আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 43, সূরা আয্ যুখরুফ (স্বর্ণের সাজ সজ্জা)

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 43, সূরা আয্ যুখরুফ (স্বর্ণের সাজ সজ্জা)



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৮৯, রুকু সংখ্যা: ০৭

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-২৫কুরআন সংরক্ষিত আছে উম্মুল কিতাবে। সকল নবীর সাথেই বিদ্রুপ করা হয়েছে। মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অকৃতজ্ঞ মানুষ আল্লাহর সাথে শরিক করে এবং আল্লাহর রসূলদের প্রত্যাখ্যান করে।
২৬-৩৫শিরক করার কারণে ইবরাহিম তার পিতা ও জাতির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আল্লাহ্ অর্থনৈতিকভাবে মানুষের মর্যাদা উঁচু নিচু করেছেন যাতে তারা কর্মচারী নিয়োগ করতে পারে।
৩৬-৪৫যে আল্লাহর কিতাব থেকে বিমুখ হয়, আল্লাহ্ তার পিছে শয়তান লাগিয়ে রাখেন। তারা তাকে আল্লাহর পথে চলতে বাধা দেয়। কুরআনকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো।
৪৬-৫৬মূসাকেও প্রত্যাখ্যান করেছিল ফিরাউন ও তার পারিষদবর্গ।
৫৭-৬৬ঈসা আল্লাহর দাস। ঈসার দাওয়াত কী ছিলো?
৬৭-৮৯দুনিয়ার বিপথগামী বন্ধুরা কিয়ামতের দিন পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে। আল্লাহর মুমিন দাসদের পরকালীন পুরস্কার। অপরাধীদের দূরবস্থা। ফেরেশতারা মানুষের আমল রেকর্ড করে রাখছেন। মহাকাশ ও পৃথিবী সর্বত্র আল্লাহ্ই একমাত্র ইলাহ্। মুশরিকদের বানানো শরিকরা সুপারিশ করতে পারবে না।
43-1 : হা মিম!
43-2 : সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ!
43-3 : আমরা এই কুরআন আরবি ভাষায় করেছি যেনো তোমরা বুঝতে পারো।
43-4 : এটি আমাদের কাছে উম্মুল কিতাবে (মূল গ্রন্থে, Mother Book - এ) সংরক্ষিত আছে। এটি অতি উঁচু মর্যাদাসম্পন্ন, বিজ্ঞানময়।
43-5 : যেহেতু তোমরা একটি সীমালংঘনকারী জাতি, সে জন্যে কি আমরা তোমাদের থেকে এই উপদেশ গ্রন্থ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেবো?
43-6 : আগেকার লোকদের কাছে আমরা বহু নবী পাঠিয়েছি।
43-7 : যখনই তাদের কাছে কোনো নবী এসেছিল, তারা তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছিল।
43-8 : তাদের আমরা ধ্বংস করে দিয়েছিলাম, তারা ছিলো এদের চাইতেও প্রবল শক্তিধর। যারা অতীত হয়েছে এ রকমই ছিলো তাদের দৃষ্টান্ত।
43-9 : তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, কে সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ আর পৃথিবী? তারা অবশ্যি বলবে: ‘মহাশক্তিধর মহাজ্ঞানী আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন সেগুলো।’
43-10 : তিনিই তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন শয্যা - সমতল এবং তাতে তোমাদের জন্যে তৈরি করে দিয়েছেন চলাচলের পথ, যাতে করে তোমরা সঠিক পথে চলতে পারো,
43-11 : এবং তিনিই আসমান থেকে নাযিল করেন পানি পরিমাণ মতো, তা দিয়ে আমরা জীবিত করে তুলি মরা জমিনকে। এভাবেই পুনরুত্থিত করা হবে তোমাদেরকেও।
43-12 : তিনিই সৃষ্টি করেন প্রতিটি জিনিসের জোড়া, আর তিনিই তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করেন নৌযান ও পশু, যাতে তোমরা আরোহণ করো।
43-13 : যাতে করে তোমরা তাদের পিঠে স্থির হয়ে বসতে পারো। এবার তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রভুর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা সেগুলোর উপর স্থির হয়ে বসো এবং বলো: ‘‘পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে দিয়েছেন এটিকে। আমরা তো এটাকে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না।
43-14 : আমরা অবশ্যি ফিরে যাবো আমাদের প্রভুর কাছে।’’
43-15 : কিন্তু তারা তাঁর দাসদের মধ্য থেকে তাঁর অংশ (অংশীদার) সাব্যস্ত করে নিয়েছে। মানুষ একেবারেই সুস্পষ্ট অকৃতজ্ঞ।
43-16 : তিনি কি নিজের সৃষ্টির মধ্য থেকে নিজের জন্যে কন্যা সন্তান গ্রহণ করেছেন, আর তোমাদের গুণাণ্বিত করেছেন পুত্র সন্তান দিয়ে?
