আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 39, আয্ যুমার (দলে দলে)

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 39, আয্ যুমার (দলে দলে)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৭৫, রুকু সংখ্যা: ০৮

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-২১শিরকমুক্ত ইবাদতই মুক্তির পথ। মহাবিশ্ব এবং মানুষকে আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কোনো শরিক নাই। জ্ঞানী আর অজ্ঞরা সমান নয়। আল্লাহর বিশুদ্ধ আনুগত্য ও ইবাদতের নির্দেশ। যারা তাগুতকে পরিহার করে আল্লাহমুখী হয়, তারাই আল্লাহর প্রিয় দাস। তারাই সঠিক পথের অনুসারী।
২২-৩১আল্লাহ্ ইসলামের জন্য যার অন্তর উন্মুক্ত করেছেন, সেই আছে আল্লাহর দেয়া আলোর পথে। কুরআন সর্বোত্তম হাদিস (বাণী)। কুরআনই আল্লাহর পথের দিশারি। কুরআনে সব বিষয়ের উপদেশ রয়েছে। সব মানুষের মতো নবীও মরণশীল।
৩২-৪১সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীরা সবচেয়ে বড় যালিম। সত্য গ্রহণকারীরাই মুত্তাকি। গোটা মানব জাতির জন্যে সত্যের দিশারি আল কুরআন।
৪২-৫২মানুষের নিদ্রা আল্লাহর একটি নিদর্শন। শাফায়াত পুরোপুরি আল্লাহর হাতে। মানুষ বিপদের সময় আল্লাহকে ডাকে। আল্লাহ্ বিপদ দূর করে দিলে সে নিজের বিজ্ঞতার প্রশংসা করে। কাউকেও প্রশস্ত ও কাউকে সীমিত রিযিক দেয়া আল্লাহর একটি নিদর্শন।
৫৩-৬৩তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাবের অনুসরণ করো।
৬৪-৭০শিরকের অসারতা, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সাক্ষীদের হাজির করা হবে, প্রত্যেককে তার আমলের বিনিময় দেয়া হবে পুরোপুরি।
৭১-৭৫কাফিরদের জাহান্নামে যাওয়ার দৃশ্য, মুত্তাকিদের জান্নাতে যাওয়ার দৃশ্য, অবশেষে ফেরেশতারা আল্লাহর তসবিহতে নিরত হবে।
39-1 : এই কিতাব তোমার কাছে নাযিল হচ্ছে সত্যিকারভাবে মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়ের পক্ষ থেকে।
39-2 : আমরা তোমার কাছে এই কিতাব নাযিল করছি সত্যসহ। অতএব কেবল আল্লাহরই ইবাদত করো নিজের আনুগত্যকে তাঁর জন্যে একনিষ্ঠ করে।
39-3 : একনিষ্ঠ আনুগত্য কেবল আল্লাহর জন্যে। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অলি হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা বলে: ‘আমরা তো তাদের ইবাদত করি কেবল এ জন্যে যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেবে।’ অবশ্যি তারা যা নিয়ে মতভেদ করছে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্ সে বিষয়ে তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবেন। মিথ্যাবাদী কাফিরদের আল্লাহ্ সঠিক পথ দেখান না।
39-4 : আল্লাহ্ যদি সন্তান গ্রহণ করতে চাইতেনই, তবে তাঁর সৃষ্টির মাঝে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিতেন। কিন্তু সন্তান গ্রহণ থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র ও মুক্ত। আল্লাহ্ তো এক এবং মহাপরাক্রমশালী।
39-5 : তিনি বাস্তবভাবে সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ ও পৃথিবী। তিনি রাতকে দিয়ে দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং দিনকে দিয়ে আচ্ছাদিত করেন রাতকে। তিনি সূর্য এবং চাঁদকে নিয়মের অধীন করেছেন। এরা প্রত্যেকেই ভ্রমণ করে একটি নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। জেনে রাখো তিনি মহাক্ষমতাধর, অতীব ক্ষমাশীল।
39-6 : তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একজন মাত্র ব্যক্তি থেকে, তারপর তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে। তিনি তোমাদের দিয়েছেন আট জোড়া (প্রজাতির) গবাদি পশু। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে তিনটি অন্ধকার স্তর পার করে। তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রভু। সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই। কোনো ইলাহ্ নেই তিনি ছাড়া। সুতরাং তোমরা মুখ ফিরিয়ে চলেছো কোথায়?
