রতিষ্ঠিত আছো) সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর। |
36-5 : (এই কুরআন) নাযিল হচ্ছে মহাশক্তিধর অতীব দয়াবানের পক্ষ থেকে, |
36-6 : যাতে তুমি সতর্ক করতে পারো এমন একটি কওমকে, যাদের পূর্ব পুরুষদের সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফিল (অসতর্ক)। |
36-7 : তাদের অধিকাংশের জন্যে সেই বাণী (শাস্তি) অবধারিত হয়ে গেছে, ফলে তারা আর ঈমান আনবেনা। |
36-8 : আমরা চিবুক পর্যন্ত তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দিয়েছি, ফলে তারা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আছে। |
36-9 : আমরা তাদের সামনে প্রাচীর এবং পেছনেও প্রাচীর স্থাপন করে দিয়েছি, আর তাদের চোখে সৃষ্টি করে দিয়েছি আবরণ, ফলে তারা দেখতে পায়না। |
36-10 : তুমি তাদের সতর্ক করো কিংবা সতর্ক না করো দুটোই তাদের জন্যে সমান, তারা ঈমান আনবেনা। |
36-11 : তুমি তো সতর্ক করতে পারো তাকে, যে আয্ যিকির (আল কুরআন) - এর অনুসরণ করে এবং না দেখেও দয়াময় রহমানকে ভয় করে। তাকে সুসংবাদ দাও মাগফিরাতের আর সম্মানজনক পুরস্কারের। |
36-12 : আমরা অবশ্যি মৃতদের জীবিত করবো, আর আমরা তো লিখে রাখি তারা যা আগে পাঠায় আর যা পেছনে রেখে যায়। প্রতিটি বস্তুই আমরা স্পষ্ট কিতাবে (রেকর্ড পত্রে) সংরক্ষিত রেখেছি। |
36-13 : তাদের কাছে বর্ণনা করো দৃষ্টান্ত সেই জনপদের বাসিন্দাদের, যখন তাদের কাছে রসূলরা এসেছিল। |
36-14 : যখন তাদের কাছে আমরা পাঠিয়েছিলাম দুজন রসূল, তারা দুজনকেই প্রত্যাখ্যান করেছিল। তখন আমরা তাদের শক্তিশালী করেছিলাম তৃতীয় একজনকে পাঠিয়ে। তারা তাদের বলেছিল: ‘আমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রসূল।’ |
36-15 : (বিরোধী পক্ষ) বললো: ‘তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ ছাড়া আর কিছু নও, রহমান তোমাদের প্রতি কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা তো কেবল মিথ্যা কথাই বলছো।’ |
36-16 : তারা বললো: ‘আমাদের প্রভু জানেন, আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত রসূল। |
36-17 : সুস্পষ্টভাবে বার্তা পৌঁছে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব।’ |
36-18 : তারা বললো: ‘আমরা তোমাদের কুলক্ষণে মনে করি। তোমরা যদি বিরত না হও, আমরা অবশ্যি তোমাদের পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করবো এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদের স্পর্শ করবে বেদনাদায়ক আযাব।’ |
36-19 : তারা (রসূলরা) বললো: ‘তোমাদের কুলক্ষণ তোমাদেরই সাথে। এটা কি এজন্যে যে, আমরা তোমাদের উপদেশ দিয়ে যাচ্ছি? বরং তোমরা একটি সীমালংঘনকারী কওম (জাতি)।’ |
36-20 : নগর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এলো। সে বললো: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা রসূলদের অনুসরণ করো, |
36-21 : তোমরা তাদের ইত্তেবা (অনুসরণ) করো, যারা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চান না এবং যারা হিদায়াতপ্রাপ্ত। |
36-22 : কী কারণে আমি তাঁর ইবাদত করবো না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যাঁর কাছে তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে? |
36-23 : আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করবো? রহমান যদি আমার ক্ষতি করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবেনা এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবেনা। |
36-24 : এমনটি করলে তো আমি নিমজ্জিত হবো সুস্পষ্ট গোমরাহিতে। |
36-25 : আমি তোমাদের প্রভুর প্রতি ঈমান আনলাম, তোমরা আমার কথা মেনে নাও!’’ |
36-26 : তাকে বলা হলো: ‘দাখিল হও জান্নাতে।’ সে বলে উঠলো: ‘হায়, আমার কওম যদি জানতে পারতো |
36-27 : কী কারণে আমার প্রভু আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তরভুক্ত করেছেন।’ |
36-28 : আমরা তার (মৃত্যুর) পর তার জাতির বিরুদ্ধে আসমান থেকে কোনো বাহিনী নাযিল করিনি আর আমরা নাযিল করতামও না। |
36-29 : একটা মহাবিকট শব্দই যথেষ্ট ছিলো, সাথে সাথে তারা নিথর হয়ে গেলো। |
