আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক, Chapter: 26, আল শো’আরা

Go Back
Book Id: 10060

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক

Chapter: 26, আল শো’আরা

26-1 : ত্বা, সীন, মীম।
26-2 : এসব হচ্ছে সুস্পষ্ট গ্রন্থের বাণীসমূহ।
26-3 : তুমি হয়ত তোমার নিজেকে মেরেই ফেলবে যেহেতু তারা মুমিন হচ্ছে না।
26-4 : যদি আমরা ইচ্ছা করতাম তাহলে আমরা তাদের উপরে আকাশ থেকে একটি নিদর্শন পাঠাতে পারতাম, তখন এর কারণে তাদের ঘাড় নুইয়ে হেটঁ করে দেয়া হত।
26-5 : আর তাদের নিকট পরম করুণাময়ের কাছ থেকে কোনো নতুন স্মরণীয় - বার্তা আসতে না আসতেই তারা তা থেকে বিমুখ হয়ে যায়।
26-6 : তাহলে তারা প্রত্যাখ্যান করেই ফেলেছে, সুতরাং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা - বিদ্রপ করত তার সংবাদ তাদের কাছে শীঘ্রই আসছে।
26-7 : তারা কি পৃথিবীর দিকে চেয়ে দেখে না - - এতে আমরা প্রত্যেক উৎকৃষ্ট কল্পতরু কত যে জন্নিয়েছি?
26-8 : নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়!
26-9 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-10 : আর স্মরণ করো! তোমার প্রভু মূসাকে ডেকে বললেন - - ''তুমি অত্যাচারী লোকদের কাছে যাও, - -
26-11 : ফিরআউনের লোকদের কাছে। তারা কি ধর্মভীরুতা অবলন্বন করবে না?’’
26-12 : তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু! আমি অবশ্যই আশংকা করি যে তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে।
26-13 : ''আমার বুক সংকুচিত হয়ে পড়েছে, আর আমার জিহ্বা বাক্‌পটু নয়, সেজন্য হারূনের প্রতিও ডাক পাঠাও।
26-14 : ''আর আমার বিরুদ্ধে এক অপরাধ তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে, সেজন্য আমি ভয় করি যে তারা আমাকে কাতল করবে।’’
26-15 : তিনি বললেন - - ''কখনো না! অতএব তোমরা দুজনেই আমাদের নিদর্শন সমূহ নিয়ে যাও, নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সঙ্গে রয়েছি শুনতে থাকা অবস্থায়।
26-16 : ''সুতরাং তোমরা ফিরআউনের নিকট যাও আর বলো - - 'আমরা আলবৎ বিশ্বজগতের প্রভুর রসূল - -
26-17 : ''যে ইসরাইলের বংশধরদের আমাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দাও’।’’
26-18 : সে বললে - - ''তোমাকে কি ছেলেবেলায় আমাদের কাছেই লালনপালন করি নি, এবং তুমি কি আমাদেরই মধ্যে তোমার জীবনের বহু বৎসর কাটাও নি?
26-19 : ''আর তোমার কাজ যা তুমি করেছ তা তো করেইছ, তথাপি তুমি অকৃতজ্ঞদের মধ্যেকার!’’
26-20 : তিনি বললেন - - ''আমি এটি করেছিলাম যখন আমি পথভ্রষ্টদের মধ্যে ছিলাম।
26-21 : ''এরপর যখন আমি তোমাদের ভয় করেছিলাম তখন আমি তোমাদের থেকে ফেরার হলাম, তারপর আমার প্রভু আমাকে জ্ঞান দান করেছেন, আর তিনি আমাকে বানিয়েছেন রসূলদের অন্যতম।
26-22 : ''আর এই তো হচ্ছে সেই অনুগ্রহ যা তুমি আমার কাছে উল্লেখ করছ যার জন্যে তুমি ইসরাইলের বংশধরদের দাস বানিয়েছ!’’
26-23 : ফিরআউন বললে - - ''বিশ্বজগতের প্রভু আবার কি হয়?’’
26-24 : তিনি বললেন - - ''মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এবং তাদের মধ্যে যা - কিছু আছে তার প্রভু, - - যদি তোমরা দৃঢ়প্রত্যয়িত হও।’’
26-25 : সে তার আশপাশে যারা আছে তাদের বললে - - ''তোমরা কি শুনছ না?’’
