আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক, Chapter: 12, ইউসূফ

Go Back
Book Id: 10060

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক

Chapter: 12, ইউসূফ

12-1 : আলিফ, লাম, রা। এসব সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াতসমূহ।
12-2 : নিঃসন্দেহ আমরা এটি অবতারণ করেছি - - আরবী কুরআন, যেন তোমরা বুঝতে পার।
12-3 : আমরা তোমার কাছে এই কুরআন প্রত্যাদেশের দ্বারা তোমার নিকট শ্রেষ্ঠ কাহিনী বর্ণনা করছি। আর অবশ্যই এর আগে তুমি তো ছিলে অনবহিতদের অন্তর্ভূক্ত।
12-4 : স্মরণ করো! ইউসুফ তাঁর পিতাকে বললেন - - ''হে আমার আব্বা! আমি নিশ্চয়ই দেখলাম এগারোটি তারা আর সূর্য ও চন্দ্র - - তাদের দেখলাম আমার কারণে তারা সিজদারত।’’
12-5 : তিনি বললেন, ''হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্ন তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা কর না পাছে তারা তোমার বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্তের ফন্দি আঁটে। নিঃসন্দেহ শয়তান মানুষের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।
12-6 : ''আর এইভাবে তোমার প্রভু তোমাকে মনোনীত করবেন, আর তোমাকে শিক্ষা দেবেন ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা সম্পর্কে, আর তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণাঙ্গ করবেন তোমার প্রতি ও ইয়াকুবের বংশধরদের প্রতি, যেমন তিনি তা পূর্ণাঙ্গ করেছিলেন এর আগে তোমার পূর্বপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাকের প্রতি। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।’’
12-7 : ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের মধ্যে নিশ্চয়ই নিদর্শন রয়েছে জিজ্ঞাসুদের জন্যে।
12-8 : স্মরণ করো! তারা বলাবলি করলে - - ''ইউসুফ ও তার ভাই তো আমাদের আব্বার কাছে আমাদের চেয়েও বেশি প্রিয়, যদিও আমরা দলে ভারী। আমাদের আব্বা নিশ্চয়ই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।’’
12-9 : ''ইউসুফকে মেরে ফেল অথবা কোনো দেশে নির্বাসন দাও, তাহলে তোমাদের আব্বার মুখ তোমাদের দিকেই নিবিষ্ট হবে, এবং তার পরে তোমরা ভাল লোক হতে পারবে।’’
12-10 : তাদের মধ্যে থেকে একজন বক্তা বললে - - ''ইউসুফকে কাতল করো না, তাকে বরং কোনো কুয়োর তলায় ফেলে দাও, ভ্রমণকারীদের কেউ তাকে তুলেও নিতে পারে, - - যদি তোমরা কাজ করতে চাও।’’
12-11 : তারা বলল - - ''হে আমাদের আব্বা! তোমার কি হয়েছে যেজন্যে তুমি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস কর না, অথচ নিঃসন্দেহ আমরা তো তার শুভাকাঙ্খী?
12-12 : ''তাকে আমাদের সঙ্গে কালকে পাঠিয়ে দাও, সে আমোদ করুক ও খেলাধুলা করুক, আর আমরা তো নিশ্চয়ই তার হেফাজতকারী।’’
12-13 : তিনি বললেন - - ''এতে অবশ্যই আমাকে কষ্ট দেবে যে তোমরা তাকে নিয়ে যাবে, আর আমি ভয় করছি পাছে নেকড়ে তাকে খেয়ে ফেলে, যদি তোমরা তার প্রতি বেখেয়াল হয়ে যাও!’’