43-17 : তারা রহমানের জন্যে যে দৃষ্টান্ত আরোপ করে, তাদের কাউকেও সেই (কন্যা সন্তানের) সংবাদ দেয়া হলে তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং সে জর্জরিত হয় দু:সহ মর্ম বেদনায়।
43-18 : তারা কি আল্লাহর প্রতি এমন সন্তান আরোপ করে, যে অলংকারে সজ্জিত হয়ে লালিত পালিত হয় এবং বিতর্কের ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট নয়?
43-19 : ফেরেশতা, যারা রহমানের দাস, তাদেরকে তারা নারী গণ্য করে। তারা কি তাদের সৃষ্টির সময় উপস্থিত ছিলো? তাদের সাক্ষ্য অবশ্যি লিখে নেয়া হবে এবং তাদের জেরা করা হবে।
43-20 : তারা বলে? ‘রহমান চাইলে আমরা তাদের (ফেরেশতাদের) পূজা করতাম না।’ এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞানই নেই। তারা তো কেবল মনগড়া কথাই বলছে।
43-21 : নাকি আমরা এই কুরআনের আগে তাদের কোনো কিতাব দিয়েছিলাম, এবং তারা সেটিকে মজবুত করে আঁকড়ে ধরতে চাইছে?
43-22 : বরং তারা বলে: ‘আমাদের পূর্ব পুরুষদের আমরা একটি ধর্ম বিশ্বাসের উপর পেয়েছি, আমরা তাদেরই অনুসরণ করে চলবো।’
43-23 : এভাবে তোমার আগে আমরা যখনই কোনো জনপদে কোনো সতর্ককারী (রসূল) পাঠিয়েছি, সেখানকার বিত্তশালী প্রভাবশালীরা বলেছে: ‘আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের একটি ধর্ম বিশ্বাসের উপর পেয়েছি। আমরা তাদেরই একতেদা (অনুকরণ) করে চলবো।’
43-24 : সেই সতর্ককারী তাদের বলতো: ‘তোমরা তোমাদের পূর্ব পুরুষদের যে বিশ্বাস ও আচারের উপর পেয়েছো, আমি যদি তোমাদের জন্যে তার চাইতে উত্তম জীবন পদ্ধতি এনে থাকি, তবু কি তোমরা তাদের পদাংকই অনুসরণ করবে?’ তারা বলতো: ‘তোমরা যা নিয়ে এসেছো আমরা সেটার প্রতি কুফুরি (সেটা প্রত্যাখ্যান) করছি।’
43-25 : ফলে আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। এখন চেয়ে দেখো, প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী রকম হয়ে থাকে?
43-26 : স্মরণ করো, ইবরাহিম তার পিতাকে এবং তার জাতিকে বলেছিল: ‘‘আপনারা যাদের পূজা করছেন, আমি তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।
43-27 : আমার সম্পর্ক শুধু তাঁর সাথে গড়ে নিলাম, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন।’’
43-28 : ইবরাহিম তার এই ঘোষণাকে স্থায়ী বাণী হিসেবে রেখে গেছে তার পরবর্তীদের জন্যে যাতে করে তারা ফিরে আসে (আল্লাহর দিকে)।
43-29 : বরং আমিই তাদের এবং তাদের পূর্ব পুরুষদের দিয়েছি ভোগের সামগ্রী, অবশেষে তাদের কাছে সত্য এসেছে এবং এসেছে এক সুস্পষ্ট বার্তাবাহক রসূল।
43-30 : যখন তাদের কাছে সত্য এলো, তারা বললো: ‘এতো ম্যাজিক, আমরা একে প্রত্যাখ্যান করছি।’
43-31 : তারা আরো বলেছে: ‘দুই জনপদের (মক্কা ও তায়েফের) কোনো মহান ব্যক্তিত্বের কাছে কেন এই কুরআন নাযিল হলোনা?’
