আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 48, আল ফাত্হ (বিজয়)

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 48, আল ফাত্হ (বিজয়)



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা : ২৯, রুকু সংখ্যা: ০৪

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-১০হুদাইবিয়ার সন্ধিকে সুস্পষ্ট বিজয় বলে ঘোষণা। আল্লাহ্ মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন। মুনাফিক ও মুশরিকদের প্রতি আল্লাহর গজব। মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্যের সাক্ষ্য, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। রসূলের কাছে বায়াত গ্রহণকারীরা মূলত আল্লাহর কাছে বায়াত গ্রহণ করেছে।
১১-১৭পিছে অবস্থানকারীদের পরিণতি।
১৮-২৭হুদাইবিয়ার বায়াত ও সন্ধির প্রশংসা। আল্লাহ্ রসূলের স্বপ্নকে সত্য প্রমাণিত করেছেন।
২৮-২৯রসূলকে সত্য দীন নিয়ে পাঠানোর উদ্দেশ্য। মুহাম্মদ সা. ও তাঁর সাথিদের বৈশিষ্ট্য, তাঁদের জীবন লক্ষ্য এবং তাওরাত ও ইঞ্জিলে তাদের উপমা।
48-1 : নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে বিজয় দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।
48-2 : যেনো আল্লাহ্ ক্ষমা করে দেন তোমার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ, যেনো তোমার প্রতি পূর্ণ করেন তাঁর নিয়ামতসমূহ আর পরিচালিত করেন তোমাকে সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর।
48-3 : এবং যেনো আল্লাহ্ তোমাদের সাহায্য করেন অপ্রতিরোধ্য সাহায্য।
48-4 : তিনিই মুমিনদের অন্তরে নাযিল করেন প্রশান্তি, যাতে করে তারা তাদের ঈমানের সাথে ঈমান বৃদ্ধি করে নেয়। মহাকাশ ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহর। আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান।
48-5 : যেনো তিনি মুমিন পুরুষ ও নারীদের দাখিল করেন জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর। চিরদিন থাকবে তারা সেখানে এবং যেনো তিনি মোচন করে দেন তাদের পাপসমূহ, আর আল্লাহর দৃষ্টিতে এটাই মহাসাফল্য।
48-6 : আর তিনি শাস্তি দেবেন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীদের, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদের, কারণ তারা আল্লাহর ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণকারী। তাদের ঘেরাও করে রেখেছে দুষ্ট চক্র (vicious circle)। তাদের প্রতি আল্লাহ্ রুষ্ট হয়েছেন, তিনি তাদের লানত করেছেন এবং তাদের জন্যে তৈরি করে রেখেছেন জাহান্নাম, আর আবাস হিসেবে সেটা কতো যে মন্দ!