26-26 : তিনি বললেন - - ''তোমাদের প্রভু এবং পূর্বকালের তোমাদের পিতৃপুরুষদেরও প্রভু।’’
26-27 : সে বললে - - ''তোমাদের রসূলটি যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে সে তো বদ্ধ পাগল।’’
26-28 : তিনি বললেন - - ''তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের এবং এ দুইয়ের মধ্যে যা আছে তারও প্রভু, যদি তোমরা বুঝতে পারতে।’’
26-29 : সে বললে - - ''তুমি যদি আমাকে ছাড়া অন্য উপাস্য গ্রহণ কর তবে আমি আলবৎ তোমাকে কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত করব।’’
26-30 : তিনি বললেন - - ''কী! আমি তোমার কাছে সুস্পষ্ট কিছু আনলেও?’’
26-31 : সে বললে - - ''তবে তা নিয়ে এস যদি তুমি সত্যবাদীদের একজন হও।’’
26-32 : সুতরাং তিনি তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলেন, তখন আশ্চর্য! এটি এক স্পষ্ট সাপ হয়ে গেল।
26-33 : আর তিনি তাঁর হাত বের করেলন, তখন দেখো! দর্শকদের কাছে তা সাদা হয়ে গেল।
26-34 : সে তার আশপাশের প্রধানদের বললে - - ''এ তো নিশ্চয়ই এক ওস্তাদ জাদুকর, - -
26-35 : ''সে চাইছে তার জাদুর দ্বারা তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের বের করে দিতে, কাজেই কী তোমরা উপদেশ দাও?’’
26-36 : তারা বললে - - ''তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দাও, আর শহরে শহরে সংগ্রাহকদের পাঠাও, - -
26-37 : ''যেন তারা প্রত্যেক জ্ঞানী জাদুকরদের তোমার কাছে নিয়ে আছে।’’
26-38 : সুতরাং জাদুকরদের একত্র করা হ’ল নির্দিষ্ট স্থানে বিজ্ঞাপিত দিনে,
26-39 : আর লোকদের বলা হ’ল - - ''তোমরা কি জমায়েৎ হচ্ছ, - -
26-40 : ''যেন আমরা জাদুকরদের অনুগমন করতে পারি যদি তারা নিজেরা বিজয়ী হয়?’’
26-41 : তারপর যখন জদুকররা এল তারা ফিরআউনকে বললে - - ''আমাদের জন্য কি বিশেষ পুরস্কার থাকবে যদি আমরা খোদ বিজয়ী হই?’’
26-42 : সে বললে - - ''হাঁ, আর সেক্ষেত্রে তোমরা নিশ্চয়ই অন্তরঙ্গ হবে।’’
26-43 : মূসা তাদের বললেন - - ''ছোড়ো যা তোমরা ছুড়ঁতে যাচ্ছ।’’
26-44 : সুতরাং তাদের দড়িদড়া ও তাদের লাঠি - লগুড় তারা ছুড়ঁলো এবং বললে - - ''ফিরআউনের প্রভাবে আমরা তো নিজেরাই বিজয়ী হব।’’
26-45 : তারপর মূসা তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলেন, তখন দেখো! এটি গিলে ফেলল যা তারা বুনেছিল।
26-46 : তখন জাদুকররা লুটিয়ে পড়ল সিজদাবনত21 হয়ে,
26-47 : তারা বললে, ''আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজগতের প্রভুর প্রতি, - -
26-48 : ''যিনি মূসা ও হারুনেরও প্রভু।’’
26-49 : সে বললে - - ''তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই? সে - ই নিশ্চয় তোমাদের গুরু যে তোমাদের জাদুবিদ্যা শিখিয়েছে। সুতরাং শীঘ্রই তোমরা টের পাবে। আমি নিশ্চয় তোমাদের হাত ও তোমাদের পা আড়াআড়ি - ভাবে কেটে ফেলবই, আর তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব।’’
