56-1 : যখন কিয়ামত ঘটিবে, |
56-2 : ইহার সংঘটন অস্বীকার করিবার কেহ থাকিবে না। |
56-3 : ইহা কাহাকেও করিবে নীচ, কাহাকেও করিবে সম্মুন্নত ; |
56-4 : যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হইবে পৃথিবী, |
56-5 : এবং পর্বতমালা চূর্ণ - বিচূর্ণ হইয়া পড়িবে, |
56-6 : ফলে উহা পর্যবসিত হইবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায়; |
56-7 : এবং তোমরা বিভক্ত হইয়া পড়িবে তিন শ্রেণীতে - |
56-8 : ডান দিকের দল; কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! |
56-9 : এবং বাম দিকের দল; কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! |
56-10 : আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী, |
56-11 : উহারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত - |
56-12 : নিয়ামতপূর্ণ উদ্যানে; |
56-13 : বহুসংখ্যক হইবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হইতে; |
56-14 : এবং অল্পসংখ্যক হইবে পরবর্তীদের মধ্য হইতে। |
56-15 : স্বর্ণখচিত আসনে |
56-16 : উহারা হেলান দিয়া বসিবে, পরস্পর মুখোমুখি হইয়া। |
56-17 : তাহাদের সেবায় ঘোরাফেরা করিবে চির - কিশোরেরা |
56-18 : পানপাত্র, কুঁজা ও প্রস্রবণ - নিঃসৃত সুরাপূর্ণ পেয়ালা লইয়া। |
56-19 : সেই সুরা পানে তাহাদের শিরঃপীড়া হইবে না, তাহারা জ্ঞানহারাও হইবে না - |
56-20 : এবং তাহাদের পসন্দমত ফলমূল, |
56-21 : আর তাহাদের ঈপ্সিত পাখির গোশ্ত লইয়া, |
56-22 : আর তাহাদের জন্য থাকিবে আয়তলোচনা হূর, |
56-23 : সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ, |
56-24 : তাহাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ। |
56-25 : সেখানে তাহারা শুনিবে না কোন অসার অথবা পাপবাক্য, |
56-26 : ‘সালাম’ আর ‘সালাম’ বাণী ব্যতীত। |
56-27 : আর ডানদিকের দল, কত ভাগ্যবান ডানদিকের দল! |
56-28 : তাহারা থাকিবে এমন উদ্যানে, সেখানে আছে কণ্টকহীন কুলবৃক্ষ, |
56-29 : কাঁদি ভরা কদলী বৃক্ষ, |
56-30 : সম্প্রসারিত ছায়া, |
56-31 : সদা প্রবহমান পানি, |
56-32 : ও প্রচুর ফলমূল, |
56-33 : যাহা শেষ হইবে না ও যাহা নিষিদ্ধও হইবে না। |
56-34 : আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ; |
56-35 : উহাদেরকে আমি সৃষ্টি করিয়াছি বিশেষরূপে - |
56-36 : উহাদেরকে করিয়াছি কুমারী, |
56-37 : সোহাগিনী ও সমবয়স্কা, |
56-38 : ডানদিকের লোকদের জন্য। |
56-39 : তাহাদের অনেকে হইবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হইতে, |
56-40 : এবং অনেকে হইবে পরবর্তীদের মধ্য হইতে। |
56-41 : আর বামদিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! |
56-42 : উহারা থাকিবে অত্যুষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে, |
56-43 : কৃষ্ণবর্ণ ধূম্রের ছায়ায়, |
56-44 : যাহা শীতল নয়, আরামদায়কও নয়। |
56-45 : ইতিপূর্বে উহারা তো মগ্ন ছিল ভোগ - বিলাসে |
56-46 : এবং উহারা অবিরাম লিপ্ত ছিল ঘোরতর পাপকর্মে। |
56-47 : আর উহারা বলিত, ‘মরিয়া অস্থি ও মৃত্তিকায় পরিণত হইলেও কি উত্থিত হইব আমরা? |
56-48 : ‘এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণও?’ |
56-49 : বল, ‘অবশ্যই পূর্ববর্তিগণ ও পরবর্তিগণ - |
56-50 : সকলকে একত্র করা হইবে এক নির্ধারিত দিনের নির্দিষ্ট সময়ে। |
56-51 : অতঃপর হে বিভ্রান্ত অস্বীকারকারীরা! |
56-52 : তোমরা অবশ্যই আহার করিবে যাক্কূম বৃক্ষ হইতে, |
56-53 : এবং উহা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করিবে, |
56-54 : পরে তোমরা পান করিবে উহার উপর অত্যুষ্ণ পানি - |
