40-1 : হা, মীম! |
40-2 : এই গ্রন্থের অবতারণ মহাশক্তিশালী, সর্বজ্ঞাতা আল্লাহ্র কাছ থেকে, |
40-3 : পাপ থেকে পরিত্রাণকারী ও তওবা কবুলকারী, প্রতিফলদানে কঠোর, উদারতার অধীশ্বর। তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, তাঁরই কাছে শেষ - আগমন। |
40-4 : আল্লাহ্র নির্দেশাবলী সন্বন্ধে কেউ বচসা করে না, কেবল তারা ছাড়া যারা অবিশ্বাস করে, সুতরাং শহরে - নগরে তাদের চলাফেরা যেন তোমাকে প্রতারিত না করে। |
40-5 : এদের আগে নূহের স্বজাতি প্রত্যাখ্যান করেছিল, আর তাদের পরের অন্যান্য দলও, আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ই তাদের রসূল সন্বন্ধে মতলব করেছিল তাঁকে ধরে আনতে, আর তারা তর্কাতর্কি করত মিথ্যার সাহায্যে যেন তার দ্বারা তারা সত্যকে পঙ্গু করে ফেলতে পারে, ফলে আমি তাদের পাকড়াও করলাম, সুতরাং কেমন ছিল আমার শাস্তিদান! |
40-6 : আর এভাবেই তোমার প্রভুর বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে যারা অবিশ্বাস করেছিল - - যে তারাই হচ্ছে আগুনের বাসিন্দা। |
40-7 : যারা আরশ বহন করে আর যারা এর চারপাশে রয়েছে তারা তাদের প্রভুর প্রশংসায় জপতপ করছে আর তাঁর প্রতি বিশ্বাস করছে, আর পরিত্রাণ প্রার্থনা করছে তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করেছে - - ''আমাদের প্রভু! তুমি সব - কিছুকে পরিবেষ্টন করে রয়েছ করুণার ও জ্ঞানের দ্বারা, কাজেই তুমি পরিত্রাণ করো তাদের যারা ফিরেছে ও তোমার পথ অনুসরণ করেছে, আর তাদের রক্ষা করো জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি থেকে। |
40-8 : ''আমাদের প্রভু! আর তাদের প্রবেশ করাও নন্দন - কাননে যা তুমি ওয়াদা করেছিলে তাদের জন্য, আর যারা সৎকর্ম করেছে - - তাদের বাপদাদাদের ও তাদের পতি - পত্নীদের ও তাদের সন্তান - সন্ততিদের মধ্যে থেকে। নিঃসন্দেহ তুমি নিজেই মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী। |
40-9 : ''আর তাদের রক্ষা করো মন্দ থেকে। আর সেইদিন যাকে তুমি মন্দ থেকে রক্ষা করবে তাকে তো তুমি আলবৎ করুণা করেছ। আর এইটিই খোদ মহাসাফল্য।’’ |
40-10 : নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের ঘোষণা করা হবে - - ''আল্লাহ্র বিরূপতা তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের বিরক্তির চেয়েও অনেক বেশী ছিল, কেননা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি তোমাদের আহ্বান করা হচ্ছিল অথচ তোমরা প্রত্যাখ্যান করছিলে!’’ |
40-11 : তারা বলবে - - ''আমাদের প্রভু! তুমি দুইবার আমাদের মৃত্যুমুখে ফেলেছ, আর তুমি আমাদের দুইবার জীবন দান করেছ, কাজেই আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি সুতরাং বেরুনোর কোনো পথ আছে কী?’’ |
40-12 : ''এটিই তোমাদের, কেননা যখন আল্লাহ্কে তাঁর একত্ব সন্বন্ধে ঘোষণা করা হতো তখন তোমরা অবিশ্বাস করতে, আর যদি তাঁর সঙ্গে অংশী দাঁড় করানো হতো তাহলে তোমরা বিশ্বাস করতে। বস্তুতঃ হুকুম আল্লাহ্র - - মহোচ্চ, মহামহিম। |