39-7 : তোমরা যদি কুফুরি করো, তবে জেনে রাখো, আল্লাহ্ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর বান্দাদের জন্যে কুফুরি পছন্দ করেন না। তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তিনি সেটাই পছন্দ করেন তোমাদের জন্যে। কেউই অপরের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। অত:পর তোমাদের প্রভুর কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি তোমাদের অবহিত করবেন তোমরা কী আমল করেছিলে? মনে কী আছে সে বিষয়েও তিনি অবগত।
39-8 : মানুষকে যখন দুঃখ - দুর্দশা স্পর্শ করে, তখন সে তার প্রভুকে ডাকে একনিষ্ঠ মনোভাব নিয়ে। অত:পর যখন তিনি তার প্রতি অনুগ্রহ করেন, তখন সে ভুলে যায় আগে যে সে তাঁকে একনিষ্ঠভাবে ডেকেছিল। সে আল্লাহর শরিক দাঁড় করায় যেনো সে তাকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। বলো: কুফুরি নিয়ে জীবনটাকে ক’টা দিন ভোগ করো। জেনে রাখো তুমি জাহান্নামী।
39-9 : যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন অংশে সাজদা করে এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার প্রভুর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার প্রভুর রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য যে এসব করেনা? বলো: জ্ঞানীরা আর অজ্ঞরা কি সমান? উপদেশ গ্রহণ করে তো বুদ্ধিমান লোকেরাই।
39-10 : (হে নবী! আমার পক্ষ থেকে) বলে দাও: ‘হে আমার দাসেরা, যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের প্রভুকে ভয় করো। যারা এই দুনিয়ায় কল্যাণের কাজ করে, তাদের জন্যে রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহর জমিন তো প্রশস্ত। ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান দেয়া হবে অফুরন্ত।’
39-11 : বলো: ‘‘আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেনো আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করি।
39-12 : আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেনো হই মুসলিমদের (আত্মসমর্পনকারীদের) প্রথম।’’
39-13 : বলো: ‘আমি যদি আমার প্রভুর অবাধ্য হই, তবে আমি এক মহাদিবসের আযাবের আশংকা করি।’
39-14 : বলো: ‘আমি কেবল আল্লাহরই ইবাদত করি তাঁর প্রতি আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে।’
39-15 : তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইচ্ছা ইবাদত করো। বলো: ‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত লোক তারাই, যারা কিয়ামতের দিন ক্ষতিগ্রস্ত করবে নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবার পরিজনকে। সাবধান, সেটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি।’
39-16 : তাদের জন্যে থাকবে তাদের উপরে আগুনের আচ্ছাদন এবং নিচেও আগুনের বিছানা। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তার বান্দাদের সতর্ক করেন। হে আমার দাসেরা! তোমরা সতর্ক হও, আমাকে ভয় করো।
39-17 : যারা তাগুতের ইবাদত (পূজা, উপাসনা, আনুগত্য) থেকে বিরত থাকবে এবং আল্লাহর অভিমুখী হবে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ। সুতরাং আমার দাসদের সুসংবাদ দাও,
39-18 : যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে এবং তাতে যা উত্তম তা গ্রহণ করে। এরাই সেইসব লোক, যাদের আল্লাহ্ হিদায়াত করেছেন এবং তারাই বুদ্ধিমান লোক।
39-19 : ঐ ব্যক্তিকে রক্ষা করবে কে, যার জন্যে আযাবের আদেশ অবধারিত হয়ে গেছে? তুমি কি সেই ব্যক্তিকে রক্ষা করতে পারবে যে রয়েছে জাহান্নামে?
