39-1 : এ গ্রন্থের অবতারণ আল্লাহ্র কাছে থেকে, মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী। |
39-2 : নিঃসন্দেহ আমরা তোমার কাছে গ্রন্থখানা অবতারণ করেছি সত্যের সাথে, কাজেই আল্লাহ্র এবাদত করো তাঁর প্রতি ধর্মে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে। |
39-3 : খাঁটি ধর্ম কি আল্লাহ্রই জন্য নয়? আর যারা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে - - ''আমরা তাদের উপাসনা করি না শুধু এজন্য ছাড়া যে তারা আমাদের আল্লাহ্র নিকটবর্তী অবস্থায় এনে দেবে।’’ নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তাদের মধ্যে বিচার করবেন সেই বিষয়ে যাতে তারা মতভেদ করছিল। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না যে খোদ মিথ্যাবাদী অবিশ্বাসী। |
39-4 : আল্লাহ্ যদি কোনো সন্তান গ্রহণ করতে চাইতেন তাহলে তিনি যাদের সৃষ্টি করেছেন তাদের থেকে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন তাকেই তো তিনি পছন্দ করতে পারতেন। সকল মহিমা তাঁরই। তিনিই আল্লাহ্, - - একক, সর্ববিজয়ী। |
39-5 : তিনিই মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সত্যের সাথে। তিনি রাতকে দিয়ে দিনের উপরে ছাউনি বানান আর দিনকে ছাউনি বানান রাতের উপরে, এবং সূর্য ও চন্দ্রকে তিনি বশীভূত করেছেন, - - প্রত্যেকেই নির্ধারিত গতিপথে ধাবিত হচ্ছে। তিনিই কি মহাশক্তিশালী পরম ক্ষমাশীল নন? |
39-6 : তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একই সত্ত্বা থেকে, তারপর তা থেকে তিনি বানিয়েছেন তার সঙ্গিনী। আর তিনি তোমাদের জন্য পাঠিয়েছেন গবাদি - পশুর মধ্যে আটটি জোড়ায় জোড়ায়। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মায়েদের পেট থেকে - - এক সৃষ্টির পরে অন্য সৃষ্টির মাধ্যমে, - - তিন স্তর অন্ধকারে। ইনিই হচ্ছেন আল্লাহ্, তোমাদের প্রভু, তাঁরই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, সুতরাং কোথা থেকে তোমরা ফিরে যাচ্ছ? |
39-7 : তোমরা যদি অকৃতজ্ঞতা দেখাও, তবে আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পর্কে অনন্যনির্ভর। কিন্তু তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন না। আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তবে তাতে তিনি তোমাদের প্রতি প্রসন্ন হবেন। আর কোনো ভারবাহী অন্যের বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের প্রভুর নিকটেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন, তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করে যাচ্ছিলে। নিঃসন্দেহ বুকের ভেতরে যা আছে সে - সন্বন্ধে তিনি সম্যক অবগত। |
39-8 : আর যখন মানুষকে দুঃখকষ্ট স্পর্শ করে সে তখন তার প্রভুকে ডাকে তাঁর প্রতি নিষ্ঠাবান হয়ে, তারপর যখন তিনি তাকে তাঁর থেকে অনুগ্রহ প্রদান করেন, সে তখন ভুলে যায় যার জন্য সে ইতিপূর্বে তাঁকে ডেকেছিল, আর সে আল্লাহ্র সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করায় যেন সে তাঁর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করতে পারে। বলো - - ''তোমার অকৃতজ্ঞতার মাঝে কিছুকাল সুখভোগ করে নাও, তুমি তো আগুনের বাসিন্দাদের দলভুক্ত।’’ |