26-50 : তারা বললে - - ''কোনো ক্ষতি নেই, নিঃসন্দেহ আমরা আমাদের প্রভুর কাছে প্রত্যাবর্তনশীল।
26-51 : ''আমরা নিশ্চয়ই আশা করি যে আমাদের প্রভু আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেবেন, যেহেতু আমরা মুমিনদের মধ্যে অগ্রণী।’’
26-52 : আর আমরা মূসাকে প্রত্যাদেশ দিয়েছিলাম এই বলে - - ''আমার বান্দাদের নিয়ে রাতের মধ্যে রওয়ানা হয়ে যাও, তোমাদের অবশ্য পশ্চাদ্ধাবন করা হবে।’’
26-53 : তখন ফিরআউন শহরে - নগরে সংগ্রাহকদের পাঠাল - -
26-54 : ''নিঃসন্দেহ তারা একটি ছোটখাট দল,
26-55 : ''আর নিঃসন্দেহ আমাদের জন্য তারা তো ক্রোধ উদ্রেককারী,
26-56 : ''আর আমরা তো নিশ্চয় সজাগ - সশস্ত্র জনতা।’’
26-57 : কাজেই আমরা তাদের বের ক’রে আনলাম বাগানসমূহ ও ঝরনারাজি থেকে,
26-58 : আর ধনভান্ডার ও জমকালো বাড়িঘর থেকে, - -
26-59 : এইভাবেই। আর এইগুলো আমরা ইসরাইলের বংশধরদের উত্তরাধিকার করতে দিয়েছিলাম।
26-60 : তারপর তারা এদের পশ্চাদ্ধাবন করেছিল সূর্যোদয়কালে।
26-61 : অতঃপর যখন দুই দল পরস্পরকে দেখল তখন মূসার সঙ্গীরা বললে - - ''আমরা তো নিঃসন্দেহ ধরা পড়ে গেলাম।’’
26-62 : তিনি বললেন - - ''নিশ্চয়ই না, আমার সঙ্গে আলবৎ আমার প্রভু রয়েছেন, তিনি আমাকে অচিরেই পথ দেখাবেন।’’
26-63 : তখন আমরা মূসার নিকট প্রত্যাদেশ দিলাম এই বলে - - ''তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত কর।’’ ফলে এটি বিভক্ত হয়ে গেল, সুতরাং প্রত্যেক দল এক - একটি বিরাট পাহাড়ের মতো হয়েছিল।
26-64 : আর অন্যদেরকেও আমরা নিয়ে এলাম সেই অঞ্চলে।
26-65 : আর মূসাকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল সে - সবাইকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম।
26-66 : তারপর অন্যদেরকে আমরা ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।
26-67 : নিঃসন্দেহ এতে তো একটি নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
26-68 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-69 : আর তুমি তাদের কাছে ইব্রাহীমের কাহিনী বর্ণনা করো।
26-70 : স্মরণ করো! তিনি তাঁর পিতৃপুরুষকে ও তাঁর স্বজাতিকে বললেন - - ''তোমরা কিসের উপাসনা কর?’’
26-71 : তারা বললে - - ''আমরা প্রতিমাদের পূজা করি, আর আমরা তাদের আরাধনায় নিষ্ঠাবান থাকব।’’
26-72 : তিনি বললেন, ''তারা কি তোমাদের শোনে যখন তোমরা ডাকো?
26-73 : ''অথবা তারা কি তোমাদের উপকার করতে পারে কিংবা অপকার করতে পারে?’’
26-74 : তারা বললে - - ''না, আমাদের পিতৃপুরুষদের আমরা দেখতে পেয়েছি এইভাবে তারা করছে ।’’
26-75 : তিনি বললেন - - ''তোমরা কি তবে ভেবে দেখেছ তোমরা কিসের উপাসনা করছ, - -
26-76 : ''তোমরা ও তোমাদের পূর্বগামী পিতৃপুরুষরা?
