মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ৯৬, রুকু সংখ্যা: ০৩এই সূরার আলোচ্যসূচি
|
56-1 : যখন ঘটনা (কিয়ামত) সংঘটিত হবে, |
56-2 : তখন সেই ঘটনাকে অস্বীকার করার কেউ থাকবে না। |
56-3 : সেটা কাউকে নামাবে নিচে, কাউকেও উঠাবে উপরে। |
56-4 : যখন পৃথিবী কেঁপে উঠবে প্রচন্ড রকম। |
56-5 : যখন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে পাহাড় পর্বত, |
56-6 : ফলে সেগুলো পরিণত হবে ছুঁড়ে মারা ধুলোবালির মতো। |
56-7 : তখন তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন ভাগে। |
56-8 : একটি হবে ডানদিকের দল। কী যে ভাগ্যবান হবে ডানদিকের দল! |
56-9 : একটি হবে বামদিকের দল। কী যে দুর্ভাগা হবে বামদিকের দল! |
56-10 : আরেকটি হবে অগ্রগামী দল। তারা তো থাকবে অগ্রগামীই। |
56-11 : তারা হবে সান্নিধ্য প্রাপ্ত, |
56-12 : থাকবে জান্নাতুন নায়ীমে (নিয়ামতে ভরা জান্নাতে)। |
56-13 : তাদের বেশিরভাগই হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে, |
56-14 : স্বল্প সংখ্যক হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। |
56-15 : তারা থাকবে সোনা ও মনিমুক্তা খচিত আসনে। |
56-16 : তাতে তারা হেলান দিয়ে বসবে মুখোমুখি হয়ে। |
56-17 : তাদের (সেবায়) তাওয়াফ করতে থাকবে চির বালকেরা, |
56-18 : পানপাত্র, কুঁজা এবং বহমান ঝর্ণা থেকে নেয়া সুরার পাত্র নিয়ে। |
56-19 : সেই সুরা পানে তাদের মাথাব্যথাও হবেনা এবং তারা জ্ঞান হারিয়ে মাতালও হবেনা। |
56-20 : থাকবে বিপুল ফলফলারি বেছে বেছে পছন্দসইটি গ্রহণ করার, |
56-21 : থাকবে পাখির গোশ্ত যেটা তাদের মন চাইবে, |
56-22 : থাকবে আয়তলোচনা হুর (সুন্দরী নারীকুল) |
56-23 : (ঝিনুকের মধ্যে) লুকানো মুক্তার মতো, |
56-24 : তাদের আমলের প্রতিদান হিসেবে। |
56-25 : তারা সেখানে শুনবেনা কোনো অর্থহীন কথা কিংবা পাপালাপ। |
56-26 : শুনবে কেবল সালাম আর সালাম। |
56-27 : আর ডানদিকের দল, কী যে ভাগ্যবান ডানদিকের দল! |
56-28 : তারা থাকবে কাঁটাবিহীন কুল বাগানে, |
56-29 : কাঁদিভরা কলার বাগানে, |
56-30 : বিস্তীর্ণ ছায়ার মাঝে, |
56-31 : সদা বহমান পানির মধ্যে, |
56-32 : এবং বিপুল ফলমূলের মাঝে, |
56-33 : যা কখনো শেষও হবেনা, নিষিদ্ধও হবেনা। |
56-34 : তারা থাকবে উঁচু উঁচু শয্যায়, |
56-35 : আমরা তাদের (পৃথিবীর জান্নাতি স্ত্রীদের) সৃষ্টি করবো অপরূপ সৃষ্টিতে, |
56-36 : তাদের বানিয়ে দেবো কুমারী, |
56-37 : স্বামীগত প্রাণ এবং সমবয়স্কা, |
56-38 : ডানদিকের লোকদের জন্যে। |
56-39 : তাদের অনেকেই হবে পূর্ববর্তী লোকদের থেকে, |
56-40 : এবং অনেকেই হবে পরবর্তী লোকদের থেকে। |
56-41 : আর বামদিকের লোকেরা, কী যে হতভাগ্য বামদিকের লোকেরা! |
56-42 : তারা থাকবে প্রচন্ড গরম বাতাস আর টগবগে ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে, |
56-43 : থাকবে কালো ধুঁয়ার ছায়ায়, |
56-44 : তা ঠান্ডাও হবেনা, আরামদায়কও হবেনা। |
56-45 : ইতোপূর্বে (পৃথিবীর জীবনে) তারা তো মত্ত ছিলো ভোগ বিলাসে |
56-46 : এবং তারা অবিরাম লিপ্ত ছিলো গুরুতর পাপ কাজে। |
56-47 : তারা বলতো: ‘‘আমরা যখন মরে যাবো এবং মাটি আর হাড়ে পরিণত হবো, তখন কি আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে? |
56-48 : আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকেও?’’ |
56-49 : বলো: পূর্বের এবং পরের সবাইকে, |
56-50 : একত্র করা হবে একটি নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে, |
56-51 : তারপর হে বিভ্রান্ত অস্বীকারকারীরা! |
56-52 : তোমরা অবশ্যি খাবে যাক্কুম গাছ থেকে, |