12-14 : তারা বললে, ''আমরা দলে ভারী হওয়া সত্ত্বেও যদি তাকে নেকড়ে খেয়ে ফেলে তবে আমরাই তো নিশ্চয় সর্বহারা হব।’’
12-15 : তারপর তারা যখন তাকে নিয়ে গেল এবং সবাই একমত হল যে তারা তাকে ফেলে দেবে কুয়োর তলায়, তখন আমরা তার কাছে প্রত্যাদেশ দিলাম - - ''তুমি তাদের অবশ্যই জানিয়ে দেবে তাদের এই কাজের কথা, আর তারা চিনতেও পারবে না।’’
12-16 : আর তারা তাদের পিতার কাছে কাঁদতে কাঁদতে এলো রাত্রিবেলায়।
12-17 : তারা বললে - - ''হে আমাদের আব্বা! আমরা দৌড়াদেড়ি করে চলেছিলাম, আর ইউসুফকে রেখে গিয়েছিলাম আমাদের আসবাবপত্রের পাশে, তখন নেকড়ে তাকে খেয়ে ফেলেছে, কিন্তু তুমি তো আমাদের প্রতি বিশ্বাসকারী হবে না, যদিও আমরা হচ্ছি সত্যবাদী।’’
12-18 : আর তারা এল তাঁর সার্টের উপরে ঝুটা রক্ত নিয়ে। তিনি বললেন - - ''না, তোমাদের অন্তর তোমাদের জন্য এই বিষয়টি উদ্ভাবন করেছে, কিন্তু ধৈর্যধারণই উত্তম। আর আল্লাহ্‌ই সাহায্য কামনার স্থল তোমরা যা বর্ণনা করছ সে - ক্ষেত্রে।’’
12-19 : এদিকে ভ্রমণকারীরা এল এবং তাদের পানিওয়ালাকে পাঠাল, সে তখন তার বালতি নামিয়ে দিল। সে বললে, ''কি সুখবর! এ যে একটি ছোকরা!’’ অতঃপর তারা তাঁকে লুকিয়ে রাখল পণ্য - দ্রব্যের মতো। আর তারা যা করেছিল সে - সন্বন্ধে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা।
12-20 : আর তারা তাঁকে বিক্রি করল সামান্য মূল্যে - - গুণতির কয়েকটি দিরহামে, আর তাঁর প্রতি তারা ছিল অনাসক্ত।
12-21 : আর মিশরীয় যে তাঁকে কিনেছিল সে তার স্ত্রীকে বললে - - ''সম্মানজনকভাবে এর থাকবার জায়গা কর, হয়ত সে আমাদের উপকারে আসবে, অথবা তাকে আমরা পুত্ররূপে গ্রহণ করতে পারি।’’ আর এইভাবে আমরা ইউসুফের জন্য বাসস্থান ঠিক করে দিলাম সে - দেশে, যেন তাঁকে শেখাতে পারি ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা সন্বন্ধে। আল্লাহ্ তাঁর কাজকর্মে সর্বেসর্বা, কিন্তু অধিকাংশ লোকেই জানে না।
12-22 : আর যখন তিনি তাঁর পূর্ণ যৌবনে পৌঁছুলেন, আমরা তাঁকে বুদ্ধি ও বিদ্যা দান করলাম। আর এইভাবে আমরা সৎকর্মশীলদের পুরস্কার প্রদান করি।
12-23 : আর যে মহিলায় গৃহে তিনি ছিলেন সে তাঁকে কামনা করল তাঁর অন্তরঙ্গতার, আর বন্ধ করে দিলে দরজাগুলো ও বললে - - ''এসো হে তুমি!’’ তিনি বললেন - - ''আল্লাহ্ সহায় হোন! আমার প্রভু নিশ্চয়ই আমার আশ্রয়স্থল অতি উত্তম বানিয়েছেন। নিঃসন্দেহ তিনি অন্যায়কারীদের উন্নতি করেন না।’’
12-24 : আর সে নারী নিশ্চয়ই তাঁর প্রতি আসক্ত হয়েছিল, আর তিনিও তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তেন যদি না তিনি তাঁর প্রভুর স্পষ্ট - প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতেন। এইভাবে আমরা যেন তাঁর কাছ থেকে হটিয়ে দিতে পারি মন্দকাজ ও অশ্লীলতা। নিঃসন্দেহ তিনি ছিলেন আমাদের একান্ত অনুরক্ত দাসদের অন্যতম।
12-25 : আর তারা দুজনেই দরজার দিকে দৌড়লো, আর সে তাঁর জামা পেছনের দিক থেকে ছিড়ে ফেঁললো, আর তারা দুজনে দরজার নিকটে দেখা পেল তার স্বামীর। সে বললে - - ''যে তোমার পরিবারের সঙ্গে কুকর্ম কামনা করে তার পরিণাম কারাদন্ড বা মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর কী হতে পারে?’’
