Go Back
Book Id: 10070
আল কুরআন: সমকালীন বাংলা অনুবাদ
Chapter: 15, আল হিজর (হিজর নামক একটি পাহাড়ী উপত্যকা)
15-1 : আলিফ - লাম - রা, এইগুলি আয়াত মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের। |
15-2 : কখনও কখনও কাফিররা আকাঙ্খা করিবে যে, তাহারা যদি মুসলিম হইত! |
15-3 : উহাদেরকে ছাড়, উহারা খাইতে থাকুক, ভোগ করিতে থাকুক এবং আশা উহাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক; অচিরেই উহারা জানিতে পারিবে। |
15-4 : আমি যে কোন জনপদকে ধ্বংস করিয়াছি তাহার জন্য ছিল একটি নির্দিষ্ট লিপিবদ্ধ কাল। |
15-5 : কোন জাতি তাহার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্নিত করিতে পারে না, বিলম্বিতও করিতে পারে না। |
15-6 : উহারা বলে, ‘ওহে, যাহার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হইয়াছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ। |
15-7 : ‘তুমি সত্যবাদী হইলে আমাদের নিকট ফিরিশতাগণকে উপস্থিত করিতেছ না কেন?’ |
15-8 : আমি ফিরিশ্তাগণকে প্রেরণ করি না যথার্থ কারণ ব্যতীত; ফিরিশ্তাগণ উপস্থিত হইলে উহারা অবকাশ পাইবে না। |
15-9 : আমিই কুরআন অবতীর্ণ করিয়াছি এবং অবশ্য আমিই উহার সংরক্ষক। |
15-10 : তোমার পূর্বে আমি আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল পাঠাইয়াছিলাম। |
15-11 : তাহাদের নিকট আসে নাই এমন কোন রাসূল যাহাকে তাহারা ঠাট্টা - বিদ্রপকরিত না। |
15-12 : এইভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে উহা সঞ্চার করি, |
15-13 : ইহারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনিবে না এবং অতীতে পূর্ববর্তীদেরও এই আচরণ ছিল। |
15-14 : যদি উহাদের জন্য আকাশের দুয়ার খুলিয়া দেই এবং উহারা সারাদিন উহাতে আরোহণ করিতে থাকে, |
15-15 : তবুও উহারা বলিবে, ‘আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হইয়াছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।’ |
15-16 : আমি আকাশে গ্রহ - নক্ষত্র সৃষ্টি করিয়াছি এবং উহাকে সুশোভিত করিয়াছি দর্শকদের জন্য; |
15-17 : এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হইতে আমি উহাকে রক্ষা করিয়া থাকি; |
15-18 : কিন্তু কেহ চুরি করিয়া সংবাদ শুনিতে চাহিলে উহার পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা। |
15-19 : আর পৃথিবী, উহাকে আমি বিস্তৃত করিয়াছি, উহাতে পর্বতমালা স্থাপন করিয়াছি; এবং আমি উহাতে প্রত্যেক বস্তু উদ্গত করিয়াছি সুপরিমিতভাবে, |
15-20 : এবং উহাতে জীবিকার ব্যবস্থা করিয়াছি তোমাদের জন্য, আর তোমরা যাহাদের জীবিকাদাতা নও তাহাদের জন্যও। |
15-21 : আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার এবং আমি উহা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করিয়া থাকি। |
15-22 : আমি বৃষ্টি - গর্ভ বায়ু প্রেরণ করি, অতঃপর আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করি এবং উহা তোমাদেরকে পান করিতে দেই; আর তোমরা উহার ভাণ্ডার রক্ষক নও। |
15-23 : আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। |
15-24 : তোমাদের মধ্য হইতে পূর্বে যাহারা গত হইয়াছে আমি তাহাদেরকে জানি এবং পরে যাহারা আসিবে তাহাদেরকেও জানি। |
15-25 : তোমার প্রতিপালকই উহাদেরকে সমবেত করিবেন; তিনি তো প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। |
15-26 : আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠন্ঠনা মৃত্তিকা হইতে, |
15-27 : এবং ইহার পূর্বে সৃষ্টি করিয়াছি জিন অত্যুষ্ণ অগ্নি হইতে। |
15-28 : স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফিরিশ্তাগণকে বলিলেন, ‘আমি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠন্ঠনা মৃত্তিকা হইতে মানুষ সৃষ্টি করিতেছি; |
15-29 : ‘যখন আমি উহাকে সুঠাম করিব এবং উহাতে আমার পক্ষ হইতে রূহ্ সঞ্চার করিব তখন তোমরা উহার প্রতি সিজ্দাবনত21 হইও’, |
15-30 : তখন ফিরিশ্তাগণ সকলেই একত্রে সিজ্দা করিল, |
15-31 : ইবলীস ব্যতীত, সে সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইতে অস্বীকার করিল। |