39-9 : সে কি যে রাতের প্রহরগুলোতে সিজদাবনত21 হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য করে, পরকাল সন্বন্ধে সাবধানতা অবলন্বন করে এবং তার প্রভুর অনুগ্রহ কামনা করে? বলো - - ''যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি একসমান? নিঃসন্দেহ বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শুধু মনোযোগ দেয়। |
39-10 : তুমি বলে দাও - - ''হে আমার বান্দারা যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের প্রভুকে ভয়ভক্তি করো। যারা এই দুনিয়াতে ভালো কাজ করে তাদের জন্য ভাল রয়েছে। আর আল্লাহ্র পৃথিবী সুপ্রসারিত। নিঃসন্দেহ অধ্যবসায়ীদের তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে হিসাবপত্র ব্যতিরেকে।’’ |
39-11 : বলো - - ''নিঃসন্দেহ আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন আল্লাহ্র উপাসনা করি তাঁর প্রতি ধর্মকে পূতপবিত্র করে, |
39-12 : ''আর আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন আমি আত্ম - সমর্পণকারীদের অগ্রণী হতে পারি।’’ |
39-13 : তুমি বলো - - ''আমি আলবৎ ভয় করি, যদি আমি আমার প্রভুর অবাধ্যাচরণ করি তবে এক কঠিন দিনের শাস্তি।’’ |
39-14 : বলো - - ''আমি আল্লাহ্রই আরাধনা করি তাঁর প্রতি আমার ধর্ম বিশুদ্ধ করে। |
39-15 : ''অতএব তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যাকে ইচ্ছা কর, তার উপাসনা কর।’’ বলো - - ''নিঃসন্দেহ ক্ষতিগ্রস্ত তারা যারা কিয়ামতের দিনে ক্ষতিসাধন করেছে তাদের নিজেদের ও তাদের পরিজনদের। এটিই কি খোদ স্পষ্ট ক্ষতি নয়?” |
39-16 : তাদের জন্য তাদের উপর থেকে থাকবে আগুনের আচ্ছাদনী আর তাদের নীচে থেকে থাকবে এক আবরণী। এইভাবে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের এর দ্বারা ভয় দেখান, অতএব আমাকে ভয়ভক্তি করো, হে আমার বান্দারা! |
39-17 : আর যারা তাগুতকে এড়িয়ে চলে তাদের পূজাঅর্চনা থেকে, আর আল্লাহ্র দিকে অনুগত হয় তাদেরই জন্য রয়েছে সুসংবাদ, সেজন্য সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদের - - |
39-18 : যারা বক্তব্য শোনে এবং তার ভালগুলোর অনুসরণ করে - - এরাই তারা যাদের আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, আর এরাই স্বয়ং বোধশক্তিসম্পন্ন। |
39-19 : তবে কি যার উপরে শাস্তির রায় সাব্যস্ত হয়েছে? তুমি কি তবে তাকে উদ্ধার করতে পার যে আগুনের মধ্যে রয়েছে? |
39-20 : পক্ষান্তরে যারা তাদের প্রভুকে ভয় - ভক্তি করে তাদের জন্য রয়েছে উঁচু আবাসস্থল, তাদের উপরে উঁচু আবাসস্থল সুপ্রতিষ্ঠিত, তাদের নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি। আল্লাহ্র ওয়াদা, আল্লাহ্ ওয়াদার খেলাপ করেন না। |
39-21 : তুমি কি দেখ না যে আল্লাহ্ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর তাকে মাটিতে স্রোতরূপে প্রবাহিত করেন, তারপর তার দ্বারা তিনি উৎপাদন করেন গাছপালা যাদের বর্ণ বিবিধ ধরনের, তারপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে হলদে হয়ে যেতে দেখতে পাও, তারপর তিনি তাকে খড় কুটো বানিয়ে ফেলেন। নিঃসন্দেহ এতে তো উপদেশ রয়েছে বোধশক্তি - সম্পন্নদের জন্য। |
39-22 : যার বুক আল্লাহ্ ইসলামের প্রতি প্রশস্ত করেছেন, ফলে সে তার প্রভুর কাছ থেকে এক আলোকে রয়েছে, সে কি - - ? সুতরাং ধিক্ তাদের জন্য যাদের হৃদয় আল্লাহ্র স্মরণে সুকঠিন! এরাই রয়েছে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে। |