12-26 : তিনি বললেন - - ''উনিই আমাকে কামনা করেছিলেন আমার অন্তরঙ্গতার।’’ আর তারই পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিলে - - ''যদি তার সার্টটি সামনের দিকে ছেঁড়া হয় তবে ইনি সত্যবাদী এবং ও মিথ্যাবাদীদের মধ্যের।
12-27 : ''আর যদি তার সার্টটি পেছনের দিকে ছেঁড়া থাকে তবে ইনিই মিথ্যাবাদী আর ও সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।’’
12-28 : সুতরাং সে যখন দেখলে যে তাঁর জামাটি পেছনের দিকে ছেঁড়া তখন সে বললে - - ''এ নিঃসন্দেহ তোমাদের ছলাকলা, তোমাদের ছলচাতুরী বড়ই ভীষণ।
12-29 : ''হে ইউসুফ, তুমি এ বিষয়ে কিছু মনে করো না; আর তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার অপরাধের জন্য; নিঃসন্দেহ তুমি হচ্ছো পাপিষ্ঠাদের মধ্যেকার।’’
12-30 : আর শহরের নারীরা বললে, ''আজীযের স্ত্রী তার যুবক দাসকে কামনা করেছিল তার অন্তরঙ্গতার! নিশ্চয়ই সে তাকে প্রেমে অভিভূত করেছে। আমরা তাকে দেখছি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পড়েছে।’’
12-31 : সুতরাং সে যখন শুনলে তাদের ফন্দির কথা, সে তাদের ডেকে পাঠালে এবং তাদের জন্য তৈরি করলে গদির আসন, আর তাদের মধ্যের প্রত্যেককে দিলে একটি করে ছুরি, আর বললে - - ''বেরিয়ে এস এদের সামনে।’’ অতঃপর তারা যখন তাঁকে দেখল তাঁকে ভাবলো অতুলনীয়, আর নিজেদের হাত কেটে ফেলল ও বললো - - ''আল্লাহ্‌র কি নিখুঁত সৃষ্টি! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্নিত ফিরিশ্‌তা।’’
12-32 : সে বললে - - ''এ - ই তো সেই যার সন্বন্ধে তোমরা আমার নিন্দা করেছ, আর আমি অবশ্যই তাকে কামনা করেছিলাম তার অন্তরঙ্গতার, কিন্তু সে নিজেকে সংযত রেখেছিল। আর আমি তাকে যা আদেশ করি তা যদি সে না করে তবে সে নিশ্চিত কারারুদ্ধ হবে এবং সে হবে অবশ্যই ছোটলোকদের মধ্যেকার।’’
12-33 : তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু! তারা আমাকে যার প্রতি আহ্বান করছে তার চেয়ে কারাগারই আমার কাছে অধিক প্রিয়। আর তুমি যদি আমার থেকে তাদের ছলনা দূরীভূত না কর তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব, ফলে আমি হয়ে যাব অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত।’’
12-34 : অতএব তাঁর প্রভু তাঁর প্রতি সাড়া দিলেন আর তাঁর থেকে তাদের ছলাকলা হটিয়ে দিলেন। নিঃসন্দেহ তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
12-35 : অতঃপর সাক্ষীসাবুদ তারা দেখার পরে তাদের মনে হল তাঁকে কিছুকালের জন্য কারারুদ্ধ করাই উচিত।
12-36 : আর তাঁর সঙ্গে দু’জন যুবক জেলে ঢুকেছিল। তাদের একজন বললে, ''আমি দেখলাম মদ তৈরি করছি।’’ আর অন্যজন বললে, ''আমি দেখলাম আমি আমার মাথার উপরে রুটি বয়ে নিচ্ছি, তা থেকে পাখিরা খাচ্ছে।’’ ''আমাদের এর তাৎপর্য বলে দাও, আমরা নিশ্চয়ই তোমাকে দেখছি ভালো - লোকদের মধ্যেকার।’’
12-37 : তিনি বললেন - - ''তোমাদের যা খেতে দেয়া হয় সে খাদ্য তোমাদের কাছে এসে পৌঁছুবেনা না, অথচ তোমাদের কাছে তা আসার আগেই আমি তোমাদের বলে দেব এর তাৎপর্য। এটি হচ্ছে আমার প্রভু আমাকে যা শিখিয়েছেন তা থেকে। আমি নিশ্চয়ই পরিত্যাগ করেছি সেই লোকদের ধর্মমত যারা আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস করে না, আর তারা নিজেরাই পরকালেও অবিশ্বাসী।
12-38 : ''আর আমি অনুসরণ করি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম ও ইসহাক ও ইয়াকুবের ধর্মমত। এটি আমাদের জন্য নয় যে আমরা আল্লাহ্‌র সঙ্গে কোনো ধরনের অংশী দাঁড় করাব। এটি আমাদের প্রতি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ - প্রাচুর্যের ফলে আর মানবগোষ্ঠীর প্রতিও, কিন্তু অধিকাংশ লোকেরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
12-39 : ''হে আমার জেলখানার সঙ্গিদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন প্রভুসব ভাল, না একক সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌?
12-40 : ''তাঁকে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যাদের উপাসনা কর তারা নামাবলী মাত্র যা তোমরা নামকরণ করেছ - - তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা, যেজন্যে কোনো দলিল - দস্তাবেজ আল্লাহ্ পাঠান নি। বিধান দেবার অধিকার শুধু আল্লাহ্‌র। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারোর উপাসনা করবে না। এই হচ্ছে সঠিক ধর্ম, কিন্তু অধিকাংশ লোকেই জানে না।
12-41 : ''হে আমার কারাগারের সঙ্গিদ্বয়! তোমাদের একজন সন্বন্ধে - - সে তার প্রভুকে সুরা পান করাবে, কিন্তু অন্যজনের ক্ষেত্রে - - সে তখন শূলবিদ্ধ হয়ে মরবে, তার ফলে পাখিরা তার মাথা থেকে খাবে। তোমরা যার সন্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছিলে সে - বিষয় নিস্পত্তি হয়ে গিয়েছে!’’