56-55 : আর পান করিবে তৃষ্ণার্ত উষ্ট্রের ন্যায়। |
56-56 : কিয়ামতের দিন ইহাই হইবে উহাদের আপ্যায়ন। |
56-57 : আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করিয়াছি, তবে কেন তোমরা বিশ্বাস করিতেছ না? |
56-58 : তোমরা কি ভাবিয়া দেখিয়াছ তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে? |
56-59 : উহা কি তোমরা সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? |
56-60 : আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু নির্ধারিত করিয়াছি এবং আমি অক্ষম নই - |
56-61 : তোমাদের স্থলে তোমাদের সদৃশ আনয়ন করিতে এবং তোমাদেরকে এমন এক আকৃতিতে সৃষ্টি করিতে যাহা তোমরা জান না। |
56-62 : তোমরা তো অবগত হইয়াছ প্রথম সৃষ্টি সম্বন্ধে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন? |
56-63 : তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে চিন্তা করিয়াছ কি? |
56-64 : তোমরা কি উহাকে অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি? |
56-65 : আমি ইচ্ছা করিলে ইহাকে খড় - কুটায় পরিণত করিতে পারি, তখন হতবুদ্ধি হইয়া পড়িবে তোমরা; |
56-66 : ‘আমরা তো দায়গ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছি’, |
56-67 : বরং ‘আমরা হৃতসর্বস্ব হইয়া পড়িয়াছি।’ |
56-68 : তোমরা যে পানি পান কর তাহা সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করিয়াছ? |
56-69 : তোমরা কি উহা মেঘ হইতে নামাইয়া আন, না আমি উহা বর্ষণ করি? |
56-70 : আমি ইচ্ছা করিলে উহা লবণাক্ত করিয়া দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? |
56-71 : তোমরা যে অগ্নি প্রজ্বলিত কর তাহা লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছ কি? |
56-72 : তোমরাই কি উহার বৃক্ষ সৃষ্টি কর, না আমি সৃষ্টি করি? |
56-73 : আমি ইহাকে করিয়াছি নিদর্শন এবং মরুচারীদের প্রয়োজনীয় বস্তু। |
56-74 : সুতরাং তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। |
56-75 : আমি শপথ করিতেছি নক্ষত্ররাজির অস্তাচলের, |
56-76 : অবশ্যই ইহা এক মহাশপথ, যদি তোমরা জানিতে - |
56-77 : নিশ্চয়ই ইহা সম্মানিত কুরআন, |
56-78 : যাহা আছে সুরক্ষিত কিতাবে। |
56-79 : যাহারা পূত - পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করে না। |
56-80 : ইহা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হইতে অবতীর্ণ। |
56-81 : তবুও কি তোমরা এই বাণীকে তুচ্ছ গণ্য করিবে? |
56-82 : এবং তোমরা মিথ্যারোপকেই তোমাদের উপজীব্য করিয়া লইয়াছ ! |
56-83 : পরন্তু কেন নয় - প্রাণ যখন কণ্ঠাগত হয় |
56-84 : এবং তখন তোমরা তাকাইয়া থাক, |
56-85 : আর আমি তোমাদের অপেক্ষা তাহার নিকটতর, কিন্তু তোমরা দেখিতে পাও না। |
56-86 : তোমরা যদি কর্তৃত্বাধীন না হও! |
56-87 : তবে তোমরা উহা ফিরাও না কেন? যদি তোমরা সত্যবাদী হও। |
56-88 : যদি সে নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়, |
56-89 : তবে তাহার জন্য রহিয়াছে আরাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখদ উদ্যান; |
56-90 : আর যদি সে ডানদিকের একজন হয়, |
56-91 : তবে তাহাকে বলা হইবে, ‘হে দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী! তোমার প্রতি শান্তি।’ |
56-92 : কিন্তু সে যদি সত্য অস্বীকারকারী ও বিভ্রান্তদের অন্যতম হয়, |
56-93 : তবে রহিয়াছে আপ্যায়ন অত্যুষ্ণ পানির দ্বারা, |
56-94 : এবং দহন জাহান্নামের; |
56-95 : ইহা তো ধ্রুব সত্য। |
56-96 : অতএব তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। |