39-20 : তবে যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে প্রাসাদ, তার উপরে আরো প্রাসাদ, তার নিচে দিয়ে রয়েছে বহমান নদ নদী নহর। এটা আল্লাহর ওয়াদা। আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদার বরখেলাফ করেন না।
39-21 : তুমি কি দেখোনা, আল্লাহ্ নাযিল করেন আসমান থেকে পানি, তারপর তিনি তা নির্ঝরের মতো প্রবাহিত করেন জমিনে। তা থেকে উৎপন্ন করেন শস্য নানা বর্ণের, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তুমি তা দেখতে পাও হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে। অবশেষে তিনি তা খড়কুটায় পরিণত করেন। এতে অবশ্যি রয়েছে উপদেশ বুঝবুদ্ধি সম্পন্ন লোকদের জন্যে।
39-22 : আল্লাহ্ যার বক্ষ খুলে দেন ইসলামের জন্যে এবং যে রয়েছে তার প্রভুর প্রদত্ত আলোতে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমতুল্য যার অবস্থা এ রকম নয়? ধ্বংস সেইসব কঠোর হৃদয় লোকদের জন্যে যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ। এরা রয়েছে সুস্পষ্ট বিপথগামিতায়।
39-23 : আল্লাহ্ নাযিল করেছেন সর্বোত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব, যা সুসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যা বার বার পাঠ করা হয়। যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে, এর (পাঠে এবং শ্রবনে) তাদের চর্ম রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে, তারপর তাদের দেহমন কোমল হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হুদা (জ্ঞান ও জীবন পদ্ধতি), তিনি যাকে ইচ্ছা এর দ্বারা পথ দেখান। আল্লাহ্ যাকে বিপথগামী করে দেন, তার কোনো পথ প্রদর্শক নেই।
39-24 : যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডল দিয়ে কঠিন আযাব ঠেকাতে চাইবে, সে কি তার সমতুল্য, যে এ থেকে নিরাপদ? যালিমদের বলা হবে: তোমাদের উপার্জনের স্বাদ গ্রহণ করো।
39-25 : এদের আগেকার লোকেরাও (রসূলদের) প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারপর তাদের গ্রাস করেছিল আযাব এমনভাবে, যা তারা ধারণাও করতে পারেনি।
39-26 : ফলে আল্লাহ্ তাদেরকে দুনিয়ার জীবনের লাঞ্ছনাও ভোগ করান, আর তাদের আখিরাতের আযাব হবে কঠিনতর। যদি তারা জানতো!
39-27 : এই কুরআনে আমরা মানুষের জন্যে সব ধরনের উপমা উপস্থাপন করেছি যাতে করে তারা গ্রহণ করে উপদেশ।
39-28 : আরবি ভাষার এ কুরআন সম্পূর্ণ বক্রতামুক্ত, যাতে করে তারা সতর্কতা অবলম্বন করে।
39-29 : আল্লাহ্ একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন: এক ব্যক্তির প্রভু অনেক, তারা পরস্পর বিরোধী মনোভাবের। আরেক ব্যক্তির প্রভু শুধুমাত্র একজন। এই দুইজনের অবস্থা কি সমান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানেনা।
39-30 : তুমিও মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।
39-31 : তারপর কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের প্রভুর সামনে নিজ নিজ অভিযোগ পেশ করবে।
39-32 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় যালিম আর কে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে এবং সত্য আসার পর সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে। কাফিরদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?
39-33 : যে সত্য (কুরআন) নিয়ে এসেছে এবং (যারা) সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই মুত্তাকি।
39-34 : তাদের জন্যে তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে সবই তারা যা চাইবে। এটাই পুণ্যবানদের পুরস্কার।
39-35 : যাতে করে তারা যেসব মন্দ কাজ করেছিল আল্লাহ্ তা ক্ষমা করে দেন এবং তাদেরকে তাদের উত্তম আমলের জন্যে প্রদান করেন পুরস্কার।
39-36 : আল্লাহ্ কি তার বান্দার জন্যে যথেষ্ট নন? অথচ তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের ভয় দেখায়। আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করে দেন, তার জন্যে কোনো পথ প্রদর্শক নেই।
39-37 : আর আল্লাহ্ যাকে সঠিক পথ দেখান, তাকে বিপথগামী করারও কেউ নেই। আল্লাহ্ কি মহাপরাক্রমশালী এবং প্রতিশোধ গ্রহণে ক্ষমতাবান নন?