12-42 : আর দুইজনের মধ্যে যাকে তিনি জানতেন যে সে মুক্তি পাবে তাকে তিনি বললেন, ''তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বলো।’’ কিন্তু শয়তান তাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল তার প্রভুর কাছে স্মরণ করিয়ে দিতে, তাই তিনি কারাগারে থাকলেন আরো কয়েক বছর।
12-43 : আর রাজা বললেন - - ''আমি নিশ্চয়ই দেখলাম সাতটি হৃস্পুষ্ট গরু, তাদের খেয়ে ফেলল সাতটি জীর্ণশীর্ণ, আর সাতটা সবুজ শীষ আর অপর শুক্‌নো। ওহে প্রধানগণ! আমার স্বরে তাৎপর্য আমাকে বলে দাও যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারো।’’
12-44 : তারা বললে - - ''এলোমেলো স্বপ্ন, আর স্বপ্নের মর্মোদ্ধারে আমরা অভিজ্ঞ নই।’’
12-45 : আর সেই দুইজনের যে মুক্তি পেয়েছিল ও দীর্ঘকাল পরে যার মনে পড়ল সে বললে - - ''আমিই এর তাৎপর্য আপনাদের জানিয়ে দেব, সেজন্যে আমাকে পাঠিয়ে দিন।’’
12-46 : ''ইউসুফ! হে সত্যবাদী! আমাদের জন্য ব্যাখ্যা করে দাও সাতটি মোটাসোটা গরু যাদের খেয়ে ফেলল রোগা - পাতলা সাতটি, এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুক্‌নো, - - যেন আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি যাতে তারা জানতে পারে।’’
12-47 : তিনি বললেন - - ''তোমরা সাত বছর যথারীতি ক্ষেত করে যাবে, আর তোমরা যা তুলবে তা রেখে দেবে তার শীষের মধ্যে, শুধু তা থেকে যে সামান্যটুকু তোমরা খাবে তা ছাড়া।
12-48 : ''তখন এর পরে আসবে সাতটি কঠোর, তা খেয়ে ফেলবে সে - ক’টির জন্য তোমরা যা এগিয়ে দেবে, কেবল সামান্য কিছু ছাড়া যা তোমরা সংরক্ষণ কর।
12-49 : ''আর তার পরে আসবে এক বছর যাতে লোকেরা পাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত, আর তাতে তারা পিযবে।’’
12-50 : আর রাজা বললেন - - ''তাকে আমার কাছে নিয়ে এস।’’ সুতরাং যখন দূত তাঁর কাছে এল, তিনি বললেন - - ''তোমার মনিবের কাছে ফিরে যাও এবং তাঁকে জিজ্ঞেস কর সেই নারীদের কি হল যারা তাদের হাত কেটেছিল। নিঃসন্দেহ আমাব প্রভু, তাদের ফন্দিফিকির সন্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিফহাল।’’
12-51 : তিনি বললেন - - ''তোমাদের কি হয়েছিল যখন তোমরা ইউসুফকে কামনা করেছিলে তার অন্তরঙ্গতার?’’ তারা বললে - - আল্লাহ্‌র কি নিখুঁত সৃষ্টি! আমরা ওর মধ্যে কোনো দোষের কথা জানি না।’’ নগর - প্রধানের স্ত্রী বললে - - ''এক্ষণে সত্য প্রকাশ পেয়েছে, আমিই তাকে কামনা করেছিলাম তার অন্তরঙ্গতার, আর নিঃসন্দেহ সে অবশ্যই ছিল সত্যপরায়ণদের মধ্যেকার।’’
12-52 : ''এটিই, যেন তিনি জানতে পারেন যে আমি গোপনে তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করি নি। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ বিশ্বাসহন্তাদের ছলাকলা পরিচালিত করেন না।’’
12-53 : ''আমি আমার নিজেকে মুক্ত বলি না, নিঃসন্দেহ মানুষমাত্রেরই মন্দের দিকে প্রবণতা রয়েছে, শুধু যাদের প্রতি আমার প্রভুর করুণা রয়েছে তারা ভিন্ন। নিঃসন্দেহ আমার প্রভু পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।’’
12-54 : আর রাজা বললেন - - ''তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এস, আমি তাঁকে আমার নিজের জন্য একান্তভাবে গ্রহণ করব।’’ সুতরাং তিনি যখন তাঁর সাথে আলাপ করলেন তখন বললেন - - ''আপনি আজ নিশ্চয়ই হলেন আমাদের সমক্ষে সুপ্রতিষ্ঠিত, বিশ্বাসভাজন।’’
12-55 : তিনি বললেন - - ''আমাকে দেশের ধনসম্পদের দায়িত্বে নিয়োগ করুন। নিঃসন্দেহ আমি সুরক্ষক, সুবিবেচক।’’
12-56 : আর এইভাবে আমরা ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করলাম দেশে, - - সেখানে তিনি কর্তৃত্ব চালাতেন যেখানে তিনি চাইতেন। আমরা যাকে ইচ্ছা করি আমাদের করুণাদ্বারা হিতসাধন করি, আর সৎকর্মশীলদের কর্মফল আমরা ব্যর্থ করি না।
12-57 : আর অবশ্যই পরকালের পুরস্কার আরো ভালো তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে এবং ভয় - ভক্তি অবলন্বন করে।
