33-1 : হে নবী ! আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফিরদের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করিও না। আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। |
33-2 : তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার প্রতি যাহা ওহী হয় তাহার অনুসরণ কর ; তোমরা যা কর, আল্লাহ্ তো সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। |
33-3 : আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। র্কাযনর্বিাহীরূপে আল্লাহই যথষ্টে। |
33-4 : আল্লাহ কোন মানুষের অভ্যন্তরে দুইটি হৃদয় সৃষ্টি করেন নাই। তোমাদের স্ত্রীগণ, যাহাদের সঙ্গে তোমরা জিহার করিয়া থাক, তিনি তাহাদেরকে তোমাদের জননী করেন নাই এবং তোমাদের পোষ্য পুত্রদেরকে তিনি তোমাদের পুত্র করেন নাই; এইগুলি তোমাদের মুখের কথা। আল্লাহ সত্য কথাই বলেন এবং তিনিই সরল পথ নির্দেশ করেন। |
33-5 : তোমরা তাহাদেরকে ডাক তাহাদের পিতৃ - পরিচয়ে; আল্লাহ দৃষ্টিতে ইহা অধিক ন্যায়সংগত। যদি তোমরা তাহাদের পিতৃ - পরিচয় না জান তবে তাহারা তোমাদের দীনী ভাই এবং বন্ধু। এই ব্যাপারে তোমরা কোন ভুল করিলে তোমাদের কোন অপরাধ নাই ; তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভন্নি কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। |
33-6 : নবী মু’মিনদের নিকট তাহাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তাহার পত্নীগণ তাহাদের মাতা। আল্লাহর বিধান অনুসারে মু’মিন ও মুহাজিরগণ অপেক্ষা - যাহারা আত্মীয় তাহারা পরস্পরের নিকটতর। তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধু - বান্ধবের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শনকরিতে চাও - তাহা করিতে পার। ইহা কিতাবে লিপিবদ্ধ। |
33-7 : স্মরণ কর, যখন আমি নবীদের নিকট হইতে অঙ্গীকার গ্রহণ করিয়াছিলাম এবং তোমার নিকট হইতেও এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও মার্ইয়াম - তনয় ‘ঈসার নিকট হইতেও - তাহাদের নিকট হইতে গ্রহণ করিয়াছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার - |
33-8 : সত্যবাদীদেরকে তাহাদের সত্যবাদিতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিবার জন্য। তিনি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত রাখিয়াছেন মর্মন্তুদ শাস্তি। |
33-9 : হে মু’মিনগণ ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হইয়াছিল এবং আমি উহাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিয়াছিলেন ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এক বাহিনী যাহা তোমরা দেখ নাই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহার সম্যক দ্রষ্টা। |
33-10 : যখন উহারা তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হইয়াছিল তোমাদের উপরের দিক ও নিচের দিক হইতে, তোমাদের চক্ষু বিস্ফারিত হইয়াছিল, তোমাদের প্রাণ হইয়া পড়িয়াছিল কণ্ঠাগত এবং তােমরা আল্লাহ সর্ম্পকে নানাবিধ ধারণা পােষণ করতে শুরু করছলি। |
33-11 : তখন মু’মিনগণ পরীক্ষিত হইয়াছিল এবং তাহারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হইয়াছিল। |
33-12 : আর স্মরণ কর, মুনাফিকরা ও যাহাদের অন্তরে ছিল ব্যাধি, তাহারা বলিতেছিল, আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তাহা প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়।’ |
33-13 : আর উহাদের একদল বলিয়াছিল, ‘হে ইয়াস্রিববাসী ! এখানে তোমাদের কোন স্থান নাই তোমরা ফিরিয়া চল’ এবং উহাদের মধ্যে একদল নবীর নিকট অব্যাহতি প্রার্থনা করিয়া বলিতেছিল, ‘আমাদের বাড়িঘর অরক্ষিত’; অথচ ঐগুলি অরক্ষিত ছিল না, আসলে পলায়ন করাই ছিল উহাদের উদ্দেশ্য। |
33-14 : যদি বিভিন্ন দিক হইতে তাহাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের প্রবেশ ঘটিত, অতঃপর তাহাদেরকে বিদ্রোহের জন্য প্ররোচিত করা হইত, তবে তাহারা অবশ্য তাহাই করিয়া বসিত, তাহারা ইহাতে কালবিলম্ব করিত না। |