26-77 : ''অতএব তারা আলবৎ আমার শত্রু, কিন্ত ভূ - বিশ্বের প্রভু নন,
26-78 : ''যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আমাকে পথ দেখিয়েছেন,
26-79 : ''আর যিনি আমাকে আহার করান এবং পান করতে দেন,
26-80 : ''আর যখন আমি রোগে ভোগি তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য করেন,
26-81 : ''আর যিনি, আমার মৃত্যু ঘটাবেন তারপরে আমাকে পুনর্জীবন দেবেন,
26-82 : ''আর যিনি, আমি আশা করি, বিচারের দিনে আমার ভুলভ্রান্তিগুলো আমার জন্য ক্ষমা করে দেবেন।
26-83 : ''আমার প্রভু! আমাকে জ্ঞান দান করো, আর আমাকে সৎকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত করো।
26-84 : ''আর আমার জন্য পরবর্তীদের মধ্যে সদালাপন সৃষ্টি করো।
26-85 : ''আর আমাকে আনন্দময় উদ্যানের ওয়ারিশানের অন্তর্ভুক্ত করো।
26-86 : ''আর আমার পিতৃপুরুষকে পরিত্রাণ করো, কেননা সে তো পথভ্রান্তদের মধ্যেকার হয়ে গেছে।
26-87 : ''আর আমাকে লাঞ্ছিত করো না তখন যেইদিন তাদের পুরুত্থিত করা হবে, - -
26-88 : ''যেদিন ধনসম্পদে কোনো কাজ দেবে না, সন্তানাদিতেও নয়,
26-89 : ''শুধু সে ব্যতীত যে নির্মল - নিস্পাপ অন্তর নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে আসবে।’’
26-90 : আর স্বর্গোদ্যানকে ধর্মভীরুদের জন্য সন্নিকটে আনা হবে,
26-91 : আর দুযখকে খোলে দেওয়া হবে পথভ্রষ্টদের জন্য।
26-92 : আর তাদের বলা হবে - - ''কোথায় তারা যাদের তোমরা উপাসনা করতে - -
26-93 : ''আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে? তারা কি তোমাদের সাহায্য করছে, না তারা নিজেদেরই সাহায্য করতে পারছে?’’
26-94 : সুতরাং তাদের এর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে - - তাদের এবং পথভ্রান্তদের,
26-95 : আর ইবলীসের দলবল সকলকেও।
26-96 : তারা সেখানে তর্ক - বিতর্ক করতে করতে বলবে - -
26-97 : ''আল্লাহ্‌র দিব্য, আমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিলাম, - -
26-98 : ''যখন আমরা বিশ্বজগতের প্রভুর সঙ্গে তোমাদের এক - সমান গণ্য করেছিলাম।
26-99 : ''আর অপরাধীরা ছাড়া অন্য কেউ আমাদের বিপথে নেয় নি।
26-100 : ''সেজন্যে আমাদের জন্য সুপারিশকারীদের কেউ নেই,
26-101 : ''আর কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই।
26-102 : ''হায়! আমাদের জন্য যদি আকেরবার উপায় থাকত তাহলে আমরা মুমিনদের মধ্যেকার হতাম।’’
26-103 : নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
26-104 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-105 : নূহের স্বজাতি রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-106 : দেখো! তাদের ভাই নূহ তাদের বলেছিলেন - - ''তোমরা কি ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করবে না?
26-107 : ''আমি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল,
26-108 : ''অতএব তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় - ভক্তি কর ও আমাকে মেনে চল।
26-109 : ''আর আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না, আমার মজুরি তো বিশ্বজগতের প্রভুর কাছে ছাড়া অন্যত্র নয়।
26-110 : ''অতএব তোমরা আল্লাহ্‌কে ভক্তি - শ্রদ্ধা কর ও আমার আজ্ঞাপালন কর।’’
26-111 : তারা বললে - - ''আমরা কি তোমার প্রতি ঈমান আনব যখন তোমাকে অনুসরণ করছে ইতরগোষ্ঠী?’’
26-112 : তিনি বললেন - - ''তারা কী করত সে সন্বন্ধে আর আমার জ্ঞান থাকবার নয়।
26-113 : ''তাদের হিসাবপত্র আমার প্রভুর কাছে ছাড়া অন্যত্র নয়, যদি তোমরা বুঝতে!
26-114 : ''আর আমি তো মুমিনদের তাড়িয়ে দেবার পাত্র নই।
26-115 : ''আমি একজন স্পষ্ট সতর্ককারী ভিন্ন নই।’’
26-116 : তারা বললে - - ''হে নূহ! তুমি যদি না থামো তাহলে তোমাকে অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে - নিহতদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’’
26-117 : তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু! আমার স্বজাতি আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
26-118 : ''অতএব আমার মধ্যে ও তাদের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত এনে মীমাংসা করে দাও, আর আমাকে ও আমার সাথে মুমিনদের যারা রয়েছে তাদের উদ্ধার করে দাও।’’
26-119 : সুতরাং আমরা তাঁকে ও তাঁর সাথে যারা ছিল তাদের উদ্ধার করলাম বোঝাই করা জাহাজে।
26-120 : তারপর আমরা ডুবিয়ে দিলাম পরবর্তী অবশিষ্টদের।
26-121 : নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
26-122 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-123 : আর 'আদ জাতি রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-124 : দেখো, তাদের ভাই হূদ তাদের বলেছিলেন - - ''তোমরা কি ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করবে না?