12-58 : আর ইউসুফের ভাইয়েরা এল এবং তাঁর দরবারে প্রবেশ করল, তিনি তখন তাদের চিনতে পারলেন, কিন্তু তারা তাঁর সন্বন্ধে অজ্ঞাত রইল।
12-59 : আর তিনি যখন তাদের পরিবেশন করলেন তাদের রসদের দ্বারা তখন তিনি বললেন, ''তোমরা তোমাদের পিতার তরফের তোমাদের ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এস। তোমরা কি দেখো নি যে আমি আলবৎ পুরো মাপ দিই এবং আমি ভাল আপ্যায়ণকারী।
12-60 : ''কিন্তু তোমরা যদি তাকে আমার কাছে না আনো তবে তোমাদের জন্য আমার নিকট থেকে কোনো পরিমাপ থাকবে না, এবং তোমরা আমার নিকটবর্তী হয়ো না।’’
12-61 : তারা বললে - - ''আমরা আলবৎ চেষ্টা করব তার সন্বন্ধে তার পিতার কাছে এবং আমরা নিশ্চয়ই কাজ করব।’’
12-62 : আর তিনি তাঁর জোয়ানদের বললেন - - ''তাদের দ্রব্যমূল্য তাদের মালপত্রের ভিতরে রেখে দাও যেন তাদের পরিবারবর্গের কাছে যখন তারা ফিরে যাবে তখন তারা এটা চিনতে পারে, তাহলে তারা ফিরে আসবে।’’
12-63 : তারপর তারা যখন তাদের পিতার কাছে ফিরে এল তখন তারা বললে - - ''হে আমাদের আব্বা! আমাদের কাছে পরিমাপ নিষেধ করা হয়েছে, অতএব আমাদের সঙ্গে আমাদের ভাইকেও পাঠিয়ে দাও যেন আমরা পরিমাপ পেতে পারি, আর আমরা তো অবশ্যই তার হেফাজতকারী।’’
12-64 : তিনি বললেন - - ''তোমাদের কি তার সন্বন্ধে বিশ্বাস করতে পারি যেভাবে তার ভাইয়ের ব্যাপারে এর আগে তোমাদের আমি বিশ্বাস করেছিলাম? বস্তুতঃ আল্লাহ্‌ই রক্ষণাবেক্ষণে সর্বশ্রেষ্ঠ, আর তিনিই ফলদানকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফলদাতা।’’
12-65 : আর যখন তারা তাদের জিনিসপত্র খুললো তারা দেখতে পেল তাদের দ্রব্যমূল্য তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা বললে - - ''হে আমাদের আব্বা! কী আমরা প্রত্যাশা করি? এই তো আমাদের দ্রব্যমূল্য আমাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, আর আমাদের পরিজনবর্গের জন্য আমরা রসদ আনতে পারব, আর আমাদের ভাইয়ের আমরা হেফাজত করব, আর আমরা এক উটের পরিমাপ অতিরিক্ত আনব। এটি তো এক সামান্য পরিমাপ।’’
12-66 : তিনি বললেন - - ''আমি তাকে কিছুতেই তোমাদের সাথে পাঠাব না যতক্ষণ না তোমরা আমার কাছে আল্লাহ্‌র নামে ওয়াদা কর যে তোমরা নিশ্চয় আমার কাছে তাকে ফিরিয়ে আনবে, যদি না তোমরা একান্ত অসহায় হও।’’ অতএব তারা যখন তাঁকে তাদের প্রতি‌শ্রুতি দিল তখন তিনি বললেন - - ''আমরা যা বলছি তার উপরে আল্লাহ্‌ই কর্ণধার।’’
12-67 : তিনি আরো বললেন, ''হে আমার পুত্রগণ! তোমরা একই দরজা দিয়ে ঢুকো না, বরং তোমরা ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে ঢুকবে। আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে তোমাদের জন্যে আমার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। বিধান তো একমাত্র আল্লাহ্‌র বৈ তো নয়। তাঁর উপরেই আমি নির্ভর করি, আর তাঁরই উপরে তবে নির্ভর করুক নির্ভরশীলগণ।’’
12-68 : আর তারা যখন ঢুকল যেভাবে তাদের পিতা তাদের আদেশ করেছিলেন, তখন আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে তাদের কিছুই করার সামর্থ্য ছিল না, কিন্তু এটি ইয়াকুবের অন্তরের একটি বাসনা যা তিনি চরিতার্থ করেছিলেন। আর নিঃসন্দেহ তিনি অবশ্যই ছিলেন জ্ঞানের অধিকারী যেহেতু আমরা তাঁকে জ্ঞানদান করেছিলাম, কিন্তু অধিকাংশ লোকেই জানে না।
12-69 : আর তারা যখন ইউসুফের দরবারে প্রবেশ করল তাঁর ভাইকে তিনি নিজের সঙ্গে রাখলেন, তিনি বললেন - - ''আমিই তোমার ভাই, সুতরাং তারা যা করে তাতে দুঃখ করো না।’’
12-70 : তারপর তিনি যখন তাদের পরিবেশন করলেন তাদের রসদের দ্বারা, তখন তাঁর ভাইয়ের মালপত্রের ভিতরে একটি পানপাত্র কেউ রেখে দিল। তারপর একজন আহবায়ক চিৎকার ক’রে বলল - - ''ওহে উট - চালকের দল! তোমরা নিশ্চয়ই চোর।’’
12-71 : তারা তাদের নিকটে এসে বললে - - ''কি জিনিস তোমরা হারিয়েছ?’’
