আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক, Chapter: 45, আল জাসিয়া

Go Back
Book Id: 10060

আল কুরআন: বাংলা অনুবাদ, জহুরুল হক

Chapter: 45, আল জাসিয়া

45-1 : হা মীম!
45-2 : এ গ্রন্থের অবতারণ আল্লাহ্‌র কাছ থেকে, যিনি মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
45-3 : নিঃসন্দেহ মহাকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে মুমিনদের জন্য।
45-4 : আর তোমাদের সৃষ্টির মধ্যে এবং জীবজন্তুর মধ্যে যা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে নিদর্শনাবলী রয়েছে সুনিশ্চিত লোকেদের জন্য,
45-5 : আর রাত ও দিনের বিবর্তনে, আর আল্লাহ্ আকাশ থেকে জীবনোপকরণের মধ্যের যা - কিছু পাঠান ও যার দ্বারা পৃথিবীকে সঞ্জীবিত করেন তার মৃত্যুর পরে, আর বায়ু প্রবাহের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা জ্ঞান - বুদ্ধি রাখে।
45-6 : এইসব হচ্ছে আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলী যা আমরা তোমার কাছে আবৃত্তি করছি যথাযথভাবে, সুতরাং আল্লাহ্ ও তাঁর নির্দেশাবলীর পরে কোন ধর্মোপদেশে তারা বিশ্বাস করবে?
45-7 : ধিক্ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের প্রতি।
45-8 : যে আল্লাহ্‌র বাণীসমূহ তার কাছে পঠিত হতে শোনে, তারপর সে অহংকারের মধ্যে অটল থাকে যেন সে সে - সব শোনেই নি। সেজন্য তাকে সুসংবাদ দাও মর্মন্তুদ শাস্তির।
45-9 : আর যখন সে আমাদের বাণীগুলো থেকে কোনো কিছু জানতে পারে সে সে - সবকে তামাশা ব’লে গ্রহণ করে। এরাই - - এদেরই জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
45-10 : তাদের সামনের দিকে রয়েছে জাহান্নাম, আর তারা যা অর্জন করেছে তা তাদেরকে কোনোভাবেই লাভবান করবে না, আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে যাদের তারা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছিল তারাও না, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
45-11 : এই হচ্ছে পথনির্দেশ, আর যারা তাদের প্রভুর বাণীসমূহ প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য রয়েছে কলুষতার দরুন মর্মন্তুদ শাস্তি।
45-12 : আল্লাহ্‌ই তিনি যিনি সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তাঁর বিধান অনুযায়ী জাহাজগুলো তাতে চলতে পারে, আর যেন তোমরা তাঁর করুণাভান্ডার থেকে অনুসন্ধান করতে পার, আর তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।
45-13 : আর তিনি তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন মহাকাশমন্ডলীতে যা - কিছু আছে আর যা - কিছু রয়েছে পৃথিবীতে, - - এ সমস্ত তাঁর কাছ থেকে। নিঃসন্দেহ এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে।
45-14 : যারা বিশ্বাস করে তাদের তুমি বলো যে তারা ক্ষমা করুক তাদের যারা আল্লাহ্‌র দিনগুলোর প্রত্যাশা করে না, এই জন্য যে তিনি লোকদের যেন প্রতিদান দিতে পারেন যা তারা অর্জন করছিল সেজন্য।
45-15 : যে কেউ সৎকর্ম করে তা তবে তার নিজের জন্যে, আর যে মন্দ করে তা তবে তারই বিরুদ্ধে, তারপর তোমাদের প্রভুর তরফেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
45-16 : আর আমরা অবশ্য ইসরাইলের বংশধরদের দিয়েইছিলাম গ্রন্থ ও জ্ঞান - বিজ্ঞান ও পয়গন্বরত্ব, আর আমরা তাদের জীবিকা দিয়েছিলাম উত্তম জিনিস থেকে, আর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম জনগণের উপরে।
45-17 : আর আমরা তাদের দিয়েছিলাম বিষয়টি সন্বন্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণাবলী, কিন্ত তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরেও তারা মতভেদ করে নি নিজেদের মধ্যে ঈর্ষা বিদ্বেষ ব্যতীত। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিনে বিচার - মীমাংসা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত সে - সন্বন্ধে।
45-18 : এরপর আমরা তোমাকে ব্যাপারটিতে এক সংবিধানের উপরে প্রতিষ্ঠিত করেছি, কাজেই তুমি তা অনুসরণ করো, আর তুমি তাদের খেয়াল - খুশির অনুসরণ কর না যারা জানে না।
45-19 : নিঃসন্দেহ তারা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কোনো কিছুতেই তোমাকে আদৌ লাভবান করবে না। আর আলবৎ অন্যায়াচারীরা - - তাদের কেউ - কেউ অপর কারোর বন্ধু, আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ধর্মভীরু - দের বান্ধব।
45-20 : এই হচ্ছে মানবজাতির জন্য দৃষ্টিদায়ক, আর পথপ্রদর্শক ও করুণা সেই লোকদের জন্য যারা সুনিশ্চিত।