48-7 : মহাকাশ ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহর। আর আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞাবান।
48-8 : হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে।
48-9 : যাতে করে তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি, আর যেনো রসূলকে সাহায্য করো এবং তাকে সম্মান করো। এছাড়া যেনো আল্লাহর তসবিহ ঘোষণা করো সকাল - সন্ধ্যায়।
48-10 : যারা তোমার কাছে বায়াত করেছে, তারা মূলত আল্লাহর কাছেই বায়াত করেছে। আল্লাহর হাত ছিলো তাদের হাতের উপর। অত:পর যে তা ভঙ্গ করবে, ভঙ্গ করার পরিণতি তার উপরই বর্তাবে। যে কেউ আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে, আল্লাহ্ তাকে প্রদান করবেন মহাপুরস্কার।
48-11 : যেসব মরুবাসী পেছনে রয়ে গেছে, তারা তোমাকে বলবে: ‘আমাদের মাল - সম্পদ এবং পরিবার - পরিজন আমাদের ব্যস্ত রেখেছে, আমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ তারা মুখে যা বলে, তা তাদের অন্তরে নেই। তুমি বলো: ‘‘আল্লাহ্ তোমাদের কারো কোনো ক্ষতি কিংবা উপকার করতে চাইলে কে তাঁকে প্রতিরোধ করতে পারবে? তোমরা যা করো সে বিষয়ে আল্লাহ্ অবহিত।
48-12 : বরং তোমরা তো মনে করেছিলে রসূল এবং মুমিনরা আর কখনো তাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে আসতে পারবে না। এই ধারণা তোমাদের অন্তরে চমৎকার মনে হয়েছিল। তোমরা চরম নিকৃষ্ট ধারণা করেছিলে। আসলে তোমরা একটি বুরা (ধ্বংসমুখী) কওম।
48-13 : যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনেনা, আমরা সেইসব কাফিরদের জন্যে তৈরি করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুন।
48-14 : মহাকাশ এবং পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব আল্লাহর। যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা আযাব দেন। আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল করুণাময়।
48-15 : তোমরা যখন গণিমতের মাল সংগ্রহের জন্যে যাবে, তখন পেছনে পড়ে থাকা লোকেরা বলবে: ‘ছেড়ে দাও, আমরা তোমাদের সাথে যাবো।’ তারা আল্লাহর ফায়সালা পরিবর্তন করতে চায়। বলো: ‘তোমরা কখনো আমাদের সাথি হতে পারবে না। আল্লাহ্ আগেই এ রকম ঘোষণা দিয়েছেন।’ তখন তারা অবশ্যি বলবে: ‘তোমরা তো আমাদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করছো।’ আসল কথা হলো, কথা বুঝার যোগ্যতাই ওদের সামান্য।
48-16 : পিছে পড়া মরুবাসী বেদুঈনদের বলো: ‘তোমাদের ডাকা হবে প্রবল যোদ্ধা এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করে যাবে যতোক্ষণ না তারা আত্মসমর্পণ করে। তোমরা যদি একথা মেনে নাও, তবে আল্লাহ্ তোমাদের উত্তম পুরস্কার দেবেন, আর যদি তোমরা আগের মতোই পেছনে হটে যাও, আল্লাহ্ তোমাদের আযাব দেবেন এক বেদনাদায়ক আযাব।’
48-17 : অন্ধদের কোনো দোষ হবেনা, পঙ্গুদের কোনো দোষ হবেনা এবং রোগীদেরও কোনো দোষ হবেনা (যদি তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে)। যে কেউ আল্লাহর এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ - নদী - নহর। আর কেউ যদি পিছে হটে যায়, তিনি তাকে আযাব দেবেন এক বেদনাদায়ক আযাব।
48-18 : আল্লাহ্ মুমিনদের প্রতি রাজি হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমার কাছে বায়াত গ্রহণ করেছিল। তাদের অন্তরে যা ছিলো তিনি তা অবহিত ছিলেন। ফলে তিনি তাদের প্রতি নাযিল করলেন প্রশান্তি এবং তাদের পুরস্কার দিলেন এক নিকটবর্তী বিজয়।
48-19 : আর বিপুল পরিমাণ গণিমতের মাল যা তারা হস্তগত করবে। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান, মহাপ্রজ্ঞাবান।