43-32 : তারাই কি বণ্টন করে তোমার প্রভুর রহমত? আমরাই তো তাদের মাঝে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই পার্থিব জীবনে এবং একজনকে আরেকজনের উপর শ্রেষ্ঠ করি মর্যাদায়, যাতে করে তারা একে অপরকে কাজ আদায় করার জন্যে (কর্মচারী) নিয়োগ করতে পারে। তারা যা সঞ্চয় করে তার চাইতে তোমার প্রভুর রহমতই শ্রেষ্ঠ।
43-33 : সত্য প্রত্যাখ্যান করে মানুষ একই পথের অনুসারী হয়ে পড়বে - এ আশঙ্কা না থাকলে রহমানের প্রতি যারা কুফুরি করে, তাদেরকে আমরা দিতাম তাদের ঘরের জন্যে রূপার ছাদ ও সিঁড়ি, যা দিয়ে তারা বেয়ে উঠে,
43-34 : আর তাদের ঘরের জন্যে দরজা এবং খাট পালঙ্ক - যাতে পিঠ রেখে তারা বিশ্রাম করে।
43-35 : যখন তাদের কাছে সত্য এলো, তারা বললো: ‘এতো ম্যাজিক, আমরা একে প্রত্যাখ্যান করছি।’
43-36 : যে ব্যক্তি রহমানের যিকির থেকে বিমুখ হয়ে জীবন যাপন করে, আমরা তার পেছনে নিয়োগ করে দেই একটা শয়তান, সে হয়ে যায় তার সংগি।
43-37 : এই শয়তানেরাই মানুষকে বাধা দিয়ে রাখে আল্লাহর পথ থেকে। অথচ তারা মনে করে তারা সঠিক পথেই আছে।
43-38 : অবশেষে সে যখন আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয়, তখন সে শয়তানকে বলে: ‘হায়, তোর এবং আমার মাঝে যদি পূর্ব - পশ্চিমের দূরত্ব থাকতো।’ কতো যে নিকৃষ্ট সংগি এই শয়তান।
43-39 : আজ তোমাদের এই অনুতাপ কোনো কাজেই আসবেনা যেহেতু তোমরা সীমালংঘন করেছিলে। তোমরা সবাই শরিক হবে আযাবে।
43-40 : তা হলে তুমি কি শুনাবে বধিরকে, কিংবা সঠিক পথ দেখাবে অন্ধকে, আর ঐ ব্যক্তিকে যে রয়েছে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে?
43-41 : আমরা যদি তোমাকে নিয়ে যাই, তবু তাদের থেকে প্রতিশোধ নেবো।
43-42 : অথবা আমরা তাদেরকে শাস্তির যে ওয়াদা দিয়েছি তা যদি (তোমার জীবদ্দশাতেই) তোমাকে দেখাই। তাদের উপর আমাদের পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।
43-43 : অতএব তোমার প্রতি যে অহি করা হয়েছে, তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। অবশ্যি তুমি রয়েছো সিরাতুল মুস্তাকিমের (সরল সঠিক পথের) উপর।
43-44 : এ কুরআন তোমার জন্যে এবং তোমার কওমের জন্যে একটি সম্মানের প্রতীক। শীঘ্রি এ (কুরআনের) বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।
43-45 : তোমার আগে আমরা যেসব রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের জিজ্ঞাসা করো, আমরা কি রহমানের পরিবর্তে অন্য ইলাহদের (দেবতাদের) নির্ধারণ করেছিল, যাদের ইবাদত করা যেতে পারে?
