মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৩৫, রুকু সংখ্যা: ০৪এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
46-1 : হা মিম। |
46-2 : এ কিতাব নাযিল হচ্ছে মহাশক্তিধর মহাপ্রজ্ঞাবান আল্লাহর পক্ষ থেকে। |
46-3 : মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে সবই আমরা বাস্তবভাবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু কাফিররা উপেক্ষা করে চলছে, যে বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। |
46-4 : হে নবী! বলো: ‘তোমরা ভেবে দেখেছো কি, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ডাকো, তারা পৃথিবীতে কী সৃষ্টি করেছে? আমাকে দেখাও। নাকি আকাশ সৃষ্টিতে তাদের কোনো অংশীদারিত্ব আছে? পূর্বের কোনো কিতাব কিংবা সূত্রভিত্তিক কোনো জ্ঞান এ বিষয়ের থাকলে তোমরা তা হাজির করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।’ |
46-5 : ঐ ব্যক্তির চাইতে বড় বিভ্রান্ত আর কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকে, তারা কিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেবে না? তারা তার ডাক শুনবে কী করে? তারা তো অচেতন। |
46-6 : যেদিন মানুষকে হাশর করা হবে (বিচারের জন্যে), সেদিন তারা এদের শত্রু হয়ে যাবে এবং এরা তাদের ইবাদত (পূজা উপাসনা) করেছে বলে তারা অস্বীকার করবে। |
46-7 : আমাদের স্পষ্ট আয়াতসমূহ যখন তাদের সামনে তিলাওয়াত করা হয়, তখন মহাসত্য তাদের কাছে পৌঁছার পর কাফিররা বলে: ‘এতো এক সুস্পষ্ট ম্যাজিক।’ |
46-8 : নাকি তারা বলে: ‘মুহাম্মদ এ কুরআন রচনা করেছে?’ তুমি বলো: ‘আমি যদি এটি রচনা করে আল্লাহর নামে চালাতাম, তবে তোমরা সবাই মিলেও কিছুতেই আমাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারতেনা। তোমরা যে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছো সে বিষয়ে আল্লাহ্ই অধিক জানেন। এ বিষয়ে আমার এবং তোমাদের মাঝে সাক্ষী হিসেবে তিনিই যথেষ্ট। আর তিনি মহাক্ষমাশীল মহাদয়াবান। |
46-9 : বলো: ‘আমি কোনো নতুন - অভিনব রসূল নই। আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে তা আমি জানি না। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা অহি করা হয় আমার কাছে। আমি একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী ছাড়া আর কিছুই নই। |
46-10 : বলো: তোমরা ভেবে দেখেছো কি, এ কুরআন যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে আর তোমরা তা অস্বীকার করো, অথচ বনি ইসরাঈলের একজন (আবদুল্লাহ ইবনে সালাম) এ কিতাবের প্রতি সাক্ষ্য দিয়েছে যে, এটি (তাওয়াতেরই অনুরূপ) এবং সে ঈমান এনেছে, আর তোমরা হঠকারিতা প্রদর্শন করো, তাহলে তোমাদের পরিণাম কী হবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কখনো যালিমদের সঠিক পথ দেখান না। |
46-11 : কাফিররা মুমিনদের বলে: ‘এটা (এই কুরআন) যদি ভালো হতো, তবে তারা আমাদের আগে তা গ্রহণ করতে পারতো না।’ আর যেহেতু তারা এর দ্বারা সঠিক পথ লাভ করেনি, তাই তারা বলে, ‘এটা পুরানো মিথ্যা।’ |
46-12 : এর আগে ছিলো মূসার কিতাব পথ প্রদর্শক ও রহমত। আর এই কিতাব (কুরআন) সেটার সত্যায়নকারী, আরবি ভাষায়। এটি নাযিল করা হয়েছে যালিমদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যে এবং কল্যাণপরায়ণদের জন্যে এটি সুসংবাদ। |
46-13 : নিশ্চয়ই যারা বলে: ‘আল্লাহ্ আমাদের রব’, তারপর একথার উপর অটল অবিচল হয়ে থাকে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেনা। |
