আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম, Chapter: 58, আল মুজাদালা (বিতর্ক)

Go Back
Book Id: 10030

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, আবদুস শহীদ নাসিম

Chapter: 58, আল মুজাদালা (বিতর্ক)



মদিনায় অবতীর্ণ, আয়াত সংখ্যা: ২২, রুকু সংখ্যা: ০৩

এই সূরার আলোচ্যসূচি

আয়াতআলোচ্য বিষয়
০১-০৪যিহারের বিধান।
০৫-০৬নাস্তিকদের জন্য রয়েছে অপমানকর আযাব।
০৭-১৩মজলিসে একান্তে কথা বলার বিধান। মজলিসে বসার বিধান।
১৪-২২কাদের প্রতি আল্লাহর গজব? মুমিনরা আল্লাহর শত্রুদের বন্ধু বানায়না নিকট আত্মীয় হলেও।
58-1 : আল্লাহ্ শুনেছেন সেই নারীর কথা, যে তার স্বামীর বিষয়ে বিতর্ক করছে তোমার সাথে এবং শেকায়েত (অভিযোগ, ফরিয়াদ) করছে আল্লাহর কাছে। আল্লাহ্ তোমাদের কথোপকথন শুনেছেন। আল্লাহ্ সব শুনেন, সব দেখেন।
58-2 : তোমাদের যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে তারা জেনে রাখুক তাদের স্ত্রীরা তাদের মা নয়। তাদের মা তো তারাই যারা তাদের জন্ম দিয়েছে। (যারা যিহার করে) তারা একটি অন্যায়, অসংগত ও অসত্য কথাই বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দয়াময় ক্ষমাশীল।
58-3 : যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারপর নিজেদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়, তাদের জন্যে বিধান হলো, তারা পরস্পরকে স্পর্শ করার আগে একটি দাসমুক্ত করবে। এভাবেই তোমাদের উপদেশ দেয়া হলো। তোমরা যা করো আল্লাহ্ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
58-4 : এই সামর্থ্য যার নেই, পরস্পরকে স্পর্শ করার আগে সে অবিরাম দুই মাস সিয়াম পালন করবে (রোযা রাখবে)। যে এটা করতেও অসমর্থ হবে, সে ষাটজন মিসকিনকে (অভাবীকে) খাবার খাওয়াবে। এ বিধান দেয়া হলো, যেনো তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান রাখো, এটাই আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান অমান্যকারীদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
58-5 : যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে, তাদের অপদস্থ করা হবে, যেমন অপদস্থ করা হয়েছে তাদের আগের লোকদের। আমরা তো সুস্পষ্ট আয়াত নাযিল করেছি। অমান্যকারীদের জন্যে রয়েছে অপমানকর আযাব।
58-6 : যেদিন আল্লাহ্ তাদের সবাইকে পুনরুত্থিত করবেন, সেদিন আল্লাহ্ তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। আল্লাহ্ তার (তাদের কৃতকর্মের) হিসাব রেখেছেন, কিন্তু তারা তা ভুলে গেছে। আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী।
58-7 : তুমি কি দেখোনা যে, আল্লাহ্ জানেন মহাকাশ এবং পৃথিবীতে যা কিছু আছে? তিন ব্যক্তির মধ্যে কোনো গোপন সলাপরামর্শ হয়না যেখানে চতুর্থজন হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকেননা। পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয়না, যেখানে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি হাজির থাকেন না। তারা এর চাইতে কম হোক কিংবা বেশি, তিনি তাদের সাথেই থাকেন যেখানেই তারা থাকুক। তারপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের অবহিত করবেন - তারা কী করেছিল? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রতিটি বিষয়ে জ্ঞানী।
58-8 : তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করছো না, যাদের গোপন সলাপরামর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছিল; কিন্তু নিষেধ করার পরও তারা সেটার পুনরাবৃত্তি করে এবং পাপ কাজ, সীমালংঘন ও রসূলের বিরুদ্ধাচরণের জন্যে গোপন সলাপরামর্শ করে? তারা যখন তোমার কাছে আসে, এমন ভাষায় তোমাকে অভিবাদন করে, যে ভাষায় আল্লাহ্ তোমাকে অভিবাদন করেননি। তারা মনে মনে বলে: ‘আমরা যা বলি, তার জন্যে আল্লাহ্ আমাদের শাস্তি দেন না কেন?’ তাদের জন্যে জাহান্নামই যথেষ্ট। তাতেই তারা দগ্ধ হবে, আর সেটা কতো যে নিকৃষ্ট আবাস!