39-38 : তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো: ‘কে সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ এবং পৃথিবী?’ তারা অবশ্যি বলবে: ‘আল্লাহ্’। বলো: ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছো, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকো, আল্লাহ্ আমার কোনো অনিষ্ট করতে চাইলে, তারা কি আমার সেই অনিষ্ট দূর করে দিতে পারবে? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি কোনো অনুগ্রহ করতে চান, তারা কি সেই অনুগ্রহ প্রতিরোধ করতে পারবে?’ বলো: ‘আল্লাহ্ই আমার জন্যে যথেষ্ট, তাওয়াক্কুলকারীরা তাঁর উপরই তাওয়াক্কুল করে।’
39-39 : বলো: ‘‘হে আমার কওম! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে কাজ করতে থাকো, আমিও আমার কাজ করে যাচ্ছি, অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে
39-40 : কার উপর এসে পড়ে অপমানকর আযাব এবং কার জন্যে বৈধ হয়ে যাবে স্থায়ী আযাব?’’
39-41 : আমরা মানবজাতির জন্যে বাস্তবতার ভিত্তিতে তোমার প্রতি নাযিল করেছি আল কিতাব (আল কুরআন), এখন যে কেউ সঠিক পথ গ্রহণ করবে, তাতে তারই কল্যাণ হবে, আর যে কেউ বিপথগামী হবে, সে ডেকে আনবে নিজেরই ধ্বংস। তুমি তাদের উকিল নও।
39-42 : আল্লাহ্ সমস্ত প্রাণীর ওফাত ঘটান তাদের মৃত্যুর সময় এবং যাদের মৃত্যু এখনো আসেনি তাদের প্রাণও নিদ্রার সময়। তারপর তিনি যার জন্যে মৃত্যুর সিদ্ধান্ত করেন, তার প্রাণ তিনি ধরে রাখেন আর অন্যদের প্রাণ ফেরত দেন একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। এতে রয়েছে নিদর্শন, চিন্তাশীল লোকদের জন্যে।
39-43 : তারা কি আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের সুপারিশকারী ধরেছে? তাদের বলো: ‘তাদের কোনো ক্ষমতা না থাকলেও এবং তারা কোনো কিছু না বুঝলেও কি (তারা সুপারিশ করবে)?’
39-44 : বলো: ‘সমস্ত শাফায়াত (সুপারিশ) আল্লাহর এখতিয়ারে, মহাকাশ এবং পৃথিবীর কর্তৃত্ব তাঁরই। তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে তাঁর দিকেই।’
39-45 : শুধু এক এবং একমাত্র আল্লাহর কথা বলা হলে আখিরাতে অবিশ্বাসীদের অন্তর বিরাগ বিতৃষ্ণায় সংকুচিত হয়ে যায়। আল্লাহর পরিবর্তে দেবতাগুলোকে উল্লেখ করা হলে তারা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠে।
39-46 : বলো: ‘আয় আল্লাহ্! মহাকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য ও গায়েবের জ্ঞানী, তোমার বান্দারা যে বিষয়ে এখতেলাফ (মতবিরোধ) করছে, তুমিই তার ফায়সালা করে দেবে।’
39-47 : যারা যুলুম করে, পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেগুলো এবং আরো সমপরিমাণ সম্পদও যদি তাদের থাকে, তবে কিয়ামতের দিন কঠিন আযাব থেকে বাঁচার জন্যে মুক্তিপণ হিসেবে তারা সবই দিয়ে দেবে। আর তাদের জন্যে আল্লাহর নিকট থেকে এমন কিছু প্রকাশ হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারেনি।
39-48 : তাদের কৃতকর্মের নিকৃষ্ট পরিণাম তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং তারা যে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো, তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে নেবে।