39-23 : আল্লাহ্ অবতারণ করেছেন শ্রেষ্ঠ বিবৃতি - - একখানা গ্রন্থ, সুবিন্যস্ত, পুনরাবৃত্তিময়, এতে যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে তাদের চামড়া শিউরে ওঠে, তারপর তাদের ছাল ও তাদের দিল নরম হয় আল্লাহ্র স্মরণে। এটিই আল্লাহ্র পথ - নির্দেশ, এর দ্বারা তিনি পথ দেখিয়ে থাকেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন, তার জন্য তবে হেদায়তকারীদের কেউ নেই। |
39-24 : যে তার মুখ দিয়ে ঠেকাতে চাইবে কিয়ামতের দিনের কঠোর শাস্তি সে কি - - ? আর অন্যায়কারীদের বলা হবে - - ''তোমরা যা অর্জন করেছিলে তা আস্বাদন করো।’’ |
39-25 : তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও প্রত্যাখ্যান করেছিল, সেজন্য শাস্তি তাদের কাছে এসে পড়েছিল এমন দিক থেকে যা তারা বুঝতে পারে নি। |
39-26 : ফলে আল্লাহ্ তাদের এই দুনিয়ার জীবনেই লাঞ্ছনা আস্বাদ করিয়েছিলেন, আর পরকালের শাস্তি তো আরো বিরাট। তারা যদি জানতো! |
39-27 : আর আমরা অবশ্যই এই কুরআনে মানুষের জন্য হরেক রকমের দৃষ্টান্ত ছোঁড়ে মেরেছি, যেন তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে, - - |
39-28 : আরবী কুরআন, কোনো জটিলতা বিহীন, যেন তারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করতে পারে। |
39-29 : আল্লাহ্ একটি দৃষ্টান্ত ছোড়ে মারছেন - - একজন লোক, তার সঙ্গে রয়েছে অনেক অংশী - দেবতা, পরস্পরের সঙ্গে বিবাদ - রত, আর একজন লোক, একজনের সঙ্গেই অনুরক্ত। এদের দু’জন কি অবস্থার ক্ষেত্রে একসমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, কিন্তু তাদের অনেকেই জানে না। |
39-30 : তুমি তো নিশ্চয় মৃত্যুবরণ করবে, আর তারাও নিশ্চয়ই মৃত্যুমুখে পড়বে। |
39-31 : তারপর কিয়ামতের দিনে নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভুর সামনে তোমরা একেঅন্যে বাকবিতন্ডা করবে। |
39-32 : তবে তার চাইতে কে বেশী অন্যায়কারী যে আল্লাহ্র বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে এবং সত্য প্রত্যাখ্যান করে যখন তা তার কাছে আসে? জাহান্নামে কি অবিশ্বাসীদের জন্য একটি আবাসস্থল নেই? |
39-33 : আর যারা সত্য নিয়ে এসেছে ও একে সত্য বলে স্বীকার করেছে এরাই খোদ মুত্তাকী। |
39-34 : তাদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে তারা যা চায় তাই। এটিই হচ্ছে সৎকর্মীদের পুরস্কার, - - |
39-35 : কাজেই তারা যা করেছিল তার মন্দতম আল্লাহ্ তাদের থেকে মুছে দেবেন, আর তারা যা করে চলেছে তার জন্য তিনি তাদের পারিশ্রমিক শ্রেষ্ঠতমভাবে তাদের প্রদান করবেন। |
39-36 : আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দাদের জন্য যথেষ্ট নন? তথাপি তারা তোমাকে ভয় দেখাতে চায় তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদের দ্বারা। আর যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন তার জন্য তবে হেদায়তকারী কেউ নেই। |
39-37 : আর আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান তার জন্য তবে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই। আল্লাহ্ কি মহাশক্তিশালী, শেষ - পরিণতির অধিকর্তা নন? |