12-72 : তারা বললে - - ''আমরা রাজার পানপাত্র হারিয়েছি, আর যে এটি নিয়ে আসবে এক উট - বোঝাই মাল, আর আমি এরজন্যে জামিন।’’
12-73 : তারা বললে - - ''আল্লাহ্‌র কসম! তোমরা নিশ্চয়ই জান যে আমরা এদেশে দুস্কর্ম করতে আসি নি, আর আমরা চোরও নই।’’
12-74 : তারা বললে - - ''তবে কি হবে এর প্রতিফল যদি তোমরা হচ্ছ মিথ্যাবাদী?’’
12-75 : তারা বললে - - ''এর প্রতিফল হবে - - যার মালপত্রের মধ্যে এটি পাওয়া যাবে সেই হবে এর প্রতিফলের পাত্র। এইভাবেই আমরা অন্যায়কারীদের শাস্তি দিই।’’
12-76 : অতঃপর তিনি তাদের মালপত্রে আর করলেন তাঁর ভাইয়ের মালের আগে, তারপর তিনি তা বের করলেন তাঁর ভাইয়ের মালপত্র থেকে। এইভাবেই আমরা ইউসুফের জন্য পরিকল্পনা করেছিলাম। তাঁর পক্ষে রাজার আইন অনুসারে তাঁর ভাইকে রাখা সম্ভব ছিল না যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করতেন। আমরা যাকে ইচ্ছা করি স্তরে স্তরে উন্নত করি। আর প্রত্যেক জ্ঞানবানদের উপরে রয়েছেন সর্বজ্ঞানময়।
12-77 : তারা বললে - - ''যদি সে চুরি করে থাকে তার ভাইও তো এর আগে চুরি করেছিল।’’ তখন ইউসুফ এটি নিজের অন্তরেই গোপন রেখেছিলেন এবং তিনি তা তাদের কাছে প্রকাশ করেন নি। তিনি বললেন - - ''তোমরা আরও হীন অবস্থাতে রয়েছ, আর আল্লাহ্ ভাল জানেন তোমরা যা আরোপ করছ সে - সন্বন্ধে।’’
12-78 : ওরা বললে - - ''ওহে প্রধান! এর পিতা আছেন, অত্যন্ত বুড়ো মানুষ, অতএব তার জায়গায় আমাদের একজনকে রেখে নিন, যেহেতু আমরা আপনাকে দেখছি মহানুভবদের মধ্যেকার।’’
12-79 : তিনি বললেন - - ''আল্লাহ্ রক্ষা করুন যে আমরা যার কাছে আমাদের জিনিস পেয়েছি তাকে ছাড়া অন্যকে ধরে রাখি, কেননা সে ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই অন্যায়কারী হব!’’