36-30 : পরিতাপ বান্দাদের জন্যে! যখনই তাদের কাছে কোনো রসূল এসেছে, তারা তাদের নিয়ে বিদ্রুপ করেছে। |
36-31 : তারা কি দেখেনা তাদের আগে আমরা কতো প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম! তারা আর তাদের মাঝে ফিরে আসবেনা। |
36-32 : তবে অবশ্যি তাদের সবাইকে একত্রে আমার কাছে হাজির করা হবে। |
36-33 : তাদের জন্যে একটি নিদর্শন হলো মৃত জমিন, আমরা তাকে জীবিত করি এবং তা থেকে বের করে আনি শস্য, যা থেকে তারা খায়। |
36-34 : তাতে আমরা সৃষ্টি করি খেজুর আর আঙুরের বাগান এবং তাতে আমরা জারি করে দেই ঝরণাধারা, |
36-35 : যাতে করে তারা খেতে পারে তার ফল। অথচ তাদের হাত তা সৃষ্টি করেনি। তবু কি তোমরা শোকর আদায় করবেনা? |
36-36 : তিনি পবিত্র ও মহান। তিনি উদ্ভিদকে, মানুষকে এবং তারা যাদের জানেনা তাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। |
36-37 : তাদের জন্যে আরেকটি নিদর্শন হলো রাত, তা থেকে আমরা অপসারিত করি দিনের আলো, তখন তারা নিমজ্জিত হয়ে পড়ে অন্ধকারে। |
36-38 : সূর্য চলে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা মহাপরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী কর্তৃক নির্ধারিত। |
36-39 : আর আমরা চাঁদের জন্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছি মনযিলসমূহ। অবশেষে তা শুকনা বাঁকা পুরানো খেজুর ডালের আকৃতি ধারণ করে। |
36-40 : সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষেও সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা। এরা প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথ ও অক্ষপথে চলছে সাঁতার কেটে। |
36-41 : তাদের জন্যে আরেকটি নিদর্শন হলো, আমরা তাদের বংশধরদের (পূর্ব পুরুষদের) বোঝাই করে আরোহন করিয়েছিলাম নৌযানে, |
36-42 : আর তাদের জন্যে অনুরূপ নৌযান সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আরোহণ করে। |
36-43 : আমরা চাইলে তাদের ডুবিয়ে দিতে পারি, তখন তাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবেনা এবং তাদের রক্ষাও করতে পারবেনা কেউ। |
36-44 : তবে আমাদের রহমত পেলে এবং আমরা কিছু সময়ের জন্যে জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিলে ভিন্ন কথা। |
36-45 : যখন তাদের বলা হয়: ‘সতর্ক হও সেই সম্পর্কে, যা তোমাদের সামনে রয়েছে এবং সেই ব্যাপারে যা তোমাদের পেছনে রয়েছে, যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’ |
36-46 : যখনই তাদের কাছে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের কোনো নিদর্শন এসেছে, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। |
36-47 : যখনই তাদের বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তোমাদের যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো, তখনই কাফিররা মুমিনদের বলেছে: ‘আল্লাহ্ চাইলে যাকে খাওয়াতে পারতেন, তাকে কি আমরা খাওয়াবো? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছো।’ |
36-48 : তারা আরো বলে: ‘তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে বলো, কখন আসবে সেই ওয়াদা করা সময়টি (কিয়ামত)?’ |
36-49 : হ্যাঁ, তারা যে জিনিসের অপেক্ষা করছে, তা এক মহাবিকট শব্দ ছাড়া আর কিছু নয়। সেটা তাদের আঘাত করবে তাদের বিবাদকালেই। |
36-50 : তখন তারা কোনো অসিয়ত করতেও সমর্থ হবেনা এবং তাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে যাবারও সুযোগ পাবেনা। |
36-51 : যখন (দ্বিতীয়বার) শিঙায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন সাথে সাথে তারা কবর থেকে উঠে ছুটে আসবে তাদের প্রভুর দিকে। |
36-52 : তারা বলবে: ‘হায়, ধ্বংস আমাদের, কে উঠালো আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে?’ (বলা হবে:) এটাই হলো সেটা, দয়াময় - রহমান যার ওয়াদা দিয়েছিলেন। আর রসূলরাও সত্য বলেছিলেন। |
36-53 : সেটাও হবে মহাবিকট শব্দ, যা সংঘটিত হবার সাথে সাথে সবাইকে হাজির করা হবে আমাদের সামনে। |
36-54 : আজ কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলম করা হবেনা এবং তোমরা যা আমল করতে কেবল তারই প্রতিদান দেয়া হবে। |