39-38 : আর তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস কর 'কে মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন,’ তারা নিশ্চয়ই বলবে 'আল্লাহ্’। তুমি বলো - - ''তোমরা কি তবে ভেবে দেখেছ - - তোমরা আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে যাদের উপাসনা করছ, যদি আল্লাহ্ আমার জন্য দুঃখকষ্ট চেয়ে থাকেন তবে কি তারা তাঁর কষ্ট দূর করতে পারবে, অথবা তিনি যদি আমার জন্য করুণা চেয়ে থাকেন তবে কি তারা তাঁর অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে? বলো - - ''আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট। তাঁরই উপরে নির্ভর করুক নির্ভরশীল সব।’’ |
39-39 : বলো - - ''হে আমার লোকদল! তোমাদের স্থানে কাজ করে যাও, আমিও নিঃসন্দেহ কাজ করে যাচ্ছি। সুতরাং শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে - - |
39-40 : ''কে সে যার কাছে আসছে শাস্তি যা তাকে লাঞ্ছিত করবে, আর কার উপরে বিধেয় হয়েছে স্থায়ী শাস্তি।’’ |
39-41 : নিঃসন্দেহ আমরা তোমার কাছে গ্রন্থখানা অবতারণ করেছি মানবজাতির জন্য সত্যের সাথে, সুতরাং যে - কেউ সৎপথ অবলন্বন করে সে তো তবে তার নিজের জন্যে, এবং যে কেউ ভ্রান্ত পথে চলে, সে তো বিভ্রান্ত হয় তার নিজেরই বিরুদ্ধে। আর তুমি তো তাদের উপরে কর্ণধার নও। |
39-42 : আল্লাহ্ আত্মাগুলো গ্রহণ করেন তাদের মৃত্যুর সময়ে, আর যারা মরে না তাদের ঘুমের মধ্যে, তারপর তিনি রেখে দেন তাদের ক্ষেত্রে যাদের উপরে মৃত্যু অবধারিত করেছেন, আর অন্যগুলো ফেরত পাঠান একটি নির্ধারিত কাল পর্যন্ত। নিঃসন্দেহ এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে। |
39-43 : অথবা তারা কি আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে সুপারিশকারীদের ধরেছে? তুমি বলো - - ''কি! যদিও তারা হচ্ছে এমন যে তারা কোনো - কিছুতেই কোনো ক্ষমতা রাখে না আর কোনো জ্ঞানবুদ্ধিও রাখে না?’’ |
39-44 : বলো - - ''সুপারিশ সর্বতোভাবে আল্লাহ্রই জন্যে। মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব তাঁরই, তারপর তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।’’ |
39-45 : আর যখন আল্লাহ্র, তাঁর একত্বের উল্লেখ করা হয় তখন, যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তাদের হৃদয় সংকূচিত হয়, পক্ষান্তরে যখন তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য যারা রয়েছে, তাদের উল্লেখ করা হয় তখন দেখো! তারা উল্লাস করে। |
39-46 : তুমি বলো - - ''হে আল্লাহ্! মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি - স্রষ্টা! অদৃশ্য ও প্রকাশ্যের পরিজ্ঞাতা! তোমার বান্দাদের মধ্যে তুমি বিচার করে দাও সেই বিষয়ে যাতে তারা মতবিরোধ করছিল।’’ |
39-47 : আর যারা অন্যায়াচরণ করছিল তাদের জন্য যদি পৃথিবীতে যা আছে সে - সবটাই থাকত এবং তার সঙ্গে এর সমান আরও, তারা এর দ্বারা পরিত্রাণ পেতে চাইত কিয়ামতের দিনের শাস্তির ভীষণতা থেকে। আর আল্লাহ্র কাছ থেকে এমন তাদের সামনে পরিস্ফুট হবে যা তারা কখনো হিসেব করে দেখে নি। |
39-48 : আর তারা যা অর্জন করেছিল তার মন্দ তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে, আর যা নিয়ে তারা বিদ্রূপ করত তা তাদের ঘিরে ফেলবে। |