12-80 : যখন তারা তাঁর কাছ থেকে হতাশ হল তখন তারা পরামর্শের জন্যে আলদা হল। তাদের বড়জন বললে - - ''তোমরা কি জান না যে তোমাদের আব্বা তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহ্‌র নামে অংগীকার নিয়েছেন, আর এর আগে ইউসুফের ব্যাপারেও তোমরা কি রকম ত্রুটি করেছিলে? কাজেই আমি কিছুতেই এ দেশ ছেড়ে যাব না যে পর্যন্ত না আমার আব্বা আমাকে অনুমতি দেন, অথবা আল্লাহ্ আমার জন্য কোনো হুকুম দেন, কেননা তিনিই হাকিমগণের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।
12-81 : ''তোমরা তোমাদের আব্বার কাছে ফিরে যাও এবং বলো - - ''হে আমাদের আব্বা! নিঃসন্দেহ তোমার ছেলে চুরি করেছে, আর আমরা যা জানি তা ছাড়া অন্য প্রত্যক্ষ বিবরণ দিচ্ছি না, আর অদৃশ্যের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।
12-82 : ''আর আমরা যেখানে ছিলাম সেই শহরবাসীদের জিজ্ঞাসা কর, আর যাদের সঙ্গে আমরা এসেছি সেই যাত্রীদলকেও। আর আমরা তো অবশ্যই সত্যবাদী।’’
12-83 : তিনি বললেন - - ''না এ, বরং তোমাদের অন্তর তোমাদের জন্য ও বিষয়টি উদ্ভাবন করেছে, কিন্তু ধৈর্যধারণই উত্তম। হতে পারে আল্লাহ্ ওদের সবাইকে আমার কাছে এনে দেবেন। নিঃসন্দেহ তিনিই সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।’’
12-84 : আর তিনি তাদের থেকে ফিরলেন ও বললেন - - ''হায় আমার আফসোস ইউসুফের জন্য!’’ আর তাঁর চোখ সাদা হয়ে গিয়েছিল শোকাবেগ বশতঃ, যদিও তিনি সংবরণকারী ছিলেন।
12-85 : তারা বললে, ''দোহাই আল্লাহ্‌র! তুমি ইউসুফকে স্মরণ করা ছাড়বে না যে পর্যন্ত না তুমি রোগাক্রান্ত হও, অথবা প্রাণত্যাগী হয়ে যাও।’’
12-86 : তিনি বললেন - - ''আমার অসহনীয় দুঃখ ও আমার বেদনা নিবেদন করছি আল্লাহ্‌রই কাছে, আর আমি আল্লাহ্‌র তরফ থেকে জানি যা তোমরা জান না।
12-87 : ''হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও এবং ইউসুফ ও তার ভাইয়ের খোঁজ কর, আর আল্লাহ্‌র আশিস সন্বন্ধে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহ অবিশ্বাসী লোকেরা ছাড়া অন্য কেউ আল্লাহ্‌র আশিস সন্বন্ধে নিরাশ হয় না।’’
12-88 : তারপর তারা যখন তাঁর দরবারে দাখিল হল তখন বলল - - ''ওহে প্রধান! আমাদের ও আমাদের পরিবার - পরিজনের উপরে দুর্দিন এসে পড়েছে, আর আমরা সামান্য দ্রব্যমূল্য নিয়ে এসেছি, সেজন্যে আমাদের পূর্ণমাত্রায় দিন এবং আমাদের প্রতি দানখয়রাত করুন। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ দানশীলদের পুরস্কার দিয়ে থাকেন।’’
12-89 : তিনি বললেন - - ''তোমরা কি জানো ইউসুফ ও তার ভাইয়ের প্রতি তোমরা কি করেছিলে যখন তোমরা ছিলে বিবেচনাহীন?’’
12-90 : তারা বললে - - ''আপনিই কি তবে ইউসুফ?’’ তিনি বললে - - ''আমিই ইউসুফ আর এই আমার সহোদর। আল্লাহ্ আলবৎ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। নিঃসন্দেহ যে কেউ ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করে ও ধৈর্যধারণ করে - - কেননা আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলদের কর্মফল বিফল করেন না।’’
12-91 : তারা বললে, ''আল্লাহ্‌র কসম! আল্লাহ্ অবশ্যই আমাদের উপরে তোমাকে প্রাধান্য দিয়েছেন, আর আমরা নিশ্চয় পাপী ছিলাম।’’
12-92 : তিনি বললেন - - ''তোমাদের বিরুদ্ধে আজ কোনো অভিযোগ নয়। আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করুন, আর তিনিই তো ফলদান - কারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ফলদাতা।’’
12-93 : ''আমার এই জামাটি নিয়ে যাও এবং এটি আমার আব্বার মুখের সামনে রেখো, তিনি চক্ষুষ্মান হবেন। আর তোমাদের পরিবার - পরিজনদের সকলকে নিয়ে আমার কাছে এস।’’
12-94 : আর যখন যাত্রীদল বেরিয়ে পড়ল তখন তাদের পিতা লোকজনকে বললেন, ''নিঃসন্দেহ আমি আলবৎ ইউসুফের হাওয়া - বাতাস টের পাচ্ছি, যদিও তোমরা আমাকে মতিচ্ছন্ন মনে কর।’’
12-95 : তারা বললে - - ''আল্লাহ্‌র কসম! আপনি নিঃসন্দেহ আপনার পুরনো ভ্রান্তিতেই রয়েছেন।’’
12-96 : তারপর যখন সুসংবাদবাহক এল, সে সেটি তাঁর মুখের সামনে রাখল, তখন তিনি চক্ষুষ্মান হলেন। তিনি বললেন - - ''আমি কি তোমাদের বলি নি যে আমি আল্লাহ্‌র কাছ থেকে জানি যা তোমরা জান না?’’