26-125 : ''আমি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল,
26-126 : ''অতএব তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর ও আমাকে মেনে চল।
26-127 : ''আর আমি এ - জন্য তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না, আমার নজুরি তো ভূ - বিশ্বের প্রভুর কাছে ছাড়া অন্যত্র নয়।
26-128 : ''তোমরা কি প্রত্যেক পাহাড়ে অযথা স্তম্ভ নির্মাণ করছ,
26-129 : ''আর দুর্গ তৈরি করছ যেন তোমরা চিরস্থায়ী হবে?’’
26-130 : ''আর যখন তোমরা পাকড়াও কর তখন জবরদস্তভাবে পাকড়াও করে থাক।
26-131 : ''সুতরাং তোমরা আল্লাহ্‌কে ভক্তিশ্রদ্ধা কর ও আমার আজ্ঞাপালন কর।
26-132 : ''আর ভয় - ভক্তি কর তাঁকে যিনি তোমাদের মদদ করেছেন যা তোমরা শিখেছ তা দিয়ে, - -
26-133 : ''আর তিনি তোমাদের সাহায্য করেছেন গবাদি - পশু ও সন্তান - সন্ততি দিয়ে,
26-134 : ''আর বাগানসমূহ ও ফোয়ারাগুলো দিয়ে।
26-135 : ''নিঃসন্দেহ আমি আশংকা করছি তোমাদের উপরে এক মহাদিনের শাস্তির।’’
26-136 : তারা বললে - - ''তুমি উপদেশ দাও অথবা উপদেশদাতাদের মধ্যে তুমি নাই - বা হও আমাদের কাছে সবই সমান।
26-137 : ''এ তো সেকেলে আচরণ ছাড়া কিছুই নয়,
26-138 : ''আর আমরা শাস্তি পাবার নই।’’
26-139 : কাজেই তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করল, সুতরাং আমরা তাদের ধ্বংস করেছিলাম। নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
26-140 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-141 : আর ছামূদ জাতি রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-142 : দেখো, তাদের ভাই সালিহ্ তাদের বলেছিলেন - - ''তোমরা কি ধর্মভীরুতা অবলন্বন করবে না?
26-143 : ''আমি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল,
26-144 : ''অতএব তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় - ভক্তি কর ও আমাকে মেনে চল!
26-145 : ''আর আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না, আমার মজুরি তো বিশ্বজগতের প্রভুর কাছে ছাড়া অন্যত্র নয়।
26-146 : ''এখানে যা আছে তাতে কি তোমাদের নিরাপদে রেখে দেওয়া হবে, - -
26-147 : ''বাগানসমূহে ও ফোয়ারাগুলোয়,
26-148 : ''আর শস্যক্ষেত্রে ও খেজুর - বাগানে যার ছড়িগুলো ভারী?
26-149 : ''তোমরা তো পাহাড় খুদে বাড়িঘর তৈরি কর নিপুণভাবে।
26-150 : ''সুতরাং তোমরা আল্লাহ্‌কে ভক্তি - শ্রদ্ধা কর ও আমার আজ্ঞাপালন কর।
26-151 : ''আর সীমালংঘনকারীদের নির্দেশ মেনে চল না, - -
26-152 : ''যারা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে আর শান্তিস্থাপন করে না।’’
26-153 : তারা বললে - - ''তুমি তো নিঃসন্দেহ জাদুগ্রস্তদেরই একজন।
26-154 : ''তুমি আমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছু নও, অতএব কোনো এক নিদর্শন নিয়ে এস যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্যেকার হও।’’
26-155 : তিনি বললেন - - ''এই একটি উষ্টী, তার জন্য পানীয় থাকবে আর তোমাদের জন্যও পানীয় থাকবে নির্ধারিত সময়ে।
26-156 : ''আর তোমরা অনিষ্ট দিয়ে ওকে স্পর্শ করো না, পাছে এক ভয়ংকর দিনের শাস্তি তোমাদের পাকড়াও করে।’’
26-157 : কিন্ত তারা এটিকে হত্যা করলে, পরিণামে সকাল - সকালই তারা পরিতাপকারী হল।
26-158 : সেজন্য শাস্তি তাদের পাকড়াও করল। নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয় ।
26-159 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-160 : আর লূতের লোকদল রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-161 : দেখো! তাদের ভাই লূত তাদের বলেছিলেন - - ''তোমরা কি ধর্মভীরুতা অবলন্বন করবে না?