58-9 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা যখন গোপন পরামর্শ করো, সেটা যেনো পাপালাপ, সীমালংঘন এবং রসূলের বিরুদ্ধাচরণের জন্যে না হয়। তোমরা গোপন পরামর্শ করলে তা করবে কল্যাণকর কাজ ও তাকওয়া অবলম্বনের উদ্দেশ্যে। তোমরা সেই আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর কাছে তোমাদের হাশর করা হবে।
58-10 : গোপন সলাপরামর্শ হয় শয়তানের প্ররোচণায় মুমিনদের মনে কষ্ট দেয়ার জন্যে। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া সে তাদের সামান্যতম ক্ষতি করতেও সক্ষম নয়। মুমিনরা আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করুক।
58-11 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের যখন বলা হয়: মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা (অপরের জন্য) স্থান করে দিও, তাহলে আল্লাহ্ও তোমাদের জন্যে প্রশস্ত করে দেবেন। আর যখন তোমাদের বলা হয়: ‘উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ্ তাদের উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ্ সে বিষয়ে অবহিত।
58-12 : হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা রসূলের সাথে চুপে চুপে কথা বলতে চাইলে তার আগে হাদিয়া প্রদান করবে। এটা উত্তম এবং পবিত্র। যদি তা করতে তোমরা সমর্থ না হও, তবে আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
58-13 : তোমরা কি চুপে চুপে কথা বলার আগে হাদিয়া প্রদানকে কষ্টকর মনে করো? যদি তোমরা হাদিয়া না দাও, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম করো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। তোমরা যা করো, আল্লাহ্ সে বিষয়ে খবর রাখেন।
58-14 : তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করোনি, যারা সেই সম্প্রদায়ের সাথে (মুনাফিকদের সাথে) বন্ধুতা করে, যাদের প্রতি আল্লাহ্ ক্ষুব্ধ। তারা তোমাদের লোক নয়, তোমরাও তাদের লোক নও। তারা জেনে শুনে মিথ্যা হলফ করে।
58-15 : আল্লাহ্ তাদের জন্যে প্রস্ত্তত রেখেছেন কঠোর আযাব। তারা যা করে তা চরম নিকৃষ্ট।
58-16 : তারা তাদের শপথকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং তারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। সুতরাং তাদের জন্যে রয়েছে অপমানকর আযাব।
58-17 : তাদের ধন - সম্পদ এবং সন্তান - সন্ততি আল্লাহর মোকাবেলায় তাদের কোনো কাজেই আসবেনা। তারা হবে আগুনের অধিবাসী, সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল।
58-18 : যেদিন আল্লাহ্ তাদের সবাইকে পুনরুত্থিত করবেন, সেদিনও তারা আল্লাহর সাথে ঠিক সে রকম হলফই করবে, যে রকম হলফ করে তোমাদের সাথে। তারা মনে করে তারা গুরুত্বপূর্ণ কিছুর উপর রয়েছে। জেনে রাখো, আসলে তারা মিথ্যাবাদী।
58-19 : শয়তান তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে আছে। ফলে সে তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর যিকির। মূলত তারা হলো শয়তানের দল। আর জেনে রাখো, শয়তানের দল অবশ্যি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
58-20 : যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে, তারাই হবে লাঞ্ছিতদের অন্তরভুক্ত।
58-21 : আল্লাহ্ লিখে রেখেছেন, আমি অবশ্যি বিজয়ী হবো এবং আমার রসূলরাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।
58-22 : যারা আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে তুমি তাদের কাউকেও এমন পাবেনা, যে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের বিরোধিতাকারীর সাথে বন্ধুতা ও ভালোবাসা রাখে, বিরোধিতাকারীরা তাদের বাবা - মা, ছেলে - মেয়ে, ভাই - বোন এবং আত্মীয় - স্বজন হলেও। এদের অন্তরে আল্লাহ্ লিখে দিয়েছেন ঈমান এবং তাদের সাহায্য করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ (অহির জ্ঞান, কুরআন) দিয়ে। তিনি তাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিচে দিয়ে বহমান থাকবে নদ নদী নহর, চিরকাল থাকবে তারা সেখানে। আল্লাহ্ তাদের প্রতি রাজি হয়ে গেছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি রাজি হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল। আর জেনে রাখো, আল্লাহর দলই হবে সফল।