15-32 : আল্লাহ হে ইবলিস তোমার কি হল যে, তুমি সিজদাকারীদের অন্তভ্র্ক্তূ হইলে না। |
15-33 : সে বলিল, ‘আপনি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা হইতে যে মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন আমি তাহাকে সিজ্দা করিবার নহি।’ |
15-34 : তিনি বলিলেন, ‘তবে তুমি এখান হইতে বাহির হইয়া যাও, কারণ তুমি তো অভিশপ্ত; |
15-35 : ‘এবং কর্মফল দিবস পর্যন্ত অবশ্যই তোমার প্রতি রহিল লা‘নত।’ |
15-36 : সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন।’ |
15-37 : তিনি বলিলেন, ‘যাহাদেরকে অবকাশ দেওয়া হইয়াছে তুমি তাহাদের অন্তর্ভুক্ত হইলে, |
15-38 : ‘অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’ |
15-39 : সে বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করিলেন তজ্জন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করিয়া তুলিব এবং আমি উহাদের সকলকেই বিপথগামী করিব, |
15-40 : ‘তবে উহাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত।’ |
15-41 : আল্লাহ বলিলেন ইহাই আমার নিকট পৌছাবার সরল পথ। |
15-42 : ‘বিভ্রান্তদের মধ্যে যাহারা তোমার অনুসরণ করিবে তাহারা ব্যতীত আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকিবে না; |
15-43 : ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাহাদের সকলেরই প্রতিশ্রুতি স্থান, |
15-44 : ‘উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে।’ |
15-45 : মুত্তাকীরা থাকিবে জান্নাতে ও প্রস্রবণসমূহের মধ্যে। |
15-46 : তাহাদেরকে বলা হইবে, ‘তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে উহাতে প্রবেশ কর।’ |
15-47 : আমি তাহাদের অন্তর হইতে বিদ্বেষ দূর করিব; তাহারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হইয়া আসনে অবস্থান করিবে, |
15-48 : সেখানে তাহাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করিবে না এবং তাহারা সেই স্থান হইতে বহিষ্কৃতও হইবে না। |
15-49 : আমার বান্দাদেরকে বলিয়া দাও যে, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু, |
15-50 : এবং আমার শাস্তি - উহা অতি মর্মন্তুদ শাস্তি! |
15-51 : আর উহাদেরকে বল, ইব্রাহীমের অতিথিদের কথা, |
15-52 : যখন উহারা তাহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, ‘সালাম’, তখন সে বলিয়াছিল, ‘আমরা তো তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত।’ |
15-53 : উহারা বলিল, ‘ভয় করিও না, আমরা তো তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের শুভ সংবাদ দিতেছি।’ |
15-54 : সে বলিল, ‘তোমরা কি আমাকে শুভ সংবাদ দিতেছ আমি বার্ধক্যগ্রস্তহওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কী বিষয়ে শুভ সংবাদ দিতেছ?’ |
15-55 : উহারা বলিল, ‘আমরা তোমাকে সত্য সংবাদ দিতেছি; সুতরাং তুমি হতাশ হইও না।’ |
15-56 : সে বলিল, ‘যাহারা পথভ্রষ্ট তাহারা ব্যতীত আর কে তাহার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হইতে হতাশ হয়?’ |
15-57 : সে বলিল, ‘হে ফিরিশ্তাগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কাজ আছে?’ |
15-58 : উহারা বলিল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হইয়াছে - |
15-59 : ‘তবে লূতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই ইহাদের সকলকে রক্ষা করিব, |
15-60 : ‘কিন্তু তাহার স্ত্রীকে নহে; আমরা স্থির করিয়াছি যে, সে অবশ্যই পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ |
15-61 : ফিরিশ্তাগণ যখন লূত - পরিবারের নিকট আসিল, |
15-62 : তখন লূত বলিল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক।’ |
15-63 : তাহারা বলিল, ‘না, উহারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা তোমার নিকট তাহাই লইয়া আসিয়াছি; |
15-64 : ‘আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ লইয়া আসিয়াছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী; |