39-49 : মানুষকে যখন দুঃখ - দুর্দশা স্পর্শ করে, তখন তারা আমাদেরকে ডাকে, কিন্তু যখনই তাদেরকে আমরা কোনো নিয়ামত দিয়ে অনুগ্রহ করি, তখন সে বলে: ‘আমি তো এটা লাভ করেছি আমার বিশেষ জ্ঞানের কারণে।’ বরং এটা একটা পরীক্ষা, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা জানেনা।
39-50 : তাদের আগেকার লোকেরাও এ রকমই বলতো, কিন্তু তাদের যাবতীয় অর্জন তাদের কোনো কাজেই আসেনি।
39-51 : তাদের উপর আপতিত হয়েছিল তাদের সমস্ত মন্দ অর্জন আর মন্দ কৃতকর্ম। (এখনকার) এদের মধ্যেও যারা যুলুম করে তাদের উপরও তাদের মন্দ কৃতকর্মের ফল আপতিত হবে, এবং তারা তা ঠেকাতে পারবে না।
39-52 : তারা কি জানেনা, আল্লাহ্ যাকে চান রিযিক প্রশস্ত করে দেন, আর যাকে চান সীমিত করে দেন? অবশ্যি বিশ্বাসী লোকদের জন্যে এতে রয়েছে নিদর্শন।
39-53 : (হে নবী! লোকদেরকে আমার একথা) বলে দাও: ‘‘হে আমার দাসেরা! যারা নিজেদের প্রতি যুলুম - অবিচার করেছো, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা, আল্লাহ্ সমস্ত পাপই ক্ষমা করে দেবেন, কারণ তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, অতীব দয়াবান।
39-54 : (ক্ষমা লাভের উপায় হলো) তোমরা তোমাদের প্রভুর অভিমুখী হও এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করো তোমাদের উপর আযাব এসে যাবার আগেই, তখন কিন্তু তোমাদের আর সাহায্য করা হবেনা।
39-55 : তোমরা অনুসরণ করো তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে যে উত্তম (কিতাব) নাযিল হয়েছে সেটিকে, তোমাদের প্রতি হঠাৎ তোমাদের বুঝে উঠার আগেই আযাব এসে যাবার পূর্বে,
39-56 : তখন যাতে কাউকেও বলতে না হয়: ‘হায়, আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনে আমি যে গাফলতি করেছি তার জন্যে আফসুস্! আমি তো বিদ্রুপকারীদেরই একজন ছিলাম।’
39-57 : কিংবা একথা বলতে না হয়: ‘আল্লাহ্ যদি আমাকে হিদায়াত করতেন, তবে অবশ্যি আমি মুত্তাকিদের অন্তরভুক্ত হতাম।’
39-58 : কিংবা আযাব দেখার পর একথা বলতে না হয়: ‘হায়, আমাকে যদি একবার পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হতো, তাহলে অবশ্যি আমি পুণ্যবানদের অন্তরভুক্ত হতাম।’’
39-59 : হাঁ, তোমার কাছে তো আমার আয়াত এসেই ছিলো, কিন্তু তুমি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলে এবং হঠকারিতা প্রদর্শন করেছিলে এবং কাফিরদের অন্তরভুক্ত হয়েছিলে।
39-60 : কিয়ামতের দিন আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপকারীদের চেহারা দেখবে কালো! দাম্ভিকদের (উপযুক্ত) আবাস কি জাহান্নামই নয়?
39-61 : তাকওয়া অবলম্বনকারীদের আল্লাহ্ সেদিন উদ্ধার করবেন তাদের সাফল্যসহ। তাদেরকে স্পর্শ করবেনা অমঙ্গল আর তারা কোনো দুঃখ - দুশ্চিন্তায়ও থাকবে না।
39-62 : প্রতিটি বস্ত্তর স্রষ্টা আল্লাহ্। তিনিই প্রতিটি বস্তুর উকিল (কর্মসম্পাদক)।
39-63 : মহাকাশ এবং পৃথিবীর চাবির মালিক তিনিই। যারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি কুফুরি করে তারাই আসল ক্ষতিগ্রস্ত।
39-64 : হে নবী! বলো: ‘হে জাহিলরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের ইবাদত করতে বলছো?’