12-97 : তারা বললে - - ''হে আমাদের আব্বা! আমাদের অপরাধের জন্যে আমাদের তরফ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিঃসন্দেহ আমরা হচ্ছি দোষী।’’
12-98 : তিনি বললেন - - ''আমি শীঘ্রই তোমাদের জন্য আমার প্রভুর কাছে মার্জনা চাইব। নিঃসন্দেহ তিনি নিজেই পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।’’
12-99 : তারপর তাঁরা যখন ইউসুফের দরবারে দাখিল হলেন তখন তিনি তাঁর পিতামাতাকে নিজের সঙ্গে রাখলেন এবং বললেন - - ''ইন - শা - আল্লাহ্ মিশরে নির্বিঘ্নে প্রবেশ করুন।’’
12-100 : আর তিনি তাঁর পিতামাতাকে উচ্চাসনে বসালেন, আর তাঁর কারণে তাঁরা সিজদারত হলেন। তখন তিনি বললেন, ''হে আমার আব্বা! এটিই আমার পূর্বেকার দৈবদর্শনের তাৎপর্য, আমার প্রভু তা সত্যে পরিণত করেছেন। আর তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলেন যখন তিনি আমাকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন, এবং মরুভূমি থেকে আপনাদের নিয়ে এসেছেন আমার মধ্যে ও আমার ভাইয়ের মধ্যে শয়তান বিরোধ বাধাবার পরে। নিঃসন্দেহ আমার প্রভু যাকে ইচ্ছা করেন তার প্রতি পরম সদাশয়। নিঃসন্দেহ তিনি নিজেই সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।
12-101 : ''আমার প্রভু! তুমি ইতিমধ্যেই আমাকে রাজত্বের অধিকার প্রদান করেছ এবং ঘটনাবলীর তাৎপর্য সম্পর্কে আমাকে শিক্ষাদান করেছ, হে মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি - স্রষ্টা! তুমিই এই দুনিয়া ও আখেরাতে আমার মনিব, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মরতে দাও এবং আমাকে সৎকর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত করো।’’
12-102 : এই হচ্ছে অদৃশ্য ব্যাপারের সংবাদ যা আমরা তোমার কাছে প্রত্যাদেশ করছি। আর তুমি তাদের সঙ্গে ছিলে না যখন তারা তাদের ব্যাপার - স্যাপার গুটাচ্ছিল ও তারা ফন্দি আটঁছিল।
12-103 : আর যদিও তুমি একান্তভাবে চাও তথাপি অধিকাংশ লোকেই বিশ্বাসকারী নয়।
12-104 : আর তুমি এর জন্য তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইছ না। এ তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ ব্যতীত নয়।
12-105 : আর মহাকাশমন্ডলে ও পৃথিবীতে কত না নিদর্শন রয়েছে যার পাশ দিয়ে তারা যাতায়ত করে, তথাপি তারা এ - সবের প্রতি উদাসীন!
12-106 : আর তাদের অধিকাংশই আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস করে না তারা বহুখোদাবাদী না হওয়া পর্যন্ত।
12-107 : তারা কি তবে নিরাপদ বোধ করে তাদের উপরে আল্লাহ্‌র শাস্তির ঘেরাটোপ এসে পড়া সন্বন্ধে, অথবা তারা যখন বেখেয়াল থাকে তখন ঘন্টা অতর্কিতে তাদের উপরে এসে পড়া সন্বন্ধে?
12-108 : তুমি বল - - ''এই হচ্ছে আমার পথ, আমি আল্লাহ্‌র প্রতি আহ্বান করি, আমি ও যারা আমাকে অনুসরণ করে তারা জ্ঞানালোকের উপরে রয়েছি। আর আল্লাহ্‌রই সব মহিমা, আর আমি বহুখোদাবাদীদের মধ্যেকার নই।’’
12-109 : আর তোমার পূর্বে জনপদবাসীদের মধ্যে থেকে মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে আমরা পাঠাই নি যাঁদের কাছে আমরা প্রত্যাদেশ দিয়েছিলাম। কাজেই তারা কি পৃথিবীতে পর্যটন করে নি এবং দেখে নি কেমন হয়েছিল তাদের পরিণাম যারা ছিল তাদের অগ্রগামী? আর পরকালের আবাসস্থল অবশ্যই অধিকতর ভাল তাদের জন্য যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে। তোমরা কি তবে বোঝ না?
12-110 : অবশেষে যখন রসূলগণ হতাশ হয়েছিলেন, আর তারা ভেবেছিল যে তাদের নিশ্চয়ই মিথ্যা বলা হয়েছে, তখনই এসে পৌঁছাল। কাজেই যাদের আমরা ইচ্ছা করলাম তাদের উদ্ধার করলাম। আর অপরাধী সম্প্রদায় থেকে আমাদের শাস্তি প্রতিহত হয় না।
12-111 : তাদের কাহিনীর মধ্যে অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে। এ এমন কাহিনী নয় যা জাল করা হয়েছে, বরঞ্চ এ হচ্ছে এর আগে যা এসেছিল তার সমর্থনকারী, এবং সব বিষয়ের বিস্তারিত বৃত্তান্ত, আর পথনির্দেশ ও করুণা যারা বিশ্বাস করে সেই সম্প্রদায়ের জন্য।