33-15 : ইহারা তো পূর্বেই আল্লাহ সঙ্গে অঙ্গীকার করিয়াছিল যে, ইহারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিবে না। আল্লাহর অঙ্গীকার সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হইবে। |
33-16 : বল, ‘তোমাদের কোন লাভ হইবে না যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পলায়ন কর, তবে সেই ক্ষেত্রে তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করিতে দেওয়া হইবে।’ |
33-17 : বল, ‘কে তোমাদেরকে আল্লাহ হইতে রক্ষা করিবে, যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন অথবা তিনি যদি তোমাদেরকে অনুগ্রহ করিতে ইচ্ছা করেন, তবে কে তোমাদের ক্ষতি করিবে তারা আল্লাহ ব্যতীত নজিদেরে কােন অভভিাবক ও সাহায্যদাতা পাবে না। |
33-18 : আল্লাহ অবশ্যই জানেন তোমাদের মধ্যে কাহারা বাধাদানকারী এবং কাহারা তাহাদের ভ্রাতৃবর্গকে বলে, ‘আমাদের সঙ্গে আস।’ উহারা অল্পই যুদ্ধে অংশ নেয় - |
33-19 : তোমাদের ব্যাপারে কৃপণতাবশত। আর যখন ভীতি আসে তখন তুমি দেখিবে, মৃত্যুভয়ে মূর্চ্ছাতুর ব্যক্তির মত চক্ষু উল্টাইয়া উহারা তোমার দিকে তাকায়। কিন্তু যখন ভয় চলিয়া যায় তখন উহারা ধনের লালসায় তোমাদেরকে তীক্ষ ভাষায় বিদ্ধ করে। উহারা ঈমান আনে নাই, |
33-20 : উহারা মনে করে, সম্মিলিত বাহিনী চলিয়া যায় নাই। যদি সম্মিলিত বাহিনী আবার আসিয়া পড়ে, তখন উহারা কামনা করিবে যে, ভাল হইত যদি উহারা যাযাবর মরুবাসীদের সঙ্গে থাকিয়া তোমাদের সংবাদ লইত! উহারা তোমাদের সঙ্গে অবস্থান করিলেও উহারা যুদ্ধ অল্পই করিত। |
33-21 : তোমাদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ অধিক স্মরণ করে তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। |
33-22 : মু’মিনগণ যখন সম্মিলিত বাহিনীকে দেখিল, উহারা বলিয়া উঠিল, ‘ইহা তো তাহাই, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল যাহার প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিয়াছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল সত্যই বলিয়াছিলেন।’ আর ইহাতে তাহাদের ঈমান ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পাইল। |
33-23 : মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাহাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করিয়াছে, উহাদের কেহ কেহ শাহাদত বরণ করিয়াছে এবং কেহ কেহ প্রতীক্ষায় রহিয়াছে। উহারা তাহাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করে নাই ; |
33-24 : কারণ আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাহাদের সত্যবাদিতার জন্য এবং তাঁহার ইচ্ছা হইলে মুনাফিকদেরকে শাস্তিদেন অথবা উহাদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। |
33-25 : আল্লাহ কাফিরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরাইয়া দিলেন, তাহারা কোন কল্যাণ লাভ করে নাই। যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমনিদরে জন্যে যথষ্টে হয়ে গছেনে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী। |
33-26 : কিতাবীদের মধ্যে যাহারা উহাদেরকে সাহায্য করিয়াছিল, তাহাদেরকে তিনি তাহাদের দুর্গ হইতে অবতরণ করাইলেন এবং তাহাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করিলেন; এখন তোমরা উহাদের কতককে হত্যা করিতেছ এবং কতককে করিতেছ বন্দী। |
33-27 : আর তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করিলেন উহাদের ভূমি, ঘরবাড়ি ও ধন - সম্পদের এবং এমন ভূমির যাহাতে তোমরা এখনও পদার্পণ কর নাই। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। |
33-28 : হে নবী ! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে বল, ‘তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও উহার ভূষণ কামনা কর তবে আস, আমি তোমাদের ভোগ - সামগ্রীর ব্যবস্থা করিয়া দেই এবং সৌজন্যের সঙ্গে তোমাদেরকে বিদায় দেই। |
33-29 : ‘আর যদি তোমরা কামনা কর আল্লাহ তাঁহার রাসূল ও আখিরাত, তবে তোমাদের মধ্যে সৎর্কমপরায়ণদরে জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রখেছেনে। |
33-30 : হে নবী - পত্নীগণ ! যে কাজ স্পষ্টত আল্লাহ তোমাদের মধ্যে কেহ তাহা করিলে তাহাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়া হবে। এটা আল্লাহর জন্য সহজ। |