43-46 : আমরা মূসাকে আমাদের নিদর্শনাবলি নিয়ে পাঠিয়েছিলাম ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে। মূসা তাদের বলেছিল: ‘আমি রাব্বুল আলামিনের রসূল।’
43-47 : সে যখন তাদের কাছে আমাদের নিদর্শনাবলি নিয়ে উপস্থিত হয়, তখন তারা তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে থাকে।
43-48 : আমরা তাদের যে নিদর্শনই দেখিয়েছি, সেটি ছিলো সেটির বোনের (অনুরূপ নিদর্শনের) চাইতে বড়। আমরা তাদের আযাব দিয়েছিলাম যাতে করে তারা ফিরে আসে।
43-49 : তারা (মূসাকে) বলেছিল: ‘হে ম্যাজেসিয়ান! তোমার প্রভুর কাছে তুমি সেই জিনিস প্রার্থনা করো যা তিনি তোমার সাথে অংগীকার করেছেন। তাহলে অবশ্যি আমরা হিদায়াতের পথে চলে আসবো।’
43-50 : তারপর যখনই আমরা তাদের থেকে আযাব দূরীভূত করে দিতাম, তখনই তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভংগ করতো।
43-51 : ফেরাউন তার কওমের মধ্যে ঘোষণা করলো: ‘‘হে আমার জাতি! এই মিশর সাম্রাজ্যের মালিক কি আমি নই, এবং আমার পাদদেশ দিয়ে প্রবাহিত এই নদীগুলোর? তোমরা কি দেখতে পাওনা?
43-52 : আর এই হীন স্পষ্ট কথা বলতে অক্ষম লোকটি থেকে আমিই তো শ্রেষ্ঠ।
43-53 : তাকে কেন দেয়া হলো না সোনার কঙ্কন, কিংবা ফেরেশতারা কেন এলো না তার সাথে দলবদ্ধ হয়ে?’’
43-54 : এভাবে সে তার কওমকে হতবুদ্ধি করে দিলো, ফলে তারা তারই আনুগত্য করলো। তারা তো ছিলো এক সীমালংঘনকারী জাতি।
43-55 : তারা যখন আমাদের ক্রোধান্বিত করলো, আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম এবং ডুবিয়ে মারলাম তাদের সবাইকে।
43-56 : তারপর পরবর্তীদের জন্যে আমরা তাদের করে রাখলাম অতীত (ইতিহাস) আর উদাহরণ।
43-57 : যখন মরিয়ম পুত্রের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমার কওম তাতে শোরগোল বাধিয়ে দেয়।
43-58 : তারা বলে: ‘আমাদের ইলাহ্রা (দেবতারা) শ্রেষ্ঠ নাকি সে (ঈসা)?’ তারা তো কেবল ঝগড়া বাধানোর উদ্দেশ্যেই তোমাকে এসব বলে। আসলেই তারা একটি ঝগড়াটে কওম (জাতি)।
43-59 : সে তো আমার এক দাস ছাড়া আর কিছু নয়। তার প্রতি আমরা অনুগ্রহ করেছি। আর তাকে বানিয়েছি বনি ইসরাঈলের জন্যে দৃষ্টান্ত।
43-60 : আমরা চাইলে তোমাদের পরিবর্তে (এখানে) ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, তখন তারা পৃথিবীতে তোমাদের খলিফা (উত্তরাধিকারী) হতো।
43-61 : ঈসা তো কিয়ামতের জ্ঞানের একটি নিশ্চিত নিদর্শন। সুতরাং তোমরা কিয়ামতের প্রতি সন্দেহ করোনা, আমাকে অনুসরণ করো। এটাই সিরাতুল মুসতাকিম (সরল সঠিক পথ)।
43-62 : শয়তান যেনো তোমাদের কিছুতেই সঠিক পথ থেকে বাধা দিতে না পারে। জেনে রাখো, সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন।
43-63 : ঈসা যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি নিয়ে এসেছিল, সে বলেছিল: ‘‘আমি তোমাদের কাছে এসেছি হিকমা (প্রজ্ঞা) সহ এবং তোমরা যে ক’টি বিষয় নিয়ে ইখতেলাফ (মতভেদ) করছো তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্যে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
43-64 : আল্লাহ্ই আমার রব (প্রভু) এবং তোমাদেরও রব, সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো, এটাই সিরাতুল মুসতাকিম।’’
43-65 : কিন্তু তাদের বিভিন্ন দল মতানৈক্য সৃষ্টি করলো। সুতরাং যালিমদের জন্যে রয়েছে দুর্দশা এক বেদনাদায়ক দিনের আযাবের।
43-66 : তারা কি অপেক্ষা করছে তাদের অজ্ঞাতে আকস্মিক কিয়ামত এসে পড়ার জন্যে?
