36-1 : ইয়া - সীন, |
36-2 : শপথ জ্ঞানগর্ভ কুরআনের, |
36-3 : তুমি অবশ্যই রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত; |
36-4 : তুমি সরল পথে প্রতিষ্ঠিত। |
36-5 : কুরআন অবতীর্ণ পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু আল্লাহ্র নিকট হইতে, |
36-6 : যাহাতে তুমি সতর্ক করিতে পার এমন এক জাতিকে যাহাদের পিতৃপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয় নাই, যাহার ফলে উহারা গাফিল। |
36-7 : উহাদের অধিকাংশের জন্য সেই বাণী অবধারিত হইয়াছে; সুতরাং উহারা ঈমান আনিবে না। |
36-8 : আমি উহাদের গলদেশে চিবুক পর্যন্ত বেড়ি পরাইয়াছি, ফলে উহারা ঊর্ধ্বমুখী হইয়া গিয়াছে। |
36-9 : আমি উহাদের সম্মুখে প্রাচীর ও পশ্চাতে প্রাচীর স্থাপন করিয়াছি এবং উহাদেরকে আবৃত করিয়াছি; ফলে উহারা দেখিতে পায় না। |
36-10 : তুমি উহাদেরকে সতর্ক কর বা না কর, উহাদের পক্ষে উভয়ই সমান; উহারা ঈমান আনিবে না। |
36-11 : তুমি কেবল তাহাকেই সতর্ক করিতে পার যে উপদেশ মানিয়া চলে এবং না দেখিয়া দয়াময় আল্লাহ্কে ভয় করে। অতএব তাহাকে তুমি ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের সংবাদ দাও। |
36-12 : আমিই মৃতকে করি জীবিত এবং লিখিয়া রাখি যাহা উহারা অগ্রে প্রেরণ করে ও যাহা উহারা পশ্চাতে রাখিয়া যায়, আমি তো প্রত্যেক জিনিস স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রাখিয়াছি। |
36-13 : উহাদের নিকট বর্ণনা কর এক জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত; যখন তাহাদের নিকট আসিয়াছিল রাসূলগণ। |
36-14 : যখন উহাদের নিকট পাঠাইয়াছিলাম দুইজন রাসূল, তখন উহারা তাহাদেরকে মিথ্যাবাদী বলিয়াছিল, অতঃপর আমি তাহাদেরকে শক্তিশালী করিয়াছিলাম তৃতীয় একজন দ্বারা। তাহারা বলিয়াছিল, ‘আমরা তো তোমাদের নিকট প্রেরিত হইয়াছি।’ |
36-15 : উহারা বলিল, ‘তোমরা আমাদের মতই মানুষ, দয়াময় আল্লাহ্ তো কিছুই অবতীর্ণ করেন নাই। তোমরা কেবল মিথ্যাই বলিতেছ।’ |
36-16 : তাহারা বলিল, ‘আমাদের প্রতিপালক জানেন - আমরা অবশ্যই তোমাদের নিকট প্রেরিত হইয়াছি। |
36-17 : ‘স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।’ |
36-18 : উহারা বলিল, ‘আমরা তো তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি, যদি তোমরা বিরত না হও তোমাদেরকে অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে হত্যা করিব এবং আমাদের পক্ষ হইতে তোমাদের উপর মর্মন্তুদ শাস্তি অবশ্যই আপতিত হইবে।’ |
36-19 : তাহারা বলিল, ‘তোমাদের অমঙ্গল তোমাদেরই সঙ্গে; ইহা কি এইজন্য যে, আমরা তোমাদেরকে উপদেশ দিতেছি? বস্তুত তোমরা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’ |
36-20 : নগরীর প্রান্ত হইতে এক ব্যক্তি ছুটিয়া আসিল। সে বলিল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ কর; |
36-21 : ‘অনুসরণ কর তাহাদের, যাহারা তোমাদের নিকট কোন প্রতিদান চায় না এবং যাহারা সৎপথপ্রাপ্ত। |
36-22 : ‘আমার কি যুক্তি আছে যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং যাঁহার নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে আমি তাঁহার ‘ইবাদত করিব না? |
36-23 : ‘আমি কি তাঁহার পরিবর্তে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করিব? দয়াময় আল্লাহ্ আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করিতে চাইলে উহাদের সুপারিশ আমার কোন কাজে আসিবে না এবং উহারা আমাকে উদ্ধার করিতেও পারিবে না। |
36-24 : ‘এইরূপ করিলে আমি অবশ্যই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়িব। |
36-25 : ‘আমি তো তোমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান আনিয়াছি, অতএব তোমরা আমার কথা শোন।’ |
36-26 : তাহাকে বলা হইল, ‘জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সে বলিয়া উঠিল, ‘হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানিতে পারিত - |
36-27 : ‘কিরূপে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করিয়াছেন এবং আমাকে সম্মানিত করিয়াছেন।’ |
36-28 : আমি তাহার পরে তাহার সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আকাশ হইতে কোন বাহিনী প্রেরণ করি নাই এবং প্রেরণের প্রয়োজনও ছিল না। |