48-20 : আল্লাহ্ তোমাদের ওয়াদা দিয়েছেন তোমরা বিপুল পরিমাণ গণিমতের মালের অধিকারী হবে। তিনি এটা তোমাদের জন্যে জল্দি করছেন এবং তোমাদের থেকে মানুষের হাত গুটিয়ে দিয়েছেন যেনো এটা হয় মুমিনদের জন্যে একটি নিদর্শন এবং আল্লাহ্ তোমাদের পরিচালিত করেন সরল সঠিক পথে।
48-21 : এছাড়া তোমাদের জন্যে রয়েছে আরো অনেক পুরস্কার যা এখনো তোমাদের আয়ত্তে আসেনি। আল্লাহ সেগুলো পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
48-22 : কাফিররা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই, তবে তারা পেছনে ফিরে পালাবে এবং তারা কোনো অলি (বন্ধু) এবং সাহায্যকারী পাবেনা।
48-23 : এটাই আল্লাহর সুন্নত (নিয়ম), প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। তুমি আল্লাহর সুন্নতে কোনো পরিবর্তন পাবেনা।
48-24 : তিনি মক্কা উপত্যকায় তাদের হাত তোমাদের থেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন এবং তোমাদের হাত গুটিয়ে রেখেছিলেন তাদের থেকে তাদের উপর তোমাদের বিজয়ী করার পর। তোমরা যা করো আল্লাহ্ তার প্রতি দৃষ্টিবান।
48-25 : তারাই তো কুফুরি করেছিল এবং তোমাদেরকে মসজিদুল হারামে যেতে বাধা দিয়েছিল এবং কুরবানির পশুগুলো যথাস্থানে পৌঁছাতেও। তোমাদেরকে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হতো যদি মুমিন পুরুষ ও নারীরা সেখানে না থাকতো। তোমরা তাদের জানোনা। তখন তোমরা অজ্ঞাতসারে তাদের পদদলিত করতে, ফলে তাদের জন্যে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে। যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়নি এ কারণে যে, তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহ দান করবেন। যদি তারা পৃথক হতো তবে তাদের মধ্যকার কাফিরদের আমরা এক বেদনাদায়ক শাস্তি দিতাম।
48-26 : যখন কাফিররা তাদের অন্তরে দম্ভ পোষণ করতো জাহেলি যুগের দম্ভ, তখন আল্লাহ্ তাঁর রসূল ও মুমিনদের প্রতি নাযিল করলেন নিজের থেকে প্রশান্তি, আর তাদের মজবুত করলেন তাকওয়ার বাক্যে। কারণ, তারাই ছিলো এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞানী।
48-27 : নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর রসূলের দেখা স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করেছেন। ইনশাল্লাহ (আল্লাহ্ চাইলে) তোমরা অবশ্যি মসজিদুল হারামে দাখিল হবে নিরাপদে মাথা কামিয়ে এবং চুল ছেঁটে। তোমরা কাউকেও ভয় পাবেনা। আল্লাহ্ জানেন তোমরা যা জানো না। এছাড়াও তিনি তোমাদের দেবেন এক নিকটবর্তী বিজয়।
48-28 : আল্লাহ্ তাঁর রসূলকে পাঠিয়েছেন হিদায়াত এবং সত্য দীন নিয়ে, যাতে করে সে এটিকে বিজয়ী করে অন্য সব দীনের উপর। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
48-29 : মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল, আর যারা তার সাথে রয়েছে, তারা কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে একে অপরের প্রতি পরম দয়াবান। তুমি লক্ষ্য করছো, তারা রুকুসাজদায় অবনত হয়ে কামনা করছে আল্লাহর অনুগ্রহ এবং সন্তুষ্টি। তাদের লক্ষণ হলো, তাদের মুখমন্ডলে পরিস্ফুট দেখবে সাজদার প্রভাব। তাওরাতেও তাদের এ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে এবং ইনজিলেও তাদের এই বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের দৃষ্টান্ত হলো: একটি চারাগাছ। তা থেকে বের হয় কিশলয়, তারপর তা হয় শক্ত ও পুষ্ট, অত:পর সেটি দাঁড়ায় তার কান্ডের উপর মজবুত হয়ে, যা আনন্দিত করে তোলে চাষীকে। এভাবে মুমিনদের ক্রমবৃদ্ধিও সৃষ্টি করে কাফিরদের অন্তরজ্বালা। যারা ঈমান আনে এবং আমলে সালেহ্ করে, আল্লাহ্ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন মাগফিরাতের (ক্ষমা করে দেয়ার) এবং এক মহাপুরস্কারের।