26-162 : ''আমি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল,
26-163 : ''অতএব তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয়ভক্তি কর ও আমাকে মেনে চল।
26-164 : ''আর আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না, আমার মজুরি তো বিশ্বজগতের প্রভুর কাছে ছাড়া অন্যত্র নয়।
26-165 : ''তোমরা কি মানুষজাতীর মধ্যে পুরুষদের কাছেই এসে থাক,
26-166 : ''আর পরিত্যাগ করছ তোমাদের স্ত্রীদের যাদের তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন? না, তোমরা তো সীমালংঘনকারী জাতি।’’
26-167 : তারা বললে - - ''হে লূত! তুমি যদি বিরত না হও তাহলে তুমি নিশ্চয়ই নির্বাসিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’
26-168 : তিনি বললেন - - ''আমি অবশ্যই তোমাদের আচরণকে ঘৃণাকারীদেরই একজন।
26-169 : ''আমার প্রভু! তারা যা করে তা থেকে আমাকে ও আমার পরিবার পরিজনকে উদ্ধার করো।’’
26-170 : সুতরাং আমরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে একই সঙ্গে উদ্ধার করলাম, - -
26-171 : এক বুড়ীকে ছাড়া, যে পেছনে - পড়ে - থাকাদের মধ্যে রয়েছিল।
26-172 : তারপর আমরা অন্যান্যদের বিধ্বংস করেছিলাম।
26-173 : আর তাদের উপরে আমরা বর্ষণ করেছিলাম এক বৃষ্টি, - - সুতরাং কত মন্দ এই বৃষ্টি সতককৃতদের জন্য।
26-174 : নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
26-175 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-176 : আইকার অধিবাসীরা রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
26-177 : দেখো, শোআইব তাদের বলেছিলেন - - ''তোমরা কি ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করবে না?
26-178 : ''আমি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসূল,
26-179 : ''অতএব তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয়ভক্তি কর ও আমাকে মেনে চল।
26-180 : ''আর আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না, আমার পারিশ্রমিক তো বিশ্বজগতের প্রভুর কাছে ছাড়া অন্যত্র নয়।
26-181 : ''মাপে পুরোমাত্রায় দেবে, আর তোমরা মাপে - কম - করা লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
26-182 : ''সঠিক পাল্লায় ওজন করো।
26-183 : ''আর লোকজনের ক্ষতিসাধন করো না তাদের বিষয়বস্তু সন্বন্ধে, আর দুনিয়াতে বিপর্যয় ঘটিয়ো না অনিষ্টাচরণ ক’রে।
26-184 : ''আর ভয় - ভক্তি করো তাঁকে যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং পূর্ববর্তী লোকদেরও।’’
26-185 : তারা বললে - - ''তুমি তো আলবৎ জাদুগ্রস্তদের মধ্যেকার,’’
26-186 : ''আর তুমি আমাদের ন্যায় একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও, আর আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদীদের একজন বলেই তো গণনা করি।
26-187 : ''অতএব আকাশের একটি টুকরো আমাদের উপরে ফেলে দাও, যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্যেকার হও।’’
26-188 : তিনি বললেন - - ''আমার প্রভু ভাল জানেন কী তোমরা কর।’’
26-189 : কিন্ত তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করল, সেজন্যে এক অন্ধকার দিনের শাস্তি তাদের পাকড়াও করল। নিঃসন্দেহ এটি ছিল এক ভীষণ দিনে শাস্তি।
26-190 : নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে, কিন্ত তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।
26-191 : আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু, - - তিনিই তো মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতা।
26-192 : আর নিঃসন্দেহ এটি নিশ্চয়ই বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে এক অবতারণ।
26-193 : রুহুল আমীন এটি নিয়ে অবতরণ করেছেন - -
26-194 : তোমার হৃদয়ের উপরে, যেন তুমি সতর্ককারীদের অন্যতম হতে পার, - -
26-195 : সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।
26-196 : আর নিঃসন্দেহ এটি পূর্ববর্তীদের ধর্মগ্রন্থে রয়েছে ।
26-197 : একি তাদের জন্য একটি নিদর্শন নয় যে ইসরাইলের বংশধরদের পন্ডিতগণ এটি জানে?