43-67 : সেদিন বন্ধুরা পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে, মুত্তাকিরা ছাড়া।
43-68 : হে আমার দাসেরা! আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই, দুশ্চিন্তাও নেই,
43-69 : তোমরা যারা ঈমান এনেছো আমাদের আয়াতের প্রতি এবং মুসলিম হয়েছিলে,
43-70 : তোমরা দাখিল হও জান্নাতে তোমাদের স্ত্রী/স্বামীকে নিয়ে আনন্দচিত্তে।
43-71 : সোনার থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদের তাওয়াফ করা হবে। সেখানে থাকবে সেসবই, যা মন চাইবে এবং যাতে চোখ জুড়াবে। সেখানে চিরস্থায়ী হবে তোমরা।
43-72 : এই সেই জান্নাত, যার ওয়ারিশ তোমাদের বানানো হয়েছে তোমাদের কর্মফল হিসেবে।
43-73 : তোমাদের জন্যে তাতে রয়েছে প্রচুর ফলফলারি, তা থেকে তোমরা আহার করবে।
43-74 : অপরাধীরা থাকবে জাহান্নামের আযাবে চিরকাল।
43-75 : তাদের আযাব লাঘব করা হবেনা, সেখানে তারা থাকবে হতাশা নিরাশায় নিমজ্জিত।
43-76 : আমরা তাদের প্রতি যুলুম করিনি, বরং তারাই যুলুম করেছে নিজেদের প্রতি।
43-77 : তারা চীৎকারে করে বলবে: ‘হে মালিক ((জাহান্নামের কর্তা)! তোমার প্রভু যেনো আমাদের মরণ ঘটিয়ে দেয়।’ সে বলবে: ‘এভাবেই তোমাদের থাকতে হবে।’
43-78 : (আল্লাহ্ বলবেন:) ‘আমরা তোমাদের কাছে সত্য পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলো সত্য অপছন্দকারী।’
43-79 : তারা কি কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে? কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী তো আমরা।
43-80 : নাকি তারা ধারণা করছে, আমরা তাদের গোপন বিষয় আর কানাঘুষার খবর রাখি না? হাঁ, আমাদের রসূলরা (দূতরা) তাদের সাথেই রয়েছে এবং রেকর্ড করছে।
43-81 : তুমি বলো: ‘রহমানের যদি কোনো সন্তান থাকতোই, তবে আমি হতাম তার প্রথম ইবাদতকারী।’
43-82 : মহাবিশ্ব ও পৃথিবীর প্রভু আরশের অধিপতির প্রতি তারা যা আরোপ করছে, তা থেকে তিনি পবিত্র, মহান।
43-83 : সুতরাং যে দিনটির ওয়াদা তাদের দেয়া হয়েছে, তার সম্মুখীন হবার আগ পর্যন্ত তাদের বাকবিতর্ক এবং খেলতামাশা করার অবকাশ দাও।
43-84 : আসমানেও তিনি ইলাহ্, পৃথিবীতেও তিনিই ইলাহ্, তিনি মহাপ্রজ্ঞাবান, মহাজ্ঞানী।
43-85 : কতো যে বরকতওয়ালা মহান তিনি, মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর কর্তৃত্ব যার। কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে কেবল তাঁরই কাছে, আর সবাইকে ফেরত নেয়া হবে কেবল তাঁরই দিকে।
43-86 : তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকে, তারা শাফায়াতের মালিক নয়। তবে যারা সত্যের সাক্ষ্য দেয় এবং জানে তারা ছাড়া।
43-87 : তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো: কে সৃষ্টি করেছে তাদের? তারা অবশ্যি বলবে: ‘আল্লাহ্’, তবু কোথায় ফিরে যাচ্ছে তারা?
43-88 : তার (রসূলের) একথা আমার জানা আছে: ‘হে প্রভু! নিশ্চয়ই এরা এমন একটি মানব দল যারা ঈমান আনবেনা।’
43-89 : (ঠিক আছে,) তুমি তাদের উপেক্ষা করো এবং বলো: ‘সালাম’। অচিরেই তারা জানতে পারবে।