40-13 : তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের তাঁর নিদর্শনাবলী দেখিয়ে থাকেন এবং তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পাঠিয়ে থাকেন রিযেক। আর কেউ মনোনিবেশ করে না সে ব্যতীত যে ফেরে। |
40-14 : সুতরাং আল্লাহ্কেই আহ্বান করো তাঁর প্রতি ধর্মে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে, যদিও অবিশ্বাসীরা বিরূপ হয়। |
40-15 : তিনি স্তরে স্তরে উন্নয়ণকারী, আরশের অধিপতি। তিনি তাঁর আদেশক্রমে রূহ পাঠিয়ে থাকেন তাঁর বান্দাদের মধ্যের যার প্রতি তিনি ইচ্ছা করে থাকেন, যেন সে সতর্ক করতে পারে মহামিলনের দিন সম্পর্কে - - |
40-16 : যেদিন তারা বের হয়ে পড়বে, আল্লাহ্র সমক্ষে তাদের সন্বন্ধে কিছুই লুকোনো থাকবে না। ''আজকের দিনে কার রাজত্ব?’’ ''একক সার্বভৌম কর্তৃত্বশীল আল্লাহ্র।’’ |
40-17 : সেইদিন প্রত্যেক সত্ত্বাকে প্রতিদান দেওয়া হবে যা সে অর্জন করেছে তার দ্বারা। সেইদিন কোনো অবিচার হবে না। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হিসাব গ্রহণে তৎপর। |
40-18 : আর তুমি তাদের সাবধান করে দাও আসন্ন দিন সম্পর্কে যখন হৃৎপিন্ডগুলো দুঃখকষ্টে কন্ঠাগত হবে। অন্যায়াচারীদের জন্য কোনো বন্ধু থাকবে না, আর থাকবে না কোনো সুপারিশকারী শুনবার মতো। |
40-19 : তিনি জানেন চোখগুলোর চুপিসারে চাওয়া আর যা বুকগুলো লুকিয়ে রাখে। |
40-20 : আর আল্লাহ্ বিচার করেন সঠিকভাবে, কিন্ত তাঁকে বাদ দিয়ে যাদের তারা আহ্বান করে তারা কোনো কিছুরই সমাধান করতে পারে না। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ - - তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। |
40-21 : এরা কি দুনিয়াতে পরিভ্রমণ করে নি, করলে দেখত কেমন হয়েছিল তাদের পরিণাম যারা ছিল এদের পূর্ববর্তী? তারা তো ছিল বলবিক্রমে এদের চেয়েও প্রবল আর দুনিয়াদারির কৃতিত্বেও, কিন্ত আল্লাহ্ তাদের পাকড়াও করলেন তাদের অপরাধের জন্য, আর তাদের জন্য আল্লাহ্র থেকে কোনো রক্ষাকারী নেই। |
40-22 : এমনটাই! কেন না তাদের ক্ষেত্রে - - তাদের রসূলগণ তাদের কাছে এসেছিলেন সুস্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, কিন্ত তারা অবিশ্বাস করেছিল, কাজেই আল্লাহ্ তাদের পাকড়াও করলেন। নিঃসন্দেহ তিনি মহাশক্তিশালী, প্রতিফলদানে কঠোর। |
40-23 : আর আমরা নিশ্চয়ই মূসাকে পাঠিয়েছিলাম আমাদের নির্দেশাবলী ও স্পষ্ট কর্তৃত্ত্ব দিয়ে, |
40-24 : ফিরআউন ও হামান ও ক্কারূনের কাছে, কিন্ত তারা বলল - - ''একজন জাদুকর, মিথ্যাবাদী।’’ |
40-25 : তারপর যখন তিনি আমাদের তরফ থেকে সত্য নিয়ে তাদের কাছে এলেন তখন তারা বলল, ''তার সঙ্গে যারা বিশ্বাস করেছে তাদের ছেলেদের কোতল করো ও বাঁচতে দাও তাদের মেয়েদের।’’ বস্তুতঃ অবিশ্বাসীদের চক্তান্ত ব্যর্থ বৈ তো নয়। |
