আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 50, ক্বাফ

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 50, ক্বাফ



মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৪৫, রুকু সংখ্যা: ০৩

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-১১আখিরাত ও পুনরুত্থানের যুক্তি।
১২-৪৫যারা রসূলদের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের পরিণতি। হাশর, বিচার এবং শাস্তি ও পুরস্কারের অনিবার্যতা। অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসূহের ইতিহাস থেকে চিন্তাশীল লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। কিয়ামতের আগমন ও পুনরুত্থান অনিবার্য। মানুষকে কুরআন দিয়ে সতর্ক করো।
50-1 : কাফ, কুরআন মজিদের শপথ।
50-2 : বরং তারা বিস্মিত হচ্ছে এ কারণে যে, তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে এসেছে একজন সতর্ককারী। কাফিররা বলে: ‘‘এতো এক আজব ব্যাপার!
50-3 : আমাদের যখন মৃত্যু ঘটবে এবং আমরা যখন মাটিতে পরিণত হবো, তখন কি আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে? সেই প্রত্যাবর্তন এক অবাস্তব ব্যাপার।’’
50-4 : মাটি তাদের কতোটুকু ক্ষয় করে তা আমরা জানি। আমাদের কাছে রয়েছে এক সুরক্ষিত কিতাব।
50-5 : তাদের কাছে সত্য আসার পর তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে তারা সন্দেহে দোদুল্যমান।
50-6 : তারা কি উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেনা, আমরা কিভাবে সেটাকে বানিয়েছি এবং সুশোভিত করেছি। আর তাতে নেই কোনো ফাটল।
50-7 : আর জমিনকে আমরা বিছিয়ে দিয়েছি এবং তাতে স্থাপন করে দিয়েছি পাহাড় পর্বত আর তাতে উদগত করেছি সব ধরণের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ।
50-8 : এসবই ভেবে দেখার বিষয় এবং উপদেশ প্রত্যেক আল্লাহ্ অভিমুখী বান্দার জন্যে।
50-9 : আমরা আসমান থেকে নাযিল করি মুবারক (কল্যাণময়) পানি। অত:পর তা দিয়ে উৎপাদন করি বাগবাগিচা আর পরিপক্ক শস্য সম্ভার,
50-10 : আরো উৎপাদন করি সমুন্নত খেজুর গাছ, তাতে থাকে ছড়ায় ছড়ায় খেজুর,
50-11 : আমার বান্দাদের জীবিকা হিসেবে। তাছাড়া সেই পানি দিয়ে আমরা জীবিত করি মৃত জমিনকে। এভাবেই ঘটানো হবে (মানুষের) পুনরুত্থান।
50-12 : তাদের আগেও নূহের কওম (রসূলদের) প্রত্যাখান করেছিল এবং রাস্ আর সামুদ সম্প্রদায়ও,
50-13 : আদ, ফেরাউন এবং লুত সম্প্রদায়ও,
50-14 : আইকাবাসী আর তুববা সম্প্রদায়ও। এরা প্রত্যেকেই রসূলদের প্রত্যাখ্যান করেছিল, ফলে তাদের উপর অনিবার্য হয়ে পড়েছিল আমার ওয়াদা বাস্তবায়ন।
50-15 : প্রথমবারের সৃষ্টিই কি আমাদের ক্লান্ত করে ফেলেছে? বরং পুনসৃষ্টির ব্যাপারে তারা রয়েছে সন্দেহে নিমজ্জিত।
50-16 : আমরাই সৃষ্টি করেছি মানুষকে এবং তার প্রবৃত্তি তাকে কী কুমন্ত্রণা দেয় তা আমরা জানি। আমরা তার গলার ধমনীর চেয়েও তার অধিকতর নিকটতর।
50-17 : মনে রেখো, দুই গ্রহণকারী ফেরেশতা তার ডানে এবং বামে বসে রেকর্ড করে।
50-18 : মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা রেকর্ড করার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন প্রহরী তার কাছেই রয়েছে।
50-19 : মৃত্যু যন্ত্রণা সত্য সত্যি আসবে। এ থেকেই তোমরা অব্যাহতি চেয়ে আসছো।
50-20 : আর শিঙায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং সেটাই হবে শাস্তির দিন।