39-49 : কিন্তু যখন কোনো দুঃখকষ্ট মানুষকে স্পর্শ করে তখন সে আমাদের ডাকে, তারপর যখন আমরা তাকে আমাদের থেকে অনুগ্রহ প্রদান করি, সে বলে - - ''আমাকে তো এ দেওয়া হয়েছে জ্ঞানের দরুন।’’ বস্তুতঃ এ এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না। |
39-50 : তাদের আগে যারা ছিল তারাও এটাই বলে থাকত, কিন্তু তারা যা অর্জন করেছিল তা তাদের কোনো কাজে আসে নি। |
39-51 : কাজেই তারা যা অর্জন করেছিল তার মন্দ তাদের পাকড়াও করল। আর এদের মধ্যে যারা অন্যায়াচরণ করছে তাদের উপরেও তারা যা অর্জন করেছে তার মন্দ অচিরেই আপতিত হবে, আর তারা এড়িয়ে যাবার পাত্র নয়। |
39-52 : তারা কি জানে না যে আল্লাহ্ রিযেক বাড়িয়ে দেন যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন এবং মেপে - জোখেও দেন। নিশ্চয় এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে ঈমান আনে এমন লোকদের জন্য। |
39-53 : তুমি বলে দাও - - ''হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের বিরুদ্ধে অমিতাচার করেছ! তোমরা আল্লাহ্র করুণা হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সমুদয় পাপ ক্ষমা করেও দেন। নিঃসন্দেহ তিনি নিজেই পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা। |
39-54 : ''আর তোমাদের প্রভুর দিকে ফেরো এবং তোমাদের উপরে শাস্তি আসার আগেভাগে তাঁর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করো, তখন আর তোমাদের সাহায্য করা হবে না। |
39-55 : ''আর তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে তোমাদের নিকট যা শ্রেষ্ঠ অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করো তোমাদের উপরে অতর্কিতভাবে শাস্তি এসে পড়ার আগেই, যখন তোমরা খেয়াল করছ না - - |
39-56 : ''পাছে কোনো সত্ত্বাকে বলতে হয় - - 'হায় আফসোস আমার জন্য যে আল্লাহ্র প্রতি কর্তব্যে আমি অবহেলা করছিলাম! আর আমি তো ছিলাম বিদ্রূপকারীদের দলের’, |
39-57 : 'অথবা তাকে বলতে হয় - - - 'আল্লাহ্ যদি আমাকে সৎপথ দেখাতেন তাহলে আমি নিশ্চয়ই ধর্মভীরুদের মধ্যেকার হতাম’, |
39-58 : ''অথবা বলতে হয় যখন সে শাস্তি প্রত্যক্ষ করে - - 'যদি আমার জন্য আরেকটা সুযোগ হতো তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম’।’’ |
39-59 : ''না, তোমার কাছে তো আমার বাণীসমূহ এসেই ছিল, কিন্তু তুমি সে - সব প্রত্যাখ্যান করেছিলে আর তুমি হামবড়াই করেছিলে, আর তুমি হয়েছিলে অবিশ্বাসীদের একজন।’’ |
39-60 : আর কিয়ামতের দিনে তুমি দেখতে পাবে তাদের যারা আল্লাহ্কে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাদের মুখমন্ডল কালিমাচ্ছন্ন। জাহান্নামে কি গর্বিতদের জন্য আবাসস্থল নেই? |
39-61 : আর যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে তাদের আল্লাহ্ উদ্ধার করবেন তাদের সাফল্যময় স্থানসমূহে, মন্দ তাদের স্পর্শ করবে না, আর তারা দুঃখও করবে না। |
39-62 : আল্লাহ্ সব - কিছুর স্রষ্টা, আর তিনি সব - কিছুর উপরে কর্ণধার। |
39-63 : মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিকাঠি তাঁরই নিকট। আর যারা আল্লাহ্র নির্দেশসমূহে অবিশ্বাস করে তারাই স্বয়ং ক্ষতিগ্রস্ত। |
39-64 : তুমি বলো - - ''তবে কি তোমরা আমাকে আদেশ করছ যে আমি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের উপাসনা করি, ওহে মূর্খজনেরা!’’ |