40-26 : আর ফিরআউন বলল - - ''আমাকে ছেড়ে দাও যাতে আমি মূসাকে বধ করতে পারি, আর সে তার প্রভুকে ডাকতে থাকুক, নিঃসন্দেহ আমি আশঙ্কা করছি যে সে তোমাদের ধর্মমত বদলে দেবে, অথবা সে দেশের মধ্যে বিপর্যয়ের প্রসার করবে। |
40-27 : আর মূসা বললেন - - ''আমি নিশ্চয়ই আমার প্রভুর ও তোমাদের প্রভুর আশ্রয় চাইছি প্রত্যেক অহংকারী থেকে যে হিসেব - নিকেশের দিনের প্রতি বিশ্বাস করে না।’’ |
40-28 : আর ফিরআউনের লোকদের থেকে একজন বিশ্বাসী ব্যক্তি যে তার ঈমান লুকিয়ে রেখেছিল, বলল - - ''তোমরা কি একজন লোককে হত্যা করবে যেহেতু তিনি বলেন, 'আমার প্রভু আল্লাহ্’, আর নিঃসন্দেহ তিনি তোমাদের প্রভুর কাছ থে কে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছেন? আর তিনি যদি মিথ্যাবাদী হতেন তাহলে তিনি তোমাদের যে - সবের ভয় দেখান তার কতকটা তোমাদের উপরে আপতিত হবে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না যে অমিতাচারী, প্রত্যাখ্যানকারী। |
40-29 : ''হে আমার স্বজাতি! তোমাদেরই আজ রাজত্ব চলছে, তোমরা দেশে সর্বপ্রধান, কিন্ত কে আমাদের সাহায্য করবে আল্লাহ্র দুর্যোগ থেকে যদি তা আমাদের উপরে এসে পড়ে?’’ ফিরআউন বলল - - ''আমি তোমাদের দেখাই না যা আমি না দেখি, আর আমি তোমাদের পরিচালিত করি না সঠিক পথে ছাড়া।’’ |
40-30 : আর যে বিশ্বাস করেছিল সে বলল - - ''হে আমার স্বজাতি! আমি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আশঙ্কা করছি যেমনটা ঘটেছিল সম্মিলিতগোষ্ঠীর দিনে, |
40-31 : ''যেমন ধরনে নূহ - এর ও 'আদ - এর ও ছামুদের সম্প্রদায়ের উপরে, আর যারা ছিল তাদের পরবর্তী। আর আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি কোনো জুলুম চান না। |
40-32 : ''আর হে আমার স্বজাতি! আমি নিঃসন্দেহ তোমাদের জন্য আশঙ্কা করছি পরস্পর ডাকাডাকির দিন সন্বন্ধে - - |
40-33 : ''সেইদিন তোমরা ফিরবে পলায়নপর হয়ে, আল্লাহ্র থেকে তোমাদের জন্য কোনো রক্ষাকারী থাকবে না। আর যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন তার জন্য তবে কোনো পথপ্রদর্শক থাকবে না। |
40-34 : ''আর নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এর আগে ইউসুফ এসেছিলেন স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, কিন্ত তোমরা বরাবর সন্দেহের মধ্যে ছিলে তিনি যা নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছিলেন সে - সন্বন্ধে। কিন্ত যখন তিনি মৃতুবরণ করলেন তখন তোমরা বললে - - 'আল্লাহ্ কখনো তাঁর পরে কোনো রসূল দাঁড় করাবেন না।’ এইভাবেই আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন তাকে যে স্বয়ং অমিতাচারী, সন্দেহভাজন - - |
40-35 : ''যারা তর্ক করে আল্লাহ্র বাণী সন্বন্ধে তাদের কাছে কোনো দলিল - প্রমাণের আগমন ব্যতীত। এটি খুবই ঘৃণিত আল্লাহ্র কাছে ও যারা ঈমান এনেছে তাদের কাছে। এইভাবেই আল্লাহ্ মোহর মেরে দেন প্রত্যেক গর্বিত স্বৈরাচারীর হৃদয়ের উপরে।’’ |