56-53 : এবং তা দিয়ে পূর্ণ করবে তোমাদের উদর! |
56-54 : তার উপর পান করবে টগবগে ফুটন্ত গরম পানি। |
56-55 : আর তা তোমরা পান করবে তৃষার্ত উটের মতো। |
56-56 : প্রতিদান দিবসে এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন। |
56-57 : আমরাই তো তোমাদের সৃষ্টি করেছি, কেন তোমরা তা স্বীকার করছো না? |
56-58 : তোমরা যে বীর্যপাত করো, সে বিষয়ে তোমরা ভেবে দেখেছো কি? |
56-59 : তা কি তোমরা সৃষ্টি করো, নাকি আমরাই তার স্রষ্টা? |
56-60 : আমরা তোমাদের জন্যে নির্ধারণ করে রেখেছি মউত এবং আমরা অক্ষম নই |
56-61 : তোমাদের বদল করে তোমাদের স্থলে তোমাদের অনুরূপ অন্যদের নিয়ে আসতে এবং তোমাদের এমন এক আকৃতিতে সৃষ্টি করতে যা তোমরা জানো না। |
56-62 : তোমরা তো কেবল প্রথম সৃষ্টির কথাই জানো। তবে কেন তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করোনা? |
56-63 : তোমরা যে (ক্ষেত খামারে) বীজ বপন করে আসো, সে বিষয়ে তোমরা ভেবে দেখেছো কি? |
56-64 : সেটি অংকুরিত করো কি তোমরা, নাকি আমরাই অংকুর সৃষ্টিকারী? |
56-65 : আমরা ইচ্ছা করলে তা খড় কুটায় পরিণত করে দিতে পারি, তাতে তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে (এবং বলবে:) |
56-66 : ‘‘আমরা তো দেউলিয়া হয়ে পড়েছি। |
56-67 : বরং আমরা বঞ্চিত হয়ে গেছি।’’ |
56-68 : তোমরা যে পানি পান করো সে বিষয়ে ভেবে দেখেছো কি? |
56-69 : মেঘ থেকে তা কি তোমরা নাযিল করো, নাকি আমরা নামিয়ে আনি? |
56-70 : আমরা ইচ্ছা করলে তা লোনা লবণাক্ত রেখে দিতে পারি, তবু কেন তোমরা শোকর আদায় করোনা? |
56-71 : তোমরা যে আগুন জ্বালাও, তার প্রতি লক্ষ্য করে দেখেছো কি? |
56-72 : তোমরাই কি তার জ্বালানি সৃষ্টি করো, নাকি আমরাই তার স্রষ্টা? |
56-73 : আমরা এটাকে করেছি একটি নিদর্শন এবং মরুচারীদের জন্যে অতীব প্রয়োজনীয়। |
56-74 : অতএব তুমি তোমার মহান প্রভুর নাম নিয়ে তসবিহ করো। |
56-75 : আমি শপথ করছি নক্ষত্র রাজির অস্তাচলের, |
56-76 : অবশ্যি এটা একটা বড় শপথ, যদি তোমরা এর গুরুত্ব বুঝতে! |
56-77 : নিশ্চয়ই এটি একটি সম্মানিত কুরআন। |
56-78 : এটি রয়েছে সুরক্ষিত কিতাবে (উম্মুল কিতাবে)। |
56-79 : পবিত্ররা (ফেরেশতারা) ছাড়া কেউ এটি স্পর্শ করেনা (নবীর কাছে বহন করে আনেনা)। |
56-80 : এটি নাযিল হচ্ছে রাববুল আলামিনের পক্ষ থেকে। |
56-81 : এই মহাবাণীকে তোমরা তুচ্ছ মনে করছো? |
56-82 : আর মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করাকেই কি তোমরা বানিয়ে নিয়েছো তোমাদের উপজীব্য? |
56-83 : যখন তোমাদের প্রাণ এসে পড়বে কণ্ঠনালীতে, |
56-84 : তখন তোমরা তাকিয়ে থাকবে এক দৃষ্টিতে, |
56-85 : আর আমরা তোমাদের চাইতেও তার নিকটতর, কিন্তু তোমরা দেখতে পাওনা। |
56-86 : তোমরা যদি পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসকে মেনে না নাও, |
56-87 : তবে তোমরা তা (জীবন) ফিরাও না কেন তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে? |
56-88 : সে যদি সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের একজন হয়, |
56-89 : তবে তখন তার জন্যে থাকবে সুরভিত এবং ফুলেল উদ্যান আর জান্নাতুন নায়ীম (নিয়ামতে ভরা জান্নাত)। |
56-90 : আর সে যদি হয় ডানদিকের লোকদের একজন, |
56-91 : তাহলে তাকে বলা হবে: ‘হে ডান পাশবর্তী! তোমার প্রতি সালাম।’ |
56-92 : আর সে যদি হয় বিভ্রান্ত মিথ্যাবাদীদের একজন, |
56-93 : তাহলে তার আতিথ্য হবে টগবগে ফুটন্ত গরম পানি, |
56-94 : আর জাহান্নামের দহন। |
56-95 : এ এক নিশ্চিত সত্য বিষয়। |
56-96 : অতএব, তুমি তসবিহ্ করো তোমার মহান প্রভুর নামের। |