36-29 : উহা ছিল কেবল এক মহানাদ। ফলে উহারা নিথর নিস্তব্ধ হইয়া গেল। |
36-30 : পরিতাপ বান্দাদের জন্য; উহাদের নিকট যখনই কোন রাসূল আসিয়াছে তখনই উহারা তাহাকে ঠাট্টা - বিদ্রপ করিয়াছে। |
36-31 : উহারা কি লক্ষ্য করে না উহাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠী আমি ধ্বংস করিয়াছি যাহারা উহাদের মধ্যে ফিরিয়া আসিবে না? |
36-32 : এবং অবশ্যই উহাদের সকলকে একত্রে আমার নিকট উপস্থিত করা হইবে। |
36-33 : উহাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত ধরিত্রী, যাহাকে আমি সঞ্জীবিত করি এবং উহা হইতে উৎপন্ন করি শস্য যাহা উহারা আহার করে। |
36-34 : উহাতে আমি সৃষ্টি করি খর্জুর ও আঙুরের উদ্যান এবং উহাতে উৎসারিত করি প্রস্রবণ, |
36-35 : যাহাতে উহারা আহার করিতে পারে উহার ফলমূল হইতে, অথচ উহাদের হস্ত উহা সৃষ্টি করে নাই। তবুও কি উহারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিবে না? |
36-36 : পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি উদ্ভিদ, মানুষ এবং উহারা যাহাদেরকে জানে না তাহাদের প্রত্যেককে সৃষ্টি করিয়াছেন জোড়া জোড়া করিয়া। |
36-37 : উহাদের জন্য এক নিদর্শন রাত্রি, উহা হইতে আমি দিবালোক অপসারিত করি, তখন উহারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হইয়া পড়ে। |
36-38 : আর সূর্য ভ্রমণ করে উহার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, ইহা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। |
36-39 : এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করিয়াছি বিভিন্ন মনযিল; অবশেষে উহা শুষ্ক বক্র, পুরাতন খর্জুর শাখার আকার ধারণ করে। |
36-40 : সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে। |
36-41 : উহাদের জন্য এক নিদর্শন এই যে, আমি উহাদের বংশধরদেরকে বোঝাই নৌযানে আরোহণ করাইয়াছিলাম; |
36-42 : এবং উহাদের জন্য অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করিয়াছি যাহাতে উহারা আরোহণ করে। |
36-43 : আমি ইচ্ছা করিলে উহাদেরকে নিমজ্জিত করিতে পারি; সে অবস্থায় উহাদের কোন সাহায্যকারী থাকিবে না এবং উহারা পরিত্রাণও পাইবে না - |
36-44 : আমার অনুগ্রহ না হইলে এবং কিছু কালের জন্য জীবনোপভোগ করিতে না দিলে। |
36-45 : যখন উহাদেরকে বলা হয়, ‘যাহা তোমাদের সম্মুখে ও তোমাদের পশ্চাতে আছে সে সম্বন্ধে সাবধান হও যাহাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হইতে পার,’ |
36-46 : এবং যখনই উহাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীর কোন নিদর্শন উহাদের নিকট আসে, তখনই উহারা তাহা হইতে মুখ ফিরাইয়া নেয়। |
36-47 : যখন উহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়াছেন তাহা হইতে ব্যয় কর’ তখন কাফিররা মু’মিনদেরকে বলে, ‘যাহাকে আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে খাওয়াইতে পারিতেন আমরা কি তাহাকে খাওয়াইব ? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রহিয়াছ।’ |
36-48 : উহারা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হইবে?’ |
36-49 : ইহারা তো অপেক্ষায় আছে এক মহানাদের যাহা ইহাদেরকে আঘাত করিবে ইহাদের বাক - বিতণ্ডাকালে। |
36-50 : তখন উহারা ওসিয়াত করিতে সমর্থ হইবে না এবং নিজেদের পরিবার - পরিজনের নিকট ফিরিয়া আসিতেও পারিবে না। |
36-51 : যখন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হইবে তখনই তাহারা কবর হইতে ছুটিয়া আসিবে তাহাদের প্রতিপালকের দিকে। |
36-52 : উহারা বলিবে, ‘হায় ! দুর্ভোগ আমাদের ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল হইতে উঠাইল ? দয়াময় আল্লাহ্ তো ইহারই প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন এবং রাসূলগণ সত্যই বলিয়াছিলেন।’ |
36-53 : ইহা হইবে কেবল এক মহানাদ ; তখনই ইহাদের সকলকে উপস্থিত করা হইবে আমার সম্মুখে, |
36-54 : আজ কাহারও প্রতি কোন জুলুম করা হইবে না এবং তোমরা যাহা করিতে কেবল তাহারই প্রতিফল দেওয়া হইবে। |
36-55 : এই দিন জান্নাতবাসিগণ আনন্দে মগ্ন থাকিবে, |
