মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৩৭, রুকু সংখ্যা: ০৪এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
45-1 : হা মিম। |
45-2 : এই কিতাব নাযিল হচ্ছে পরম পরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে। |
45-3 : নিশ্চয়ই মহাকাশ ও পৃথিবীতে রয়েছে বহু নিদর্শন বিশ্বাসীদের জন্যে, |
45-4 : তোমাদের সৃষ্টির মধ্যেও। আর জীবজন্তুর বিস্তারের মধ্যে রয়েছে নিদর্শন সেইসব লোকদের জন্যে যারা একীন রাখে। |
45-5 : যারা আকল (বুঝবুদ্ধি) খাটায়, তাদের জন্যে আরো নিদর্শন রয়েছে রাত আর দিনের পরিবর্তনের মধ্যে। আর আল্লাহ্ যে আসমান থেকে রিযিক (পানি) নাযিল করেন এবং তা দিয়ে মরা জমিনকে জীবিত করেন তার মধ্যেও এবং বাতাসের গতি পরিবর্তনের মধ্যেও (রয়েছে নিদর্শন)। |
45-6 : এগুলো আল্লাহর আয়াত আমরা তিলাওয়াত করছি তোমার প্রতি বাস্তবসম্মত ভাবে। সুতরাং তারা আল্লাহর পরিবর্তে এবং তাঁর আয়াতের পরিবর্তে আর কোন্ হাদিসটার (কথাটার) প্রতি ঈমান আনবে? |
45-7 : প্রত্যেক কট্টর মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্যে রয়েছে চরম দুর্ভোগ। |
45-8 : সে আল্লাহর আয়াতের তিলাওয়াত শুনে, অথচ দাম্ভিকতার সাথে অবিচল থাকে (কুফুরির উপর) যেনো সে তা শুনেইনি। সুতরাং তাকে সংবাদ দাও বেদনাদায়ক আযাবের। |
45-9 : যখন সে আমার কোনো আয়াত অবগত হয়, তা নিয়ে বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অপমানকর আযাব। |
45-10 : তাদের পেছনেই রয়েছে জাহান্নাম। তাদের অর্জনসমূহ তাদের কোনো কাজেই আসবেনা। আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদের অলি বানিয়ে নিয়েছিল তারাও তাদের কোনো কাজে আসবেনা। তাদের জন্যে রয়েছে বিশাল আযাব। |
45-11 : এ (কুরআন) জীবন যাপনের দিশারি। যারা তাদের প্রভুর আয়াতের প্রতি কুফুরি করে তাদের জন্যে রয়েছে অতিশয় বেদনাদায়ক আযাব। |
45-12 : আল্লাহ্ই সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন, যাতে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং তোমরা সন্ধান করতে পারো তাঁর অনুগ্রহ এবং যাতে করে তোমরা শোকর আদায় করো। |
45-13 : তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করে দিয়েছেন মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর অনুগ্রহে। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে অনেক নিদর্শন চিন্তাশীল লোকদের জন্যে। |
45-14 : (হে নবী!) তাদের বলো: যারা ঈমান এনেছে, তারা যেনো ঐ লোকদের ক্ষমা করে দেয়, যারা আল্লাহর দিনগুলোর প্রত্যাশা করেনা। এর কারণ, প্রত্যেক কওমকে তার কর্মের প্রতিদান দেবেন আল্লাহ্ নিজেই। |
45-15 : যে কেউ আমলে সালেহ্ করবে, সে তা করবে নিজেরই জন্যে। আর যে কেউ মন্দ কাজ করবে, সে তা করবে নিজেরই বিরুদ্ধে। তারপর তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে তোমাদেরই প্রভুর কাছে। |
45-16 : আমরা বনি ইসরাঈলকে কিতাব দিয়েছিলাম, আরো দিয়েছিলাম কর্তৃত্ব আর নবুয়্যত। তাছাড়া আমরা তাদের উত্তম জীবিকা দিয়েছিলাম এবং তাদের মর্যাদা দিয়েছিলাম জগদ্বাসীর উপর। |
45-17 : আমরা তাদেরকে দীন সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছিলাম। তাদের কাছে জ্ঞান আসার পর তারা পরস্পর বিদ্বেষের কারণে বিরোধিতা করেছিল। তারা যে বিষয়ে বিরোধিতা করে কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন তোমার প্রভু। |
45-18 : তারপরে আমরা তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দীনের বিশেষ শরিয়তের উপর। অতএব তুমি কেবল এ শরিয়তকেই অনুসরণ করো। অজ্ঞদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করোনা। |
45-19 : আল্লাহর মোকাবেলায় তারা তোমার কোনো উপকারই করতে পারবেনা। যালিমরা পরস্পরের অলি (বন্ধু, পৃষ্ঠপোষক), আর আল্লাহ্ হলেন মুত্তাকিদের অলি। |
45-20 : এ কুরআন মানুষের জন্যে সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী লোকদের জন্যে পথনির্দেশ ও রহমত। |
45-21 : দুষ্কৃতকারীরা কি ধরে নিয়েছে যে, আমরা জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে ঐসব লোকদের সমতুল্য গণ্য করবো, যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ করে? তাদের সিদ্ধান্ত খুবই মন্দ। |