39-65 : আর তোমার কাছে ও তোমার আগে যারা ছিলেন তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে - - ''যদি তুমি শরিক কর তাহলে তোমার কাজকর্ম নিশ্চয়ই নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি নিশ্চয়ই হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যেকার।’’ |
39-66 : না, তুমি সতত আল্লাহ্রই উপাসনা করবে, আর কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত রইবে। |
39-67 : আর তারা আল্লাহ্কে সম্মান করে না তাঁর যথোচিত সম্মানের দ্বারা, অথচ সমস্ত পৃথিবীটাই তাঁর মুঠোয় থাকবে কিয়ামতের দিনে, আর মহাকাশমন্ডলীটা গুটিয়ে নেয়া হবে তাঁর ডান হাতে। সকল মহিমা তাঁরই আর তারা যেসব অংশী দাঁড় করায় তা থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। |
39-68 : আর শিঙায় ফুঁকা হবে, ফলে মহাকাশমন্ডলীতে যারা আছে ও পৃথিবীতে যারা রয়েছে তারা মূর্চ্ছা যাবে - - তারা ব্যতীত যাদের সন্বন্ধে আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন। তারপর তাতে পুনরায় ফুৎকার দেওয়া হবে, তখন দেখো! তারা উঠে দাঁড়াবে বিস্ফরিত নয়নে। |
39-69 : আর পৃথিবী উদ্ভাসিত হবে তার প্রভুর জ্যোতিতে, আর গ্রন্থ উপস্থাপিত করা হবে, আর নবীগণকে ও সাক্ষীগণকে নিয়ে আসা হবে, আর তাদের মধ্যে বিচার - মীমাংসা করা হবে সততার সঙ্গে, আর তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না। |
39-70 : আর প্রত্যেক সত্ত্বাকে সে যা করেছে তার পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে, আর তিনি ভাল জানেন তারা যা করে সে - সম্পর্কে। |
39-71 : আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে দলবদ্ধভাবে। যেতে যেতে যখন তারা তার কাছে আসবে তখন এর দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে আর তার রক্ষকরা তাদের বলবে - - ''তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্যে থেকে রসূলগণ আসেন নি যাঁরা তোমাদের কাছে বিবৃত করতেন তোমাদের প্রভুর বাণীসমূহ এবং তোমাদের সাবধান করে দিতেন তোমাদের এই দিনটির সাক্ষাৎ পাওয়া সন্বন্ধে?’’ তারা বলবে - - ''হ্যাঁ।’’ আর বস্তুতঃ অবিশ্বাসীদের উপর শাস্তিদানের রায় বাস্তবায়িত হয়েছে। |
39-72 : বলা হবে - - ''তোমরা জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে ঢুকে পড় সেখানে দীর্ঘকাল অবস্থানের জন্য। সুতরাং কত মন্দ গর্বিতদের এই অবস্থানস্থল!’’ |
39-73 : আর যারা তাদের প্রভুকে ভয়ভক্তি করে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে দলবদ্ধভাবে জান্নাতের দিকে। যেতে যেতে যখন তারা তার কাছে আসবে ও এর দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে তখন তার রক্ষীরা তাদের বলবে, ''সালাম তোমাদের উপরে! তোমরা পবিত্র - চরিত্র, সুতরাং তোমরা এতে চিরস্থায়ীভাবে প্রবেশ করো।’’ |
39-74 : আর তারা বলবে - - ''সকল প্রশংসা আল্লাহ্র যিনি তাঁর ওয়াদা আমাদের কাছে পরিপূর্ণ করেছেন, আর তিনি পৃথিবীটা আমাদের উত্তরাধিকার করতে দিয়েছেন, আমরা এই জান্নাতে বসবাস করব যেখানে আমরা চাইব।’’ সুতরাং কর্মীদের এই পারিশ্রমিক কত উত্তম! |
39-75 : আর তুমি দেখতে পাবে যে ফিরিশ্তারা আরশের চতুর্দিক ঘিরে রয়েছে, তাদের প্রভুর প্রশংসায় জপতপ করে চলেছে, আর তাদের মধ্যে বিচার - মীমাংসা করা হবে সততার সাথে, আর বলা হবে - - ''সকল প্রশংসা আল্লাহ্রই জন্য যিনি বিশ্বজগতের প্রভু।’’ |