26-198 : আর আমরা যদি এটি অবতারণ করতাম কোনো ভিন্ন দেশীয়ের কাছে,
26-199 : আর সে এটি তাদের কাছে পাঠ করত, তাহলে তারা তাতে বিশ্বাসভাজন হতো না।
26-200 : এইভাবেই আমরা এটিকে প্রবেশ করিয়েছি অপরাধীদের অন্তরে।
26-201 : তারা এতে বিশ্বাস করবে না যে পর্যন্ত না তারা মর্মন্তুদ শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
26-202 : সুতরাং এ তাদের কাছে আসবে আকস্মিকভাবে, আর তারা টের পাবে না।
26-203 : তখন তারা বলবে - - ''আমরা কি অবকাশ প্রাপ্ত হব?’’
26-204 : কী, তারা কি এখনও আমাদের শাস্তি সন্বন্ধে তাড়াতাড়ি করতে চায়?
26-205 : তুমি কি তবে লক্ষ্য করেছ - - যদি আমরা তাদের বহু বছর ভোগ - বিলাস করতে দিই।
26-206 : তারপর তাদের কাছে এসে পড়ে যা তাদের ওয়াদা করা হয়েছিল - -
26-207 : তবু যা তাদের উপভোগ করতে দেওয়া হয়েছিল তা তাদের কোনো কাজে আসবে না?
26-208 : আর আমরা কোনো জনপদ ধ্বংস করি নি যার সতর্ককারী ছিল না।
26-209 : স্মারকগ্রন্থ, আর আমরা কখনও অন্যায়কারী নই।
26-210 : আর শয়তানরা এ নিয়ে অবতরণ করে নি,
26-211 : আর তাদের পক্ষে এ সমীচীন নয়, আর তারা সামর্থ্যও রাখে না।
26-212 : নিঃসন্দেহ শুনবার ক্ষেত্রে তারা তো অপারগ।
26-213 : সুতরাং তুমি আল্লাহ্‌র সাথে অন্য উপাস্যকে ডেকো না, পাছে তুমি শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যেকার হয়ে যাও।
26-214 : আর তোমার নিকটতম আ‌ত্মীয়দের সাবধান করে দাও,
26-215 : আর তোমার ডানা আনত করো মুমিনদের যারা তোমাকে অনুসরণ করে তাদের প্রতি।
26-216 : কিন্ত তারা যদি তোমার অবাধ্যতা করে তবে বলো - - ''আমি আলবৎ দায়মুক্ত তোমরা যা কর সে সন্বন্ধে।’’
26-217 : আর তুমি নির্ভর কর মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতার উপরে, - -
26-218 : যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি দাঁড়াও,
26-219 : এবং সিজদাকারীদের সঙ্গে তোমার উঠা - বসা করতে।
26-220 : নিঃসন্দেহ তিনি - - তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
26-221 : আমি কি তোমাদের জানাব কাদের উপরে শয়তানরা অবতরণ করে?
26-222 : তারা অবতরণ করে প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর উপরে,
26-223 : তারা কান পাতে, আর তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।
26-224 : আর কবিগণ, - - তাদের অনুসরণ করে ভ্রান্তপথগামীরা।
26-225 : তুমি কি দেখ না যে তারা নিঃসন্দেহ প্রত্যেক উপত্যকায় লক্ষ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়,
26-226 : আর তারা নিশ্চয়ই তাই বলে যা তারা করে না? - -
26-227 : তবে তারা ব্যতীত যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, এবং আল্লাহ্‌কে খুব ক’রে স্মরণ করে, আর অত্যাচারিত হবার পরে প্রতিরক্ষা করে। আর যারা অন্যায় করে তারা অচিরেই জানতে পারবে কোন বিপর্যয়ের মধ্যে তারা প্রত্যাবর্তন করছে।