40-36 : আর ফিরআউন বলল - - ''হে হামান! আমার জন্য একটি মিনার তৈরি কর যাতে আমি পথ পেতে পারি - - |
40-37 : ''মহাকাশমন্ডলীর পথ, যাতে আমি মূসার উপাস্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পারি, কিন্ত আমি নিঃসন্দেহ তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।’’ আর এইভাবেই ফিরআউনের জন্য চিত্তাকর্ষক করা হয়েছিল তার কাজের মন্দদিকটা, আর তাকে নিবৃত্ত করা হয়েছিল পথ থেকে। আর ফিরআউনের ফন্দি ধ্বংসের মধ্যে ছাড়া আর কিছু নয়। |
40-38 : আর যে ঈমান এনেছিল সে বলল - - ''হে আমার স্বজাতি! তোমরা আমার অনুসরণ করো, আমি তোমাদের চালিয়ে নিয়ে যাব সঠিক পথ ধরে। |
40-39 : ''হে আমার স্বজাতি! নিশ্চয় দুনিয়ার এই জীবনটা সুখভোগ মাত্র, আর অবশ্য পরকাল - - সেটি হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস। |
40-40 : ''যে কেউ মন্দ কাজ করে তাকে তবে প্রতিদান দেওয়া হবে না তার সমান - সমান ব্যতীত, আর যে কেউ ভাল কাজ করে - - সে পুরুষ হোক বা নারী, আর সে মুমিন হয় - - তাহলে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তাদের বেহিসাব রিযেক দেওয়া হবে। |
40-41 : ''আর হে আমার স্বজাতি! আমার কী হয়েছে যে আমি তোমাদের আহ্বান করছি মুক্তির দিকে, অথচ তোমরা আমাকে ডাকছো আগুনের দিকে? |
40-42 : ''তোমরা আমাকে আহ্বান করছ যেন আমি আল্লাহ্কে অবিশ্বাস করি ও তাঁর সঙ্গে শরীক করি তাকে যার সন্বন্ধে আমার কোনো জ্ঞান নেই, পক্ষান্তরে আমি তোমাদের ডাকছি মহাশক্তিশালী, পরিত্রাণকারীর দিকে। |
40-43 : ''কোনো সন্দেহ নেই যে তোমরা আমাকে যার প্রতি আহ্বান করছ তার কোনো দাবি এই দুনিয়াতে নেই এবং পরকালেও নেই, আর আমাদের প্রত্যাবর্তন তো আল্লাহ্রই কাছে, আর নিশ্চয় সীমালংঘনকারীরা - - তারাই আগুনের বাসিন্দা। |
40-44 : ''সেজন্য অচিরেই তোমরা স্মরণ করবে আমি তোমাদের যা বলছি, আর আমার কাজের ভার আল্লাহ্তে অর্পণ করছি। নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দাদের সম্পর্কে সর্বদ্রষ্টা।’’ |
40-45 : তারপর আল্লাহ্ তাঁকে তারা যা ফন্দি এটেছিলঁ তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেছিলেন, আর ফিরআউনের লোকদের জন্য এক ভীষণ শাস্তি ঘেরাও করেছিল, - - |
40-46 : আগুন - - তাদের এর কাছে আনা হবে সকালে ও সন্ধ্যায়, আর যেদিন ঘড়িঘন্টা এসে দাঁড়াবে - - ''ফিরআউনের লোকদের প্রবেশ করাও কঠোরতম শাস্তিতে।’’ |
40-47 : আর দেখো! তারা আগুনের মধ্যে পরস্পর তর্কাতর্কি করবে, তখন দুর্বলেরা বলবে তাদের যারা হামবড়াই করত - - ''অবশ্য আমরা তো তোমাদেরই তাঁবেদার ছিলাম, সুতরাং তোমরা কি আমাদের থেকে আগুনের কিছুটা অংশ সরিয়ে নেবে?’’ |
40-48 : যারা হামবড়াই করত তারা বলবে - - ''আমরা তো সব - ক’জনই এর মধ্যে রয়েছি। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ বিচার - মীমাংসা করে ফেলেছেন বান্দাদের মধ্যে।’’ |