46-14 : তারা হবে জান্নাতের অধিবাসী, চিরদিন থাকবে তারা সেখানে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান হিসেবে। |
46-15 : আমরা মানুষকে অসিয়ত (নির্দেশ) করেছি তার মাতা - পিতার প্রতি সদয় আচরণ করতে। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে কষ্টের সাথে, প্রসব করেছে কষ্টের সাথে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে এবং তার বুকের দুধ ছাড়াতে লেগেছে ত্রিশ মাস। তারপর সে যখন সুঠাম দেহে পৌঁছে এবং উপনীত হয় চল্লিশ বছরে, তখন সে বলে: ‘আমার প্রভু! আমাকে তৌফিক দাও, আমি যেনো তোমার অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যে অনুগ্রহ তুমি করেছো আমার প্রতি এবং আমার পিতা - মাতার প্রতি। আমাকে এমন আমলে সালেহ্ করার তৌফিক দাও যাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে, আর আমার জন্যে আমার সন্তানদের সৎ ও যোগ্য করে গড়ে তোলো। আমি তোমার দিকে মুখ ফেরালাম এবং অবশ্যি আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তরভুক্ত হলাম।’ |
46-16 : এরাই সেইসব লোক আমরা যাদের উত্তম আমলসমূহ কবুল করবো এবং তাদের মন্দ কাজগুলো ক্ষমা করে দেবো এবং তাদের অন্তরভুক্ত করবো জান্নাতের অধিবাসীদের। তাদের যে ওয়াদা দেয়া হলো তা সত্য ওয়াদা। |
46-17 : আর এমন লোকও আছে, যে তার মাতা - পিতাকে বলে: ‘উহ্, তোমাদের জ্বালাতনে আর বাঁচলাম না। তোমরা কি আমাকে এই ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হবো, যদিও আমার আগে বহু প্রজন্ম গত হয়েছে?’ তখন তার মাতা - পিতা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলে: ‘দুর্ভোগ তোমার! তুমি ঈমান আনো। আল্লাহর ওয়াদা সত্য।’ তখন সে বলে: ‘এতো আগেকার কালের কাহিনী ছাড়া কিছু নয়।’ |
46-18 : এদের আগে যে জিন ও মানবগোষ্ঠী গত হয়েছে তাদের মতো এদের প্রতিও আল্লাহর বাণী সত্য হয়েছে, নিশ্চয়ই এরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত। |
46-19 : প্রত্যেকের মর্যাদা নির্ধারিত হবে তার আমল অনুযায়ী। প্রত্যেকের আমলেরই পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি করা হবেনা কোনো প্রকার যুলুম। |
46-20 : যেদিন কাফিরদের উপস্থিত করা হবে জাহান্নামের কিনারে, সেদিন তাদের বলা হবে: তোমরা তোমাদের পৃথিবীর জীবনেই যাবতীয় সুখ সম্ভোগ করে নিয়েছো। সুতরাং আজ তোমাদের প্রতিদান দেয়া হবে অপমানকর আযাব, কারণ তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছিলে এবং সীমালংঘন করেছিলে। |
46-21 : স্মরণ করো, আদ জাতির ভাই (হুদের) কথা, সে তার আহকাফবাসী জাতিকে সতর্ক করেছিল। তার আগে পরেও সতর্ককারীরা বিগত হয়েছিল। সে তাদের বলেছিল: ‘তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদত করোনা। আমি তোমাদের উপর এক কঠিন দিনের আযাবের আশংকা করছি।’ |
46-22 : তারা বলেছিল: ‘তুমি কি আমাদেরকে আমাদের ইলাহ্দের (দেব - দেবীর) পূজা উপাসনা থেকে বারণ করতে এসেছো? তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে আমাদেরকে যে জিনিসের ভয় দেখাচ্ছো, তা এনে দেখাও।’ |
46-23 : সে বলেছিল: ‘সে জিনিসের এলেম তো কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আমাকে যে জিনিস নিয়ে পাঠানো হয়েছে আমি তোমাদেরকে কেবল সেই বার্তাই পৌঁছে দিচ্ছি। কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা তো একটি জাহেল কওম। |
46-24 : তারপর তারা যখন তাদের উপত্যকাসমূহের দিক থেকে মেঘ আসতে দেখলো, তখন তারা বললো: ‘এতো মেঘ, এখন আমাদের এখানে বৃষ্টিপাত হবে।’ হুদ বললো: ‘না, বরং এই তো সেই জিনিস, তোমরা যার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছিলে। এ হলো সেই ঝড় যাতে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।’ |