33-31 : তোমাদের মধ্যে যে কেহ আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূলের প্রতি অনুগত হইবে ও সৎকর্ম করিবে তাহাকে আমি পুরস্কার দিব দুইবার এবং তাহার জন্য আমি প্রস্তুত রাখিয়াছি সম্মানজনক রিযিক। |
33-32 : হে নবী - পত্মিগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও ; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমলকণ্ঠে এমনভাবে কথা বলিও না, যাহাতে অন্তরে যাহার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলিবে। |
33-33 : আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করিবে এবং প্রাচীন যুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করিয়া বেড়াইবে না। তোমরা সালাত কায়েম করিবে ও যাকাত প্রদান করিবে এবং আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের অনুগত থাকিবে। হে নবী - পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের হইতে অপবিত্রতা দূর করিতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করিতে। |
33-34 : আল্লাহ আয়াত ও জ্ঞানের কথা যাহা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তাহা তোমরা স্মরণ রাখিবে ; নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্নর্দশী, র্সববিষয়ে খবর রাখনে। |
33-35 : অবশ্যই আত্মসর্মপণকারী পুরুষ ও আত্মসর্মপণকারী নারী, মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সাওম পালনকারী পুরুষ ও সাওম পালনকারী নারী, যৌন অংগ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌন অংগ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহ অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী - ইহাদের জন্য আল্লাহ রাখিয়াছেন ক্ষমা ও মহা - প্রতিদান। |
33-36 : আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকিবে না। কেহ আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূলকে অমান্য করিলে সে তো স্পষ্ট পথভ্রষ্ট হইবে। |
33-37 : স্মরণ কর, আল্লাহ যাহাকে অনুগ্রহ করিয়াছেন এবং তুমিও যাহার প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছ, তুমি তাহাকে বলিতেছিলে, ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহ ভয় কর।’ তুমি তোমার অন্তরে যাহা গোপন করিতেছ আল্লাহ তাহা প্রকাশ করিয়া দিতেছেন ; তুমি লোকভয় করিতেছিলে, অথচ আল্লাহ ভয় করা তোমার পক্ষে অধিকতর সংগত। অতঃপর যায়দ যখন যয়নবের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করিল, তখন আমি তাহাকে তোমার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করিলাম, যাহাতে মু’মিনদের পোষ্য পুত্রগণ নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহসূত্র ছিন্ন করিলে সেইসব রমণীকে বিবাহ করায় মু’মিনদের কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহ আদেশ কার্যকরী হইয়াই থাকে। |
33-38 : আল্লাহ নবীর জন্য যাহা বিধিসম্মত করিয়াছেন তাহা করিতে তাহার জন্য কোন বাধা নাই। পূর্বে যেসব নবী অতীত হইয়া গিয়াছে, তাহাদের ক্ষেত্রেও ইহাই ছিল আল্লাহ বিধান। আল্লাহ বিধান সুনির্ধারিত। |
33-39 : তাহারা আল্লাহ বাণী প্রচার করিত এবং তাঁহাকে ভয় করিত, আর আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করতনে না। হসিাব গ্রহণরে জন্যে আল্লাহ যথষ্ঠে। |
33-40 : মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহে ; বরং সে আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত। |
33-41 : মুমনিগণ তােমরা আল্লাহকে অধকি পরমিাণে স্মরণ কর। |
33-42 : এবং সকাল বকিাল আল্লাহর পবত্রিতা র্বণনা কর। |
33-43 : তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁহার ফিরিশ্তাগণও তোমাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। অন্ধকার হইতে তোমাদেরকে আলোকে আনিবার জন্য, এবং তিনি মু’মিনদের প্রতি পরম দয়ালু। |
33-44 : যেদিন তাহারা আল্লাহ সঙ্গে সাক্ষাত করিবে, সেদিন তাহাদের প্রতি অভিবাদন হইবে ‘সালাম’। তিনি তাহাদের জন্য প্রস্তুত রাখিয়াছেন উত্তম প্রতিদান। |