50-21 : সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিই উপস্থিত হবে। তার সাথে থাকবে একজন চৌকিদার এবং একজন সাক্ষী।
50-22 : (তার সাথি ফেরেশতা বলবে:) এই দিনটি সম্পর্কেই তুমি ছিলে গাফলতির মধ্যে। এখন আমরা তোমার সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি। আজ তোমার দৃষ্টি প্রখর ও তীক্ষ্ণ।
50-23 : তার সাথি বলবে: এই তো আমার কাছে তোমার আমলের রেকর্ড প্রস্ত্তত।
50-24 : নির্দেশ দেয়া হবে: তোমরা দু’জনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো প্রত্যেক দাম্ভিক কাফিরকে,
50-25 : যে ভালো কাজে প্রচন্ড বাধাদানকারী এবং সীমালংঘনকারী ও সন্দেহপরায়ণ,
50-26 : যে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করতো। তাকে নিক্ষেপ করো কঠোর আযাবে।
50-27 : তার সাথি (শয়তান) বলবে: ‘আমাদের প্রভু! আমি তাকে অবাধ্য বানাইনি। বরং সে নিজেই ছিলো ঘোরতর গোমরাহিতে নিমজ্জিত।’
50-28 : আল্লাহ্ বলবেন: ‘তোমরা আমার সামনে বিবাদ বিতর্ক করোনা। আমি তো আগেই তোমাদের সতর্ক করেছি।
50-29 : আমার কথার রদবদল হয়না, আর আমি বান্দাদের প্রতি যালিমও নই।
50-30 : সেদিন আমরা জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করবো: ‘তুমি কি পরিপূর্ণ হয়েছো?’ সে বলবে: ‘আরো আছে কি?’
50-31 : আর জান্নাতকে মু্ত্তাকিদের নিকটে আনা হবে, মোটেই দূরে রাখা হবেনা।
50-32 : এর ওয়াদাই তোমাদের দেয়া হয়েছিল, প্রত্যেক আল্লাহমুখী হিফাযতকারীর জন্যে
50-33 : যারা না দেখেও রহমানকে ভয় করে এবং হাজির হয় বিনয়ী হৃদয় নিয়ে।
50-34 : তাদের বলা হবে: শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে দাখিল হও (জান্নাতে)। এটা চিরন্তন জীবনের দিন।
50-35 : সেখানে তারা সবই পাবে যা তারা চাইবে এবং আমাদের কাছে রয়েছে আরো অনেক।
50-36 : আমরা তাদের আগে কতো যে মানব প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছি, ওরা ছিলো এদের চাইতেও প্রবলতর শক্তিশালী। তারা বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতো। তাদের পালাবার কোনো জাগায়ই ছিলোনা।
50-37 : নিশ্চয়ই এতে রয়েছে উপদেশ তার জন্যে, যে অন্তরের অধিকারী, কিংবা যে মনোযোগ দিয়ে শুনে নিবিষ্ট চিত্তে।
50-38 : আমরা মহাকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছি ছয়টি কালে। কোনো ক্লান্তি আমাদের স্পর্শ করেনি।
50-39 : ওরা যা বলে তাতে তুমি সবর অবলম্বন করো, আর তোমার প্রভুর হামদসহ তসবিহ করো সূর্যোদয়ের আগে এবং সূর্যাস্তের আগে।
50-40 : আর রাতের বেলায়ও তাঁর তসবিহ করো এবং সাজদার (সালাতের) পরে।
50-41 : মনোযোগ দিয়ে শুনো, যেদিন এক ঘোষণাকারী খুব কাছে থেকে ঘোষণা দেবে,
50-42 : সেদিন অবশ্যি মানুষ শুনতে পাবে এক মহাবিকট শব্দ সত্যিকারভাবে। সেটাই হবে মাটির নিচে থেকে বেরিয়ে আসার দিন।
50-43 : আমরাই হায়াত দান করি এবং আমরাই মউত ঘটাই, আর আমাদের কাছেই হবে সবার প্রত্যাবর্তন।
50-44 : সেদিন তাদের উপরস্থ জমিন ফেটে যাবে এবং তারা ব্যস্ত হয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসবে। এই হাশর (সমবেত) করা আমাদের জন্যে একেবারেই সহজ।
50-45 : তারা কী বলে, তা আমরা জানি। তুমি তাদের উপর শক্তি প্রয়োগকারী নও। যারা আমার শাস্তিকে ভয় করে তাদের উপদেশ দিয়ে যাও এই কুরআনের সাহায্যে।