40-49 : আর যারা আগুনের মধ্যে রয়েছে তারা জাহান্নামের রক্ষীদের বলবে - - ''তোমাদের প্রভুকে ডেকে বল তিনি যেন একটা দিন আমাদের থেকে শাস্তির কিছুটা লাঘব করে দেন।’’ |
40-50 : তারা বলবে, ''এমনটি কি তোমাদের ক্ষেত্রে নয় যে তোমাদের রসূলগণ তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে এসেছিলেন?’’ তারা বলবে, ''হ্যাঁ।’’ তারা বলবে - - ''তাহলে ডাকতে থাকো, বস্তুতঃ অবিশ্বাসীদের আর্তনাদ ব্যর্থতায় বৈ তো নয়।’’ |
40-51 : নিঃসন্দেহ আমরা অবশ্যই আমাদের রসূলগণকে ও যারা ঈমান এনেছে তাদের সাহায্য করে থাকি এই দুনিয়ার জীবনে আর সেইদিন যখন সাক্ষীরা দাঁড়াবে, - - |
40-52 : সেদিন অন্যায়াচারীদের কোনো উপকারে লাগবে না তাদের অজুহাতগুলো, আর তাদের জন্য থাকবে ধিক্কার, আর তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস। |
40-53 : আর আমরা ইতিপূর্বে মূসাকে পথনির্দেশ দিয়েছিলাম, এবং ইসরাইলের বংশধরদের উত্তরাধিকার করতে দিয়েছিলাম ধর্মগ্রন্থ - - |
40-54 : পথনির্দেশ ও স্মরণীয় বার্তা বুদ্ধিবিবেচনা থাকা লোকদের জন্য। |
40-55 : সুতরাং তুমি অধ্যবসায় চালিয়ে যাও, নিঃসন্দেহ আল্লাহ্র ওয়াদা ধ্রুবসত্য। আর তুমি তোমার দোষত্রুটির জন্য পরিত্রাণ খুঁজো এবং তোমার প্রভুর প্রশংসার সাথে রাত্রি ও প্রভাতে জপতপ করো। |
40-56 : নিঃসন্দহ যারা আল্লাহ্র বাণীসমূহ নিয়ে তর্কবিতর্ক করে তাদের কাছে কোনো দলিল - প্রমাণের আগমন ব্যতিরেকে, তাদের অন্তরে রয়েছে হামবড়াই বৈ তো নয়, যা তারা কখনো লাভ করতে পারবে না। সুতরাং আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাও। নিঃসন্দেহ তিনি স্বয়ং সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। |
40-57 : মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিশ্চয়ই মানুষের সৃষ্টির চেয়ে কঠিনতর, কিন্ত অধিকাংশ লোকেই জানে না। |
40-58 : আর অন্ধ ও চক্ষুষ্মান একসমান নয়, আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করছে এবং দুস্কর্মকারীরাও নয়। সামান্যই তা যা তোমরা মনোনিবেশ করে থাকো! |
40-59 : নিঃসন্দেহ ঘড়িঘন্টা প্রায় এসেই গেছে, এতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্ত অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করে না। |
40-60 : আর তোমাদের প্রভু বলেন - - ''তোমরা আমাকে আহ্বান করো, আমি তোমাদের প্রতি সাড়া দেব। নিঃসন্দেহ যারা আমাকে উপাসনা করার বেলা অহংকার বোধ করে তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়।’’ |
40-61 : আল্লাহ্ই তিনি যিনি তোমাদের জন্য রাতকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পারো, আর দিনকে দেখবার জন্য। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তো মানুষের প্রতি করুণাভান্ডারের অধিকারী, কিন্ত অধিকাংশ লোকই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। |