33-45 : হে নবী! আমি তো তোমাকে পাঠাইয়াছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, |
33-46 : এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দকিে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপ। |
33-47 : তুমি মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাহাদের জন্য আল্লাহর নিকট রহিয়াছে মহাঅনুগ্রহ। |
33-48 : আর তুমি কাফির ও মুনাফিকদের কথা শুনিও না, উহাদের নির্যাতন উপেক্ষা করিও এবং নির্ভর করিও আল্লাহর উপর;কর্মবিধায়করুপে আল্লাহই যথষ্টে। |
33-49 : হে মু’মিনগণ! তোমরা মু’মিন নারীগণকে বিবাহ করিবার পর উহাদেরকে স্পর্শ করিবার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্য তাহাদের পালনীয় কোন ইদ্দত নাই যাহা তোমরা গণনা করিবে। তোমরা উহাদেরকে কিছু সামগ্রী দিবে এবং সৌজন্যের সঙ্গে উহাদেরকে বিদায় করিবে। |
33-50 : হে নবী ! আমি তোমার জন্য বৈধ করিয়াছি তোমার স্ত্রীগণকে, যাহাদের মাহর তুমি প্রদান করিয়াছ এবং বৈধ করিয়াছি ফায় হিসাবে আল্লাহ তোমাকে যাহা দান করিয়াছেন তন্মধ্য হইতে যাহারা তোমার মালিকানাধীন হইয়াছে তাহাদেরকে, এবং বিবাহের জন্য বৈধ করিয়াছি তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যাহারা তোমার সঙ্গে দেশ ত্যাগ করিয়াছে এবং কোন মু’মিন নারী নবীর নিকট নিজকে নিবেদন করিলে এবং নবী তাহাকে বিবাহ করিতে চাহিলে সেও বৈধ - ইহা বিশেষ করিয়া তোমারই জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়; যাহাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। মু’মিনদের স্ত্রী এবং তাহাদের মালিকানাধীন দাসীদরে ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছ। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। |
33-51 : তুমি উহাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তোমার নিকট হইতে দূরে রাখিতে পার এবং যাহাকে ইচ্ছা তোমার নিকট স্থান দিতে পার। আর তুমি যাহাকে দূরে রাখিয়াছ তাহাকে কামনা করিলে তোমার কোন অপরাধ নাই। এই বিধান এইজন্য যে, ইহাতে উহাদের তুষ্টি সহজতর হইবে এবং উহারা দুঃখ পাইবে না আর উহাদেরকে তুমি যাহা দিবে তাহাতে উহাদের প্রত্যেকেই প্রীত সন্তুষ্ট থাকব। তা তোমাদের অন্তরে যা আছ আল্লাহ তাহা জানেন। আল্লাহ র্সবজ্ঞ, সহনশীল। |
33-52 : ইহার পর, তোমার জন্য কোন নারী বৈধ নয় এবং তোমার স্ত্রীদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণও বৈধ নয় যদিও উহাদের সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে; তবে তোমার অধিকারভুক্ত দাসীদের ব্যাপারে এই বিধান প্রযোজ্য নয়। আল্লাহ সমস্ত কিছুর উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। |
33-53 : হে মু’মিনগণ ! তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া না হইলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করিয়া ভোজনের জন্য নবীগৃহে প্রবেশ করিও না। তবে তোমাদেরকে আহবান করিলে তোমরা প্রবেশ করিও এবং ভোজনশেষে চলিয়া যাইও ; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হইয়া পড়িও না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়, সে তোমাদেরকে উঠাইয়া দিতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলিতে সংকোচ বোধ করেন না। তোমরা তাহার পত্নীদের নিকট হইতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হইতে চাইবে। এই বিধান তোমাদের ও তাহাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। তোমাদের কাহারও পক্ষে আল্লাহ রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহার পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনও বৈধ নয়। আল্লাহ দৃষ্টিতে ইহা ঘোরতর অপরাধ। |
33-54 : তােমরা কোন বিষয় প্রকাশ কর অথবা গােপন রাখ, আল্লাহ র্সব বিষয়ে র্সবজ্ঞ। |
33-55 : নবী - পত্নীদের জন্য তাহাদের পিতৃগণ, পুত্রগণ, ভ্রাতৃগণ, ভ্রাতষ্পুত্রগণ, ভগ্নীপুত্রগণ, সেবিকাগণ এবং তাহাদের অধিকারভুক্ত দাস - দাসীগণের ব্যাপারে উহা পালন না করা অপরাধ নয়। হে নবী - পত্নীগণ, তােমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ র্সববিষয় প্রত্যক্ষ করেন। |