36-55 : নিশ্চয়ই আজ জান্নাতের অধিবাসীরা থাকবে আনন্দ আর উৎফুল্লে মশগুল। |
36-56 : তারা এবং তাদের স্ত্রীরা/স্বামীরা থাকবে সুমধুর ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে সমাসীন। |
36-57 : তাদের জন্যে সেখানে থাকবে ফলফলারি এবং তারা যা চাইবে সবকিছু। |
36-58 : তাদের প্রতি পরম দয়াবান প্রভুর পক্ষ থেকে সম্ভাষণ হবে - ‘সালাম’। |
36-59 : সেদিন বলা হবে: ‘হে অপরাধীরা! তোমরা আজ আলাদা হয়ে যাও।’ |
36-60 : হে বনি আদম! আমি কি তোমাদের নির্দেশ দেইনি: ‘‘তোমরা শয়তানের ইবাদত করোনা, কারণ সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন। |
36-61 : আর কেবল আমারই ইবাদত করো, এটাই সিরাতুল মুস্তাকিম (সরল সঠিক পথ)?’’ |
36-62 : শয়তান তো তোমাদের বহু মানবদলকে পথভ্রান্ত করেছিল, তবু কি তোমরা বুঝতে পারোনি? |
36-63 : এ হলো সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদের দেয়া হয়েছিল। |
36-64 : এতেই আজ প্রবেশ করো, কারণ তোমরা কুফুরি করেছিলে। |
36-65 : আমরা আজ তাদের মুখ সীলমোহর করে দেবো এবং আমাদের সাথে কথা বলবে তাদের হাত আর সাক্ষ্য দেবে তাদের পা সে সম্পর্কে, যা তারা কামাই করেছিল। |
36-66 : আমরা চাইলে তাদের চোখ বিলুপ্ত (অন্ধ) করে দিতে পারতাম, তখন তারা পথ চলতে চাইলে কি চলতে পারতো? |
36-67 : আমরা চাইলে তাদের স্বস্থানে তাদের আকৃতি পরিবর্তন করে বিকৃত করে দিতে পারতাম, তখন তারা কোথাও যেতেও পারতোনা, ফিরেও আসতে পারতোনা |
36-68 : আমরা যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তার সৃষ্টিগত প্রকৃতির অবনতি ঘটিয়ে দেই। তবু কি তারা বুঝার চেষ্টা করবেনা? |
36-69 : তাকে (মুহাম্মদকে) আমরা কবিতা রচনা করতে শিখাইনি এবং এটা তাঁর জন্যে উপযুক্ত কাজও নয়। এ - তো একটা উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন ছাড়া আর কিছুই নয়, |
36-70 : যাতে সে জীবিত লোকদের সতর্ক করতে পারে এবং যাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির ফায়সালা সত্য হতে পারে। |
36-71 : তারা কি দেখেনা, আমরা আমাদের হাতে যেসব জিনিস তৈরি করেছি, তার মধ্যে তাদের জন্যে পশুও তৈরি করেছি এবং তারাই সেগুলোর মালিক হয়? |
36-72 : আর আমরা সেগুলোকে করে দিয়েছি তাদের বশীভূত। ফলে সেগুলোর কিছু পশুকে তারা ব্যবহার করে বাহন হিসেবে, আর তারা আহার করে কিছু পশুর গোশত। |
36-73 : সেগুলোতে তাদের জন্যে রয়েছে বহু রকম মুনাফা, রয়েছে পানীয় (দুধ)। তবু কি তারা শোকর আদায় করবেনা? |
36-74 : অথচ তারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করে এই আশা নিয়ে যে, তাদের সাহায্য করা হবে। |
36-75 : এসব ইলাহ্ তাদের সাহায্য করার সামর্থ রাখেনা। তাদেরকে তাদের (পূজারীদের) বিরুদ্ধে বাহিনী হিসেবে হাজির করা হবে। |
36-76 : সুতরাং তাদের কথাবার্তা যেনো তোমাকে দুঃখ না দেয়। আমরা জানি তারা যা গোপন করে, আর যা করে প্রকাশ। |
36-77 : মানুষ কি দেখেনা, আমরা তাদের সৃষ্টি করেছি নোতফা (শুক্রবিন্দু) থেকে? কিন্তু তারপর তারা (আমাদের বিরুদ্ধেই) সুস্পষ্ট বিতর্ককারী হয়ে দাঁড়ায়। |
36-78 : সে আমাদের সম্পর্কে দৃষ্টান্ত তৈরি করে এবং ভুলে যায় তার সৃষ্টির কথা। সে বলে: ‘পঁচে গলে মাটির সাথে মিশে যাবার পর হাড়গোড়ে কে সঞ্চার করবে প্রাণ? |
36-79 : তুমি বলো: ‘তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনি, যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রতিটি সৃষ্টি সম্পর্কে অগাধ জ্ঞানী।’ |
36-80 : তিনি সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ গাছ থেকে উৎপাদন করেন আগুন এবং তোমরা তা প্রজ্জ্বলিত করো। |
36-81 : যিনি মহাকাশ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, (অবশ্যি) তিনি মহাজ্ঞানী মহান স্রষ্টা। |
36-82 : তাঁর সৃষ্টির নির্দেশ কার্যকর হয় তো এভাবে, তিনি যখন কিছু চান, তাকে বলেন, ‘হও’, সঙ্গে সঙ্গে তা হয়ে যায়। |
36-83 : সুতরাং পবিত্র ও মহান তিনি, যাঁর হাতে রয়েছে প্রতিটি জিনিসের কর্তৃত্ব এবং তাঁরই কাছে ফেরত নেয়া হবে তোমাদের। |