39-65 : তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তী (রসূলদের) প্রতি এই অহিই করা হয়েছে: ‘তুমি যদি আল্লাহর সাথে শরিক সাব্যস্ত করো, তোমার সমস্ত আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যি অন্তরভুক্ত হবে ক্ষতিগ্রস্তদের।’
39-66 : ‘বরং আল্লাহরই ইবাদত করো এবং অন্তরভুক্ত হও শোকর গুজারদের।’
39-67 : তারা আল্লাহকে তাঁর যথার্থ মর্যাদা দেয়না। কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর মুষ্টিতে, আর মহাকাশ থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে, তিনি অতীব পবিত্র ও মহান তারা যাদের শরিক করে তাদের থেকে।
39-68 : আর শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সাথে সাথে আসমান ও জমিনে যারাই আছে সবাই মরে পড়ে যাবে। তবে আল্লাহ্ যাদের (জীবিত রাখতে) চাইবেন, তাদের কথা ভিন্ন। তারপর শিংগায় আরেকটি ফুৎকার দেয়া হবে। তখন সাথে সাথে সবাই জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং তাকাতে থাকবে (অথবা, অপেক্ষা করতে থাকবে)।
39-69 : পৃথিবী উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে তার প্রভুর নূরে। কিতাব (আমলের রেকর্ড) এনে হাজির করা হবে এবং নবীদের ও সাক্ষীদের এনে হাজির করা হবে। আর তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেয়া হবে হক ফায়সালা এবং তাদের প্রতি কোনো প্রকার যুলুম করা হবেনা।
39-70 : প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার আমলের প্রতিদান দেয়া হবে পুরোপুরি। আর মানুষ যা করে তা তো তিনিই (আল্লাহ্ই) সর্বাধিক জানেন।
39-71 : (বিচার ফায়সালার পর) যারা কুফুরি করেছে (বলে প্রমাণিত হবে), তাদের দলে দলে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের অভিমুখে। যখন তারা সেখানে পৌঁছুবে, জাহান্নামের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং এর ব্যবস্থাপকরা তাদের জিজ্ঞেস করবে: ‘তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে রসূলরা (আল্লাহর বার্তা বাহকরা) আসেননি? তারা কি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেননি এবং তোমাদের সতর্ক করেননি যে, তোমাদেরকে একদিন এই দিনটির সম্মুখীন হতে হবে?’ তারা বলবে: ‘হাঁ, তাঁরা এসেছিলেন, কিন্তু আযাবের সিদ্ধান্ত কাফিরদের জন্যে অবধারিত হয়ে গেছে।
39-72 : বলা হবে: ‘দাখিল হও জাহান্নামের দরজাসমূহ দিয়ে। চিরকাল তোমরা সেখানেই থাকবে। কতো যে নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাস।’
39-73 : যারা তাদের প্রভুর অবাধ্য হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করে জীবন যাপন করেছে, তাদের দলে দলে নিয়ে যাওয়া হবে জান্নাতের অভিমুখে। যখন তারা সেখানে পৌঁছুবে, খুলে দেয়া হবে জান্নাতের সব দরজা। সেখানকার ব্যবস্থাপকরা
39-74 : তারা বলবে: ‘সমস্ত শুকরিয়া আল্লাহর, তিনি আমাদেরকে দেয়া ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছেন এবং আমাদেরকে ওয়ারিশ বানিয়েছেন এই পৃথিবীর। এখন জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা আমরা আবাস বানাবো। পুণ্যকর্মীদের পুরস্কার কতো যে উত্তম!’
39-75 : আর তুমি দেখতে পাবে, ফেরেশতারা আরশের চারপাশে বৃত্ত বানিয়ে ঘোষণা করছে তাদের প্রভুর প্রশংসার তসবিহ্। এভাবেই নিখাদ ন্যায্যভাবে ফায়সালা করে দেয়া হবে মানুষের মাঝে, আর ঘোষণা করা হবে: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাববুল আলামিনের।’