36-56 : তাহারা এবং তাহাদের স্ত্রীগণ সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়া বসিবে। |
36-57 : সেখানে থাকিবে তাহাদের জন্য ফলমূল এবং তাহাদের জন্য বাঞ্ছিত সমস্ত কিছু, |
36-58 : সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হইতে সম্ভাষণ। |
36-59 : আর ‘হে অপরাধিগণ! তোমরা আজ পৃথক হইয়া যাও।’ |
36-60 : হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দিই নাই যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করিও না, কারণ সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? |
36-61 : আর আমারই ‘ইবাদত কর, ইহাই সরল পথ। |
36-62 : শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করিয়াছিল, তবুও কি তোমরা বুঝ নাই? |
36-63 : ইহাই সেই জাহান্নাম, যাহার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হইয়াছিল। |
36-64 : আজ তোমরা ইহাতে প্রবেশ কর; কারণ তোমরা ইহাকে অবিশ্বাস করিয়াছিলে। |
36-65 : আমি আজ ইহাদের মুখ মোহর করিয়া দিব, ইহাদের হস্ত কথা বলিবে আমার সঙ্গে এবং ইহাদের চরণ সাক্ষ্য দিবে ইহাদের কৃতকর্মের। |
36-66 : আমি ইচ্ছা করিলে অবশ্যই ইহাদের চক্ষুগুলিকে লোপ করিয়া দিতাম, তখন ইহারা পথ চলিতে চাহিলে কি করিয়া দেখিতে পাইত! |
36-67 : এবং আমি ইচ্ছা করিলে অবশ্যই স্ব স্ব স্থানে ইহাদের আকৃতি পরিবর্তন করিয়া দিতাম, ফলে ইহারা চলিতে পারিত না এবং ফিরিয়াও আসিতে পারিত না। |
36-68 : আমি যাহাকে দীর্ঘ জীবন দান করি প্রকৃতিগতভাবে তাহার অবনতি ঘটাই। তবুও কি উহারা বুঝে না? |
36-69 : আমি রাসূলকে কাব্য রচনা করিতে শিখাই নাই এবং ইহা তাহার পক্ষে শোভনীয় নয়। ইহা তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন; |
36-70 : যাহাতে সে সতর্ক করিতে পারে জীবিতগণকে এবং যাহাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা সত্য হইতে পারে। |
36-71 : উহারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমার হাতে সৃষ্ট বস্তুসমূহের মধ্যে উহাদের জন্য আমি সৃষ্টি করিয়াছি ‘আন‘আম’ তথা চতুষ্পদ জন্তু এবং উহারাই এইগুলির অধিকারী? |
36-72 : এবং আমি এইগুলিকে তাহাদের বশীভূত করিয়া দিয়াছি। এইগুলির কতক তাহাদের বাহন এবং উহাদের কতক তাহারা আহার করে। |
36-73 : তাহাদের জন্য এইগুলিতে আছে বহু উপকারিতা আর আছে পানীয় বস্তু। তবুও কি তাহারা কৃতজ্ঞ হইবে না? |
36-74 : তাহারা তো আল্লাহ্র পরিবর্তে অন্য ইলাহ্ গ্রহণ করিয়াছে এই আশায় যে, তাহারা সাহায্যপ্রাপ্ত হইবে। |
36-75 : কিন্তু এইসব ইলাহ্ তাহাদেরকে সাহায্য করিতে সক্ষম নয়; তাহাদেরকে উহাদের বাহিনীরূপে উপস্থিত করা হইবে। |
36-76 : অতএব তাহাদের কথা তোমাকে যেন দুঃখ না দেয়। আমি তো জানি যাহা তাহারা গোপন করে এবং যাহা তাহারা ব্যক্ত করে। |
36-77 : মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাহাকে সৃষ্টি করিয়াছি শুক্রবিন্দু হইতে ? অথচ পরে সে হইয়া পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। |
36-78 : এবং সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলিয়া যায়। সে বলে, ‘কে অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করিবে যখন উহা পচিয়া গলিয়া যাইবে?’ |
36-79 : বল, ‘উহার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করিবেন তিনিই যিনি ইহা প্রথমবার সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।’ |
36-80 : তিনি তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ হইতে অগ্নি উৎপাদন করেন এবং তোমরা উহা হইতে প্রজ্বলিত কর। |
36-81 : যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন তিনি কি তাহাদের অনুরূপ সৃষ্টি করিতে সমর্থ নন? হাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। |
36-82 : তাঁহার ব্যাপার শুধু এই, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন, তিনি উহাকে বলেন, ‘হও’, ফলে উহা হইয়া যায়। |
36-83 : অতএব পবিত্র ও মহান তিনি, যাঁহার হস্তেই প্রত্যেক বিষয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব; আর তাঁহারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হইবে। |