45-21 : যারা দুস্কর্ম করেছে তারা কি ভাবে যে আমরা তাদের বানিয়ে দেব তাদের মতো যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে - - তাদের জীবন ও তাদের মরণ কি এক সমান? কত নিকৃষ্ট যা তারা সিদ্ধান্ত করে!
45-22 : আর আল্লাহ্ মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সত্যের সাথে, আর যাতে প্রত্যেক সত্ত্বাকে প্রতিফল দেওয়া হয় সে যা অর্জন করেছে তাই দিয়ে, আর তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।
45-23 : তুমি কি তবে তাকে লক্ষ্য করেছ যে তার খেয়াল - খুশিকে তার উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? আর আল্লাহ্ জেনে - শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট হতে দিয়েছেন, আর তিনি মোহর মেরে দিয়েছেন তার শ্রবণেন্দ্রিয়ে ও তার হৃদয়ে, আর তার দর্শনেন্দ্রিয়ের উপরে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন একটি পর্দা। কাজেই আল্লাহ্‌র পরে আর কে তাকে পথ দেখাবে? তবুও কি তোমরা মনোযোগ দেবে না?
45-24 : আর তারা বলে - - ''আমাদের দুনিয়ার জীবন ছাড়া এইটি আর কিছুই নয়, আমরা মরি আর আমরা বেঁচে থাকি, আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করে না সময় ব্যতীত।’’ আর এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা অনুমান করছে বৈ তো নয়।
45-25 : আর যখন তাদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট বাণীসমূহ পাঠ করা হয় তখন তাদের বিতর্ক আর কিছু নয় এ ভিন্ন যে তারা বলে, ''আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এস যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’
45-26 : তুমি বলো - - ''আল্লাহ্‌ই তোমাদের জীবন দান করেন, তারপর তোমাদের মৃত্যু ঘটান, তারপর তিনি তোমাদের একত্রিত করবেন কিয়ামতের দিনে - - তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্ত অধিকাংশ লোকেই জানে না।’’
45-27 : আর আল্লাহ্‌রই হচ্ছে মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব। আর যেদিন ঘড়িঘন্টা দাঁড়িয়ে যাবে, সেইদিন বাতিল - আখ্যাদানকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
45-28 : আর তুমি দেখতে পাবে প্রত্যেক সম্প্রদায় নতজানু হতে, প্রত্যেক সম্প্রদায়কে ডাকা হবে তার কিতাবের প্রতি। ''আজকের দিনে তোমাদের প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে তোমরা যা করতে তাই দিয়ে।
45-29 : ''এইটি আমাদের কিতাব যা তোমাদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বর্ণনা করে। নিঃসন্দেহ আমরা লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছি যা তোমরা করে চলেছ।’’
45-30 : সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে তাদের প্রভু তাদের প্রবেশ করাবেন তাঁর করুণায়। এইটিই হচ্ছে প্রকাশ্য সাফল্য।
45-31 : পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাস পোষণ করে - - ''এমনটা কি নয় যে আমার বাণীসমূহ তোমাদের কাছে পঠিত হয়েছে? কিন্ত তোমরা গর্ববোধ করছিলে, আর তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।
45-32 : ''আর যখন বলা হয় - - 'নিঃসন্দেহ আল্লাহ্‌র ওয়াদা সত্য, আর ঘড়িঘন্টা - - এতে কোনো সন্দেহ নেই’, তোমরা তখন বলে থাক - - 'আমরা জানি না কী সেই ঘড়ি, আমরা বিবেচনা করি কাল্পনিক বৈ তো নয়, আর আমরা আদে সুনিশ্চিত নই’ ।’’
45-33 : আর তারা যা করেছিল তার দুস্কর্মগুলো তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে, আর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা - বিদ্রূপ করত তা তাদের পরিবেষ্টন করবে।
45-34 : আর বলা হবে - - ''আজ আমরা তোমাদের ভুলে থাকব যেমন তোমরা তোমাদের এই দিনটির সাক্ষাৎ পাওয়াকে ভুলে থাকতে, ফলত তোমাদের আশ্রয়স্থল হচ্ছে আগুন, আর তোমাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ থাকবে না।
45-35 : ''এইটিই! কেননা তোমরা আল্লাহ্‌র বাণীসমূহকে তামাশা বলে গণ্য করেছিলে, ফলস্বরূপে এই দুনিয়ার জীবন তোমাদের প্রতারিত করেছিল।’’ সেজন্য আজকের দিনটায় সেখান থেকে তাদের বের করা হবে না, আর তাদের প্রতি সদয়তাও দেখানো হবে না।
45-36 : অতএব আল্লাহ্‌রই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি মহাকাশমন্ডলীর প্রভু ও পৃথিবীরও প্রভু, - - সমস্ত বিশ্বজগতের প্রভু।
45-37 : আর তাঁরই হচ্ছে সমস্ত গৌরব - গরিমা মহাকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে, আর তিনি হচ্ছেন মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।