33-56 : আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁহার ফিরিশ্তাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মু’মিনগণ ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাহাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। |
33-57 : যাহারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়, আল্লাহ তো তাহাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাহাদের জন্য প্রস্তুত রাখিয়াছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। |
33-58 : যাহারা মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে পীড়া দেয় এমন কোন অপরাধের জন্য যাহা তাহারা করে নাই; তাহারা অপবাদের ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে। |
33-59 : হে নবী ! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মু’মিনদের নারীগণকে বল, তাহারা যেন তাহাদের চাদরের ক্রিয়দাংশ নিজেদের উপর টানিয়া দেয়। উহাতে তাহাদেরকে চেনা সহজতর হইবে। ফলে তাদরেকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। |
33-60 : মুনাফিকরা এবং যাহাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যাহারা নগরে গুজব রটনা করে তাহারা বিরত না হইলে আমি নিশ্চয়ই তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবল করিব; ইহার পর এই নগরীতে তোমার প্রতিবেশীরূপে উহারা স্বল্প সময়ই থাকিবে - |
33-61 : অভিশপ্ত হইয়া; উহাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাইবে সেখানেই ধরা হইবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করা হইবে। |
33-62 : পূর্বে যাহারা অতীত হইয়া গিয়াছে তাহাদের ব্যাপারে ইহাই ছিল আল্লাহর রীতি। তুমি কখনও আল্লাহর রীততিে কখনও পরর্বিতন পাবনে না। |
33-63 : লোকে তোমাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, উহার জ্ঞান কেবল আল্লাহরই আছে। তুমি ইহা কী করিয়া জানিবে? সম্ভবত কিয়ামত শীঘ্রই হইয়া যাইতে পারে। |
33-64 : আল্লাহ্ কাফিরদেরকে অভিশপ্ত করিয়াছেন এবং তাহাদের জন্য প্রস্তুত রাখিয়াছেন জ্বলন্ত অগ্নি। |
33-65 : সেখানে উহারা স্থায়ী হইবে এবং উহারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাইবে না। |
33-66 : যেদিন উহাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলটপালট করা হইবে সেদিন উহারা বলিবে, ‘হায়, আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসূলের আনুগত্য করতাম। |
33-67 : তাহারা আরও বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক ! আমরা আমাদের নেতা ও প্রভাবশালীদের আনুগত্য করিয়াছিলাম এবং উহারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করিয়াছিল; |
33-68 : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! উহাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং উহাদেরকে দাও মহাঅভিসম্পাত।’ |
33-69 : হে মু’মিনগণ ! মূসাকে যাহারা ক্লেশ দিয়াছে তোমরা উহাদের ন্যায় হইও না; উহারা যাহা রটনা করিয়াছিল আল্লাহ উহা হইতে তাহাকে নির্দোষ প্রমাণ করেন; এবং আল্লাহ নিকট সে মর্যাদাবান। |
33-70 : হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল; |
33-71 : তাহা হইলে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম ত্রটিমুক্ত করিবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করিবেন। যাহারা আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করে, তাহারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করিবে। |
33-72 : আমি তো আসমান, যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করিয়াছিলাম, উহারা ইহা বহন করিতে অস্বীকার করিল এবং উহাতে শংকিত হইল, কিন্তু মানুষ উহা বহন করিল; সে তো অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ। |
33-73 : পরিণামে আল্লাহ্ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীকে শাস্তি দিবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীকে ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। |