40-62 : এইই আল্লাহ্, তোমাদের প্রভু, সব - কিছুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, সুতরাং কার কাছ থেকে তোমরা ফিরে যাচ্ছ? |
40-63 : এইভাবেই ফিরে যাচ্ছিল তারা যারা আল্লাহ্র নির্দেশাবলীকে প্রত্যাখ্যান করছিল। |
40-64 : আল্লাহ্ই তিনি যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বাসোপযোগী বানিয়েছেন আর আকাশকে একটি চাঁদোয়া, আর তিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন, সুতরাং তিনি তোমাদের আকৃতি কত সুন্দর করেছেন! আর তিনি তোমাদের জীবিকা দিয়েছেন উৎকৃষ্ট বস্তু থেকে। এইই হচ্ছেন আল্লাহ্ - - তোমাদের প্রভু। অতএব সকল মহিমার পাত্র আল্লাহ্ - - বিশ্বজগতের প্রভু। |
40-65 : তিনি সদাজীবিত, তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, সুতরাং ধর্মে তাঁর প্রতি একনিষ্ঠচিত্তে তাঁকেই ডাকো। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র যিনি বিশ্বজগতের প্রভু। |
40-66 : বলো - - ''নিঃসন্দেহ আমাকে নিষেধ করা হয়েছে তাদের উপাসনা করতে যাদের তোমরা উপাসনা কর আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে, - - যখন আমার কাছে আমার প্রভুর কাছ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাবলী এসেছে, আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন আমি বিশ্বজগতের প্রভুর প্রতি আত্মসমর্পণ করি। |
40-67 : ''তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্রকীট থেকে, তারপর রক্তপিন্ড থেকে, তারপর তিনি তোমাদের বের করে আনেন শিশুরূপে, তারপর যেন তোমরা বাড়তে পারো তোমাদের পূর্ণযৌবনে, তারপর যেন তোমরা বৃদ্ধ হতে পারো, আর তোমাদের মধ্যে কাউকে মরতে দেওয়া হয় আগেই, - - কাজেকাজেই তোমরা যেন নির্ধারিত সময়সীমায় পৌঁছুতে পারো, আর যেন তোমরা বুঝতে - সুঝতে পারো। |
40-68 : ''তিনিই সেইজন যিনি জীবনদান করেন ও মৃত্যু ঘটান, সুতরাং তিনি যখন কোনো ব্যাপারের বিধান করেন তখন শুধুমাত্র তিনি সে - সন্বন্ধে বলেন - - 'হও’, ফলে তা হয়ে যায়।’’ |
40-69 : তুমি কি তাদের দিকে চেয়ে দেখো নি যারা আল্লাহ্র নির্দেশাবলী নিয়ে বিতর্ক করে? ওরা কেমন করে ফিরে যাচ্ছে - - |
40-70 : যারা গ্রন্থখানাকে প্রত্যাখ্যান করছে, আর যা দিয়ে আমরা আমাদের রসূলগণকে পাঠিয়েছিলাম? কিন্ত শীগগিরই তারা বুঝতে পারবে - - |
40-71 : যখন তাদের গলায় বেড়ি হবে আর হবে শিকল। তাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে - - |
40-72 : ফুটন্ত পানির মধ্যে, তারপর তাদের জ্বলতে দেওয়া হবে আগুনের মধ্যে। |
40-73 : তখন তাদের বলা হবে - - ''কোথায় আছে তারা যাদের তোমরা শরিক করতে - - |
40-74 : আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে?’’ তারা বলবে, ''তারা আমাদের থেকে উধাও হয়েছে, বস্তুতঃ আমরা ইতিপূর্বে এমন কিছুকে আহ্বান করে চলি নি।’’ এভাবেই আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট হতে দেন অবিশ্বাসীদের। |