45-22 : আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ ও পৃথিবী সত্য ও বাস্তবতার সাথে এবং যাতে করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কর্ম অনুযায়ী দেয়া যেতে পারে প্রতিদান। কোনো প্রকার যুলুম করা হবেনা তাদের প্রতি। |
45-23 : তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখোনি, যে নিজের কামনা বাসনাকে নিজের ইলাহ্ (হুকুমকর্তা) বানিয়ে নিয়েছে এবং আল্লাহ্ তাঁর বিশেষ জ্ঞানের ভিত্তিতে বিভ্রান্ত করে দিয়েছেন তাকে, তার কান ও অন্তরে সীলমোহর করে দিয়েছেন, আর তার চোখে ফেলে দিয়েছেন আবরণ? ফলে আল্লাহ্ ছাড়া তাকে আর কে সঠিক পথ দেখাবে? তোমরা কি শিক্ষা গ্রহণ করবে না? |
45-24 : তারা বলে: ‘আমাদের এ জীবনের পরে আর কোনো জীবন নেই। এখানেই আমাদের জীবন মৃত্যু ঘটবে এবং কাল (সময়) ছাড়া আর কোনো কিছুই ধ্বংস করেনা আমাদের।’ অথচ এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা তো কেবল মনগড়া কথাই বলে চলেছে। |
45-25 : যখন তাদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের কাছে আর কোনো যুক্তিই থাকে না। তখন তারা শুধু একথাই বলে: ‘তোমরা সত্যবাদী হলে আমাদের পূর্ব পুরুষদের পুনরুত্থিত করে এনে দেখাও।’ |
45-26 : তুমি বলো: ‘আল্লাহ্ই তোমাদের হায়াত দান করেন এবং মউত ঘটান, অত:পর তিনিই তোমাদের কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করে একত্রিত করবেন, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। তবে অধিকাংশ মানুষই জানেনা।’ |
45-27 : মহাকাশ এবং পৃথিবীর কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর। যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে মিথ্যাবাদীরা। |
45-28 : সেদিন তুমি দেখবে, প্রতিটি উম্মত (সম্প্রদায়) ভয়ে নতজানু। প্রতিটি উম্মতকে ডাকা হবে তাদের কিতাবের (আমলনামার) দিকে। বলা হবে: আজ প্রতিদান ও প্রতিফল দেয়া হবে তোমাদের দুনিয়ার জীবনের কৃতকর্মের। |
45-29 : এই যে আমাদের করা রেকর্ড, এটি কথা বলবে তোমাদের বিরুদ্ধে একেবারে সত্য ও হুবহু। তোমরা পৃথিবীর জীবনে যা করতে আমরা সবই রেকর্ড করে রেখেছি। |
45-30 : যারা ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ করেছে, তাদের অবস্থা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের প্রভু তাদের দাখিল করবেন তাঁর রহমতে (জান্নাতে)। এটাই সুস্পষ্ট সফলতা। |
45-31 : যারা কুফুরি করেছে, তাদের বলা হবে: তোমাদের প্রতি কি আমাদের আয়াত তিলাওয়াত করে (তোমাদের দাওয়াত) দেয়া হয়নি? কিন্তু তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিলে এবং তোমরা ছিলে অপরাধী গোষ্ঠী। |
45-32 : যখন বলা হতো: ‘আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিয়ামত সত্য, তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই।’ তখন তোমরা বলতে: ‘কিয়ামত কী আমরা তা বুঝি না, আমরা মনে করি এটা একটা অলীক ধারণা মাত্র, আমরা এতে বিশ্বাসী নই।’ |
45-33 : তখন তাদের সমস্ত বদ আমল তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যে বিষয়টা নিয়ে তারা বিদ্রুপ করতো, সেটা তাদের পরিবেষ্টন করে নেবে। |
45-34 : তাদের বলা হবে: ‘‘আজ আমরা তোমাদের ভুলে থাকবো, যেভাবে তোমরা আজকের সাক্ষাতের বিষয়টাকে ভুলে ছিলে। তোমাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোনো সাহায্যকারী থাকবে না। |
45-35 : এর কারণ, তোমরা আল্লাহর আয়াত নিয়ে বিদ্রুপ করেছিলে এবং দুনিয়ার জীবন তোমাদের প্রতারিত করে রেখেছিল। সুতরাং সেদিন তাদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবেনা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভেরও কোনো সুযোগ দেয়া হবেনা।’’ |
45-36 : সুতরাং সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা মহাকাশ ও পৃথিবীর প্রভু আল্লাহ্ রাববুল আলামিনের জন্যে। |
45-37 : মহাকাশ এবং পৃথিবীতে সমস্ত শ্রেষ্ঠত্ব ও অহংকার কেবল তাঁরই এবং তিনি মহাশক্তিধর মহাপ্রজ্ঞাবান। |