46-25 : এ ঝড় আল্লাহর নির্দেশে ধ্বংস করে দেবে সবকিছুই। তারপর যখন সকাল হলো, তখন বসতি ছাড়া সেখানে আর কিছুই ছিলনা। এভাবেই আমরা শাস্তি দিয়ে থাকি অপরাধীদের। |
46-26 : আমরা তাদেরকে যতোটা প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, তোমাদের ততোটা প্রতিষ্ঠা দেইনি। আমরা তাদের দিয়েছিলাম শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তর। কিন্তু তাদের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তর তাদের কোনো কাজেই আসেনি, যেহেতু তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে করেছিল অস্বীকার। ফলে তাদের পরিবেষ্টন করে নিয়েছিল সেই জিনিস, যা নিয়ে তারা করতো বিদ্রুপ। |
46-27 : আমরা তোমাদের চারপাশের জনপদসমূহ ধ্বংস করে দিয়েছিলাম এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমাদের নিদর্শনাবলি বর্ণনা করেছিলাম, যাতে করে তারা ফিরে আসে। |
46-28 : তারা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে, আল্লাহর পরিবর্তে যেসব ইলাহ্ গ্রহণ করেছিল, তারা (সেসব ইলাহ্) তাদের সাহায্য করলোনা কেন? বরং তখন তারা তাদের থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। তাদের মিথ্যা ও মনগড়া খোদাদের অবস্থা এ রকমই। |
46-29 : স্মরণ করো, আমরা একদল জিনকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম। তারা কুরআন শুনছিল। যখন তারা সেখানে হাজির হয়েছিল, তারা বলেছিল: ‘নীরব থাকো, শুনো।’ যখন কুরআন পাঠ শেষ হলো, তখন তারা ফিরে গেলো তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে। |
46-30 : তারা গিয়ে বলেছিল: ‘‘হে আমাদের কওম! আমরা এমন একটি কিতাবের (কুরআনের) পাঠ শুনেছি, যা নাযিল হয়েছে মূসার পরে, এ কিতাব তার পূর্ববর্তী কিতাবকে সত্যায়ন করে এবং পথ দেখায় সত্যের দিকে ও সরল সঠিক পথের দিকে। |
46-31 : হে আমাদের কওম! আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দাও এবং ঈমান আনো তার প্রতি, তিনি ক্ষমা করে দেবেন তোমাদের পাপসমূহ এবং তোমাদের রক্ষা করবেন বেদনাদায়ক আযাব থেকে।’’ |
46-32 : যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না, সে পৃথিবীতে আল্লাহর সিদ্ধান্ত ব্যর্থ করতে পারবে না। তার জন্যে আল্লাহর পরিবর্তে কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না। এরাই রয়েছে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে। |
46-33 : তারা কি দেখেনা যে, আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন মহাকাশ এবং পৃথিবী এবং এসবের সৃষ্টিতে তিনি কোনো প্রকার ক্লান্তিবোধ করেননি, তিনি মৃতকে জীবিত করতেও সক্ষম। হাঁ, তিনি প্রতিটি বিষয়েই সর্বশক্তিমান। |
46-34 : যেদিন কাফিরদের উপস্থিত করা হবে জাহান্নামের কিনারে, তখন তাদের বলা হবে: ‘এ (জাহান্নাম) কি সত্য নয়?’ তারা বলবে: ‘হাঁ, আমাদের প্রভুর শপথ, এটা সত্য।’ আল্লাহ্ বলবেন: ‘তোমাদের কুফুরি করার কারণে তোমরা আস্বাদন করো আযাব।’ |
46-35 : তুমি সবর অবলম্বন করো, যেমন সবর অবলম্বন করেছিল দৃঢ়তা অবলম্বনকারী রসূলরা। তুমি তাদের (কাফিরদের) ব্যাপারে তাড়াহুড়া করোনা। তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে সে জিনিসটা যেদিন তারা দেখবে, সেদিন তাদের মনে হবে, তারা যেনো দিনের ঘণ্টাখানেকের বেশি পৃথিবীতে অবস্থান করেনি। এটি (এই কুরআন) একটি সুস্পষ্ট বার্তা। ফাসিকদের (সীমালংঘনকারীদের) ছাড়া কাউকেও কি ধ্বংস করা হবে? |