40-75 : এমনটাই তোমাদের জন্য কেননা তোমরা দুনিয়াতে বেপরোয়া ব্যবহার করতে কোনো যুক্তি ব্যতীত, আর যেহেতু তোমরা হামবড়াই করতে। |
40-76 : ''তোমরা জাহান্নামের দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ করো তাতে অবস্থানের জন্য। সুতরাং গর্বিতদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট!’’ |
40-77 : কাজেই তুমি অধ্যবসায় চালিয়ে যাও, নিশ্চয় আল্লাহ্র ওয়াদা সত্য। সুতরাং তাদের যা ওয়াদা করা হয়েছে আমরা যদি তার কিছুটা তোমাকে দেখিয়েই দিই অথবা তোমার মৃত্যুই ঘটাই, সর্বাবস্থায় আমাদেরই কাছে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। |
40-78 : আর নিশ্চয়ই আমরা তোমার আগে রসূলগণকে পাঠিয়ে দিয়েছি, তাঁদের মধ্যের কারো কারো সন্বন্ধে তোমার কাছে আমরা বিবৃত করেছি, আর তাদের মধ্যের অন্যদের সন্বন্ধে আমরা তোমার কাছে বিবৃত করি নি। আর কোনো রসূলেরই কাজ নয় যে তিনি আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতীত কোনো নিদর্শন নিয়ে আসবেন, কিন্ত যখন আল্লাহ্র নির্দেশ এসে যাবে, তখন মীমাংসা হয়ে যাবে ন্যায়সংগতভাবে, আর বাতিল করার প্রচেষ্টাকারীরা তখন তখনই নাজেহাল হবে। |
40-79 : আল্লাহই তিনি যিনি তেমাদের জন্য গবাদি - পশু সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাদের কতকগুলোয় চড়তে পরো ও তাদের কতকটা তোমরা খেতে পারো, |
40-80 : আর তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে রয়েছে মুনাফা, আর যেন তাদের সাহায্যে তোমরা পূরণ করতে পারো তোমাদের অন্তরের বাসনা, আর তাদের উপরে ও জাহাজের উপরে তোমাদের বহন করা হয়। |
40-81 : আর তিনি তোমাদের দেখিয়ে থাকেন তাঁর নিদর্শনসমূহ। সুতরাং আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীর কোনটি তোমরা প্রত্যাখ্যান করবে? |
40-82 : ওরা কি তবে পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে নি, তাহলে ওরা দেখতে পেতো কেমন হয়েছিল তাদের পরিণাম যারা ওদের পূর্ববর্তী ছিল? তারা ওদের চেয়ে অধিকসংখ্যক ছিল আর শক্তিতে প্রবলতর ও দুনিয়াতে কীর্তিস্থাপনে ছিল পারদর্শী। কিন্ত তারা যা অর্জন করে চলেছিল তা তাদের কোনো কাজে আসে নি। |
40-83 : তারপর যখন তাদের রসূলগণ তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে এসেছিলেন তখন তাদের কাছে জ্ঞানের যা রয়েছে সেজন্য তারা বেপরোয়া থাকতো, আর ওরা যা নিয়ে ঠাট্টা - বিদ্রপ করত তাই তাদের ঘেরাও করল। |
40-84 : সুতরাং তারা যখন আমাদের দুর্যোগ দেখতে পেল তখন বলল, ''আমরা আল্লাহ্তে, তাঁর একত্বে, বিশ্বাস করছি, আর যাদের আমরা তাঁর সঙ্গে শরীক করেছিলাম তাদের আমরা অস্বীকার করছি।’’ |
40-85 : কিন্ত যখন তারা আমাদের দুর্যোগ প্রত্যক্ষ করেছে তখন তাদের বিশ্বাসস্থাপনা তাদের কোনো উপকারে আসবে না। আল্লাহর রীতি যেটি বলবৎ হয়ে রয়েছে তাঁর বান্দাদের মধ্যে, আর অবিশ্বাসীরা তখনই নাস্তানাবুদ হবে। |