15-65 : ‘সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বাহির হইয়া পড় এবং তুমি তাহাদের পশ্চাদনুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে কেহ যেন পিছন দিকে না তাকায়; তোমাদেরকে যেখানে যাইতে বলা হইতেছে তোমরা সেখানে চলিয়া যাও।’ |
15-66 : আমি তাহাকে এই বিষয়ে ফায়সালা জানাইয়া দিলাম যে, প্রত্যূষে উহাদেরকে সমূলে বিনাশ করা হইবে। |
15-67 : নগরবাসিগন উল্লাসিত হইয়া উপস্থিত হইল। |
15-68 : সে বলিল, ‘উহারা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইয্যত করিও না। |
15-69 : তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে হেয় করিও না। |
15-70 : উহারা বলিল, ‘আমরা কি দুনিয়াসুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করি নাই?’ |
15-71 : লূত বলিল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করিতে চাও তবে আমার এই কন্যাগণ রহিয়াছে।’ |
15-72 : তোমার জীবনের শপথ, উহারা তো মত্ততায় বিমূঢ় হইয়াছে। |
15-73 : অতঃপর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল; |
15-74 : আর আমি জনপদকে উল্টাইয়া উপর নীচ করিয়া দিলাম এবং উহাদের উপর প্রস্তর - কংকর বর্ষণ করিলাম। |
15-75 : অবশ্যই ইহাতে নিদর্শন রহিয়াছে পর্যবেক্ষণ - শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য। |
15-76 : উহা তো লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান। |
15-77 : অবশ্যই ইহাতে মু’মিনদের জন্য রহিয়াছে নিদর্শন। |
15-78 : আর ‘আয়কা’বাসীরাও তো ছিল সীমালংঘনকারী, |
15-79 : সুতরাং আমি উহাদেরকে শাস্তি দিয়াছি, অবশ্য উভয়টিই প্রকাশ্য পথিপার্শ্বে অবস্থিত। |
15-80 : হিজ্রবাসিগণও রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল; |
15-81 : আমি উহাদেরকে আমার নিদর্শন দিয়াছিলাম, কিন্তু উহারা তাহা উপেক্ষা করিয়াছিল। |
15-82 : উহারা পাহাড় কাটিয়া গৃহ নির্মাণ করিত নিরাপদ বাসের জন্য। |
15-83 : অতঃপর প্রভাতকালে মহানাদ উহাদেরকে আঘাত করিল। |
15-84 : সুতরাং উহারা যাহা অর্জন করিত তাহা উহাদের কোন কাজে আসে নাই। |
15-85 : আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং উহাদের অন্তর্বর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করি নাই এবং কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং তুমি পরম সৌজন্যের সঙ্গে উহাদেরকে ক্ষমা কর। |
15-86 : নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা, মহাজ্ঞানী। |
15-87 : আমি তো তোমাকে দিয়াছি সাত আয়াত যাহা পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত হয় এবং দিয়াছি মহান কুরআন। |
15-88 : আমি তাহাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ - বিলাসের যে উপকরণ দিয়াছি, তাহার প্রতি তুমি কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করিও না। তাহাদের জন্য তুমি দুঃখ করিও না; তুমি মু’মিনদের জন্য তোমার পক্ষপুট অবনমিত কর, |
15-89 : এবং বল, ‘আমি তো কেবল এক প্রকাশ্য সতর্ককারী।’ |
15-90 : যেভাবে আমি অবতীর্ণ করিয়াছিলাম বিভক্তকারীদের উপর; |
15-91 : যাহারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করিয়াছে। |
15-92 : সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি উহাদের সকলকে প্রশ্ন করিবই, |
15-93 : সেই বিষয়ে, যাহা উহারা করে। |
15-94 : অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হইয়াছ তাহা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা কর। |
15-95 : আমিই যথেষ্ট তোমার জন্য বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে, |
15-96 : যাহারা আল্লাহর সাথে অপর ইলাহকে নির্ধারন করিয়াছে। সুতরাং শিগ্ররই ইহারা জানিতে পারিবে। |
15-97 : আমি তো জানি, উহারা যাহা বলে তাহাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়; |
15-98 : সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তুমি সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও; |
15-99 : তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর। |